Skip to main content

Full text of "Chithipatra,vol.9"

See other formats


গু হি আচ ও” গজ 
০৫১ 


৮ 
“1 
* 


ঙীঁ 
৪ ং 
ষ ০ 
এ ২ পিসি 





চিঠিপত্র ১। পত্রী মৃণালিনী দেবীকে লিখিত 

চিঠিপত্র ২॥ জোষ্টপুত্র রখীন্ত্রনাথ ঠাকুরকে লিখিত 

চিঠিপত্র ৩ ॥ পুত্রবধূ শ্রীমতী প্রতিমা দেবীকে লিখিত 

চিঠিপত্র ৪ ॥ কন্ঠা মাধুরীলতা৷ দেবী, শ্রীমতী মীরা দেবী, দৌহিত্র নীতীন্তরনীথ, দৌতহিত্রী 
শ্রীমতী নন্দিতা ও পৌত্রী শ্রীমতী নন্দিনীকে লিখিত 

চিঠিপত্র ৫ ॥ সতোন্রনাথ ঠাকুর, জ্ঞানদানন্দিনী দেবী, জ্যোতিরিক্দ্রনাথ ঠাকুর, ইন্দিরা! দেবী 
ও প্রমথ চৌধুরীকে লিখিত 

চিঠিপত্র ৬॥ জগদীশচন্দ্র বন ও অবলা বুকে লিখিত 

চিঠিপত্র ৭ ॥ কাদম্থিনী দেবী ও নির্ঝরিণী সরকারকে লিখিত 

চিঠিপত্র ৮॥ প্রয়নাথ সেনকে লিখিত 


ছিন্নপত্র | শ্রীশচন্ত্র মজুমদার ও ইন্ির1 দেবীকে লিখিত 
ছিন্নপত্রাবলী | ইন্দির1 দেবীকে লিখিত পত্রাবলীর পূর্ণতর সংহ্করণ 
পথে ও পথের প্রান্তে ॥ শ্রীমতী নির্মলকুমারী মইলানবিশকে লিখিত 
ভানুসিংহের পত্রাবলী ॥ শ্রীমতী রানু দেবীকে লিখিত 





রবীন্দ্রনাথ 
শারিস্সা | এজাতরান।। ১৯৩৩ 


নবম খণ্ড 





বিশ্বভারতী 
কলিকাতা 


চিঠিপত্র ॥ নবম খণ্ড 


শ্রীমতী হেমস্তবাল1 দেবী 
এবং তীহার পুত্র কন্তা জামাতা ভ্রাতা ও দৌহিত্রকে লিখিত পত্রাবলী 


প্রকাশ : ২৫ বৈশাখ ১৩৭১ 


শ্ীপুলিনবিহারী সেন -কততৃক সংকলিত 


2 বিশ্বভারতী ১৯৬৪ 


প্রকাশক শ্রীকানাই সামন্ত 
বিশ্বভারতী | ৫ দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন। কলিকাতা ৭ 


ুদ্রক শ্রীহ্্যনারায়ণ ভষ্টাচারধ 
তাপসী প্রেস। ৩০ বিধান সরণী । কলিকাতা ৬ 


২১ 


স্চীপত্র 


শ্রীমতী হেমস্তবাঁলারদেবীকে লিখিত পত্রাবলী 

শ্রীবিমলাকান্ত রাঁয়চৌধুরীকে লিখিত পত্রাবলী 

শ্রীমতী বাঁসম্তীদেবী ও শ্রীনিখিল বাঁগচীকে লিখিত পত্রাবলী 
শ্রীবীরেন্্রকিশোর রায়চৌধুরীকে লিখিত পত্র 

কবির আশীর্বাদ ও শ্রীমান কিশোরকান্ত -সহ পত্রালাপ 


পরিশিষ্ট ১ 
পুর্বপত্রের পাঠান্তর ও রূপান্তর : আত্মীয়-বিরোধ 


পরিশিষ্ট ২ 


শ্রীমতী হেমন্তবালাদেবীর তিনখানি পত্র 


গ্রন্থপরিচয় 


পরিচয়লাভ ও পত্রবিনিময়' 
“রবীন্দর-সমীক্ষা? 

পত্র-ধুত প্রসঙ্গ 

সাময়িক পত্রে গ্রকীশের কুচী 
বিজ্ঞপ্তি 

পহকেত 

সংযোজন-সংশোধন 


১-৩৭২ 


৩৭৫-৩৮৬ 


৩৮৯-৪১৭ 


৪২১-৪৩০৩ 


৪৩৩-৪৩৫ 


৪৩৯-৪৫২ 


৪৫৬ 


চিতরস্থচী 


প্রতিকৃতি 

সুখে 
পারস্তে রবীন্দ্রনাথ : তেহেরাঁন ১৯৩২ আখ্যাপ্্ 
খড়দহে রবীন্দ্রনাথ : ১৯৩২ ১৮০ 

পাঙুলিপিচিত্র 

তোমার প্রথম জন্মদিন ১২০ 
কল্যাণীয়ান্থ আমি তো মৃত্তিকাবিলামী ২০৬ 
কল্যাণীয়াস্ তোমার বয়সের নিশ্চিত ২১২ 
কল্যাণীয়ান্ত তোমার পরে কত গভীর ২৮৮ 
কল্যাণীয়েযু তোমার চিঠিখানি পড়ে ৩৮৪ 


কল্াণীয়াস্্ বংসে, তোমার চিঠিখানি পেয়ে ৩৪২ 


শ্রীমতী হেমস্তবালাদেবীকে লিখিত 


পত্রসংখ্যা ২৬৪ 


৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ 


শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়া “জোনাকি” 
তুমি আমার অন্তরের আশীব্বাদ গ্রহণ কর। ইতি ৮ 
ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ 
শুভাকাজ্জী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


হু 
১২ এপ্রিল ১৯৩১ 


শান্তিনিকেতন 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমাকে অনেকে ভূল বুঝে থাকেন, তুমিও বোধ হয় ভূল 
বুঝেচ। প্রথম কথা, আমি মস্ত কেউ একজন নই। তাতে 
কিছু আসে যায় না। তোমরা! যে কেউ আমাকে যা মনে কর 
তার সঙ্গেই আমার কিছু না কিছু মিশ খেয়ে যায় । তাঁর কারণ, 
কিশোর বয়স থেকে আমার মনকে নানাখানা করে আমি নানা 
কথাই বলেচি__ এ ছাড়া আমার আর কোনো কাজ নেই । 
আমার উপর যদি কেবল এক-সুরের ফরমাস থাকত তাহলে 
সহজে দিন কেটে যেত । যেই কোনো সমজদার আমাকে চিনে 
নিয়েচে বলে হাফ ছাড়ে অমনি উল্টো তরফের কথাটা বলে 
বমি, লোকে সহা করতে পারে না। 

আমি নির্গুণ নিরপ্রন নিধিবশেষের সাধক এমন একটা 
আভাস তোমার চিঠিতে পাওয়া গেল। কোনো একদিক 
থেকে সেটা হয় তো। সত্য হতেও পারে-__ যেখানে সমস্তই শূন্য 
সেখানেও সমস্তই পুর্ণঘিনি তিনি আছেন এটাও উপলব্ধি না 
করব কেন? আবার এর উপ্টো কথাটাও আমারি মনের কথা । 
যেখানে সবকিছু আছে সেখানেই সবার অতীত সব হয়ে 
বিরাজ করেন এটাও যদি না জানি তাহলে সেও বিষম ফাকি। 

আজ এই প্রৌঢ় বসন্তের হাওয়ায় বেলফুলের গন্ধসিঞ্চিত 
প্রভাতের আকাশে একটা রামকেলী রাগিণীর গান থাকে 


্‌ 


ব্যাপ্ত হয়ে স্তব্ধ হয়ে একা একা বেড়াই যখন, তখন সেই 
অনাহত বীণার আলাপে মন ওঠে ভরে । এই হোলো গানের 
অন্তলীন গভীরতা । তার পরে হয় তো ঘরে এসে দেখি গান 
শোনবার লোক বসে আছে-__ তখন গান ধরি, “প্যালা ভর 
ভর লায়ীরি।” সেই ধ্বনিলোকে দেহমন সুরে স্বরে মুখরিত 
হয়ে ওঠে, যা-কিছুকে সেই সুর স্পর্শ করে তাই হয় অপুর্বব। 
এও তো ছাড়বার জো নেই। শ্ুরের গান, না-স্থরের গান, 
কাঁকে ছেড়ে কাঁকে বাছব ? আমি ছুইকেই সমান স্বীকার করে 
নিয়েছি । 

এক জায়গায় কেবল আমার বাধে । খেলনা নিয়ে নিজেকে 
ভোলাতে আমি কিছুতেই পারি নে। এটা পারে নিতান্তই শিশু 
বধূ । সাথী আছেন কাছে বসে তার দিকে পিছন ফিরে খেলনার 
বাক্স খুলে বসা একেবারেই সময় নষ্ট করা। এতে করে সত্য 
অনুভূতির রস যায় ফিকে হয়ে । ফুল দিতে চাও দাও না, এমন 
কাউকে দাও যে-মানুষ ফুল হাতে নিয়ে বল্‌্বে বাঃ তার সেই 
ত্য খুসি সত্য আনন্দে গিয়ে পৌছয়। শিলাইদহের বোষ্টমী 
আমার হাতে আম দিয়ে বল্লে, তাকে দিলুম । এই তো 
সত্যকাঁর দেওয়া আমারই ভোগের মধ্যে তিনি আমটিকে 
পান। পুজারী ব্রাহ্মণ সকাঁলবেলায় গোলক টাপার গাছে 
বাড়ি মেরে ফুল সংগ্রহ করে ঠাকুরঘরে যেত-__ তার নামে 
পুলিশে নালিষ করতে ইচ্ছা করত-_ ঠাকুরকে ফাঁকি দিচ্চে 
বলে। সেই ফুল আমার মধ্যে দিয়েই ঠাকুর গ্রহণ করবেন 
বলেই গাঁছে ফুল ফুটিয়েছেন আর আমার মধ্যে ফুলে আনন্ন 


৩ 


আছে। ঠাকুরঘরে যে মুক্তি প্রতিদিন এই চোরাই মাল গ্রহণ 
করে সে তে সমস্ত বিশ্বকে ফাঁকি দিলে-_ মূঢ়তার ঝুলির মধ্যে 
ঢেকে তার চুরি। কত মানুষকেই বঞ্চিত করে তবে আমরা এই 
দ্রেবতার খেল! খেলি। ঠাকুরঘরের নৈবেছ্যের মধ্যে আমরা 
ঠাকুরের সত্যকার প্রাপ্যকে প্রত্যহ নষ্ট করি। 

এর থেকে একটা কথা বুঝতে পারবে, আমার দেবতা 
মানুষের বাইরে নেই । নিব্বিকার নিরঞ্জনের অবমানন। হচ্চে 
বলে' আমি ঠাকুরঘর থেকে দূরে থাকি এ কথা সত্য নয়__ মানুষ 
বঞ্চিত হচ্চে বলেই আমার নালিষ। যে সেবা যে প্রীতি 
মানুষের মধ্যে সত্য করে তোলবার সাধনাই হচ্ছে ধন্মসাধনা 
তাকে আমরা খেলার মধ্যে ফাকি দিয়ে মেটাবার চেষ্টায় প্রভূত 
অপব্যয় ঘটাচ্চি। এই জন্যেই আমাদের দেশে ধাম্মিকতার ছারা 
মানুষ এত অত্যন্ত অবজ্ঞাত। মানুষের রোগ তাপ উপবাস 
মিটুতে চাঁয় না, কেননা এই চিরশিশুর দেশে খেলার রাস্ত। দিয়ে 
সেট। মেটাবার ভার নিয়েচি । মাছ্রার মন্দিরে যখন লক্ষ লক্ষ 
টাকার গহন! আমাকে সগৌরবে দেখানো হোলো তখন লজ্জায় 
ছুঃখে আমার মাথা হেট হয়ে গেল। কত লক্ষ লক্ষ লোকের 
দেন্ অজ্ঞান অস্বাস্থ্য এ সব গহনার মধ্যে পু্জীভূত হয়ে আছে। 
খেলার দেবতা এই সব সোনা জহরাৎকে ব্যর্থ করে বসে 
থাকুন__ এ দিকে সত্যকার দেবতা সত্যকার মানুষের কঙ্কীলশীর্ণ 
হাতের মুষ্টি প্রসারিত করে এ মন্দিরের বাহিরে পথে পথে 
ফিরচেন। তবু আমাকে বলবে আমি নিরঞ্জনের পুজারি ? এ 
ঠাকুরঘরের মধ্যে যে পুজ! পড়চে সমস্ত ক্ষুধিতের ক্ষুধাকে অবজ্ঞ৷ 


৪ 


করে সে আজ কোন্‌ শূন্যে গিয়ে জম! হচ্চে? 

হয় তো বল্বে এই খেলার পুজাটা সহজ | কিন্তু সত্যের 
সাধনীকে সহজ কোরো না । আমরা মানুষ, আমাদের এতে 
গৌরব নষ্ট হয়। দেবতার পুজা কঠিন দুঃখেরই সাধনা 
মানুষের ছুঃখভার পর্বতপ্রমাণ হয়ে উঠেচে সেইখানেই দেবতার 
আহ্বান শোনো-_ সেই ছুঃসাধ্য তপস্তাকে ফাকি দেবার জন্তে 
মোহের গহ্বরের মধ্যে লুকিয়ে থেকো না। আমি মানুষকে 
ভালোবাসি বলেই এই খেলার দেবতার সঙ্গে আমার ঝগড়া । 
দরকার নেই এই খেলার, কেনন! প্রেম দাবী করচেন সত্যকার 
ত্যাগের, সত্যকার পাত্রে। 

তোমাকে বোধ হয় কিছু কষ্ট দ্রিলুম। কিন্তু সেও ভালো । 
যদি তোমাকে অবজ্ঞা করতুম তাহলে এ কষ্টটুকু দিতুম না । 

রিলিজন্‌ অফ. ম্যান বলে একটা ইংরেজি বই লিখেছি সেটা 
পড়লে বুঝতে পারবে আমার মতে 

কস্মৈ দেবায় হবিষা বিধেম | 
ইতি ২৯ চৈত্র ১৩৩৭ 
শুভানুধ্যায়ী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৯৬ 


১৭ এপ্রিল ১৯৩১ 


শান্তিনিকেতন 


৫9€ 


কল্যাণীয়াস্তু 

প্রথমেই বলে রাখি আমার সব কথা বলবার অধিকার 
নেই। যেখানে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অভাব সেখাঁনে 
যুক্তিদ্বারা তর্ক করে বোঝা ছাড়া উপায় নেই । তোমার চিঠি 
পড়ে বুঝতে পারি তুমি একট! অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে গেছ 
সেটাকে আমার বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে যখন চেষ্টা করি তখন 
মনে সংশয় থেকে যায় । তবুও আমার দিক থেকে যেট? বলবার 
আছে সেটা বলা চাই। 

বাংল! দেশে আমরা শীক্ত কিম্বা বৈষ্ণব ধন্মে মুখ্যত রস 
সন্তোগ করতে চাই। হৃদয়াবেগের মধ্যে তলিয়ে যাঁওয়াকেই 
সাধনার সার্থকতা মনে করি। একে আধ্যাত্মিক বিলাস বলা 
যেতে পারে । সব রকম বিলাসের মধ্যেই বিকারের সন্তাবনা 
আছে। 

গ্রামে খন বাম করতুম একজন বৈষ্ণব সাধকের সঙ্গে 
আমার প্রায় আলাপ হোত। আমি তাকে একদিন বল্লুম 
ব্রাহ্মণপাড়ায় ছুননীতি ছুর্গতি ও ছুঃখের অস্ত নেই। আপনি 
কেন তাদের মাঝখানে থেকে উদ্ধার করবার চেষ্টা করেন না। 
শুনে তিনি বিস্মিত হয়ে গেলেন__ এ সব লোকদের সহবাস 
দুরে পরিহার করাই তিনি সাধনার পন্থা বলে জানেন, এতে 
রস ভোগ চচ্চায় ব্যাঘাত করে। দেবতা যদি নিতান্তই 


১০ 


অতিমাঁনুষ হন তাহলে তাকে নিয়ে কেবল হৃদয়াবেগের খেল। 
খেল্লেই চলে, আমাদের কন্মে তার কোনো প্রয়োজন নেই-_ 
বুদ্ধি চাই নে, শক্তি চাই নে, চরিত্র চাই নে, কেবল নিরম্তর 
ভাবে ডুবুড়বু হয়ে থাকলেই হোলো । অর্থাৎ তাকে দিয়ে 
হদয়ের সখ মেটাবার ব্যাপার । যেহেতু খেলার পুতুল সত্যকার 
মানুষ নয় এই জন্যে তাকে নিয়ে বালিকা আপন হৃদয়বৃত্তিকে 
দৌড় করাঁয়-_ আর কোনো দাযিত্ব নেই। কিন্তু সন্তানের 
মার দায় আছে, শুধু কেবল হৃদয় নয়__ তাঁকে বুদ্ধি খাটাতে 
হয়, শক্তি খাটাতে হয়, সন্তানের সেবা পরিপূর্ণ মাত্রায় সত্য করে 
না তললে চলে না । মানুষের মধ্যে যে দেবতার আবির্ভাব তাকে 
পুতুল সাঁজিয়ে ফাঁকির নৈবেছ্ দিয়ে ভোলাবে কে? সেখানে তার 
সঙ্গে ব্যবহারে পূর্ণ মানুষ হতে হবে। খেলার দেবতা মানুষের 
দেবতাকে বঞ্চিত করে-__ মাছরার দেবত। মানুষেরই গায়ের 
অলঙ্কার হরণ করে নিয়ে। ঠাকুরকে এই রকম অলঙ্কার দিতে 
হৃদয়ের তৃপ্তি হয় মানি, কিন্তু ঠাকুরকে কেবলমাত্র হৃদয়তপ্তির 
উপলক্ষ্য করলে তাকে ছোটি করা হয়, তার সঙ্গে সম্বন্ধকে অত্যন্ত 
অসম্পূর্ণ কর হয়। তুমি মনে করে৷ ঠাকুরের ভাণ্ীরে এই যে 
প্রভৃত ধন অলঙ্কার নিম্ষলভাবে সঞ্চিত হচ্চে এ কোনো এক 
সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজনে কাজে লাগবে না । কখনো না, এ পথ্যস্ত 
তার কোনে দৃষ্টান্ত পাওয়া! যায় না । বিষয়ী লোকের ধনসঞ্চয়ের 
যে ছুনিবার লালসা সেই লালসার তৃপ্তিই দেবতার নামে আমরা 
করি-_ নিজেদের বৈষয়িকতাঁকেই আমরা মঠে মন্দিরে পুঞ্জীভূত 
করে তুলি_ এর আর সীমা থাকে না তার প্রধান কারণ 


৭ 


দেবতার প্রতি আমাদের মানবদায়িত্ব নেই। জগন্নাথকে 
পুরোহিত স্নান করায়, কাপড় পরায়, পাখার হাওয়া করে, ওষুধ 
খাঁওয়ায়__ যদি তার অর্থ এই হয়, যে, মানুষের মধ্যে জগন্নীথেরই 
স্নানের, কাঁপড় পরার ওষুধ খাওয়ার সত্যই প্রয়োজন আছে 
তাহলে কি এমনতরো খেল! করে নিজের দাঁয় সেরে নিতে 
প্রবৃত্তি হয়? তাহলে সমস্ত বুদ্ধি সমস্ত শক্তি নিয়ে মানব- 
ভগবানের অন্নবন্ত্র পানীয় পথ্যের আয়োজন করতে হয়। যুগে 
যুগে আমর! তাতে অবহেলা করেছি বলেই মন্দিরের ভগবান 
পাণ্ড| পুরুতের মধ্যেই পরিপুষ্ট হয়ে উঠ্চেন লোকালয়ে তার 
কণার হাড় বেরিয়ে পড়ল, তার পরনে ট্যানা জোটে না। 

ছুঃখবেদনার অনুভূতি থেকে তুমি নিজেকে বাঁচাতে চেয়েচ। 
ভক্তি বা হৃদয়াবেগের নেশা দিয়ে ফল পাবে না। তোমার 
ভালোবাস! যেখানে জ্ঞানে কন্মে ত্যাগে তপস্তায় ষোলো আন 
পুর্ণ সেইখানেই তোমার পরিত্রাণ। যে সেবা! সর্বাঙ্গীণভাবে 
সত্য এবং যে সেবায় তোমার মনুষ্যত্ব সম্পূর্ণ সত্য হতে পারে 
সেইখানেই আনন্দ__ সে আনন্দ ছুঃখকে স্বীকার করে, তাকে 
এড়িয়ে নয় । মানুষের দেবতার কাছে তুমি নিজেকে উৎসর্গ 
করে দাও-- তিনি যদি তোমাকে ছুঃখের মালা পরিয়ে দেন 
তবে সেই মাল দিয়েই তিনি তোমাকে বরণ করে আপন করে 
নেবেন __তার চেয়ে আর কি চাই? 

তোমার চিঠিতে তোমার কবিতার যে পরিচয় পেয়েছি তাতে 
আমি বিস্মিত হয়েচি ৷ অত্যন্ত খাটি কবিতা, বানানে নয়, পরিণত 
লেখনীর স্থষ্টি। তুমি বাংলাদেশে অনেককে আবিষ্কার করেচ লিখেচ 


৮ 


_বোধ হয় নিজেকেও আবিষ্কার করেচ কিন্ত প্রকাশ করেচ কি 
নাজানি নে। ইতি ৪'বেশাখ ১৩৩৮ 
শুভাকাজ্জী শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


তুমি প্রতীকের কথা লিখেচ, সত্য আছেন দ্বারে এসে 
দাড়িয়ে, দিনের পর দিন প্রতীক্ষা করচেন, যদি থাকি দ্বার বন্ধ 
করে প্রতীককে নিয়ে তার চেয়ে বিড়ম্বনা নেই । সব চেয়ে 
বিপদ হচ্ছে প্রতীক অভ্যন্ত হয়ে যায় তখন সত্যই হয় পর । 
সত্যের দাবী কঠিন, প্রতীকের দাবী যৎসামান্য-_ সত্য বলে 
অকল্যাণকে অন্তরে ঠেকাতে হবে প্রাণপণ শক্তিতে, প্রতীক 
বলে পাঁচশিকের পুজো দিয়েই ফল পাওয়া যায়। অর্থাৎ সত্য 
মানুষকে মানুষ হতে বলে আর প্রতীক তাকে চিরদিন ছেলে- 
মানুষ হতে বলে। প্রতীক মিথ্যা চোখরাডানীতে ভারতের 
কোটি কোটি দুর্বল চিত্তকে কাপুরুষ করে তুল্চে, সত্য তাকে 
ঘতরকম মিথ্যা ভয়ের মোহ থেকে উদ্বোধিত করতে চায়। 
প্রতীক দ্ুশ্চরিত্র পাগ্ডার পায়ে মনুষ্যত্বের অবমাননা ঘটায় 
সত্য যথার্থ ভক্তির আলোয় মানুষের ললাটকে মহিমান্বিত করে । 
তাঁকিক বলে এই প্রতীক কেবল একটা ক্ষণিক অবস্থার জন্যে, 
তার পরে কেটে যায়। কোনোদিন কাটে না__ মূঢ়তা মানুষকে 
হুর্বল করে, তাঁর চিত্তকে মোহেই দীক্ষিত করে । ফোটোগ্রাফের 
সঙ্গে প্রতীকের তুলনা কোরো না। যে-বন্ধুকে তুমি সত্য করে 
জানো তাঁরই ফোটোগ্রাফ তোমার কাছে সত্য-_ যাঁকে অস্তরে 
সত্যরূপে জানো না তার ফোটৌগ্রাককেই সত্যরূপে জানা বিষম 


টি 


বিপদ। তা ছাড়া যে সত্য সকল জীবের মধ্যে তাকে অজীবের মধ্যে 
দেখতে চেষ্টা করা আর শাখার ফুলকে শিকড়ে খুঁজে বেড়ানো 
একই কথা। তুমি তোমার যে-গুরুর মধ্যে পূর্ণ মানুষকে উপলব্ধি 
করেচ তিনি তো! ফাকি নন, তাকে পেতে হলে তোমার সমস্ত 
মানবধন্ম দিয়ে পেতে হবে, ছেলেখেল! করে হবে না। বিরাট 
মানুষকে আমরা কোনো মানুষের মধ্যে দেখেচি তার সত্য 
প্রমাণ দেওয়া চাই যে কী নৈবেছ্য তাকে দিলে? কেবল হৃদয় 
বেগ? তাকে উদ্দেশ করে তুমি মানুষের জন্যে কি করেচ-_ 
আপনাকে কতখানি বিশুদ্ধ করে তুলতে পেরেচ? ভুমি যে 
মানুষকে সমস্ত মন দিয়ে উপলব্ধি করেচ তিনি কি প্রতীক? 
মন্তর পড়ে সারবে ? বিরাট যে তার মধ্যেই দেখা দিয়েচেন 
_কিস্ত সেই বিরাটের সেবা কোথায়? তুমি তৃপ্তি পাচ্চ না 
আজ, তার মানে তুমি তাকে ব্যবহার করতে চাচ্চ আপনার 
তৃপ্তির জন্যে-_ তার তৃপ্তির জন্যে যখন আপনাকে সত্যভাবে 
ত্যাগ করবে, মানুষের দ্বারে, স্মৃতিমন্দিরের প্রাঙ্গণে নয়, তখনই 
জীবনে তার সঙ্গে তোমার মিলন সার্থক হবে । 
আমার সময় বড়ো কম। আমাকে অনেকে বাজে চিঠি লেখে 
--তার উত্তর দিতে গেলে আমার সময়ের অপব্যয় হয়। তুমি 
তোমার সত্য প্রয়োজনেই আমাকে জিখেচ বলেই আমি তোমাকে 
ভালে! করে বুঝিয়ে লিখতে কৃপণতা করি নে। তা ছাড়া তুমি 
লিখতে জানো তাই লেখা আদায় করা তোমার পক্ষে সহজ । 
শ্রীরবীক্নাথ ঠাকুর 


৪ 


২১ এপ্রিল ১৯৩১ 
ও শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার চিঠি পড়ে আমি বিরক্ত হচ্চি এমন কল্পনা কোরে 
না। যে গভীর উপলব্ধির ভিতর দিয়ে তুমি গিয়েচ সেটা 
আমার জানতে ভালোই লাগচে। আমার মনে পড়চে আমিও 
এক সময়ে স্বভাবতই যে সাধনাকে অবলম্বন করেছিলুম তাঁর 
মধ্যে ভাবরসের অংশই ছিল প্রধান__ সংসার থেকে হৃদয়ের যে 
তৃপ্তি যথেষ্ট পাওয়া যায় নি সেইটেকেই অন্তরের মধ্যে মথন 
করে তোলবার চেষ্টায় ছিলুম। বৈষ্ণব কবিরা আমার এই 
আত্মভোগের নৈবেছ্চ ভরে তোলবার সহায়তা করেছিলেন । 
কিছুদিন এই রসআোতে গা-ঢালান দিয়েছি । কিন্ত সত্য তো 
কেবলি রসো বৈ সঃ নন তাই একসময় আমার ধিকার এলো-__ 
সেই নিমজ্জনদশ! থেকে তীরে ওঠাকেই মুক্তি বলে বুঝলুম। 
ভাবের মধ্যে সন্তোগ, কিন্তু কন্মের মধ্যে তপস্তা । এই তপস্তায় 
সেই মহাপুরুষের আহ্বান ধাকে ধধি বলেচেন “এষ দেবো 
বিশ্বকন্ম। মহাত্সা।” কেবল তিনি বিশ্বরস এবং বিশ্বরূপ নন 
কিন্তু বিশ্বকন্মা। বিশ্বকম্মে যোগ দিতে গেলেই বিশুদ্ধ হতে 
হয়, বাধ্যবান হতে হয় জ্ঞানী হতে হয়। বিশুদ্ধ কন্মে 
সত্য সর্বতোভাবে সপ্রমাণ হন-__ জ্ঞানে, রসে, তেজে-_ পুর্ণ 
মনুষ্যত্বের মধ্যাদা সত্যকম্মে, বিশ্বকম্মে। একদা ছেলেবেলায় 
যখন ছুধে বিতৃষ্ণা ছিল তখন ভূত্যকে বলে দিয়েছিলুম ফেনায় 


১১ 


পাত্র ভরিয়ে আনতে যাঁতে পিতা ফাকি না ধরতে পারেন। 
একদিন অন্তরের মধ্যে বুঝতে পেরেছিলুম, রসের সাধনার 
অনেকটাই সেই ফেনা, বাস্পোচ্ছাস-__ ধাঁর সামনে ধরি তাকেও 
ফাকি দিই, নিজেকেও। কন্মের সাধনাতেও যথেষ্ট প্রবঞ্চনা 
চলে-__ অর্থাৎ ছুধে ফেনা না মিশিয়ে জল মেশাবার পদ্ধতিও 
আছে-_ এমন ব্যবসায়ে অনেকেই পসাঁর জমিয়ে থাকেন । 
কন্মের মধ্য দিয়ে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে ভোঁলাবার 
প্রলোভন এসে পড়ে__ ষোলো আনা খাঁটি হওয়া সহজ নয়__ 
কিন্তু তবু মনে জানি ভেজাল বাদ দিয়েও যেটুকু বাকি থাকে 
সেটা উবে যাবার জিনিষ নয়। অন্তত আজ এটুকু বুঝেছি 
কন্মের মধ্যে যে উপলব্ধি তাতে মনুষ্যত্বকে সম্মানিত করা হয়-_ 
তাতে বাইরে ব্যর্থতা ঘটলেও অন্তরে গৌরবহানি ঘটে না। 
ইতি ৮ বৈশাখ ১৩৩৮ শুভাঁকাজ্্ী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৫ 
২৩ এপ্রিল ১৯৩১ 
শীল্তিনিকেতন 


৫9৫ 


কল্যাণীয়াস্ম 

তুমি আমাকে খুবই ভুল বুঝেছ তাই আমাকে লিখতে 
হোলো। আমি কখনো! কাউকে আদেশ করিনে, তাঁর কারণ 
আমি গুরু নই আমি কবি। তোমার সঙ্গে আমি কয়েকটা 


১২ 


বিষয় নিয়ে আলোচনা করেচি, কদাচ সেটাকে অনুশাসন বলে 
গ্রহণ কোরে! না।-- সত্যের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ আমাদের 
নিজেদের স্বভাবের পথে । তোমার স্বভাবের অনুগত হয়ে ভুমি 
যে উপলব্ধি সংগ্রহ করেচ আমার কাছে সে জিনিষটি নেই 
সুতরাং তোমাকে কখনোই বলতে পারব না যে আমিযে 
সাধনায় যে অনুভূতিতে এসেচি সেইটি তুমি যদি গ্রহণ না করো 
তবে আমি রাগ করব। এরকম অদ্ভুত জবরদস্তি একেবারেই 
আমার স্বভাববিরুদ্ধ। অবশ্য যেখানে ধন্মের নামে স্পষ্টতই 
অন্যায় অত্যাচার এবং অধন্ম চল্চে সেখানে তাকে আমি 
কোনে! কারণেই স্বীকার করে নিতে পারি নে। কিন্তু যেখানে 
আধ্যাত্মিক রসসন্তভোগে কোন ক্ষতি নেই সেখানে জোর করে 
প্রতিবাদ করা গোৌয়ারের কাজ । 

আমি কেবল নিজের কথাই বল্তে পারি_- আমার মন 
কোনো প্রতীককে আশ্রয় করতে স্বভাবতই অক্ষম । সহসা 
মনে হতে পারে এটা! কবিজনোচিত নয়। ভাঁবকে রূপ দেওয়! 
আমার কাজ-_ আমার সেই সৃষ্টিতে আমার আনন্দ | সেখানে 
রূপ আগে নয়, ভাব আগে, রূপের সঙ্গে ভাব নিজেকে বাইরে 
থেকে মেলায় নাঁ_ নিজের রূপ-দেহ সে নিজেই স্থ্টি করে-__ 
আবার তাকে অনায়াসে ত্যাগ করে' নতুন রূপের মধ্যে প্রকাশ 
খোঁজে । কোনো ধন্মগত প্রথা যে সব রূপকে বাহির থেকে বদ্ধ 
করে রেখেছে, আমার চিত্তের ধ্যান তার মধ্যে বাধা পায়। শুধু 
তো মুত্তি নয়, তার সঙ্গে আছে কাহিনী__ তাকে রূপক জোর 
করে বলি-- অভ্যস্তভাবে তাকে গ্রহণ করি, ভাবকে যেখানে 


১৩ 


প্রতিবাদ করে সেখানেও । আমার বুদ্ধি আমার কল্পনা আমার 
রসবোধ সবই আঘাত পায়। যদি বলো ভগবান যখন অসীম 
তখন সকল রূপেই সকল কাহিনীতেই তাকে খাপ খাওয়ায় । 
এক হিসাবে এ কথ! সত্য-_ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে ভালো মন্দ সুশ্রী কুশ্রী 
সবই আছে অতএব কেবল ভালো কেবল তুন্দরের গণ্তভীর মধ্যে 
তাঁকে স্বতন্্ করে দেখলে তার অসীমতার উপর দোষারোপ 
করা হয়। ঠগীরা মানুষ খুন করাকে ধন্মসাধনা বলে গ্রহণ 
করেছিল-_ ভগবান তো নানারকম করেই মানুষকে মারেন-_ 
সেই খুনী ভগবানকেই বা পূজা করতে দোষ কি? 

কিন্তু আমার ভগবান মানুষের যা শ্রে্ঠ তাই নিয়ে। 
তিনি মানুষের স্বর্গেই বাস করেন। মানুষের নরকও আছে-- 
সেইখানে মূঢ়তা সেইখানে অত্যাচার সেইখানে অসত্য । সেই 
নরকও আছে কিন্ত সেই থাকটি! না-এর দিকে, হা-এর দিকে 
নয়। সে কেবলি হা-কে অস্বীকার করে কিন্তু কিছুতে তাকে 
বিলুপ্ত করতে পারে না। অস্বীকার করার দ্বারাই সে সেই 
চিরন্তন ও-কে প্রমাণ করতে থাকে । এই জন্যেই, ভগবান 
অসীম বলেই তাকে সব কিছুতেই আরোপ করলে চলে এ কথা 
আমি মানতে রাজি নই। যেখানে জ্ঞানে ভাবে কনম্মে পরিপূর্ণ 
শ্রেষ্টতা সেইখানেই তাকে উপলব্ধি না করলে ঠকতে হবে । 

কিন্তু তৃমি যে করচ না একথা বলিনে-_ তোমার অভিজ্ঞতা 
আমাঁর অভিজ্ঞতা নয় অতএব আমার পক্ষে কোনে! উপদেশকে 
বেদবাক্য করে তোলবার স্পদ্ধা আমার নেই । এই কথাটুকু 
বোধ হয় বল। যায়, ছুই রকম চিত্তবৃত্তি আছে-_ এক রকম মন 


১৪ 


প্রতীককে আশ্রয় করে আর-একরকম মন করে না। অনেক 
মহাপুরুষ প্রতীককে অবলম্বন করে” মনে মনে তাকে ছাড়িয়ে 
গেছেন আবার অনেকে- যেমন কবীর দাঁছু নানক-_ 
প্রতীকের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়েও নিজের ধ্যানের মধ্যে জ্ঞানের 
জ্যোতিতে আত্মানন্দের রসেই পরম সত্যকে পূর্ণ করে ভোগ 
করেন-_ অন্য পথ তাদের পক্ষে অসাধ্য । 

গুরুকে আমি প্রতীক শ্রেণীতে ফেলি নে। মানবের মধ্যে 
যেখানে পুর্ণত। মানবের দেবতার সেখানে প্রত্যক্ষ আবির্ভাব একথা 
আমি মানি। 

রচনা করবার অসামান্য শক্তি তোমার আছে এই জন্যেই 
তোমার চিঠি পড়ার আনন্দ আমাকে চিঠি লেখায় প্রবৃত্ত করে। 
ইতি ১০ বৈশাখ ১৩৩৮ শুভাকাজক্ষী 

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


ঙ 
২৮ এন্ডিল ১৯৩১ 
রঙ শীম্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার চিঠির উত্তরে যা আমার বলবার ছিল তা বোধ হয় 
বলে শেষ করেছি। একটা কথা পূর্বেও বলেচি পুনরায় বলা 
দরকার, আমাকে কোনে! অংশেই গুরু বলে গণ্য করলে ভুল 
করা হবে। তোমার অভ্তর্তম প্রয়োজন যেকি তা নিশ্চিত 


৯৫ 


নির্ণয় করে দ্রেবার অধিকার আমার নেই। আমি আমার 
নিজের পথে চলি-_ সে পথে শেষ পধ্যন্ত কোথাও পৌছব কি না 
তাঁও জানি নে। আমার চিত্তের স্বভীবই হচ্চে নদীর মতো চলা, 
চল্তে চল্‌তে বলা-_ সে ধারা একটানা চলে না-_ নানা বাঁকে 
বাকে চলে । আমি জীবনের নানা অভিজ্ঞতাকে বাণী জোগাঁব 
এই ফরমাস নিয়ে সংসারে এসেচি-__ কোথাও এসে স্তব্ধ হলেই 
আমার কাজ ফুরোবে। যারা গুরু তারা সমুদ্রের মতো৷ আপনার 
মধ্যে আপনি এসে থেমেচেন, তাদের বাণী তরঙ্গিত হয় তাদের 
গভীরতা থেকে । আমার ধ্বনি ওঠে জীবনের বিচিত্র সংঘাত 
হতে, তাদের বাণী জাগে অক্তরাত্মীর স্বকীয় আন্দোলনে । তুমি 
তোমাঁর গুরুর কাছ থেকে এমন কিছু যদি পেয়ে থাকো যা 
কেবলমাত্র আলাপ নয় যা আদেশ যা নির্দেশ, যা তোমার 
আত্মাকে গতি দিয়েচে তাহলে তার উপরে আর কথা চলে না । 
কেননা আমি তো কেবলমাত্র কথাই দিতে পারি, গতি জোগাতে 
পারিনে তো । আজ পধ্যন্ত কাউকে তো আমি কোনো ঠিকানায় 
পৌছিয়ে দিই নি। সঙ্গে সঙ্গে পথ চল্তে চলতে অনেককে 
খুসি করেচি এই পধ্যন্ত। আবার অনেকে আমাকে গছন্দই 
করে না-_ কেনন। তারা আন্দাজ করতে পারে যে, আমার নগদ 
তহবিল নেই-__ যদি বা কোনোমতে ভোজের আয়োজন করতে 
পারি দক্ষিণা পর্যন্ত পৌছয় না। 

তুমি একটি রসলোকে প্রবেশ করেচ_ সেখানে তুমি নান! 
উপকরণে আনন্দমন্দিরের ভিৎ গাঁথচ। বিশ্ববিধাতা যেমন, 
মানুষও তেমনি, আপন স্বকীয় স্যষ্টিতেই তার যথার্থ বাস-_ অন্য 


১৬ 


জীবের থাকে বাসাবাড়িতে, কেবল ভাড়। দেয়। ভাড়াটে 
বাসার মানুষও অনেক আছে কিন্তু মানুষের আনন্দ হচ্ছে স্বকীয় 
ধামে__ সত্যকে সে নিজের জীবনে নিজের চিত্তে মূর্ত করে 
তোলে-_ তখন সে স্থায়ী আশ্রয় পায়। কিন্ত যখন সে এমন 
কিছু গড়তে থাকে যার মধ্যে উপকরণ অনেক আছে কিন্তু 
সত্য যথেষ্ট নেই তখন সে পীড়িত হয়, তখন তার আশ্রয় 
হয় তার বোঝা । এই ছুশ্মুল্য ব্যর্থতার সঙ্গে অনেক লড়তে 
হয়েচে-_ উপকরণ জমাতে লেগেচি সদর দরজ দিয়ে, খিড়কি 
দরজা দিয়ে সত্য দিয়েচেন দৌড় । 

তুমি থেকে থেকে আশঙ্কা করেচ আমার মতের সঙ্গে তোমার 
মিল হচ্চে না বলে আমি রাঁগ করচি। লেশমাত্র না । মত নিয়ে 
যাঁরা অন্যের পরে জবরদস্তি করে আমি সে জাতের মানুষ নই । 
তোমার উপলব্ধির পরে আমার মনে কিছুমাত্র অশ্রদ্ধা নেই । 
জীবনে তুমি একদা যে আনন্দধারায় আত্মনিবেদন করেচ সেই 
আনন্দ শেষ পধ্যস্ত পরম সার্থকতায় নিয়ে যাক এই আমি 
একান্তমনে কামনা করি । ইতি ১৫ বৈশাখ ১৩৩৮ 


শুভাকাজ্ষী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৯২ ১৭ 


৩০ এপ্রিল ১৯৩১ 
ও শাস্তিনিকেতন 

কল্যাণীয়াস্তু 
তুমি নিজেকে অকারণ পরিতাপে কেন পীড়িত করচ আমি 
কিছুই বুঝতে পারচি নে। তোমার প্রতি বিরক্তির লেশমাত্র 
কারণ আমার ঘটে নি, তোমার চিঠি পড়তে আমার বিশেষ 
ভালো লাগে । তোমার জীবনের যা গভীরতম উপলব্ধি তার 
সৌন্দধ্য ও সত্যতা আমি মনে বেশ বুঝতে পারি । আমার 
নিজের পথ তোমার থেকে পুথক বলেই তোমার অভিজ্ঞতার 
বিবরণ শুনতে আমি এত ওৎস্ুক্য অনুভব করি । আমি চিন্তা 
করি, তর্ক করি আলাপ করি বলেই নিজেকে তোমার চেয়ে 
সাধনায় শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি নে-_ কেননা সাধনার চেয়ে আমার 
ভাবন! ও কল্পনাই বেশি। আমি অনুভব করব, প্রকাশ করব 
এই কাজের জন্তেই আমাঁকে গড়া হয়েচে। আমি বলে যাব, 
গেয়ে যাব, তোমাদের ভালো লাগবে এইটুকু হলেই আমার 
কাজ সারা হোলো । আমার কাছে কোন্টা ভালে কোনটা 
মন্দ বোধ হয়, তা নিয়ে তর্কও করব-_ কিন্তু সেটা উপরের 
বেদীতে চড়ে বসে নয়। তোমাদের ভাবিয়ে দিতে পারলেই 
আমার আর কিছু দরকার নেই । আমার কাছে আদেশ 
উপদেশের দাবী করলেই বুঝতে পারি আমাকে ভূল বুঝেচ। 
যখন মনে করে। আমার কথা না শুনলে রাগ করি তখনো 
জানি আমাকে চেনো নি। চিরদিন আমি গুরুমশায়কে এড়িয়ে 


১৮ 


এসেচি, ইস্কুল পালানো আমার অভ্যাস-_ অবশেষে আমি নিজেই 
গুরুমশায় সেজে বসব এর চেয়ে প্রহসন কিছু হতে পারে না। 
বলা বাহুল্য গুরুমশায় আর গুরু এক জাতের নয়। গুরু ধারা 
তার! স্বভাবসিদ্ধ গুর-_ আর গুরুমশায় সেই, যে চোখ রাডিয়ে 
উডে চড়ে" গুরুগিরি করে । আমি উক্ত ছুই জাতেরি বার। 
যাই হোক্‌ তুমি মনে নিশ্চিত জেনো তোমার বিশ্বাস নিয়ে 
তুমি দৃঢ়তার সঙ্গে কথা বলেচ বলে আমি তিলার্ ক্ষুব্ধ হই নি। 
আমি কথার যাচনদার, কথ! যেখানে অকৃত্রিম ও অন্দর সেখানে 
আমি মত বিচার করি নে-_ সেখানে আমি প্রকাশের রূপটিকে 
রূসটিকে সম্ভোগ করতে জানি। তুমি অবিচলিত নিষ্ঠার সঙ্গে 
তোমার সাধনায় প্রবৃত্ত থাকো তাতেই তুমি চরিতার্থতা লাভ 
করবে । ইতি ১৭ বৈশাখ ১৩৩৮ 
শুভাকাজ্ী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


* ০ম ১৯৩১ 


ঠ৫ 


কল্যাণীয়াস্ 

আমাকে তুমি মনে মনে অনেকখানি বাড়িয়ে নিয়ে নিজের 
পছন্দসই করবার চেষ্টা করচ। কিন্তু আমি তে! রচনার উপাদান 
মাত্র নই আমি যে রচিত। তুমি লিখেচ এখন থেকে আমার বই 


১৭৯ 


খুব করে পড়বে-- এমন কাজ কোরো না অত্যন্ত বেশি করে 
পড়তে গেলে কম করে পাবে । হঠাৎ মাঝে মাঝে একখানা বই 
তুলে নিয়ে সাতের পাতা কি সতেরোর পাতা কি সাতাশের 
পাতা থেকে যদি পড়তে সুরু করে দাও হয় তো৷ তোমার মন বলে 
উঠ্‌্বে বাঃ বেশ লিখেচে তো। রীতিমত পড়া অভ্যাস করো 
যদি তাহলে স্বাদ নষ্ট হতে থাকবে-_ কিছুদিন বাদে মনে হবে 
এমনিই কি। আমাদের স্থষ্টির একট সীমানা আছে সেইখানে 
বারে বারে যদি তোমার মনোরথ এসে ঠেকে যায় তবে মন 
বিগড়ে যাবে । মানুষের একটা রোগ আছে যা পায় তার চেয়ে 
বেশি পেতে চায়-_ সেটা যখন জন্তব হয় না তখন চেক বইয়ে 
নিজের হাতে বড়ো অঙ্ক লেখে তার পরে যখন ভাঙানো! চলে না 
তখন ব্যাঙ্কের উপর রাগ করে । তোমার প্রকৃতিকে সব্বতোভাবে 
পরিতৃপ্তি দিতে পারে আমার রচন। থেকে এমন প্রত্যাশা কোরো 
না। কিছু তোমার ভালো লাগবে কিছু অন্টের ভালো! লাগ্‌্বে 
_- কিছু তোমার মনের সঙ্গে মিলবে না কিন্তু আর একজন 
ভাঁববে সেটা তারি মনের কথা । নান ভাবে নানা সুরে নান! 
কথাই বলেছি-_ যেটুকু তোমার পছন্দ হয় বাছাই করে নিয়ো । 
পাঠকেরো। রসগ্রহণ করবার একটা সীমা আছে ; তোমার মন 
অনুভূতির একটা বিশেষ অভ্যাসে প্রবলভাবে অভ্যস্ত, সেই 
অভ্যাস সব কিছু থেকে নিজের জোগান খোঁজে । কিন্তু কবিতায় 
কোনো একটা বিশেষ ভাব বড়ো জিনিষ নয়, এমন কি খুব বড়ো 
অঙ্গের ভাব। কবিতার মুখ্য জিনিষ হচ্ছে স্থ্টি-_ অর্থাৎ রূপ- 
ভাবন। বিশ্বকাব্যেও যেমন, কবির কাব্যেও তেমনি, রূপ 


২৪ 


বিচিত্র__ কোনোটা তোমার চোখে পড়ে কোনোটা আর কারো। 
তুমি খুঁজচ তোমার মনের একটি বিশেষ ভাবকে তৃপ্তি দিতে 
পারে এমন কোনো একটি রূপ-_ অন্যগুলোও রূপের মূল্যে 
মূল্যবান হলেও হয় তো তুমি গ্রহণ করতে চাইবে না। কিন্তু 
কাব্যের যারা যথার্থ রসজ্ঞ, তারা নিজের ভাবকে কাব্যে খোঁজে 
না__ তারা যে কোনো ভাব রূপবান হয়ে উঠেচে তাতেই আনন্দ 
পায়। তোমার চিঠি পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েচে একটা 
বিশেষ খাদে তোমার চিত্বধারা প্রবাহিত-_ সেইটেই তোমার 
সাধনা । আমরা কবির! কেবল সাঁধকদের জন্যে লিখি নে,বিশেষ 
রসের রসিকদের জন্যেও না। আমরা লিখি রূপ্রষ্টার জন্যে-_ 
তিনি বিচার করেন স্থট্টির দিক থেকে-__ যাচাই করে দেখেন 
রূপের আবির্ভাব হোলো কিনা । আমার রূপকার বিধাতা সেই 
জন্যে আমাকে নান! রসের নানা ভাবের নানা উপলব্ধির মধ্যে 
ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ান__ নিজের মনকে নানান্খানা করে নানা 
চেহারাই গড়তে হয় । যে-ই একটা কিছু চেহারা জাগে ওস্তাদজি 
তখন আমাকে চেল। বলে মানেন। আমি যে সব কন্ম হাতে 
নিয়েচি তার মধ্যেও জেই চেহারা গড়ে তোলবার ব্যবসায়। 
উপদেশ দেওয়া! উপকার করা গৌণ, রচনা করাই মুখ্য। সেই 
জন্যেই আমি সবাইকে বারবার করে বলি, দোহাই তোমাদের, 
হঠাৎ আমাকে গুরু বলে ভূল কোরো না । আমি কন্ীও বটে-_ 
কিন্ত যার অন্তর্দৃষ্টি আছে সে বুঝতে পারে আমি কারুকর্ম্ের 
কন্মী। আমি কবিতা লিখি, গান লিখি, গল্প লিখি, নাট্রমঞ্চে 
অভিনয় করি, নাচি নাচাই, ছবি আঁকি, হাঁসি, হাসাই, একান্তে 


৯ 


কোনো একটামাত্র আসনেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে বসবার উপায় 
রাখি নে। যারা আমাকে ভক্তি করতে চাঁয় তাঁদের পদে পদে 
খটকা লাগে । আমার এই চঞ্চলত! যদি না থাকৃত তবে কোন্‌ 
দিন হয় তো হাল আমলের একজন অবতার হয়ে উঠে ভক্তব্য হের 
মধ্যে বন্দী হয়ে পড়তুম। অবতার শিকারে যাদের সখ তাঁর! 
কাছাকাছি এসে নাক শিট্কে চলে যায়। তুমি আমার লেখ 
পড়তে চেয়েচ পোড়ো-_ কিন্তু কবির লেখা বলেই পোড়ো। 
অর্থাৎ আমি সকলেরই বন্ধু, সকলেরই সমবয়সী, সকলেরই 
সহযাত্রী । আমি কিন্ত পণ্ডিত নই। পথ চল্‌্তে চলতে আমার 
যা কিছু সংগ্রহ। যাঁকিছু জানি তার অনেকখানি আন্দাজ । 
যতখানি পড়ি তার চেয়ে গড়ি অনেক বেশি । 

এইমাত্র তোমার একটা চিঠিতে দেখলুম আমার চিঠি পাও 
নি বলে আক্ষেপ করেচ। বোধ করি তোমার পত্রের বাহন 
তোমাকে চিঠি পাঠাতে দেরি করেচে। কিন্তু একটা কথা বলে 
রাখি, আমার চিঠি না পেলে মনে করে বোসোনা যে আমি রাগ 
করেচি। চিঠি লেখা আজকাল আমার পক্ষে ছুঃসাধ্য। হয় তো 
দীর্ঘকাল চিঠি পাবে না। তোমার মনে আমার ভুল পরিচয় 
ছিল তাই [এতগুলো চিঠি এত করে লিখেচি। তাও লেখবার 
দরকার ছিল না_ কিন্তু তোমার চিঠি পড়ে খুসি হয়েছিলুম 
বলেই লিখেচি। তুমি কে তা আমি জানি নে-_ কিন্তু তোমার 
লেখা থেকে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে তুমি লিখিয়ে, অর্থাৎ 
আমাঁদেরি দলের লোক তাই তোমার দাবী অগ্রাহ্া করা সম্ভব 
হোলো না। কিন্ত নিয়মিত চিঠি আমার কাছ থেকে চেয়ো না। 


৮ 


আমি শ্রান্ত অথচ ব্যস্ত। ইতি ১৯ বৈশাখ ১৩৩৮ 
শুভাকাজ্ী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


নি 


€ মে ১৯৩১ 


ওঁ শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্তু 

আমার চিঠি না পেলে আর কোনে ছুধ্যোগ কল্পনা কোরো 
না কেবল এইটে মনে কোরো আমার সময়ও কম, বয়সও বেশি, 
শক্তিও পূর্বের মতো নেই । এখন মনিবের কাছে আমার ছুটির 
দরবার চল্‌্চে। মঞ্জুর হয় নি__ তাই ভাঙাশরীরে কাজ চালাতে 
হচ্চে-_ এই জন্যে সব কাজেই কুপণত1 করতে হোলো । মনে 
নিশ্চয় জেনো আমি একান্ত মনে কামনা করি তোমার অন্তরে 
যে আনন্দের সঞ্চয় আছে তা অক্ষয় হোক এবং রচনাসম্পদের 
ষে প্রাচুধ্য তোমার লেখনীতে তাও অক্ষুপ্ন থাক্‌। 

তোমার খাতা পেয়েছি । আমার টেবিলের উপর নান! বস্তুর 
সমাবেশে যে বিরাট অব্যবস্থার বিস্তার হয়েচে তার মাঝখানে 
কোনো রক্ষণীয় জিনিষকে রক্ষা করতে ভয় করি। একবার 
ইতস্তত এ পাঁতে ও পাতে চোখ বুলিয়েছি__ এর মধ্যে কাচা পাকা! 
অনেক রকমের জিনিষ দেখ! গেল। কিন্ত আমার জিম্মা করে 


৩ 


দিয়ে না__ জিনিষ হারাঁনো সম্বন্ধে আমার অসাধারণতা আছে 
__সেট। নিজের জিনিষে মার্জনীয় কিন্তু ন্যস্ত ধনে অপরাধ | ইতি 


২২ বৈশাখ ১৩৩৮ শুভানুধ্যায়ী 
শ্লীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
৯ 
* মে ১৯৩১ 
ও শান্তিনিকেতন 
কল্যাণীয়াস্ত 


জন্মদিনের কাণ্ড নিয়ে নিরতিশয় ব্যস্ত থাকতে হয়েছিল । 
আজ ছাবিবশে, তবু পরিশিষ্ট ভাগ যথেষ্ট ব্যাপক | তাই নিয়ে 
প্রত্যষ থেকে নিরস্তর লৌকসমাগম আলাপ অভ্যর্থনা চল্চে। 
তার উপরে পত্রের উত্তর দেওয়া আছে তারও পরিমাণ একটুও 
সংক্ষিপ্ত নয়। 

যখন সুস্থ হয়ে বসতে পারব তোমাকে চিঠি লিখব । ইতি- 
মধ্যে সংক্ষেপে এইটুকু বলে রাখি তোমার উপহ্ৃত গরদের জোড় 
পেয়ে খুব খুসি হয়েচি। কাজে লাগ্বে। যদি কখনো দেখা 
হয় তবে মোকাবিলায় আনন্দ জ্ঞাপন করব। ইতি ১৬ বৈশাখ 
১৩৩৮ শুভাকাত্ী 


শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


২৪ 


৯১ 


১৩ মে ১৯৩১ 


তত শান্তিনিকেতন 


কলাণীয়াস্থ, 

রডীন ভাবরসবাম্পের মেঘমণ্ুলে নিবিড় করে ঘের! একটি 
জগতে তুমি বাস করো-_ তোমার চিন্তা চেষ্টা আকাজ্ষা 
অভিরুচি সেইখানকারই রঙে রঙানো রসে রসাঁনো, সেইখান- 
কারই উপাদানে তৈরি । তোমার চিঠিগুলি থেকে সেইখানকার 
বার্তী পাই; সেইখানকার ভাষারও পরিচয় পেতে থাকি। 
বুঝতে পারি নে তা নয়, কিন্তু সেই সঙ্গে এও বুঝি আমি ও 
জায়গার মানুষ নই । তোমাদের জীবনের লক্ষ্যকে একটি 
বিশেষ রূপে মূর্ত করে প্রতিষ্ঠিত করেচ, একটি স্ুনি্দিষ্ট কক্ষপথে 
বিবিধ উপচারসহ তাকে প্রদক্ষিণ করচ। ওখানে বাসা 
বাধবার মতে প্রকৃতিই আমার নয়। তুমি মনে করতে পারো 
যে, তার কারণ আমার মন ব্রাহ্মসংস্কারে চালিত-__ একেবারেই 
নয়, নূতন বা পুরাতন কোনো প্রচলিত সংস্কারে আমাকে 
কোনোদিন বাধে নি। মাঝে মাঝে ধরা! দিতে গিয়ে ছিন্ন করে 
বেরিয়ে চলে এসেচি__ আমার জায়গা হয় নি। কোনো সনাতন 
বা অধুনাতন ছাঁচে-ঢালা উপজগতের মধ্যে নিজেকে ধরাতে 
পারলুম না। আমি কেবলি চল্তে চল্তে পাই এবং পেতে 
পেতে চলি, এমনি করেই এতদিন কেটেচে। তুমি যে পাকা 
ইটের প্রাচীর-তোল| রসলোকে বাস করচ আমার পথের এক 
অংশে একদা আমি তার মধ্যেও প্রবেশ করেছিলুম-_ চৈতন্য- 


৫ 


ভাগবতে আমিও একদিন ডুব মেরেছি__ কিন্ত আমার যে-পথ 
আমাকে সেইখানে নিয়ে গিয়েছিল সেই পথই আমাকে সেখান 
থেকে বের করে নিয়েও এল-_ যদি ওখানে আমাকে কোনে 
কারণে থাকতেই হোত বাসিন্দা হয়ে থাকতে পারতুম না 
বন্দী হয়ে থাকতুম । আমি ধাঁকে পাই বা পেতে চাই কেবলি 
এগিয়ে গিয়ে তাকে পেতে হয়, আড্ডা গেড়ে বস্লেই গ্রন্থিটাকে 
পাই সোৌনাটাকে ফেলে দিয়ে। নানা রকম চিহ্ন দিয়ে চেহারা 
দিয়ে কাহিনী দিয়ে সদরের গেট ও খিড়কির প্রাচীর দিয়ে 
তোমাদের পাওয়াটাকে খুব পাকা করে নিয়ে তোমরা ভোগ 
করতে চাও আমি দেখি আমার যিনি পাওয়ার ধন এ সমস্ত 
পাকা প্রাচীরই তার পালাবার বড়ো রাস্তা । মন্দির থেকে 
দৌড় মারবার জন্যেই তার রথযাত্রা । আমার সম্পদকে সুনিদ্দিষ্ট 
স্বরক্ষিত করবার জন্যে আমি আমার পিতামহদের লোহার 
সিন্ধুকটাকে কাজে লাগাতে চাইনে, ওজনদরে সে সিন্ধুক যতই 
ভারী ও কারিগরিতে যতই দামী হোঁক্‌না। আমার সম্পদ 
রয়ে গেল আকাশে আলোতে বাতাসে আর আমার অন্তরা- 
কাশে। আর তার পরিচয় রইল পৃথিবীর সকল কবির কাব্যে, 
কলারসিকের চিত্রে নৃত্যে গানে, মনীষীর মননে, কম্মীর কন্মে, 
পৃথিবীর সকল বীরের বীধ্যে, ত্যাগীর ত্যাগে। এরা যে 
চলেচে তারই সঙ্গে যুগে যুগে তারই পথে পথে । কোনো বাঁধা 
বাক্যে তারা ধর! দেয় না, বাধা মতে আটক পড়ে নাঃ বাঁধা রূপের 
শিকল পরে না। একজন যদি বা পথ রোধ করে" হাকতে থাকে 
চরমে এসেচি, আর একজন অট্রহাস্তে সে বাধা চুরমার করে 


৬ 


দেয়। এটা অত্য,ক্তি হবে যদি বলি কোনো বাঁধা মতে আমাকে 
পেয়ে বসে না কিন্তু সে সব কাধনের গ্রন্থি আলগা-_ যখন 
টান পড়ে তখন আপনিই খোলে, গলায় ফাঁস লাগায় না। 

এত করে তোমাকে এ সব কথা বলচি তার কারণ এই, যে, 
তুমি মনে করেচ আমি তোমার চিত্তকে আশ্রয় দিতেও পারি। 
কিন্তু আমার মনে হয়, যে অন্নে তোমার অভ্যাস সে অন্ন 
আমার ঘরে নেই-_ তুমি আমাকে যে ভাবে কল্পনা করচ আমি 
হয়তো সে ভাবের মানুষ নই-_ আমাকে কাছে দেখলে সে 
কথাটা ধরা পড়ে হয় তো তুমি কষ্ট পাবে। 

তুমি লিখেচ আমার সম্বন্ধে এক সময়ে তোমার এবং 
তোমাদের অনেকের একটা বিরুদ্ধতা ছিল। এই বিরুদ্ধতা 
প্রচ্ছন্ন ও প্রকাশ্তভাবে আমার দেশের ভিতরেই আছে । আমার 
স্বভাব দেশের প্রচলিত ধারার সঙ্গে ছন্দ মেলাতে পারে নি। 
যাদের আমি বন্ধুভাবে গণ্য করেছি, হঠাৎ দেখি আমার সম্বন্ধে 
তাদের প্রতিকূলতা নিদারুণভাবে তীব্র হয়ে উঠেচে। বুঝতে 
পারি আমি যেখানকার লোক সেখানকার সঙ্গে আমি বেখাপ। 
এক জায়গায় এরা আমার কাছাকাছি এসে হু'চট খেয়ে পড়ে__ 
সেট! আমার স্বভাবের দোঁষে না তাদের চলনের ক্রটিতে সে 
তর্ক করে কোনে! লাভ নেই-_ এবং তর্কে জিতলেও কোনো! 
সান্ত্বনা নেই । 

বাল্যকাল থেকে তুমি যে সব বাংল! বই পড়েচ তোমার 
চিত্ত এবং রুচি যে সাহিত্যরসে সাঁড়। দিতে অভ্যস্ত তোমার 
চিঠিতে তারও বিবরণ দেখলুম। তুমি নিশ্য় এটা দেখেচ 


৭ 


আমাদের সাহিত্যে দীর্ঘকাল ধরে নান! প্রকার সমালোচনার 
আমি লক্ষ্য-_ কিন্ত আমি নিজে পারতপক্ষে সমালোচনার 
আসরে কলম হাতে নিয়ে নামি নে। আমার দেশের প্রচলিত 
সাহিত্যের সীমানার মধ্যে আমার চিত্ত পদে পদে বাঁধা পায়। 
তার প্রাদেশিকতা, অগভীরতা, অপটুতা আমার আদর্শের সঙ্গে 
মেলে না। এই সব নানা কারণে আমি খুব কোণে এসে বসেচি। 
নিজেকে একঘরে" করে নিয়ে থাকাই আমার পক্ষে আরামের 
ও নিরাপদ । নিশ্চয়ই দেখবে সাহিত্যক্ষেত্রেও তোমার সঙ্গে 
আমার স্ররের মিল হবে না। তার কারণ, আমার দেশে আমি 
বেগানা-_ আমাকে যখন তোমাদের ভালোও লাগে সেও হয়ত 
একটা কোনো আকস্মিক কারণে । অথচ এ কথা নিশ্চয় জেনো, 
সাহিত্যের দ্রিক থেকে তোমার লেখায় বারে বারে আমাকে 
বিস্মিত ও আনন্দিত করেচে। কিন্তু সাহিত্যবিচারবুদ্ধিতে তুমি 
যে প্রশস্ত আদর্শ পেয়েছ তা আমি মনে করি নে। না পাঁবার 
প্রধান কারণ বাংলা সাহিত্যকে তুমি বাংল সাহিত্যের বাহির 
থেকে দেখতে পাও নি । যুরোপীয় সাহিত্যের মধ্যে বিশ্বসাহিত্যের 
যে প্রকাশ আছে ঘটনাক্রমে তার পরিচয় তোমার কাছে নেই। 
অথচ আধুনিক বাংল সাহিত্য যে ভিতের উপর তার বাসা 
ফাঁদচে সে ভিৎটা যুরোপীয় । তার গল্প, তার কাব্য, তার নাটক, 
প্রাচীন রীতির আশ্রয়ে তৈরি হয় নি-_ সেই কাঁরণেই যুরোগীয় 
সাহিত্যবিচারের আদর্শে তাকে বিচার করা ছাড়া অন্তা পন্থা 
নেই । সংস্কৃত অলঙ্কারশান্ত্রের নির্দেশ এখানে একেবারেই খাটবে 
না। 


২৮ 


যখন কলকাতায় যাব কোনো স্থযোগে হয়ত দেখা হতে 
পারে। সম্প্রতি আমার বৌমা তার সংসার নিয়ে দাজ্জিলিঙে 
আছেন-- সেই জন্যা কলকাতায় গেলে জোড়াসাকোর শুন্য 
বাড়িতে না থেকে স্েহাম্পদ প্রশান্তকুমারের বরাহনগরের বাঁগান- 
বাড়িতে ছুই চার দিন থেকে আবার এখানে পালিয়ে আসি। 
সেখানে তুমি হয়ত যেতে সঙ্কোচ বোধ করবে । জোড়াসাকোর 
বাড়িতে যদি আসতে পাঁরো বড়োমানুষির বাঁধা পাবে না । আগে 
থাকতে যদি জানতে পারি তবে কোনো অস্ুবিধা হবে না। 
কিন্তু কবে কলকাতায় যাব জানি নে-__ যাবার একটুও ইচ্ছে নেই 
এইটুকু বলতে পারিনে। এতবড়ো চিঠি লেখা আমার পক্ষে 
অত্যন্ত ছুঃসাধ্য | কিন্তু যে আমাঁকে সত্যই বুঝতে চায় সেআমাকে 
পাছে একটুও ভুল বুঝে অস্থানে অর্থ্য আহরণ করে এটাতে 
আমার একান্ত অন্ভিরুচি বলেই এতটা লিখতে হোলো । হয়তো 
কিছু অহঙ্কীরের মত শোনাচ্চে কিন্ত নিজের সম্বন্ধে আমার ধারণ। 
যদি অহক্কুত ধারণাই হয় সেটাও প্রকাশ হওয়াই ভালো ইতি 

৩০ বৈশাখ ১৩৩৮ শুভাকাত্কী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


আমার নিরতিশয় ব্যস্ততার মধো আমি নতুন কবিতা 
স্বহস্তে লিখে শ্রীপতি বন্্রুকে পাঠিয়েছি সেটা কোথায় অন্তদ্ধান 
করল ? তার পরিবর্তে শ্রীপতির এক অভিমানক্ষুব্ধ পত্র পেলুম-_ 
এ পত্র পোষ্টবিভাগের কর্তাদের প্রাপ্য। তোমরা কোন্‌ চিঠি 
পাও কোন্টা পাও না! তাও নির্ণয় কর! অসাধ্য 


৪ 


১২ 


১৪ মে ১৯৩১ 


ও শীম্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্ু 

রোসো, সব প্রথমে তোমাকে গুটিকতক কাঁজের কথ বলি। 
ভয় পেয়ো না। 

হঠাৎ কিছুদিন পুর্বে পারস্তরাজ আমাকে তার রাজ্যে 
নিমন্ত্রণ করেছিলেন। নিজের দেহ দারিদ্র্য ভুলে গিয়ে স্বীকার 
করেছি। সেখানকার গোলাপবাগানের বুল্বুলের গীতপত্রী 
মনে এসে পৌঁছল । সব প্রস্তুত। সেই সময়ে আমার অনুভব 
হোলো যে-রসের আসরে এ জন্মে আমার ডাক পড়েচে সেখান- 
কার পরিভাষায় সব ভাষাই মেলে । তাই তোমাকে একখান 
পত্রে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলুম কৌনো বিশেষ কুলুপে আমার 
ভাণ্ডারার খোলে না। বস্তত বিশেষ কুলুপের জটিল চেহার৷ 
দেখলেই আমাকে ব্যস্ত করে তোলে । হয়ত আমার সে লেখায় 
কিছু স্পদ্ধার সুর ছিল-_ মেট! একেবারেই ভালো নয়-_ 
তোমার আনন্দের উৎস যদি কোনো বিশেষ আকারের ফোয়ারা 
দিয়ে উচ্ছলিত হয় তার রূপ ও ভঙ্গী শুধু কেবল রসমাধুধ্যে নয় 
তোমার মমত্বের অফুরান ইন্দ্রজালে মূল্যবান । তোমার চিত্ত 
গভীরভাবে তার মধ্যে আবিষ্ট হোক্না কেন ! 

সেই ও পারের গোলাপবাগানে বুলবুলের আসরের পথে 
ডান! মেলচি এমন সময়ে জ্বর এল । বুঝলুম আমার মনিব দ্বার 


১৩ 


আগ্লে দাড়ালেন। জ্বর আমার প্রায়ই হয় না। এবারকার 
মতো চুকে গেল। 

আর একট! কথার উপর তোমার মন ভঁচট খেয়েছে । সে 
হচ্ছে শ্তরীযুক্তা। ও বিশেষণটা ভীমের তুণেই মানায়-- আমি 
সব্যসাচীর চেলা। যিনি খামের যোগে তোমার প্রতি এই সংজ্ঞ। 
প্রয়োগ করেছিলেন তিনি আমার সহকারী শ্রীযুক্ত অমিয়চক্দ্র-_ 
তার সুকুমার নামকে শ্রীমান পদবীতে ভূষিত করলুম না । শিক্ষার 
জন্যে ভ্রমরস্ত পেলবং পদং সরিয়ে দিয়ে পতত্রীকে বসানো গেল। 

আরো একটা বিষয়ে তিনি স্বাধিকারপ্রমত্ত হয়ে পরের 
অধিকারকে লজ্ঘন করেছেন । শ্রীপতির নামে যে কবিতা আমি 
বিশেষ করে রওনা করেছিলুম তাঁর উপর তিনি দক্ষবালার স্বত্ব 
স্থাপন করেছেন । এ কথা বলে রাখি, নায়ীর প্রতি যাই হোক এ 
নামের প্রতি আমার লেশমাত্র পক্ষপাত নেই । 

যিনি প্রমাদ ঘটিয়েছেন তিনি এই আশু অপরাধের পুবেবেই 
কিছুকাল থেকেই কান্তাবিরহগুরুণা শাপেনাস্তংগমিতমহিম।। 
অতএব তার ভ্রম সংশোধন করে তাকে ক্ষমাহ করে নিয়ো । 

এই উপলক্ষ্যে আর একটি কথা আছে । তোমার পরে আমার 
কোনো শাপ লাগে নি। তোমার জীবনের যন্ত্র এবং আমার যন্ত্রে 
তারের কিছু তফাৎ আছে। তবুও এক ওস্তাদ আর এক 
ওস্তাদকে চেনে এবং বাহবা দেয় । আমার বাহবা পেয়েছ । 

কিন্ত জ্রতাপ চড়ে যাচ্চে। তুমি অকারণে নিজেকে পীড়ন 
কোরো না । ইতি ১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮ শুভানুধ্যায়ী 

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৩১ 


২০ মে ১৯৩১ 


2€ 


কল্যাণীয়ান্তু 
যদিও জ্বর ভোগ করছিলুম তবুও পারস্যাত্রার আয়োজনে 
প্রবৃত্ত ছিলুম। যাত্রার পূর্বদিনে অস্ুখ বেড়ে উঠল-_ ডাক্তার 
পথরোধ করে দ্লাড়াল। তাই পারস্তের বদলে শয্যার শরণ 
নিয়েছি । 
তোমার লেখা যখন যা খুসি পাঠিয়ে দিয়ো। নিশ্চয়ই 
পড়বে। এবং ভাল লাগবারই আশা করি। আমার তরফ থেকে 
চিঠি লেখা অনেক সময়েই ছুঃসাধ্য হবে । কবিপরিচিতি নামক 
একখানি বই তোমাকে পাঠাতে বলেছি । ইতি ৬ জ্যেষ্ঠ ১৩৩৮ 
শুভাকাজ্জী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


১৪ 


[ মে ১৯৩১ ] 
শান্তিনিকেতন 
কল্যাণীয়াস্থ 
এতটুকু একটুখানি জ্বর রক্তের মধ্যে লুকোচুরি করে বেড়াচ্ছে 
__ডাক্তার তাকে চিনে উঠতে পারে না! । দাজ্জিলিঙের হাওয়ায় 
তাঁকে ঝাড়িয়ে নেবার জন্যে পরামর্শ দিচ্চে। অবশেষে হার 


৩ 


মেনে সেই দিকে পা! বাঁড়িয়েছি। কাল রবিবারে কলিকাতায় 
যাত্রা করব । তারপরে দুই একদিন ডাক্তাররা নানাবিধ যন্ত্রের 
দ্বারা সওয়াল জবাব করে দেহটার কাছ থেকে তার গোপন 
অপরাধের বিষয় ও আঁশ্রয়টার কথাট। কবুল করিয়ে নেবার 
চেষ্টা করবে । জানি পারবে না । অবশেষে হিমাচলের উপরে ভার 
পড়বে শুশ্রাধার | 
আমার মধ্যে বৈষ্ণবকে তুমি খোজো । সে পালায় নি। কিন্তু 
তার সঙ্গেই আছে শৈব,__ ভিখারী এবং. সন্ন্যাসী । রসরাঁজের 
বাশিও বাজে নটরাজের নৃত্যও হয়__ যমুনায় নৌকা ভাসাঁন 
দিয়ে শেষকাঁলে পড়ি গিয়ে সেই গঙ্গায় যে গঙ্গ৷ গৈরিক পরে 
চলেছেন সমুদ্রে । ইতি শয্যাগত 
শ্রীরবীন্দ্রনীথ ঠাকুর 


১৫ 


দ[জিলিং * ৩* মে ১৯৩১ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

ক্ষুদে জ্বরে পেয়ে বসেছিল, তার বহর নিরেনব্বইয়ের বেশি 
নয়, কিন্তু সেই জন্যেই ঝুঁটি ধরে তাকে বিদায় করা শক্ত হয়ে 
উঠেছিল। সংসারের সমস্ত ক্ষুদে শত্রদের জোর এখানেই__ 
চেপে ধরতে গেলেই এড়িয়ে যায়। কিছুই নয় বলে যতই 
অবজ্ঞা করতে চেষ্টা করেছি ততই সে পাকা করে বাসা বাধতে 


৯৩ ৩৩ 


লেগে গেল। অবশেষে দেবতাত্ম। নগাধিরাজের শরণ নিয়েছি। 
নিরেনববইয়ের ধাক্কাটা এখানে এসে কেটেচে। আমার শরীরের 
জন্যে মনে কোনো উদ্বেগ রেখো না। ঘোরতর কুঁড়েমিতে পেয়ে 
বসেচে__ কুঁড়েমির ছুর্গে আছি বল্লেই হয়__ এমন কি ছবি 
আঁকার ছুনিবার নেশাও আমাকে নাগাল পাচ্ছে না। আমার 
খবর যদি পেতে চাও তবে দৈনিক সংবাদপত্র চলবে না 
সাপ্তাহিক সম্ভবপর হতে পারবে। যাই হোক দেহটা সম্বন্ধে 
ছুঃসংবাদের আশঙ্ক! নেই। 


দাদা 
ঠিকানা £5816011, দাজ্জিলিং 
১৬ 
হ জুন ১৯৩১ 
ঙঁ দাজ্জিলিং 
কল্যাণীয়াস্ু 


এখানকার পাহাড়ে এই জ্যৈষ্ঠ মাসেও যেমন অকস্মাৎ পুণ্থ 
পুর্ত মেঘ জমে উঠে চারদিক অকারণে আচ্ছন্ন করে দেয় তোমার 
মনের মধ্যেও দেখি সেই দশা । কোথাও কিচ্ছু নেই ছুঃখের কুয়াশা 
ঘন করে জমিয়ে তোলে! । তোমার পত্রে আমার প্রতি সৌজন্থের 
কোনো স্থলন হয়েচে এ আমি লক্ষ্যও করি নি তার একটা 
কারণ বিশ্বাস করতে পারিনে, আর একটা কারণ, দেবতার যে 
অধ্য্ের বর্ণনা নিয়ে তোমার ভাষায় চ্যুতি হয়েচে বলে কল্পন৷ 


৩৪ 


করচ সে সম্বন্ধে আমার কিছুই জানা নেই। আমাদের দেবতার 
যে কিপ্রাপ্য আর কি প্রাপ্য নয় সে আমার অগোচর-_ কেবল 
মাঝে মাঝে এই কথাটা! মনে হয় ধাদের বন্দনায় কাসরের ধ্বনি 
চলে তাদের ভোগের জন্যে কী না চল্তে পারে । 

শরীরটা এখানে এসে ভালোই আছে সে সংবাদ পুরবে্রেই 
জানিয়েছি । দেহটা এখন অপরিমিত আলস্তসাধনায় নিযুক্ত আছে। 

তুমি যে-ভাষায় চিঠি লেখ সেই ভাষায় যদি গল্প লেখ নিশ্চয়ই 
সেট! উপাদেয় হবে । সাজিয়ে লিখ তে গেলেই ঠক্বে। তোমার 
জানা কথা ঘরের কথাকে গল্পে ফুটিয়ে তুললে সাহিত্যে তা আদর 
পাবে কেননা তোমার লেখায় সহজ রস আছে। ইতি ১৯ জ্যৈষ্ঠ 


১৩৩৮ শুভাকাজক্ষী 
শ্রীরবীক্দ্রনাথ ঠাকুর 
৪6 সন ১৯৩১ 
রত দাজ্জিলিং 
কল্যা ণীয়াস্ত 


তোমার চিঠি থেকে তোমার লেখা কিছু কিছু আমার চুরি 
করতে ইচ্ছে করে। হয়ত কোন্দিন করব। তোমার মধ্যে 
দেখবার দৃষ্টি, ভাববার মন, লেখবাঁর কলম ও হৃদয়ের আবেগ 
একসঙ্গে মিলেচে। তোমাঁর লেখায় অনায়াসে তুমি রস সধ্র 
করতে পারো । লেখক হিসাবে আমার একটা অভাব আছে। 


৩৫ 


আমি আমাদের দেশের সমাজকে অন্তরঙ্গ ভাবে জানি নে। তাই 
গল্প যখন লিখি ছবিতে ফাঁক থাকে, পাশ কাটিয়ে চলতে হয়। 
তোমার চিঠিগুলিতে খাটি বাঙালীঘরের হাওয়া পাই । বিদেশে 
থাকবার সময় এক একদিন হোটেলের কেদারায় ঠেসান দিয়ে 
মুলতান সুরে গুন্গুন্‌ করে গান গাই, “মনে রইল সই মনের 
বেদনা”, অম্নি বাংল! দেশের মেয়ের করুণ হৃদয়ের স্পর্শ মনে 
এসে লাগে। তোমার চিঠির বিচিত্র আলোচনায় বাঁডীলী মেয়ের 
অন্তরের স্ুুরটি স্পষ্ট করে ফুটে ওঠে-_ আমার ভালো লাগে । 
হাসি পায় যখন তোমার চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করো যে 
আমার রাগ হচ্চে। তৃমি কি মনে করো মতামতের গদাযুদ্ধ কর 
আমার স্বভাব? যেখানে আমি রস পাই, সেখানে তর্কের 
বিষয়টা আমার কাছে গা-ঢাক। দেয়, সেখানে কিছুই আমার 
পক্ষে বেগান। নয় | বৈষ্ণব যেখানে বোষ্টম নয় সেখানে আমিও 
বৈষ্ণব, খৃষ্টান যেখানে খেষ্টান্‌ নয় সেখানে আমিও খুষ্টান। 
আমাদের দেবপুজায় বিদেশী ফুলের স্থান নেই, কিন্তু আমার 
মনের কাছে সব ফুলই ফুল, সোলার ফুল ছাড় । নিজের মধ্যে 
য1 খাঁটি বিখের সত্যকে তা স্পর্শ করে। 

ভ্রাণেন অদ্ধভোজনং-_ রাজসাহী জেলার রান্নার যে গন্ধ 
তোমার চিঠি থেকে পাঁওয় গেল সেট! লোভনীয়, সুক্তনিতে 
এসেই থামবার দরকার নেই । আমার মুক্ধিল এই, আমার 
এ বয়সে উপাদেয় ভোজ্যের সমাদর রসনা পধ্যন্ত, পাকযন্ত্ 
পর্য্যন্ত নয়। এত কম খাই যে, যদি তাঁর বিবরণ প্রচার করি 
তবে আমাদের দেশের লোকে আমাকে মহাপুরুষ বলে মনে 





৩৬ 


করতে পারে । একদা আমি ভাত না খেয়ে রুটি খেতুম__ সেটাকে 
উপবাস শ্রেণীতে গণ্য করে' আমার প্রজাদের মনে প্রগাঁ ভক্তির 
সঞ্চার হয়েছিল। অবশেষে নিতান্ত দৈম্তের জ্বালায় যদি অবতারের 
ব্যবসা ধর! দরকার হয় তবে এই পরিমাণে তার শিক্ষা এগিয়ে 
আছে। 

ঘন মেঘ করে বৃষ্টি এল, এইবার চিঠি বন্ধ করা যাকৃ। ইতি 


১ জ্যৈঠ ১৩৩৮ শুভাকাজ্্ষী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
পি ভূন ১৯৩১ 
দাজ্জিলিং 
কল্যাণীয়ান্ত 


বাহির থেকে যতটা পীড়া পাও তাই যথেষ্ট কিন্তু অন্তর 
থেকে স্বরচিত পীড়। তার সঙ্গে যোগ কোরো না। বিধাতা 
যেখানে দীড়ি টেনে দেন তোমার মনকে বোলে! তার পিছনে 
মোটা কলমে আরো একটা দাঁড়ি টেনে খতম করে দিতে। 
আমাদের দেশে অন্ত্যেষ্টিসংকারের তত্বটা এ মৃত্যু যখন 
দেহটাকে সংহার করে তখন সেটাকে কবরে জমাবার চেষ্টা 
না করে আগুন জালিয়ে সেটার উপসংহার করাই শাস্তির পথ । 
সংসার আমাদের অনেক কিছু দিয়ে থাকে কিন্তু তার চরম 
দান হচ্চে বঞ্চিত হবার শিক্ষাদান । যা পাওয়া যায় তার উপরে 


৩৭ 


একান্ত নির্ভর করার অভ্যাসেই আমাদের সাংঘাতিক ফাঁকি দেয়, 
যা হারায় বাঁ না পাওয়া যায় সে ফাঁকির মধ্যে প্রবঞ্চনা নেই, 
সেটার উপলক্ষ্য সংসারে পদে পদেই ঘটে তবু তাকে সহজে গ্রহণ 
করবার শিক্ষাটা কিছুতেই পাঁকা হতে চায় না । যেখানে আপিল 
খাটে না সেখানে নালিশ করার মতো অপব্যয় কিছুই নেই । 
অন্তরের মধ্যে একটা ক্ষতিপূরণের ভাণ্ডার আছে-__ কিন্ত আমরা 
সেই ভাণ্ডারের কুলুপে মরচে ধরিয়ে ফেলি তাই সাস্তবনার 
সম্পদকে অন্তরে আবদ্ধ রেখে তাকে পাই নে। আমাদের উৎস 
আছে তার মুখে পাথর চাপানো, ডোবা আছে তার জল পদে 
পদে শুকিয়ে যায়__ সংসারের নিষ্ঠুরতা বারবার কঠোর কণ্ঠে এই 
কথাই বলে, এ পাথরটাকে ঠেলে সরিয়ে দাও। বাহিরটা 
বিশ্বাসঘাতক, তাকে জোরে আশ্রয় করতে গেলেই আশ্রয় 
ভাডে-_ সেই ভাঙনেই যদি অন্তরের পথ দেখিয়ে না দেয় তবে 
ছুদিক থেকেই ঠকতে হয়। আমার মুখে উপদেশ শুনে মনে 
কোরো! না যে আমিই বুঝি বাহিরের মর্ত্যলোক ডিডিয়ে অন্তরের 
অমরাঁবতীতে গিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি | যখন সংসার থেকে তাড়া খাই 
তখন সংসার পেরোবার রাস্তা সাফ করতে লেগে যাই-_ ফীড়া 
কেটে গেলে আবার কুঁড়েমিও ধরে । অতএব উপদেষ্টাকে অযথ। 
ভক্তি করবার কারণ নেই । 
সব্বান্তঃকরণে তোমাকে আশীর্বাদ করি । ইতি ১৪ জ্যৈষ্ঠ 
১৩৩৮ শুভাকাজ্কী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


১৪ 


১৪ জুন ১৯৩১ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমার জীবনট। তিন ভাগে বিভক্ত-_ কাঁজে, বাজে কাজে 
এবং অকাজে । কাজের দিকে আছে ইস্কুলমাস্টারী, লেখা, বিশ্ব- 
ভারতী ইত্যাদি, এইটে হোলো কর্তব্য বিভাগ । তার পরে 
আছে অনাবশ্যক বিভাগ । এইখেনে যতকিছু নেশার সরঞ্জাম । 
কাব্য, গান এবং ছবি। নেশার মাত্রা পরে পরে তীব্রতর 
হয়ে উঠেচে। একদা প্রথম বয়সে কবিতা ছিলেন একেশ্বরী 
__ ধরণীর আদিযুগে যেমন সমস্তই ছিল জল। মনের এক 
দিগন্ত থেকে আর এক দিগন্ত তারি কলকল্পোলে ছিল মুখরিত। 
নিছক ভাবরসের লীলা, স্বপ্ললোকের উৎসব । তার পরে দ্বিতীয় 
বয়সে এল কাজের তাগিদ। সেই উপলক্ষ্যে মানুষের সঙ্গে 
কাছাকাছি মিলতে হোলো । তখনি এল কর্তব্যের আহ্বান। 
জলের ভিতর থেকে স্থল মাথা তুলল। সেখানে জলের ঢেউয়ে 
আঁর উনপর্শশ পবনের ধাক্কায় টলে' টলে' কেবল ভেসে ভেসে 
বেড়ানো নয়, বাসা বাঁধার পালা, বিচিত্র তাঁর উদ্যোগ । মানুষকে 
মানতে হোলো, রডীন প্রদোষের আবছায়ায় নয় সে তার 
নুখ দুঃখ নিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠল বাস্তব লোকে । সেই মানব 
অতিথি যখন মনের দ্বারে ধাক্কা দিয়ে বল্লে, অয়মহং ভোঃ। 
সেই সময়ে এ কবিতাটা লিখেছিলুম, এবার ফিরাও মোরে। 
শুধু আমার কল্পনাকে নয়, কলাকৌশলকে নয়, দাবী করলে 


৩৯ 


আমার বুদ্ধিকে চিন্তাকে লেবাকে আমার সমগ্র শক্তিকে, 
সম্পূর্ণ মনুষ্যত্বকে । তখন থেকে জীবনে আর এক পর্ব সুরু 
হোলো । একটা আরেকটাকে প্রতিহত করলে নাঁ_ মহা- 
সাগরে পরিবেষ্টিত মহাদেশের পালা এলো । মাতামাতি এ 
রসসাগরের দিকে, আর ত্যাগ ও তপস্তা এ মহাদেশের ক্ষেত্রে । 
কাজেও টানে, নেশাতেও ছাড়ে না। বহুদিন আমার নেশার 
ছুই মহল ছিল বাণী এবং গান, শেষ বয়সে তার সঙ্গে আর 
একটা এসে যোগ দিয়েছে__ ছবি । মাতিনের মাত্রা অনুসারে 
বাণীর চেয়ে গানের বেগ বেশি, গানের চেয়ে ছবির । যাই 
হোক্‌ এই লীলাসমুদ্রেই আরম্ত হয়েচে আমার জীবনের আদি 
মহাযুগ-_ এইখানেই ধ্বনি এবং নৃত্য এবং বণিকাভঙ্গ, এই- 
খানেই নটরাজের আত্মবিস্ুত তাণ্ডব । তার পরে মধ্যযুগে নটরাজ 
এলেন তপস্বীবেশে ভিক্ষুবূপে । দাবীর আর শেষ নেই। ভিক্ষার 
ঝুলি ভরতে হবে__ ত্যাগের সাধনা কঠিন সাধনা । 

এই লীলা এবং কন্মের মাঝে মাঝে নৈক্ষন্ম্যের অবকাশ 
পাওয়া যায়। ওটাকে আকাশ বল! যেতে পারে, মনটাকে 
শৃন্যে উড়িয়ে দেবার সুযোগ এখানে__ না আছে বাঁধা রাস্তা, না 
আছে গম্যস্থান, না আছে কন্মক্ষেত্র । শরীর মন যখন হাল ছেড়ে 
দেয় তখনি আছে এই শুহ্য । সম্প্রতি কিছুদিন এই অবকাশের 
মধ্যে ছিলুম-- আপিসও ছিল বন্ধ, আমার খেলাঘরেও 
পড়েছিল চাবা। এই ফাঁকের মধ্যেই তোমার চিঠি এল আমার 
হাতে, পড়তে ভালো লাগ ল,__ ভালে লাগবার প্রধান কারণ, 
এই চিঠির মধ্যে তোমার একটি সহজ আত্মপ্রকাশ আছে, এই 


৪5০ 


সহজ প্রকাশের শক্তি একেবারেই সহজ নয়। অধিকাংশ লোক 
আছে যারা প্রায় বোবা, আর একদল আছে যারা কথা কয় 
পরের ভাষায়, যার। নিজের চেহারা দাড় করাতে চায় পরের 
চেহারার ষ্টাচে। তোমার সমস্ত প্রকৃতি কথ! কয়, ঝরনা যেমন 
কথা কয় তার সমস্ত ধাঁরাটাকে নিয়ে। আমি বুঝতে পারি 
আমাকে চিঠি লেখায় তোমার আন্তরিক প্রয়োজন আছে। 
প্রকাশ করবার আবেগ তোমার মধ্যে আছে, তার উপলক্ষ্য 
চাই। আমি স্েহের সঙ্গে শুনচি জেনে তুমি মনের আনন্দে 
অবাধে কয়ে যাচ্চ। আমাকে তূমি দেখে নি, স্পষ্ট করে জানো 
না,সেও একটা স্থযোগ | কেননা তোমার শ্রোতাকে তুমি নিজের 
মনে গড়ে নিয়েচ । তার অনতিস্ফুট পরিচয়ই একট! আবরণ, তার 
অন্তরালে অসঙ্কোচে আপন মনে কথা বলে যেতে পারো । 

ছুটি ছিল, না টেনেছিল আসল কাজে, না জমেছিল 
বাজে কাজ। তাই আমিও তোমাকে চিঠি লিখতে পেরেছি। 
কিন্তু যখন নামবে বধা, কাজের বাদল, তখন আর সময় দিতে 
পারব না। আর বেশি দেরি নেই । ইতিমধ্যে দুই একদিন 
ছবি আকার পাকের মধ্যে পড়েছিলুম, ভুলেছিলুম পৃথিবীতে 
এর চেয়ে গুরুতর কিছু আছে। যদি পুরোপুরি আমাকে পেয়ে 
বসত তাহলে আর কিছুতেই মন থাকত না। ওদিকে কাজের 
দিনও এলো বলে, তখন সময়ের মধ্যে ফাক প্রায় থাকবে না। 
কথাটা তোমাকে জানিয়ে রাখচি, কারণ, আমার চিঠি পাওয়া 
তোমার অভ্যাস হয়ে আসচে, বন্ধ যখন হয়ে যাবে তখন মনে 
কোরো না তার কারণ উপেক্ষা । আমার সময়ের উপর 


৪১ 


আমার ব্যক্তিগত অধিকার খুব কম, অবকাশের তহবিল সম্পূর্ণ 
আমার জিম্মায় নেই, তাঁকে যেমন খুসি ব্যয় করতে পারি নে। 
তোমাদের পুজার্চনার সঙ্গে বিজড়িত দিনফুত্যের যে ছৰি 
দিয়েছ, তার থেকে নারীপ্রন্কৃতির একটি সুস্পষ্ট রূপ দেখতে 
পেলুম। তোমরা মায়ের জাত, প্রাণের পরে তোমাদের দরদ 
স্বাভাবিক ও প্রবল। জীবদেহকে খাইয়ে পরিয়ে নাইয়ে 
সাঁজিয়ে তোমাদের আনন্দ । এর জন্তে তোমাদের একটা বৃভুক্ষা 
আছে। শিশুবেলাতেও পুতুল খেলাতে তোমাদের সেই সেবার 
আকাজ্কা প্রকাশ পায়। তোমার বোন যে তোমাকে প্রাণপণে 
সেবা করত সে তার স্বভাবের গরজে ; না করতে পারলেই তার 
চিত্ত বঞ্চিত হোতো। ঠাকুরের সেবার যে বর্ণনা করেচ তাতে 
স্পঈট দেখতে পাই সেই মাতৃহ্ধদয়েরই সেবার আকাজ্ষীকে 
বড়ো করে পরিতৃপ্তি দেবার এই উপায়। ঠাকুরকে ঘুম থেকে 
তোলা, কাপড় পরানো, পাছে তার পিন্তি পড়ে এই ভয়ে 
যথাসময়ে আদর করে খাওয়ানো ইত্যাদি ব্যাপারের বাস্তবতা 
আমার মতো লোকের কাছে নেই, তোমাদের কাছে আছে 
তোমাদের স্ত্রীপ্রকৃতির নিরতিশয় প্রয়োজনের মধ্যে- যেমন 
করে হোক্‌ সেই প্রকৃতিকে চরিতার্থতা দেবার মধ্যে । প্রাণের 
বেদনা যে আমার প্রাণেও বাজে না, তা নয়, কিন্তু সে বেদনা 
যথাস্থানেই কাজ খোজে, কাল্পনিক সেবায় নিজেকে তৃপ্ত করবার 
চেষ্টা একেবারেই অসম্ভব । আমার ঠাকুর মন্দিরেও নয়, 
প্রতিমাতেও নয়, বৈকুণ্ঠেও নয়”_ আমার ঠাকুর মানুষের মধ্যে-_ 
সেখানে ক্ষুধাতৃষ্ণ সত্য, পিস্তিও পড়ে, ঘুমেরও দরকার আছে-_ 


৪২ 


যে দেবত। স্বর্গের তার মধ্যে এসব কিছুই সত্য নয় । ফ্লোরেন্স, 
নাইটিঙ্গেল যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের শুরা করেচেন, 
সেইখানে নারীর পূজা সত্য হয়েচে। মানুষের মধ্যে যে দেবতা 
ক্ষুধিত তৃষিত রোগার্ত শোকাতুর, তাঁর জন্যে মহাপুরুষেরা সর্বস্ব 
দেন, প্রাণ নিবেদন করেন, সেবাকে ভাববিলাসিতায সমাপ্ত না 
করে তাকে বুদ্ধিতে বীধ্যে ত্যাগে মহৎ করে তোলেন। তোমার 
লেখায় তোমাদের পুজার বর্ণনা শুনে আমার মনে হয় এ জমস্তুই 
অবরুদ্ধ অতৃপ্ত অসম্পূর্ণ জীবনের আত্মবিড়ম্বনা । আমার মান্ুুষ- 
রাগী ভগবানের পুজাকে এত সহজ করে তুলে তাকে যার! প্রত্যহ 
বঞ্চিত করে তার! প্রত্যহ নিজে বঞ্চিত হয়। তাদের দেশের মানুষ 
একান্ত উপেক্ষিত, সেই উপেক্ষিত মানুষের দেন্যে ও দুঃখে সে 
দেশ ভারাক্রান্ত হয়ে পৃথিবীতে সকল দেশের পিছনে পড়ে 
আছে। এ সব কথা বলে" তোমাকে ব্যথা দিতে আমার সহজে 
ইচ্ছা! করে না-_ কিন্তু যেখানে মন্দিরের দেবতা মানুষের দেবতার 
প্রতিদ্বন্দী, যেখানে দেবতার নামে মানুষ প্রবঞ্চিত সেখানে আমার 
মন ধেধ্য মানে না। গরাঁতে যখন বেড়াতে গিয়েছিলেম তখন 
পশ্চিমের কোন্‌ এক পুজা মুগ্ধা রানী পাণ্ডার পা মোহরে ঢেকে 
দিয়েছিলেন -- ক্ষুধিত মানুষের অন্ধের থালি থেকে কেড়ে নেওয়া 
অন্নের মূল্যে এই মোহর তৈরি । দেশের লোকের শিক্ষার জন্যে 
অন্নের জন্যে, আরোগ্যের জন্যে এরা কিছু দিতে জানে না, অথচ 
নিজের অর্থ-সামর্থ্য সময় গ্রীতি ভক্তি সমস্ত দিচ্চে সেই বেদীমূলে 
যেখানে তা নিরর্থক হয়ে যাচ্চে । মানুষের প্রতি মানুষের এত 
নিরৌৎস্ক্য, এত ওদাসীন্য অন্য কোনো দেশেই নেই, এর প্রধান 


৪৩ 


কারণ এই যে, এ দেশে হতভাগা মানুষের সমস্ত প্রাপ্য দেবতা 
নিচ্চেন হরণ করে। 

রানী মহলানবিশ, প্রশীস্ত মহলানবিশের স্ত্রী। প্রশান্ত 
মহলানবিশ বিশ্বভারতীর প্রধান পাণ্ডা। কিন্ত পাণ্ত। নানা কর্তব্য 
নিয়ে অন্যমনস্ক, সেই জন্যে তোমাকে বই পাঠাবার আবেদন 
আমি পুরুষ দেবতাকে লঙ্ঘন করে নারী দেবতাকে জানিয়েছিলুম 
সেই জন্যেই তার ফল এত দ্রুত পাওয়। গেল। ইতি ৩১ জ্যেষ্ঠ 
১৩৩৮ 

দাদা 

একট! কথা মনে রেখো তোমার উজ্জল রচনায় যে ছবি 
আমার কাছে প্রকাশ পায় আমার কাছে সে অত্যন্ত ওৎুক্য- 
জনক | তোমার লেখার রস আমাকে গভীর আনন্দ দের 
মতের অনৈক্য স্বতন্ত্র কথা | তোমার লেখ। অত্যন্ত সত্য সেইখানে 
তার মূল্য অনেক। দাজ্জিলিং 


নও 


১৮ জুন ১৯৩১ 
দাঁজ্জিলিং 
কল্যাণীয়ান্ু 
রাগ করতে যাব কেন? তুমি আমার নামে যে কয় দফা 
নালিশ তুলেছ প্রায় সবগুলোই যে সত্যি। অস্বীকার করতে 
পারব না যে আমি অনেক কথাই বলেছি যা দেশের লোকের 


৪৪ 


কানে মধুর ঠেকে নি। রামচন্দ্র প্রজারঞ্ন করতে গিয়ে সীতাকে 
বনবাস দিয়েছিলেন, প্রজারা জয় জয় করেছিল, সোনার সীত৷ 
দিয়ে তিনি ক্ষতিপূরণ করতে চেয়েছিলেন । দশের মনোরঞ্জন 
করতে গিয়ে যদি সত্যকে নির্বাসন দিতে পাঁরতুম, তাহলে 
সাস্তবনার প্রয়োজনে সৌনার অভাব ঘটত না। আমার চেয়ে 
ঢের বড়ো বড়ো লোকেরাও যে-কালে ও যে-সমাজে এসেছেন 
সেখানে তারা তিরস্কৃত হয়েচেন-__ নইলে বিধাতা তাদের 
পাঠাবেন কেন? দশের ভিড়ে একাদশ দ্বাদশ সব্বদীই আসে, 
কোম্পানির কাগজ জমিয়ে চলে যায়। মাঝে মাঝে আসে 
বিষম যু্ষিলটা, হিসাবী লোকের চট্কা ভাঙিয়ে দেবার জন্যে ৷ 
প্রতিধ্বনির সম্প্রদায়, প্রথার প্রাচীর তুলে অচল ছূর্গ বানিয়েছে, 
তাদের কণ্ঠে কে পুঁথির প্রতিধ্বনি এক দিগন্ত থেকে আর এক 
দিগন্তে হাজার হাজার বসর ধরে একটানা চলেইচে__ মহা- 
কালের শঙ্গধ্বনি মাঝে মাঝে জাগে সেই ফাকা আওয়াজের 
শুন্যতা ভরিয়ে দেবে বলে । পানাপুকুর স্তব্ধ হয়ে থাকে আপন 
পাড়ির বাধনে-__ হঠাৎ এক এক বছর বর্ধার প্লাবন আসে তার 
কূল ছাপিয়ে দিতে সেটা দেখায় যেন বিরুদ্ধতার মতো, কিন্তু 
তাতেই রক্ষে। আমি গোড়। থেকেই একঘরের দলে ভিড়েছি, 
ঘরের কোণ-বিহারীদের মাঝখানে যাঁরা বেগানা আমি সেই হা- 
ঘরেদের খাতায় নাম লিখিয়ে রাজপথে বেরিয়ে পড়লুম_ ঘোরো 
যারা তারা মারতে আসবে, মারতে এসেই বেরোতে শিখবে ! 
তুমি লিখেচ আমি পুরাতন ভারতের প্রতিকূল। রঘুনন্দনের 
ভারতটাই বুঝি পুরাতন ভারত? দেবীদাসের কৌলীন্যাই বুঝি 


৪৫ 


সনাতন কৌলীন্য ? মহাভারত পড়েছ ত-_ পৌরাণিক যুগের 
আচার আচমনে উপবাসে বুকের হাড় বের করা পুরাতন ভারতের 
সঙ্গে কোন্খানে তার মিল? যে পুরাতন ভারত চিরন্তন ভারত 
আমি তাকেই প্রণাম করে মেনে নিয়েছি, তার বাইরে যাই 
নি। আমার জীবনের মহামন্ত্ব পেয়েছি উপনিষদ থেকে, যে- 
উপনিষদকে একদা বাংলাদেশের বেদ-বজ্জিত নৈয়ায়িক পর্ডিতের! 
বলেছিল রামমোহন রায়ের জাল-করা,__ যে উপনিষদ মানুষের 
আত্মার মধ্যেই পরমাত্মীর সন্ধান পেয়েছিলেন, যে উপনিষদের 
অন্ধুপ্রেরণায় বুদ্ধদেব বলে গিয়েছেন জীবের প্রতি অপরিমেয় 
পীতিই ব্রহ্মবিহাঁর, সেই পরম চরিতার্থতা দেউলে দরোগায় নয়, 
পাণ্ডাপুরোহিতের পদসেবায় নয়। যে-যুরোৌপ জ্ঞানকে সংস্কীর- 
মুক্ত করে কম্মকে বিশ্বসেবাঁর অনুকূল করেছে সেই যুরোপ 
উপনিষদের মন্ত্রশিধ্য জানুক ব না জানুক। যে-য়ুরোপ শক্তি- 
পুজার বীভৎম আয়োজনে বিজ্ঞানের খর্পরে নররক্তের অর্থ্য 
রচন! করচে সেই যুরোপ পৌরাণিক-- সেই যুরোপ জানে না 
বাহিরের যন্ত্র মনের দৈন্য তাড়াতে পারে না, যন্ত্রযোগে শাস্তি 
গড়বার চেষ্টা বিড়ম্বনা । আমরাও যেমন অন্তরের পাঁপকে বাহিরের 
অনুষ্ঠানে বিশুদ্ধ করতে চেয়েছি__ তারাও তেমনি অন্তরের 
অকৃতার্থতাকে বাহিরের আয়োজনে পুর্ণ করবার ছুরাশ। রাখে, 
এইথানেই ষাকে আমরা পুরাতন ভারত বলি তার সঙ্গে এদের 
মেলে । মেলে না সেই উপনিষদের সঙ্গে যিনি বলেচেন, 
এষ দেবে বিশ্বকন্মা মহাত্মা 
সদ! জনানাং হৃদয়ে সমিবিষ্টঃ, 


৪৬ 


হৃদ! মনীষ! মনসাভিক্৯প্তো 
য এতদ্বিছ্বরমুতাস্তে ভবন্তি | 
যে দেবতা সকল জনানাং হৃদয়ে, ধার কন্ম আচারবিচারের 
নিরর্৫থক ক্রিয়াকন্মন নয় সকল বিশ্বের কন্ম, সকল আত্মার মধ্যে 
যে মহাত্মাকে উপলব্ধি করতে হয় তিনিই উপনিষদের দেবতা, 
তাকেই দেউলের মধ্যে সরিয়ে রেখেছে যাকে বলি পুরাতন 
ভারত-- আর সোনার শিকলে বাঁধতে চেয়েচে ব্বর্ণলঙ্কাপুরীর 
যুরোপ। এই উভয়ে পরস্পরের সতীন বলেই এদের পরস্পরের 
প্রতি এত বিরাগ। মানুষের আত্মায় যিনি মহাত্মা, মানুষের 
কন্মে যিনি বিশ্বকর্মা, আমি জেনে না জেনে সেই দেবতাকেই 
মেনেচি__ তিনি যেখানে উপবাসী গীড়িত সেখান থেকে আমার 
ঠাকুরের ভোগ অন্য কোথাও নিয়ে যেতে পারিনে । খুষ্ট বলেচেন, 
বিবস্ত্রকে যে কাপড় পরায় সেই আমাকেই কাপড় পরায়, নিরন্নকে 
যে অন্ন দেয় সে আমাকেই অন্ন দেয় --এই কথাটাই ব্রহ্মভাষ্য। 
এই কথাটাকেই “দরিদ্রনারায়ণ” নাম দিয়ে হালে আমরা 
বানিয়েছি__ দরিদ্রের মধ্যে নারায়ণকে উপলব্ধি ও সেবা করার 
কথাটা ভারতের জালম্বাক্ষর করা-_ আমাদের উপলব্ধি প্রধানত 
গো-ব্রা্গণের মধ্যে । কিন্তু যথার্থ পুরাতন ভারত, যে-ভারত চির- 
নৃতন_- যে ভারতের বাণী, আত্মবৎ সব্বভৃতেষু য পশ্যতি স 
পশ্যতি-_ তাকেই আমি চিরদিন ভক্তি করেছি। আমার সব 
লেখা যদি ভালো করে পড়তে তাহলে বুঝতে আমার চিত্ত মহা- 
ভারতের অধিবাসী-__ এই মহাভারতের ভৌগোলিক সীমানা 
কোথাও নেই। 


৪৭ 


যদি সময় পাই তোমার অন্ত নালিশের কথা অন্য কোনো 
চিঠিতে বলবার চেষ্টা করব । ইতি ৩ আষাঢ় ১৩৩৮ 
দাদা 


চি 


২৩ জুন ১৯৩১ 


দাজ্জিলিং 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমার কল্পরূপকে আশ্রয় করে ধাকে তুমি হৃদয়ে উপলব্ধি 
করেচ আমি তাকেই পুজা করে থাকি, তিনি আমাদের সকলের 
মধ্যেই_- তিনি পরমমানব। নিজেকে বৃহৎ কালে বৃহৎ দেশে 
তার মধ্যে ব্যাপ্ত করে দিয়ে খন আমি ধ্যান করি তখনি নিজেকে 
আমি সত্যরপে জানি, আমার ছোটো-আমির যত কিছু ক্ষুদ্রতা 
সব বিলীন হয়ে যায় তখন আমি সত্য আধারে নিত্য 
আধারে থাকি। তারই আহ্বানে রাজপুত্র ছিন্নকন্থা পরে পথে 
বেরিয়েছেন। বীরের বীধ্য, গুণীর গুণ, প্রেমিকের প্রেম তারি 
মধ্যে চিরন্তন। তুমিও হৃদয় দিয়ে তাকেই গভীরের মধ্যে 
স্পর্শ কর, যেখানে তোমার ভক্তি, তোমার প্রীতি, তোমার 
সত্যকার আত্মনিবেদন। তং বেছ্ং পুরুষং বেদ__ তিনি সেই 
পরম পুরুষ ধাকে সত্য অনুভবের দ্বারা জানতে হবে, নিজের 
বাইরে, নিজের গভীরে । আমি সহরের মানুষ, একদিন হঠাৎ 
এক পল্লীবাসী বাউল ভিখারীর মুখে গান শুন্লুম, “আমি 


৪৮ 


কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে।৮ আমি যেন 
চমকে উঠলুম, বুঝতে পারলুম, এই মনের মানুষকে, এই সত্য 
মানুষকেই আমরা দেবতায় খুঁজি, মানুষে খুঁজি, কল্পনায় খুঁজি, 
ব্যবহারে খুঁজি, “হৃদা মনীষা” হৃদয় দিয়ে মন দিয়ে, কন্ম্ম 
দিয়ে। সেই মহান আত্মার অমরাবতী হচ্চে, “সদা জনানাং 
হৃদয়ে ।” কত লোক দেখেচি যারা নিজেকে নাস্তিক বলেই 
কল্পনা করে, অথচ সব্বজনের উদ্দেশে নিজেকে নিঃশেষে নিবেদন 
করচে, আবার এও প্রায় ই দেখা যাঁয় যার! নিজেকে ধাম্মিক বলেই 
মনে করে তার। সর্বজনের সেবায় পরম কৃপণ, মানুষকে তারা 
নানা উপলক্ষ্যেই পীড়িত করে বঞ্চিত করে । বিশ্বকশ্মার সঙ্গে 
কন্মের মিল আছে মহান্‌ আত্মার সঙ্গে আত্মার যোগ আছে 
কত নাস্তিকের, তাদের সত্য পূজা জ্ঞানে ভাবে করেঃ কত 
বিচিত্র কীত্তিতে জগতে নিত্য হয়ে গেছে, তাদের নৈবেছের ডালি 
কোনোদিন রিক্ত হবে না। মনের মানুষের শাশ্বত রূপ তারা 
অন্তরে দেখেচে, তাই তার! অনায়াসে মৃত্যুকে পধ্যন্ত পণ করতে 
পারে ।- তং বেছ্যং পুরুষং বেদ মা বো মৃত্যুঃ পরিব্যথাঁঃ-_ 
সেই বেদনীয় পুরুষকে আপনার মধ্যে জানো, মৃত্যু তোমাকে 
বাথা না দিক। য এতদ্‌ বিছুঃ অমৃতাস্তে ভবন্তি__ কারণ 
তারা বেঁচে থাকে সকল কালের সকল লোকের মধ্যে, ধার 
উপলব্ধির মধ্যে তাদের আতয্মোপলব্ধি তার বিরাট আয়ু ভূত 
ভবিষ্যৎ বর্তমানের সকল সত্তাকে নিয়ে । মানুষকে অন্নবস্ত্রবিদ্যা, 
আরোগ্য, শক্তি সাহস দিতে হবে এই সাধনায় যারা আত্ম- 
নিবেদন করেচে তারা কোনে দেবতাকে বিশেষ সংজ্ঞাদ্ধারা মানুক্‌ 


৯৪ ৪৯ 


বা না মান্ুক তারা সেই বেছ্য পুরুষকে জেনেছে, সেই মহাঁন্‌ 
আত্মাকে, সেই বিশ্বকর্মীকে, ধাকে জান্লে মৃত্যুর অতীত হওয়া 
যায়। জন্প্রদায়ের গণ্তীর ভিতরে থেকে বাঁধা অনুষ্ঠানের 
মধ্যে তার৷ পুজাকে নিঃশেষিত করে তৃপ্তিলাভ করতে পারেন 
না, কেননা) তার! মনের মানুষকে দেখেচেন মনের মধ্যে, 
মানুষের মধ্যে নিত্যকালের বেদীতে । দেশ বিদেশের সেই সব 
নাস্তিক ভক্তদের আমি আপন ধশম্মভাই বলেই জাঁনি। ত্য 
কথা বলি, বিদেশেই তাদের বেশি দেখলুম, কিন্তু তীর! যে দেশে 
থাকেন সে দেশ বিদেশ নয়, সে যে সর্বমানবলোক । সেই 
দেশেরই দেশাতআ্বোধ আমার হোক এই আমার কামনা । 
তোমার চিঠিতে বারবার তুমি লিখেচ, নিজের দেশের কাছ 
থেকেই নিতে হবে | সত্য কথা, কিন্ত নিজের দেশ সকল দেশেই 
আছে, অন্য দেশের যা কিছু শ্রেষ্ঠ তা সকল দেশের-__ যদি 
অভিমানে বা অশক্তিতে তা না নিই তবে নিজের সম্পত্তিকে 
অন্বীকার করা হয়,__ বিশ্বমানবের বেদীতে যে নৈবেছ্য দেওয়া 
হয়, জ্ঞানের প্রেমের কন্মের, তাতে সকল মানুষেরই ভোগের 
অধিকার,_- তাঁকে নিয়েও যদি জাত মান্তে হয় তবে জঙ্কীর্ণভাবে 
হিছু হয়েই মরব মানুষ হয়ে বাঁচব না। যদি বলো নকল, তা 
নিজের দেশের নকলও নকল, পরের দেশের নকলও নকল-_ 
যে কন্ম খাটি তা নকল নয়, যা মেকি তাই নকল, তার উপর 
স্বদেশেরই ছাপ থাক্‌ আর বিদেশের । 

তোমাকে সম্প্রতি আমার লেখা যে বই পাঠিয়েছি তার মধ্যে 
আমার বিশেষ কোনো! উপদেশ আছে বলেই তোমাকে পাঠিয়েছি 


৫০ 


ত৷ নয়-_ মনে করেছিলুম এই বইগুলি সম্ভবত তোমার কাছে 
নেই। এগুলি সাহিত্যের বই, এদের মূল্য ভাবরসের। আমার 
যে সব বইয়ে সমাজ ধন্ম স্বদেশ প্রভৃতি নান। বিষয়ে আলোচন। 
করেচি সে তোমাকে দিই নি, সেগুলোতে মতামতের তর্ক বিতর্ক । 
ইচ্ছ! কর পাঠিয়ে দিতে পারি । ১লা জুলাই পাহাড় থেকে নামব 
চার পাঁচ দিন কলকাতায় থাকব-_ তার পর শান্তিনিকেতন । 
ইতি ৮ আষাঢ় ১৩৩৮ 

দাদা 


চি 


৪ জুন ১৯৩১ 


দাঁজ্জিলিং 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমের প্রতি আমার প্রবল লোভ। তোমাদের উত্তর 
বঙ্গের চাপড় ঘণ্ট এবং বেতের স্ুুক্তনি আমার রুচির পক্ষে বেশি 
তীব্র; তাদের সম্বন্ধে আমার রসনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই 
কিন্ত নাম শুন্লে গুরুমশায়ের পাঠশালা মনে পড়ে। যাই 
হোক এই ফলের অর্থ্যযোগে তোমার স্সিগ্ধ হৃদয়ের সেবা 
আমাকে আনন্দ দিয়েচে। এই পধ্যন্ত যেই লিখেচি সেই 
মুহূর্তেই আমার সেবক তোমার দানের ডালি থেকে কয়েকটি 
ফল একটি পাত্রে সাজিয়ে আমার সামনে ধরল । আমার মন 
সেই দিকে বিক্ষিপ্ত হয়েচে। ফল ভোগ সমাধা হোলো 


৫১ 


আমার । কিন্ত অবকাঁশ নেই। আজ সার জগদীশচন্দ্র মধ্যাহ- 
ভোজনে আমাকে নিমন্ত্রণ করেচেন। কোথাও বেরই নে, এ রকম 
ভোজেও আমার রুচি নেই, কিন্ত জগদীশের আহ্বান এড়াতে 
পারিনে। সাঁজসজ্জা করে বেরতে হবে। এদিকে অন্ুবাচীর 
আকাশ অন্বুবাঁচনে মুখর হয়ে উঠেচে | কিন্তু গিরিরাজের 
প্রকাশ বাম্পে আচ্ছন্ন । 
চিঠির মধ্য দিয়ে তোঁমাঁর লেখা যতই পড়ি যেমন আনন্দিত 
ও বিস্মিত হই তেমনি মনে বেদনাও বোধ করি। তোমার মধ্যে 
যে সংরাগ যে আবেগ যে প্রবল প্রকাশের শক্তি তা প্রতিহত হয়ে 
তোমাকে গীড়িত করচে । বিধাতা তোমাকে শক্তি দিয়েছেন 
অথচ ক্ষেত্র দেন নি এর চেয়ে বিড়ম্বনা আর কিছু হতে পারে ন!। 
আজ আর সময় নেই | ইতি ৯ আষাঢ় ১৩৩৮ 
দাদা 


২৩ 
২৭ জুন ১৯৩১ 


দাঁজ্জিলিং 


৫9৫ 


কল্যাণীয়াস্থু 

ধন্ম সম্বন্ধে আমার যে মত, চিন্তাঁপ্রণালী দিয়ে তার সঙ্গে 
তোমার হয় তো মিল হবে না, কিন্ত ভাবের দিক দিয়ে মিল হবে। 
তোমার হৃদয় যে গন্ধে আনন্দ পেল, হয় তে। ঠিক জানল না সে 
গন্ধ রজনীগন্ধার বন থেকে আসচে, কিন্তু আনন্দটি সত্য । যদি 
এখানেই শেষ হোত তাহলে কথা ছিল না, আনন্দ যদি আমার 


৫ 


নিজের মধ্যেই এসে অবসান হোত তাহলে চুকে যেত। ওকে 
যে আবার কোনে একটা আকারে ফিরিয়ে দ্রিতে হয়, 
পূজায়, সেবায়। কিন্তু ঠিকানা ভুল হলে আপ শোষের কথা । 
আনন্দ যখন পাই তখন সেটা কোথা থেকে পাই স্পষ্ট নাই 
বা জানলুম, পেলেই হোলো । কিন্ত সেবা যখন দিই তখন 
কোথায় গেল না৷ জানলে লোকসান । পোষ্টবাক্সে চিঠি ফেলে 
দিলুম সেটা যথাস্থানে গিয়ে পৌছল এটা কি সেই রকম 
ব্যাপার? ঠাকুরকে কাপড় পরালুম, সে কাপড় কি পৌছৰে 
বস্ত্রহীনের কাছে, ঠাকুরকে স্নান করালুম সেই স্নানের জল কি 
পৌঁছবে যে-মান্ুষ জলের অভাবে তৃষিত তাপিত? তা যদি ন। 
হোল তাহলে এ সেবা কোন্‌ কাজে লাগল? কেবল নিজেকে 
ভোলাবার কাজে? নিজের ছেলেকে যখন কাপড় পরাই তখন 
তার মধ্যে ছুটো কথা থাকে, এক হচ্চে, সে কাপড় যথার্থ ই 
ছেলের প্রয়োজনের কাপড়, ছুই হচ্চে ছেলের প্রতি আমার স্বেহ 
সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করে নিজেকে সার্থক করে। খেলার 
সামগ্রীকে যখন কাপড় পরাই তখন কেবলমাত্র আমার তৃপ্তিই 
হোলো, বাকিটুকু ব্যর্থ । তুমি লিখেচ ঠাকুরের সেবা এবং জীবের 
সেবা ছুইই আমাদের পুজার অঙ্গ কিন্তু ছুর্নতিবশত, যে-সেবাটা 
জগতের ছুঃখনিবারণের জন্য সত্যকার কাজে লাগে বর্তমান কালে 
সেইটেকে আমরা উপেক্ষা করেছি। ভালো করে ভেবে দেখে। 
কালক্রমে এ মোহ এলো! কেন? তার কারণ, এই বিশ্বাস মনে 
আছে যে ঠাকুরকে অন্ন দিয়ে বন্ত্র দিয়ে একটা সতাকার কাজ 
করা হোলো'। ত৷ ছাড়! ঠাকুরের স্থান সববাগ্রে জীবের স্থান 


৫৩ 


তার পরে, অতএব বড়ো কর্তব্টাকে সম্ভায় সেরে বড়ো পুণ্যট। 
লাভ করা হয়ে গেলে বাকিটা বাদ দিতে ভয় হয় না, ছুঃখ হয় 
না__ বিশেষত বাঁকিটাই যেখানে ছুক্ষর। জাতকুল দেখে 
ব্রাহ্মণকে ভক্তি করা সহজ, লোকে তাই করে, সে ভক্তি 
অধিকাংশ স্থলেই অস্থানে পড়ে' নিক্ষল হয় ; যথার্থ ব্রহ্মণ্যগুণে 
যিনি ব্রাহ্মণ তিনি যে জাতেরই হোন্‌, তাকে ভক্তির দ্বারা ভক্তির 
সত্যকফল পাওয়া যাঁয়, কিন্তু যেহেতু সেটা সহজ নয় এই জন্যাই 
অস্থানে ভক্তির দ্বার! কর্তব্যপালনের তৃপ্তিভোগ কর! প্রচলিত 
হয়েচে। কালের ধন্ম বলে কোনো পদার্থ নেই, মানবচরিত্রের 
ছুব্বলতাকে প্রশ্রয় দেবার ব্যবস্থা যদি থাকে তবে সেটাকে 
ঠেকানে। যায় না। আমাদের দেশে সর্বত্রই মানুষ বঞ্চিত 
উপেক্ষিত, মানুষের প্রতি কর্তব্য যদি বা শাস্তের শ্লোকে 
আছে আচারে নেই ; তার প্রধান কারণ, ধন্মসাঁধনায় মানুষ 
গৌণ। শস্তায় পাপমোচন ও পুণ্যফল পাবার হাজার হাজার 
কৃত্রিম উপায় ষে দেশের পঞ্জিকায় ও ভটিপাড়ার বিধানে অজস্র 
মেলে সে দেশে বীধ্যসাধ্য সত্যসাধ্য ত্যাগসাধ্য বুদ্ধিসাধ্য 
ধন্মসাধনা বিকৃত না হয়ে থাকতেই পারে না। যদি গঙ্গাস্ান 
করলেই, যদি বিশেষ তিথিতে যে-কোনো ব্রাঙ্গণকে খাওয়ালেই 
পাপ যায় তাহলে সযত্বে আত্মসম্বরণপুর্বক পাপ না করাটা 
স্বভাবতই পিছিয়ে পড়ে । যেটা অন্তরের জিনিষ, যেটা চৈতন্ের 
জিনিষ সেটাকে জড়ের অনুগত করে" যদি নিয়ত তাঁর অসম্মান 
করা হয় তবে আমাদের অন্তরপ্রকৃতি জড়ত্বে ভারগ্রস্ত হতে 
বাধ্য । দেবপ্রতিমার কাছে পাঠা বলিদানের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্য। 


৫৪ 


যখন করি তখন বলে থাকি পাঁঠাটা প্রতীকমাত্র আসল জিনিষটা 
হচ্চে মনের পাঁপ। কিন্তু ব্যাখ্যাটা মুখের কথা, কর্ম্মটাই বাস্তব, 
তাই পাপটা যেখানকার সেখানেই থেকে যায় বরঞ্চ কিছু বেড়ে 
ওঠে মাঝের থেকে হতভাগা প্রতীকটা পায় ছুঃখ। প্রতীকের 
উপর দিয়েই যত ফাঁকি চালিয়ে দিয়ে মানুষ আপন বুদ্ধিকে 
আপন মন্ুয্যত্বকে বিদ্রুপ করে, আপন সাধনাকে ছুব্বল ও লঘু 
করে দেয়। পুনশ্চ ব্যাখ্যা করবার সময় বল! হয়, যাঁরা অজ্ঞান 
তাদের পক্ষেই এই বিধি । কিন্তু যারা অজ্ঞান তাদের অজ্ঞীনকেই 
প্রশ্রয় দিয়ে চিরস্থায়ী করার দ্বারাই যুক্তির পন্থা সুগম করা 
হয় এ কথা মানতেই পারি নে। চিরজীবন পাঁঠাবলি দিয়ে এবং 
বলির সংখ্যা ভীষণভাবে বাড়িয়ে তোলার রক্তসিক্ত পথ দিয়ে 
কয়জন পুজক অবশেষে বাহিরের এঁ পাঠা থেকে অন্তরের 
পাপের ঠিকানায় পৌছেছে? যারা জ্ঞানী তাদের তো কোনো 
ভাবনা নেই, তারা সকল ক্ষেত্রেই স্বতই ঠিক পথ বেয়ে চলে, 
যারা অঙ্ঞান তাদের মুগ্ধ করে রাখলে মোহের অন্ত তারা পাবে 
না। এই কারণেই এ দেশে বহুযুগ থেকেই পুণ্যলুন্ধ মানুষ 
পাগ্ডার পায়ে মোহর টেলে আসমচে, দেশের লৌকের গভীর ছঃখ 
যেখানে সেখানকার জন্ে, না মন, না ধন কিছুই রইল বাঁকি। এ 
সম্বন্ধে দোষ দেবার বেলা আমর! আর এক প্রতীককে পাকড়াও 
করেছি, সে হচ্চে এ বিদেশী । সন্দেহ নেই বিদেশীর হাত দিয়ে 
মার খেয়ে থাকি কিন্ত সেই বিদেশীকে দিয়ে আমাদেরকে আঘাত 
করাচ্চে কে? আমাদের ভিতরকাঁর সেই পাঁপ সেই কলি যে 
চিরদিন দেশের মানুষকে নান! প্রকারে বঞ্চিত করে এসেচে-_ 


৫৫ 


তার সম্পূর্ণ পরিচয় পাঁবার মতো৷ কৌতৃহলও যার নেই। যে 
মারের জমি বহুকাল থেকে আমরা নিজের হাতে তৈরি করেচি 
সেইখানেই আজ শত শতাব্দীর বেশি কাঁল ধরে বিদেশী মারের 
ফসল বুনে আসচে। আমাদের ধর্মকে যদি সত্য করতে 
পারতুম, পুজার মধ্যে যথার্থ বাধ্য, সেবার মধ্যে যথার্থ ত্যাগ 
থাকত, আমাদের সাধনা যদ্রি যথার্থ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে 
মানুষকে সম্পূর্ণ আত্মীয়তার সঙ্গে স্বীকার করতে পারত তাহলে 
কখনোই দেশকে এত যুগ ধরে এত দৈন্য এত অপমান সইতে 
হত না, দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পধ্যত্ত এত 
দুর্ভর অজ্ঞানের চাপে সমস্ত দেশের লোক এমন অসহায় ভাবে 
দৈবের দিকে তাকিয়ে মরত না । 

তুমি মনে কোরো না, বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিগত মানুষ আমার 
সাধনার লক্ষ্য । চিরন্তন বিরাট মানবকে আমি ধ্যানের দ্বার 
আপনার মধ্যে গ্রহণ করবার চেষ্টা করি-_ নিজের ব্যক্তিগত 
সুখ ছুঃখ ও স্বার্থকে ডুবিয়ে দিতে চাই তার মধ্যে, অনুভব করতে 
চাই, আমার মধ্যে সত্য যা কিছু, জ্ঞানে প্রেমে কর্মে, তার 
উৎস তিনি। সেই জ্ঞানে প্রেমে কর্মে আমি আমার ছোটো 
আমিকে ছাড়িয়ে যাই, সেই যিনি বড়ো আমি, মহান্‌ আত্মা, 
তার স্পর্শ পেয়ে ধন্য হই, অমৃতকে উপলব্ধি করি। সেই 
উপলব্ধির যোগে আমার পূজা আমার সেবা সত্য হয়, আত্মা- 
ভিমানের কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়। কন্মই বন্ধন হয়ে ওঠে 
এই উপলব্ধির সঙ্গে যদি যুক্ত না হয়। ফুরোপে এমন অনেক 
নাস্তিক আছেন ধার! বিশ্বমানবের উপলব্ধির দ্বারা তাদের 


৫৬ 


কম্মকে মহৎ করে তোলেন,__ তারা দূর কালের জন্যে প্রাণপণ 
করেন, স্বদেশের জন্তে। তারা যথার্থ ভক্ত। "ধারা আচারে 
অনুষ্ঠানে সারা জীবন অত্যন্ত শুচি হয়ে কাটালেন, ভাবরসে 
মগ্ন হয়ে রইলেন, তারা তো নিজেরই পুজা করলেন-_ তাদের 
শুচিতা তাদেরই আপনার, তাদের রসসন্তোগ নিজের মধ্যেই 
আবন্তিত, আর মুক্তি বলে যদি কিছু তারা পান তবে সেটা 
তো তাদেরই পারলৌকিক কোম্পানির কাগজ । তাদের দেবতা 
রইলেন কোথায়, পেলেন কি, কেবল চাল কলা, শীক ঘণ্টা, 
ফুল পাতা, ধূপ ধুনো ? 

আমার কথা ব্রাহ্মদমাজের কথা নর, কোনে সম্প্রদায়ের 
কথা নয়, যুরোপ থেকে ধার-করা বুলি নয়। যুরোপকে আমার 
কথ! শোনাই, বোঝে না; নিজের দেশ আরো কম বোঝে । 
অতএব আমাকে কোনো সম্প্রদায়ে বাকোনো দেশখণ্ডে বদ্ধ 
করে দেখো না। আমি ধাকে পাবার প্রয়াস করি সেই মনের 
মানুষ সকল দেশের সকল মানুষের মনের মানুষ, তিনি স্বদেশ 
স্বজাতির উপরে । আমার এই অপরাধে যদি আমি স্বদেশের 
লোকের অস্পৃশ্য, সনাতনীদের চক্ষুশূল হই তবে এই আঘাত 
আমাকে স্বীকার করে নিতেই হবে। 

১লা জুলাই বুধবারে এখান থেকে ছেড়ে বৃহস্পতিবার 
সকালে কলকাতায় পৌছব। তুমি যদি আমার সঙ্গে দেখা করতে 
চাও ৬ নম্বর ছ্বারকানাথ ঠাকুরের গলিতে আমাদের বাড়িতে 
এলে কোনে! বিদ্ব হবে না। চিঠি লিখে যদি জানাও কোন্দিন 
কোন সময় আসতে পারো তাহলে যাতে তোমার কোনো 


৫৭ 


সঙ্কোচের কারণ না হয় সেই রকম ব্যবস্থা করব। নিজেকে 
আত্মীয়দের কাছে বিপন্ন করে নিজের ছুঃসাধ্য কিছু চেষ্টা কোরো 
না, আমার সঙ্গে পরিচয় তোমার ছুঃখ বা সঙ্কটের কারণ হ'লে 
তাতে আমি বেদন। বোধ করব ।-- আমি ধর্ম কাকে বলি তার 
ব্যাখ্যা তোমাকে শোনাই-_ কারণ সত্য আলোচনাও ধর্্ম-__ 
কখনো ভেবো না, মিশনরির মতো তোমাকে দলে টানবার 
লোভ আমার আছে । মনের কথা ব্যক্ত করাই আমার স্বভাব, 
দল বাধা আমার ভাবের বিরুদ্ধ । ইতি ১২ আষাঢ় ১৩৩৮ 
দাদা 


চি 
৮ তীন ১৯৩১ 


কল্যাণীয়াস্ু 

এক এক দিন তোমাকে চিঠি লেখার পর আমার মনে অত্যন্ত 
অনুতাপ বোধ হয়। যেখানে তোমার সব চেয়ে ব্যথা বাজে 
সেইখানে আমি তোমাকে বারে বারে আঘাত দ্রিই। অথচ 
কখনোই সেটা আমি ইচ্ছা করে করিনে। তোমার চিঠিতে 
যে-ঠাকুরের কথ! তুমি এমন গভীর আবেগের সঙ্গে বলো৷ তাকে 
আমি চিনি-_ তোমার উপলব্ধির সঙ্গে আমার মিল আছে-_ 
বৌধ হয় সেই জন্যেই অনেকটা যেন অভ্্রাতসারেই তোমার 
মনকে নাড়া না দিয়ে থাকতে পারি নে। আমার ঠাকুরকে 
আমি সেই মন্দিরে দেখতে চাই যেখানে কোনো বানানো 


৫৮ 


লোকাচারের দেয়াল তুলে কোনো সম্প্রদায় তাকে সঙ্ীর্ণভাবে 
আত্মসাৎ করবার উদ্যোগ না করে__ যেখানে সবাই অনায়াসে 
মিলতে পারে, তাকে পেতে পারে, বিশেষ দেশের পণ্ডিতের 
কাছে বিশেষ ভাষার শাস্ত্র ঘেঁটে বিশেষ রীতির পুজাপদ্ধতির 
মধ্যে মন আটকা না পড়ে । তুমি ধাকে ভালোবাসো আমি 
তাকেই ভালোবাসি,সেইজন্টেই আমি তার দ্বার অবারিত করতে 
ইচ্ছা করি, তার ভালোবাসায় সকল দেশের সকল জাতকেই 
আপন করে দেখতে চাই । যুরোপে যে অংশে তিনি সত্যরূপে 
প্রকাশ পেয়েছেন সেখানে আমি আনন্দ করি, আমাদের দেশে 
যে অংশে তিনি মুগ্ধ আচারে অসত্যে আচ্ছন্ন সেখানে আমার মন 
অত্যন্ত গীড়িত। আমি জানি তাকে অবগুষ্ঠিত করার অপরাধেই 
আমার দেশ এতদিন ধরে ধনে প্রাণে জ্ঞানে মানে বঞ্চিত। তার 
মধ্যে মানুষকে মুক্তি দেবার বিরুদ্ধে আমার দেশ পদে পদে বাধা 
দিয়েছে__ দেশের অপমানিত মানুষ তাই ক্ষুদ্র হয়েচে দেশ তাই 
মুক্তি পায় নি। এই জন্যেই থাকতে পারি নে-_ রুদ্ধদ্বার মুক্ত 
করতে কঠোর আঘাত করি, নিজেও আহত হই । যিনি আমার 
সব চেয়ে সম্মানিত তার জন্যেই দেশের লোকের কাছে অপমান 
স্বীকার করতে প্রস্তুত হয়েচি, তীকে প্রতা রণ! করে দেশের লোকের 
আদর আমি চাইনে। তিনি কে? 
জাঁনি না কে, চিনি নাই তারে) 

শুধু এইটুকু জানি__ তারি লাগি রাত্রি অন্ধকারে 

চলেছে মানবধাত্রী যুগ হতে যুগান্তর পানে 

ঝড়ঝঞ্ধা বজ্রপাতে, জ্বালায়ে ধরিয়া সাবধানে 


৫৪ 


অন্তরপ্রদীপখানি । শুধু জানি, যে শুনেছে কানে 
তাহার আহবানগীত ছুটেছে সে নিভীঁক পরানে 
সঙ্কট আবর্তমাঝে, দিয়েছে সে বিশ্ব-বিসঙ্জন, 
নিধাতন লয়েছে সে বক্ষ পাতি”, মৃত্যুর গঞ্জন 
শুনেছে সে সঙ্গীতের মত। দহিয়াছে অগ্নি তারে, 
বিদ্ধ করিয়াছে শূল, ছিন্ন তারে করেছে কুঠারে, 
সর্ব প্রিয়বস্ত্র তার অকাতরে করিয়া ইন্ধন 
চিরজন্ম তারি লাগি জ্বেলেছে সে হোমহুতাশন ; 
হৃৎপিণ্ড করিয়। ছিন্ন রক্তপন্ম অর্থযউপহারে 
ভক্তিভরে জন্মশোধ শেষপুজা পুজিরাছে তারে 
মরণে কৃতার্থ করি প্রাণ | শুনিযর়াছি তারি লাগি' 
রাজপুত্র পরিয়াছে জীর্ণকন্থা, বিষয়ে বিরাগী 
পথের ভিক্ষুক । মহাপ্রাণ সহিয়াছে পলে পলে 
সংসারের ক্ষুদ্র উৎগীড়ন, কি ধিয়ীছে পদতলে 
প্রত্যহের কুশাঙ্কুর, করিয়াছে তারে অবিশ্বাস 

মূঢ বিজ্জনে, প্রিয়জন করিয়াছে পরিহাস 
অতিপরিচিত অবজ্ঞায়, গেছে সে করিয়া ক্ষমা 
নীরবে করুণনেত্রে, অস্তরে বহিয়া নিরুপমা 
মাধুধ্যপ্রতিমা | তারি পদে মানী সপিয়াছে মান, 
ধনী সঁপিয়াছে ধন, বীর সপিয়াছে আত প্রাণ, 
তাহারি উদ্দেশে কবি বিরচিয়া লক্ষ লক্ষ গান 
ছড়াইছে দেশে দেশে | শুধু জানি তাহারি মহান 
গন্তীর মঙ্গলধ্বনি শুনা যায় সমুদ্রে সমীরে, 


৩০ 


তাহারি অঞ্চলপ্রাস্ত লুটাইছে নীলাম্বর ঘিরে, 
তারি বিশ্ববিজয়িনী পরিপূর্ণী প্রেমমুন্তিখাঁনি 
বিকাশে পরমক্ষণে প্রিয়জনমুখে | শুধু জানি 
সে বিশ্বপ্রিয়ার প্রেমে ক্ষুদ্রতারে দিয়ে বলিদান 
বজ্জিতে হইবে দূরে জীবনের সব্ব অসম্মান, 
সম্মুখে দাড়াতে হবে উন্নত মস্তক উচ্চে তুলি 
যে মস্তকে ভয় লেখে নাই লেখা, দাসত্বের ধূলি 
আকে নাই কলঙ্কতিলক | তাহারে অন্তরে রাখি' 
[ জীবনকণ্টকপথে যেতে হবে নীরবে একাকী 
স্থথে ছুঃখে ধেধ্য ধরি”, বিরলে মুছিয়া অশ্রু-আখি, ] 
প্রতিদিবসের কর্মে প্রতিদিন নিরলস থাকি' 
সুখী করি সব্বজনে | 
খুব সম্ভব এ কবিতা তুমি পুর্ধবেই পড়েচ তবু আমার ঠাকুরের 
ধ্যান তোমার কাছে রাখলুম সমস্ত পৃথিবীর ইতিহাসের মাঝ- 
খানে, সকল বীরের সকল তপস্তায়, সকল প্রেমিকের সকল 
ত্যাগে। এসব লেখা রবীন্দ্রনাথের নয়, তাঁর গভীরতম মর্মস্থানে 
যে কবি আছে তারই, সে কবির আসন সকল দেশেই, সকল 
মানুষেরই অন্তরে__ (যুরোপেও )। 
যাই হোক তুমি যেখানে আশ্রয় পেয়েছ সেইখানেই উদার 
ভাবে মুক্তভাবে বিরাজ করো, সেইখানেই তোমার চিত্তের 
বাতায়ন খুলে যাক যেখান থেকে তুমি সর্বকালের সব্বজনের 
মনের মানুষকে আপন বলে দেখতে পাও, যিনি যুরোপেরও, 
যিনি অস্পৃশ্য নমশূদ্রেরও, যিনি পণ্ডিত পুরোহিতের বেড়া দেওয়া 


৬১ 


কৃত্রিম শুচিতার নিষেধ লঙ্ঘন করে তারই বুকে আসবার জন্যে 
দিকে দিকে আহ্বান পাঠিয়ে দিয়েচেন। 

তুমি যখন খুসি আমাঁকে লিখো, যদি বাধা থাকে তো 
লিখে না যদি দেখ। করতে চাও কোরো, যদি বিদ্ব বা ছুঃখের 
কারণ থাকে তবে চেষ্টা কোরো না। নিশ্চয় জেনো তোমীকে 
আমি নিকটের বলেই জেনেছি দূরে থেকে__ তুমি আনন্দিত হও 
শান্তি লাভ করে! সকল ব্যাঘাত সকল অভাবের মধ্যেও । 
শান্তিনিকেতনে ফিরে গিয়ে তোমাকে চিঠি লেখার অবকাশ 
অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হবে__ তাতে ক্ষোভ কোরো না। ইতি ১৩ আষাঢ় 


১৩)৪)৮ 


দাদ! 


২ 
১ জুলাই ১৯৩১ 
দাজ্জিলিং 


কল্যাণীয়াস্থ 
আমার যাওয়া পিছিয়ে গেল। 
নীচে এখনো যথেষ্ট ঠাণ্ডা পড়ে নি ও বৃষ্টি নামে নি বলে 
আমার আত্মীয়ের আমাকে নিষেধ করলেন। অথচ আমার 
মনটা নেমেচে শান্তিনিকেতনের দিকে । চেষ্টা করব ছু তিন দিনের 
মধ্যে দৌড় দিতে । ইতি ১৬ আষাঢ় ১৩৩৮ 
দাদা 


৬২ 


স৬ 


৬ জুলাই ১৯৩১ 


৫ 


কল্যাণীয়ান্তু 

হিমালয়-শিখরে অধিষ্ঠিত নির্মল অবকাশ থেকে নেমে 
এসেছি সহরে-_ এখানে নিরন্তর লোকের ভিড়, কাজের ভিড় 
__চিত্তবিক্ষেপের হাওয়! এলোমেলো হয়ে বইচে চার দিকে । 
এখানে আমার প্রাণ হীপিয়ে ওঠে-_ অতএব কাজ সারা হলেই 
যত শীন্র পারি পালাব শান্তিনিকেতনে__ তার পুব্বে হয় তো 
এক আধ দিন বরানগরে শশিভূষণ ভিলায় অধ্যাপক প্রশান্ত 
মহলানবিশের আতিথ্য গ্রহণ করতে হবে । এখন থেকে আমার 
পত্র শীতকালের রিক্ত অরণ্যের মতো বিরল হবে । এখন থেকে 
নানা লোকের নানা দাবী মেটাবার কাজে আমার সময়টাকে 
টুকরো টুকরো করে বিলিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে । কাল এসেচি__ 
কিন্তু সময় পাই নি-_ আজও সময়ের দৈন্য ঘোচে নি। ইতি ১১ 
আবাঢ ১৩৩৮ 


দাদা 


৬৩ 


৭ 


৭ জুলাই ১৯৩১ 


্ে« 


কল্যাণীয়ান্ত 

বাহিরের বাধাকে বড়ো কোরো না। অন্তরে তুমি ধাকে 
গ্রহণ করেচ তারি ভাবরূপ যদি আমার মধ্যে কল্পিত করে থাক 
তবে কিছুতেই ক্ষতি হবে না। 

দেশের লোকের দ্বারে আমি অতিথি হয়েছিলুম, দ্বার 
ভালো করে খোলা হয় নি।- যদি সত্যের দূত হয়ে কোনে 
অযুতবাণী নিয়ে এসে থাকি তবে দ্বারের বাইরে রেখেই বিদায় 
গ্রহণ করব। গৃহারা যদি বা উপেক্ষা করে পথিকেরা তা দেশে 
দেশে নিয়ে যাবে, এমন আশ্বাম পেয়েছি । মানুষের কাছ 
থেকে মমত্ব মানুষ আকাজ্ক্ষা না করে থাকতে পারে না-_ অতএব 
তোমরা যারা আমাকে প্রসন্ন মনের অর্থ্য দিতে পেরেচ তাদের 
কাছে আমি কৃতজ্ঞ। অন্তরতম শাস্তি ও সার্থকতা তোমাঁর 
জীবনকে পূর্ণ করুক এই আশীর্বাদ করি। ইতি ২২ আষাঢ় 
১৩৩৮ 


দাদা 


৬৪ 


২৮ 


১৫ জুলাই ১৯৩১ 


৫ 


কল্যাণীয়ান্ত 

কিছুদিন তোমার চিঠি না পেয়ে ভয় হয়েছিল যে হয়ত বা 
আমার সঙ্গে দেখা করার ছুঃসাহসিকতা তোমার অপরাধ বলে 
গণ্য হয়েচে এবং সে জন্যে তোমাকে ছুঃখ ভোগ করতে হবে। 
আমি চিঠি লিখে তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগকে আরও গুরুতর 
করতে সঙ্কোচ বোধ করছিলুম । আজ তোমার চিঠি পেয়ে মন 
নিরুদিগ্ন হল। 

“লেখন” নামক বইটা নিঃশেষিত। সংগ্রহ করে তোমার 
ছেলেকে দেব প্রতিশ্রুত ছিলুম। একখানা জীর্ণ মলিন বই পেয়েছি। 
অগত্যা এইটেই পাঠাতে হবে, কিন্ত আজ পধ্যস্ত তোমার চিঠি- 
পত্র থেকে তোমার ছেলের নাম পাইনি । নামটা জানিয়ে দিয়ো । 
আমি আগামী কাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবারে কলকাতায় যাব__ 
অপরাহেে। তার পরদিন শুক্রবারে যাত্রা করব ভূপাল রাজভবনে । 
তার পরে কবে ফিরব নিশ্চিত জানিনে। বইখানি কলকাতায় 
সঙ্গে নিয়ে যাচ্চি যদি তোমার ছেলে সেখানি উদ্ধার করবার 
জন্বে দূত পাঠায় তাহলে সহজ হয় । 

সেদিন তোমাকে দেখে আমি গভীর আনন্দ পেয়েছি। 
বুদ্ধিতে উজ্জল তোমার মুখশ্রী, ভক্তিতে সরস মধুর তোমার বাণী 
আমার মনে রইল । আমার যেটুকু শক্তি আছে সেই শক্তিতে 
তোমাকে কিছু ষদি দিতে পারতুম খুসি হতুম কিন্ত তেমন গভীর 


৯0৫ ৬৫ 


অবকাশ পাবার সম্ভাবনা নেই, তাঁই কেবল চিঠিতে তর্কই 
করেচি। সে তর্ক যে পরিমাণে আঘাত করে সে পরিমাণে 
তৃপ্তি দেয় না। লেখার ভাষায় বাদপ্রতিবাদগুলো কঠোর হয়ে 
পড়ে বাক্যের পশ্চাতে যে মন থাকে সে মনের সবটা প্রকাশ 
পায় না। ইতি ৩০ আষাট ১৩৩৮ 


দাদা 


২৯ 


[ ভূপাল ] ২* জুলাই ১৯৩১ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ত্ 

পয়লা! নম্বর সুকিয়া স্টাটে তোমাকে যে চিঠি লিখে এসেচি 
সেটা তুমি পাও নি বলে আশঙ্কা করচি। না যদি পেয়ে থাক 
সেটা আমার ক্রুটিবশত হতে পারে । আমি অন্যমনস্ক মানুষ, 
তোমার ঠিকানায় হেমস্তবালা না লিখে হেমস্তকুমারী লিখেছিলুম 
_-এটাকে অপরিশোধনীয় ভ্রম বল! যায় না তবু কর্মচারীদের 
পক্ষে যথেষ্ট বাধাজনক বলে ঠেকতে পারে । তোমার শেষ 
চিঠিখানি শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে রেলগাড়িতে বর্ঘমানে 
আমার হস্তগত হয়েচে। রাজভবনে আছি, অপরিচিত ঘর, 
অনভ্যস্ত আসবাব, সময় যে নেই তা নয় কিন্ত সে যেন অন্যের 
দেওয়া মোটর গাড়ির মতো, কতটা! তাকে খাটাতে পারব, কখন্‌ 
বল্তে হবে, বাস্‌আর নয় ঠিক জানি নে__ মন তাই আপনার 


৬৬ 


গাঁঠরি খুলে গুছিয়ে গাছিয়ে বসতে পারে নি। অতএব সংক্ষেপে 
সারতে হবে। কেবল তোমার ছুই একটা কথার উত্তর দিয়ে 
ছুটি নেব । 

জিজ্ঞাসা করেচ তোমাকে যে চিঠি লিখেচি তার কোনে 
কোনো অংশ কোনে! পত্রিকায় ছাঁপতে হবে কি না। পত্রিকায় 
আমার চিঠি প্রায় ছাপা হয়ে থাকে । ধাদের আমি লিখেচি 
সেট তাদের ইচ্ছায় ঘটে । বোধ করি সম্পাদকের সংবাদ পেলে 
সংগ্রহের চেষ্টা করে । চিঠির উপরে লেখকের স্বত্ব থাকে না। 
সাধারণ পাঠকেরও দাবী নেই। সর্ধজনের পাঠযোগ্য দি কিছু 
থাকে তবে কোনো এক সময়ে সেটা সর্বজনের ভোজে গিয়ে 
পৌছয়__ কিন্ত তার পরিবেষণকর্তা আমি নই । 

ধার ধ্যান আমার চিত্তের অবলম্বন শান্ত্রমতে তাকে কি 
সংজ্ঞা দেওয়া যায় জিজ্ঞাসা করেচ। সহজে বোঝাতে পারব 
না, উপলব্ধির জিনিষকে ব্যাখ্যার দ্বারা স্পষ্ট করা যায় না। 
তোমার প্রশ্ন এই তিনি কি সর্ধবমানবের সমষ্টি । সমষ্টি কথাটায় 
ভূল বোঝার আশঙ্কা আছে। এক বস্তা আলুকে আলুর জমষ্টি 
যদি বল তবে সে হল আর এক কথা । মানুষের সজীব দেহ 
লক্ষকোটি জীবকোষের সমষ্টি, কিন্তু সমগ্র মানুষ জ্ঞানে প্রেমে 
কন্মে আত্মান্ুভৃতিতে জীবকোধষসমষ্টির চেয়ে অসীমগুণে বড়। 
ব্যক্তিগত মানব মহামানব থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, তারি মধ্যেই তার 
জন্ম ও বিলয় কিন্তু তাই বলে সেতার সমান হতে পারে না । 
ব্যক্তিগত মানব মহাঁমানবকে উপলব্ধি করে আনন্দিত হয়, 
মহিমালাভ করে যখন সে নিজের ভোগ নিজের স্বার্থকে বিস্মৃত 


৬৭ 


হয়ঃ যখন তার কর্ম তার চিন্তা মর্ণধন্মী জীবলীলাকে পেরিয়ে 
যায়, যখন তার ত্যাগ তাঁর প্রয়াস সুদূর দেশ সুদূর কালকে 
আশ্রয় করে, তার আত্মীয়তার বোধ সঙ্কীর্ণ সমাজের মধ্যে 
খণ্ডিত হয়ে থাকে না। এই বোধের দ্বারা আমরা এমন একটি 
সত্তাকে অন্তরতমরূপে অনুভব করি যা আমার ব্যক্তিগত 
পরিধিকে উত্তীর্ণ করে পরিব্যাপ্ত। তখন সেই মহাপ্রাণের জন্যে 
মহাআ্ার জন্তে নিজের প্রাণ ও আত্মন্্রখকে আনন্দে নিবেদন 
করতে পারি । অর্থাৎ তখন আমি যে জীবনে জীবিত সে জীবন 
আমার আয়ুর দ্বার পরিমিত নয়। এই জীবন কার? সেই 
পুরুষের, যিনি সকলের মধ্যে ও সকলকে অতিক্রম করে, 
উপনিষদ ধার কথা বলেছেন “তং বেছ্যং পুরুষং বেদ যথা মা বো 
মৃত্যুঃ পরিব্যথাঃ”। কেবলমাত্র জপতপ পুজাচ্চনা করে তার 
উপলব্ধি নয়, মানুষের যে-কোনো প্রকাশে মহিমা আছে, 
বিজ্ঞানে দর্শনে শিল্পে সাহিত্যে; অর্থাৎ যাতে সে এমন কিছুকে 
প্রকাশ করে যার মধ্যে পূর্ণতার সাধনা আছে। এ সমস্তই 
মানুষের সম্পদ, ক্ষণজীবী পশুমান্ুষের নয়, কিন্তু সেই 
চিরমানবের,_ ইতিহাস ধার মধ্যে দিয়ে ক্রমাগতই বর্বরতার 
প্রাদেশিকতার সাম্প্রদায়িকতার বন্ধন কাটিয়ে সর্বজনীন 
সত্যরূপকে উদঘাঁটিত করচে। সকল ধন্মেই ধাঁকে সর্ধবোচ্চ 
বলে ঘোষণা করে তার মধ্যে মানবধন্মেরিই পুর্ণতা,_- মানুষ 
যা-কিছুকে কল্যাণের মহৎ আদর্শ বলে মানে তারই উৎস ধাঁর 
মধ্যে। নক্ষত্রলোকে মানবের রূপ নেই মানবের গুণ নেই, 
সেখানে কেবল বিশ্বশক্তির নেব্যক্তিক বিকাশ, বিজ্ঞান তাকে 


৬৮ 


সন্ধান করে, কিন্তু মানুষের প্রেম ভক্তির স্থান সেখানে নেই। 
মহাঁপুরুষেরা সেই নিত্যমানবকেই একান্ত আনন্দের সঙ্গেই 
অন্তরে দেখেচেন, কিন্তু বারে বারে তাকে নানা নামে, নানা 
আখ্যানে, নান! রূপ কল্পনায় দূরে ফেল! হয়েছে, এমন কি 
অনেক সময় মানুষ তাকে নিজের চেয়েও ছোট করেচে-_- এবং 
ভূমার সাধনাকে সঙ্কীর্ণ ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিক ভোগবিলাসের 
সামগ্রী করে তুলেচে। তুমি প্রশ্ন করেচ বলেই এত কথা 
বল্লুম, নতুবা তর্ক করে তোমাকে গীড়া দিতে আমি ইচ্ছা 
করি নে। সত্য যদি নিতান্তই আত্মতৃপ্তির উপকরণমীত্র হোত 
তবে যে অভ্যাসের মধ্যে যে সুখ পায় তাই নিয়েই তাকে থাকতে 
বলা যেত। সত্যের সঙ্গে ব্যবহারে তৃপ্তি গৌণ, মুক্তি মুখ্য__ 
যে ক্ষুদ্রতার আবরণ থেকে মুক্তি হলে নিজেদের স্পষ্ট করে 
জানি অমৃতস্ত পুত্রাঃ সেই মুক্তি-_ তার সাধনায় দুঃখ আছে। 
আমর! দ্বিজ, একটা জন্ম পশুলোকে, আর একটা জন্ম মানব- 
লোকে, এই দ্বিতীয় জন্মের জন্যেই প্রার্থনা করি অসতো! ম' 
সদ্গময়। ইতি ২০ জুলাই ১৯৩১ 

দাদ। 


৬৯ 


₹৬ জুলাই ১৯৩১ 
ও শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্তু 

ভূপাল থেকে শান্তিনিকেতনে ফিরে এসেচি। ফেরবার জন্যে 
মনট1 উৎসুক হয়ে ছিল। যদিও আমার নামের সঙ্গে বেমিল 
হয় তবু এ কথা মানতে হবে আমি ব্ধাঞ্তুর কবি । আমার 
মনের পেয়ালায় এই খতুর সাঁকি যে রস ঢেলে দেন তাঁর নাম 
দেওয়া যেতে পারে কাদন্বরী। রাজপ্রাসাদে ছিলুম ছুটে দিন 
মাত্র । আরো ছুই এক জায়গায় যাবার সঙ্কল্প ছিল, আমার 
সৌভাগ্যব্রমে, ধাদের লক্ষ্য করে যাওয়া, তারা৷ কেউ স্বস্থানে 
উপস্থিত ছিলেন না । সেটা উদ্বেশ্যসাধনের পক্ষে ক্ষতিজনক কিন্ত 
মনের শান্তির পক্ষে অনুকূল । 

আমার বর্তমান ঠিকানাটা জানাবাঁর জন্তেই লিখতে বসেচি। 
আর একটি কথা আছে-- নিজের মনকে নিয়ে খুব বেশি 
টানাটানি কোরো! না। অপরাধ হয়েছে বলে সর্বদা কল্পনা 
করাটা কল্যাণকর নয়। নিজের প্রন্কৃতির সঙ্গে নিরন্তর বিরোধ 
করে চিত্তকে মোচড় দিয়ে বাঁকিয়ে দেওয়া তার প্রতি অবিচার 
করা। বেশ সহজভাবে থাকতে চেষ্টা কর তাতে তোমার 
অন্তর্ধ্যামী প্রসন্নই হবেন। যে জিনিষটিকে আশ্রয় করলে 
তোমার তৃপ্তির পর্যযাপ্তি হ'ত বলে নিজেকে ছুঃখ দিচ্চ খুব সম্ভব 
সেটি তোমার স্থায়ী অবলম্বনের পক্ষে সঙ্কীণ। তার প্রতি 
তোমার নিষ্ঠা সুদৃঢ় নয় বলে নিজের বুদ্ধিকে আজ নিন্দা করচ, 


শ৩ 


তাই বলে নিজের বুদ্ধিকে খবর্ব করে যেখানে তোমাকে ধরে ন৷ 
সেইখানেই নিজেকে কোনোমতেই ধরাঁনোকে তুমি অবশ্থ- 
কর্তব্য মনে কোরো না। আমি যে গৃহে জন্মেচি সেখানকার 
ধর্মেই দীক্ষা! পেয়েছিলুম । সে ধর্মও বিশুদ্ধ। কিন্ত আমার 
মন তারই মাপে নিজেকে ছেঁটে নিতে কোনোমতেই রাজি ছিল 
না। তবু আমি এ নিয়ে টানাহেচড়া না করে বেশ সহজভাঁবেই 
আপন প্রকৃতির পথে চলেছিলুম। সেই পথ ধরেই আজ আমি 
নিজের উপযোগী গম্যস্থানে পেঁঁচেছি। এটাকে অপরাধ বলে 
মাথা খুঁড়ে মরি নে। দেবতা আমাদের সঙ্গে কেবলি লড়াই 
করবার জন্যেই লক্ষ্য করে আছেন এটা সত্য নয়, অতএব 
একা দশীর দিনে অনর্থক নিজেকে পীড়ন না করলে ভক্তবৎসলের 
নির্দয় প্রবৃত্তির তৃপ্তি হবে না এটা মনে করা তার প্রতি অন্যায় 
অবিচার । তোমার পালে একদা আপনি বাতাস এসে লাগবে, 
যদ্রি বিশ্বাস করে পালট মেলে রাখ । অগাধ জলে ঝাঁপ দিয়ে 
হাবুডুবু খেয়ে মলেই যে পারে পৌছন যায় তা নয়, তলায় যাঁবার 
সম্ভাবনাই বেশি । 
ছোট্ট চিঠি লিখব মনে করেছিলুম, তর্ক করব না এও ছিল 
সঙ্কল্প, ছুটোই লঙ্ঘন করলুম। কিন্তু তা নিয়ে পরিতাপ করব না। 
ইতি ১০ শ্রাবণ ১৩৩৮ 
দাদা 


৭১ 


৩১ 


২৭ জুলাই ১৯৩১ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ু 

আমার সাধনা সম্বন্ধে তোমার সুন্দর ভাষায় যা লিখেচ 
সেটি সত্য । মানবের পরিপূর্ণতার শাশ্বত আদর্শ শাশ্বত মানবের 
মধ্যে আছে,_যে অংশে সেই পরিপূর্ণতা আমরা লাভ করি 
সেই অংশে সেই পরিপূর্ণের সঙ্গে আমাদের মিলন হয়। সেই 
মিলনে এত গভীর আনন্দ যে তার জন্যে মানুষ প্রাণ 
দিতে পারে। এমনি করেই যুগে যুগে কত সাধকের ত্যাগের 
উপরেই মানবসভ্যতা প্রশস্ততর প্রতিষ্ঠা লাভ করচে। পূর্ণ 
মানুষের ডাক না শুন্তে পেলে মানুষ বর্বরতার অন্ধকৃপে 
চিরদিনই পশুর মতো পড়ে থাকত। আজো অনেক বধির 
আছে, কিন্ত যাদের মর্্ের মধ্যে পূর্ণের বাণী প্রবেশ করে এমন 
অল্পসংখ্যক লোকও যদি থাকে তাহলেই যথেষ্ট। বস্তুত 
তারাই অতি কঠিন বাধার ভিতর দিয়ে মানুষকে এগিয়ে নিয়ে 
চলেচে । আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের সমস্ত ইতিহাঁসই 
হচ্চে সেই অভিসার । নক্ষত্রের আলোকে অন্ধকার রাত্রের 
এই অভিসারে মানুষ বারেবারেই পথ হারিয়েছে, পিছিয়ে গেছে, 
কিন্তু এ কথাটা কখনোই সে ভূল্‌্তে পারে নি যে তাকে চল্তেই 
হবে, যেখানে আছে সেইখানেই তার চরম আশ্রয় এমন কথা 
বল্লেই মানুষ মরে-_ এমন কি, যখন সে পিছিয়ে চলে তখনো! 
চলার উপরে তার শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। 


৭২. 


আমি যাঁকে মানুষের সাধনার বিষয় বলি তার একটা 
বিশেষ দিক হয় তে। তোমার কাছে যথেষ্ট স্পষ্ট হয় নি। মানুষের 
পূর্ণতা শতদল পদ্মের মতো, তার বিকাশে বৈচিত্র্যের অন্ত নেই। 
প্রকৃতির অন্য সকল দিক খর্ব করে, কেবল একটিমাত্র ভাবা- 
বেগের প্রবল উৎকর্ষসাধনকেই আধ্যাত্মিক সাধনার আদর্শ 
বলে আমি স্বীকার করি নে। অনেক সময় দেখা যায় দৃষ্টি 
যখন অন্ধ হয় তখন স্পর্শশক্তি অদ্ভুত রকমে বেড়ে যাঁয়। 
কিন্তু তবুও বলতে হবে দৃষ্টি ও স্পর্শের যোগেই আমাদের 
ইন্ড্রিয়শক্তির পূর্ণ সার্থকতা । মানুষের চিত্ত যত কিছু এশ্বধ্য 
পেয়েচে, সাধনার লক্ষ্যকে সঙ্গীর্ণ করে তার মধ্যে যেটাকেই 
বাদ দেব সেটাই সমগ্রকে পন্থু করবে । পৃথিবীতে ধারা বিজ্ঞানের 
সাধন! করেন তারাঁও মোহমুক্তির দিকে মানুষের একটা জানলা 
খুলে দিচ্চেন। কিন্তু যদি তারা বলেন অন্য জানলাগুলি 
বুজিয়ে দাও দেওয়াল গেঁথে, তাহলে সেই এক জানলার পথে 
বিজ্ঞানের অতি তীব্র উপলব্ধি জন্মাতে পারে তবু পূর্ণতার 
এশ্বধ্যে মানুষ বঞ্চিত হবে। পেটুক বল্তে পারে জল খেয়ে 
কেন পেট ভরাব, জঠরের সমস্ত গহবর সন্দেশ দিয়ে ঠাসাই 
ভোজের চরম আনন্দ, তেমনি মাতাল বলে খাবার খেতে 
শক্তির যে অপচয় হয় সেটা বন্ধ করে একমাত্র মদ খেয়েই 
তিপ্তির পূর্ণতা ঘটানো চাই। আপাতত যাই হোক্‌ পরিণামে 
উভয়েই বঞ্চিত হয়। সাধারণত যাকে আধ্যাত্মিক সাধন 
বলা হয় তাকে যখন আমরা লোভের সামগ্রী করে তুলি তখন 
আলে! পাবার জন্যে একটি জানল! ছাড়া অন্য সব জানলায় 


৭৩ 


দেয়াল গাঁথবার উৎসাহ জাগে । এইরকম গুহাবাসের সন্্যাসকে 
আমি মানি নে; গুহার বাইরের বিরাট জগৎকে আমি গুহার 
চেয়ে বেশি সত্য বলেই জানি। সেই জন্যেই, কোনো আধ্যাত্মিক 
নামধারী গুহার মধ্যে ঢুকলেই আমার পরমার্থ লাভ হবে এমন 
লোভ যদি কোনো খেয়ালে আমাকে পেয়ে বসে তবে ক্ষণকাঁলের 
মধ্যে হাঁপিয়ে উঠে তার থেকে বেরিয়ে আসব সন্দেহ নেই । 
যদি বলো অনেকে ত নিজেকে অবরুদ্ধ করার সাধনায় শেষ 
পধ্যন্ত টিকে যাঁয়। আমার উত্তর এই, মাড়োয়ীরি মহাজন 
তো রাত্রি আডাইটা পধ্যন্ত আড়তের গদিতে রুদ্ধ থাকে, 
যুনফাও জমে । কোনে! একটি জাতের মুনফাকেই একাম্ত করে 
সেইটেকেই চরম লাভ বলা লোভের কথা । চলমান জগতে যা 
কিছু চল্‌্চে সমস্তকেই অধিকার করে পূর্ণস্বরূপ আছেন অতএব, 
মা গৃধঃ, লোভ কোরো না! -এই হোলো ঈশোপনিষদের প্রথম 
শ্লোক। পূর্ণকে উপলব্ধি করতে যদি চাই তবে কোনো একটা 
অংশে চৈতন্যকে রুদ্ধ করাই লোভ এবং ব্যর্থতা, তাকে বিষয়- 
ন্ুখই বলি আর আধ্যাত্মিক আনন্দই বলি। এই হোল আমার 
নিজের কথা। সাহিত্য শিল্প বিজ্ঞান দর্শন লৌকসেবা সব দিকেই 
নিজেকে মুক্তি দেওয়ার দ্বারাই পূর্ণকে উপলব্ধি করব-_ চিন্তে 
তার বিচিত্র প্রকাশের পথকে সব জানলার যোগেই খুলে রেখে 
দেব তবেই আমার মনুষ্যত্ব সার্থক হবে। যুরোপের সাধকের যে 
মুক্তির পথে অসীম অধ্যবসায়ে মানুষের সহায়তা করচে তাকে 
আমি সকৃতজ্ঞ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেচি, আবার ভারতীয় 
সাধকেরা আপনার মধ্যে আত্মজ্যোতিদর্শনের যে সাধনাকে গ্রহণ 


৭৪ 


করেচেন তাকেও আমি প্রণীম করে মেনে নিই। এই উভয়ের 
মধ্যে জাতিভেদ ঘটিয়ে যদ্দি পংক্তিবিভাগ করি, এবং এক পাশ 
ঘেঁষে সমস্ত জীবন কেবল শুচিবায়ুর চর্চা করি তাহলে কৃপণের 
গতি লাভ করব । 

কিন্তু একটি কথা মনে রেখো» চতুষ্পথে আমার চলা ; 
সম্প্রদায়ের দুর্গে রুদ্ধদ্ধারের মধ্যে আমি বাচিনে। এই জন্যে 
যদিও আমি নিজের মত গোপন করিনে, তবু কাউকে ডাকা- 
ডাকি করে কোনোদিন বলিনে আমার মত গ্রহণ করো । তুমি 
নিজের পথে নিজের মতে চল্‌্লে তোমার প্রতি আমার স্সেহ 
কিছুমাত্র কু হবে এমন শঙ্কা কোনোদিন কোরো না । স্বভাবতই 
তোমার চিত্তশক্তির একটি প্রসারতা আছে, এইরকম বেগবান 
চিত্তকে খোটায় বেঁধে বাধা খোরাক খাওয়ানো সহজ নয়। 
তোমার কঠিন ছুঃখ হচ্চে এই দ্বিধা নিয়ে। তোমার সংস্কার 
এই যে, চিত্তকে পীড়িত করে খর্ব করে তাঁকে বিশ্বের অধিকার 
থেকে নান প্রকারে বঞ্চিত করে তবে সার্থকতা, অথচ তোমার 
প্রকৃতিতে যে বুদ্ধিশক্তি ও প্রাণশক্তির প্রাচুধ্য আছে, সে 
অবারিত আকাশে আলে! চায় হাওয়া চায় গতি চায়। সেই 
চাওয়াটাকে তুমি অপরাধ বলে ভয় পাও । পাখীকে খাঁচায় বন্দী 
করে তাকে আকাশভীরু করে তোল। হয়েচে। কিন্তু এই আকাশ- 
ভীরুতা৷ তার স্বভাব নয়, সে তার ডান! দেখেই টের পাওয়া যাঁয়। 

যাই হোক, আমাকে তোমার গুরু বলে গণ্য কোরো না, 
আপনার লোক বলেই জেনো । বাইরের দিক থেকে তোমার 
পরিচয় অল্পই পেয়েচি তবুও তোমাকে স্সেহ করা আমার পক্ষে 


৭ ৫ 


অত্যন্ত সহজ হয়েচে। তার কারণ তোমার মনের মধ্যে এমন 
একটি স্বচ্ছতা আছে কোনোরকমের সংস্কারের বাধায় তাঁকে 
ছায়াবুত করতে পারে নি, তোমার স্বাভাবিক বুদ্ধিশক্তি সকল 
রকম বাধার মধ্যেও তোমাকে মুক্ত রেখেচে। আমার সম্বন্ধে 
কঠোর বিরুদ্ধত। থাকাই তোমার পক্ষে স্বভাঁবসঙ্গত ছিল, আমার 
দেশের লোকের অনেকেরই তাই আছে। কিন্তু অভ্যাসের 
আচারের মতের নানাপ্রকার বাধা সত্বেও সে সমস্ত পাঁর হয়েও 
তুমি আমার কাছে আসতে পেরেচ সে তোমার বুদ্ধির অসামান্য 
উদারতাবশত। প্রকৃত আত্মীয়তার মিলনক্ষেত্র এই উদারতায়, 
মতের মিল প্রভৃতিতে নয়। চিঠিতে তোমাদের সাধনার কথা 
তুমি যে রকম করে প্রকাশ করেচ তাতে আমি গভীর আনন্দ 
পেয়েছি, তোমার নিজেকে স্ুনিপুণ ভাষায় সুস্পষ্ট করে আমার 
গোচর করতে পেরেচ। মানুষের প্রতি আমাদের ওদাসীন্ত 
সেইখানেই যেখানে সে আমাদের কাছে অস্পষ্ট। যে হঝেচে 
সুপ্রত্যক্ষ তাকে আমরা অন্তরের মধ্যে অনায়াসে গ্রহণ করি। 
তুমি যে পথেই চলে! না কেন, সে পথ আমার নিদিষ্ট না হলেও 
আমি লেশমাত্র ক্ষোভ করব না এ কথা নিশ্চিত জেনো । কিন্তু 
সে পথ তোমার প্রকৃতিবিরুদ্ধ না হয়, সে পথে তোমার সম্যক 
চরিতার্থতা ঘটে, তুমি শান্তি পাও এই আশা করি। আমাকে 
চিঠি লিখতে যদ্দি তোমার বাঁধ! ঘটে বা অবকাশ না পাও আমি 
কিছুই মনে করব না। তুমি স্বচ্ছন্দ মনে সহজে নিজের জীবনকে 
গ্রন্থিমুক্ত করে আত্মপ্রতিচিত হও এই ইচ্ছামাত্র আমার মনে 


রইল । ইতি ১১ শ্রাবণ ১৩৩৮ 
দাদা 


৭৩৬ 


৩২, 
৩১ জুল।ই ১৯৩১ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থু 

শেষ চিঠিতে তোমাকে কি লিখেছিলুম মনে নেই কিন্তু 
তোমার চিঠি থেকে বোধ হল তোমাকে ক্ষুব্ধ করেচে। তুমি 
নিশ্চয় জেনো তোমাকে কোনো বিশেষ পথে প্রবর্তন করবার 
জন্যে আমার মনে একটুও তাগিদ নেই। সত্য বলে অন্তরে যা 
আমি উপলব্ধি করি তা আমি সকলকে বলিনে__ এখানে 
সত্য বলচি তাকে যা সকল সত্যের গোড়ায় । আমার 
ভিতরকার দরজা যে চাবিতে খোলে, সে চাবি সকলের কুলুপে 
লাগবে না। তা ছাড় গুরুর পদ আমার নয় সে আমি নিশ্চিত 
জানি। আমি অনুভব করি, আমি কথা কই এইটেই আমার 
ব্বধন্ম। তোমার চিঠিতে আমি কথা! কয়ে গেছি সেটা শুনিয়েচে 
অনুশাসনের মতো । কিন্তু প্রকাশ করা যদিও আমার 
স্বভাবসঙ্গত, প্রচার করা একেবারেই নয় । যে উপলব্ষিতে তুমি 
গভীর আনন্দ পেয়েচ সে তোমার আপনারই জিনিষ । ধার 
কর! জিনিষ নিয়ে তোমার চলবে না, এমন কি সে যদি দামী 
জিনিষ হয় তবুও না। প্রচার করতে যাঁদের অত্যন্ত উৎসাহ 
তারা এই কথাটা বুঝতে পারে না, এই জন্যে তার! সংসারে 
কেবলি বাহিকতার আবর্জনা জমায়। সত্য অন্তরের হলে 
তবেই খাটি হয় তবেই তাতে শান্তি তাতে স্বাস্থ্য তাতে সৌন্দর্য্য 
তাতে আনন্দ, অন্ন পাঁকযন্ত্রে এসে তবেই প্রাণের সামশ্রী হয়ে 


৭৭ 


ওঠে, তাকে গায়ে মাথায় মাখলেই সেটা অশুচি হয়ে পড়ে। 
যারা প্রচারে উৎসাহী তারা কোনোমতে ভিতরের জিনিষকে 
বাইরে চাপিয়ে দিয়ে খুসি হয়-_ এই জন্যে তার! দল গড়ে তোলে 
মন গড়ে তোলে না । যাঁরা স্বভাবতই দলচর লোক তারাও দলের 
চাপরাস পরে সগর্ধে খুসি হয়ে বেড়ায়। সকল ধশ্মসমাজেই 
দলের অত্যাচার আছে । কেননা, অধিকাংশ লৌকেরই অন্তরের 
আবরণ শেষ পর্যন্ত খোলে নাঁ। এই কারণে তার! বাইরের দিক 
থেকে চালিত হবার গুৎস্থক্যে বাহ্যিকতাকেই চিরদিনের মতো 
আকড়ে ধরে এবং তারাই এই বাহ্যিকতার জবরদস্তি নিয়ে অন্যের 
উপর অত্যাচার করতে ছাড়ে না। ধন্মের নামে যত উন্নত্ততা যত 
রক্তপাত সে তো! এই বাহ্যিককে নিয়েই। ধর্্মের অভিমান এই 
নিয়েই, মূঢ়তা এইখানে । 

তোমার চিঠি পড়ে এ কথা বুঝি যে, একটি আস্তরিক উপলব্কি 
সোনার কাঠির মতো তোমার চিত্তকে জাঁগিয়েছে। সব সময়েই 
তার স্পর্শ পাও বা না পাও একবার পেলেই তার সম্বন্ধে আর 
সংশয় থাকে না। এর উপরে বাইরে থেকে তর্ক একেবারেই 
মিথ্যে । তুমি প্রদীপ দেখেচ কি না তা নিয়ে নানা সাক্ষীসাবুদ 
নিয়ে তোমার সঙ্গে বচসা' কর! চলে কিন্তু যখন তুমি বলো আমি 
আলো দেখলুম তখন সেই আলোর সাক্ষী ভূমি নিজেই । সেই 
আলে! আমিও যদি দেখে থাকি তাহলে তোমার সঙ্গে প্রদীপের 
ঝগড়াটা থামিয়ে দেওয়াই ভালো, কেনন! সেটা সামান্য কথ! । 

একট! জায়গায় আমাকে তুমি সম্পূর্ণ বৌঝনি। বারবার 
আশঙ্ক। প্রকাশ করেচ পাছে আমার কথা মানতে পারচ না বলে 


৭৮ 


আমি তোমার উপর রাগ করি। এই আঁশ্রমেই এমন অনেক 
লোক আছে যাঁরা আমাকে মানে না,[ নান। বিষয়ে] যার! আমার 
বিরুদ্ধ। আমি তাঁদের বর্জন করিনি, তাদের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ 
সহজ | আমার এই ্বস্থানেও স্টিম রোলার চালিয়ে মতভেদের 
পার্থক্যকে গুড়িয়ে একাকার করে দিতে আমার প্রবৃত্তি হয় না। 
নিজের কথ। তুমি যা বল তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি তাতে 
আমি আনন্দও পাঁই,কিস্ত তাই বলে সব স্দ্ধ তাকে গ্রহণ করতে 
গেলে আমার পক্ষে সেটা একেবারেই বেমানান হবে । বাহিরের 
জিনিষ সীমাবদ্ধ, তোমার সীমায় আমার সীমায় মিল হতেই 
পারে না অন্তরের জিনিষ সীমার অতীত, সেখানে মিল্তে 
কোথাও বাঁধা নেই। ইতি ১৫ শ্রাবণ ১৩৩৮ 


দাদা 


৩৩ 


৩১ জুলাই ১৯৩১ 


৫6 


কল্যাণীয়াম্ত 

অন্তরে বাহিরে কোনো বাধ! থাকলে কিছুতেই নিজের প্রতি 
তুমি জবরদস্তি কোরো না। চিঠি না লিখতে যদি পার আমি 
তোমাকে ভূল বুঝব না। আমি জানি তুমি আমাকে কখনই 
বিরুদ্ধভাবে বা উদ্দাসীনভাবে দেখতে পার না। তুমিও আমার 
আস্তরিক সৌহার্দ্য পেয়েছ। আমি নানা চিন্তায় নানা কর্মে 


৭৯ 


প্রবৃত্ত, তা ছাড়া অবকাশ পেলেই সমস্ত বিক্ষিপ্ত চেষ্টা চিন্তাকে 
নিজের মধ্যে প্রতিসংহরণ করে পূর্ণতার আনন্দ পাবার চেষ্টাও 
ভুলি নে। বাহিরের কোনো ক্ষতিকে আমি অন্তরে গ্রহণ সহজে 
করি নে। সংসারে অনেক পেয়েছি সংসাঁরেই তাদের সব কিছু 
ধরে রাখতে পারি নি-_ কিন্তু হৃদয়ে তার! সার্থক হয়েচে । সেই 
সার্থকতাঁর ডালি হাতে নিয়েই একদিন সংসার থেকে বিদায় 
নেব__ রিক্তহস্তে যাব না । ইতি ১৫ শ্রাবণ ১৩৩৮ 

দাদ! 


৩৪ 


৩ অগস্ট, ১৯৩১ 


০ 


কল্যাণীয়াস্ু 

আমার আশঙ্কা হচ্চে অতি দীর্ঘকাল যে ব্যবস্থার মধ্যে 
তোমার সমস্ত মন নিবিষ্ট হয়ে ছিল তার থেকে তোমাকে বিচলিত 
করে কষ্টের কারণ ঘটিয়েছি। চিঠিতে যে সব কথা নিয়ে তোমার 
সঙ্গে আলোচনা করেচি সে কেবল আমার কথাটি তোমার কাছে 
স্পষ্ট করে বলবার জন্যে । যা আমার বলবার আছে তাকে 
হৃদয়ঙ্গম করানোই আমার স্বভাব-_ এই কাজ করতেই এসেচি। 
আমাকে কবি বলে' সাহিত্যিক বলে' লোকে গ্রহণ করে। বাহবা 
দেয়, বলে, আমি বেশ বলেচি-_- আমার রচনার প্রশংসা করে, 
কেউ বা করেও না । কিন্তু এ পধ্যস্ত। দীর্ঘকাল এই কাজ করে 


৮৩ 


এসেচি-_ দেশের লোকের কাউকে কিছু বোঝাতে পেরেচি বলে 
বিশ্বাস করি নে__ কথায় বুঝিয়েচি কিন্ত অন্তরে নয় । সেই জন্যে 
আমার স্বদেশে আমি একা | প্রথম প্রথম তা নিয়ে মনে খেদ 
করেচি__ এখন বুঝেচি আমার যা কম্ম তা করেচি,তার পরেকার 
উপসংহার আমার হাতে নয়। গাছের কাজ হচ্চে বীজকে পোষণ 
করা, তার পরে মাটির পালা । সেখানকার হিসাব তলব করবাঁর 
দায় গাছের নয়। আজকাল এই কথা ভেবে শাস্তি অবলম্বন 
করি। যদি দুর্বলতাবশত কখনো নালিষের কথা মুখ দিয়ে 
বেরিয়ে পড়ে পরক্ষণে অত্যন্ত লজ্জিত হই । তোমার মনে যে 
কঠিন ছন্দ উপস্থিত হয়েচে এ আমি একটুও প্রত্যাশা করি নি। 
করলে হয় তো চিন্তা করতুম- হয় তো ভাবতম, তোমার 
আশশ্রয়কে ছুর্বল করে" তার পরিবর্তে কোনো অবলম্বন তোমাকে 
দেওয়ার অবকাশ হয় তো ঘটবে না এমন অবস্থায় তোমার 
মনে দ্বিধা জন্মিয়ে দেওয়া নিুরতা । কিন্ত তোমার বুদ্ধির পরে 
আমার আস্থা আছে। তুমি নিজের আলোকেই নিজের যথার্থ 
পথ খুজে পাবে- সে পথের সঙ্গে তোমার প্রকৃতির বিরোধ 
ঘটবে না। 

চিঠি লিখতে যদি না পারি কিছু মনে কোরো না-_ তোমার 
প্রতি আমার ওুদাসীন্য কল্পনা করে নিজেকে গীড়। দিয়ো না। 
ইতি ১৮ শ্রীবণ ১৩৩৮ 


দাদ] 


৯1৬ ৮১ 


৩৫ 


২১ অগস্ট, ১৯৩১ 


শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্থ 

তোমার সম্বন্ধে আমার ক্ষোভের কারণ কিছুই ঘটে নি এ 
সম্বদ্ধে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো । কোনো কারণে যখন তোমার মন 
বিচলিত বা গীড়িত হয় তখন তুমি অসঙ্কৌচে আমার কাছে 
যেমন খুসি লেখ না কেন তাতে কোনো অন্যাঁয় হয় না । এমনি 
করে তুমি নিজের সঙ্গেই বিচার করতে থাক । বাতাসের চলা- 
চলের মতো চিন্তার চলাচল স্বাস্থ্যকর | বদ্ধ মত ও রুদ্ধদ্বার মন 
নিয়ে যারা থাকে তাঁরা জড় অভ্যাসের আরামে নিবিষ্ট হয়ে 
থাকে কিন্তু একে যত বড়ো নামই দাও না এর আসল নাম 
মানসিক তামসিকতা । এর চেয়ে চিন্তার আলোড়ন নিয়ে ছুঃখ 
পাওয়া! ভালো । স্থ্টির সঙ্গে দুঃখ আছে, তাই উপনিষদে আছে, 
স তপস্তপ্তা সর্ধবমস্জত যদিদংকিঞ্চ__ তিনি তাপে তপ্ত হয়ে 
সমস্ত কিছু স্ষ্টি করেচেন । তোমার মন স্ৃষ্টিপ্রবণ, তাই আত্মস্থষ্ট 
কাধ্যে তোমার চিন্তার বিরাম নেই-_- অচল সংস্কারের মধ্যে 
চিরদিনের মতো! নিশ্চিন্ত থাকা তোমার প্রকৃতি-বিরুদ্ধ | চিন্তার 
দ্বন্দে তোমার মন তাঁপিত। এই তাপের অগ্রিশিখায় তোমার 
চিত্ত নিজেকে উজ্জ্বল করে” চিন্তে চাচ্চে__ যা তোমার মধ্যে 
অস্পষ্ট অসমাপ্ত তা এই আলোড়নে পরিষ্ফুট পরিণত হয়ে 
উঠচে। তোমার এই বেদনাকে কোনো একটা বাধা মত ও 
নিবিবচার অভ্যাসের তলায় চেপে তাকে শান্ত করা তোমার অনিষ্ট 


৮ 


করা । বিশেষত যখন জড় চিত্তের মূঢ় শান্তি তোমার স্বভাবসঙ্গত 
নয়। আমার জীবনে নিরন্তর আমার মন নিজের ও চারদিকের 
সঙ্গে বোঝাপড়া করতে করতে চলেচে, কোনো একটা অন্ধকুপের 
মধ্যে নিস্তব্ধ হয়ে যায় নি। তোমার মধ্যে চিত্তের এই সচলতা 
সাধারণ স্ত্রীজনম্লভ নয় এই জন্যেই নারীন্মভাবের রীতি- 
নিঠতার সঙ্গে তার ছন্দ বাধচে। এই সমস্যার সমাধান তোমার 
নিজের মধ্যেই হতে থাক্বে | 
সময়াভাবে তোমাকে চিঠি লিখি নি-_ শরীরও সুস্থ নয় । 
ইতি ৪ ভাদ্রে ১৩৩৮ 
দাদা 


৩৬ 


১৪ অগন্ট, ১৯৩১ 
ওঁ শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্তু 

বীরেন্্রকিশোরকে পত্রে জানিয়েছিলুম যে তোমাকে যে সব 
চিঠি লিখেচি তার থেকে উদ্ধার করে ধন্ম সম্বন্ধে আমার মতটাঁকে 
প্রকাশ করব। কিন্তু থাক্‌। আপাতত তোমার পত্রের মধ্যেই 
নিহিত রইল । যদি ওর প্রাণশক্তি থাকে তবে কোনো এক সময়ে 
আপনি আবরণ ভেদ করে আবিষ্কৃত হবে__ ওর জন্যে আমাকে 
চেষ্টা করতে হবে না। 

বীরেন্্রকে লিখেছিলুম সেপ্টেম্বরের আরন্তে কলকাতায় 


৮৩ 


যাঁব। কিন্তু শরীর চলিফু অবস্থায় নেই অতএব কবে যাওয়া 

হবে জানি নে। 
তোঁমর! ভালো আছ এই আশা করি । ইতি ৭ ভাদ্র ১৩৩৮ 
দাদা 


৩৭ 


২৭ অগস্ট ১৯৩১ 
ও শান্তিনিকেতন 
কল্যাণীয়াসু 

আমার চিঠি যে তারিখে পাঁওয়া উচিত তার চেয়ে দেরীতে 
পাচ্চ লিখেচ। তার কারণ হচ্চে এই ষে আমাদের এখানে যে 
পোষ্টমাষ্টার আছে সে একাধারে ডাঁক-হরকরা এবং গুপ্ত চর। 
আমাদের চিঠি চলাচলে দেরি করে ; খোওয়া যায়। এমন কি, 
একজনের খামের মধ্যে আরেকজনের চিঠি অসতর্কতাবশত ঢুকে 
পড়েচে এমন ঘটনাও একবার ঘটেছিল । উপরওয়ালাদের কাছে 
বারবার ছঃখ জানিয়েচি-__ মনে মনে হাসিতে হাসতে পরিদর্শক 
গন্ভীরমুখে পরিদর্শন করেও গেছে । এখন নালিশ কর! ছেড়ে 
দিয়েচি। চোরাই-সন্ধানের বাঁহনটি নিশ্চয় জানে আমার চিঠি- 
যোগে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে গোপনে বাক্য-বোমা চালাই 
নে-_ আমার যাকিছু বলবার প্রকান্তেই বলে থাকি । কিন্তু 
আমার চিঠি গোপনে পড়বার এমন সুযোগ ছাড়বে কেন, 
বিশেষত যখন কোনে। জবাবদিহী নেই। এর! সরকার বাহাছ্বরের 
নোংর। কাজের ময়লা-গাড়ি। 


৮৪ 


তোমার কাছ থেকে চিঠিগুলি পেয়েছি। হয় তো ব্যবহার 
করব না। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি যখন কলকাতায় যাব সেই 
সময়ে ফেরৎ পাবে । 

আমি নিজের ডাক্তারি নিজেই করে থাকি। রোগের ছুঃখটা' 
আমাকেই ভোগ করতে হয় অথচ তার সুযোগটা অন্তে ভোগ 
করবে কেন? এক সময়ে বনু যত্বে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার চচ্চা 
করেছিলুম। কিন্ত রোগের লক্ষণ এবং বনুবিস্তৃত ওষুধের ফর্দের 
মধ্যে এত বেশি হাতড়াতে হয় যে বইগুলো এবং ওযুধের বাঝটা 
বিদায় করে দিয়েছি। এখন বাইয়োকেমিকের আশ্রয় নিয়েছি__ 
ফল পাই ভালো । মানসিক ক্লান্তিতে আমাকে ভূগতে হয়, তার 
সব চেয়ে ভালো ওষুধ [01 70708 6স| তুমি যে আয়বিক 
অবসাদের কথা লিখেচ তাতে এ ওষুধটা খাটবে। সুবিধা এই 
যে উপকার দিবা নাও করে অপকার করবে না। দিনে দশ 
গ্রেন পরিমাণে চারবার করে খেয়ে দেখতে পারো । কৰি ধরেচেন 
কবিরাজী এতে যি হাসি পাঁয় তো হেসো! এবং হাসতে হাসতেই 
ওষুধ খেয়ে দেখো বিশেষত যখন ওধুধটা বিস্বাদ নয়। পধ্যাঁয়- 
ক্রমে আরও একটা ওষুধ ব্যবহার কোরো! তার নাম 7581) 1101: 
63 অর্থাৎ একবার প্রথমোক্ত ওধুধ, তার ছু ঘণ্টা পরে 
ছিতীয়টা। আমাকে ফী দিতে হবে না । আমার নিকটবত্তীদের 
উপরে চিকিৎসা চালাই-__ কোনো! ছুর্ঘটনা ঘটেনি । ইতি ১৭ 
ভাব ১৩৩৮ 


দাদ] 


৮৫ 


৩৮ 


চে অগস্ট, ১৯৩১ 


ওঁ শাস্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্থু 

তোমার কোনে পত্রে তোমার কোনো কথায় তোমার গুরু- 
দেবের লাঘবতা ঘটে নি এ সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো। 
তোমার বর্ণনা থেকে তোমার গুরুদেবের যে চিত্র আমার মনে 
জেগেছে সে অতি সরস গম্ভীর এবং সুন্দর । তোমার গুরুর 
মধ্যে তুমি মানবচরিত্রের যে উৎকধ উপলদ্ধি করেচ আমার 
কাছে তা লেশমাত্র অশ্রদ্ধেয় নয় । 

আমার শরীর কেমন থাকে জানতে চাও । দিন অবসানের 
সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে আলো! কমে” আসতে থাকে এটাকে বিশেষ খবর 
বলে দেওয়া চলে না। এখন আমার কাজ করবার বয়স নয় 
অথচ কাজ করতেই হয় সুতরাং ক্ষণে ক্ষণে ক্লান্তি অনিবাধ্য | সেই 
ক্লান্তির দোহাই দিয়ে কাঁজ বন্ধ করি সে সাহস নেই । কাজের 
সঙ্গে জড়িত একট! অভিমান আছে-__ অর্থাৎ আমারই কাঁজ 
বলে একটা মমতা । সেটাই তো ক্লান্ত ঘোড়ার পিঠে চাবুকের 
মতো । মনকে ভোলাই কর্তব্যের নাম নিয়ে । কিন্ত গোড়াকার 
কথাটা অহঙ্কার । 

লোকমাহিত্য বলে একটা ছোট বই এইমাত্র হাতের কাছে 
এসে পড়ল-_ তোমাকে পাঠাই, পড়ে দেখো । 

১০ সেপ্টেম্বর তারিখে কলকাতায় বন্তার ছুঃখ দূর কল্পে 


৮৬ 


একটা অভিনয় করব স্থির করেছি । তার ছু চার দিন আগেই 
যেতে হবে। ইতি ১১ ভাদ্র ১৩৩৮ 


দাদ। 
একখণ্ড মানসী পাওয়া গেল সেটাও পাঠাচ্চি 
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ 
ঁ শান্তিনিকেতন 
কল্যাণীয়ান্ত 


কাজের ঝঞ্ধাট বেড়ে উঠেচে_ নানা রকমের ফরমাঁস 
খাটতে হয় তবু সে আমার বহুদিনের অভ্যাসে অনেকট! সহ্য 
হয়ে এসেচে । কিন্ত নিরতিশয় পীড়িত করে তোলে অত্যাচারের 
কথা । আমার বেদনাবহ নাড়ি এই রকম কোনো সংবাদের নাড়া 
খেয়ে যখন ঝন্ঝন্‌ করে ওঠে তখন সে যেন আর থামতে চায় 
না। সম্প্রতি দেহমনের উপর সেই উপদ্রব দেখ! দিয়েচে। দেশে 
বন্াপ্রাবনের দুঃখ মনের উপর ভার চাপিয়ে এতদিন বসে ছিল 
তার উপরে চট্টগ্রামের বিবরণটা আমার ঘুম তাড়িয়ে দিয়েচে। 
আমাদের নিজের দেশের লোক নিন্মম হয়ে যখন এরকম দানবিক 
কাণ্ড করে তখন কোথাও কোনে সান্তনা দেখি নে। তার উপরে 
আর একট। জআলার যোগ হয়ে অশান্ত করে তুলচে-_ মনে 
নিশ্চয় জানি এর পিছনে আমাদের মন্ত্যলোকের বিধাতাপুরুষেরা 
রয়েচেন। এই রকম ব্যাপারের দ্বারা ছুটে। গুরুতর অনিষ্ট হচ্চে। 


৮৭ 


প্রথম এই-- সমস্ত মুসলমান জাতের উপর হিন্দুর দ্বণা জন্মে 
যাচ্চে। অথচ এ কথ! নিশ্চিত সত্য তাদের মধ্যে অনেকে আছে 
যারা ভালে। লোক,ঠিকমত পরিচয় পেলে যাদের সঙ্গে আত্মীয়তা 
করতে কোথাও বাঁধত না'। ইংরেজের সন্বন্ধেও সেই একই কথা । 
এই সমস্ত ছুধ্যোগে যে তীব্র বিদ্বেষবুদ্ধি ব্যাপক হয়ে আমাদের 
মনকে অধিকার করে সেটাতে আমাদের গভীরভাবে ক্ষতি হয়। 
মুসলমানেরা যদি সম্পূর্ভাবে পর হোতো তাহলে এ ক্ষতি 
আমাদের পক্ষে তেমন সর্বনেশে হোতো! না কিন্ত দেশের দিক 
দিয়ে তারা আমাদের আপন এ কথাটা কোনো উৎপাঁতেই 
অন্বীকৃত হতে পারে না। তাই এটা তো বাইরের শেল নয়, এট! 
ষে মন্স্থানের ভিতরকার বিস্ফোটক-_ এর মার কে সামলাবে? 
যারা আমাদের আপন লোকদের এরকম সাংঘাতিকভাবে পর 
করে দিচ্চে তারা করচে স্বার্থের জন্য । ভারতবধ তাদের অন্ধের 
থালি, এটাতে টান পড়লে তাদের শ্রেয়োবুদ্ধি কলুষিত যদি হয় 
তবে সেটা পরমার্থের দিকে না হোক অর্থের দিক থেকে বোঝা! 
যায়। কিন্তু আপনার লোকদের কৃত অন্ধ অন্যায় তাদের 
নিজেরই স্বার্থের বিরুদ্ধ। তারা চিরদিনের জন্যে দেশের চিন্তে 
যে অবিশ্বাম যে ঘৃণা আবিল করে তুল্‌চে তাতে চিরদিনের 
মতোই তাদের নিজের ক্ষতি । ইংরেজ যখন সমস্ত চীনদেশের 
কণ্ঠের মধ্যে তলোয়ারের ডগ! দিয়ে আফিমের গোল! ঠেসে 
দিলে তখন এ পাঁপ থেকে অন্তত বৈষয়িক পুরস্কার পেয়েচে। 
কিন্তু মনে করে! দক্ষিণ চীন যদি উত্তর চীনের মুখে বিষ ঢালতে 
থাকে তাহলে তাতে চীনের অঙ্গে যে মৃত্যুর সঞ্চার হবে তাতে 


৮৮ 


দক্ষিণ তার থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। এ ক্ষেত্রে হারলেও মৃত্যু 
জিৎলেও মৃত্যু । আমাদের মধ্যে যে-কোনো সম্প্রদায় জাতীয় 
সত্তার মূলে যদি কুঠার চালায় আর এই মনে করে খুসি হয় যে 
সে আছে উপরের শাখায় তাহলে তার সে আনন্দ কখনো 
টিকতে পারে না । কিন্তু এ কথা বলে গলা ভাঙলেও বিশেষ ফল 
হবে না-_ কারণ মানুষের বিপু যখন যে কোনো উপলক্ষ্যেই 
উত্তেজিত হয় তখন আত্মীয়কে আঘাতের দ্বারা আত্মহত্যা করতেও 
কুষ্ঠিত হয় না। ইতিহাসে যত কিছু শোচনীয় ঘটনা ঘটে তা এমনি 
করেই ঘটে, মানুষ আপনি মরবে জেনেও অন্যকে মারে। 
আমাদের সাধনা আজ কঠিন হয়ে উঠল-_ অসহা আঘাতেও 
আত্মসন্বরণ করতে যদি না পারি তাহলে আমাদের তরফেও 
আত্মহত্যার আয়োজন কর। হবে. শক্রগ্রহের হবে জয়। মন 
অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়ে আছে বলেই তোমাকে এসব কথা লিখলুম- 
কথাটা! এস্থলে প্রাসঙ্গিক নয় কিন্তু মন্মান্তিক ।__ এই চিঠি 
থেকে কথাগুলো! নিয়ে চিঠির আকারেই প্রবাসীতে পাঠাব স্থির 
করেচি। 

তোমার রোগের যে কর্দ পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেল 
তোমার দেহে এক হাসপাতাল-ভরা ব্যামো। তাঁর অনেকগুলোই 
তোমার স্বরচিত বলেই আমার বিশ্বাস। দীর্ঘকাল ধরে তাদের 
বাসা দিয়েছ, তাদের যদি নোটিশ দিয়ে বিদায় করো তাহলে 
আবার নতুন বাসাড়ে জুটিয়ে আনবে । নিজের হাতে ছুঃখ রচনা 
করবার অসাধারণ ক্ষমতা তোমার আছে তাই সন্দেহ করচি 
অন্তত অনেকগুলো ব্যামোই তোমার হাঁতগড়া। রোগস্থষ্টিকার্ষে 


৮৭ 


বিধাতার সঙ্গে তুমি টক্কর দিচ্চ, ওঝাঁর কর্ম নয় তোমাকে মুক্তি 
দেওয়া । 
৯ই সেপ্টেম্বর তারিখে এখান থেকে কলকাতায় যাবার কথা। 
সেই সময়ে তোমার চিঠিগুলি নিয়ে যাব__ ওখানে গিয়ে 
তোমাকে দিলেই হবে । ইতি ১০ ভাদ্র ১৩৩৮ 
দাদ! 


১১ সেপ্েম্বর ১৯৩১ 
ওঁ 

কল্যাণীয়াস্থু 

আমার শেষ দীর্ঘ চিঠিখানা পেয়েচ কি না জানিনে। না 
পাওয়া অসম্ভব নয় । রাজকীয় রজকের নোংরা কাপড়ের বাহন 
যাঁরা তারা েটাকে আছড়ানো। নেংড়ানো ডিপাটমেন্টে হয় তে। 
পৌঁছে দিয়েচে। এ চিঠিখানার কি গতি হবে জানিনে | এ 
চিঠি দ্বার! ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ভূমিকম্প ঘটবার আশঙ্কা নেই তাই 
হয় ত ছু চার দিনের মধ্যে তোমার হাতে পৌছতে পারে। 

আমি আজ শুক্রবারে সায়াহ্কে কলকাতায় উপস্থিত হব। 

ভূমি দুর্গতদের সাহায্যকল্ে অল্প কিছু সংগ্রহ করতে প্রবৃত্ত 
হয়েচ। তোমার পক্ষে যদি ছুঃসাধ্য হয় কুষ্ঠিত হোয়ো না। 
তোমার শুভ ইচ্ছারও যথেষ্ট মূল্য আছে। ইতি ১৫ ভাদ্র ১৩৩৮ 

দাদা 


৪০ 


৪১ 


| ১৩ সেপেম্বর ১৯৩১ ] 
রবিবার 


৫৫ 


কল্যাণীয়ান্ম 

এসে অবধি অত্যন্ত ব্যস্ত আছি। তোমার প্রেরিত কাপড় 
পেলুম কাজে লাগবে । তোমাদের লোক টাকা নিয়ে এসেছিল 
আমি অনুপস্থিত ছিলুম বলে আমাদের নির্বোধ টাকা ফিরিয়ে 
দিয়েছিল । এ রকম করে লক্ষ্মীকে প্রত্যাখ্যান আমার ভাগ্যেই 
ঘটে। কিছু কিছু টাকা আসচে। কাজ আরম্ত হয়েচে। 

এই চটিখানা দেখে স্টেজে ব্যাপারটা কি রকম হবে বুঝতে 
পারবে না। 

তোমার চিঠিগুলি ফিরিয়ে দেব। যদি আস কিম্বা লোক 
পাঠাও তাহলে সহজ হবে। 

তোমার শরীর ভালে! আছে ত? 

দাদা 


৪8৭ 
[ ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ ] 
আজ যদি নটার সময় আসতে পারো তাহলে দেখার বিস্ব 
হবে না। আমি স্টেজে যাবার পুর্রেই খেয়ে নিই । 
দাদ 


৯১ 


৪৩ 


[ ১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ ] 


কল্যাণীয়াস্থু 
তোমাকে ভূল বলেছিলেম। বুধবার সন্ধ্যার সময় ম্যাডানের 
সিনেমায় আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে। সেদিনকাঁর আয় 
আমাদের । আমাদের অভিনয় আজ শেষ হয়ে যাবে সন্ধ্যা 
আটটার পূর্ববেই । তৃমি কি সওয়া আটটা বা পৌনে আটটায় 
আমাদের এখানে আসতে পারবে । সেদিন তূমি এখানে এসে 
ফিরে গেছ শুনে ছুঃখ পেয়েছি । খবর পাঠালে আমি নিশ্চয় 
সুবিধা করে দেখা করতৃম । যদি আজ আসতে পার লিখে 
পাঠিয়ো । তোমার ছুখানি রুলির জন্যে একজন কুড়ি টাকা দাম 
দিয়েচে। তোমার ১০ টাকা পেয়েচি। 
দাদ! 


৪ 
২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ 
কল্যাণীয়াস্থু 

নানা খুচরো! লেখার দায় পড়েচে আমার উপরে-_ তাতে সময় 
যায়, আনন্দ পাইনে। তার উপরে শ্রান্তি, এবং মনটা উদ্ঘিগ্ন। 
জোড়ার্মীকোয় দরবারী লোকের ভিড়ে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে 
এখানে আশ্রয় নিয়েচি। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুদে কাজগুলোও এসেচে। 
তাই তোমাকে অনেকদিন চিঠি লিখতে পারিনি । তার উপরে কাল 


কহ 


যখন শুনলুম তুমি আমাদের ওখানে গিয়ে ফিরে গেছ আমার 
মনে বড়ো আঘাত লাগল । আগে যদি জানতুম তাঁহলে নিশ্চয়ই 
এখান থেকে জোড়াসীকোয় গিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করতুম । 
আমি কাল বুহস্পতিবারে বিকালে জোড়াসীকোয় যাব 
তার পরদিন সকালে পালাব শান্তিনিকেতনে । হয়ত বুহস্পতি- 
বারে তোমার আসা! সম্ভব হবে না । না হোক, কিন্ত একটা কথা 
নিশ্চিত জেনো, তোমার পরে আমার স্সেহ ও শ্রদ্ধা স্থগভীর ! 
যদি আমি তোমার অন্তরের অভাব দ্বন্দ বেদনা কোনো! উপায়ে 
লাঘব করতে পারতুম বড়ো খুসি হতুম। কিন্তু আমার সে শক্তি 
নেই। আমি নিজে যদি বা কোনো সত্য উপলব্ধি করি সেটা 
আর কাউকে দেবার ক্ষমতা আমার নেই । লেখবার ক্ষমতা 
হয় তো! আছে, কিন্তু লেখা এবং দেওয়া একই নয়। পরশ পাথর 
যার শক্তির মধ্যে আছে মানুষকে সেই তো! সত্যকার দানে ধনী 
করে। অন্তরকে সোনা করতে যারা পারেন তাদের দেখা পাওয়া 
ছুর্লভ। সেই জন্যে আমার মতো ভাষানিপুণ লোকও হয় তো 
অল্প কিছু উপকার করতে পারে । ভাষার সাহায্যে হয় তো 
আমরা বৃদ্ধিতে বুবি কিন্তু অন্তরে পাইনে। সত্য জানা বড়ো 
কথা নয়, সত্য হওয়াই হচ্চে চরম সিদ্ধি । সেই সত্যকরণের শক্তি 
ধার কাছে পাওয়া সম্ভব তাকেই প্রণাম করি। আমার কি 
প্রণাম প্রাপ্য ? কিন্ত অকৃত্রিম মেহদানের যদি কোনো মূল্য 
থাকে সে মূল্য তুমি পেয়েছ! ইতি ৬ আশ্বিন ১৩৩৮ 
দাদা 


২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ 


৫০৩ 


কল্যাণীয়াস্থ 

আমি চিঠি লিখতে ক্রটি করিনে, কিন্তু আনমনা মানুষ, 
উত্তর দিতে ভূলে যাই। আজ আরন্তেই তোমার প্রশ্ন কণটির 
জবাব দেব। 

একটা কথা মনে রেখো, গল্প ফোটোগ্রাফ নয়। যা দেখেছি 
যা জেনেছি তা যতক্ষণ না মরে গিয়ে ভূত হয়, একটার সঙ্গে 
আরেকটা মিশে গিয়ে পাঁচটায় মিলে দ্বিতীয়বার পঞ্চত পায় 
ততক্ষণ গল্পে তাদের স্থান হয় না। 

১। গোর! ও নৌকাড়ুবির কল্পনা সম্পূর্ণই আমার মাথার 
থেকে বেরিয়েচে । এমন ঘটনা ঘটেচে বলে জানিনে কিন্তু ঘটলে 
কী হতে পারত সেইটে ইনিয়ে বিনিয়ে লিখেচি। 

১। দালিয়া গল্পটায় ইতিহাস যেটুকু আছে সে আছে গল্পের 
বহিঃপ্রাঙ্গণে-- অর্থাৎ গাছে চড়িয়ে দিয়ে মই নিয়েছে ছুটি। 
আসল গল্পটা ষোলো আনাই গল্প । 

৩! কেশরলালের গল্পটা পেয়েচি মগজ থেকে । চতশ্মুখের 
মগজ আছে কিনা জানিনে কিন্তু তিনি কিছু-না থেকে কিছুকে 
যে ভাঁবে গড়ে তোলেন এও তাই। অনেককাল পুর্বে একবার 
যখন দাজ্জিলিডে গিয়েছিলুম, সেখানে ছিলেন কুচবিহারের 
মহাঁরাঁণী। তিনি আমাকে গল্প বল্তে কেবলি জেদ করতেন। এই 
গল্পট। তার সঙ্গে দাজ্জিলিঙের রাস্তায় বেড়াতে বেড়াতে মুখে মুখে 


৪৪ 


বলেছিলুম ৷ মাস্টারমশায় গল্পের ভূমিকা অংশটা এবং মণিহাঁর৷ 
গল্পটিও এমনি করে তারই তাগিদে মুখে মুখে রচিত | 

৪ | লুধিত পাষাণের কল্পনাও কল্পলোক থেকে আমদানি । 

৫। বোষ্টমী অনেকখানিই সত্যি । এই বোষ্টমী স্বয়ং আমার 
কাঁছে এসে গল্প বলত । শেষ অংশটায় অল্প কিছু বদল করেচি। 
বোষ্টমী যে, গুরুকে ত্যাগ করেছিল সেটা সত্য নয়-_ সংসারত্যাগ 
করেছিল বটে। একদিন আমাকে এসে বল্লে, কাল রাত্রে 
স্বপ্ধে তোমার পা ছখানি বুকের উপর পেয়েছিলুম__ মোজা ছিল 
না__ ঠাণ্ডা । এই তো দূরে থেকেও তোমাকে পেয়েছি। কাছে 
আসবার এই আকাভক্ষা, এতো মোহ ।-_ এই বলে সে চলে গেল, 
আর তাকে দেখিনি । 

৬। কাবুলিওয়াল! বাস্তব ঘটনা নয়। মিনি আমার বড়ো 
মেয়ের আদর্শে রচিত । 

৭। বিদেশের উপাদান নিয়ে আমি কখনে। কিছু লিখিনি । 
বাইরে থেকে মালমসল! ধার নিয়ে লেখ! আমার পক্ষে একে- 
বারেই অসম্ভব । 


শি 0 পপি 


কাল বৌমাকে দেখতে গিয়েছিলুম__ অনেকটা সেরেচেন 
মীরা আছে শান্তিনিকেতনে | 


সতীশ 


ন্রদেবতা জন্বন্ধে ভাবের দিক থেকে তুমি যে কথা সুন্দর 


টি 


করে বলেচ লে মেনে নিতে আমার বাঁধে না। কিন্ত বাস্তবের 
সঙ্গে যেখানে তাকে জড়িত করো সেখানে দেখতে পাই তোমাদের 
ব্যক্তিগত অভ্যাস। সেখানে সকল দেশের সব মানুষ মিলতে 
পারে না। তোমাদের দেবতত্ব গ্রহণ করা সহজ, কিন্তু দেব- 
কাহিনী অত্যন্ত বেশি প্রাদেশিক, তার বিচিত্র বিবরণ মূল 
ভাঁবকে বাধা দেয়। যেমন তোমার হাঁপানির ওষুধের কথা । 
শিকড়টা মানতে পারি যদি প্রমাণ পাই । কিন্তু ১৭ বছরের 
ব্রা্মণের মেয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সহ সেট! ভুলে আনলে তবেই 
তার শক্তি জাগবে এ কথা মানতে গেলে নিজের বিধিদত্ত বুদ্ধির 
পরে অবিচার করা হয়। তত্বুটা সত্যের উপর প্রতিষিত সুতরাং 
সেট! দেশকালপাত্রনিকি্বচারেই সত্য । কিন্ত তার আনুষঙ্গিক 
বিবরণ জনশ্রুতিমাত্র, এবং সে জনশ্র্গতিও বিচারবৃদ্ধিসমথিত 
জনশ্রুতি যদি না হয়, এবং যদি তাতে এমন কিছু থাকে যা 
আমাদের অপ্রমত্ত সাধারণ অভিজ্ঞতার বাইরে তাহলে দশজন 
বলে বলেই তাকে স্বীকার করে নিতে পারবো না। যে দেশে 
সকল কথাই এই রকম অন্ধভাঁবে স্বীকার করে নেওয়াই মানুষের 
অভ্যস্ত সে দেশের দুর্গতি কখনোই কাটে না। অযৌক্তিক 
কথাকে সন্দেহ করতেই হবে, তার পরেও যদি সেটা সপ্রমাঁণ 
হয় তাহলে কথা নেই । আমি নরদেবতাকে বিশ্বাস করি বুদ্ধের 
মধ্যে, কেননা বুদ্ধ অনৈতিহাসিক গালগন্পমাত্র নয়, বিশ্বাস করি 
ভগবদগীতার কৃষ্ণের মধ্যে, সে কুষ্ণও মর্ত্য মানুষের ঘরের 
লোক । বৃন্দাবনকে যদি বলো আনন্দধামের রূপক তাহলে 
কোনে। কথ! নেই, যদি বৃন্দাবনকে এঁতিহাসিক ও ভৌগোলিক 


৮৯৩ 


বলো, তাহলে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দাবী করব, শীকস্্রবাক্যমাত্রকেই 
শিরোধাধ্য করব না। তোমার মধ্যে দ্বন্দ দেখতে পাই । যখন 
ব্যাখ্যা করো! তখন তত্ৃব্যাখা। করো, যখন ব্যবহার করে৷ তখন 
সংস্কারকে চোখ বুজে মেনে নাও । এ পথে আমি যেতে পারিনে। 
অথচ তোমার আশ্রয় থেকে তোমার মুগ্ধ মনকে নড়াতে ইচ্ছা 
যায় না। যেখানে তোমার আনন্দ সেখানে তুমি মজ্জিত হয়ে 
থাক তাতে দোষ নেই। তার বদলে তোমাকে কিছু দিতে 
পারি এমন শক্তি আমার কোথায় ! আমার প্রয়োজন পুর্ণ হয় 
তত্বকে যখন সত্য বলে অন্তরে উপলব্ধি করি-_ বাইরেকাঁর 
কল্পিত রূপে তাকে বন্দী করে অতিবিশেষ করে দেখতে গেলে 
আমার চিত্ত নিজেকে প্রবঞ্চিত মনে করে, সে রকম আত্মবঞ্চনায় 
আমার কোনোদিন প্রয়োজনবোধ হয় না। যদি বলো এতো 
আত্মবঞ্চনা নয়, এ বাস্তব সত্য, তাহলেই কথা ওঠে বাস্তব 
সত্যকে বিশ্বাসের জন্য যৌক্তিক প্রমাণ না হলে নয়। ইতিহাস 
শ্রদ্ধা লাভ করে একমাত্র এতিহাসিক বিচারের পরে। কিন্তু 
তোমাকে এ সব কথা বলতে গেলে আমার ব্যথা লাগে। যে 
বিশ্বাস তোমার প্রেমের মধ্যে রক্ষিত তাকে আঘাত কর! 
তোমাকেই আঘাত দেওয়া । কি হবে এমন গীড়ন করে? 
তোমাদের সম্প্রদায়ে যে ব্যবহারটাকে আমার অন্যায় বলে 
মনে হয় সে সম্বন্ধে আপত্তি না করে থাকতে পারিনে। তোমার 
চিন্তকে বুদ্ধির ক্ষেত্রে অবাধ বিচরণের স্বাধীনতা! না দেওয়া মানব 
অধিকারকে গীড়ন করা, সুতরাং সেটা বস্তত অধাম্মিকতা । 
আমার কাছে এসে আমার কথা শুনলে যদি সেটাকে কোনো 


৯|1৭ ৯৭ 


সম্প্রদায় অপরাধ বলে গণ্য করে তবে সে সম্প্রদায়ের অন্তরে 
সমস্ত মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ নিহিত আছে । মানুষের চিত্তকে 
খীচায় বাধবার ধর্ম যতই ভাবৈশ্বধ্যে এশ্ব্যবান হোক্‌ তবু সে 
সোনার খাচার বাইরে এগবে না। সেই সোনার খাচাই তার 
স্বর্গের আদর্শ। কিছু মনে কোরোন। তুমি-_ মানুষের বিরুদ্ধে 
ধন্মগত কম্মগত ভাঁবগত কোনে অত্যাচার আমি সইতে পারিনে। 
ইতি বৃহস্পতিবার ৭ আশ্বিন ১৩৩৮ 

দাদা 


৪৬ 


[২৭ সেপ্টেপ্বর ১৯৩১ ] 


কলাণীয়াস্ত 
আজ সন্ধ্যার গাড়িতে চলে যাচ্চি। তোমাকে কতকগুলি 
বই পাঠাতে বলে গেলুম ১ সুকিয়া শ্টাটে। পাঁবে আশ! করি 
এবং কেউ তাতে অপরাধ নেবেন না। পৌষের পুবেব কলকাতায় 
ফিরব না। নিরতিশয় ব্যস্ত ও ক্লান্ত । কাল ভিড়ে প্রাণ কণ্ঠে 
উঠেছিল। আজ সকাল থেকে লোকারণ্য । ইতি রবিবার 
দাদ] 


৯৮ 


৪৭ 


[ শাস্তিনিকেতন। সেপ্টেপ্বর ১৯৩১ ] 


কল্যাণীয়াসু 

তুমি বোধ হয় খবর পাঁওনি-_ হিজলি হত্যা নিয়ে আমি কি 
রকম ভীষণ ভিড়ের মধ্যে টাউন হল থেকে মন্যমেণ্ট পর্যন্ত পাক 
খেয়েছি । তার পরের দিনও সকাল সাতটা থেকে আমার 
বাড়িতেও ঠেলাঠেলি ভিড়। আমার শরীরে আর সইছিল না'। 
এক মুহূর্তও সময় ছিল না যে এক লাইন লিখে তোমাকে আমার 
অবস্থা জানাব। রেলগাড়িতেও ছুই মাদ্রাজি আমাকে অর্ধেক 
পথ অদ্বৈতবাদ ব্যাখ্যা করে সাংঘাতিক অত্যাচার করেছিল । 
এখানে আধমরা হয়ে পৌচেছি। অনেক দিনের অনুপস্থিতিতে 
এখানেও কাজ জম! হয়ে আছে-_ যখন বিছানায় উত্তান হয়ে 
পড়। উচিত ছিল তখনো ডেস্ক আকড়ে পড়ে আছি। সামনে 
স্বপাকার আধুনিক বাংলা গল্পের বই আমার অভিমতের 
অপেক্ষায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে গেছে। নীরবেই তাদের 
সৎকার হবে-_ আমার শক্তি নেই । লেখকরা মনে করে তাদের 
প্রতি আমি উদাসীন-__ এ কথা ভাবে না তার। প্রত্যেকে একজন 
কিন্তু আমার ঘরে তার। অসংখ্য-_ তা ছাড়া আমার সময় নিরবধি 
নয় আমার শক্তিও পরিমিত । 

তোমাকে কিছু বই পাঠাবার জন্তে লিখেছি। এ চিঠি পাবার 
আগেই বোধ করি পেয়েচ। 


০৪৯ 


এখন থেকে পৌষ মাস পধ্যন্ত এইখানেই আমার অবস্থিতি। 
তুমি শান্ত ও সুস্থ আছ সংবাদ পেলে আমি খুসি হব । ইতি-_ 
দাদা 


৪৮ 


[ শান্তিনিকেতন ] ১* অক্টোবর ১৯৩১ 


০ 


কল্যাণীয়ান্ 

স্কল্প করেছিলুম পূজোর ছুটি আশ্রমেই কাটাব। কিন্ত 
শরীরের ক্লান্তি এখনে বুকে পিঠে চেপে বসে আছে, তা ছাড়া 
আমি এখানে থাঁকব শুনে আমাকে সঙ্গদন করবে বলে অনেকে 
পণ করেচেন। কোন্‌ কোন্‌ বিপদ থেকে কত হাত দূরে পালাতে 
হবে চাণক্য তার শ্লোকে তা মেপে দিয়েছেন কিন্তু সেকালে 
বিশ্রামঘাতক আগন্তকদের সম্বন্ধে কোনো বিধিবিধান ছিল ন। 
কেন ঠিক বুঝতে পারলুম না । স্থির করেছি দাজ্জিলিং পালাব। 
সেখানেও জনতার অভাব হবে এমন আশা নেই কিন্তু অন্তত 
ঠাণ্ডা পাওয়া যাবে । ওখানে যাবার মুখে কলকাতা হয়ে যেতে 
হবে তখন যদি ইচ্ছা কর একবার দেখা করে যেতে পারো । 
কবে যাব তোমাকে পূর্বেই জানাব। 

সমাজকে যে ভাবে সংশোধন করতে চাও সেটা আমার দ্বারা 
ঘটাতে পারবে এমন আশা কোরো না। আমি একটু আধটু ছন্দ 
মিলিয়ে কবিতা লিখতে পারি, তারও উৎসাহ আজকাল অনেকটা 


১০৩ 


কমে গেছে। সমাজ নিয়ে ভাঁডাগড়া করবার সখ আমার 
একটুকু নেই, তবে এটা জানি যে, এই অচল জড় সমাজ গলায় 
বেঁধে আমরা ছুর্গতির তলায় নেবেছি। বিদেশী শক্রকে ভয় 
করিনে কিন্তু এই সাংঘাতিক সমাজকে ভয় করি, মারের বীজ 
পুতে রেখেচে আমাদের মজ্জীয়। ইতি ২৩ আশ্বিন ১৩৩৮ 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
নাম সই দেখে বুঝবে ক্লান্ত মন__ অবধান দুর্বল। 


৪৭ 


[ অক্টোবর ১৯৩১ ] 


৫€ 


কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার চিঠির ভাষা কী সুন্দর । সহজ, গভীর, অকৃত্রিম । 
তোমার মন তোমার ভাষায় কোথাও বাধা পায় নি, ভাবনার 
ভঙ্গীর সঙ্গে ভাষার ভঙ্গী লীলায়িত হয়ে চলেচে। এরকম লেখা 
সহজ নয়। অনেকবার ভাবি তোমার এই শক্তি কেবল চিঠি 
লেখার খিড়কির রাস্তা দিয়ে ছায়ায় ছায়ায় যাওয়া আসা করে 
কেন? চিঠি লেখার ভঙ্গী দিয়েই সদরের জন্যে কিছু কেন লেখ 
না? কোনো একট। সহজ বিষয় নিয়ে । তোমার এক একটি চিঠি 
আমাকে বিস্মিত করে, আমার মনকে ছুলিয়ে দেয়। 

দাজ্জিলিং যাব বলে এসেচি। পুজোর ভিড়ে গাড়ি পাওয়া 
দুঃসাধ্য বলে অপেক্ষা করতে হচ্চে। বোধ হয় ছুচার দিনের 


১০৯ 


মধ্যে চলে যাব। যদি কখনো আসতে পার তোমার সঙ্গে কিছু 
আলোচনা করব। 
দাদা 


9৩ 


| ১৬ অক্টোবর ১৯৩১] 


৫৫ 


কল্যাণীয়ান্তু 

তোমার ফলগুলি পেয়ে আনন্দ হোলো । 

বাধা ভেদ করে আসবার চেষ্টা কোরো না। আমি রবিবার 
সন্ধ্যার গাড়িতে দাজ্জিলিং যাব । 

৭ ০২ র দল আমাকে তাঁদের এক বাজারে নিয়ে যাবার 
জন্যে টানাটানি করছিল । আমার শরীরের প্রতি তাদের দয়া 
মায়া নেই, জোর করেই বলতে হোলে তাদের বাজারে পদার্পণ 
করবার মহছ্দ্দেশে আমি আয়ুক্ষয় করতে পারব না। 

আমাকে ভিন্ন ভিন্ন দল বাঁটোৌয়ারা করে নিতে চায়-_ আমি 
আত্মরক্ষার জন্যে নিলিপ্ত থাকতে চাই-__ নইলে আমার কাজ 
বন্ধ হয়। সব দলকেই বিরক্ত করি। যদি না করতুম তবে এই 
সব ক্ষুদে দলদের তলায় দলিত হয়ে জীবন ব্যর্থ হোত। এত 
কুদ্রতা বাংল! দেশের বাইরে আর কোথাও নেই। পালাতে ইচ্ছ। 
করে। পালাবার সময় হোলো । তখন স্মরণসভার ধূম লাগ্বে। 
আজ তবে আসি। ইতি শুক্রবার 

দাঁদা 


৫১ 


| অক্টোবর ১৯৩১ ] 


৫ 


কল্যাণীয়ান্ু 

যাবার আয়োজন করচি। এ দিকে সকাল থেকে ঘর ভ্তি। 
কোনোমতে অবকাশ করে নিয়ে স্লানাহারটা সম্পন্ন করতে 
পেরেচি | 
আমাকে তুমি জগদিখ্যাত একটা মহা উপদ্রব বলে উচ্চাসনে 
চড়িয়ে রেখে দিলে খুসি হব না । যে সমতলক্ষেত্রে তুমি সহজেই 
আমার কাছে আসতে পার তার উদ্ধে আমাকে নিব্বাসিত 
কোরোনা। দূরের থেকে প্রতুত্ব প্রয়োগ করা, শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব 
ভোগ কর! আমার স্বভাবসঙ্গত নয়। সরল প্রীতির সম্বন্ধ নিয়ে 
মানুষের সাহচধ্য যখন করতে পারি তখন খুসি থাকি । কাল 
তুমি যেমন কাছের মানুষ হয়ে আমার সঙ্গে অসন্কৌোচে কথা 
কয়েছিলে সেইটেই আমার বিশেষ ভালো লেগেছিল। ভক্তি 
করতে পার এত বড়ো গান্তীধ্য আমার নেই কিন্তু সখ্যের উপযুক্ত 
গুণ হয়ত কিছু কিছু আছে-_ যাঁর নিজগুণে আবিষ্কার করবার 
শক্তি আছে তার কাছে এটা ধর! পড়ে ।-_ এবার কাপড়ের বাঝ 
বোঝাই করার কাজে লাগতে হবে| ইতি রবিবার 

দাদা 


৫২ 


২১ অক্টোবর ১৯৩১ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

তোমার চিঠিতে আমাকে বর দিয়েছ আমি যেন আমার 
মনের মানুষ খুঁজে পাই। এর থেকে বোঝা গেল এতদিন 
তোমাকে যা বলে এসেচি তা তুমি বোঝো নি। আমার মনের 
মানুষের উপলব্ধি আমার অন্তরে পূর্ণতা পাবে এই আমি কামনা 
করি ।“ হৃদা মনীষা মনসাঁভিক্৯প্তো য এতদ্বিছ্ুরমৃতাস্তে ভবন্তি।” 
এই মনের মানুষ কেবলমাত্র রসভোগের নেশায় মাতিয়ে রাখবার 
জন্যে নয়, মনুষ্যত্বের সম্পূর্ণ উদ্বোধনের জন্যে । এই মনের মানুষই 
তো আমাকে একদিন আত্মনিবিষ্ট সাহিত্যসাধনাঁর গণ্ডী থেকে 
শানস্তিনিকেতনের কর্মক্ষেত্রে টেনে এনেছিল । সে কি সঙ্গ পাবার 
জন্যে, সখ পাবার জন্যে । এই ত্রিশ বৎসর যে কঠিন দুঃখের 
পথে আমাকে চলতে হয়েচে তার ইতিহাস কেউ জানবে না 
এই দুঃখেই আমার মনের মানুষের সঙ্গে আমার যোগ । 

তোমার চিঠিতে তোমাদের বাচিক পুজার দীর্ঘ বর্ণনা করেছ। 
এই রসতৃপ্তির সমারোহে আমার মন সায় দেয় না। আমি 
যাকে পুজা বলি, সে কঠিন কর্মে, সত্যের সাধনায় । লোকহিতে 
আত্মোৎসর্গের যে আয়োজন সেই আয়োজনেই মনের মানুষের 
পুজা,_ যে দেশে এই পুজা সত্য হয় সেই দেশেই শ্রী সম্মান 
স্বাস্থ্য, সেই দেশেই জ্ঞানবীর কর্মবীরদের যজ্রশালা ।__ আমার 
মনের মানুষ কোনো ব্যক্তিবিশেষ নন এ কথা নিশ্চয় জেনো । 


১০৪ 


তার আভাস পেয়েছি ইতিহাসে নরোত্তমদের মধ্যে । যেমন 
ভগবান বুদ্ধ। তিনি সকল মানুষের মুক্তির জন্তে আত্মদান 
করেছিলেন __ তার ভক্তের! শুচিবায়ুগ্রস্ত হয়ে ভক্তিকে ভোগের 
জিনিষ করেন নি-_ ভক্তি তাদের বীধ্য দিয়েছিল, ছুর্গম সমুদ্র 
পববত লঙ্ঘন করে তার! মানুষকে সত্য বিতরণ করবার জন্যে 
দেশে বিদেশে প্রাণ দিয়ে এসেচেন । কাদের দেশে? যাদের 
তোমরা গ্রেচ্ছ বল, যারা তোমাদের দেবতার মন্দিরে প্রবেশ 
করতে গেলে মার খেয়ে মরে ।-_ তোমার পূর্ববপাত্রে একটা প্রশ্ন 
ছিল, নিজের খ্যাতি বিস্তার করবার জন্যে আমি মাইনে দিয়ে 
লোক রেখেচি কিনা । এ রকম সন্দেহ কেবল বাংলাদেশেই 
সম্ভব। এই দেশেই লোকে কানাকানি করে, যে, কোনো বিশেষ 
কৌশলে আমি নোবেল প্রাইজ পেয়েছি এবং আমার যে 
ইংরেজি রচনা খ্যাতি পেয়েচে সেগুলো! কোনো ইংরেজকে দিয়ে 
লেখা ।- তথাপি এ দেশেও আমার ভক্ত আছে, কিন্তু তাদের 
কাছ থেকে আমি পুজা চাইনে। যদি সত্যিই চাইতুম তাহলে 
এই ধশ্মমুগ্ধ দেশে অবতার হয়ে ওঠা আমার পক্ষে শক্ত হত না। 
আমি ধার পূজায় প্রবৃত্ত অন্যদের কাছে তার পুজাই চেয়েচি। 
তুমি আবিষ্কার করেচ আমি ঈশ্বর নই। শুনে বিস্মিত হলুম | 
তুমি কাকে ঈশ্বর বল আমি জানিনে__ ঈশোপনিষদে এক 
ঈশ্বরের কথা আছে-_ তিনি সর্ববভূতকে অনন্তকাল ব্যাপ্ত করে 
আছেন, আমি যে সে ঈশ্বর নই মে কথা মুখে উচ্চারণ করবারও 
দরকার ছিল না। ইতি বিজয়! দশমী ১৩৩৮ 

দাদা 


৫৩ 


[দাঞজিলিং ] ২৬ অক্টোবর ১৯৩১ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

এখানে এসে অবধি শয্যাগত হয়েই আছি। বোধ হয় 
ইন্ফ্লুয়েঞ্জার একটা আবর্ত শরীরের মধ্যে ঘুরপাক দিয়ে বেড়াচ্চে। 
আজ সকালে ক্ষণকাঁলের জন্যে উঠে বসেছি এমন সময় কাচের 
প্রাচীরের আড়াল থেকে শ্রীপতি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি 
চাইলে । ভিতরে এসে তোমার চিঠিখানি আমাকে দিল। এ 
কথা পুব্বেও বলেচি আমার অনুরোধে তোমার আচার অনুষ্ঠান 
অভ্যাস কিছুরই পরিবর্তন কোরো না। তোমার যুক্তি তোমার 
শ্রেয়োবুদ্ধি আপনা থেকে যাতে সায় না দেবে তা কখনো 
তোমার আপন জিনিষ হতে পারবে না। আমার বলবার কথা 
এই, তুমি গভীরভাবে নিজে চিন্তা কোরো, এবং এই কথাটা 
মনে জেনো, ধম্ম মানেই মনুষ্যত্ব যেমন আগুনের ধম্মই আগ্রিত্ব, 
পশুর ধণ্ম পশুত্ব । তেমনি মানুষের ধণ্ম মানুষের পরিপূর্ণতা । 
এই পরিপূর্ণতাকে কোনো এক অংশে বিশেষভাবে খণ্ডিত করে 
তাকে ধশম্ম নাম দিয়ে আমরা মনুষ্যত্কে আঘাত করি। এই 
জন্যেই ধর্মের নাম দিয়ে পৃথিবীতে যত নিদারুণ উপদ্রব ঘটেচে 
এমন বৈষয়িক লোভের তাগিদেও নয়। ধন্মের আক্রোশে যদি 
বা উপদ্রব নাও করি তবে ধন্মের মোহে মানুষকে নিজ্জীব করে 
রাখি তার বুদ্ধিকে নিরর্৫থক জড় অভ্যাসের নাগপাশে অস্থিতে 
মজ্জাতে নিম্পিষ্ট করে ফেলি-_ দৈবের প্রতি দুর্বল ভাবে 


১৯০৬ 


আসক্ত করে”, নানা কাল্পনিক বিভীষিকার বাধায় পদে পদে 
প্রতিহত করে তাকে লোকযাত্রায় অকৃতার্থ ও পরাভূত করে 
তুলি। বুদ্ধি যেখানে শৃঙ্খলিত, পুরুষকার যেখানে গুরুভা রগ্রস্ত, 
সেই হতভাগ্য দেশে সর্বপ্রকার দৈহিক মানসিক রাপ্ত্রিক অমঙ্গল 
অব্যাঘাতে অচল হয়ে ওঠে। মানুষের পরিপুর্ণতার যে ধর্ম্ম 
তার মধ্যে ত্যাগ আছে, ভোগ আছে, বুদ্ধি আছে, কল্পনা আছে, 
কন্ম আছে, চিন্তা আছে, সৌন্দর্য্য আছে, কঠোরতা আছে - এই 
সমস্ত কিছুর শ্রেয়স্করতা হচ্চে তার সব্বজনীনতাঁয়, তাঁর 
নিত্যতায়-_ অর্থাৎ এই সকলের মধ্য দিয়ে আমরা মহামানবের 
শ্বাশ্বত অভিপ্রায়কে নিজের মধ্যে সার্থক করি । আমার সার্থকত। 
যদি সকল মানুষের সার্থকতা না হয় ভবে সে ধর্ম্মের ক্ষেত্রের 
বাইরে পড়ে, বিষয়ের ক্ষেত্রে দাড়ায় । এর কারণ এই যে, বাঘ 
আপন একান্ত ব্যক্তিগত স্বাতস্ত্্যেও আপন ব্যান্ত্ব রক্ষা করতে 
পারে,_ কিন্তু মানুষ যে পরিমাণে একল। সেই পরিমাণেই সে 
অমান্ুষ। আমি যে কবিতা লিখি সে যদি নিতান্তই আপনার 
খেয়ীলেই চলে সমস্ত মানুষের খেয়ালের সঙ্গে তার সামগ্তস্ত ন। 
থাকে তাহলে মানুষের সাহিত্যে সে টিকবে না। তেমনি 
মানুষের বিজ্ঞান দর্শন শিল্পকলা মানুষের মুক্তি --এ সব কিছুই 
সমস্ত মানুষকে জড়িয়ে । এই যে একজন মানুষ সকল মানুষের 
বুদ্ধি জ্ঞান শক্তি শ্রেয়ের সঙ্গে সম্মিলিত, দূরকালে দূরদেশে 
তার মানবসন্বন্ধ প্রসারিত এইটেই মানুষের বিশেষত্ব । এই 
বিশেষত্বকে যে তপস্তা! পুর্ণতার অভিমুখে নিয়ে যায় আমি তাঁকেই 
ধর্ম বলি। এই সর্বাঙীণ পর্ণতাকে যা কিছু পঙ্গু করে: তাকে 


১০৭ 


যত বড়ো নামই দাও তাকে আমি ধর্্ম বলে শ্রদ্ধ! করি নে। 
অতএব তুমি আমাকে যোগী বৈরাগী অনাসক্ত বলে মনে 
কোরো না । অচলায়তনে আমার একটি গান আছে 
আমি সব কিছু চাইবে, 
আপনাকে ভাই মেলব যে বাইরে। 
ইতি ৯ কাঁতিক ১৩৩৮ 
দাদা 


৫8 


[ দ্াজিলিং ] ২৬ অক্টোবর ১৯৩১ 


৫5 


কল্যাণীয়াস্ত 

মাঝে মাঝে আমি তোমাকে আঘাত দিই, অবশেষে 
অন্ুুতাপও হয়। কিন্তু আমার উপায় নেই । আমাদের দেশের 
ভক্তির সঙ্গে পুজার সঙ্গে সর্ধবমানবের এমন বিচ্ছেদ, তার প্রতি 
এত গুদাসীন্য যে সে আমি সইতে পারিনে। আচাঁর বিচারের 
মুঢতাঁয় সমস্ত দেশের বুক যে কি জোরে চেপে ধরেছে তা 
একখানা পাজি পড়লেই বোঝ! যাঁয়। অথচ এই পাঁজি তাঁর 
নির্ব,দ্ধির স্ুপাকার বোঝাই নিয়ে ঘরে ঘরে ফিরে বেড়াচ্চে__ 
আমার তো লজ্জা! বোধ হয়। অল্পদিন আগে আমাদের আশ্রমের 
কাছে একটি বিবাহ দেখেছি-_ তার স্ত্রীআচার বারো৷ আন। 
বিশুদ্ধ বব্বরতা। এই আচারের বর্বরতায় সমস্ত দেশে 


১৩৮ 


আমাদের মন্ুষ্যত্কে অবমীনিত করচে। বিধাতার দত্ত বুদ্ধির 
সম্মান একেবারে ঘুচে গেছে, আমাদের স্বরচিত চোখে ঠুলি 
দেওয়া অন্ধতাকে আমরা ধর্মের নামে পূজা করি। এইখানে 
আমাদের পরাভব হতেই হবে । মানুষের ছুঃখ আজ জগঘ্যাপী-_ 
তার মাঝখানে আমাদের সমাজ জুড়ে নিরর9৫থকতার বিপুল 
আয়োজন আমাকে লজ্জিত ও দুঃখিত করে । সে কথা তোমার 
কাছে লুকোতে পারিনে | তুমি মনে করতে পার এটা আমার 
মজ্জাগত বৈদেশিকতা, তা যদি সত্য হয় তাহলে স্বাদেশিকতা 
অশ্রদ্ধেয়। সম্প্রতি এখানে জগজ্জননীর নামে জীবরক্তের আোত 
বয়ে গেছে আর তাই নিয়ে যে উন্মত্ততা সে অনাধ্যের উন্মাত্ততা_ 
অথচ সেও ধর্ম এবং মেয়েরাও এই রক্ত নিয়ে ছেলের কপালে 
ফৌটা দিয়ে দেয়, মনে করে মাএর আশীব্ধাদ পেলে । ইতি 
৯ কাত্তিক ১৩৩৮ 


দাদা 


নধ৫ 


৩* অক্টোবর ১৯৩১ 
(3121) 70217 


দাজ্জিলিং 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ম 

নিরন্তর অপরাধভীরুতা তোমাকে ভূতের মতো! পেয়ে বসেচে 
-_ মানুষের কাছে অপরাধ, দেবতার কাছে অপরাধ, গ্রহ উপ- 
গ্রহের কাছে অপরাধ । প্রায়ই এই অপরাধকল্পনাঁট। অনুষ্ঠানের 
ত্রুটি নিয়ে। নিজের চারদিকে এই বিভীষিকা কেন তুমি স্থষ্টি 
করে তুলেচ? এতে মানুষকে শক্তি দেয় না, দুবর্বলই করে 
রাখে । সামান্য আচারে ব্যবহারে দেবতা কেবলি আমাদের 
ছল ধরবার জন্যেই বসে আছেন-_ তার 0.1. 7)র দল দিন- 
রাত আনাচে কানাচে ঘুরে পদে পদে আমাদের চলাফেরা নোট 
করে রাখচে এ যদি সত্য হয় তবে এমন দেবতার বিরুদ্ধে সত্যা- 
গ্রহই শ্রেয়। আর যাই হোক আমার সম্বন্ধে তুমি কোনো 
অপরাধ কল্পনা কোরো না। আমি সি, আই, ডভির চরওয়ালার 
দেবতা নই আমি কবি। আমি ভুলচুকের উপর দিয়েও মানুষকে 
বুঝতে চেষ্টা করি। তুমি যখন ভয় করো যে আমি বুঝি বা 
রাগ করচি, ক্ষমা করচিনে-_ তখন বুঝতে পারি এই রকমের 
ঘর-গড়া ভয়ের চচ্চায় আমাদের দেশ অভ্যস্ত-_ তাতে ছুঃখ বোধ 
করি। 

বেশি লেখবার মতো! শরীর নয় তবু না লিখে পারলুম নাঁ। 
ইতি ১৩ কাত্তিক ১৩৩৮ 

দাদা 


৯১০৩ 


৫৬ 


» ল্ভেম্বর ১৯৩) 


ঠৎ 


দাজ্জিলিং 
কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার সঙ্গে আমার প্রথম কথাটা! এই যে, লক্ষ যোজন দূরে 
কোন গ্রহ উপগ্রহ কোথাও বিশেষভাবে পরস্পর মুখ-চাওয়া- 
চাওয়ি করে আছে বলেই সকাল বেল! উঠেই তোমার হাঁচি 
আরন্ত হোলো, ছুধ জ্বাল দিতে গিয়ে সেটা গেল পুড়ে, চোখের 
ডাঁন পাতা! কাপতে সুরু করল, বুঝতে পারলে আজ বাজার করতে 
পাঠালে বাজারদর যাবে চড়ে, কেনন। রাহু দৃষ্টি দিচ্চে তোমার 
বাজারের স্থানে, ওদিকে তোমার গ্রাম সম্পর্কে মাসতুতো! বোনের 
ভাস্ুরপোকে তোমার দেওরের অন্নপ্রাশনে নিমন্ত্রণ করতে ভূলে 
গেছ বলে আত্মীয়বিচ্ছেদ হয়ে গেল, কেননা শনি ছিল তোমার 
নিমন্ত্রণের ফর্দের উপরে চেপে -এসব কথা তোমার মন থেকে 
সরিয়ে দাও। কেন মনকে দুর্বল করো ? সংসারে ছোটো বড়ো 
অনেক অমঙ্গল আছে-_ বুদ্ধি নিয়ে বীর্য নিয়ে তার সঙ্গে লড়াই 
করতেই হয়, কখনো হারি কখনো জিতি সংসারের এই নিয়ম। 
বিশেষ কারণে যখন অন্যমনস্ক থাকি তখন ডালে নুন দিতে পানে 
চুন দিতে ভুল হয়ে যায়__ কেতু নামক পদার্থের উপর এর মূল 
দায়িত্ব চাপিয়ে কপালে করাঘাত করার মতো! এত বড়ো! ছুর্বলতা 
আর কী হতে পারে! অথচ এ দিকে সামান্য বাহ্া ব্যাপার 
সম্বন্ধে দেবতার কাছে অপরাধ হচ্চে বলে মনকে পদে পদে 
গীড়িত করতে থাকো! । গ্রহই যদি অপরাধ ঘটায় তবে দেবতার 


১১৯ 


সঙ্গে অপদেবতার লড়াই হোক্‌ না কেন, মাঝের থেকে মানুষ কেন 
পায় শাস্তি? যদি বলো পুরুষকারের জোরে গ্রহফল খণ্ডন হয় 
তাহলে গ্রহটাকে হিসাব থেকে বাদ দিয়ে রাখলেই তো পুরুষ- 
কার পুরো পরিমাণে জোর পেতে পারে । বিমানচারী অনধিগম্য 
শত্রুর বিভীষিকার ছায়ায় মনকে পদে পদে আচ্ছন্ন করে কেউ কি 
কখনে। জীবযাত্রায় জয়লাভ করতে পারে? দেশে চারদিকে 
তোমার শত্রু আছে ম্যালেরিয়া, মুর্খতা, গৌড়ামি, নিরুদ্যম, 
পরস্পর ঈধ্যা কলহ নিন্দুকতা মূঢ়ের আত্মাভিমান, আরো! কত 
কি-_ এর সঙ্গে প্রতিনিয়ত আমাদের যুদ্ধ করতে হবে বুদ্ধির 
দ্বারা সুবিবেচনার দ্বারা চারিত্রবলের দ্বারা-_ এর উপরে পর্জিকা- 
বিহারী শক্রভয় আর বাঁড়াও কেন ? যে দেশের হাড়ে মজ্জায় 
নানা আকারে ভয় ঢুকে চিত্তকে ঘুণে খাওয়া করে দিয়েচের 
এমন সব ভয় যার অস্ত্র নেই, যেখানে যুক্তি পৌছয় না, সে 
দেশকে বাঁচাবে কে? আমাদের দেশে গ্রহনক্ষত্রের সঙ্গে পরামর্শ 
করে শুভলগ্নে তে। সকলেরই বিবাহ হয়__ লগ্ন যে পদে পদে 
বিশ্বামঘাতকতা করে তার হাঁজাঁর প্রমাণ চাঁরদিকেই-_ কিন্ত 
মূঢতার জোর কমে না। তর্ক করবার সময় বলে লগ্রফলের উপর 
সরীপুরুষের ভাগ্যফল আছে। শুধু স্ত্রীপুরুষ কেন, ভাই বোন শ্বশুর 
শাশুড়ি, ভাবী সন্তীন সকলেরই ভাগ্যফল পরস্পর বিজড়িত। 
তাই যদি হয় পাড়া প্রতিবেশী এবং দেশ বিদেশের লোককে বাদ 
দেওয়া চলবে না। যে ইংরেজের ছেলে বাঁদর ভম করে শিকার 
করতে গিয়ে বাঙালীর ছেলেকে মেরেচে শুধু সেই নিহত ও 
হস্তারকের ভাগ্যফল গণনা করলে তো! হবে না, ধরে নিতে হবে 


১১৭ 


যে, সমস্ত ইংরেজ জাতি ও বাঙালী জাতির ভাগ্যফলে এবং 
যেদিন প্রথম বন্দুক স্থষ্টি হয়েছিল সেইদিনকার নক্ষত্রগুলি 
পরস্পরের প্রতি যা ভঙ্গী করেছিল তারি গুণে ব্যাপারটা ঘটতে 
পেরেছিল। তা ছাড়া ভূগুমুনি সব নক্ষত্র ও সব গ্রহ তার হিসাবের 
মধ্যে আনেন নি-_ সম্ভবও নয় জানাও ছিল না। তাঁরা কি 
বেকার বসে আছে? অতগুলো জলন্ত দৃষ্টি হিন্দুসন্তানের ভাগ্যকে 
এড়িয়ে গেল কী করে? আর কেন? এসব জগ্জাল নিয়ে মনকে 
হতবুদ্ধি অবসাদগ্রস্ত করে কী হবে! 

আমি মৃত্যু সম্বন্ধে অনেক কবিতা লিখেচি দেখে আমাকে 
প্রশ্ন করেচ আমি মৃত্যুকে ভয় করি কি না। সাধারণভাবে 
করি নে। জীবন আর মরণ তো একই সত্তার ছুই দিক-_ চৈতন্য 
ঘুম ও জাগরণ যেমন। অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা ঘুমের 
আবেশ এলে অত্যন্ত বিরক্ত হয়, মুখ আচডে' ছটফট করে, 
নিজেকে জাগিয়ে রাখতে চায়__ তা দেখে বড়োরা উতকষ্ঠিত হয় 
না। জানে যে ঘুম যদি না হয় তাহলে জাগরণটাই পীড়িত হয়ে 
ওঠে। মৃত্যুও তেমনি__ যদি না আসত তাহলে নিরবচ্ছিন্ন 
প্রাণটাকে নিয়ে ত্রাহি ত্রাহি করতে হোতি। জীবনের সঙ্গে 
যেটা অবজ্জনীয়ভাবে যুক্ত তাকে সহজ বিশ্বাসে গ্রহণ করাই 
উচিত। মৃত্যু যদি জীবনের একান্ত বিলুপ্তিই হয় তাঁহলেও 
সেই ক্ষতিটা কার? যে মরেচে তার কিছুতেই লোকসান নেই। 
যখন বেঁচে আছি তখন তো৷ মরি নি। আগেভাগে ভয় করে, 
ভাবনা! করে? কী হবে? বিনষ্ট ঘদি হই তবে কোনো দুঃখ কোথাও 
রইল না, কোনোভাবে যদি বেঁচে থাকি তাহলে আজও যেমন 


৯0৮ ১১৩ 


তখনে। তেমনি-_- অর্থাৎ বেঁচে থাকার সুখ ছুঃখ লাভ ক্ষতি প্রিয় 
অপ্রিয় এই মতোই আবত্তিত হয়ে চলবে । বর্তমান জীবনকে 
যদি তাঁর সমস্ত দায় নিয়ে ছাড়তে অনিচ্ছ। হয় তবে ঠিক তখনকার 
জীবনেও তেমনিই হবে । এই জীবনেই কতবার মরেচি ভেবে দেখ । 
শিশুকালে আমার দাইকে অসম্ভব ভালোবাসতুম। তখনকার 
যে জীবন সেটা তাকেই কেন্দ্র করে ছিল । এক ঘণ্টার মতে তার 
তিরোধানের কথা সেদিন বিনা অশ্রুপাতে প্রস্নমনে চিন্তা 
করতে পারতুম না। কিন্তু সে আজ ছায়া হয়ে গেল, কোনো 
ব্যথার দাগ নেই। তার পরে অন্য কেন্দ্র নিয়ে যে জীবন স্থষ্ট 
হয়েচে সেটার দাম সমস্ত সুখছুঃখ নিয়ে অনেক বেশি । কিন্তু 
অবশেষে এ সমস্ত গিয়েও জীবনাস্তরে আর একটা সত্তা যখন 
জমে উঠবে তখন তাকে নিয়েই এত ব্যাপূত হব যে গতস্ত শোচনা 
বলে পদার্থ ই থাকবে না । অতএব মৃত্যু সম্বন্ধে নির্ভয় নিশ্চিন্ত 
হয়ে থাকাই তো ভালো । কোনো কোনো বিশেষ আকারের মৃত্যু 
আমার অনভিপ্রেত। বাঘে আমাকে খাছ্যবস্তরূপে গিলে গিলে 
খাবে এটা আমি পছন্দ করি নে। কিন্তু সেই নাঁ-পছন্দ জিনিষটা 
বাঘে খাওয়া, মৃত্যু নয়। বস্তত বাঘে খাওয়া উপসর্গটার 
মধ্যে মৃত্যুটাই সব চেয়ে বাঞ্ছনীয় । বছর পঞ্চাশ ধরে য্দি বাঘেই 
খেত তাহলে প্রাণরক্ষার স্বস্ত্যয়ন করতে গ্রহাঁচাধ্যকে দক্ষিণ 
নিশ্চয়ই দিতুম না। 

মীরা যদি তোমাকে পিসিমা বলে ফেলে তাহলে সে সন্বন্ধটা 
মানাবে না। অনেক দিন ধরে তুমি বহুতর দলিলপত্রে যে সম্বন্ধ 
পাকা করে ফেলেচ, আমার তরফেও যার কবুলতি পেয়েচ, মীর 


১১৪ 


আজ সেটাকে অপ্রমাঁণ করতে পারবে না। মুখে সে যাই বলুক 
আসলে তারই হার হবে। আমিই হচ্চি আপিল কোর্টের জজ, 
তোমার দিকেই রায় দিলুম ৷ ইতি ১৫ কাত্তিক ১৩৩৮ 

দাদ। 


৭ 


৫ শভেম্বর ১৯৩১ 


দাজ্জিলিং 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার পত্রে যে বাচিক ভোজ দিয়েচ সেট। উপাদেয় বলে 
মনে হোলো । তোমার মীর! মাসীর রান্নায় হাত আছে তাকে 
দিয়ে বাচিকটাকে কায়িক করে নেব। বহুদিন পূর্ব্বে একদিন 
নাটোরের মহারাজ পদ্নাতীরে আমার বোটে আতিথ্য গ্রহণ 
করেছিলেন। তার সঙ্গে কথা ছিল প্রতিদিন তাকে একটা কিছু 
সম্পূর্ণ নতুন জিনিষ খাওয়াব। মীরার মা ছিলেন এই চক্রান্তের 
মধ্যে তিনি খুব ভাল রীধতে পাঁরতেন। কিন্তু নতুন খাদ্য 
উদ্ভাবনের ভার নিয়েছিলুম আমি । সেই সকল অপূর্ব ভোজ্যের 
বিবরণসহ তালিকা আমার ভ্ত্রীর খাতায় ছিল। সেই খাতা 
আমার বড মেয়ের হাতে পড়ে । এখন তারা দুজনেই অন্তহিত। 
আমার একটা মহৎ কীত্তি বিলুপ্ত হ'ল। রূপকার রবীন্দ্রনাথের 
নাম টিকতেও পারে, স্থপকার রবীন্দ্রনাথকে কেউ জানবে না। 

তোমার চিঠির সঙ্গে এক টুকরে' রূপকথা পাঠিয়েছ। সম্পূর্ণ 


১৯৫ 


করো! না কেন? ছেলেদের পাঠ্য বই আমাদের দেশে নেই 
বললেই হয়। এই কাজে তুমি হাত দাও না কেন? যত পার 
রূপকথা সংগ্রহ করে একখানা বই ঘদ্দি বের কর, খুব কাজে 
লাগবে । আঘধিক দিক থেকেও তাতে ক্ষতির কোনো ষন্তাবন। 
নেই । 
আগামী ১০ই নভেম্বর তারিখে কলকাতায় যাঁব। চার 
পাচ দিন সেখানে কাটিয়ে শান্তিনিকেতনে চলে যাব। ইতি 
৫ নভেম্বর ১৯৩১ 
দাদা 


৫৮ 
৮ নভেম্বর ১৯৩১ 


দাজ্জিলিং 


৫৫ 


কল্যাণীয়াত্ 

তোমার গ্রহ উপগ্রহের অপমানে তুমি অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছো । 
তুমি স্থির করেছে! আমি হিন্দুধন্মকেই অস্বীকার করতে বসেছি। 
মুঞ্ধিল এই, আকাশে পাতালে যা-কিছু আছে সমস্তকেই যদি 
মানতে হয় তাহলে সমস্তকেই সন্মান করা অসম্ভব হয়ে ওঠে । 
উপনিষদ বলেন “স এব বন্ধুর্জনিতা স বিধাতা ।” তোমরা 
উপনিষদকে যথেষ্ট পরিমাণে হিন্দু বলে স্বীকার করে! কি না 
জানি নে, আমি উপনিষদকে সব্বধন্মের ভিত্তি বলে মানি। 
উপনিষদে ঈশ্বরকে বলচেন বন্ধু, তীকেই বলচেন বিধানকর্তা | 


১১৬ 


তোমরা যদি এক কাল্পনিক ভূগুমুনির দোহাই দিয়ে বলো যে 
পঞ্চমস্থানে বৃহস্পতিই হচ্চেন বন্ধু, আর আকাশময় গ্রহতারা 
মিলে আমাদের ছোটো বড়ো ভালোমন্দ সমস্তুই বিধান করচেন, 
তাহলে ঈশ্বরকে কী বলে মানব? আর যদি নাই মানি 
তাহলে অপরাধ হবে কোন্‌ যুক্তিতে? কেননা আমার না 
মানার হেতুই হচ্চে আমার কোষ্টার আকাশে কোনো এক 
জায়গায় কেতু বসে আছেন তারই প্রভাব। বহুদূর আকাশে 
কোনো একটা দুষ্ট চক্রান্ত অনিবাধ্যশক্তিতে আমার বুদ্ধিকে যদি 
বিপথে নিয়ে যায় তাকে যদ্দি অপরাধ বলো, তাহলে ভূমিকম্পের 
ধাক্কায় কারো ঘাড়ের উপর পড়ে তাঁকে জখম করলে সেও হবে 
অপরাধ | হিন্দুধন্ম ঘদি বলে অপরাধ বাইরেকাঁর জিনিষ, এই 
জন্যেই তিথিনক্ষত্রের হিসাঁব মিলিয়ে বিশেষ মুহুর্তে ব্রাহ্মণকে 
পেট ভরে খেতে দিলে বাগঙ্গাস্সান করলে চুরি ডাকাতি নরহত্যার 
পাপ নিশ্মল হয়ে যাবে তবে এমন অনুশাসন আমি যদি অন্যায় 
বলেই বোধ করি, এমন কি একে যদি নাস্তিকতা বলি তাহলে 
আমার ধর্মস্থানে যে গ্রহের দৃষ্টি আছে তার প্রতি তাকিয়ে 
আমাকে ক্ষমা করতেই হবে। নাস্তিকতা কেন বলচি সেটা 
বুঝিয়ে বলি। অন্ন বস্ত্র ধন স্বাস্থ্য প্রভৃতি বাইরের পদার্থকে 
বাইরের নিয়মে অর্জন বা তার ক্রটি দূর করতে হয়-_ সেই সব 
অমোঘ নিয়ম বিজ্ঞান শাস্ত্র আবিঞ্ষার করচে__ এ সম্বন্ধে যতই 
আমাদের অজ্ঞান দূর হয় ততই আমরা সফলতা! লাভ করি। 
তুমি বোধ হয় বইয়ে পড়েচ, যে, আমেরিকার কটিদেশ ছিন্ন করে 
যে খাল কাটা হয়েচে সেই খাল কাটবার চেষ্টা প্রথমে ব্যর্থ করে 


১১৭ 


দিয়েছিল সেখানকার নিদারুণ ম্যালেরিয়া । তার পরে বৈজ্ঞানিক 
বুদ্ধি ও উদ্মের সাহায্যে সেখান থেকে ম্যালেরিয়া সম্পূর্ণ দূর 
হয়ে গেছে । তাঁর কারণ এ নয় যে সেখানে যত অধিবাসী আছে 
তাদের সকলের কৃষ্টি থেকে ম্যালেরিয়াবিধায়ক কুটিল গ্রহ সরে 
ঈাড়িয়েচে। তার কারণ এই যে, ঈশ্বর আমাদের যে-বুদ্ধি 
দিয়েচেন তাকে স্বীকার করার দ্বারাই প্যানামা প্রদেশের ব্যাধি 
দুর হয়ে গেছে । অথচ আমাদের দেশে আমর! ঈশ্বরদত্ত বুদ্ধিকে 
মানিনে আমাদের আয়ত্তের অতীত গ্রহকে মানি ম্যালেরিয়াও 
নড়তে চায় না। যদি কখনে তুমি পাশ্চাত্য মহাদেশে যেতে 
তাহলে সেখানকার লোকদের দৈহিক মানসিক শক্তি স্বাস্থ্য 
সম্পদ দেখলে বিস্মিত হতে। তার প্রধান কারণ অন্ন বন্দর আরোগ্য 
সমস্তই তারা নিজের বুদ্ধির দ্বারা উদ্ভাবন করচে, তারা গ্রহ- 
মুখাপেক্ষীদের উপরে জয়ী হচ্ছে। বসন্ত প্রভৃতি অনেক মারীকেই 
তারা তাড়িয়েচে। এখনো ক্যান্সার ও যল্ষ্ার উপরে জোর 
খাটচে না__ কিন্ত তাদের নিশ্চিত বিশ্বাস, বিজ্ঞাননিদ্দিষ্ট আত্ম- 
বুদ্ধির পথে অধ্যবসায় চালনা করলে একদিন তারা ও ছুটি 
রোগকেও আয়ত্তে আনতে পারবে। ইতিমধ্যে আমরা যে কেবল 
মঙ্গল গ্রহের দিকেই সভয়ে তাকিয়ে আছি তা নয় শীতল! 
আছেন, ওলাবিবি আছেন আরও কত কি আমার জান! নেই। 
বিধিদত্ত নিজের বুদ্ধিকে যারা অবিশ্বাস করে তাদের ভয়ের আর 
অন্ত নেই। তারা মা শীতলাকেও ছাড়বে না ডাক্তারকেও না, 
গ্রহকেও মানবে এদিকে আপিসের বড়ে। বাঁবুরও পাঁয়ে তেল 
দেবে। এমন দেশে বিধাতাঁর দান বুদ্ধিটাই কি যত অপরাধ 


১১৮৮ 


করলে ! সে ছাড়া আর সব কিছুর জন্যেই পুজো মিলবে ! এই 
তো গেল বাহ্যিক, ভৌতিক-_ মানুষের আর একট] দিক যেটা! 
তার আন্তরিক তার আত্মিক-_ সেইখানে তার পাঁপ পুণ্য । 
সেই সব রিপুকেই আমরা পাপ বলি যাতে করে বিশ্বাত্মার 
সঙ্গে আমাদের জীবাত্মার সম্বন্ধ বিকৃত হয়। কাম ক্রোধ লোভ 
মোহ প্রভৃতি রিপুর দ্বারা আমরা নিজের অহংসীমার মধ্যে 
বদ্ধ হই। আত্মা তাতে আপন ধন্ম থেকে ভষ্ট হয়। কেনন। 
আত্মার ধর্মই হচ্চে নিজের সত্যকে সকলের মধ্যে উপলব্ধি করা । 
ভৌতিক জগতে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তি যেমন বিশ্বশক্তির জঙ্গে 
আমাদের শক্তিকে যোগযুক্ত করে, বিশ্বনিয়মের দ্বারা আমাদের 
সকল কম্মকে নিয়মিত করে, খেয়ালের দ্বার নয়, অন্ধ সংস্কারের 
দ্বারা নয়-_ তেমনি আমাদের অন্তরাত্মায় যে কল্যাণবৃত্তি 
আছে সে করুণার দ্বার! মৈত্রীর দ্বারা বিশুদ্ধ জ্ঞানসম্মত 
লোকহিতৈষিতার দ্বারা আপনাকে সকলের মধ্যে উপলব্ধি করে। 
স্বার্থ তখন পরমার্থে উত্তীর্ণ হয়__ অর্থাৎ তখন সকলের হিতে 
নিজের হিত জানি। যে শুভবুদ্ধির দ্বারা বিশ্বাত্মার সঙ্গে ফোগ- 
সাধন হয়, উপনিষদে তাঁরই জন্তে প্রার্থনা আছে-_ বিচৈতি 
চান্তে বিশ্বমাদৌ স দ্রেবঃ-_ বিশ্বের আদিতে ও অন্তে যিনি 
পরিব্যাপ্ত তিনিই দেবতা” স নো বুদ্ধ্যা শুভয়া সংযুনক্ত,_ 
তিনি আমাদেরকে শুভবুদ্ধির দ্বারা যোগযুক্ত করুন। অশুভ বুদ্ধি 
আমাদের অহংকে আশ্রয় করে-- সে যে-সমস্ত পাপ ঘটায় সে 
তো! গায়ে লেগে থাকে না, বাইরের অনুষ্ঠানে তাকে তাড়াবার 
কথা যখন মনে করি তখন গ্রহ মানি, পাণ্ডা মানি, পুরুৎ মানি, 


১১৯৭৯ 


অন্তর্যামীকে মানিনে, মানিনে তীকে যিনি “বিচৈতি চান্তে 
বিশ্বমাদৌ,” যিনি “বিশ্বকর্মা” যিনি “মহাত্মা” যিনি সর্ধজনের 
হৃদয়ে স্নিবিষ্ট। যে সাধনায় পাপের মূল ক্ষয় হয়, সে আত্মিক 
সত্যের সাধনা, শুভবুদ্ধির সাধনা । সেই সাধনায় আত্মাকে মানি, 
এবং মেই আত্মার আশ্রয় বিশ্বাত্াকে মানি । সেই মানা থেকে 
ভ্রষ্ট করে আর যে-কোনো স্থুল পদার্থকে মানতে বলো তাকে 
আমি ধর্ম বলিনে। তুমি যখন দেবতাকে ভক্তির কথা 
ভালোবাসার কথা বলো! তখন সেটা বুঝতে পাঁরি, কিন্তু যখন 
তুমি বিচারের চেয়ে আচারকে, বুদ্ধির চেয়ে সংস্কারক, পুরুষ- 
কারের চেয়ে গ্রহকে প্রাধান্য দিতে চাও, এবং দিয়ে বলো! 
সেইটেই হিন্দুধর্ম তখন মন অত্যন্ত গীড়িত হয়__ একা তোমার 
জন্যে নয় এই শক্তিহীন বুদ্ধিহীন মোহাচ্ছন্ন দেশের জন্যে । 

১০ই নবেস্বরে পাহাড় থেকে নামব বলেছিলুম | সে ঘটে 
উঠ্ল না। ১৫ই তারিখে যাত্রার দিন স্থির হয়েচে। তার পরে 
ছুই একদিনের বেশি কলকাতায় থাকা হবে না। ইতি ৮ নবেম্বর 
১৯৩১ 


দাদা 


১২৩ 


১৬. ১১, ১৯৩১ 


(মাতা ৯ গস্থিন 
4 এরি" 1 ০৯১৭ গহীন, 
রিবন 04৫9 45974 

এলে ভোর কানা: 
4? গানি-ঝেস /৫* 
থিৰ" হি" 
ত্র 1 এগধণ- 
54 ছু রি 2 
চি * মন 
€ রে টিগোঠ সরা 
এলি 47 
.. দ্থাষ্চিপ্র 2ম কযা 
5৮৫০০ এদে 1 ৮18 94 বোর 81 


চে" ক /1/67 াে এজন) 
রগ করলে +$4 2৭5 
ছু ২ ৯5৮20 


“তি ধর 9৫০59277425 









রব (৫ £% 1712 ৬৪১ 
দঠিঠ তে ধণ ১05 ৮%07% রর" পারা/41) 
(খ ফী চন 49৭6 7 
এরা গোপা গা! 
ঠ৫ 67? রিনি রা নতি 
গাও) 515407% গাভি গোর 04-18চি। 
তি গ5/ ্গ রি ৪9171 ০0704, 
কিবা পাথর, পপ চ্ছি?গা, 
807 বাটিও ৬ ৭০থ)বে পন ওঠ পু 
গকসে নে সু 
এব-গাঠা গো রীতি শীট ৫) 
গঞদর্ণে ভেখু 6৫0৯ 
১৫)গেত তোরণ ততো এগ তি 
8%4-2/৯)৫৭- পরি 
157940519 ৬) 4া6৫ 5৭৮-510ধ/ 
টা ও্্রনী- রিশা”, 
28৫৫ গ2 


ক 04 ৫ঠ 57777 47%4 এ 
/৮৭7 74)907107 কর্গি-সট ভবে 
রী /% 0৫ 57) 9706 ০৮ 203১4 
পাব 978630 ওঠে 4%5216057 
$১৮" ৪ রি চক 907৮৭ 
45753 385. ]ট্‌ 2৫. 
উদোম 407 1৭7৮) 
5 4৮92৮ 89৫থি গীতিনে গানাখ। 
গানে গুরিদ ঈী/খাতী কর্ণ £৫০8, 
5174 তম গড) কপ 
% ণৈ ] 1 
5৫7 এ 486% সম এ 4427 ক. 
তত 7 এপ পাঠ 
তি -গ (৮ চ820%175 
রা গম রশ পি /%/%71216৮ 0097 


হে 
5 £% 870 £6 সঠ:২7৫7 


সে" 8৮৫4৯ ৮ 
থিঠাথ 5থিশ ৫৮, 464709 
2৮৮0 3 ৮4৮778475৮7 সা872 
২০ গার্ড ! 
24৯২4 চি ১87৮৮ 8২১ - 
হৃগ্তিও 41904794)র /৫ (209 ৰ 


৪777 ৬5777, 973 5১947 ৮) ৮1 /1/5)4 
০৫ ঠা নি 
(২?7-27%% (৮2/6 %8 0777 
৫৭৫" ৭77 ঠোমি-2 285৮ ৮8৯57) 
রি 740৩ ৭ 8 এগ ঠ৫ পি) 2707 & 
88৭ 5১79% বটি গা 
970৭ াভিণ 9৯) 24৮1 9১6) র8ত4/806- 
67২-/747 চটে 
(7৫763 579/7/787 44 ্ ॥7771 
(৮৮৩ ৮০৮৮৭ 
গা3৮৮ বন 77725 ফি 9৮7 
€১% পি 96১ 8০, 
ডি রি" 9 ও ০৮ ৭7৮৮৮ । 


এর ঞ৭ 18) 144? 1%56থ' 2/1 
সর ঞাদিনীত জে? 
পচ এএগ্াগ ৩1টি নাহি প1/ 
55-৫1পিধ ঠ৭ 
4179)4 510 9৫451 ৫৭? 
রি চি ধরি গায়াতুবিত ০১ 
161৯ 04 গিখা্ি 
নিশি 









গা নু গীত রা পর 
খঃ এরা গা ৫৮/%1 €/? 
(তার ধা ডি %% টাই £728148 


৫ চার্নি ৫ 
টার 0 টেরি রিল রি 


পে ঠিএ +যঞা পথে বীটিথিন 17 টন 74) 
85 ঠাপ ৬ জী্খি! 


০8 82ণে_ 
গনী চো৯৮% এরি রিটঠিন গানিবানে। 


এনীম প্রাথের ০6 0-9গিশিঞ% 
টা €ঠ গ্রীণ /4%/ 
£৫- ঠ9 রি হি ০9141 
9৫ দর বর 
87468 নি 
4%/0নি। 
যানি 4127 
নি2:8৫/এনি,- 
22 17৫ 6 


| গা ঠাঠ ৭/"5/45)1- 
4164 রিচা ণ ৫" 
তি ১568 | 


২৫ ৫1৫ 
১৩ ৩৮ 7247 


৫৪ 


ফাজিলিং। ১৫ নভেম্বর ১৯৩১ 


৫ৎ 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমার চিঠি বোধ হয় যথাসময়ে তোমার পৌঁছয় না 
কেননা এখনো যে আমি দাজ্জিলিডে আছি সে খবরটা তোমীর 
কাছে যেন ঝাপসা হয়ে আছে। এতদিন পরে এখানকার মেয়াদ 
ফুরোলো-_ আজ রওনা হয়ে কাল সোমবার প্রাতে কলকাতায় 
পেঁশছব। ছু তিনদিনের বেশি থাকা সম্ভব হবে না ।-__ লিখেচ 
সন্ধ্যাসঙ্গীত প্রভাতসঙ্গীত ছবি ও গান পড়চ। অঙ্কুর যদিও 
উদ্ভিদ জাতীয় তবু তাঁকে গাছ বলা চলে না, এ লেখাগুলিও 
তেমনি কাকৃতি কিন্তু কাব্য নয়। ওতে এই অতি সহজ কথাটার 
প্রমাণ হয় যে এক সময়ে আমি বালক ছিলুম। অমৃতং 
বালভাষিতং বলে একটা কথা আছে-__ কিন্তু সময় উত্তীর্ণ 
হলে সেই বালভাষিতকে কেউ রক্ষা করে না_ করলেও সেই 
অমৃত ভদ্র লোকের পাতে দেবার যোগ্য থাকে না। ছবি ও গানে 
তুমি আমার ভাঙা ছন্দ দেখে হেসেচ__ ভেবেচ ছেলেরা হাঁটতে 
গিয়ে যেমন পড়ে, ওর ছন্দঃপতনও তেমনি । ঠিক তা নয় 
আমি আজন্মকাল বিদ্রোহী__ বালকবয়সেও স্পদ্ধার সঙ্গে বাধ! 
ছন্দের শাসন অস্বীকার করেই কবি-লীলা সুরু করেচি-_ বাঁধনে 
ধর! দিতে আপত্তি করি নে যদি ধরা না দেবারও স্বাধীনতা 
থাঁকে। ঘরে বাস করতে হয় বলেই যদ্দি বাগানে বেরোলেই 
লোকে চারদিক থেকে তেড়ে আমে তাহলে সেটা তো হোলো 


১২১ 


জেলখানা । বস্তত কাব্যে দেয়াল-ছাঁদা ঘরও কবির, নির্দেয়াল 
বাগানও তার। আমার কবিতায় কোথাও কোথাও ছন্দের 
দেয়াল দেওয়! নেই বলে মনে কোরো! না! ইটের পাঁজ! পোড়ে নি, 
মিস্ত্রির মজুরীর অভাব । ইতি ১৫ নবেম্বর ১৯৩১ 

দাদ! 


৬৩ 


[ কলিকাতা | নভেম্বর ১৯৩১ ] 


ঠৎ 


কল্যাণীয়াস্থ 

কি করে তুমি আপনার কাছ থেকে আপনি দূরে গিয়ে 
শান্তি ও সার্থকতা পেতে পারো সে তো আমি বল্‌্তে পারি নে। 
তোমার প্রকৃতি ও বাইরের অনুকুল প্রতিকূল নানা অবস্থায় 
তোমাকে একটা বিশেষভাবে গড়ে তুলেচে তাঁরি ভিতর থেকে 
পরব আশ্রয় তোমাকে নিজেই বুঝি স্থ্টি করতে হবে। তার কারণ 
তোমার স্বভাবের মধ্যে একটা প্রবল স্বকীয়তা আছে-_ সে যদি 
বাধাগ্রস্ত জীবনের পথকে নিজের সহজ প্রতিভার দিকে মুক্ত 
করতে পারে তাহলেই তুমি আত্মপ্রতিষ্ঠ হতে পারো । তুমি 
স্ত্রীলোক, নান! শিক্ষাদীক্ষা অভ্যাস সংস্কারে তোমাকে ঘিরেচে__ 
তোমার আন্তরিক শক্তির সঙ্গে তার সামপ্তস্ত হয় নি-_ তাই কষ্ট 
পাচ্চ__ অথচ তোমার আর কোনে! গতি নেই। নূতন যে কোনো 
পথ খুঁজতে যাবে, খুঁজে পাবে না কষ্ট পাবে। যদি অবস্থা অনুকূল 


১২৭ 


হোত, যদি যথেষ্ট শিক্ষা ও চর্চা থাকত তাহলে তুমি রচনায় আত্ম- 
প্রকাশে পুর্ণতা পেতে-__ সুযোগ হয় নি__ এ ছুঃখ কে মেটাবে? 
তোমার অন্তর্যামী, তোমার গুরু তোমাকে এই নিয়ত ছন্দ থেকে 
রক্ষা করুন__- এই কামন! করা ছাড়া আর কি করতে পারি ? 
কাল সকালের গাড়িতে শান্তিনিকেতনে যাব । তোমাকে 
অন্তরের সঙ্গে সেহ করি নিশ্চয় জেনো | 
দাদা 


৬১ 


[ শনিবার ২১ নভেম্বর ?, ১৯৩১ ] 


কল্যাণীয়াস্মু 
এক্ষনি শান্তিনিকেতনে যেতে হচ্চে। শনির কোপে আইজ- 
ক্রিম মুখের কাছে এসে ফিরে গেল । 
জ্যোতিষের বইগুলি পেলুম । 
তোমার চিঠি পরে পড়ব 
সময় একটুও নেই 
দাদা 


১২৩. 


৬২ 


[ শান্তিনিকেতন ] ২৪ নভেম্বর ১৯৩১ 


কল্যাণীয়াস্্ 

তুমি কি আমাঁকে বৈরাগী মনে করে বসে আছে৷? নাঁন। 
রাগে নানা রসে আমার মন বিচিত্র। কিন্তু তা সম্ভবপর হোতো! 
নাযদি না আমি বাধনছাড়। হতুম। আকাশে মেঘে মেঘে, 
খতুতে ঝখতুতে ফুলে পল্লপবে রঙের রসের অন্তহীন খেলা-_ এই 
খেলা ভেঙে যেত যদি বাঁধনের জালে আটকা পড়ত। বিশ্ব- 
ব্যাপারকে আমরা লীল। বলে জানি-_ সেই লীলা'র মানেই এই 
যে তার মধ্যে সবই আছে কিন্ত কিছুই বাঁধা নেই । রসের ঝরন! 
পূর্ণ থাকচে কেনন। সে কোথাও বদ্ধ থাকচে না। কুমারসম্ভবে 
শুনি দেত্যরা স্বর্গকে অধিকার করেছে । তার মানে, যে-আনন্দ 
ছিল মুক্ত তাকে তাঁরা বন্দী করতে চেয়েছিল। তখন সেটা হয়ে গেল 
ভোগ- ভোগে ক্লান্তি, ভোগে য্লানতা, ভোগ নিজেকে নিঃশেষ 
করে দেউলে হয়ে যায়। সেই জন্যেই মন বলে লোভ কোরো 
না। লোভে আমরা আপনাকেই বন্দী করি কিন্ত যা পাই 
তাকে শেষ পধ্যস্ত বাধতে পারি নে। তূমি নিশ্চয় জানো আজ 
জগৎ জুড়ে একটা আথিক ছূর্গতি ঘনিয়ে উঠচে। বিষয়ী 
লোকের! ব্যাকুল হয়ে তার কারণ খুঁজচে। তার কারণ এই যে 
মানুষ দীর্ঘকাল ধরে আপন আপন সম্পদকে কড়াকড় করে 
আটে-ঘাঁটে বাঁধতে চেয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্মী চঞ্চলী-_ অর্থাৎ ধন 
কোনো একজায়গায় একান্ত বাঁধা থাকবে এটা বিশ্বনিয়মের 


১২৪ 


বিরুদ্ধ। রাশিয়ায় সৌভিয়েট এ কথাটা বুঝেচে। তারা ব্যক্তিগত 
লোভের থেকে ধনকে মুক্ত করতে চাঁয়। যদি পারে তাহলেই' 
চঞ্চলা লক্ষ্মীকে তারা সত্য করে পাবে। বিষয়লুব্ধ দৈত্যরা 
লক্মীকে আপন ব্যাঙ্কের ছুর্গে কড়া পাহারায় বন্দী করেছিল । 
তাই লক্ষ্মী আজ তার অদৃশ্য রাস্তা দিয়ে পালাচ্চেন। জীবনের 
সব ছুর্মুল্য আনন্দই হচ্চে এই রকমের মুক্ত সম্পদ। তাঁকে 
বাঁধতে গেলেই নিজেকে বাঁধি । আমি তাই বলি মুক্তি মানে 
ত্যাগ নয় বৈরাগ্য নয়, আপন অন্ুুরাগের হাতকড়ি খসিয়ে 
দেওয়া, তাকে নিরাসক্তির সিংহাসনে রাজা করা-_ তাকে পাওয়া 
কিন্ত ধরা নয়। আমার লেখা সম্বন্ধে আজকাল কেউ কেউ 
ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে বলে তাতে প্যাশান্‌ নেই-_ অর্থাৎ 
প্রেম আছে কিন্তু তার শিকল নেই-_ ঝমঝমানি শুন্তে পায় 
না! বলে মনে করে বুঝি সব শৃন্, কিন্ত অনেক সময়েই আচলে' 
বাঁধ সোনার গিরেটাই থাকে, সোনা পড়ে খসে। ইতি ২৪ 
নবেন্ধর ১৯৩১ 

দাদ! 


১৯২৫ 


৬৩ 


৩ ডিসেম্বর ১৯৩১ 


কল্যাণীয়ান্ু 

তোমার চিঠি পড়তে আমার খুব ভালো লাগে। তাতে 
তোমার নারীহ্ৃদয়ের গভীরতম বেদনার স্পষ্ট পরিচয় পাই । বুঝতে 
পারি স্েহ প্রেম ভক্তির আধার পাবার প্রয়োজন তোমাদের 
পক্ষে কত একান্ত প্রবল । যেখানে তোমাদের হৃদয়ের নৈবেছ্ধ 
পরিপূর্ণভাবে বিশুদ্ধভাবে সার্থক হতে পারে, তোমাদের ত্যাগের 
শক্তি সমস্ত বাধ! ভেদ করে উচ্ছুসিত ধারায় প্রবাহিত হতে পারে 
(তোমাদের শ্রেষ্ঠ সাধনার পথ সেই অভিমুখেই। নারীর সেই 
আত্মনিবেদনের ব্যাকুলতা তোমার চিঠিতে অকৃত্রিম মাধুর্য 
প্রকাশ পায়। বুঝতে পারি যে-বৈষ্ণবধর্ম তোমাকে আকর্ষণ 
করেচে তুমিও তাঁকে আকর্ষণ করেচ-_ পৃথিবী যেমন,যত ছোটো 
হোক্‌, তবুও সূর্য্যকে টানে । তুমি অকাঁরণেই সন্দেহ করো! যে 
আমি হয়ত তোমার মনের ভাবটি ঠিক বুঝি নে। একটা কথা 
মনে রেখো আমরা সকলেই এক হিসাবে অর্দনারীশ্বর। কারো 
মধ্যে বা আধাআধি মিশোল, কারো মধ্যে বা ভাগের কমি বেশি 
আছে। একান্ত নারী এবং একান্ত পুরুষে যদ্দি সংসাঁর বিভক্ত 
হোত তাহলে তারা মিলতেই পারত না। তাই পরস্পরকে 
বুঝতে বাধে না, অথচ নিজের নিজের অধিকারের মধ্যে নিজের 
যে বিশেষত্ব তাকেও বাচিয়ে রাখা সম্ভব হয়। অর্থাৎ পুরুষের 


১২৬ 


প্রকৃতিতে পুরুষ মুখ্য, মেয়ে গৌণ, এবং মেয়েদের প্রকৃতিতে তার 
উল্টো, এইটেই সাধারণত হয়ে থাকে, ন! হলে সেটাতে সংসারের 
ওজন ঠিক থাকে না। মেয়েরা অজজ্র স্েহ প্রেম ভক্তি দিয়ে 
নিজেকে এবং নিজের সংসারকে পূর্ণ করে তুলবে এইটেই চাই, 
এইটে হোলো! তাঁর রসের দিক,__ এর সঙ্গে তাঁর শক্তির দিক 
আছে যে দ্রিকে তার নিষ্ঠা, ধৈর্য, ত্যাগের দৃঢ়তা, যে-শক্তির দ্বারা 
সে আপন আশ্রয়কেও আশ্রয় দেয়, পালন করে, প্রতিচিত রাখে, 
তার বিকারকে শোধন করে তার বেদনার আরোগ্য আনে, 
অর্থাৎ যাতে-করে সে নির্ভরের ছারা ছূর্বল করে না, চরিতার্থ 
করে। কিন্তু এ রসের ধন্ম যদি পুরুষ আশ্রয় করে তাহলে 
নিজের উপরে পুরুষকে নারীভাব আরোপ করতে হয়, অর্থাৎ 
সেটা হয় তার স্বভাবের বিরুদ্ধ । পুরুষ নিজেরই স্বভাবকে 
ত্রটটিষ্ঠ করে তবেই সার্থকতা লাভ করে, উজানে গেলে দুর্বল 
হয়ে জীবনের উদ্দেশ্তকে ব্যর্থতায় নিয়ে যায়। বুদ্ধি দিয়ে বিজ্ঞান 
দিয়ে বীর্ধ্য দিয়ে অপ্রতিহত অধ্যবসায় দিয়ে আমাদের স্য্টিকে 
কেবলি উৎকর্ষের দিকে নিয়ে চল্ব, সমস্ত বাঁধাকে পরাস্ত করব, 
প্রতিকূলতাকে ভাগ্যের অমোঘ লিখন বলে স্বীকার করে নেব না, 
এএই হলেই সত্যকার পুরুষের দ্বারা সংসারে স্বাস্থ্য শাস্তি সম্পদ 
আত্মসন্মীন বজায় থাকতে পারে, এই হলেই মেয়েরাও নিরাপদ 
নির্ভর ও গৌরব লাভ করে। নইলে পুরুষরাঁও যেখানে রসের 
তরঙ্গে হাবুডুবু খাওয়াকেই জীবনের চরম লক্ষ্য বলে গ্রহণ করে, 
-- সেই পৌরুষবজ্জিত দেশ সকল দিক থেকে পরাভবের বন্যায় 
যায় ডুবে । সেই জন্যে তোমার চিঠিতে তোমার হৃদয়ের মাধুধ্যে 


১২৭ 


আমি যতই পরিতৃপ্তি পাই না৷ কেন আমার তরফে পুরুষোচিত 
যে বীর্যের আনন্দ, যে মুক্তির আদর্শ, যে স্থষ্টির তপস্তা, যে 
সর্বপ্রকার অমঙ্গলের বিরুদ্ধে প্রাণপণ বিদ্রোহ, যে আত্মত্যাগী 
কর্মের কঠোরতা তার বিজয়বাণী ন! শুনিয়ে থাকতে পারি নে। 
বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরে পুরুষ নারীর আদর্শে বিমুগ্ধ, সেই 
জন্যেই তার স্থগ্রিশক্তির এমন বিকার ঘটেছে-_ সেই জন্যেই 
কেবলি পরের কুৎসায় পরশ্রীকাঁতরতাঁয় পরস্পরকে ব্যর্থ করচে, 
কোনে! বড়ো কন্মকে স্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে তুল্‌্তে পারচে না 
তাই তপস্তা ভঙ্গ করতে, সাধু চেষ্টাকে অশ্রদ্ধা করতে, আরব্ধ 
কন্মকে ভেঙে ফেলতে, শ্রেষ্ঠতাকে অস্বীকার করতে, যে-কোনো 
উপলক্ষ্যেই একত্র হবামাত্র খুঁৎ ধরে, ছোটে! ছোটো ছুতো। নিয়ে, 
মিথ্যা বলে”, অত্যুক্তি করে সব কিছু পণ্ড করে দিতে, অকথ্য 
ভাষায় কৌোদল করতে তার এমন একটা অস্বাভাবিক আনন্দ। 
চরিত্রের ভিত্তি দুর্বল, মাটিতে অত্যন্ত বেশি রস, পাথুরে 
কঠিন্তার অভাব-__ তাই আমাদের মিলনে আট নেই, অনুষ্ঠানে 
স্থায়িত্ব নেই, কেবলি তর্ক বিতর্ক দলাদলি, তালকে তিল ও 
তিলকে তাল করা । 

গ্রহগণনায় জ্যোতির্ষণের কী দাবী আমাকে জানিয়ো, 
মিথ্যে জরিমান! দিয়ো! না । জয়ন্তীর প্রবেশিকা তৃমি যদি আমার 
কাছ থেকে দাবী করে নাও তবে আমি খুসি হব। তার বদলে 
তোমার কাছ থেকে আমি না হয় তোমাদের কোনো একটা 
উত্তরবঙ্গীয় সুক্তনি কিম্বা চাপড়ঘণ্ট কিম্বা শশ! বা! কুম্ড়োবীচির 
মিষ্টান্ন অথবা পৌষপার্বণের পিঠের প্রত্যাশা! জানাব। কিন্তু 


১২৮ 


অস্তরিক্দ্রিয়ের মধ্যে লঙ্কাদাহ উৎপাদন যাতে না হয় সেদিকে 
দৃষ্টি রেখো । ইতি ১৭ অগ্রহায়ণ ১৩৩৮ 


দাদা 


৬৪ 
| শান্তিনিকেতন * ] ৪ ডিসেম্বর ১৯৩১ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত 

খুচরো কাজের ভিড় প্রতিদিনই অত্যন্ত বেশি করে ঘনিয়ে 
আসচে। এ যেন রথের ভিড়ের মত-_ এক জনের সঙ্গে আর 
এক জনের সম্পর্ক নেই, অথচ ঠেসাঠেসিতে ফাক পাওয়া যায় 
না। আজ তোমাকে চিঠি লিখব ন! বলেই স্থির ছিল। কাল 
একটা! চিঠি লিখেচি, অতএব কিছুদিনের ছুটির মেয়াদ দাবি করতে 
পারি। কিছুদিনের পুর্ব্বের পত্রে আভাস পেয়েচি পত্রোত্তরের 
বিলম্বে রাগ করবার অভ্যাসটুকু তোমার আছে । বোঁধ হচ্চে 
তোমাদের উত্তরবঙ্গীয় মেজাজ তোমাঁদের লঙ্কারসিত চাপড়ঘণ্টর 
মতোই ঝাঁঝালো । দক্ষিণ বঙ্গের পলিমাটিতে আমরা মানুষ, 
আমরা ভীতু স্বভাবের-_- একান্ত ভালোমানুষির সাহায্যেই 
আমরা আত্মরক্ষার চেষ্টা করে থাকি । “অন্যে বাঁকা কবে কিন্তু তুমি 
রবে নিরুত্বর” এই পদ্ধতিটা! অন্তত আজকের দিনে নিরাপদে 
অনুসরণ করতে পারতুম। কিন্তু তোমার চিঠিতে দেখলুম শ্রীপতি 
তার চিঠির জবাব আজও প্রত্যাশা! করচে। যেদিন তার চিঠি 
পেয়েছি সেই দিনই উত্তরে তাঁকে জানিয়েছিলুম যে, তার রচিত 


৯]৯ ১২৯ 


আইস্ক্রীম পেঁছবার পূর্ববেই ষে জোড়া্সাকো থেকে অকস্মাৎ 
আমার তিরোভাব ঘটল নিশ্চিত এর মধ্যে মধুস্দনের হাত আছে। 
শ্রীপতি শ্লেচ্ছজনসেবিত উক্ত ভোজ্য পদার্থের রচনানৈপুণ্য নিয়ে 
দর্প প্রকাশ করেছিল, দর্পহারী আমাকে তাড়াতাড়ি তাই 
বিকেলের ট্রেণেই বোলপুরে রওনা করে দিলেন__ অতএব এক্ষণে 
মধুস্দনের সঙ্গেই শ্রীপতি নিষ্পত্তি করে নিকৃ। চিঠি শ্রীপতি যদি 
না পেয়ে থাকে তাহলে পুলিসে হয়ত তার বদনাম আছে-_ চিঠি 
বিলুপ্তি আজকালকার দিনের ইতিহাঁসেরই একটা অঙ্গ । 
কে বলে তুমি আমাকে ঘরের কথা লেখ? ঘরের লোক 
ছাড়! কাউকে ঘরের কথ! লেখাই যায় না। আমি যে-ঘরকে 
কিছুই জানি নে সে ঘরে তো আমার দরোজা বন্ধ। তোমার 
ভাষা দিয়ে তৈরি ঘরে তো পর্দা খাটানে৷ নেই,তার ফোটো গ্রাফ 
নেওয়া যদি চল্ত তাহলে দেখতে ও একটা স্বতন্ত্র জিনিষ । কেনন। 
ও ঘর তো আমিই মনে মনে তৈরি করে নিই, কোনো স্ষ্ট 
পদার্থের সঙ্গে ঠিকমতো! ওর মিল হতেই পারে না। তুমি যে 
নামগুলি ব্যবহার কর সে তোমার চেনা, কিন্তু নামের পিছনকার 
রূপ তো আমারই তৈরি । তুমি ডাঁকঘরের আড়ালে দাড়িয়ে 
যা-খুসি গল্প বলে যেয়ো, তাতে কারে। এতটুকু আক্র নষ্ট হবে না 
_- আমার মন খুসি হবে। চিঠিতে এরকম বকে যাওয়া একটা 
বিশেষ বিদ্যা, সবাই পারে না, তুমি পাঁরো৷। সহজ কথা সহজে 
বলার শক্তি খুবই ছুরলভ। আপন ভাষা সকলের আপন আয়ত্তে 
নেই। ইতি ১৮ অগ্রহায়ণ ১৩৩৮ 
দাদ। 


১৩৩ 


৫ 
[ শান্তিনিকেতন * ] ১* ডিসেম্বর ১৯৩১ 
ও 

কল্যাণীয়াস্তু 

কাজের ঘূর্ণাপাকের টান অত্যন্ত বেড়ে উঠেচে। কিছু 
দিনের মতো। এবার তলিয়ে যাব। চিঠিপত্র লেখা অসম্ভব হবে 
আগে থাকৃতে খবর দিয়ে রাখলুম। রাগ যদি করতেই হয় 
তবে কোনো একট! গ্রহের উপর কোরো, ষে গ্রহ এমন করে 
আমাকে খাটিয়ে মারে । 

তোমাদের পাঁড়াতেই দেখচি রাগের একটা সংক্রামক রোগ- 
বীজ আছে। শ্রীপতিকে লক্ষ্য করে কিছু পরিহাস করে- 
ছিলুম, ভেবেছিলুম সেও ঈষৎ হাস্য করবে-_ কিন্তু তুমি লিখেচ 
তার মন বিগড়ে গেচে। এ ব্যাপারটাও দেখচি আর একটা 
কোনে গ্রহের দ্বারা সংঘটিত হয়েচে। সে গ্রহ বোধ করি 
আমার হাসি সইতে পারে না। প্রীপতির চিঠিতে কলকাতা 
থেকে হঠাৎ তিরোভাবের অপরাধ আমি নিজে না নিয়ে 
মধুস্্দনের উপর দোষারোপ করেছিলুম-_ নিশ্চয় বিশ্বাস ছিল 
মধুন্দন ঠাট্টা বোঝেন অতএব তিনি অবিচলিত থাকবেন__ 
কিন্তু শ্রীপতির দ্বারা তার বিচলিত ভাবটা প্রকাশ হয়েচে। 
এবার থেকে মধুত্দনকে সাম্লিয়ে চলব-- গম্ভীর হয়ে সাবধানে 
কথ। কব। কিন্তু স্বভাব খারাপ, পণরক্ষা! হবে না। 

রাজার হাতে রাজদণ্ড আছে সেটা 'নিব্বিচাঁর বিভীষিকা! হয়ে 
উঠলে তাকে ঠেকাবার জন্তে প্রজার হাতেও একট] ঢাল ন! 


১৩১ 


থাকলে অত্যাচারের সীমা থাকে না। যে প্রজা অতিসহিু, 
রাজাকে সে ধর্মমভ্র& করে । সেই অন্যায়ের দায়িত্ব প্রজার নিজের 
দুর্বলতায় । দুর্বল নিজে ছুঃখ পায় পাক্‌, কিন্তু হুর্বলতা৷ অপরাধ 
হয়ে ওঠে যখন সে সবলের চরিত্রকে বিকৃত করে দেয় । এই জন্তেই 
অন্যায়কে নিশ্চেষ্টভাবে সহা করাও অন্যায় । রাজার হাতে অস্ত্রের 
অন্ত নেই প্রজার হাতে একটিমাত্র প্রতিরোধের উপায় আছে সে 
হচ্চে বয়কট । যদি অভ্যস্ত আরাম থেকে বঞ্চিত হওয়া সত্তেও 
বাঙালী এই বয়কট পদ্ধতির ভিতর দিয়ে অত্যাচারের প্রতি ধর্ম্- 
রাজের অপ্রসন্নতাকে প্রকাশ না করে তাহলে যে পর্যন্ত না দৈন্যে 
ছুঃখে ম্যালেরিয়ায় পুলিশের গু তোয় সে ভবয্ত্রণা থেকে সম্পূর্ণ 
নি্ভৃতি পায় ততদিন বিদেশের আমদানি মোটামোট কানমলাই 
তাঁর পুরুষান্ুক্রমে নিরবচ্ছিন্ন পথ্য | তাই, আমাদের শাসনকর্তা 
দের প্রতি লয়াল্টিবশতই তাদের প্রতি কর্তব্যপাঁলনের উদ্দেশে 
আমি বয়কটের সমর্থন করি। রাজধন্ম অমিত্রাক্ষর ছন্দে কাব্য 
লিখ্‌তে স্বর করেচে __ তাঁর রচিত লাইনের মিল আমাদের লাইনে 
যদি জোগাতে পারি তাহলেই অমিত্রতা ঘুচে গিয়ে মিত্রাক্ষরের 
চলন হবে-__ কর্ণ গীড়া বেঁচে যাবে । এই কর্ণ পীড়নের উদ্যোগট? 
রাজার দিক থেকে বিরাট মাত্রায় ঘনিয়ে আসচে-_ ধর্মের 
দোহাই মানবে না মান্বে ছুঃখের দোহাই । অতএব নিজেরা 
ছুঃখ স্বীকার করেও যথাস্থানে ছুঃখপ্রয়োগ করতে হবে। সব 
চেয়ে সাধুভীবে এ কাজ করবার উপায় হচ্চে বয়কট ।-- 
সময় নেই । অতএব চল্লুম। ইতি ১০ ডিসেম্বর ১৯৩১ 
দাদা 


৯৩২ 


৬৬ 


কলিকাতা [ ডিসেম্বর ?, ১৯৩১] 


৫9€ 


কল্যাণীয়াস্তু 
আমার অন্তরের শুভকামনা গ্রহণ কর। 
এইমাত্র কলকাতায় পৌছলুম। এতদিন অত্যন্ত ব্যস্ত 
ছিলাম। ক্লান্তির বোঝা নিয়ে এসেচি। সামনে আছে আমার 
কবিমেধ-_ ভয়ে আছি। 
দাদা 


৬৭ 


[ ডিসেম্বর ?, ১৯৩১ ] 


ঠ€ 


কল্যাণীয়াস্তু 

বড়ই ব্যস্ত। নানা আকারে অজজ্র দক্ষিণা তোমাদের কাছ 
থেকে পাচ্চি। যতট। পারি আন্তরিক ভাবে আত্মসাৎ করচি। 
আমারও কিছু পাঠাই-_ সেও কিছু কিছু অন্তরের মধ্যে গ্রহণ 
কোরো । 

তোঁমার পিসিমা জ্যাঠাইমাকে জানিয়ো__ কত তৃপ্চি 
পেয়েছি । কোনে! একদিন সাক্ষাৎ যদি হয় মুখে জানাব । 

দাদা 


১৩৩ 


৬৮ 


| ডিসেম্বর ?, ১৯৩১ ] 


মে 


কল্যাণীয়াস্মু 

তোমার ব্যাকুলতায় আমাকে বড়ো ব্যথা দেয়। তোমাকে 
ক্ষমা করব না কেন? কোনো অপরাধ তোমার মধ্যে নেই। 
তোমাকে আমি গভীরভাবেই ন্েহ করি__ সেই শ্নেহে আঘাত 
কখনোই পাই নে। তোমাকে সান্ত্বনা দিতে যদি পাঁরতুম খুসি 
হতুম-- কি করতে পারি বলো । বিশ্বভারতীর জন্যে টাকা 
দিয়েছ এই তোমার দান আমার মনে বড়ো বাজচে। তুমি 
একটুও কষ্ট করে নিজেকে বঞ্চিত করে আমাকে কিছু দাও এ কি 
আমার ভালো লাগে? তোমার ত্যাগের ইচ্ছাই আমার পক্ষে 
যথেষ্ট। ফিরে পাঠিয়ে তোমাকে আঘাত করতে চাই নে। কিন্ত 
আর একদিন এসে তুমি আপনিই ফিরে নিয়ে যেয়ো । 


দাদ! 
৬ জানুয়ারি ১৯৩২ 
কল্যাণীয়ান্মু 
ইন্ফুয়েঞ্ায় শয্যাগত। এ কয়দিনের সম্মানের অভিঘাতে 
অভিভূত । 


তুমি গৃহের ও সম্প্রদায়ের কঠোর বন্ধনে শৃঙ্খলিত। এ রকম 


১৩৪ 


বন্দিদশা আমার অভিজ্ঞতার বাহিরে । কৃত্রিম ও সঙ্কীর্ণ নিয়মের 
নাগপাশে মানবাতআ্মাকে এমন করে সন্ত্স্ত ও উৎপীডিত করাকে 
আমি অধর বলেই জানি। এ বন্ধনকে তুমি যখন নিজেই 
ব্বীকার করে নিয়েছ, একেই তুমি যখন মুক্তি বলে কল্পনা কর 
তখন উপায় নেই। এ অবস্থায় বন্ধনে সম্পূর্ণভাবে ধর! 
দেওয়াতেই তুমি আরাম পাবে । যতক্ষণ বাইরে থাকবে ততক্ষণ 
দ্বিধার টানাটানিতে তোমাকে বেশি ছঃখ দেবে। 
আমার প্রকৃতি অত্যন্ত নিরাসক্ত। আমার মধ্যে স্নেহ প্রেম 
ভক্তির প্রবলতা নেই তা নয় কিন্তু তা আমাকে বাঁধে না। আমার 
নেশা নেই। সমস্তই আমি সহজে স্বীকার করি। আমাকে 
কিছুতে ক্ষুব্ধ করবে এমন কথা তুমি কখনোই মনে কোরো! না। 
আমি নিজের মধ্যে স্বতন্ত্ব। আমি যাকে যা! দিই তার থেকে 
নিজের জন্য কোনে! অংশ ফিরিয়ে নিই নে। কিছুতে তোমাকে 
আমি ভূল বুঝব এমন আশঙ্কা নেই । ইতি ৬ জানুয়ারি ১৯৩২ 
দাদ] 


৭০ 
[ জানুয়ারি ১৯৩২ ] 
ও 
কল্যাণীয়াস্তু 
তোমার সেহমধুর ভক্তি আমার অস্তঃকরণকে স্সিপ্ধ করে। 
হৃদয়ের এই মাঁধুর্যই তো৷ সেবা-_ কর্মের সেবা এরই অন্ুবস্তী- 
মাত্র__ সেই প্রত্যক্ষ সেবা! না হলেও চলে। তুমি দূরে থাক বা 


১৩৫ 


নিকটে থাক, পত্র লেখ বা না লেখ তাতে তোমার পরে আমার 
সেহ বা বিশ্বাস ক্ষীণ হবে না এ কথা নিশ্চিত জেনো । অকারণ 
সংশয়ে তুমি নিজেকে গীড়া দিয়ো না। 
কিছুকাল ডাকঘরের আয়বৃদ্ধি করব নাঁ_ যদ্রি চিঠি লিখি 
সে পোস্ট কার্ডে। ছুর্গ হের সঙ্গে লড়াই করতে হবে। ইতি 
দাদা 


প১ 


[ জানুয়ারি ১৯৩২ ] 


৫৫ 


কল্যাণীয়ান্থ 

শরীর এখনো! দুর্বল । 

তোমার সমস্ত অন্তরের তৃপ্তি দেবার মতো আমার শক্তি 
নেই-_ যদি থাকত খুসি হতুম।: তুমি যে-সুধার পিয়াসী সে 
সুধা তোমার স্মৃতিতেই রয়েছে__ আর কোথাও পাবে না। 
বর্তমানের সঙ্গে তোমার অতীতের ছন্দ বেধে গিয়ে তোমাকে 
এত কষ্ট দিচ্চে। | 

মহাত্মাজির পত্র পেয়েছি । মন অত্যন্ত উদ্দিগ্ন। 

দাদা 


১৩৩৬ 


পথ 


[ জানুয়ারি ১৯৩২ ] 


৫৩ 


পোষ্ট আপিস 
[1091091) 
কল্যাণীয়ান্তু 
মিষ্টান্ন পেয়ে পরিতুষ্ট হলুম। গঙ্গীতীরে আশ্রয় নিয়েছি। 
নির্জনে শান্তিতে আছি। বোধ হয় শরীরও সুস্থ হয়ে উঠ্বে__ 
যদিও বল পাওয়ার আশ! রাখি নে। ইতি 
দাদ] 


ও 
২১ জানুয়ারি ১৯৩২ 


৫৩ 


খড়দহ 


কল্যাণীয়াস্ত্ 

চুপচাপ করে আছি এখানে । জায়গাঁটি ভালো, বাড়িটি 
মস্ত-_ ভূতের বসতি বলে অপবাদ আছে ।-_ সেই ভূত আমাদের 
উপকার করেছে-_ বাড়ির ভাড়া! কমিয়ে দিয়েছে । তা ছাড়া সে 
যে আমাদের সহবাসী এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। 

জ্যোতি বাচস্পতি কৃত আমার বর্ষফল পাওয়া গেছে । তাকে 
পারিশ্রমিক পাচ টাক! দ্রিতে বলেছিলে-__ পাঠিয়ে দেব। 

যথাসম্ভব সমস্ত কন্ম থেকে নিষ্কৃতি নিয়ে আলম্তচর্চ। 
করচি। প্রয়োজন ছিল। মনের শক্তি কান হয়ে এসেচে__ 


১৩৭ 


তাই কর্মে রুচি নেই। কিন্তু সংসারের দাবী কমে নি। দূরাগত 
আগন্তকেরও দেখা মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। সম্পাদকদেরও 
দর্শন মেলে । 
মনে তুমি শান্তি ও শক্তি পাও এই আমি একাস্তমনে 
কামনা করি। ইতি ২১ জানুয়ারি ১৯৩২ 
দাদ। 
বাসম্তীকে আমার আশীর্বাদ জানিয়ো! 


৭8 


[ খড়দহ ] ২৩ জানুয়ারি ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

মিষ্টান্ন পেয়েছি__ সকলে মিলে তার সমাদর চল্চে। 

তোমাকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে । সঞ্চয়িতা এখনে! বেরোলো। 
না ভূল সংশোধন করতে গিয়ে দেরি হোলো-__ বেরোলে 
একখান! পাঠিয়ে দেব__ কোন্‌ ঠিকানায় পাঠাতে হবে জানিয়ে 
দিয়ে। | 

সকল রকম কর্্মবিমুখ চিত্ত নিয়ে একটা লম্বা চৌকিতে 
পড়ে দিন কাটাই । গঙ্গার ধারের দিকে প্রশস্ত একটা বারান্দা 
আছে সকাল বেলাট! সেইখানে আমার আশ্রয় । পশ্চিমতীরে 
বাড়ি বলে রৌত্র ক্রমে প্রখর হয়ে আক্রমণ করে-_ তখন ঘরে 
ঢুকতে হয়। শুয়ে শুয়ে কখনো কখনো আপন মনে কবিত। 


১৩৮ 


লিখি। গগ্য লেখার মতো শক্তি ও উৎসাহ নেই। লোক যে 
একেবারে আসে না তা নয়-_ কলকাতা থেকে দর্শনার্থীর সমাগম 
হয়-_- ত৷ ছাড়া প্রতিবেশীও আছে। 

সন্ধ্যাবেলায় বাতাস নিস্তব্ধ হয়, তখন মশকের পালা । 
কলকাতার কীটগুলোর চেয়ে তাদের ক্ষুধা ও অধ্যবসায় বেশি__ 
বোধ হয় গঙ্গার হাওয়ায়। 

তোমার খাগ্ভবাহন পাত্রটাকে ফিরে পাঠাচ্চি। ইতি ২৩ 
জানুয়ারি ১৯৩২ 

দাদ! 


প৫ 


[ খড়দহ ] ২৪-২৫ জানুয়ারি ১৯৩২ 


৫৪৫ 


কল্যাণীয়ান্তু 
তোমার প্রেরিত মিষ্টান্ন পেয়েছি এবং সম্তোগ করচি। 
তুমি আমার ব্যবহার-করা পাছুকা চেয়েছ__ মনে কিঞ্চিৎ 
সঙ্কোচ বোধ হয়েচে তবু পাঠাই । ইতি ১০ মাঘ ১৩৩৮ 
দাদা 


যদি খড়দহে তোমাদের তীর্থ সন্দ্শনে আসতে পার ত খুসি 
হব। এখানে গঙ্গার ধারে আমার এই বাসাখানি নিশ্চয় তোমার 
ভালে। লাগবে । কাল বিমল এসেছিলেন-_ কিন্ত ঠিক সেই 


১৩৯ 


সময়ে খুব ভিড় জমে গেল। তোমাদেরই আত্মীয় স্ুুসঙ্গের 
সুহৃদ ও তীর. স্ত্রী তাছাড়া অমল ও তার পরিজনবর্গ এসে 
উপস্থিত। বউমা ছিলেন না । এই গোলেমালে বিমলের সঙ্গে 
কথা কওয়ার সুবিধা হোলো না। এখানে রাস্তা এত ভালে। 
যে টায়ার ফাটার আশঙ্কা নেই । আমরা থাকি ঠিক শ্যামস্ুন্দর 
ঘাটের পাশেই। 

আজ মাঘোৎসবে জোড়াসাকোয় যাচ্চি। ফিরতে হয় তো 
রাত হবে। 

যদি স্থবিধা হয় তো এসো-_ এখানে চারিদিক শ্যামল, 
নিম্মল আকাশ ও অনাবিল সহজ অবকাশ । ১১ মাঘ ১৩৩৮ 

দাদ! 


প্৬ 
[ খড়দহ। জানুয়ারি ১৯৩২ ] 
বৃহস্পতিবার 


৫8৫ 


কল্যাণীয়াস্তু 
আগামী কাল শান্তিনিকেতনে যাবার ব্যবস্থা করচি। অল্প 
কয়দিনের জন্যে । যত শীঘ্র পারি ফিরে আসব । এখানে শরীর 
ভালো থাকে । তার পরে যদি কোনে। একদিন এখানে আসা 
সহজে সম্ভবপর হয় তবে চেষ্টা কোরো । 
দাদা 


৯৪০ 


৭৭ 


২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ 


৫৭ 


কল্যাণীয়াস্ু 

গত সোমবারে বোলপুরে যাবার কথা ছিল। বাধা পড়ে 
গেল । বুধবারে যাব। 

এতদিন তোমার সঙ্গে অনেক তর্ক করেচি। কিন্ত আমি যে 
জাতে তাকিক নই দলিলসমেত তার প্রমাণ করে দেবার জন্যে 
সঞ্চয়িতা এক খণ্ড তোমার কাছে পাঠালুম। সংসারে তর্ক 
বিতর্কের প্রয়োজন আছে, যেমন এই ধরাধামে পদক্ষেপ করে 
না চল্‌লে চলে না । কিন্তু মানুষের পিঠে পাখা নেই বটে মনে 
আছে। সে ওড়ার সুখেই উড়তে চায় অর্থাৎ সে প্রয়োজনের 
বন্ধন থেকে মুক্তি চায়। কবিতায় যে সঙ্গীত আছে, তার মধ্যেই 
আছে মুক্তিআকাশে পক্ষচালনের ছন্দ। সঙ্গীতের স্থরে অর্থ- 
শাস্ত্রের সমন্তা আলোচন ও সমাধান করা চাই এমন কথা আজ- 
কাল কেউ কেউ বলে থাকেন। তারা লোকহিতৈষী, তাদের 
কাছে সঙ্গীতটা লক্ষ্য নয়, উপলক্ষ্য । ধর্মোপদেষ্টা যখন মুক্তির 
কথ। বলেন তখন তিনি বন্ধন ছেদনের পরামর্শ দেন-__ কিন্তু 
কাব্যে বন্ধনকেই অবন্ধিত করে-_ রূপকে ত্যাগ করে না, তার 
অরূপতাকে উদ্ভীবিত করে । সুন্দরের বাঁশির সুরে টানে বিশ্বের 
দিকে, কিন্তু টেনে বাধে না__ টেনে নিয়ে চলে অসীমে, ক্ষণিকের 
দীনতা থেকে অনির্বচনীয়ের পুর্ণতায়। তখন অপরূপকে ভালো- 
বাসি, নিজেকেই ভালবাসবার নাগপাশ থেকে পরিত্রাণ পাই। 


১৪১ 


বদ্ধপ্রাচীর ঘরের চারিদিকে যেমন বাগান, সাহিত্য তেমনি 
সংসারক্ষেত্রের সংলগ্ন করেই আনন্দের মুক্তিক্ষেত্র রচনা করে। 
যে পরিমাণে তা সত্য হয় সেই পরিমাণেই সাহিত্যের নিত্যতা। 
আজ আর সময় নেই। ইতি ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ 
দাদ! 


৭৮ 
১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ 


তত শীস্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্থু 

যে বেদনায় এত করে তোমাকে অশান্ত করচে তোমার 
চিঠিতে তার প্রকাশ দেখে আমি ব্যথা পাই। তুমি বাতাসের 
সঙ্গে লড়াই করচ, তুমি নিজের হাতে গ্রন্থি রচনা! করে তাই 
নিয়ে নিরন্তর টানাটানি করতে প্রবৃত্ত । স্বভাবের মধ্যে নিজে 
দ্বিধা ঘটিয়ে একট। দারুণ আবর্ত সৃষ্টি করেচ। সহজ হও, 
প্রন্কৃতির সহজধারাকে যদি জবরদস্তি করে অবরুদ্ধ না করো তা 
হলে সে আপনিই আপন সধুদ্রপথ খুঁজে নেবে । মাটির বাধায় 
নদীর যাঁত্রাপথ বেঁকে বেঁকে যায় কিন্ত সে যদি পথের ভয়ে চল 
বন্ধ না করে তাহলে তার ভ্রোতের প্রেরণা তাকে চরমেরই দিকে 
নিয়ে যায় । কিন্তু সেই চরম সম্বন্ধে যদি একটা কাল্পনিক ভূগোল- 
বৃত্তাস্ত খাড়া করে তোলো তাহলে খাল-খোঁড়াখুডির আর অস্ত 
থাকে না, তাহলে বাহিরের বাঁধা দস্তরের অবরোধে তোমার 


১৪২ 


আত্মপ্রকাশ গীড়িত হতে থাকবে । ভূবন ভরে আছে সৌন্দর্য্যসুধা, 
জীবনের মূলে আছে অমৃতরস, নানা কৃত্রিমতার ধাক্কার মধ্যে 
পড়ে আমরা যা পেয়েছি তাকেই পাই নে। যিনি আপন স্ষ্টিতে 
আনন্দরূপ বিস্তার করেচেন তাকে সমস্ত মন দিয়ে বিশ্বাস করো; 
কেন কেবলি ভাব তিনি জেলখানার কর্তা, তার অভিনান্সের 
কালো উদ্দি-পরা পেয়াদাগুলে৷ তোমার খু ধরবার জন্যে কেবলি 
উকিঝুঁকি মেরে বেড়াচ্চে। যে দেবতার রাজত্বে এত ভয়, এত 
সংশয়, যিনি মানুষের আত্মপীড়ন দিয়েই নিজের ট্যাঁকৃসো আদায় 
করেন, যিনি ভোজের পুরো আয়োজন সামনে রেখে পিছন 
থেকে সেটা হরণ করতে কথায় কথায় শাস্ত্রবুলির দোহাই দিয়ে 
হাত বাড়ান তার জন্বন্ধে আন্সিভিল ডিসোবীডিয়ান্সই তো বিধি | 
পৃথিবী জুড়ে তার ভক্তদের হৃৎকম্প আর থামতে চায় না-_ 
তাদের এ রাস্তা বন্ধ, ও রাস্তা বন্ধ, এখানে অশুচিতা, ওখানে 
নিষেধ। এমন জগতে হতভাগাদের হাতকড়। দিয়ে বেঁধে ক্ষণে ক্ষণে 
চাবুকের ব্যবস্থা করে স্থপ্টিকর্তার এ কী নিষ্ঠুর খেলা ! ইংরাজের 
দেশে ধনী লোকেরা একটা করে অরণ্য নিজের অধিকারে রাখে 
সেখানে সেই সীমানার মধ্যে বন্যজন্ত ছাড়া থাকে-_- তাদের 
আহার বিহারের বাঁধা নেই । সাধারণ লোকেরা তাদের শিকার 
করলে দণ্ড পায়, কারণ সেটা অবৈধ । কর্তা তাদের স্বয়ং শিকার 
করবেন বলেই তাদের পালন করেন। আমর! কি সেই রকম 
শিকারের পশু। দেবতা অর্থহীন বিধিনিষেধে জঙ্জর করে 
মারলে দোষ নেই-_ অথচ সে রকম নিঠুরতা মানুষ যদি করে 
'তবে সেটা অবৈধ হয়। তাই যখন দেবতার নামে মানুষ নিজেকে 


১৪৬৩ 


বঞ্চিত করে, শেলে শুলে বেঁধে, উপবাসে ক্রিষ্ট করে অকারণ 
বাধায় জীবনের পথ সঙ্কীর্ণ করে তখন তার নামে কত বড় 
অপবাদ দেয় তা বুঝতেও পারে না, অথচ সেই অত্যাচার মানুষের 
পক্ষে কলঙ্ক। যে দেবতা বুদ্ধির দোহাই মানেন না দয়ার 
দোহাইও না তাকে যে মানুষ ভয়ে ভয়ে মানে সে নিজেকে 
অমানুষ করে। সে দেবতা নেই, মানুষই নিজের প্রবৃত্তিকে 
মুখোষ পরিয়ে দেবতা তৈরি করেচে, তার পরে মানুষই মরে তাঁর 
হাতে । আমি বোধ হয় ১৫ই তারিখে কলকাতায় যাব-__ থাঁকব 
এবার চৌরঙ্গি আর্ট স্কুলে, প্রিন্সিপাল মুকুলচন্দ্র দের আতিথ্যে । 
ইতি ২৯ মাঘ ১৩৩৮ 

| দাদা 


৭৯ 
[২৮ চৌরঙ্গী রোড । কলিকাতা ] 
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ 


কল্যাণীয়াস্তু 
ছবির একজিবিশনে চৌরঙ্গী আর্ট স্কুলেই আছি। শরীর 
দুর্বল আছে। শ্রীমান বিমলাকান্তকে যদি এখানে পাঠাতে পার 
খুসি হব-_- সে আমার ছবিও দেখতে পাবে। সেই জঙ্গে 
বাসস্তীর আসা যদি সম্ভব হতে পারে তাহলে কথাই নেই। ইতি 
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ 
দাদা 


১৪৪ 


৬৩ 


[ কলিকাতা । ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ | 


৫9৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 
আগামী শনিবারে বেলা দুটো তিনটে থেকে সন্ধ্যা আটটা 
নটা! পর্যযস্ত জোড়াসীকোয় থাকব । ইতিমধ্যে ছবির তদারকে 
আমাকে এখানে থাকতে হচ্চে । এ জায়গাটি খুব সুন্দর-_ 
একটি বড়ে৷ পুকুর, বড়ো বড়ো গাছ, টাপা ফুলের গন্ধ, আর 
নিরন্তর পাখীর ডাকে কলকাতার সমস্ত অপরাধ চাঁপা দিয়ে 
রেখেচে। সহরের পাথুরে রাস্তা বেয়ে এইখানে এসে বসন্ত ঝতু 
হাফ ছেড়ে বেঁচেচে, আমিও খতুরাজের সহচর | ইতি 
দাদ] 


৮১ 


[ শান্তিনিকেতন * ] ১৪ মার্চ ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

দিনের অনেকটা অংশ ব্যস্ত থাকি বাকি অংশ থাকি 
ক্লাস্ত। তাই চিঠি লেখ! ঘটে না। আজকাল ডাকঘরের সঙ্গে 
সম্পর্ক প্রায় বন্ধ। নিজের পদবীগুলোকে মনেও রাখি নে, অন্য 
কেউ রাখে এমন ইচ্ছাও হয় না। ভারমুক্ত মনে সহজ চালে 
চল্তে ইচ্ছা করি । উপাধির বোঝ! নিয়ে সব্বত্র প্রবেশ চলে না । 


৯১০ ১৪৫ 


আমি কবি, সেই জোরে সকলের বন্ধু, সকলের সমক্ষেত্রে আমার 
বিচরণ ।-_ পারস্তে রওনা হব ৪ এপ্রেলে । এখান থেকে বেরোব 
মার্চ মাসের শেষ দিকে । দিন সাত আট কলকাতা অঞ্চলে 
অবস্থিতি। সম্ভবত খড়দহে | ইতি ৩০ ফাল্তুন* ১৩৩৮ 

দাদা 


৮ 
[ মার্চ-এগ্রিল ১৯৩২ ] 


৫9৫ 


কল্যাণীয়াস্থু 
পারস্তের পথে কলকাতায় এসেচি। হয় তো কাল পরশুর 
মধ্যেই কয়েক দিনের জন্যে খড়দহে গিয়ে আশ্রয় নেব। যদি 
দেখা করতে আসার বাধ! না থাকে এসো কিন্তু নিজেকে কষ্ট 
দিয়ো না । একটা কথা নিশ্চয় মনে রেখো মানুষকে আমি সহজ 
ভাবে বুঝি, সেই জন্তে আমি কোনো কারণেই অবিচার 
করি নে। হুঃখ দেখলে ছুঃখ পাই কিন্তু কৃত্রিম আইন মিলিয়ে 
অপরাধী করি নে । ইতি বুধবার 
দাদ! 


১ বস্ততঃ ১ চৈত্র । ২৯ দিনে ফালন্ভুন সসাপ্ত। 


১৪৬ 


ঠ৩ 


৯ এপ্রিল ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ু 

তুমি উদ্বেগ আশঙ্কার জালে নিজেকে অত্যন্ত বিজড়িত করে 
জর্ধদাই গীড়িত হয়ে আছ। ভয় যার নিজের মধ্যেই বাইরে 
সে ভয়কে স্থষ্টি করে। এমন করে আত্মগীড়নের কারান্ধকারে 
তুমি কেমন করে বাঁচবে । এমন কি ধর্মের নামে যারা মানুষের 
প্রতি অত্যাচার করা কর্তব্য মনে করে এবং সেই কর্তব্যকল্পনার 
দ্বারা বিধাতাকেই খবৰ করতে কুষ্ঠিত হয় না তাদের কাছেও তুমি 
সম্কুচিত। কেন তুমি তোমার মনুষ্যত্বের অধিকারের উপর দৃঢ় 
হয়ে সগৌরবে াড়াতে পার না? 

আমি পরশু সোমবার প্রত্য,ষে আকাশপথে যাত্রা করব 
চেষ্টা করব এক মাঁসের মধ্যে যাতে ফেরা হয়। নিশ্চিত বলতে 
পারি নে। 

বাসস্তীকে আমার আশীব্বাদ জানিয়ো আর বিমলাকে । 

' -- *** **সুহ্াদ শ্রেণীভুক্ত করে জানি নে। এই জন্যে 
তাকে স্বাক্ষরিত করে আমার বই উপহার দেওয়া চলবে না। জনতা 
থেকে সরবার দিন আমার এসেচে-_ জনতা আর বুথা বাড়াতে 
ইচ্ছে করি নে । তোমার ছেলে মেয়ে ছাড়া তোমার অন্ত সুহৃদর্গকে 
স্বীকার করে নেওয়া আমার পক্ষে কঠিন হবে। আমার শঙ্কা হয় 
তারা তোমার ক্ষতি করতেও পারে। ইতি ৯ এপ্রেল ১৯৩২ 

দাদা 


১৪৭ 


৮৪ 


[ ৩ জুন ১৯৩২ ] 


৫9€ 


শ্রীপতির চিঠি পেয়েছি 
বৌলো। আর একটু সুস্থ হয়ে 
খবর নেব। 
কল্যাণীয়াস্থ 

বিদেশ থেকে সম্মান নিয়ে এসেছি । দেশে এসে ইন্ফুয়েঞজায় 
ধরল। ছুর্বলতায় ভারাক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছি-_ 
নীলরতন বাবু দেখচেন। তোমার চিঠি ও আম পেয়ে খুসি 
হয়েছি। তোমার মন যে পন্থায় চিরাভ্যন্ত, সেই পন্থায় তুমি 
শাস্তি ও স্থিতি লাভ করো এই আমি কামনা করি। আমিষে 
পন্থায় ঈীড়িয়েছি সে পন্থায় স্থখশান্তি খোঁজবার অবকাশ আমার 
নেই, শেষ পধ্যন্ত হুকুম মেনে চল্‌্তে হবে । আমার জন্যে না 
আছে ঘরের কোণ, না আছে স্বজনের সেবা, আমাকে ঘুরতে 

হবে স্বজনের জনতায়। ইতি ২০ জ্যেষ্ঠ ১৩৩৮ [১৩৩৯] 
দাদ! 


ও পৃষ্ঠা বাঁসম্ভীর জন্যে __ 


১৪৮ 


৮৫ 


1 খড়দহ * | ৭ জুন ১৯৩২ 


ঠ« 


কল্যাণীয়াস্মু 
কাল বৃহস্পতিবার সকালে শান্তিনিকেতনে যাত্রা করব। 
সেখানে আশা করচি সুস্থ হতে পারব। অনেক কাজ এবং 
অনেক চিন্তার বিষয় জমেচে, নিষ্কৃতি পেতে দেরি হবে । অমিয় 
এখনো এসে পৌছন নি সেই জন্তে আমার কর্মের বোঝা কিছুদিন 
পথ্যন্ত যথেষ্ট ভারি হয়ে থাকবে। ইতি ৭ জুন ১৯৩২ 
দাদ! 


ক্৮৬ 
[ শান্তিনিকেতন * ১০ জুন ১৯৩২ ] 
১১ জুন ১৯৩২? 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমার বিশ্বাস আমার সব চিঠি তোমার হাতে পৌছয় নি। 
তখন চিঠিগুলির নকল রেখেছিল ধীরেন সেন। তাই অবলম্বন 
করে প্রবামীতে পত্রধারা বেরিয়েচে-_ তুমি কোন্গুলি পাও নি 
তা আমি জানিও নে। এখানে ঘন ঘোর মেঘ, মাঝে মাঝে 
বৃষ্টিও চলেছে-_ জয়দেবের দেশে মেঘমেছুর বর্ধাকাঁল রমণীয় । 
এখানে এসে শরীর অপেক্ষাকৃত ভাল আছে। এখনো গ্রীষ্মের 
ছুটি ফুরোয় নি তাই কিছু পরিমাণে বিশ্রামের অবকাশ আছে। 


১৪৯ 


কিন্তু পারস্তভ্রমণ লেখায় সেই অবকাশটুকু সম্পূর্ণ হরণ করেছে। 
আজকাল লিখতে অত্যন্ত ক্লান্তি বোধ হয়। সমস্ত পৃথিবী- 
জোঁড়া ছুঃসময়ের ছায়া আমাদের সকলেরই ভাগ্যকে নিরালোক 
করে তুল্‌্চে-_ তার হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই। কিন্তু অন্তরাত্মা 
তো আমাদের নিজের হাতে । বাসস্তীকে আমার আশীর্বাদ । 
ইতি ২৮ জ্যৈষ্ঠ [ ১৩৩৯ ] 

দাদ 


৮৭ 


২২ জুলাই ১৯৩২ 


৫€ 


কল্যাণীয়াস্থু 

তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম। ছুরবস্থাগ্রস্ত শরীর 
মন নিয়ে কর্মসংক্ষেপ করবার চেষ্টা করি কিন্তু কর্্ম বেড়েই চলে। 

চিঠিতে তুমি যে আশ্রমের বর্ণন৷ করেছ তার মধ্যে রসের 
যে উদ্ভাবন! আছে আমার কল্পনাকে তা যেস্পর্শ করে না এমন 
কথা মনে কোরো! না। কিন্ত মানবসংসারের সমস্ত দায়িত্বকে 
বাইরে ঠেকিয়ে রেখে বুদ্ধিবৃত্তিকে অন্ধ করে নিরন্তর ভাবরস- 
সম্তভোগে আত্মবিস্মৃুত হওয়ার মধ্যে যতই সুখ বা শান্তি থাক, 
তাকে আমি কোনোমতেই শ্রেয় বলে মনে করতে পারি নে। 
এই ধন্মবিলাসিতায় আমাদের দেশকে মন্মে মর্মে মেরেছে। 
সম্প্রতি নবজাগ্রত পারস্ত ও আরব্যকে দেখে এসেছি, পুর্বে 


১৫৩ 


দেখেছি জাপানকে, তার! ধর্মমোহ থেকে মুক্ত হয়ে তবেই 
রাষ্্ীয় মুক্তি পাবার অধিকারী হয়েছে__ হতভাগ্য ভারতবর্ষ 
এই মোহের কুহেলিকায় আবৃত-_- সে অন্ধ, সে পঙ্গু, সে 
আপনার দেবতাকে নিয়ে খেলা করচে সেই অপরাধে দেবতা! 
তাকে সকল প্রকার সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত করচেন অপমানের 
আর অস্ত নেই। তবু কর্তব্যবিমুখ মূঢ় ভক্তি নিয়ে ঠাকুরঘরের 
মধ্যে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকাকেই যার! পরমার্থ বলে জানে-__ 
তাঁরা যে কত বড়ে৷ অকৃতার্থ তা বোঝবার শক্তিও তাদের নেই 
কেননা তারা ভাবমদে অপ্রকৃতিস্থ । 
কঠিন ছুঃখের দিন এসেছে কিন্ত নেশায় নিজেকে ভুলিয়ে 
রাখতে চাই নে-_ কণ্টকিত পথের উপর দিয়ে শেষ পধ্যস্ত নিজের 
লক্ষ্য অভিমুখে চল্তে হবে । এক এক সময়ে ক্লান্তি আসে, 
তখন পালাতে ইচ্ছা করে যেমন করে একদিন ইস্কুল পালাতুম। 
তখন আবার ধিকার আসে মনে, লজ্জা পাই। ইস্কুলমাস্টার 
তো নেই, নিজেকেই নিজে বেঞ্চির উপর দাড় করিয়ে দিই। 
অতএব ফাকি দেব কাকে, পশ্চাতে নিজের চৌকিদার নিজেই 
আছি। মনকে এক একবার বোঝাতে চাই, কন্ম আমার জন্যে 
নয়, আমার জন্যে কাব্য । কিন্তু মন যে বোক। নয়, তাকে 
কথায় ভোলানো শক্ত। অতএব শেষ পধ্যস্তই আছে খাটুনি। 
চিঠি বেশি লিখব এমন আশঙ্কা কোরো না তুমিও তো 
নিষ্কৃতি নিয়েছ। ইতি ৬ শ্রাবণ ১৩৩৯ 
দাদা 


১৫৯ 


৮ জুলাই ১৯৩২ 
ওঁ শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্ত 

ভারতবর্ষে দ্রাবিড়জাতীয়দের সমাজ মাতৃতন্ত্র, অর্থাৎ সে 
সমাজে স্ত্রীপ্রাধান্য। এটা যে হতে পেরেছে তার প্রধান কারণ, 
তাদের ভাবপ্রবল স্বভাব । সর্বদা ভাবরমে তাদের মন আর্দ্র । 
যাদের এই রকমের প্রকৃতি নিজের মধ্যে এই ভাবরসকে উদ্বেল 
করে তোলাই তাদের ধন্মসাধনার চরম লক্ষ্য । তাঁরা আপন 
হ্ৃদয়বৃত্তিকে চরিতার্থতা দেবার জন্তেই নিজের দেবতাকে ব্যবহার 
করে। এই রসোন্ত্ততায় বিশ্বসংসারকে ভূলে থাকাকেই তারা 
ধান্মিকতা বলে মনে করে। এই পানগোষ্টীর বাইরে তাদের 
পক্ষে সমস্তই অশুচি, সমস্তই পরিত্যাজ্য | এত বড়ে৷ বিশ্বব্রন্মাণ্ড 
কেন তৈরি হয়েছিল, এ ভুল করেছিল কে? ভোজ্যআয়োজনে 
নিরস্তর ব্যাপূত, ধৃপে দীপে মাল্যে মণ্ডিত, কীর্তনে ভজনে নিত্য 
মুখরিত, আত্মবিস্মৃুত এই এক একটি সন্কীর্ণ রসমণ্ডলীর বাইরে 
যে বিপুল সংসার পড়ে আছে, ভক্তিভাবাকুলদের পক্ষে সেখানে 
যেন দেবতার অরাজকতা,-_ সেখানে বিশ্ববিধাতার কোনে 
দাবী নেই, কোনো আহ্বান নেই । এইরকম মনোভাবটি মেয়েলি 
__ সেই চিত্ববৃত্তির মধ্যে কর্মের প্রাধান্য নেই, বুদ্ধির সর্বদা 
গদ্গদ বাম্পাবিলতা। এই প্রেমভক্তি নিজের মধ্যেই নিজে 
আবন্তিত। একে স্বার্থপরতা! ঘদ্দি বা না বলি তবু একে বলা 
যায় আত্মপরতা। বাঙালী অনেক অংশে দ্রাবিড়, এই জন্যে 


১৫৭ 


তার এত বেশি ভাবাকুলতা । বাঙালী অত্যন্ত বেশি মেয়েলি । 
তাঁর মানসক্ষেত্রের এই অতিরিক্ত আর্দ্রতা যদি না ঘোচে তাহলে 
সে ভাবোদ্বেগে মরীয়া হতে পারবে কিন্ত কিছুই স্যপ্টি করতে 
পারবে না। একদিকে তার আছে কোনে! একটা! সঙ্কীর্ণ কেন্দ্রকে 
ঘিরে ভাবাবিষ্ট অন্ধ আত্মনিবেদন, আর একদিকে নিজের চক্রের 
বাইরে ঈর্ষা বিদ্বেষ কলহপরতা। কী জানি আমার প্রকৃতির 
কাছে এই মাতামাতি, এই হদয়াবেগে আবত্তিত বিচিত্র নিরর্থকত। 
একান্ত অরুচিকর। অন্তত পুরুষের পক্ষে এটা একান্ত 
অমধ্যাদাকর এবং দেশের পক্ষে এটা সাংঘাতিক ছুর্বলতাজনক 
বলে মনে হয়। ভারতবর্ষে একরকম সন্্যানী আছে যারা শুফতার 
মরুভূমির মধ্যে নিরুদ্দেশ, আর একরকম ভক্ত বৈরাগী আছে 
যারা সিক্ততার তারল্যের মধ্যে আপাদমস্তক নিমজ্জিত । এদের 
কাছে যারা দীক্ষা নিচ্চে মানুষের বিধাতা তাদের হারালেন । 
তবে তারা মানুষের ঘরে জন্মালো কেন? মানুষের কাছে 
জ্ঞানে ভাবে ভোগে তাদের যে অপরিসীম খণ তার কী শোধ 
করলে? আমি তো! বলি, থাক্‌ ভক্তি থাক্‌ পুজা, মানুষের সেবায় 
দেবতার যথার্থ প্রসন্নতা যেন লাভ করি । 

আমার এমনি স্বভাব যে প্রথম থেকেই তোমাকে কেবল 
পীড়। দিচ্চি। ধর্মকে অবলম্বন করে রসসস্তোগ করাঁকেই তুমি 
যদি চরম শ্লাঘনীয় না বলতে তাহলে আমি চুপ করে থাকতুম। 
কিন্ত তুমি ষে তোমার পুজার উপলক্ষ্য করে আমার মানব- 
দেবতাকে উপেক্ষা করতে চাও, তার মধ্যে কাল্পনিক অশুচিতা 
মুঢভাবে আরোপ করে তাকে অবমানিত করতে চাও সে আমি 


১৫৩ 


সহ্য করতে পারি নে। তুমি আমাকে অনুনয় করে বলেছ 
দেবতাকে আমি যেন অবজ্ঞা না করি-- কেন করব অবজ্ঞা 
যে জীবনবেদীতে তার সত্য প্রতিষ্ঠা, যেখান থেকে তিনি আমাদের 
কঠোর তপক্তা ও আত্মত্যাগ চান সেখানেই তাকে আমার সমস্ত 
সম্মান দিতে চাই-_ পাঁরি নে বলেই আমার দুঃখ । আঁশ! করি 
আমার সাধনা সম্পূর্ণ নি্ষল হয় নি। 

চিঠি লিখতে পারব না বলেও লিখতে হোলো । কাজ 
ফেলেই লিখেচি। তোমাকে স্েহ করেই লিখি । তবুও লেখা 
সংক্ষেপ করতে হবে । 

মীরার চিঠি পথ থেকে পেয়েছি। এতদিনে তার ছেলের 
সঙ্গে দেখ। হয়েছে-_ খবর পাবার সময় হয় নি। 

বিমলাকে বাসন্তীকে আমার আশীব্বাদ জানিয়ো। ইতি 
১২ই শ্রাবণ ১৩৩৯ 


দাদা 


৮৭ 


[ শান্তিনিতেন ] ৪ অগস্ট ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়ান্ম 

আগামী শনিবারে কলকাতায় যেতে হবে কিছুদিন থাঁকাঁও 
অবশ্যন্তাবী। আমাদের বাড়ি এসে আমার সঙ্গে দেখা করা 
তোমার পক্ষে অসাধ্য বলে লিখেচ। আমিও তার প্রত্যাশ। 


১৫৪ 


করি নি, সুতরাং তুমি কুষ্ঠিত হোয়ো নাঁ। কিন্তু অসাধ্যতার 
অন্যতম কারণ তোমার পারমাথিক ক্ষতি এ কথা শুনে চিস্তিত 
হলুম। পরমার্থ শব্দের অর্থ আমি যতদূর জানি তাতে এই 
বুঝেছি যে ওটা স্বার্থ ও সমাজবিধির উপরে । ধারা পরমার্থ 
সাধন করেন তাদের কাছে স্বার্থ নেই সামাজিক বিধি বিধান 
নেই । কোনো মানুষকে তারা অবজ্ঞা করেন না ঘ্বণা করেন ন। 
অস্পৃশ্য বলে বর্জন করেন না । তাদের শুচিবাযুগ্রস্ত সাধনার 
সঙ্কীর্ণ ক্ষেত্র কৃত্রিম প্রাচীরে ঘের! নয়। তাঁরা! নিবিচারে সকল 
মানুষের আপন । তে সব্ধগং জব্বতঃ প্রাপ্য ধীর! যুক্তাত্মানঃ 
সব্বমেবাবিশস্তি। তোমার পরমার্থ ছোওয়া খাওয়া নিয়ে, ব্রাহ্মণ 
শৃদ্রের জাতবিচার নিয়ে। ভূমি সবর্বদাই যে হিন্দুয়ানির কথা 
বলে থাকে৷ সেই হিন্দুর অধ্যাত্মশাস্ত্রেও পরমার্থ শব্দের এমন 
কোনো ব্যাখ্যা শুনি নি যাতে জোড়াসীকোর দেউড়িতে এসে 
তাকে ঠোকর খেয়ে পড়তে হয়। জোঁড়াস্াকোর বাড়িতে থেকে 
শান্্বিহিত আচারের ব্যত্যয় সত্বেও পারমাথিক উৎকর্ষ লাভ 
করেছেন এমন সাধককে আমর। জানি। তার পরে প্রাচীন 
কালের কথা আলোচনা করলে দেখা যায়, তপোবনে ভোজ্য 
সম্বন্ধে খষিদের যে রুচি ছিল তৎসত্বেও তখনকার কালে যদি 
পরমার্থসাধন সম্ভব হোত তবে এখন হবে নাকেন? কালের 
গায়ে তো জাতের ছোয়াচ লাগে নী। ভবভূতির উত্তরচরিতে 
তপোবনের আহাধ্যের উল্লেখ আছে। পৃথিবীতে ভারতবর্ষে 
আরে! অনেক দেশ আছে । যে দেবতাকে আমরা ভাটপাড়ার 
ব্রাহ্মণদের আচলধর করে শুচি করে রেখেছি, আশ! করি সেই 


১৫৫ 


সব দেশও এই দেবতারই স্থষ্টি। সে সব দেশেও এমন সকল 
ভক্ত ও সাধকদের জন্ম হয়েছে স্মৃতিরত্বরা ধাদের পায়ের ধুলো 
নেবারও যোগ্য নন। আজ তোমার ঘরে তারা প্রবেশ করলে 
তোমার ঘর গোবর গঙ্গাজল দিয়ে তুমি শোধন করে নিতে, 
কিন্তু তাই বলেই তুমি তাদের চেয়ে শুচিতর যেহেতু তুমি 
ছুঁত্মার্গে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছ, পরমার্থের খাতিরে এমন 
অহঙ্কার মনে পালন কোরো না। পৃথিবী সেই সব গ্রেচ্ছদের 
পদক্ষেপে পবিত্র হয়েছে, তাদের চরিত স্মরণ করলে অনুসরণ 
করলে পরমার্থের পথ বাধাহীন হয়। যথার্থ পরমার্থের আদর্শে 
বিচার করলে আমি অশুচি তাতে সন্দেহ নেই । তার কারণ 
এ নয় যে আমি খাওয়া ছোওয়। বাঁচিয়ে চলি নে__ তার কারণ 
আমার মন নিষ্পাপ নয়। দিনে দশবার গঙ্গাস্সান করে সকল 
প্রকার শকড়ি বাঁচিয়ে আতপ তগুল খেলেও আমি অশুচি। 
কিন্তু তবু বিধাতা আমাকে ত্যাগ করেন নি, মানুষও যে করবে 
এমন অমানুষিকতা আমি প্রত্যাশা করি নে। তুমি যেসব 
অতিসাবধানী সাধকদের কথা লেখো, বিশ্ববিধাতাঁর অধিকাংশ 
স্থষ্টি ধাদের কাছে বর্জনীয়, তারা বিশ্বদেবকেও অশুচি বলে 
জেনেছেন ও সেইভাবে ব্যবহার করেছেন এতবড়ো পারমাথিক 
অশুচিতা কিছু কি কল্পনা করা যেতে পারে । 

আমার সময় নেই অথচ এসব প্রশ্ন উঠলে চুপ করে থাকা 
আমি অকর্তব্য বলে মনে করি। তোমাকে গীড়! দিতে ছুঃখ 
পাই তবুও সত্যের অপমান চুপ করে স্বীকার করতে পারি নে। 

তীর্থসংস্কার সম্বন্ধে যা কিছু লিখেছ তা আমি মানি । কিন্ত 


১৫৬ 


দেশের লোকের অন্তরে যে তামসিকতা৷ যে মলিন্তা আছে তীর্থে 
তাই ব্যক্ত না হয়ে থাকতে পারে না। আমর! সংস্কার মানি 
সত্যকে মানিনে বলেই সব্বত্র এত বাহা আচার এবং আন্তরিক 
নোংরামি । আমাদের পৌরুষহীন কর্মহীন ভাবরসাবেশে সর্বদা 
বাম্পাচ্ছন্ন ভক্তি কেবল আপনার ভাববিলাসিতাপরিতৃপ্তির জন্যে 
নিজেকে বিহ্বল করেছে, সে মানুষকে চেয়ে দেখে না, ঠেকিয়ে 
রাখে ; মানুষের মূঢ়তা মলিনতা৷ দূর করবে কি মাটিতে গড়াগড়ি 
দিয়ে অশ্রুবর্ণ করে। নিজের শুচিতারক্ষার আগ্রহে তার! যদি 
মানুষকে দূরে রাখে তবে সেই সব মানুষের কলঙ্কগুলো৷ জমে 
উঠ্‌বে না কেন? যখন তা চোখে পড়ে তখন তারা নিজের 
পবিত্রতাবোধের খাতিরেই নাসাকুঞ্চন করে কিন্তু সেই সব 
মানুষের পরিত্রাণের কথা ভাবে কি? 
আমার আর সময় নেই । ইতি ৪ অগস্ট ১৯৩২ 
দাদ। 


নি 9 


[ ৫ অগস্থী, ১৯৩২ ] 


৫9৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

কিছু মনে কোরো না। আমরা কবিরা খামখেয়ালি 
মেজাজের মানুষ__ হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠি কিন্তু সেটা অত্যন্ত 
অস্থায়ী। তোমাকে দুঃখ দিয়েছি সেটা আমার একটুও ভালো 


১৫৭ 


লাগচে না । যদি সাস্তবনা দেবার শক্তি থাকত তো দিতুম | তুমি 
নিশ্চয় জেনো আমি যদি তোমার প্রতি নির্দয়তা করে থাকি 
সেটা বিবেচনা না করে কবৌঁকের মাঁথায়। এই আঘাত এখন 
আমাকে ফিরে লাগচে। 

কাল সন্ধের সময় ইউনিভসিটি থেকে নিমন্ত্রণ সেরে 
বরানগরে মহলানবিশদের বাড়িতে যাব ছুই তিন [ “দিন? ] 
থাকব। তার পরে ১১ই অগষ্ট তারিখে জোড়ার্সীকোয় ফিরে 
আসব । বোধ হয় ১৩ই চলে যাব শাস্তিনিকেতনে | 

তোমার মন থেকে বেদন! দূর হয়েচে জানলে আমি নিরুদিগ্ন 
হব। 

দাদা 


১ 


৩১ অগস্ট, ১৪৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

অনেকদিন চিঠি লিখিনি। শরীর মন ও সংসারের উপর 
দিয়ে বিস্তর উৎপাত গেছে। সে জন্যে বিলাপ পরিতাপ করা 
আমার অভ্যাস নয়, করিও নি। কিন্ত সাধারণত, মনকে বাইরের 
নানা কর্তব্যের মধ্যে বিক্ষিপ্ত করতে এখন আর একটুও ইচ্ছা! 
করে না। যে কন্মসাধনার মধ্যে অনেকদিন মন কেন্দ্রীভূত 
তাকে কোনো কারণেই বর্জন করা দুর্বলতা এবং সেটা লজ্জা- 
জনক-_ তার মধ্যে নিবিষ্ট থাকতে হয়েছে, অথচ তার সঙ্গে 


১৫৮ 


নিঃসংসক্ত আছি। তোমার প্রতি আমার যথেষ্ট স্সেহ আছে 
তাঁর কোনে! অভাব কল্পনা কোরো না। নানা মতামত নিয়ে 
তোমার সঙ্গে অনেক তর্ক করেচি, সেও তোমাকে স্েহ করি 
বলেই । তোমার চিঠি থেকে আমার দেশের অনেক কথা জানতে 
পেরেচি-__ তার কোনো অংশ সুন্দর, কোনো অংশ নিরালোক 
এবং অনাধ্য__ সেটার সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকা সম্ভব নয় 
উচিতও নয়। সেই জন্যে তা নিয়ে আলোচন। করেচি, তোমাকে 
দলে টানবার জন্তে নয় কিন্তু কর্তব্যবোধে । আঘাত অনেক 
পেয়েছ, সে আমার ভালো লাগেনি । এ সব তর্ক এখানেই শেষ 
হোলো। ক্লান্ত লেখনীকে আর খাটিয়ে মারতে ইচ্ছা করে না। 
আমার সঙ্গে কোনো ব্যবহার করাঁর মধ্যে এহিক ও পারত্রিক 
সঙ্কোচের কারণ তোমার মনে আছে । আমি তার উপলক্ষ্য হতে 
ইচ্ছা করি নে-_ তোমাকে অকৃত্রিম শ্লেহ করি বলেই । আমার 
চিন্তার, আমার সাধনার, আমার জীবনযাত্রার পথ তোমার থেকে 
অনেক দূরে । তুমি সম্পূর্ণ তাকে বুঝতে পারবে না। তা নিয়ে 
আক্ষেপ করা মুঢ়তা। কিন্তু তৎসত্বেও তুমি আমাকে যদি শ্রদ্ধ! 
করতে পারো সে কম কথা নয়। পরলোকগত ত্রিবেদীমশায় 
আমার সেই রকম বন্ধু ছিলেন। আমার মতের জন্যে নয়, সকল 
তর্কবিতর্কের বহির্ভত মনুষ্যত্বেরই জন্যে । সেই অকৃত্রিম মৈত্রীর 
স্বাদ আমি তার গ্রীতি থেকে অন্নুভব করেছিলুম । অতএব জানি 
সংসারে সেটা ছুলভ হলেও অলভ্য নয়। তোমার ছেলেমেয়েকে 
আমার অন্তরের আশীর্বাদ দিয়ো । ইতি ৩১ অগষ্ট ১৯৩২ 

দাদা 


৯৫৯ 


৯২ 
১০ সেপ্ম্বর ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

তোমার চিঠিখানি পড়ে খুসি হয়েচি। কিন্তু বড়ো চিঠি 
লেখবার মতো! অবকাশ ও মনের স্বচ্ছন্দতা আমার এখন নেই। 
তাই সংক্ষেপে হব কথা লিখে দিচ্চি। “পরিশেষ” নামে একখান। 
কবিতার বই তোমাকে ছু দিন হোলো পাঠিয়েছি, পেয়েছ বোধ 
হয়। তুমি পড়বে বা আলোচনা করবে বলে পাঠানো নয়, 
আমার মেহের দান বলে একে তুমি গ্রহণ কোরো । সম্ভবত 
সেপ্টেম্বর মাসের শেষভাগে কলকাতায় যাব । আমাদের এখান- 
কার সঙ্গীতবিভাগের ব্যয় বহনের মত কিছু অর্থ সংগ্রহের প্রয়ো- 
জন হয়েচে তাই গান ও অভিনয়ের সাহায্যে সঙ্কল্পসিদ্ধির আশা 
করচি। 

তোমরা আমার সর্বাস্তঃকরণের শুভকামনা গ্রহণ করো । 
ইতি ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ 

দাদা 


১৯৬৩ 


নত 


১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্তু 

তুমি জিজ্ঞাসা করেছ হোমিয়োপ্যাথির ল্যাকেসিসের সঙ্গে 
বায়োকেমিক ওষুধের বিরোধ আছে কিনা । বায়োকেমিক 
পক্ষের নেই, কিন্তু হোমিয়োপ্যাথি অন্যপন্থী ওষুধের প্রতি অত্যন্ত 
ঈর্ধাপরায়ণ। সেই কারণে, আমি বোধ করি যতদিন হোমিয়ো- 
প্যাথি খাচ্চ ততদিন অন্য সব ওষুধ বন্ধ রাখাই ভালো । 


টি আমি চেষ্টা করি মনকে তার সম্বন্ধে সহজ করে রাখি । 
কারো প্রতি মনের মধ্যে বিরোধ জমিয়ে রাখতে অত্যন্ত 
লজ্জা বোধ করি-__ আমি জানি সেট। আত্মাবমাননা । কিন্তু 
মানুষের অহমিক! প্রবল, সেখানে নিরন্তর আঘাত লাগ্লে 
মনকে শান্ত রাখা কঠিন, সেই জন্যে এই সম্পকীঁয় প্রসঙ্গ থেকে 
মনকে সরিয়ে রেখে দিই | যেটা যথার্থ ক্ষোভের বিষয় সেটা 
এই যে, আমার দেশে আমার নিন্দার ব্যবসায়ে জীবিকা ভালো 
চলে, বুঝতে পারি আমার সম্বন্ধে তীব্র বিদ্বেষ কতদূর পরিব্যাপ্ত 
হয়ে আছে আমার দেশে । আমার প্রতি আঘাত, আমাকে 
অবমানন। দেশের লোককে কতই কম বেদন! দেয়। ত৷ যদি না 
হোত তাহলে আমার বিরুদ্ধে নিন্দার পণ্য এত লাভজনক হোত 
না। এটাকে জেনে নিয়ে শাস্তভাবে স্বীকার করে নেওয়াই 
ভালো । আমাকে আঘাত করা দেশের লোকের পক্ষে এত 


৯1১১ ১৬১ 


নিম্মমভাবে সহজ হয়েচে সেটা হয়তো আমার পক্ষে গৌরবেরই 
বিষয়। আমি অত্যরক্ষার দিকে দৃষ্টি করেচি লোকের মনরক্ষার 
দিকে নয়। বিধাতা আমাকে যত প্রশ্রয় দিয়েচেন এমন অতি 
অল্প লোককেই দিয়েচেন, অতএব আমার পক্ষে নালিশ শোভা 
পায় না। এসব কথার আলোচন! ভালে নয়, এতে আত্মলাঘব 
ঘটে। | 
আমাকে তুমি যদি সর্বদা জানবার অবকাশ পেতে তাহলে 
আমাকে কঠোরগস্ভীর মানুষ বলে ভয় করতে না, এবং পাছে 
আমি কিছু মনে করি বলে এত বেশি সাবধান হতে না। আমাকে 
দুর থেকে নানা লোকে নানা রকম মনে করে নেয়, তার একটা 
কারণ, আমার নানা অংশকে মিলিয়ে সমগ্র করে দেখবার 
অবকাশ সকলের ঘটে না । আর যাই হোক আমি ভয়ঙ্কর নই। 
ইতি ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ 
দাদা 


৯6 
১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ 
ও 

কলাণীয়াস্থ 

তোমার চিঠি পড়ে বিস্মিত হলুম। এত অত্যন্ত উদ্বেজিত 
হবার কী কারণ ঘটেচে বুঝতে পারলুম না। তোমার সম্বন্ধে 
কোনো কঠোরতা কোনো নিষেধ আমার মনে নেই, আমার 
ভাষায় কি করে তা প্রকাশ পেতে পাঁরে ভেবে পাচ্চি নে। 


৯৬২ 


আমার সন্দেহ হয় তোমার শরীরের অন্বাস্থ্য তোমার মনকে 
বিকল করেচে। অথব! হয় তো৷ তোমার প্রতিবেশীর ছোয়াচ 
লেগে থাকবে । সহজ সম্বন্ধের বিপধ্যয় আমার জীবনে বারবার 
অকাঁরণেই ঘটেচে-_ পুনশ্চ ঘটা অসম্ভব নয়। আমার এ বয়সে 
সে জন্য মনকে উদ্দিগ্ন কর। কিছু নয়। স্বভাবতই আমার প্রতি 
তুমি যে রকম ব্যবহার রক্ষা করতে ইচ্ছা করো, তাই কোরো, 
যেখানে তোমার বাধা সেখানে টানাটানি কোরো না। যাই 
করো, আমার সম্বন্ধে কোনে৷ কাল্পনিক অভিযোগ মনে পোষণ 
কোরো না । আমার মধ্যে এমন কিছু সুর থাকতে পারে যেটা 
স্বতই তোমাকে গীড়ন করে, সেটা অবশ্যই দুঃখের কারণ, কিন্তু 
তা অনিবাধ্য । তোমার প্রতি আমার ন্সেহ আছে বলেই সেটুকু 
স্বীকার করে নিয়েও ধৈর্য্য রক্ষা করা চলে । যাই হোক এ সকল 
কথ যুক্তির কথা নয়, অভিরুচির কথা, সুতরাং এ নিয়ে বোঝা- 
পড়ার চেষ্টা করা বৃথা । ইতি ৩০শে ভাদ্র ১৩৩৯ 


দাদা 


চি: 


[২ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ ] 


ঠ€ 


কল্যাণীয়ান্তু 


রঃ সঙ্গে তোমাদের মেলামেশ! আছে বলে 
আমি বিরক্তি বোধ করি এমন জন্দেহমাত্র আমার পক্ষে 
অগৌরবের কথা । তোমার পুর্ব চিঠিতে হঠাৎ অত্যন্ত উত্তেজন! 


১৬৩ 


দেখেই মনে করেছিলুম, আমার সম্বন্ধে লোকের অকারণ 
দ্রোহভাব পূর্বেও বারম্বার দেখেছি আবার বুঝি তারই লক্ষণ 
দেখা গেল সেই কথাই বলেছিলুম । আমার বন্ধু --. -** *** 
2০ ০৩22: রও ঘনিষ্ঠ বন্ধু এমন কি আমার দৃঢ় বিশ্বাস :-" "7 
১০৯ ০৭৭ কে তিনি আমার বিরুদ্ধে গোপনে উত্তেজিত করতে 
সহায়তা করেন। ও তাতে আনন্দ বোধও করে থাকেন। সে 
জন্যে আমি যদি ** **. র সঙ্গে সম্বন্ধ ত্যাগ করতুম-_ তা হলে 
তাঁর চেয়ে লজ্জার কথা আমার পক্ষে কিছু হতে পারত না। 
০০০০৭ র সমাজমতের সঙ্গে আমার বিরোধ থাকাতে তিনি নিশ্চিত 
বিশ্বাস করেন যে আমি হিন্দুসমাজের শত্রু অতএব কঠিন 
শাস্তির যোগ্য-_ অতএব সেই শাস্তির ব্যবস্থা করা তিনি কর্তব্য 
বলেই মনে করেন। শাস্তির প্রণালী ও রুচি সম্বন্ধে মানুষের 
স্বভাব ও শিক্ষা দায়িক-_ সে জসন্বন্বেও আমার আদর্শের 
সঙ্গে তাদের মিল না থাকতে পারে কিন্তু তাই নিয়ে যদি 
আমি বিবাদ করতে পারি তবে সেইটেই যথার্থ গ্লানির 
বিষয় হোতো। | +- ০১. কল্পনা করচেন তার লেখনী দেশের 
লোকের মনে আমার বিরুদ্ধে স্থায়ী অবজ্ঞা স্থষ্টি করতে পারে। 
যদি তা যথার্থই সন্তব হয় তবে সেটা স্বীকার করে নেওয়াই 
ভালো । বুঝে রাখা ভালো আমার দেশের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ 
কি। সেটাতে আমার যথার্থ কোনো লাঘবতা নেই। আমার 
রচনায় যদি কোনো! গুণ থাকে সেটা ..* *** বাআর কারো 
মতামতের উপর নির্ভর করে না! সেটা আমি নিশ্চিত জেনে 
নিশ্চিন্ত থাকতে পারি । এ কথাও আমি নিশ্চিত জানি যে 


১৬৪ 


বলাকা পূরবী প্রতৃতি আমার আধুনিক রচনা -** *.. যে 
সত্যই ভালোবাসেন না তা নয়-_ তিনি যে চক্রান্তের মধ্যে 
আছেন তাতে সহজ মনে আমার এখনকার কিছুই ভাঁলো 
লাগবার আন্তরিক স্বাধীনতা নেই । আমি তা নিয়ে যি রাগ- 
রাগি করি তবে সেইটেই আমার শাস্তি । 
কলকাতায় শীত্র যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইতি ৪ 
আশ্বিন ১৩৩৯ ] 
দাদা 


৯৬ 


২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

যাদের তোমরা অক্ত্যজ বলে। তাদের নিম্মল ও শুচি হবার 
উপদেশ দিতে আমাকে অনুরোধ করেচ। করতে পারি যদি 
তুমি নিশ্চিত করে বলতে পারো যে অন্তজাতীয় যারা ঠাকুরের 
দর্শন স্পর্শন ও সেবার অধিকারী তারা সকলেই নিশ্মল নিরাময়, 
তাঁরা অস্ত্যজগমন করে না, তাদের কারো দুষ্ট ব্যাধি নেই, 
অন্তরে বাহিরে তারা সকলেই বা অধিকাংশই শুচি-_ তারা৷ 
মিথ্যা! মকর্দমা করে না, তারা অকপট । তার! মন্দিরে প্রবেশ 
করলে দেবতা যদি অশুচি না হন, শত শত বৎসর তাঁদের 
সংস্রবেও যদি তাদের দেবত্বে কোনো সঙ্কোচ না ঘটে থাকে, 


১৬৫ 


তবে কেবল জন্মগত হীন্তাই কি তাদের অসহ্া। দেবতা কি 
কেবল তোমাদেরই দেবতা, তোমাদের বিষয়সম্পত্তির মতো । 
দেবতা সম্বন্ধে এমন ধারণার মতো দেবতার অপমান আর কিছুই 
হতে পারে না ভারতবর্ষে দেবতা অপমানিত এবং মানুষ 
অপমানিত । ইতি ৮ আশ্বিন ১৩৩৯ 

দাদ! 


ন্প 


১ অকরৌবর ১৯৩২ 


ঠে 


কল্যাণীয়াস্থু 

তোমার চিঠি প্ড়ে আমি অত্যন্ত ছুঃখ বোধ করি। তোমার 
বুদ্ধিকে আমি কেবলি গীড়ন করচি। তোমার স্বভাবে তুমি 
স্বচ্ছন্দে বর্তমান থাক, তাতে আমি লেশমাত্র আপত্তি "বোধ 
করব না । তোমাঁর মন ক্লিট হয়েচে বলেই তুমি আমাঁকে অসম্ভব 
রকম ভূল বুঝচ। শিবারামের গল্প লেখবার সময় তোমার কথা 
আঁমার সুদূর কল্পনাতেও ছিল না পরিচয় পত্রে কোন্‌ 
কবিতার মধ্যে তোমার প্রতি আঘাত প্রচ্ছন্ন আছে বহু চিন্তা 
করেও বুঝতে পারলুম না। কালের যাত্রায় তোমার বণিত 
ব্রাক্মণকন্যার ওষুধের গুণের কথাটা ব্যবহার করেচি কিন্তু সে তো 
তোমাকে পীড়। দেবার জন্যে নয়, আমাদের দেশের বিশ্বাস- 
মোহের দৃষ্টান্ত দেবার জন্যে । কিন্তু.তাতে যদি তোমাকে ছুঃখ 


১৬৩৬ 


দিয়ে থাকে তবে আমাকে ক্ষমা কোরো । এ কথা নিশ্চিত জেনো 
যে তোমাকে ইচ্ছা করে বেদনা দেব বা বিদ্রপ করব এ আমার 
দ্বারা হতেই পারে না। পরিচয়ের কোন্‌ কবিতায় তুমি ক্ষুব্ধ 
হয়েছ আমাকে জানালে আমি বুঝতে পারব কি ভাবে আমাকে 
সতর্ক হতে হবে। 
শরীর ক্লান্ত এবং নানা চিন্তায় মন ভারগ্রস্ত। ১ অক্টোবর 
১৯৩২ 
দাদা 


ঞ৮ 


২ অক্টোবর ১৯৩২ 


ঠ 


কল্যাণীয়াস্ু 

তোমার কয়েকটি চিঠি পড়ে দেখ্লুম । আমার সঙ্গে মতান্তর 
নিয়ে তোমার মন অত্যন্ত অশান্ত হয়েচে। কোনো উপায় নেই, 
কারণ মত তে! গায়ের চাদর নয় যে, কাউকে খুসি করবার জন্যে 
বদল করা চলে । বুঝতে পেরেছি তোমার মন এমন অবস্থায় 
এসেছে, আমার সম্বন্ধে তোমার সহিষ্ণুতা বেশিক্ষণ টি কবে না” 
ভুল বুঝতে আরম্ত করেছ শেষকাঁলে সম্পূর্ণ উল্টো বুঝবে, তার 
পূর্বেই সম্পূর্ণ স্তব্ধ হওয়াই ভালো । স্নেহের বন্ধনকে বিরক্তিতে 
নিয়ে যাওয়া শ্রেয় নয়।__ ছুই একটি কথা পরিষ্ষার করে দিতে 
চাই, আর কেউ হলে কোনো কথাই বলতেম না ।__ 


১৬৭ 


তুমি সাম্যতত্ব নিয়ে আমাকে খোঁটা দিয়েচ । আমি সাম্য- 
নীতির চূড়ান্তে উঠেচি এমন অহঙ্কার কখনো করি নে, কিন্তু তাই 
বলেই যতটা পারি তাও ত্যাগ করতে হবে একে স্ুযুক্তি বলে 
না। আমি মানুষটা স্বল্পাশী, জানি ভূরিভোজন মনের শক্তি হাস 
করে; জনরব এই যে কোনো একজন পওহারী বাবা না খেয়ে 
সাধনা করেন। তুমি যদি বলো, আপনি যখন পবন আহার 
করে থাকতে পারেন না তখন স্বল্লাহারের বড়াই করেন কেন-_ 
এমন খোচা চুপ করে স্বীকার করে নিলেও অগৌরব হবে না। 

২৩০০৩ পরিবারের সঙ্গে তোমাদের সখ্য হয়েছে বলে 
তুমি যখন আমার অগ্রীতি কল্পনা করেছিলে তখন বলেছিলেম, 
আমার মনের এমন বিকার যদি হোত তাহলে লঙ্জিত হতুম। 
আমি কখনো! বলিনে যে বিনা কারণে বিনা আমন্ত্রণে অতিশয় 
ওদার্যযের গরিমা দেখাবার জন্যে তার বাড়িতে হঠাৎ গিয়ে পড়বার 
জন্যে আমার ব্যগ্রতা আছে। যদি শ্রদ্ধার সঙ্গে সে আমাকে 
নিমন্ত্রণ করত তবে নিশ্চয় যেতুম__ না করলেও অকস্মাৎ তার 
ওখানে না যাওয়াকে যদি তুমি আমার ছূর্ববলতা বল তবে 
নিঃসন্দেহ স্বীকার করব সে দুর্বলতা আমার আছে, কিন্ত 
তোমাঁদের সঙ্গে তাদের সম্প্রীতি ঘটেচে বলে তোমাদের প্রতি 
বিমুখ হব সে ছূ্বলতা আমার নেই। পূর্ব্বটা আছে বলেই এটাও 
আমার থাক! উচিত ছিল এই যদি তোমার মত হয় তাহলে 
তোমার সঙ্গে আমার মতের মিল হবে না এর বেশি আর কি 
বলব । 

কিন্ত এর চেয়ে আরো আশ্চর্যের কথা তোমার চিঠিতে 


১৬৮ 


আছে। রাজেন্দ্রলাল স্ট্রাটে তোমাদের বাড়িতে কেমন বেড়িয়ে 
আসতে পারি তাই তুমি দেখতে চাও । আমার বন্ধু ও পরিচিত- 
দের মধ্যে উচ্চপদস্থ ব্যক্তি অতি অল্পই আছে । ধাঁদের বাড়িতে 
আমি অবাধে যাই তারা ধনে মানে তোমাদের সঙ্গে তুলনীয় 
নন। আর ধারা অবাধে যখন তখন আমার ঘরের মধ্যে প্রবেশ 
করেন তাদের মধ্যে নগণ্যের সংখ্যা কম নয়-_ আমার সময় নষ্ট 
হয়, কাজের ক্ষতি হয় স্বাস্থ্য পীড়িত হয় নিতান্ত অসাধ্য না হলে 
পদের অভিমানে তাদের প্রত্যাখ্যান করিনে। এটা খুব বেশি 
কথা নয় এবং এই নিয়ে আমি যশোলাভ করবার দাবী রাখি 
তা মনে কোরো না। সাম্যতত্ব প্রচারের খাতিরে অকস্মাৎ 
তোমাদের বাঁড়িতে উঠে সবাইকে সচকিত করে দেব এমন 
আশঙ্কা মনে রেখো না। 

আর একটা খোট! ইঙ্গিতে দিয়েছ সে সম্বন্ধে কোনো কথ 
বলা আমার পক্ষে আরো! কঠিন। তুমি লিখেচ দরিদ্র ও 
অস্পৃশ্তদের আধিক সহায়তার জন্য ধারা স্বার্থত্যাগ করেচেন 
তারা সাহিত্যিক নন, তারা ধনী নন, তারা অমুক অমুক অমুক। 
আমি কিছু করেছি কিনা তার হিসাব তোমার কাছে দিতে 
চাই নেকিস্তঘদি এক পয়সা ব্যয় নাও করে থাকি তাই বলেই 
কি যেটা উচিত সেটাকে উক্ত করতেও পারব না? আমি 
পাড়ায় পাড়ায় আগুন নিবিয়ে বেড়াই নে, চেষ্টা করতে গেলে 
পারিও নে, তাই বলে কি তুমি আমাকে লিখতে দেবে না যে 
লোকের ঘরে আগুন দেওয়া অন্যায় । আমি যে সকল কাজ 
করে থাকি যারা তার কোনো খোজ রাখে না, তারা আমার 


১৬৯ 


কাজের খোট! দিয়ে থাকে, বাঁডালীর মধ্যে জন্মেছি বলে আমার 
এই ছুর্ভাগ্য। তুমিও খোঁটা দিতে যদি সুখ পাঁও তাতে ক্ষতি 
নেই, কিন্তু তবুও মনের মধ্যে এইটুকু সংশয় রেখো যে, সব খবর 
হয় তো তোমার জান! নেই, এবং জানবার জন্তাবনামাত্র নেই। 
বস্তুতই আমি তোমার অপরিচিত অতএব বিচার করবে কেমন 
করে-__ কিন্ত তাই বলেই যে অবিচার করবে সেটা কেবল 
আমার সম্বন্ধে কেন কারো সম্বন্ধেই ভালো নয়। তোমার সঙ্গে 
আমার মতের অনৈক্য হওয়াকে যদি অপরাধ বলে গণ্য করো 
তবে সেই স্বত্রে আমার প্রতি কাল্পনিক অপরাধ আরোপ করা 
ন্যায়সঙ্গত হবে না। 

মহাত্মাজি সন্বন্ধেও তুমি কিছুই জানো না, আমি ঘনিষ্ঠভাবে 
জানি-_- তিনি আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো । তোমার সঙ্গে 
কোনে! কোনে বিষয়ে তার মতের মিল নেই বলেই তার প্রতি 
অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা শ্রদ্ধেয় নয়। এ ক্ষেত্রেও তোমাকে বলি 
মনকে এই বলে নম্র কোরো, “আমি হয় তো! তাকে জানি নে, 
জানা আমার সাধ্যের মধ্যে নয়, অতএব নীরব থাকব ।” 

আর আমি কৈফিয়ৎ দেব না । তোমার মন উদ্বেজিত হয়েছে, 
এ অবস্থায় বাদপ্রতিবাদে স্বকল ফলে না । আমারও অবকাশের 
একান্ত অভাব । অতএব তর্কবিতর্ক না করে সম্পূর্ণ নীরব হওয়াই 
নিরাপদ । ইতি ২ অক্টোবর ১৯৩২ 

দাদা 


৯ 


১৩ অক্টোবর ১৯৩২ 


ঠেৎ 


কল্যাণীয়াস্ 

যাঁরা নিজেকে ধর্দমকন্ম্ের পুতুল করে তোলে তারাই আম্ম- 
ঠাঁনিক অভ্যাসের প্রতিদিন পুনরাবর্তনের দ্বার! নিজের শুন্ততাকে 
ভরাট করে মনে করে জীবন সার্থক হোলো । যে সকল ক্রিয়া 
কর্মে বুদ্ধির অন্ধতা এবং হৃদয়ের জড়তা, সেই সমস্ত নিরর৫থকতার 
জালে নিজেকে নিয়ত জড়িয়ে রাখা ভূলিয়ে রাখার মত ছুর্গতি 
আর নেই । এই সমস্ত চিত্তহীন আচারে জীবন অসাড় হয়ে 
যায়। এই অসাড়তায় সুখ দুঃখের বোঁধকে কমিয়ে দেয় বলে 
অনেকে একে শান্তি বলে ভম করে । কী হবে এই নিজ্জবিতার 
শান্তি নিয়ে। 

তুমি তোমার অতৃপ্ত হৃদয়কে পুর্ণতা দেবে বলে ঘুরে 
বেড়িয়েছ, আজও শান্তি পাও নি। যার মন সজীব, যে চিন্তা! 
করতে পারে, ভালোবাসতে পারে, সেকি দিনের পর দিন অনু- 
ঠানের কলের চাকা ঘুরিয়ে বাচে। মনুষ্যত্বের বিচিত্র প্রবর্তনাকে 
অন্ধ অভ্যাসে সন্ীর্ণ করে আনাকে অনেকে ধর্ম্মসাধনা বলে, 
মানবস্বভাবকে খবর্ব করা পঙ্গু করাকেই মনে করে সাধুতা। 
জীবনকে এমন অকৃতার্থ করাই যদি বিধাতার অভিপ্রেত হোত 
তবে তার স্থষ্টিতে এত আয়োজন কেন? জ্ঞান প্রেম ও কর্মের 
মধ্যে নিজেকে বড়ে। করে পাওয়ার মধ্যেই মুক্তি। জ্ঞান প্রেম 
কর্মের পরিধিকে ছেঁটে ছোটো! করে আত্মোপলব্ধির ক্ষেত্রকে 


ন5 


অপ্রশস্ত করা আত্মহত্যার রূপান্তর । সংসারের খীচায় যাঁরা কষ্ট 
পাচ্চে ধন্মের খাঁচা বানিয়ে তারা নিষ্কৃতি পাবে এ কখনো 
হয় না-_ মাদকসেবীর মতো। তারা অচেতনতাঁর মধ্যে পালিয়ে 
রক্ষা পেতে চায়, অর্থাৎ তার মরে? বাঁচতে ইচ্ছা করে। এক 
রকম আধমরা স্বভাব আছে তাদের পক্ষেই এটা সম্ভব, কিন্তু 
যাদের হৃদয় বুদ্ধি সজীব সচল, নিজেকে বলপুর্র্বক আড়ষ্ট করে, 
তারা কখনোই সুখী হতে পারে না। একদিন আশ্রমে তুমি 
আনন্দ পেয়েছিলে,__ নিজেকে কৃত্রিম নিয়মশৃঙ্খলে বেঁধেছিলে 
বলে' সে আনন্দ নয় তোমার হৃদয় পূর্ণতার তৃপ্তি পেয়েছিল 
বলেই সে আনন্দ-_- সে একটা সত্য পদার্থ, সে বানানে 
জিনিষ নয়। তোমার সেই তৃপ্তির উৎসটাই আজ পাঁথরচাঁপ। 
পড়েছে, তাই বলেই সেই পাথর নিয়েই তুমি বাঁচবে কি? যারা 
সেই রুদ্ধ উৎসকে ভূলে কেবল পাথরকে সি'ছর মাখিয়ে ঘণ্টা 
নেড়ে সময় কাটাতে অন্তরে বাধা পায় না, তারা তোমার 
অসন্তোষের চাঞ্চল্য দেখে তোমাঁকে অবজ্ঞা করে, বস্তুত তাদেরই 
সন্তোষের স্থাবরতা অবজ্ঞার বিষয় । 

তোমার প্রশ্ন এই, কি করে জীবন সার্থক হবে। কি উত্তর 
দেব ভেবে পাই নে । আমাদের দেশে মেয়েদের জীবনক্ষেত্র বেড়া 
দিয়ে খাটো করা, তার মধ্যে মানুষের চিত্ত সব খোরাক পায় না, 
উপবাসী থাকে । স্ুবিধা এই, অধিকাংশ মানুষ সন্কীর্ণ সীমার 
উপযুক্ত হয়েই জন্মায়, যাঁদের ডানা নেই আকাশের অধিকার 
হারালেও তাদের চলে। ঘরকন্নার সঙ্কীর্ণতা বা ধন্মাচরণের 
সঙ্কীর্ণতা সে সব মেয়েদের মনকে বঞ্চিত করে না। বরঞ্চ তার 


১৭২ 


এই নিয়ে খেলাচ্ছলে একরকম আরাম পাঁয়__ তাদের কোনো 
নালিষ নেই। তোমার হৃদয় মনকে অত সহজে শিকল পরিয়ে 
তুমি দমিয়ে রাখতে পাঁরচ না, তাই কষ্ট পাচ্চ। তোমার এই 
সঙ্কীর্ণ অবস্থায় থেকেও তুমি মুক্তির আস্বাদ পেতে পারতে যথেষ্ট 
পড়াশোনায়, এবং রচনার মধ্যে । বহির্জগতের স্বাধীনতা, যা 
তোমার নিজের ছেলের আছে, তা তোমার নেই,_- মানুষের এই 
মস্ত অধিকার থেকে তুমি বঞ্চিত। কাজেই অন্তুর্জগতের মধ্যে 
সঞ্চরণের স্থান প্রশস্ত কর! ছাড়া আর তো কোনে উপাঁয় নেই । 
নিজের মধ্যে স্থষ্টি করে” সেটাকে সত্য করে তুলতে পাঁরো যদি 
তবে তাতেই পাবে আনন্দ। নইলে খাঁচার শলাগুলোতে 
কেবলি ডান! ঝাপটা মেরে কী লাভ । --আমার কথ! যদি 
বলো, সংসারে আমার হুঃখ শোক অভাব অতৃপ্তি কম নয়-_ কিন্তু 
জগতে চারদিক থেকে আমি খোরাক সংগ্রহের রাস্তা রেখেছি, 
আমার চিত্তের গনুক্য কোনোদিকেই বাধাগ্রস্ত হয় নি।__ 
তুমি একটি বিশেষ পথ দিয়ে হৃদয়ের চর্চা করেছ _সেই 
পথটিই তোমার পক্ষে সহজ । সেই পথে তোমার প্রধান 
আশ্রয়কে হারিয়েচ । অন্য পথ তোমার অনভ্যস্ত, হুর্গম, হয়তো 
বা তোমার স্বভাববিরুদ্ধ । তাই মনে হয় যে সব বৈষ্ণবশান্ত্রে 
তোমার মন রস পেতে পারে তার মধ্যে একান্তভাবে মগ্ন হতে 
পার কি? 
বারবার বলেচি গুরুর পদ আমার নয়। আমি কবি, 
নানাভাবে নানা দিকে আমার মন সঞ্চরণ করে-_ আমার 
খবভাঁবের বৈচিত্র্যবশত নিজেকেও নিজে বুঝি নে, অন্যেও 


১৯৭৩ 


আমাকে বোঝে না । আমার প্রধান সার্থকতা সব কিছু প্রকাশ 
করা-_ বাণীর দ্বারা করেচি, কন্মের দ্বারাও করচি । মনে কোরো 
না, আরামে রকুরতে পেরেছি, দিতে হয়েচে অনেক, কষ্ট ও 
অপমান সয়েচি যথেষ্ট, নিজেকে প্রায় নিঃস্ব করেছি-_ কিন্তু 
ছুটি পাব না কোনোদিন, কেননা এই আমার স্ভাব। ইতি 
২৭ আশ্বিন ১৩৩৯ 
দাদা 
রর 
১৮ অক্টোবর ১৯৩২ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ু 

এবারকার ছুটি আমার জন্যে অবকাশ নিয়ে আসে নি। 
নানা কাজে ও অকাজে দিনগুলো ঠাসা । তাঁর উপরে, অনেক 
লোক যাঁর! অন্থাত্র ছুটি পেয়েচে তারা আমার ছুটির উপর এসে 
ভিড় করচে। এখান থেকে পালাব স্থির করেছি । কিন্তু প্রবাদ 
আছে টেঁকির স্বর্গপ্রাপ্তি হলেও তার ধান ভানারও গতি হয় 
তার সঙ্গে এক লোকে । জরুরি কাজ আছে অতএব একটু ফাকা 
কোথায় পাওয়া যায় খুঁজে বের করতেই হবে। এ চিঠিতে 
বলিদান কিম্বা অন্য কোনে! আনুষ্ঠানিক বিষয় নিয়ে তর্ক করতে 
চাই নে, কারণ সময় নেই। সংক্ষেপে কেবল এই কথা৷ বলে রাখি 
মানুষ অনাচার করে বলেই দ্রেবতার পরেও অনাচার আরোপ 
তার পক্ষে অন্যায় নয় এই যদি প্রশস্ত মত হয় তবে দেবতার 
পুজায় নিজেকেই পুজা করবার রূপান্তর করা হয়। মানুষের চেয়ে 


৯৭৪ 


দেবতা যদি বড়ো না হন, তাহলে দেবতায় কাজ নেই, মানুষই 
যথেষ্ট । থাক্‌ ও জব কথা । 
যদি খড়দয় গিয়ে কিছুদিন আশ্রয় নিই তাহলে তোমার 
সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তো অসম্ভব হবে না। তোমাদের সঙ্গে আমার 
আচারের মিল নেই বলেই অন্তরের মিল হতে পারে না এমন 
আশঙ্কা করি নে। নিশ্চয় তুমি আমাকে সহ্য করতে পারবে 
যদি আচার দিয়ে আমার যাচাই না করে হৃদয়ের দিকে আমার 
মূল্য নিরূপণ করো । বাইরের দিককার কৃত্রিম অভ্যাস ও 
ব্যবহারকেই প্রধান করে যদি আমরা সত্যকার মনুষ্যত্বের 
মূল্য খর্ব করি তাহলে কোনোদিন আমাদের বিরোধ মিটবে 
না। মানুষ আচারের চেয়ে বড়ো, মুখোষের চেয়ে মুখ যেমন 
বড়ো, সংহিতাকারের চেয়ে বিধাতা! যেমন বড়ো । ইতি ১ 
কাত্তিক ১৩৩৯ 
দাদ] 


১০১ 


২১ অক্টোবর ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

আমার স্বভাবের অনুবর্তন করে এসেচি বলেই আমার দেশ 
আমাকে প্রসন্মমনে গ্রহণ করতে পাঁরচে না এই কথাই তোমার 
চিঠি থেকে বুঝতে পারি। পাঁচজনে আমাকে যে রকমটি হতে 


৯৭৫ 


বলে আমি যদি ঠিক সেই প্যাটাঁণ্ণে নিজেকে গড়তে পারি তবেই 
তারা আমাকে ধন্য বল্বে এ কথাটা একদিক থেকে এতই সহজ 
যে আমি তা বুঝতে পারি, আর একদিক থেকে তা এতই কঠিন 
যে আমি তা মানতে পারি নে। আমার বয়স যখন আঠারো, 
তখন আমি প্রচলিত পয়াঁর প্রভৃতি ছন্দ ত্যাগ করে নিজের 
ইচ্ছামতো ছন্দে কবিতা লিখতে সুরু করেছিলুম । আমার সেই 
ছন্দের কাব্যকে তৎকালীন সাহিত্যের প্রবীণ মুরুব্বিরা “কাব্যি” 
বলে প্রচণ্ড বিদ্রপ করেছিলেন । অনেকদিন পধ্যস্ত সেই অবজ্ঞা 
চলেছিল । তখন আমি যদি 
আবার গগনে কেন স্ুধাংশু উদয় রে__ 
অথবা কোথা যাও ফিরে চাও সহম্রকিরণ 

এই ছাদকে সামনে রেখে নিজের কবিতাকে ভদ্ররীতি দিতে 
পারতুম তাহলে নিজেকে আমি তখনকার সাধুসমাজে পছন্দসই 
করতে পাঁরতুম। ভাগ্যক্রমে ইচ্ছে করলেও আমার দ্বারা সেটা 
সম্ভবপর হতেই পারত না। আমি যখন “ম্বদেশী সমাজ” 
লিখেছিলুম তখন তৎকালীন কন্প্রেসওয়ালারা আমার উপর 
অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিলেন । বিদেশী গবর্মেন্টের সঙ্গে অনন্তকাল 
ধরে রফানিম্পত্তির কাঁজকেই তার ভারতবাসীর মোক্ষসাধন 
বলেস্থির করেছিলেন। তারা অবজ্ঞা করে বলেছিলেন বেস্থাম 
প্রভৃতি পণ্ডিতরা স্টেট সম্বন্ধে যে মত প্রচার করেছেন আমি 
অশিক্ষাবশত সেসব কিছুই জানিনে বলেই এমন কথ। বলতে 
পেরেছি যে প্রজারা নিজেদের শীসনশক্তি নিজেরাই উদ্ভাবন 
করতে পারে । আমি যদি ভালোমানুষের মতো দেশের জন- 


১৭৬ 


সাধারণকে বাদ দিয়ে ইংরেজিশিক্ষিত এবং ইংরেজ কর্তৃপক্ষের 
যুগলমিলন ঘটিয়ে তাই নিয়ে কন্গ্রেসের মঞ্চের উপর স্বেদ কম্প 
পুলক প্রভৃতি দশ দশার শান্ত্রবিহিত লক্ষণ প্রকাশ করতে 
পারতুম, তাহলে তখনকার দিনে উচু চৌকিই পেতুম। সে 
স্বযোগ গেল। কিন্তু আমার সেদিনকার কথার টুকরো নিয়ে 
পরবন্তী অনেক দেশাত্মবোধী তাদের বাণীরূপে ব্যবহার করেছেন 
এবং দেশে ধন্য হয়েছেন । বেঁচে থাকৃতে থাকতে এও দেখেচি। 
তার পর যখন জালিয়ানবাগ ব্যাপারে আমি ছাড়া আর সকলেই 
নীরব ছিলেন, দেশবন্ধু এবং মহাআআীজিও-- সে ঘটনাটাকে 
আমার সম্বন্ধে বিচার করবার হিসেব থেকে দেশের লোক 
বজ্জন করে বসে আছেন__ বহুকাল থেকে এ কথা বলতে তারা 
কুষ্ঠিত হয় নি যে দেশের স্থখ দুঃখ সম্বন্ধে উদাসীন থেকে আমি 
কেবল বিদেশের সঙ্গে সধ্যস্থাপনের জন্যে ব্যস্ত। তার! জানে 
অথবা জেনেও জানে না যে বিদেশের জনসভায় বিদেশী সভ্যতা 
সম্বন্ধে আমি যা বলে থাকি তা একেবারেই শ্রুতিস্রখকর নয়। 
দেশের যথার্থ কাজ বল্তে আমি যা বুঝি তাঁর জন্যে আমি 
নিজের প্রায় সর্ধবন্বাস্ত করেছি, কিন্ত যেহেতু দশজনের ফরমাঁস- 
মতো সে কাজ গড়া হয় নি, দেশাত্মবোধীরা কেউ তার 
ত্রিসীমানায় না এসেও দূর থেকে নিরন্তর তাকে নিন্দা করেছে 
অবজ্ঞা করেছে, বাধা দিয়েচে। তবুও আমার উপায় নেই। 
তাদের ছ্চে ঢালাইকরা পুতুল বিক্রি করে বাজারে নাম করতে 
ইচ্ছা থাকলেও সেটা আমার সাধ্যের অতীত। অতএব শেষ দিন 
পর্য্যস্ত আমার কাজ আমাকে করতেই হবে। সাহিত্যে আজও 


৯]১২ হিপ 


আমার কাব্যতরণী চালাবার জন্য আমারি মনের উনপঞ্চাশ বায়ুর 
উপর আমাকে নির্ভর করতে হয়, তার কোনো দমকা এসে আমার 
রচনাকে প্রচলিত ধারার বাইরে নতুন বাকে যদি নিয়ে যায় 
তো জানি তোমরা পাড়িতে দ্রাড়িয়ে হয়তো কর্ণধারকে গাল 
পাড়বে । কিন্তু এরকম গাল অনেক খেয়েছি, ভালো লাগে নি, 
কিন্তু বাক বদল করি নি-_- আজও অন্য পন্থা আমার সামনে 
নেই তাতে বকশিষ পাই আর ন! পাই। 

আমাকে তোমরা তোমাদের পছন্দসই হতে বলেচ, আর 
বলেচ তাতে বকশিষ মিল্বে। চেষ্টা হয়তো করতেও পারতুম 
যদি নিশ্চিত জানতুম তোমাদের পছন্দটাই ট'্যাকসই, তাতে 
আমাকে কোনোদিন ঠকৃতে হবে না । কি করে এত নিঃসংশয় 
হব বলো । অতএব নগদ বিদায়ের প্রত্যাশ! ছেড়ে দিলুম। 
এমনি করেই সত্তর বছর যদি কেটে গেল তাহলে বাকি কণ্টা 
দিনও কাটবে । আমি যা! দিতে পারি তাই দেশকে দেব, তার 
পরে রাগ করে যদ্দি ভাঙা কুলোয় আমার নামটা তোমর! বিদায় 
করো মৃত্যুর পরে সে আমাকে বাজবে না। 

২০২২ যদি আমাকে চিঠি লিখতে চাঁন নির্ভয়ে লিখতে 
বোলো আমি কখনো তাকে অসম্মান করব না। যাদের সঙ্গে 
আমার মতের মিল বা মনের মিল নেই তীদের সঙ্গে সেই 
অবশ্যস্তাবী স্বাভাবিক কারণবশত আমার ব্যবহারকে কলুষিত 
করতে আমি অক্ষম | অনেক সময় দেখতে পাই আমার সঙ্গে 
সৌহানদ্দ্যের অভাব অহৈতুক, আমার অবাধ দাক্ষিণ্যসত্বেও তা 
দূর হয় না। যেহেতু আমি অতিমানব নই সেই জন্যে সেটা 


১৭৮ 


আমাকে বেদন! দেয় কিন্তু তাই বলে আমিও বেদনা দিয়ে 
তার শোধ নিতে গ্রানিবোধ করি! দৈবাৎ কখনো যদি আত্ম- 
বিস্মৃত হই তবে লজ্জ! পাই । 

কাজের ক্ষতি করেই তোমাকে এত বড়ো চিঠি লিখতে 
হোলো কেননা আমাকে ভুল বোঝ! নিতান্তই সহজ। ইতি 
৪ কান্তিক ১৩৩৯ 


দাদ! 


১৬২ 


২৮ অক্টোবর ১৯৩২ 


৫9 


কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার চিঠি পেয়ে ছুঃখ বোঁধ করচি। তুমি কোনে! অন্যায় 
করো নি অথচ তোমাকে অপমানিত হতে হোলে! এ জন্য 
কাকে দায়ী করব জানি নে। কিন্তু এই সংশয় জালকে আর 
জটিল করে তুলে! না । আমার অনেক কাজ আছে, অবকাশও 
অল্প। তোমাদের মত বিশ্বাস নিয়ে তর্ক বিতর্ক কর! গুরুতর 
কর্তব্যের মধ্যে গণ্য করতে পারি নে। তাতে তুমি এ পধ্যন্ত ছুঃখই 
পেয়েছ সাস্তনা পাও নি। অতএব এ রকম প্রশ্শোত্তর ক্ষান্ত করাই 
শ্রেয় । 

তুমি যদি তোমার অবকাশকাল সাহিত্য রচনায় নিযুক্ত 
করো তাহলে তোমার মন ভালো থাকবে, আর তোমার 


১৭৭ 


স্বাভাবিক রচনাশক্তির ষথোচিত ব্যবহারের দ্বারা বঙ্গসাহিত্যেও 
তার ফল ফলবে। 
তোমরা আমার সব্বাস্তঃকরণের আশীর্বাদ গ্রহণ করে।। 
ইতি ১১ই কান্তিক ১৩৩৯ 
দাঁদা 


১০৩ 


৮ নভেম্বর ১২৯৩২ 


৫৫ 


খড়দহ 
কল্যাণীয়াস্ত 

বিমলাকান্তর চিঠিখানি পড়ে সুখী হয়েছি, তাকে আমার 
আশীর্বাদ জানিয়ো। তোমার মা আমাকে ভূল বুঝেচেন। 
অবশ্য ধন্মমত আমার আছে কিন্ত কোনো সম্প্রদায় আমার 
নেই। আমি নিজেকে ব্রাক্ম বলে গণ্যই করি নে। তোমার মা 
আশঙ্কা করেছিলেন, খুষ্টান মিশনারির মতে। ব্রাহ্ম সমাজের 
আড়কাটির কাজে বুঝি আমার উৎসাহ । মনে কর! অস্বাভাবিক 
নয়। কেননা দল পুষ্টি করার ইচ্ছা মানুষের মনে প্রবল, তোমার 
মায়ের মনেও সে ইচ্ছা প্রবল বলেই তিনি সাম্প্রদায়িক লোক- 
সানের ভয়েই এত অত্যন্ত বেশি উত্তেজিত হয়েছেন-__ অন্যায় 
শাসনের দ্বারাও তোমাকে ঠেকিয়ে রাখতে কুষ্টিত হন নি। 
সাম্প্রদায়িক ধন্মের ধম্মহি এই | ধর্মের ইতিহাসে সর্বত্রই সকল 
কালেই দেখতে পাই সম্প্রদায় থেকে নির্গমনপথে নির্যাতনের 


১৮৩ 


ডা 
রি 
রন 
| 
৭০ 
৮ 
বা» 






শর তত লাগাল স। ৪ আহ পত +: 









১০৯ শি্ল২ পশতি 


কাটার বেড়া অত্যন্ত নিষঠুর। সাম্প্রদায়িক অধিকার বৈষয়িক 
অধিকারেরই মতো-_ রাজার চেষ্টা প্রজাকে আপন শাসনে 
যেমন করে হোক ধরে রাখা, কেননা প্রজা যে রাজ্যের 
জম্পত্তি-_ জন্প্রদায়েরও তেমনি সম্পত্তির বোধ তীব্র। মানুষ 
সংসারআশ্রম থেকে মুক্তি কামনা করে সাম্প্রদায়িক আশ্রমে 
প্রবেশ করে কিন্তু সাম্প্রদাযিক সন্কীর্ণতার মধ্যে যে সাধুনামধারী 
বিষয়বুদ্ধি জাল পেতে আছে তার থেকে উদ্ধার করবে কে? 
ভূত ঝাড়াতে যে ওঝার শরণ নেয় তাকে যে আরো বড়ো ভূতে 
পেয়ে বমেচে ।-_ যাই হোক আমি তোমার আর কোন্‌ অনিষ্ট 
করতে পারি জানি নে কিন্ত কোনে ধন্মসন্প্রদায়ের দীক্ষা দেওয়া 
আমার পক্ষে অসাধ্য । কেননা আমি নিজেই যুথভষ্ট, আমি 
ধন্মসমাজের তক্মাঁপরা ছাপ-মারাদের মধ্যে কেউ নই, রাঁজার 
দত্ত উপাধি আমি ত্যাগ করেছি সম্প্রদায়ের দত্ত উপাধিও 
আমার নেই | 
আগামী বৃহস্পতিবার সকালের গাড়িতে শান্তিনিকেতনে 
ফিরে যাচ্চি। ইতি ১২ কার্তিক [১৩৩৯] 
দাদা 


৯৮১ 


১৪০৪ 


| শান্তিনিকেতন ] ১৩ নভেম্বর ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ 

কমলা লেকচারে নিযুক্ত হয়েছি । গাফিলি করবার জো 
নেই । বিষয়টা বিশেষ মনোযোগ করে লেখবার যোগ্য । 
সেই জন্যেই সম্প্রতি আর সমস্ত কর্তব্য পিছনে পড়ে গেছে। 

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, জোলো বাতাস বেগে বইচে পুব দিক 
থেকে, পাখীগুলে! বিমর্ষ হয়ে আছে, সামনের এ শিউলি এবংটগর 
গাছে টুনটুনি পাখীদের লীলা দেখি রোজ, আজ তার! অনুপস্থিত 
আমার উত্তর দিকের জানলার বাইরে পরিপুষ্ট ভ্যারেণ্ডা গাছটার 
শাখায় শাখায় খুব দোলাছুলি চল্চে, আর দোল! লেগেছে 
মাল্তীবেষ্টিত শিমুলগাছে, বিলিতি নিমগাছ থেকে শাদা শাদা 
ফুলগুলো ঝরে পড়চে রাস্তায়,আর টুপটাপ করে পড়চে গোলক- 
চাপা, আমার ঘরের সাঁমনে অদূরে লাল মাটির রাস্তা চলে গেছে 
বোলপুর সহরে-_ আজ রবিবার হাটবার, গোরুর গাড়ি চলেছে 
মন্থর গমনে,খড়ের আঠি মাথায় নিয়ে চলেছে সাওতাল মেয়েরা, 
গৌোঁয়ালপাড়। গ্রামের ছু চার জন গৃহস্থ মোটা চাদর গায়ে হাট 
করতে যাচ্চে ছাতা হাতে । এ এল অকস্মাৎ এক পসলা বৃষ্টি, 
মন্মরিত হয়ে উঠল আমার মধুমপ্জরীর লতামণ্ডপ-- বৃষ্টিটা দ্রুত 
চলে গেল সাদা শাড়িতে ঢাকা প্রেতিনীর মতো! মাঠের উপর দিয়ে 
পশ্চিম দিগন্তে । আজ প্রোফেসারি করবার দিন নয়-- কিন্তু দায় 
চেপেছে ঘাড়ে আজ কলমের ভার গুরুভার মনে হচ্চে তবু 


১৮২ 


টেনে চল্‌্তে হবে ।_- আমার গান তোমার ভালে। লাঁগে শুনে 
খুসি হয়েছি। আমার নিজের মন সব চেয়ে আনন্দ করে 
আমার গানগুলো নিয়ে । 
সজনীকান্ত তোমার জন্মদিনে যে কবিতা তোমাকে দিয়েচে 
সেটা পড়ে ভালো লাগল । আজ আর সময় নেই। ইতি ২৭ 
কার্তিক ১৩৩৯ 
দাদ! 


৯০৫ 


[ শান্তিনিকেতন |] ১৪ নভেম্বর ১৯৩২ 


ঠে৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

আমি কি আজ পধ্যন্ত কাউকে ভিতর থেকে আলো দিতে 
পেরেছি? আমি কি রকম জানো, যেন ক্রধ্যরশ্মিতে উদ্দীপ্ত 
অগ্রিবর্ণ সন্ধ্যাবেলাকার মেঘের মতো । সে আলো! চোখে দেখতে 
পাবে, ভালো লাগ্বেও হয়তো,_ কিন্তু রাত্রের অন্ধকার পথে 
চলবার জন্যে তার থেকে কেউ কি আলো সঞ্চয় করতে পারবে, 
কেউ কি জ্বালাতে পারবে আপন ঘরের প্রদীপ? বাহির থেকে 
দেখে মনে হতে পারে আমার কাছে চেয়ে নেবার জিনিষ কিছু 
আছে, যদি বা! থাকে দেবার যোগ্যতা কই । যাঁরা দেবার মানুষ 
তারা চুপ করে থাকেনা, তার! মানুষকে ডাক দিয়ে বলে, এসো 
আমার কাছে, নাও আমার হাত থেকে, না দিয়ে তাদের জো 
নেই । তার! সেই শ্রাবণের মেঘ, অজজ্র বর্ষণ করেই যার মুক্তি। 


১৮৩ 


আমার চিন্তাও হয়তো! তাঁদের মতো। কখনে। কখনো আকাশে 
সঞ্চরণ করে, কিন্তু সে যেন শরতের মেঘ, কখনো কখনো 
দিগন্তে করে আনাগোনা-- নানা রঙ লাগে তাতে, স্ধ্যোদয় 
স্ধ্যাস্তকে মে অভিনন্দন করে নান! সমারোহে, কিন্তু চাতক 
যখন বলে জল দাও তখন সে লজ্জিত হয়ে শূন্যে মিলিয়ে 
যায়। আমাকে আমার বিধাত। এই ফরমাসই করেচেন, তার 
বিশ্বোৎসবে শোভাযাত্রায় সাজসজ্জার কাজে লাগব, শানাই 
বাজাব, পতাকা দোলাব, কখনো কখনো জগবম্পও হয়তো 
বাজাতে পারি, কিন্তু দাঁনদক্ষিণার ভার তার যে বিভাগে সেখানে 
আমার অনধিকাঁর। আমার উজ্জল তকৃম! দেখে লোকে হঠাৎ 
অনেক আশা করে আসে তার পরে যখন ফিরে যায় তখন তারা 
ভাবে আমি কৃপণ, গাল পাড়তে থাকে । আমি কৃপণ বলে দ্রিই 
নে তা নয় আমার হাতে তহবিল নেই বলে দেওয়া অসম্ভব । যারা 
দেয় তাদের চারদিকে দলবল থাকে, দলবলের অভাবে আমি 
সকল কাজে অকুতার্থ। ডাঁকব তাদের কী দিয়ে, খোরাক দেব 
কোথা থেকে ? যে রডে চোখ ভোলে তাঁতে তো পেট ভরে না। 
এই জন্যেই আমার দেশে আমি প্রায় একাই কাটিয়ে দিলুম 
জীবনের শেষ বেলা পর্্যস্ত । আমার কাঁজ আমার হোলো বোঝা । 
তবু কন্মণ্যেবাধিকারস্তে | 

একটা কথা বলি তোমার কাছে, সেটা আশ্চধ্য ঠেকে । 
পাশ্চাত্য দেশে এমন কথা অনেকের কাছেই শুনেচি, আমার 
বাণীতে আমি কেবল যে তাদের খুসি করেছি তা নয়, তাঁরা 
জীবনের অন্ন পেয়েছে তার থেকে, যাত্রাপথের পাথেয়বপে তার 


১৮৪ 


তার থেকে কিছু সংগ্রহ করেছে । এ কথা শুনে মনে হয়েছে 
আমার রচনার সাধনা সার্থক হোলো । সেই সঙ্গে এও ভেবেছি 
যে-ভাষায় দেশের লোককে কিছু পথ্য দিতে পারতুম সে ভাষা 
এবং উপযুক্ত ভঙ্গী আমার জান! নেই । মূককে বাচাল করে এমন 
শক্তি আছে, আবার বাচালকে মূক করে এমন বাধা আছে। 
আমার অনেক বাক্য আমার দেশে মুক হয়ে আছে আমার যে- 
ক্ষমতার অভাবে তার উপরে কি রাগ করা চলবে, সেকি আমার 
ইচ্ছাকৃত। তুমি অনেকবার আমাকে বলেচ, “তোমার নিজের 
মতো কথা না বলে আমাদের মতো কথা বলে। তাহলে আদর 
পাবে ।” চেষ্টা করতে গেলে আমার কথাও নষ্ট হোতো তোমাদের 
কথাও । অতএব এ যাত্রায় বেশি আশ! করব না। তোমার 
অন্তর যে শান্তি যে সান্ত্বনা চায় আমি কেমন করে তা৷ দিতে 
পারি? মনে বেদনা পাই, রোগী আত্মীয়কে দেখে আত্মীয় যেমন 
বেদনা পাঁয়, কিন্তু হাতুড়ে হয়ে ডাক্তারি করব কোন্‌ সাহসে? 
তাই তোমাকে বলি আমার সহ যদি গ্রহণযোগ্য হয় তো গ্রহণ 
কোরো কিন্তু শিক্ষা যদি চাও তবে মৃক আমি ।_ তোমার 
নিজের মধ্যেই কল্পনাশক্তি আছে। যে গুরুকে ভৌতিকরাজ্য 
থেকে হারিয়েছ সেই গুরুকেই ভাবের রাজ্যে অমর করে পাবে, 
সেইখানেই তোমার শান্তি। তর্ক করে কি কখনো শান্তি দেওয়। 
যায়? ইতি ২৮ কান্তিক ১৩৩৯ 

দাদা 


১৮৫ 


১৯০৬ 


২৩ নভেম্বর ১৯৩২ 


ঠেৎ 


কল্যাণীয়ান্ু 

যে অনুভূতির মধ্যে কোনো একদিন তোমার আত্মা মগ্ন 
হয়েছিল, পরম আনন্দ পেয়েছিল, তাঁর স্মৃতির প্রতি তোমার 
অশ্রদ্ধা জন্মাতে ইচ্ছাও করি নে। অহঙ্কারের যে বন্ধনে আমরা 
নিজের ছোটো! গণ্তীর মধ্যে বদ্ধ থেকে সংসারের প্রত্যেক তুচ্ছ 
জিনিষকে বড়ো করে তুলি, মানুষের স্তৃতি নিন্দাকে একান্ত সত্য 
বলে কল্পনা করি তাঁর থেকে যা তোমাকে নিষ্কৃতি দিতে পারে 
তাই তোমার পক্ষে শ্রেয়। অনেক সময় সংসার থেকে দুরে 
পালিয়ে গিয়ে নিজেকে ভোলাই যে নিষ্কৃতি পেয়েছি । সেই 
প্রমাদ যেন না ঘটে । সংসারের জাল থেকে মুক্তি পেয়েছি তার 
একমাত্র প্রমাণ হতে পারে সংসারেই | বুদ্ধদেব যখন নিব্বাণের 
পথে উপদেশ দিয়েছিলেন তখন তিনি তার সত্যকে নির্দেশ 
করেছিলেন বিশ্বপ্রেমে । চরম সত্য যদি থাকেন সকলকে ব্যাপ্ত 
করে, তবে তাকে পাবার পন্থা! সকলকে ত্যাগ করে নয়। সেই 
সত্যে যথার্থই অগ্রসর হয়েছি কিন! একদিকে তার প্রমাণ মন 
থেকে কলুষ কেটে যেতে থাকে যদি। আর দিকে প্রমাণ 
সকলের প্রতি প্রেম পূর্ণ হয়ে উঠল কিনা । কলুষ কেটে যদি 
থাকে তার প্রমাণ এই সংসারেই । আর প্রেম অহসঙ্কারের বন্ধন 
থেকে মুক্ত হয়ে পুর্ণ হয়ে উঠেছে তারও প্রমাণ এই সংসারে । 
কেননা মানুষের মধ্যে হাজার রকম বাধা আছে বলেই মেই 


১৮৬ 


বাধা এবং তার কঠোর আঘাতকে অতিক্রম করতে পাঁরলেই 
প্রেমের সার্থকতা । এই প্রেমের আনুষঙ্গিক যে সেবা সংসারেই 
তার বিশুদ্ধিতা প্রমাণ হয় শুধু তাই নয় সেই সেবায় 
সংসারেরই প্রয়োজন দেবতার নয়। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেচেন 
দরিদ্রান্‌ ভর কৌন্তেয় মা প্রয়চ্ছেশ্বরে ধনং-_ দেবতা তো দরিদ্র 
নন, দরিদ্র যে মানুষ । মানুষকে সত্য বস্ত দিতে পারলেই দেবতা 
স্বয়ং তা আদরে গ্রহণ করেন । তাই তোমাকে আমি বলি যে- 
সাধনায় তোমার চিত্তের পরিতৃপ্থি তাই তুমি একান্ত নিষ্ঠায় 
অনুসরণ কর-_ কিন্ত সেই সাধনার সার্থকত। যদি মানুষকে না 
দিতে পারো তাহলে তুমি যাই কল্পনা করো ন। দেবতা তা গ্রহণ 
করেন না । পৃথিবীতে মহাপুরুষ যে কেউ জন্মেছেন মানুষের কাছ 
থেকে দেবতা তাদের কেড়ে নেন নি-_ মানুষের কাছেই দেবতা 
তাদের প্রেরণ করেছেন । দেবতা আপন ভক্তকে পাঠান মানুষের 
কাছে। তাকে ভক্তি করেই ভক্তি ফুরিয়ে যায় না, সেই ভক্তি 
সত্য যদি হয় তবে তা প্রেমে অফুরান হয়ে মানুষের সংসারে 
দেবতার কৃপা নিয়ে আসে । তা যদি না হয় তাহলে দেবতাকে 
নিন্দা করব কৃপণ বলে । তিনি মানুষের ধনকে একল! নিজেই 
ভোগ করবেন মানুষকে কিছুই দেবেন না এতে তো তার এশ্বধ্য 
প্রমাণ হয় না। আমাদের কূপণত1 দেবতায় আরোপ করে তাকে 
ছোটো করি কেন? ইতি ৭ অগ্রহায়ণ ১৩৩৯ 


দাঁদ। 


১৮৭ 


১৯০৭ 


[ শান্তিনিকেতন ] ৫ ডিসেম্বর ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ 

সেই কমলা লেকচার লিখতে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়েচে। 
মানবের ধন্ম বিষয়টা নিয়ে অক্সফোর্ডে বক্তৃতা দিয়েছিলুম, সেটা 
বই আকারে বেরিয়েছে । বাংলাভাষায় বক্তব্যটা! সহজ করে তোল। 
সহজ নয়, চেষ্টা করতে হচ্চে খুব বেশি করে। অন্ত কিছুতে 
মন বিক্ষিপ্ত করতে সাহস হচ্চে না। অথচ ইতিমধ্যে অনেক 
রকম অভ্যাঘাত ঘটেচে। এই শীতের সময় এখানে নানা দেশের 
নানা অতিথি সমাগম হয় । কয়েকজন জাপাঁনী এসেছিলেন তারা 
সারনাথে বুদ্ধমন্রির চিত্রালস্কৃত করতে চলেছিলেন। মাঁলব্যজি 
এসেছিলেন তাকে নিয়ে ছুদিন কাটল । তাছাড়া এখানকার 
কন্মের ধারা আছে । 

কলকাতার কাজে আমাকে যেতে হবে আগামী দশই 
ডিসেম্বরে ৷ প্রফুল্লজয়ন্তীর :.. -.. তারিখ এগাঁরই। বারোই 
তারিখে স্বদেশী ভাগ্ডারের আরন্তকর্্ম। সেইদিনই অপরাহে 
জাপানীদের এক সভায় আমার আমন্ত্রণ । তার পরে কবে 
বিশ্ববিগ্ভালয়ে বক্তৃতা এখনে নিশ্চিত জানি নে। এট কমল৷ 
লেকচার নয়। আমার প্রোফেসারি পদের প্রথম অভিভাষণ। 
তার পরে আরো বক্তৃতা পর্যায়ক্রমে চালাতে হবে। মনে করতে 
গীড়া বোধ হয়, ছুটির জন্তে প্রাণ হাপিয়ে ওঠে । অথচ এ কথাও 
সত্য যে নিতান্ত দায়ে না পড়লে আমার কুঁড়েমির তাল! ভাঙে না। 


১৮৮ 


অক্মফোর্ডেও যে বক্তৃতা দিয়েছিলুম তা বিস্তর গীড়াগীড়ির পরে। 
না দিলে আমার বলবার কথ অন্ুক্ত থাকৃত। কমল! লেকচারেও 
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে লিখতে হোলো, অথচ দায়ে পড়ে যদি না 
লিখতুম তাহলে সেটা আমার পক্ষে অকর্তব্য হোত । বারে বারে 
আমার এই রকমই ঘটে থাকে । আমার অবস্থাটা ব্যস্ত, আমার 
স্বভাবটা কুঁড়ে_- কেবলি দ্বন্দ্ব বাধে কিন্তু অবস্থারই জিৎ হয়। 
ছেলেবেল! থেকে আমি স্বভাবতই কুণো অথচ আমি যত দেশে- 
বিদেশে মানুষের ভিড়ের মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে বেড়িয়েছি এমন 
দ্বিতীয় ব্যক্তি আজ সমস্ত পৃথিবীতে আছে কিনা সন্দেহ। 
বিশ্রামের জন্ে ছুটির জন্যে আমার অকর্্মণ্য মন নিরতিশয় উৎসুক 
অথচ আমাকে যত প্রভূত পরিমাণে কাজ করতে হয়েছে, এমন 
ঘোরতর কেজো। লোককেও না। সাধ্যমতে স্বদেশকে নানা- 
প্রকারে সেবা! থেকে আমি বঞ্চিত করি নি অথচ আনন্দের সঙ্গে 
উৎসাহের সঙ্গে অব্যাঘাতে নিম্মমভাবে দেশের লোক আমাকে 
যত গাল দিয়েচে বাংলাদেশে দ্বিতীয় ব্যক্তি এমন কেউ নেই। 
এই এক অদ্ভুত দ্ন্ব আমার জীবনে । 

তোমার ইংরেজি লেখ! দেখলুম। প্রকাশ করবার শক্তি 
তোমার স্বভাবতই আছে । বাল্যকাল থেকে যদি যথেষ্ট পরিমাণে 
ইংরেজির চচ্চা করতে তাহলে ভালো লিখতে পারতে । তাতে 
লাভ কি হোত। যে লেখ! শ্বেতদ্বীপের শ্বেততুজা সরম্বতী 
অধ্ধ্যরূপে গ্রহণ করতে পারেন সে লেখা বাঙালীর কলমের মুখে 
প্রসন্ন হয়ে বিকাঁশ পায় না। বই পড়ার রাস্তায় ইংরেজি ভাষার 
সঙ্গে আমাদের যৌগসাধনটাই প্রশস্ত। সে কম লাভ নয়। 


১৮৯ 


তুমি যদি ছুই তিন বছর এই অধ্যবসায়ে প্রবৃত্ত থাকো তাহলে 
তোমার বাঁধা কেটে যাবে । তাতে তোমার প্রকাশের উপকরণও 
অনেক বেড়ে যাবে। তা ছাড়। সাহিত্যের বিচারশক্তিও 
প্রাদেশিকতা কাটিয়ে উদার হয়ে উঠবে। আমাদের মন 
আমাদের স্বদেশের, কিন্ত আমাদের কাল স্বদেশের নয়। ছুইয়ের 
মিল করতে না পারলে পিছিয়ে থাকতে হবে । কালকে ধিক্কার 
দিয়ে লাভ নেই, কেননা কাঁলোহি বলবত্তরঃ_ তোমার চেয়ে 
তার জোর বেশি__- তার সঙ্গে রফ। করতেই হবে। ইতি 
৫ ডিসেম্বর ১৯৩২ 


দাদ! 


বু 
[ শান্তিনিকেতন ] ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৩ 
ও 

কল্যাণীয়াসু 

দেহ মন ক্লাস্ত। ভিতরের আলো যেন নিবে আসচে বলে 
মনে হয়। মস্ত অন্তঃকরণ কম্ম থেকে বিরত হয়ে বিশ্রাম চায় 
কিন্তু আমার প্রতি কারো করুণা নেই, নিজের নিজের অতি 
ছোটো! ছোটো কাজও আমার কাছ থেকে আদায় করবার দাবী 
করে। কাল বুধবারে পরের দায়ে কলকাতায় যেতে হবে। 
যাওয়াটা আমার শরীরের পক্ষে কত ক্লাস্তিকর কেউ অনুমান 
করতে পারেনা । করলেও কেউ যে নিষৃতি দেবে তার আশ। 
ছেড়ে দ্রিয়েচি অতএব শেষ পধ্যন্ত এই ভাবেই চলবে । আমার 


১৪৩ 


জন্যে উদ্বেগ মনে রাখা বৃথা । আমার বয়সে দেহ সম্বন্ধে প্রশ্ন 
শেষ করবার সময় এসেচে। যৌবনে যে নৌকো! মাঝদরিয়ায় 
তারই জন্যে ভাবনা করলে সেটা মানায়-_ যে এসে পৌছল 
ঘাটের কাছে তার তলায় ফুটো হলেই বা কিআসেযায়। 
ইতি ২ ফাস্কুন ১৩৩৯ 

দাদ! 


১০৯ 


২৯ মাচ ৯৯৩৩ 


ওঁ জোড়াসাকো 
কল্যাণীয়াস্ত 


পাছে বিনা অপরাধে তোমাকে লাঞ্ছিত হতে হয় সেই জন্য 
চিঠি লিখি নে। আমার স্বেহ থেকে তুমি যে বঞ্চিত এমন 
আশক্কা কোরোনা । 

শাঁপমোচন-এর পাল! নিয়ে কলকাতায় এসেছি, অর্থের 
সন্ধানে। ছুঃসময়। বিশেষ ফল পাব মনে করি নে তবু যা 
পাওয়া যায় তাই যথেষ্ট। | 

“ছুই বোন” বইখানি তোমাকে পাঠাব । এই অভিনয় থেকে 
ছুটি পাওয়ার অপেক্ষা করচি । 

আজ এখনি রঙ্গমঞ্চ অভিমুখে রওনা হব। তোমার ছেলে 
মেয়েকে আমার আশীর্বাদ জানিয়ো। ইতি ২৯ মার্চ ১৯৩৩ 

দাদা 


তোমার চিঠি পড়তে আমার ভালে লাঁগে, তুমি জানো । 


১৯১ 


১৯৪০ 


| শান্তিনিকেতন | ১৪ এপ্রিল ১৯৩৩ 


৫১৫ 


কল্যাণীয়াস্ু, 

আগে কাজের কথাটা শেষ করি । তোমার সেই মাতৃমৃত্তি- 
রচনার সম্কল্প জানিয়ে চিঠি যখন লিখেছিলে তখন ছিলেম 
বরাঁনগরে, ভেবেছিলেম অবনের সঙ্গে দেখা হলে প্রস্তাবটা তাকে 
জানাব। দেখ! হয়নি। যথাসময়ে যদি স্মরণ করিয়ে দাও 
কলকাতায় গিয়ে ওটাকে পুনরুখাপন করব । 

আজ প্রাতে এখানে নববর্ষের উপাসনা হয়ে গেল। আশ্রমে 
এটা একটা বিশেষ দিন। সম্বংসরে আমাদের ব্রতপাঁলন- 
পথের পাথেয়সঞ্চয়ে যা ক্ষয় হয়েছে ক্ষতি হয়েছে আজ তাই 
পুরণ করে নেবার চেষ্টা করি। 

ঘোর ঘনঘট। করে এলো! বৃষ্টি । মাঠ ভেমে গেল জলে । 
নিবিড় ধারাবর্ণের আবরণে আমার ঘরের সামনেকার গাছ- 
গুলি অবগুন্ঠিত,আর্্ বাতাস বইচে বেগেবৃষ্টির আঘাতে গোলক- 
ঠাপাগুলি ঝরে পড়চে মাটিতে, তালগাছের ছটা ডালে কাক 
বসে আছে পাতার নীচে, অনতিদূরে কোথা থেকে ডেকে উঠ্‌চে 
একট! গোরু, বোধ করি বন্ধনমোচনের আবেদন জানিয়ে ; 
আমার নিভৃত ঘর ছাঁয়াচ্ছনন, আসর জমাবার মতো লোক নেই। 
আগেকার মতো দায়িত্ববিহীন অবকাশ যদি থাকৃত তাহলে 
বাছুলে সুর দিয়ে গান তৈরি করতুম, কিম্বা লিখতুম ছোটে! 
গলপ । 


১৪৯২ 


আজ এখানে অধ্যাপকদের মধ্যে একটা বিয়ে আছে। 
সকালে গায়ে হলুদ হয়ে গেল-- অত্যন্ত বেন্ুরো গ্রাম্য সানাই 
বর্বর তারম্বরে আজ প্রাতঃকালের মেঘমেছুর আকাশকে যেন 
ক্ষতবিক্ষত করেছে এতক্ষণে ধারাপতনের তরল কল্পোলে তার 
শুআাষা সমাধা হোলো । 
নববর্ষের শুভকামনা জানিয়ে শেষ করি এই পাত্র। ইতি 
১ বৈশাখ ১৩৪০ 
দাদা 


১১১ 


১৩ মে ১৯৩৩ 


(9192 177001) 
10811921106 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থু 

আশ্রয় নিয়েছি শৈলশৃঙ্গে। কিন্তু নিয়তি এখানেও এসে 
পৌঁছয়, তীর গাড়িভাড়া লাগে না । নানা কাজের দাবি, নানা 
লোকের নানা অন্থুরোধ, পুর্বারন্ধ কর্মের অনুস্থতি সমস্তই আমার 
দরজ পর্যন্ত পথ করে নিয়েছে । মাঝখানে এই ভিড জমে উঠেছে, 
বিশ্রামের প্রত্যাশা রইল পড়ে তার পরপারে । কলকাতার 
মতো জায়গায় তাঁর অসঙ্গতি হয় না কিন্ত এখানে তাঁর পক্ষে 
অস্থান বলেই পীড়নটা লাগে বেশি । 

আমাকে উপহার দেবার জন্যে উদ্দিগ্ন হোয়ো না। তোমার 


৯১৩ ১৯৩ 


আন্তরিক অভিনন্দন অনায়াসেই পৌছয় আমার অন্তরে । তার 
মূল্য তো৷ কোনো প্রত্যক্ষ সামগ্রীর চেয়ে কম নয়। আমার জন্যে 
রডীন মাটির হাড়ি আর শিকে কিনে রেখেচ। কাজে লাগবে । 
একদ। আমার ঘরে কড়ি থেকে শিকেয় বদ্ধ হাড়ি আমার ডেস্ষের 
উপর ঝোলানো থাকত-_ তার মধ্যে থাকত কালী কলম ইত্যাদি 
লেখ্যসামগ্রী। সন্দেশ যদি দাও আগে তার যথোচিত সৎকার 
করে তার পরে তাকে সাহিত্যিক ব্যবহারে লাগাবার চেষ্টা 
দেখতে পারি। 

এখানে বাজারে ফুলকফি যথেষ্ট আছে, কমলানেবুর 
আমদানি এখনো স্বর হয় নি-_ চেষ্টা করলে আম পাওয়। যায়। 
কিন্তু এ বৎসর দৈবছুধ্যোগে আমবাগানের উপর অত্যাচার 
হয়ে গেছে, তাই ফলাহারের আশা সন্কীর্ণ। এখানে শাকসবজির 
অভাব নেই । এ বৎসরটা! এখানে শীতটা আশাতীত, মাঝে মাঝে 
শিলবৃষ্টির সহায়তায় তার স্পর্ধা বেড়ে উঠচে। রৌদ্র বিরল- 
দর্শন, ঘন সজল মেঘে আত্তীর্ণ আকাশের প্রাঙ্গণ 

২৫শে বৈশাখে সব প্রথমে সৌরভী ফুলের গুচ্ছ পেয়েছিলুম 
ইংরেজিতে যাকে বলে “ন্ুইটু লীজ ৮, সেটাকে যদি তোমার দান 
বলে স্বীকার করো! তবে আমিও তাই স্বীকার করে নেবে? । 

অনেক পত্র উত্তর প্রত্যাশায় জম! হয়ে রয়েচে। তার মধ্যে 
একটা আছে তোমার কচির। অতএব এই উপলক্ষ্যে বাসম্তভীকে 
আশীর্বাদ করে ছুটি নিলেম। ইতি ৩০ বৈশাখ ১৩৪০ 

দাদা 


৯৪৪ 


১১২ 


[ দাজিলিং ] ১৭ জুন ১৯৩৩ 


৫5৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

শরীর ভালো না থাকাতে এখান থেকে নেমে যাচ্চি। 
সোমবারে হয় তো গাড়ি পাওয়। যাবে । তাহলে মঙ্গলবারে 
জোড়াসাকোয় পৌছবার কথা । 

তুমি আমার কাছে কাপড় প্রভৃতি য1 প্রার্থনা করে নিয়েছ 
তাতে যদি তোমার প্রয়োজন না৷ ছিল, যদি সেগুলো! এত দেশ 
থাকতে তোমার প্রতিবেশীকেই দিয়ে ফেলা স্থির করলে তাহলে 
নিলে কেন আমি এখনো ঠিক বুঝতে পারলুম না। তুমি যখন 
আমার চিঠিগুলি ... --.:-- "কে দেখাতে ও দিতে আরম্ত 
করেছিলে তখনি আমার মনে সক্কৌচ বোধ হয়েচে-_ তার পরে 
আমার দান বলে য৷ তুমি গ্রহণ করলে তাঁও যখন তারই হাতে 
গিয়ে পৌছল তখন স্বভাবতই আমার মনে লজ্জা ও অনুতাপ 
উপস্থিত হোলো । যা হোক এখন আর ফিরে তাকাব না - 
কিন্তু কেন তুমি আমার অমধ্যাদা করতে সঙ্কোচ বোধ করলে 
না জানিনে। ইতি ৩ আষাঢ় ১৩৪০ 


দাদা 


১৯৫ 


১১৩ 


| দাজিলিং ] ১৯ জুন ১৯৩৩ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 
যাত্রা পিছিয়ে গেল। আপাঁতত আগামী শুক্রবারে 
কলকাতায় রওনা হবার কথা চলচে__ অর্থাৎ গাড়ি প্রভৃতির 
জোগাড় হলে শনিবারে জোঁড়ার্সাকোয় আমার আবির্ভাব হবে । 
দেবী পুরুষবিদ্বেধী। তিনি যত কিছু প্রবন্ধ 
লিখেচেন তাতে পুরুষের বিরুদ্ধে অন্তহীন নালিশ দেখতে পাই । 
তাই তিনি যত দোষ চাপিয়েছেন শশাসঙ্কের স্বন্ধে। দোষ প্রকৃতি 
মায়াবিনীর-_ মানুষের চলবার পথে তিনি চোরা ফাদ পেতে 
রাখেন-_ বিশ্ব্ত চিত্তে চলতে চলতে হঠাঁৎ সে পড়ে যায় গর্ভে । 
শশাহ্কের সংসারযাত্রার রাস্তাটা পাক রাস্তা ছিল না, হতভাগা 
একদিন ঘাড়মোড় ভেঙে পড়বার পুর্বে সে কথাটা! সকলেরই 
অগোচর ছিল-- দিন চলছিল ভালোই কিন্তু তলায় ছিল 
ফাঁকা । নিশ্চিন্ত মনে হাসতে হাসতে এক মুহূর্তে হাসি গেল 
থেমে । শশাঙ্কে শম্মিলায় জোড় মেলে নি __ হঠাৎ একদিন 
বাইরে থেকে চাড় লাগবার আগে সে কথা কি সবাই জান্তে 
পায়-- যখন জানা গেছে তখন তো কপাল ভেঙেচে। 
নীতিবিদরা বলবে, ফাটা কপালে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে ভাঁলো- 
মানুষের মতো আবার সাবেক রাস্তায় উচোট খেতে খেতে 
লাঠি ধরে খুঁড়িয়ে চলা কর্তব্য। তাই সে চল্ত। কিন্তু শল্মিল! 
বললে তেমন চলায় কোনো! পক্ষেই সুখ নেই । সে তাই কোনো 


১৯৩ 


একরকম করে স্বহস্তে ভাগ্যকে সংশোধন করবার প্রস্তাব 
করলে । কিন্তু ভাগ্যের উপর কলম চালানে! এত সহজ নয়। 
সেট! বুঝেছিল উন্মিমালা-_- ভূমিকম্পের কেন্দ্রের উপরে কীচা 
মসলায় তৈরি নড়নডে বাসায় সে আশ্রয় নিতে নারাজ হোলো 
__ দিলে দৌড়। ঠিক তার পরে কী ঘটলে তা কে বলবে। 
কালক্রমে কাটার দাগটা মিলিয়ে গেল, কিন্তু ব্যথা? ব্যথা যার! 
পায় তাদেরই আমরা বিচার করি__ কিন্ত সব সময়ে ব্যথা 
ঘটাবার দাঁয়িক কি তারাই? বজাঘাতে মোলো মানুষটা, তুমি 
বললে কিনা ওরি পূর্ব জন্মের পাপের ফল। ওটাতে কেবল 
দোষ দেবার অন্ধ ইচ্ছের প্রমাণ হয় দোষের প্রমাণ হয় না। 
ইতি ১৯ জুন ১৯৩৩ 


দাদা 
১১৪ 
[ দাজিলিং । ২৩ জুন ১৯৩৩ ] 
ও 
কল্যাণীয়াস্ 
তুমি আমাকে ভুল বুঝো! না। ::: 751 র সঙ্গে তোমাদের 


আলাপ পরিচয় হওয়াতে আমি লেশমাত্র ক্ষুপ্র হই নি। যে 
ঘটনাতে আমাকে হঠাৎ বিস্মিত করেচে সেটা এই-- আমি 
কোনো কোনো লোকের চিঠিতে এই প্রশ্ন পেলুম যে, -*. -..কে 
আমি আমার একখানি বহিকর্বাস ও কলম উপহার দিয়েছি 
এ কথা সত্য কি না? অন্তুত সে এই কথা অনেককে বলেচে ও 


১৯৭ 


জিনিষগুলে। প্রমাণস্বরূপ দেখিয়েচে | শুনে ভাবলুম সেই 
জিনিষগুলো৷ অনাদরে তুমি তাকে দান করেচ এবং এই রকম 
গুজোব রটাবার অবকাশ দিয়েচ | -* ৮, কে কলম প্রভৃতি দান 
করা আমার দ্বারা অসম্ভব হোত না, চাইলেই আমি নিঃসঙ্কোচে 
দিতে পারতুম। কিন্তু কথাটা অসত্য-_ এবং তুমি যে আমার 
কোনো দান তার কাছে ফেলে রাখবে এইটেই আমার কাছে 
অসঙ্গত লেগেছিল । তোমার চিঠি পেয়ে বোঝ! গেল আমার 
দান তুমি তাঁকে দান করো নি-_ বাস্‌ কথাটা শেষ হোলো । 
কিন্ত তোমার কাছে আমার এই অনুরোধ, **২ ১, র সঙ্গে 
তোমাদের বন্ধুত্ব আমার কাছে অপ্রিয় এমন কথা কল্পনা! কোরো 
না__ যদি করো! তবে সেটা আমার প্রতি অশ্রদ্ধার নিদর্শন হবে । 
আজ সন্ধ্যার গাড়িতে কলকাতায় যাত্রা করব। ব্যস্ত আছি। 
ইতি শুক্রবার 

দাদা 

কচির সমস্ত খবর পেয়ে খুসি হলুম । 


১১৫ 


[ কলিকাতা ] ২৪ জুন ১৯৩৩ 


ঠ 


কল্যাণীয়াস্তু 
একট কথ! মনে রেখো-_ আমার উপর যে যতই অত্যাচার 
করুক কারো উপর রাঁগ পোষণ করে থাকা আমার ধাতে নেই। 


৯৭৮ 


আমি তাতে লজ্জা পাঁই। অতএব ... ." সম্বন্ধে কোনে। 
সঙ্কোচ কোরে না তার অঙ্গে তোমাদের যে সম্বন্ধ হয়েচে 
সেটা রক্ষা কোরো তাতে আমি কোনোই অপরাধ নেব না । 
** রন চেয়ে অনেক বড়ে। বড়ে। লোক আমাকে নিরন্তর আঘাত 
তার! যে আমার চেয়ে হিন্দুসমাজের দরদ বেশি বাঁচিয়ে চলত 
তা নয়, তাঁদের আহার বিহারের খবর সকলেরই জান! আছে-_ 
6: ও নিজের আচারে হিন্দ্ুসমাজের মান রক্ষা করে চলে 
তারও কোনো প্রমাণ নেই। অতএব এই কথাটা মানতে হবে 
যে অহৈতুক অন্ুরাগের মতোই অহৈতুক বিদ্বেও আছে-_ ওটা 
প্রকৃতিসিদ্ধ। আমি কোনোদিন এ নিয়ে কোনে প্রতিবাদ করি 
নি-_ এবং ভোলবারই চেষ্টা করেছি। 

তোমার উপরে রাগ করেচি এই আশঙ্কা সকলের চেয়ে 
অসঙ্গত। যখন এই সংশয় মনে এল যে আমার দান তুমি 
অনাঁদরে বজ্জন করেচ তখন ক্ষণকালের জন্তে বিস্ময়ের ব্যথা 
অনুভব করেছি । যদি ব্যাপারটা সত্যই হোত তাহলে মনে 
করতুম, তুমি নিরাসক্ত;__ সঞ্চয় করতে চাঁও না কিছুই | তাঁতেই 
বা দোষ কী। 

আজ এসেছি কলকাতায়। ক্লাস্ত। ও দিকে অমিয় অসুস্থ 
হয়ে দূরে আছে । কাজের বোঝা একা আমারই ঘাড়ে। চিঠি- 
পত্র লেখার সম্বন্ধে এবার সম্পূর্ণ হাল ছেড়ে দেবার সময় 
এলো । মাঝিকে তো প্রায়ই ডেকে বলি-_ “তোর বৈঠা নে 
রে, আমি আর বাইতে পারলাম না” চেঁচিয়ে গলা ভাঙল-_ 


১৯৯ 


কিন্ত মাঝি থাকে কোন্‌ পাড়ায়? সাড়া তো মিলল না। ইতি 
১০ আষাঢ় ১৩৪০ 
দাদা 


১১৬ 


৫ জুন ১৯৩৩ 


৫ৎ 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমার ঘরে তোমার আমসন্দেশের ভোগ চলচে। হাড়ি- 
গুলি বড়ো সুন্দর আমার গৃহসজ্জায় কাজে লাগবে। 
আমাদের সাধারণ লোকের রঙের দৃষ্টি অনিন্দনীয়__ পৃথিবীতে 
তার খ্যাতি আছে । আমাদের দেশে-__ লেখাপড়া করে যেই, 
সে হতভাগা গাড়িঘোড়াতেও চড়ে না, তার উপরে তাঁর 
স্বাভাবিক শিল্পরুচিতেও ঘুণ ধরে যায়। শান্তিনিকেতনে 
আমর পটারি অর্থাৎ পাত্র-শিল্ের প্রবর্তন করেছি। তোমার 
এই হাড়িসরাগুলি কাজে লাগবে । 

আমার মেজাজ সম্বন্ধে নিশ্চিন্ত থেকো । আমি রাগী 
স্বভাবের লোক নই-_ বরঞ্চ কিছু পরিমাণে বিরাগী হতে 
পারি। নিবিড় আঁসক্তিপ্রবণতা সাহিত্যের ক্ষতি করে। 
কাছে থেকেও দূরত্ব না রাখতে পারলে স্পগরদৃষ্টিকে আচ্ছন্ন 
করে। সকল সাধনাতেই এই কথা খাটে। ইতি রথযাত্রা 
[ ১১ আষাঢ় 1 ১৩৪০ 

দাদ] 


* ৩০ 


১১৭ 


[জুন ১৯৩৩ ] 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্তু 
সম্প্রতি নিজ্জীবকুমারের আখ্যা আমাতেই খাঁটে। মন ও 
দেহ উভয়েই কর্মের প্রতি বিমুখ। ছুটির কামনা করচি। 
কিছুদিনের মতো কলকাতায় আবদ্ধ আছি__ সেটা আমার 
পক্ষে শ্রীতিকর নয়। ইতি 
দাদা 


১১৮ 


১৩ জুলাই ১৯৩৩ 


6€ 


কলাণীয়াস্থ 

নিতান্তই চুপচাঁপ করে থাকব পণ করে ছিলুম। চারদিকের 
ছোঁটোখাটে। দাবী চারদিক থেকে ঠেলা! মেরে আমাকে অস্থির 
করে তোলে । আমি সানুনয়ে সবার কাছ থেকে ছুটি চেয়েছি । 
অনেক কাল দশের ফরমাস জুগিয়ে হয়রান হলুম, যে কয়টা দিন 
বাকি আছে নিজের খেয়ালের রাজ্যে স্বেচ্ছায় সঞ্চরণ করে 
সময় কাটাব এইটে দাবী করবার অধিকার আমি অজ্জন 
করেছি। কিন্তু ভিড়ের ধাক্কা এখনে ঘাড়ের উপর এসে পড়ে । 
একটু ফাঁক! পেলে বাঁচি, পাই নে। প্রথম বয়সে জীবনে এই 


২০১ 


ফাকা ছিল, সেই ছিল বাল্যলীলার ক্ষেত্র; মাঝবয়সে ডাক 
পড়ল কন্মশালায়, ফাঁকি দিই নি। আজ দিনাবসানে তারার 
আলোয় বড়ো করে আসন বিছিয়ে বসতে হবে, কিছুই ন। 
করবার সেই আয়োজনও প্রশস্ত জায়গা চায়। ঠেলাঠেলির 
মধ্যে খেলাও হয় না বিরামও হয় না। 
কলকাতায় একদিন আমার অনুপস্থিতিকালে তোমার 
প্রেরিত মিষ্টান্ন পেয়েছিলুম__ এখানে এসে তার ভোগ সমাধা 
হোলো । তোমার সেই মেলায় কেনা চিত্রিত হাড়িগুলো আমার 
টেবিলের উপর নৈষ্ষন্ম্যে বিরাজমান । আমার চেয়ে তাদের 
ভাগ্য ভালো-_ রান্নাঘরে কেউ তাদের টানাটানি করবে না, 
রডীন অবকাশ ভোগ করচে তারা । ইতি ২৯ আষাঢ় ১৩৪০ 
দাদ! 


১১৭৯ 


৪ জুলাই ১৯৩৩ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

ক র চিঠি ফেরৎ পাঠাই । “ছুই বোন” নিয়ে তারই 
সঙ্গে যে তোমার পত্রালাপ ঘটেছিল সে কথা কাউকে বলি নি 
বলবার সুদূর আশঙ্কাও নেই। 

সমাজ যেখানে সম্পূর্ণ অকারণে অন্যায় উৎগীড়ন করবার 
অধিকার কোনে! এক পক্ষকে দিয়ে থাকে তখন সেটাকে বিন! 


২০২ 


বিদ্রোহে সহা করা ছুঃসহ। কিন্তু বিদ্রোহের দ্বারা যেখানে আত্ম- 
সম্মানের লাঘব হয় এবং অন্ঠায়ের প্রতিকার ন। করে তাকে 
প্রশ্রয়ই দেওয়া হয় সেখানে সহিষ্ণু হয়ে যে স্থির থাকতে পারে 
আসলে তারই জয় হয়। তুমি শীস্তভাবে সেই জয়ই লাভ 
করো । তোমার স্নায়ু পীড়িত বলেই তোমার পক্ষে এই শাস্তি 
ছুরূৃহ। তবু ছুঃসাধ্য সাধনই করতে হবে, কারণ অন্য রকম 
বিপ্লবে তোমার সেই পীড়িত স্নায়ুকে আরো ক্ষুব্ধ করে তুলবে । 
তোমার সমস্ত সম্পদকে অন্তরের মধ্যে সঞ্চিত করে তাকে 
তোমাকে আধ্যাত্মিক আনন্দের সহায় করে তুলো। ইতি 
২৪ জুলাই ১৯৩৩ 

দাদ! 


৯২৪ 


[ দেপ্টেম্বর ১৯৩৩ ] 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 
ছঃসহ ক্লান্তিতে অভিভূত । এখনি চলেচি বরানগরে | ছুচার 
দিন থাকতে হবে-_ একটা কাজ আছে। 

, আয়া ও হল! মালি সম্বন্ধে যা লিখেচ আমারো মনের কথ 
তাই। হলামালীর স্বদেশীয় একটি সেবক আমার আছে-_ সে 
যদি উড়ে মিশোলে। ভাঙা বাংলায় কথা কইতো, তাঁর কাছ 
থেকে আমার শিক্ষা হোতো-_ কিন্তুসে কথ! কয় বিশুদ্ধ গৌড়ীয় 


২০৩ 


রীতিতে । পুরোণে! আয়ার পরিচয় আছে-_ তাঁর নাম ভজিয়া, 
আমার ছেলেমেয়েদের কাছে ছিল। তার ভাষায় খোট্রাই 
ছিলো না, ছিলো স্থরে__ সেটা বইয়ে প্রকাশ কর! যাঁয় না। 
অসংশোধিত কোনো আয়াকে চিনি নে-- সম্প্রতি একজন ছিল 
আমার ঘরে তার ভাষা! হিন্দুস্থানী-_ ব্যবহার করতে হলে সঙ্গে 
ব্যাখ্যাপুস্তকের প্রয়োজন হোত। তবু মালী ও আয়ার ভাষা 
গল্পের বইয়ে বাঁকা করতে পারলে মানানসই হোত। যখন খুসি 
চিঠি লিখো-_ দেখা যদি করো খুসিই হব। 

দাদা 


১২১ 


৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৩ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

বিজয়ার আশীব্বাদ । 

ডাকাতকে ভয় করবার মতো অবস্থা আমার এখন নেই । 
যদি ভ্রমক্রমে কেউ ঘরে পদার্পণ করে তবে চাদা তুলে তাকে 
নৈরাশ্য ছঃখ থেকে রক্ষা করতে হবে । 

তোমার খাতাখানি শেষ করেছি । যেখানে বর্ণনা করেছ 
গল্প করেচ বেশ লাগল পড়তে । যেখানে তর্ক করেচ সেখানট। 
আমার কাছে ব্যর্থ হয়েছে । মনের প্রবল আক্ষেপে তুমি আমার 
অনেক কথা ভূল বোঝো । তোমাদের হি'ছুয়ানিতে অত্যন্ত 


২০৪ 


বেশি আধুনিক ঝাঁজ -- তাতে সাবেক কালের পরিণতির 
মোলায়েম রঙ লাগেনি । মিশনারিদের মতোই ভঙ্গী তোমাদের | 
যেন হি'ছুয়ানির মোল্লা মৌলবী। গভীরভাবে আমি তোমাদের 
চেয়ে অনেক বেশি ভারতীয়। যথার্থ ভারতবর্ষ মহাভারতবধ্ষ। 
মন্থুসংহিতা ও রঘুনন্দনের ছাটাকাট! হাড়-বেরকরা শুচিবায়ুগ্রস্ত 
ভারতবর্ষ নয়। যে দেশ কেবলি বিশ্বের ছ্োওয়া বাঁচিয়ে নাক 
তুলে চলে সে রুগ্ন দেশ__ আমি সেই বাতে পঙ্গু দেশের মানুষ 
নই। আমি ভারতবর্ষের মানুষ সেই ভারতবর্ষ স্বাস্থ্যের 
প্রাবল্যদ্বারাই চিরশুচি,_ সেই আমার মহাকাব্যের চিরন্তন 
ভারতবর্ষ ।-_- তোমাকে কিছু বই দিতে চাই__ রেজেগ্ি না করলে 
পূজোর বাজারে বই গিয়ে পৌছয় ডাকবিভাগের অন্তঃপুরে_ 
কোন্‌ ঠিকানায় পাঠানো চলবে জানিয়ো। বিজয়াদশমী 
[ ১২ আশ্িন ] ১৩৪০ 

দাদা 


১২২ 
৪ অক্টোবর ১৯৩৩ 


শাম্তিনিকেতন 


ও 


কল্যাণীয়াস্ত 

শরংকালের আলোয় ছুটির আমন্ত্রণ আকাশে আকাশে । 
কোনে! কাঁজ ন! করবার মতো। মেজাজে আছি, অথচ কাজ 
এসেচে ভিড় করে। মন ক্লান্ত হয়ে আছে অথচ কলমের বিশ্রাম 
নেই । 


আমি মাটির মানুষ, তার মানে এ নয় যে ভালোমান্ুষ 
আমি। তার মানে এই যে ধরণীর মাটির পাত্র থেকেই আমি 
অমৃত পান করি-_ জলস্থল আকাশে আমার মনের খেলাঘর। 
মেয়েরা শ্বশুরঘরের উপর বিরক্ত হলেই বাপের ঘরে চলে 
যায়। তেমনিতরো মনের ভাব নিয়েই মানুষ দৌড় মারতে 
চায় বৈকুষ্ঠের দিকে__ এই মর্ত্য পৃথিবীর উপর আমার যদি 
তেমন বিতৃষ্ণী হোতো আমিও তাহলে বৈকুণ্ঠের প্রতি বিশ্বাসকে 
আকৃড়ে ধরতুম । দরকার হয়নি বলে কল্পনাও করি নে। আনন্দ- 
রূপমমৃতং যদ্বিভাতি__- আমার কাছে এই মর্ত্যের রপই আনন্দ- 
রূপ অমৃতরূপ-_ একে অবজ্ঞা করি এত বড়ো ধৃষ্টতা আমার 
নেই। এর চেয়ে আরো কিছু উচু আছে বলে যে মনে করে, 
তার নিজের চোখে দোষ আছে! আমার এই উত্তরের দিকের 
জানল! দিয়ে নীল আকাশ ঢেলে দিচ্চে তার আলোকম্ুধা, 
পুর্বদিকের খোল! দরজার সামনে উদার পৃথিবী তার শ্যামল 
আমস্্ণ প্রসারিত করে ধরেছে- আমি এই সোনার ধার! 
সবুজ ধারার মোহানায় বসে ছুই চক্ষুকে ছাড়া দিয়েচি, বেলা 
যাচ্চে কেটে-__- আর কি চাই আমার-- বুঝতেই পাঁরি নে যতসব 
হযবরল মন্ত্র। এতবড়ে। স্ুম্পষ্টতার মধ্যেও উপলব্ধি যদি না 
হয় তবে কিছুতেই হবে না। ইতি ৪ অক্টোবর ১৯৩৩ 


ভজনপুজনহীন দাদা 


4? 


গিনি ///0 £ভিক6৭706) এ 
পাঠান 40 /17৯/৯ তর প৮ 
উপরি ৪ রখ ৩০ চার্লি শি কি 
রি 2৮? 2 একধূর্র ও ঠানত ভিপি 
ঠা হি 97891 61 471 3 
শিলা ডে 5১৫৮৭৯7 /৫ ৭6. 792০ 
97৭4 4370-6? ১77 ০১০৭৪৮1৫৮৫1 
রি ৫411 ঃ এরি) গু পগ 
এট 06845 ৫০ 2৭ রর 
পেতো ৭7৬94? গত / ঠা ৫ 
52৮ 
টি৫৬ ৭৫4৮) 4৫ ঠ ছিঠীর এা্ি ভি৮৮০ 
হি ৫ বিএ পুতি ব্রা হর দে রি 
79878 ৫4477 থেএন ৪০৫৭ ৭৩ 


৫4পগতে ঠসভে২97 কি পভ ি9িক 
থাড শিবার দিত £- পাবা শওিশ 
রি ধরি 7৭1 বিশটি | ভীরাাথ2 
নধ্- 9667৮ এষ এ1৭হৃাঠ বির 
9% দি? উরি” জ্তিতে | তথ এগ 
(৫ পরবে 578) পঠি0/নি নত 67 
পথিকের কির এগার নিত 
8/97(০প9৫-%7৭ (- 

৫00 হাহ তিভি” খে €01047 
দব্ত্গোনতৃ 2 পেট এর রি ভোর 
€% ৫78 ঠদ্ি966 ৮ রি | ঠতি ১১ ৫70 


১৯০০ 77 


১২৩ 


১১ অক্টোবর ১৯৩৩ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

আমি তো! মৃত্তিকাবিলাসী মাটির পৌত্তলিক নই। মর্ত্যের 
মধ্যেই অতিমর্ত্যকে যদি না উপলব্ধি করতুম তাহলে গর্তবাসী 
কীটবৃত্তি করে কি বাচতুম ? জগৎ অসম্পূর্ণ, তাই বলেই কি 
কল্পনার আশ্রয় নিয়ে সান্ত্বনা পেতে হবে? বীণাটার তাঁর 
ঠিকমতো! বাঁধা হয় নি, তাই বলেই কি নারদের বীণার ধ্যান 
করতে হবে? যারা তাই করে তার! সুর বাধবার দায়িত্ব নেয় 
না। এই মত্ত্যবীণাতেই শুদ্ধস্তরের আদর্শ আছে সেই জন্যেই 
এত মহাপুরুষ প্রাণ দিয়ে স্বর বাধতে লেগেছেন-__ যথার্থ আনন্দ 
তাঁতেই। বৈকুঠ্পুরী যদি সত্যই কোথাও থাকে তাহলে সেখানে 
মর্ত্যের মানুষ টিকতে পারে না। এই পৃথিবীর মাটি নিয়েই 
আমাদের নিজের বৈকু্ নিজেকেই স্থষ্টি করতে হবে। সেই 
জন্যেই মাঁনবসংসারে দ্বেত আছে_- যেমন আছে অপূর্ণতা 
তেমনিই আছে পূর্ণতার আদর্শ । নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যঃ 
এই বস্তুগত জগতেই আত্মিক শ্রেষ্ঠতা নিজের শক্তির দ্বারাই জয় 
করে নিতে হবে__- পাণ্ডার শরণ নিয়ে ব্র্গপ্রাপ্তির আশ করব 
না । বীরভোগ্য। বসুন্ধরা নয় বীরযোগ্যা বসুন্ধরা | এই বস্ুন্ধরাকে 
নিজের বীধ্য দিয়েই উদ্ধার করতে হবে। তোমরা! আল্পনা কেটে 
লক্ষ্মীকে ডাকো লক্ষ্মী আসেন না ধারা বীর্যের সহায়ে লক্ষ্মীকে 
আহ্বান করেন আজকের পৃথিবীতে তারাই তো লক্ষ্মীকে পান 


২০৭ 


তোমাকে বিচিত্রিতা পাঠিয়েছিলুম__ কালুঘোষের দরো- 
যানের স্বাক্ষরিত রসিদ আছে। কিন্তু তোমার কাছ থেকে 

প্রাপ্তিম্বীকার পাই নি। ইতি ১১ অক্টোবর ১৯৩৩ 
দাদা 


১২৪ 


১৬ অক্টোবর ১৯৩৩ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ম 

তৃমি নিজেকে অত্যন্ত মিথ্যা গীড়ন কর। তোমার প্রতি 
আমার লেশমাত্র রোষ বা অবজ্ঞীর ভাব নেই সে তুমি নিশ্চয় 
জানে তবু থেকে থেকে নিজের মধ্যে একটা বিপ্লব বাধিয়ে 
তোলো । তোমাকে উপলক্ষ্য করে আমি অনেক কথা বলি কিন্তু 
তোমাকে বলি নে। দেশের অসীম দুর্গতির কথায় মন যখন 
উদ্দিগ্ন হয়ে ওঠে তখন চুপ করে থাকতে পারি নে। ধন্মে ও 
নিরর্থক আচারে হিন্দুকে শতধা বিভক্ত করে রেখেছে, বিদেশীর 
ছাঁতে তাই পরাভবের পর পরাভব ভোগ করে আসচি। অন্তঃশক্র 
এবং বহিঃশক্রর হাতে মার খেয়ে খেয়ে আমাদের হাড় জীর্ণ। 
মুসলমান, ধন্মে এক, আচারে এক, বাংলার মুসলমান, মাদ্রাজের 
মুসলমান, পাঞ্জাবের মুসলমান এবং ভারতবর্ষের বাইরের 
মুসলমান সমাঁজে সবাই এক, বিপদে আপদে সবাই এক হয়ে 
ঈাড়াতে-পারে এদের সঙ্গে ভাঙাটুরো হিন্দুজাত পারবে না। 
আরো একবার আফগানিস্থানের পাঠানদের হাতে কানমলা 


২১০৮ 


খাবার দিন ঘনিয়ে আসচে। পি, সি, রায় অরণ্যে রোদন 
করচেন, বলচেন বাঙালীর অন্ন পরের হাতে যাচ্চে। কিন্তু 
ংলার মুসলমানরা! পিছয় নি-_ দেশে বিদেশে তাদের দেখেচি 
জীবিকা উপার্জনে-__ কেননা বিধিনিষেধের নাগপাশ তাদের 
হাজার পাঁকে জড়িয়ে রাখে নি । মজ্জাগত অনৈক্যজনিত হুর্বলত৷ 
এবং সহজ্রবিধ বিধিনিষেধের বোঝা ঘাড়ে করে এই জাত বাচবে 
কী করে? সামাজিক অসম্মান থেকে বাঁচবার জন্যে প্রতিদিন 
নিম্নশ্রেণীর হিন্দুরা মুসলমান এবং খষ্টীন হতে চলেচে-_ কিন্তু 
ভাটপাড়ার চৈতন্য নেই । একদা এ তর্করত্বদের প্রপৌত্রমণ্তলীকে 
মুসলমান যখন জোর করে কলম! পড়াবে তখন পরিতাপ কর- 
বারও সময় থাকবে না৷ 
এই সব মনের ছুঃখ তোমার কাছে মাঝে মাঝে ভাষায় 
প্রকাশ করি তাতে ক্ষতি হয়েচে কি? দেশের কথা চিস্ত1 করে 
যে কঠিন আঘাত আমাকে বাজচে সেটা তুমি ভেবে দেখ না 
কেন? দেশের জন্তে আমি তোমাকেও ভাবাতে চাই-_ তুমি 
কি দেশের মেয়ে নও ? ব্যক্তিগতভাবে তোমাকে বেদনা দিতে 
আমার একটুও ভালো লাগে না-- কিন্তু বিধাতার অভিসম্পাতে 
যে বেদনা প্রায় বিশকোটি হিন্দুর প্রাপ্য চোখ বুজে নিজেকে 
ভুলিয়ে তুমি তার থেকে নিষ্কৃতি পাবে কী করে? এ সমস্ত 
স্যায়শাস্ত্রের তর্ক নয়-_ এ সমস্ত দুর্ভাবন। চতুর্দিকব্যাপী স্থকঠোর 
বাস্তবতার উপরে প্রতিষ্ঠিত। রাষ্িক অধিকারের ভাগবাটোয়ারা 
নিয়ে আলোচন। চল্চে আজকাল-_ যেন লঙ্কাভাগ করতে বসেচি 
অথচ সমস্ত লঙ্কাই যাচ্চে তলিয়ে। তুমি তো সন্তানের জননী, 


৯0১৪ ২০৯ 


হিন্লুসমাজের ভবিষ্যৎ তোমার ছেলেমেয়েদের হূর্ববল স্থন্ধে চাপিয়ে 
দিয়ে একদিন তুমি চলে যাবে। কিন্তু সে কী ভবিষ্যৎ ভেবে 
দেখো । 
আমার এই সমস্ত কথা শুনে কখনো মনে কোরো না 
তোমার প্রতি আমি নিম্মম। তোমার আচার বিচার যেমনি 
হোক্‌ না কেন তোমাকে আমি স্সেহ করতে পারব না আমার 
হৃদয় এত কৃপণ নয়। আমার প্রতি বিশ্বাস রেখো এবং ভূল বুঝে 
নিজেকে পীড়ন কোরো না । ইতি ১৬ অক্টোবর ১৯৩৩ 
দাদ! 


১২৫ 
২২ অক্টোবর ১৯৩৩ 
ও 

কল্যাণীয়াস্থ 

শরীরটা ভালো নেই । ভাবচি বোটে করে গঙ্গীযাত্র! করব। 
খড়দহের সামনে বোট বাঁধা আছে । যদি যাওয়া নিশ্চিত স্থির 
করি কলকাতা হয়ে যেতে হবে তখন তোমার সঙ্গে দেখা হতে 
পাঁরে। মতামত নিয়ে তোমার সঙ্গে আর বাদানুবাদ করব না 
মনে করি, স্বভাবদোষে হঠাৎ বকুনির উদ্ভব হয়। তুমিও চুপ 
করে সহ্য করবার মেয়ে নও, তাই ছন্দ বাধে । ওর চেয়ে, তুমি 
যে খিচুড়ি রধবার প্রণালী লিখে পাঠিয়েছ সেটা অনেক বেশি 
উপাদেয়। আমাদের এখানে একজন রন্ধনপটু ভোজনবিলাসী 
মানুষ আছে সে তোমার ডাল ও খিচুড়ির স্বাদ গন্ধ কল্পনা করে 


২১০ 


পুলকিত, আমাকে যথাবিধি রেঁধে খাওয়াতে প্রতিশ্রুত হয়েছে। 
এমনি করে পরোক্ষে তোমার ভোজের নিমন্ত্রণ মাঝে মাঝে 
আমার ভাগ্যে জুটবে এমন একটা পন্থা পাওয়া গেল। সেই 
মানুষটা কিছুদিন থেকে নূতন প্রণালীর মোচার ঘণ্ট কোথা থেকে 
আবিষ্কার করে উত্তেজিত হয়ে আছে। একদা পদ্মার চরে 
নাটোরের মহারাজ জগদিন্দ্র কিছুকাল আমার অতিথি ছিলেন 
_- প্রতিদিন তার জন্যে নূতন একটা করে ভোজ্য আমি উল্ভাবন 
করেছি-_ সেটা প্রস্তুত করবার ভার ছিল ধার পরে তারও কিছু 
কৃতিত্ব তার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। এসব তিনি লিখে রেখেছিলেন 
খাতায়, সেই খাতা দখল করেছিল আমার বড়ো মেয়ে__ সেও 
নেই, খাতাও অদৃশ্ত-_- গৌড়জন যাহে আনন্দে করিবে ভোগ 
খাছ্য নিরবধি, তার উপায় রইল না, অথচ রইল কতকগুলো 
কবিতা । ইতি ১১ আক্ট বর ১৯৩৩ 

দাদা 


১২৬ 
৫ নভেম্বর ১৯৩৩ 
ও 

কল্যাণীয়াস্থু 

তোমার বয়সের নিশ্চিত খবর আমার কাছে জানতে চেয়েচ। 
আমি ত্রিকালজ্ঞ নই তবু ধ্যানযোগে যেটুকু জানলুম তাঁতে বোধ 
হচ্চে তোমার বয়স একশো দেড়শোর কম হবে না দাশরথী 
রায়ের চেয়ে বোধ করি কিছু ছোটো হবে। ষাট বছর পূর্বে 


২১১৯ 


আধুনিক কালের প্রথম যুগে রবি ঠাকুর যে সব ছড়া রচনা করত 
সেগুলে! স্বভাবতই তোমার প্রাচীন বয়সের মনঃপুত ছিল। 
বর্তমান যুগের নবীন কবি রবীন্দ্রনাথ যে সব কবিতা রচনা করে 
তার অর্থ বোঝবার মতে! বয়স তোমার অনেককাল হোলো 
পেরিয়ে গেছে বোধ করি রবীন্দ্রনাথ জন্মাবার পুর্রেই | 
তোমার আগামী জন্মদিনে তোমাকে শিবায়ন মনসাঁমঙ্গল কিনে 
পাঠিয়ে দেব-_- পড়ে খুসি হবে, ভূষণের মাঁকেও পড়ে শোনাতে 
পাঁরবে-_ কিন্ত খুকুকে শোনাবার চেষ্টা করলে অশান্তির কারণ 
ঘটবে বলে আশঙ্কা করি । 

আমার এখানে সুধাকান্ত রায় চৌধুরী নামে একটি ভদ্রলোক 
আছে রন্ধন ব্যাপারেই তার সব চেয়ে উত্সাহ । তোমার পুর্ব 
পত্রের এক অংশ শুনে তার ওৎস্ত্ক্য প্রবল হয়েছিল। তোমার 
এবারকার চিঠির ত্রয়োদশপদী মোচার ঘণ্টর তালিকা দেখিয়ে 
তার উল্লাসবদ্ধন করব এই আমার অভিপ্রায় ছিল কিন্তু সেটা 
মীর নিয়ে গেল বলপুবর্বক। তারও রাধবার শক্তিও আছে 
অনুরাগ আছে। তাঁর সকলের চেয়ে বড়ো সখ বাগানে । 
তার বাড়িটি ঘিরে যে বাগান বানিয়েছে যে দেখে সেই বিস্মিত 
হয়। 

তোমাকে পুরো বহরের চিঠি লিখতে পারব না। দুর্বল 
শরীর নিয়ে গিয়েছিলুম বোটে, ইন্ফ্ুয়েপ্রা সংগ্রহ করে দুর্ববল- 
তর অবস্থায় ফিরে এসেছি-_- কিছুকাল নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রীমের 
প্রয়োজন । 

সেই যে পথিক ভদ্রলোকটির মাথায় বৃক্ষবুষ্টির দ্বার! 


২৯ 


052 
চু 


৫০ 
নি 


হরির এরি পয 5৮4০0৮-৮দী 
ভিন মাই ওর-9৮7৮শে ৫৫58৮ 
রা গর ০১০7 গস 0477৩ ০1৮ 
কহ পত_ ঠাসা জো কত পাস 
কি (১০৮৮ £বে | ৮৮০ গক্ঠ পুন 
৪9৭ 24৮7 £তি-0&ে সর ₹2৮ 
ডিন কিতা (হে গত তের 
99৭57 দরসে? সিট জি 
রিবা শির পা ০ত৫পঠিথ ৫" পরি 
কিউ” ৮7৮-৪1ব- গাবি-2//-4722০1 

এ কে বিবির তেল ০5724 
গ7%- ১ পত ৮ পন্য গ্ু্র্ত। 
(3১473 ৩০০৮০ গনি ৩১৫৮৭ 
শি১০৭- 844 কিডি ৮১/ভিধ ফেলা ন 
9৫2 এ) পরে 47৫৮3 2770 পরব 
৭7870. নিট এক ললিত ভেিকন 


গ/পাঠিত কত 9516 এনৈ৮/০০ারি-। 
.2/72/)ত০1477৭ 97877 9৫ 
চৌ154থ এপর্চি২ ৮894-27 এ ঠিশি 
৩১ পতি ৮৭1 ০740৩ 
পরের এর এরর ৭ 21০৭ 
রা বৈ এরা ভি নগ্ 
(07672 এষ ও 9১৮%% ও উপরি 
১ত্র-4+ 9 গেলি ্নি। সে £ 
/27% গনি রিকি) | 8৪৮৫ 1725 
খর্ি -গিবউ ঞ্ঞ। 5 পিন এর চের্টে 
764-4৮%৭- রী গা 2) নে টাও 0 
0০%-৮িঞ£ /থ ৮০০ /75/5-6৮-1 
ভি ১5৮৮ চি ঠ-5/75- 
৮7৩৮7 ( 17 7৮15. যেতে 
5৮ 4 $ভত- 54 রি 
একো কিক রিতিঝিফিঠা ভি/ব-পঞগন। 
৫0৫৮ পিক পারি 4০০/৭ ৫ াল 
পা পা রি 5 রে; এত 
টপ 22 ভার ঠা ঈলানিত- 47 1৯৮০ 
তা শে টিন ৩ প্লান 
৫) ঠথঠ খ্রি দিনা 


তরোরিব সহিষ্ণুতা সাধনার সুযোগ ঘটিয়েছিলে তার হাল 
অবস্থা জানবার জন্যে উৎকন্ঠিত আছি। তার বাড়ির গৃহিণী 
অনির্দিষ্টার উদ্দেশে কী রকম বাক্যবুষ্টি করচেন সেটাও জানবার 
যোগ্য । ইতি ৫ নবেম্বর ১৯৩৩ 

দাদা 


১২৬ 
[ নভেম্বর ১৯৩৩ ] 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার প্রাচীনতা নিয়ে উপহাস করেছিলুম | সেটা ফেরৎ 
নিতে চাই। এবারকার চিঠির সঙ্গে যে কবিতা পাঠিয়েছ 
সেইটেই যথোচিত উত্তর হয়েছে । দেখা গেল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
নামক আধুনিক তরুণ কবির কাব্যরস অন্তরে ও লেখনীমুখে 
গ্রহণ করতে পেরেছ। যদি তোমার সম্মতি পাই তবে ওটা 
কোনো একটা কাগজে প্রকাশ করতে ইচ্ছা করি। তোমার 
নাম প্রকাশ করা হয়তো তোমার অভিপ্রেত হবে না 
অনায়ীভাবেই চাঁলানে। যেতে পারে । 

শরীর ভালো নেই । আগামী ১১ নবেম্বর বোম্বাই যাত্র! 
করনে বাধ্য । কন্মবন্ধনের ফাস লাগিয়ে অনিচ্ছককে হেঁচড়ে 
টেনে নিয়ে যাবে। বোলপুর থেকেই যাত্রা করব। ফিরতে 
বোধ করি ১৫ ডিসেম্বর । 

তোমার চিঠিতে মাঝে মাঝে তোমার ইচ্ছাময়ী কনার 


২৯৩ 


যে ছবি পাই আমার খুব ভালো লাগে । তোমার প্ল্যানমতো 
ওর মনটাকে ছাঁচে ঢালাই করবার চেষ্টা কোরো না-_ ও নিজের 
ভিতর থেকে আপনাকে আপনি ঠিকমতোই উদ্ভাবিত করে 
তুলবে সেইটেতেই ওকে রমণীয় করবে সন্দেহ নেই। ওর যে 
স্বাতন্্্য আছে সেটা মূল্যবান জিনিষ । 
আজ আর আমার কলম চলচে না__ ছুটি নিই। ইতি 
দাঁদা 


১২৮ 
[ বোম্বাই ] ৩ ডিসেম্বর ১৯৩৩ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত 

ইতিমধ্যে বোম্বাইয়ে এসেছি বোধহয় খবরের কাগজে 
পড়ে থাকবে । ব্যস্ততার অন্ত ছিল না। বাংলাদেশের লোকের 
মতো এরা আমাকে অত্যন্ত বেশি জানে না, তাই আমাকে 
অত্যন্ত বেশি শ্রদ্ধা করে । তাই অভ্যর্থনার বিরাট পর্ধের পালা 
চলচে। এতটা আমার সয় না। এখান থেকে কাঁল যাত্রা 
করব ওয়াল্টেয়রে, সুদীর্ঘ পথ । সেখানে পৌঁছিয়েই বক্তৃতার 
পর্যায় আরম্ভ হবে। তার সঙ্গে অভিনন্দন ইত্যাদি । তার 
পরে খুব সম্ভব ১২ কিম্বা ১৩ই ডিসেম্বরে সেখান থেকে যাত্র! 
করে কলকাতায় গিয়ে হাজির হব ১৪ই কিন্বা ১৫ই | সেখানেও 
কিছু কাজ আছে-_ জোডাসাকোয় ছুই একদিন থেকেই বরা- 
নগরে আশ্রয় নিতে হবে-_ কলকাতায় প্রাণ হাপিয়ে ওঠে । 


২১৪ 


অবশেষে শান্তিনিকেতন । এখানকার লোকদের খুসি করতে 
পেরেচি কারণ বাডালীর মতো! এর! নিরতিশয় বুদ্ধিমান নয় । 
অসুস্থ শরীর নিয়ে এসেছিলুম এখানে ভালো আছি। ইতি 
৩ ডিসেম্বর ১৯৩৩ 
দাদা 


১২৪৯ 
৪ জানুরারি ১৯৩৪ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ 

অকম্মাৎ তোমার চিঠিতে অত্যন্ত ক্ষোভের ভাষা দেখে আমি 
কারণ কিছুই ভেবে পেলুম না। তুমি লিখেছ সাহিত্য আশ্রয় 
করে আমি তোমাকে লাঞ্কিত করেছি-- কোথায় করেছি অনেক 
ভেবে স্থির করতে পারি নি__ অর্থাৎ আমার কোন্‌ লেখার কোন্‌ 
অংশে এমন কিছু আছে যার থেকে তুমি কল্পনাও করতে পারে 
যে আমি তোমাকেই লক্ষ্য করে বিদ্বেষ প্রকাশ করেছি আমি 
তা অন্থমান করতে পারলুম না। এমনতরো প্রচ্ছন্ন আঘাত 
আমি তোমার প্রতি প্রয়োগ করতে পারি এও তুমি কী করে 
চিন্তামাত্র করতে পারো! এই আমার কাছে নিরতিশয় বিস্ময়কর 
মনে হচ্চে । আমার স্বভাবে এ রকম হীনতা নেই এ তুমি নিশ্চয় 
জেনো । এর থেকে এইটুকুই ধরে নিচ্চি যে আমার স্বভাব তুমি 
কিছুই জানো না । 

আমি কোনে দিন তোমাকে দুঃখ দিতে ইচ্ছে করি নি। 


২১৫ 


ধন্ম এবং আচার সম্বন্ধে তোমার সঙ্গে আমার মূলগত প্রভেদ 
আছে সেই দ্রিক থেকে তোমাকে যদ্দি পীড়া দিয়ে থাকি সে 
অনিবাধ্য-_ সে তোমার প্রতি নির্মমতাঁবশতঃ নয় । যাই হোক 
তুমি আমাকে ভূল বুঝো৷ না । 

আশঙ্কা করেছ তোমার চিঠিপত্রে চাপল্য প্রকাশ করে তুমি 
আমার গৌরবহানি করেছ। গৌরবের প্রতি আমার লেশমাত্র 
লোভ নেই। আমাকে তোমাদের সমান ক্ষেত্রে আপন বলে 
স্বীকার করে নিয়েছ, আমার সঙ্গে সাধারণভাবে গল্প করতে 
হাস্যালাপ করতে সঙ্কোচ বোধ কর না এতে আমি খুসি থাকি__ 
তোমার প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার কথ! শুনতে আমার ভালোই 
লাগে। তোমাকে গান্তীধ্যের দ্বারা অভিভূত করা আমার 
স্বভাবসিদ্ধ নয়! 

কচিকে অনেক দিন পরে দেখে ভালো লাগল । তোমাকে 
নিয়ে একদিন আসবে বলেছিল-_ বোধ হয় স্বযোগ হয় নি। 
ইতি ৪ জানুয়ারি ১৯৩৪ 

দাদা 


১৩০ 
শ জানুয়ারি ১৯৩৪ 
ঙ 
কল্যাণীয়াস্তু 
আমার শরীর খারাপ, ভালো করে লিখতে পারবনা । 
তোমার চিঠি পড়ে মনে বেদনা পেলুম । আমি যদি তোমার 


২৯৬ 


দুঃখের কোনো কারণ ঘটিয়ে থাকি সে আমার জ্ঞানকৃত নয়__ 
ইচ্ছাকৃত হতেই পারে না। 

তুমি যে প্রশ্ন জিত্ভাসা করেচ তাঁর উত্তর দেওয়া সহজ 
নয়। ধন্মবিশ্বাস প্রভৃতি সম্বন্ধে তোমার সঙ্গে আমি যা কিছু 
আলোচনা করেচি সে তোমার বুদ্ধিকে স্পর্শ করে থাকবে 
কিন্তু তোমার সংস্কীরকে পরাভূত করতে পারে নি। যে পথে 
তোমার পুজাবৃত্তি এতকাল তৃপ্তি পেয়েছে সেই পথেই তোমার 
হৃদয় স্বভাবতই ছুটতে চায়। তোমার বৃদ্ধিশক্তি আজ তাকে 
বাধা দিয়েছে কিন্ত বিমুখ করতে পারে নি। এই ছন্দ নিয়ে 
তোমার স্বভাব আজ পীড়িত। এই ব্যথা তোমাকে আমি 
দিয়েচি-__ গভীরতর ভাবে তাতে তোমার ক্ষতি হয়েচে বলে মনে 
করি নে। ভক্তকে বুদ্ধি থেকে ভ্রষ্ট করলে তাঁর মূল্যহানি করা 
হয়-_ তাতে নিজের মনুষ্যত্বের অবমানন! ঘটে | 

যাই হোক সম্প্রতি তুমি নিজেকে যে কাল্পনিক ছঃখে উদ্ভ্রান্ত 
করেছ সেটাকে প্রশ্রয় দিয়ো না। আর যাই হোক আমার 
প্রতি অবিচার করা তোমার উচিত হয় না। আমি তোমার প্রতি 
কোনে নিম্মমতা করি নি__ করা আমার পক্ষে সম্ভবপর নয়। 
ইতি ৭ জানুয়ারি ১৯৩৪ 

দাদ! 


২১১৭ 


১৩১ 


[ শান্তিনিকেতন ] ১২ জানুয়ারি ১৯৩৪ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্থু 

কলকাতায় যেতে বোধ করি আরে। কিছুকাল দেরি হবে। 
পনেরোই মাঘ নাগাদ সেখানে আমার যাবার সম্ভাবন।। 

গেলবার কলকাতায় থাকতে তোমরা আমাকে মিষ্টান্নের 
ডালি পাঠিয়েছিলে। তার প্রাপ্তিসংবাদ দিতে কেন ভুল 
হোলে সে কথাট। খুলে বলি। যেদিন উপহার পাওয়া গেল 
তার পরদিনেই আমার বৌলপুরযাত্র৷ ছিল স্থির। তাই সেই 
ভোজ্যগুলি পূর্বেই পাঠিয়ে দিয়ে বসেছিলুম। ইতিমধ্যে সংবাদ 
পাওয়।৷ গেল অনেকগুলি পরদেশিনী মেয়ে সেই ট্রেনেই চলেচেন 
শান্তিনিকেতন দেখতে । এরা ভারতের নানা প্রদেশ থেকে 
এসেছিলেন নিখিলভারত নারীসম্মেলন সভায়। আমার তখন 
মন ক্লান্ত ছিল তাই ভয় পেয়ে গিয়ে যাত্রা পিছিয়ে দিলুম। 
আমার মিষ্টালাপের পরিবর্তে মিষ্টান্ন গুলি সেই অতিথিদের 
ভোগে লেগেছিল। শুনেছি তারা পরম পরিতৃপ্তির সঙ্গেই সেগুলি 
নিঃশেষে সমাধা করেচেন। এই পুণ্যের ভাগী কে হবে সে 
প্রশ্থের উত্তর সহজ নয়। তাদের প্রতি এ আমার ইচ্ছাকৃত 
আতিথ্য ছিল না, তাদের প্রতি তোমারও এ ইচ্ছাকৃত দান নয়। 
যা হোক এখন অন্তত নিজের মনের লোভ ও দাবী দূর করে 
দিয়ে তাঁদের ভুক্ত দ্রব্য মনে মনে তাদেরই কাছে উৎসর্গ করি। 
তোমার পুণ্য এই, তুমি অজ্ঞানত আমার অতিথিসেবায় সহায়ত 


১৮ 


করেছ, এখন তাতে তোমার সঙ্ঞান সম্মতির যোগ দিয়ো । রথী 
এখানে ছিলেন তিনি অংশ পেয়েছেন এবং আয়োজনের 
উপাদেয়তাসম্বন্ধে প্রচুর প্রশংসা করেচেন। ইতি ১২ জানুয়ারি 
১৯৩৪ 


দাদা 


৯৩২ 


২২ জানুয়ারি ১৯৩৪ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

তোমার পিঠে রচনাপ্রণালীর তালিকা বৌমাকে দিয়েছি-_ 
আশ। করি দেওয়াট। সার্থক হবে। ইতিমধ্যে প্রতিবেশিনীদের 
কাছ থেকে রবিঠাকুর পিঠের নৈবেছ্ মাঝে মাঝে পেয়েছেন । 

সেদিন ভূমিকম্প যখন ঘটল সেই সময় চৌকিতে বসে 
আমার ডেস্কটাকে আবর্নামুক্ত করছিলুম। ডেস্ক এবং চৌকি 
একসঙ্গেই মাথা নাড়লে, সেটাকে আমি দৈবসঙ্কেত বলে মনে 
করি নি। প্রাকৃতিক উৎপাতের জন্যে মানুষের পাপপুণ্যকে দায়ী 
করবার মতো! মনোভাব আমার নয়, অন্ধ নিন্মম প্রকৃতি আমাদের 
কৃত্য অকৃত্যের হিসাব রাখে না, তার হিসাব জড়শক্তির ঘাত 
প্রতিঘাত নিয়ে । 

এখানে আমার কাজ আছে ২৩শে মাঘ পধ্যন্ত। তার পরে 
কলকাতার প্রতি মনোযোগ করবার অবকাশ হবে । হয়তো! ২৫ 


২১৪ 


তারিখে কলকাতায় যাব। সেখানে আমাদের ঘরকন্নার ব্যবস্থা! 
যথোচিত নেই তাই আশ্রয় নিতে হবে বরানগরে । বরানগরের 
ঘাটে আমাদের বোট আছে সেখানেও কদাচিৎ দিনযাঁপন 
করব। কচিকে বোলো কোনো এক সময়ে তোমাকে নিয়ে 
আসবে তাহলে দেখা হতে পারবে । শীত খুব প্রবল সেটাও 
আমার বিশ্বাস সৃধ্য ও পৃথিবীর মধ্যে কোনো একটা বোঝাপড়া 
নিয়ে-_ পুর্ধজন্মে তুমি দজ্জির দেনা শোধ করতে ভুলেছিলে 
বলে নিশ্চয়ই নয়। ইতি ৮ মাঘ ১৩৪০ 

দাদ! 


১৩৩ 


২৭ জানুয়ারি ১৯৩৪ 


৫১ 


কল্যাণীয়াস্ 

তোমার চিঠিতে যখন তুমি বৈজ্ঞানিক তত্বের অবতারণা 
করো তখন বুঝতে পারি সেটাকে পুরোপুরি গ্রহণ করবার শিক্ষা 
আমার হয় নি, কিন্ত তোমার পিঠে প্রস্তুতের প্রকরণ পড়লে 
পরীক্ষার পূর্বেই বুঝতে পারি সেগুলো শ্রদ্ধার যোগ্য । এমন কি 
বৌমা তোমার রচিত পৈষ্টকী সাহিত্য সযত্বে রক্ষা করবার 
অভিপ্রায় প্রকাশ করেচেন-_ শাস্ত্র অনুসারে তোমার এই লেখা- 
গুলিকে কাব্য বলা যেতে পারে কেনন! সাহিত্যদর্পণ বলেচেন 
বাক্যং রসাত্মকং কাব্যম।_- তোমার চিঠিতে ভূমিকম্পকে 


চা 


আমাদের পাপের ফল বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলে । মনে 
আছে এর আগে বাংলাদেশে যে ভূমিকম্প হয়েছিল তারি কিছু- 
কাল পরে জাহাজে করে কটকে যাচ্ছিলুম । শুনতে পেলুম আমার 
চৌকির কাছাকাছি বসে একটি বাঙালি মেয়ে তার সঙ্গিনীকে 
কানে কানে বলছিল, হবে না ভাই? দেখলি তো আমাদের 
পাড়ায় অমুক ইত্যাদি।_- তোমার মুখেও এ ধরণের কথ। 
শুনেচি। তার পরে কাল খবরের কাগজে পড়ে দেখলুম মহা আ্নাজিও 
এ ধরণের কথা বলেছেন, জানিয়েচেন অস্পৃশ্তাদের প্রতি 
অত্যাচারের ফলে ভূমিকম্প ঘটচে । তার থেকে বুঝলুম যে --: -*. 
এর পরে ভূমিকম্প সম্বন্ধে বিজ্ঞানের মন্ত্র তোমার কাছেই 
আমাকে নিতে হবে দেখ্চি। বিধাতা তাঁর পুণ্যের জোরে 
স্থষ্টি করেন, আমরা পাপের জোরে তা ভেঙে চুরে দিতে পারি 
এ তো কম অহস্কীরের কথা নয় । জীবনে অনাচার অত্যাচার 
অনেক করেচি ভয় হচ্চে কোন্‌ দিন সকাঁলে উঠেই দেখব 
স্র্্য গেছে নিবে আর রান্না চড়িয়ে দেখা যাবে উনন থেকে 
জলের ফোয়ারা উঠচে। যতদূর পারি ভালো! ছেলে হবার চেষ্টা 
করব। ১৩ মাঘ ১৩৪০ 

দাদ! 


২১ 


১৩৪ 
[ শান্তিনিকেতন ] ১ মার্চ ১৯৩৪ 


৫ৎ 


কল্যাণীয়াস্ 

ইতিমধ্যে তোমাকে চিঠি লেখার ব্যাঘাত কেন ঘটেচে তার 
ইতিহাস সংক্ষেপে বলি। যেদিন তোমার চিঠি পাই সেই দিনই 
শান্তিনিকেতনে ফিরতে হোলো এখানে বসন্ত উৎসবের আয়োজন 
আমার জন্তে অপেক্ষা করছিল । এখানে পৌছবাঁর পরদিনই 
হিন্ুস্থান কোঅপরেটিভ ইন্সুরেন্স আমাকে বারে বারেটেলিগ্রাম 
বর্ষণ করতে তুর করলে__ ওদের পঁচিশ বৎসরের সাম্বংসরিক 
উপলক্ষ্যে গার্ডন্‌ পার্টি, আমি ন! গেলে নয়। প্রথমে করলুম 
অস্বীকার-_ কিন্তু এ রকম ক্ষেত্রে ভালো মানুষদের হার হয়। 
এখান থেকে বর্ধমান, তাঁর পরে বদ্ধমান থেকে তাদের মোটরে 
করে কলকাতায় গিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা করলুম আত্মরক্ষার পরিবর্তে । 
তার পর দিনে কলকাতায় আর এক নিমন্ত্রণে জড়িয়ে পড়লুম, 
কোনে আত্মীয়ের বিবাহসান্বংসরিক। এড়ানো অসম্ভব হোলো । 
পরদিন প্রাতেই ইন্ন্ুরেন্সের মোটরে চড়ে বর্ধমান, এবং বর্ধমান 
থেকে এখানে পেঁবছলুম অপরাহ্নে। তাঁর পর থেকে উৎসবের 
ব্যবস্থা । আজ উৎসবের দিন। সকাল বেলার পালা সেরে 
এসে তোমার চিঠি পেলুম। চার দিকে আজ অভ্যাগত 
আগন্তকের ভিড়। কোনোমতে সময় করে নিয়ে তোমাকে এই 
আশ্বাসবাণী জাঁনাচ্চি, এখনো বেঁচে আছি । আজকের দিনের 
কাজ শেষ করে কালও বোধ হয় টি”কে থাকব । তুমি নিরু দ্বিগ্ন 


শখ 


চিত্তে নিজের চিকিৎসায় মন দিয়ো, ওষুধ এবং পথ্য সম্বন্ধে 
নিয়মপালনে ওদাসীন্য কোরো না। তোমার শরীরে কোনো 
রোগ নেই সে আমি পুর্ধবেই নিশ্চিত জানতুম-_ নিজের মনের 
প্রতি তুমি নিম্মম, কল্পনার যোগে তাকে কারণে অকারণে 
নিয়তই পীড়ন করা তোমার অভ্যস্ত হয়ে এসেচে। তোমার 
কল্পনীকাশে উনপঞ্চাশ বায়ু এলোমেলো ভাবে বইতে থাকে, 
সোজ৷ জিনিষকে বাঁকিয়ে দেয়, আস্ত জিনিষকে ভেঙে ফেলে । 
সেই বায়ুকে শীস্ত করবার কোনে! ওষুধ যদি কবিরাজের ঝুলিতে 
থাকে তাহলেই তুমি শান্তি পাবে। আমার কাছ থেকে যদি চিঠি 
না পাও তাহলে নিশ্চয় জেনো তার কারণটা নিতাস্ত বাহ্যিক 
এবং উপেক্ষার যোগ্য-_ কখনো! থাকি ক্লান্ত, কখনো থাকি ব্যস্ত, 
কখনো! থাকি অন্যমনস্ক, তাছাড়া আলস্য আমার স্থষ্টিকর্ত। 
আমার মজ্জায় সঞ্চার করে দিয়েছেন__ তাঁর অমোঘ বিধানের 
বিরুদ্ধে হার মানতেই হয়। ইতি দৌলপুণিমা [১৭ ফাল্গুন] ১৩৪০ 

দাদ। 


১৩৫ 


৮ মার্চ ১৯৩৪ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্তু 

বাসম্তী ফুলের খবর জানতে চেয়েছ। ভাষায় বর্ণনা করে 
জাঁনাবার উপায় নেই। একটি ফুল চিঠির মধ্যে পাঠালুম__ 
কিন্তু ডাকঘরের দলনে পিষ্ট হয়ে যখন তোমার হাতে পৌঁছবে 


৩ 


তখন নিষ্ঠুর শাশুড়ীর গীড়নে অবসন্ন নববধূর মতো ওর পরিচয় 
ক্রিষ্ট হয়ে যথার্থ আত্মপ্রকাশ করতে পারবে না। বসন্তের প্রথম 
সমাগমের আমন্ত্রণে এই ফুল আমার বাগানে গাছ ভরে ফুটে 
উঠেছে__- এর কচি পাতাগুলি সিঁদূরে বরণ, তারি স্তরে স্তরে 
সোনার রঙের অজত্র ফুল যেন বসন্তের বীণায় বাহার রাঁগিণীর 
বঙ্কার লাগিয়েছে, বাতাসে দিয়েছে সুগন্ধের মীড়। এই সময়- 
টাতেই আর এক জাতের শাদা ফুল গোল গোল মঞ্জরীতে 
শাখার গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। এখানকার লোকের 
কাছে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে বলে বুনে! ফুল নাম জানা 
নেই। আমরা সেই অনাদূত জঙ্গল থেকে আনিয়ে কিছুকাল 
আগে বাগানে লাগিয়েছিলুম এখন তার পুরস্কার পাচ্চি। 
সৌন্দধ্যে ও সৌগন্ধ বহুদূর পর্য্যন্ত কৃতজ্ঞতা বিস্তার করেছে। 
আমি এর নাম দিয়েছি বনপুলক। এর গুচ্ছ কতকটা রঙন 
ফুলের মতো, কিন্তু এ অন্য জাতের-_ এর গন্ধ কোমল অথচ 
ব্যাপক । এরা বসন্তের প্রথম দূতী, খতুরাজের আগমন ঘোষণা 
করেই রঙ্গভূমি ত্যাগ করে নেপথ্যে চলে যায়। এরা যেন 
নাটকের নান্দীর মতো-_ ছুটি একটি শ্লোকেই কাজ সেরে এর! 
বিদায় গ্রহণ করে। এদের আর একটি সহচরী আছে, সে 
মাধবী । দেখা দেয় শাখায় শাখায় মর্জরিত হয়ে, বেশি দিন 
থাকে না, বধূ যেন শ্বশুর বাড়িতে এসেই বাপের বাড়িতে 
ফেরবার জন্যে উতলা হয়ে ওঠে । আর একটি ফুল শীত ফুরোতে 
ন! ফুরোতে আমার বাগানে দেখা দিয়েছে, সে কাঞ্চন। তার 
প্রগল্ভতার অস্ত নেই, সমস্ত গাছ যেন মুখরিত করে সে খিল্‌- 


২৪ 


খিল্‌ করে হেসে উঠেছে । বনভূমিতে সকলের আগে সেই চোখে 
পড়ে। আমাদের শালবীথিকা দেয় বসন্তের শেষ বিদায় অঞ্জলি, 
তরুতল বিকীর্ণ করে দেয় ঝরা পাপড়িতে, দক্ষিণ বাতাসের পথে 
প্রসারিত করে দেয় সৌরভের আস্তরণ। আর এই সঙ্গে আছে 
আমের মুকুল, তার তর সয় না, মাঘের সুরু থেকেই সে অভিসার 
আরম্ভ করে। এবারে শিলবৃষ্টিতে আর কুয়াশায় সে মুহ্যমান 
হয়ে গেছে, মৌমাছিদের নিমন্ত্রণের আসর জম্ল না । 

রথী ও বৌম! ভুবনেশ্বর থেকে ফিরেছেন। সেখানে ভালো 
ছিলেন । আমিও যাব সঙ্কল্প করেছিলুম, হয়ে উঠল না। বহুকাল 
পুর্ব একবার গিয়েছিলুম, খুব ভালো লেগেছিল-_ পুরীর চেয়ে 
অনেক উৎকৃষ্ট । ইতি ৮ মাঁচ্চ ১৯৩৪ 

দাদ! 

রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাবার লোক পেয়েছ শুনে ভীত হলুম__ 
সেরকম লোক কলকাতায় আছে বলে জানিনে। বিকৃত করে 
শেখাবে । তোমার মেয়েকে এখানে পাঠিয়ে দাও, রবীন্দ্রসঙ্গীতে 
ওস্তাদ করে দেব। কিন্তু নজরুলের গান আমরা জানিনে। 


১৩৬ 
২৯ মার্চ ১৯৩৪ 
ও 
কল্যাণীয়াস্ত 
অনেকখানি কুঁড়েমি এবং কিয়ৎপরিমাণ কাজ নিয়ে আমার 
সমস্ত সময় জোড় ছিল। বসন্তের আসর বেশ সরগরম হয়ে 


৯0১৫ ২২৫ 


উঠেছে__ এখন সামনের এ দৌলায়মান পুম্পিত লতামণ্ডপের 
দিকে তাকিয়ে যা ইচ্ছে তাই অনাবশ্যক কল্পন। নিয়ে কেদার৷ 
জুড়ে পড়ে থাক! ছাডা আর কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। 
লেখবার ডেস্ক থেকে দূরে থাকি-__ উঠে গিয়ে কর্তব্য সমাধা করি 
শরীরে মনে এতটা উদ্যম নেই। অলস মনট। পায়চারি করে 
বেড়ায় দূর অতীত কালে যখন বয়সের সঙ্গে বসন্তের সহযোগিতা 
ছিল। 
সম্ভবত আগামী সোম কিন্ব৷ মঙ্গলবারে কলকাতা অভিমুখে 
যাব। সেখানে আমার আতীয়বর্গ রক্তকরবী অভিনয়ে প্রবৃত্ত, 
তাদেরি আহবানে আমাকে যেতে হচ্চে । কর্তব্য সমাধা হলেই 
ফিরে আসতে হবে। কলকাতায় থাকবার উপযুক্ত সময় এখন 
নয়। ইতি ২৯ মা্চ ১৯৩৪ 
দাদা 


১৩৭ 
২ এপ্রিল ১৯৩৪ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত্ 

আগামী বুধবার সন্ধ্যাবেলায় কলকাতায় পেৌছব। এবার 
জোড়াসাকোতেই অল্প কয়েকদিন কাটাবার সম্ভাবনা আছে। 
যদি পারো, দেখা করতে এসো, খুসি হব। বসন্তের প্রতাপ 
ক্রমশ কিছু উগ্র হয়ে উঠচে-_ নিদাঘকে এরই মধ্যে যৌবরাজ্যে 
অভিষেক করা হোলো বলেই অনুভব করচি। গ্রীষ্ম আমার 


২৬ 


জন্মধতু, তার বিরুদ্ধে কখনো নালিশ করি নে। আমার অধিকাংশ 
কবিতার রচনাকাল গরমের দিনে, এবং বর্ষায় । শীতের মাসগুলে। 
কন্মের মাস-_ যত দায়িত্বের বোঝা তখন কাধে এসে চাপে। 
আমার মনের স্বরাজ হচ্চে গরমের দিনে । আমার কাব্যে রুদ্র- 
দেবের এত বেশি অবতারণ! দেখতে পাও তার কারণ রৌদ্রেই 
আমার চিত্তের অভিষেক-_ রুদ্রের তাপতপ্ত ললাটের তৃতীয় 
নেত্ররই দীপ্তি বিগলিত করেছে আমার কাব্যধারাকে । ইতি ২ 
এপ্পেল ১৯৩৪ 

দাদা 


৯৩৮ 


[ কলিকাতা ] ৭ এপ্রিল ১৯৩৪ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

কাল রক্তকরবী অভিনয় থেকে শ্রান্ত দেহে ক্লান্ত মনে 
জোড়াসীকোঁয় ফিরে তোমার প্রেরিত ফল ও মিষ্টান্নের অধ্য দেখে 
খুসি হয়েছি-_- আজ প্রাতঃকাল থেকে একাধিকবার ওগুলি 
আমার ভোগে লেগেছে আরো একাধিকবার লাগবে এমন 
সম্বল এখনো অবশিষ্ট আছে। ভালো না লাগলে ভোজের এমন 
পুনরাবৃত্তি ঘটত না। তোমার চিঠিখানি থেকে অনেকদিন পরে 
একটা রহস্তের উদ্ভেদ হোলো । একটা টিফিনবাহিনী হঠাৎ আমার 
তৈজসপত্রের অন্তর্গত হয়ে বিরাজ করচে দেখা গেল, যাকেই 
জিজ্ঞাসা করি কেউ তাঁর মালেকের খবর বল্‌্তে পারে না 


২২৭ 


অত্যন্ত কুন্টিত হয়ে আছি; কী করে দায়মুক্ত হতে পারব সে 
চিন্তা অনেক করেছি কিন্তু কেবলমাত্র চিন্তার দ্বারা সমহ্যার 
সমাধান সম্ভবপর না হওয়াতে এই টিফিনবাহিনী জন্বন্ধে পর- 
জন্মের একটা! ছুর্গতির কারণ স্যষ্টি করে বসে আছি। এবার 
দায়মোচনের উপায় হোলো। যদি বলো কালুঘোষের লেনে 
লোক মারফৎ পাঠাতে পারি__ অথবা তুমি স্বয়ং যদি কোনো 
সত্রপায়ে তোমার সম্পত্তি উদ্ধারের পথ করতে পারো, আমার 
পক্ষ থেকে বাধা পাবে না। 
আগামী কল্য প্রাতে এখান থেকে বরানগরে প্রস্থান করব। 
ুচাঁরদিন পরেই ফিরব শীস্তিনিকেতনে । তার পরে হপ্তাকয়েক 
বাদে যাত্রা! করব সিংহলে । তুমি মেয়েকে নিয়ে যাবে গৌরীপুরে 
__ খুকুর কথ চিন্তা করে আমি মনে বেদনা বোধ করি। তাকে 
আমার আশীব্বাদ জানিয়ো | ইতি ৭ এপ্রেল ১৯৩৪ 
দাদ 


১৩৯ 


১১ এপ্রিল ১৯৩৪ 
ও শান্তিনিকেতন 
কল্যাণীয়াস্ত 
চলে এসেছি স্বস্থানে। পথে বৃষ্টিধারা আমার অনুসরণ 
করেছে। এখানে এসে দেখি গাছে গাছে কবির অভ্যর্থনা প্রস্তুত 
হয়ে রয়েছে, ঝল্মল্‌ করচে পাতাগুলি। বৃষ্টির আশা এখনো 
দিগন্তে পুর্জিত হয়ে আছে। 


২২৮ 


আমরা সিংহল বিজয়ে যাত্রা করব ২২২৩শে বৈশাখে । 
এবারে আমার জন্মদিন দেখা দেবে সমুদ্রে। চিরদিনই আমি 
পারের যাত্রী, কোনো শান-বাধানো ঘাটে আমি কখনো নৌকা! 
বেঁধে দিন কাটাই নি, অতএব সমুদ্রপথেই আমার জন্মদিন 
সার্থক। বার বার পথে পথে আমার জন্মদিনের আঁবিউাব 
হয়েছে, কোনো একটা পথপ্রান্তেই বোধ করি তার সমাপন 
হবে। 
মালঞ্চ এখনে! হাতে পাই নি, পেলেই তোমার কাছে পাঠিয়ে 
দেব। আমার উপর দেশের ছূর্গতি মৌচনের ভারার্পণ করে যে 
ফর্দ পাঠিয়েছ, দেখে আমার হৎকম্প হোলো । আমি সামান্য 
কবি মাত্র, সংস্কারক নই | স্বদেশের উপকার করবার যোগ্যতা 
থাকলে লাইন মিলিয়ে ছড়! লিখে বয়স কাটিয়ে দিতৃম না । 
ঝুড়ি ঝুড়ি কবিতার বই লিখেছি, তার সময় পেতেম কোথায় । 
আশ! করি আমার স্থষ্টিকর্তী আমাকে ক্ষমা করবেন__ কারণ 
আমাকে তিনি তার নিজেরই মতো দায়িত্ববিহীন কাজে নিযুক্ত 
করেছেন। ইতি ১১ এপ্রেল ১৯৩৪ 
দাদা 


তোমার মন সম্পূর্ণ সুস্থ হোক এই প্রার্থনা করি। খুকুকে 
আমার আশীর্বাদ জানিয়ো। 


২৯ 


১৪৪ 


১৭ এপ্রিল ১৯৩৪ 


2৫ 


কল্যাণীয়াস্তু 

তোমাকে “পুনশ্চ” বইখানি আমি দিই নি তার কারণ মনে 
ভয় ছিল পাছে এর স্প্টিছাড়া আধুনিকতায় তোমার মন বিগড়িয়ে 
যায়। অনেক গণ্যমান্য লোকও এটাকে নিয়ে হাস্ত পরিহাস 
করেছে এবং বলেছে তারা তাদের প্রতিদিনের বাক্যালাপে 
আজন্মকাল এই “পুনশ্চ” কাব্যই রচনা করে আসচে। অথচ 
একটা আশ্চর্যের বিষয় এই, ইদানীং আমার অন্য বইয়ের চেয়ে 
“পুনশ্চ”র কাটতি বেশি। এরই মধ্যে দ্বিতীয় সংস্করণ ছাপতে 
হচ্চে। 

5১০৮ একরকম কাঠের তল! দেওয়া জুতো-_ যুরোপের 
অনেক দেশে সাধারণ লোকদের মধ্যে চলিত আছে । এ কথাটা। 
তোমার ডিক্সনারিতে পাও নি সে জন্তে সঙ্কলনকারীকে দণ্ডনীয় 
করা চলবে না-_ কেনন! ও কথাটার প্রয়োগ ইংরেজি সাহিত্যে 
বিরল। “অনুবাদচর্চচা” বলে আমার ছুখণ্ড বই আছে, একট! 
ইংরেজি একটা বাংলা, সেই ছুটো৷ অবলম্বন করে তুমি এবং খুকু 
প্রত্যহ যদি তর্জম! অভ্যাস করে যাও তাহলে ইংরেজি শেখার 
কাজে লাগবে । বইখান! হাতের কাছে থাকলে তোমাকে পাঠিয়ে 
দিতুম। মূল্য সামান্য কিন্ত তার উপযোগিতা তার চেয়ে অনেক 
বেশি-_ দোষ নিয়োনা, নিজের কীন্তি ঘোষণা করার প্রয়োজন 
হলে সেটা করা কর্তব্য ।-__ কৃষ্ণপক্ষের অবসান কালে ঝড়বৃষ্টি 


২৩, 


হয়ে গেছে, শুরুপক্ষে রৌদ্র প্রখর হয়ে উঠল-_ অতএব এখন 
দ্বীপান্তর শ্রেয়, চল্লুম সিংহলে-_ তোমরা গৌরীপুরে পল্লিলক্ষ্মীর 
সিপ্ধ হস্তের শুশ্রাধা ভোগ করোগে । ৪ বৈশাখ ১৩৪১ 

দাদ। 


এইখানে আর একটা কথা বলে নিই। বঙ্গগ্রীতে তুমি 
আমার লেখা দেখে বিস্মিত হয়েছ। ওর কারণটা এই, এখন 
অন্নাভাব। লেখা বিক্রয় করা ছাড়া জীবিকার অন্য সাধু উপাঁয় 
জানি নে। শ্রুত ছিলেম যে উদয়ন ও বঙ্গশ্রী কাগজের মালেকরা 
ধনশালী, লেখার মূল্য দাবী করলে সেটা ব্যর্থ হয় না। তাই 
সজনীকে লেখ! হয়েছিল ১০০ টাকার পরিবর্তে আমার একটা 
প্রবন্ধ যদি ইচ্ছ! করে তবে পেতে পাঁরে। উদয়ন অনুরূপ 
প্রস্তাবে দ্বিধামাত্র করে নি। সজনীর সঙ্গে যখন দেখা হোলো 
তখন সে বল্‌্লে কর্তারা আশ! করেছিলেন, ছু তিন সংখ্যার মতো 
খোরাক তারা পাবেন-_ অতএব অন্তত জ্যৈষ্ঠ সংখ্যার জন্যে 
আর একট! কিছু দিলে মনিব অর্থহানির জন্যে সাস্ব্বনা পেতে 
পারেন। হায়রে রবীন্দ্রনাথ__ বাজারে কোন্‌ দরে তোমার মূল্য 
যাচাই হচ্চে সেটা জেনে দর্পহারী মধুস্দনকে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত 
করে “আমার বঙ্গভূমি” থেকে এবার বিদায় গ্রহণ করো । এ 
নিয়ে তকরার করলে মর্্যাদাহানি হয়, বল্লুম জ্যৈষ্ঠের জন্যে 
একটা কবিতা লিখে দেব । এখানেই শেষ। উদয়ন উৎসাহিত 
হয়ে আছে এক সংখ্যার প্রবন্ধর জন্যে একশো টাকাটাকে অপব্যয় 
বলে গণ্য করে নি। রবীন্দ্রনাথের তিরোভাবের পরে তার ম্মরণ 


২৩১ 


সাংবাৎসরিকে যখন তোমরা কবিসম্রাটের গুণকীর্তনে মুখর হয়ে 

উঠবে সেই অবসরে বিধাতার দরবারে সকরুণ দরখাস্ত পেশ 

করব অন্য কোনে ভূখণ্ডে জন্মান্তর মঞ্জুর করে নেবার জন্যে । 
দাদা 


১৪১ 
২৪ এপ্রিল ১৯৩৪ 


€ 


কল্যাণীয়াস্ত 

কাল সন্ধ্যার সময় একল! অন্ধকারে চুপচাপ বসে আছি: 
আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন ; দক্ষিণের বাতাস বইচে বেগে । হেনকালে 
নানাবিধ অর্থ্যভার বহন করে ঝগড়ু বেহারার অপ্রত্যাশিত 
অভ্যাগমে বিশ্মিত হয়ে উঠলুম । তাঁকে কোনো! প্রশ্ন জিজ্ঞাসা 
করবার পূর্বেই বুঝলেম এ তোমার কাছ থেকেই আসচে। 
আসন্ন বিদায়কালে তোমার হাত থেকে এই সব ভোজ্য সামগ্রীর 
উপহার আমার হৃদয়কে স্পর্শ করল, ইচ্ছা করতে লাগল সেই 
মুহূর্তেই তোমাকে কিছু দিই যাকে তুমি আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ 
করতে পারো । মনে পড়ল পুনশ্চ বইখানা। কেননা ও বই 
তোমার ভালো লেগেছে। সেটাকে পুনশ্চ দিতে গেলে তোমার 
মনে হতে পারে অলমতি বিস্তরেণ। সে কথাটা বর্তমানে কেন 
সম্পূর্ণ খাটে না, তা বুঝিয়ে বলি। এই দ্বিতীয় সংস্করণে কতকগুলি 
নতুন লেখা যোগ করা হয়েছে। তা ছাড়া কতকগুলি মিলহীন 


২৩২ 


কবিতা পরিশেষ থেকে খসিয়ে নিয়ে এর মধ্যে ভন্তি করেছি। 
যথোপযুক্ত কবিতা দিয়ে পরিশেষ-এর ক্ষতিপূরণ করে দেব । তার 
বিলম্ব আছে, কেনন। পরিশেষের পরিশেষ হবার আশু সম্ভাবন। 
নেই। আমি একান্ত ইচ্ছা করচি এবং আশ করচি গৌরীপুরে 
গিয়ে তুমি আনন্দে থাকবে। দেখবার ক্ষুধা তোমার ছুই চক্ষু পূর্ণ 
করে আছে, তুমি দেখতে জানো । পঙ্লিশ্রীর আহ্বান তোমার 
মনকে উৎস্থক করে তুলবে । নিশ্চয় তোমার আসন পড়বে 
কোনো একটা খোলা জানলার কাছে। সেখান থেকে কী দেখতে 
পাবে সে আমার কল্পনাদৃষ্টির সামনে নেই । পুঞ্ীভূত শ্যামলতার 
একটা আভাস আমার মনে আসে । কোনে গাছে নতুন পাতা 
ওঠবার সময় এখনে! আছে কোনো গাছের পরিণত পাতায় গাঢ় 
রং ধরেছে । আমার মনে পড়ে আমাদের শিলাইদহের কুঠি- 
বাড়ি। আমি থাকতুম তেতলার ঘরে। দুরপ্রসারিত তরঙ্গায়িত 
সবুজের মাথা পেরিয়ে দেখা যেত দূর পদ্মার একটি ক্ষীণ রেখ। ; 
নৌকোগুলো তটের তলায় প্রচ্ছন্ন থাকত, কেবল মাস্তুলের চুড়া- 
সংলগ্ন স্ফীত পালের কিয়দংশ শরতের বুষ্টিরিক্ত অলস মেঘের 
মতো নীল আকাশের গায়ে গায়ে চলত ভেসে । আর কখনো 
বা উজানের মুখে ভাঙা বেয়ে চলত গুণ কাধে নিয়ে নতদেহ 
মাল্লার দল। সেই নদীরেখার ও পারে দেখা যেত পাতুবর্ণ বালু- 
চরের বিস্তার, আকাশের নীলিমার সঙ্গে আপন গৌরিমার 
যুগলতা প্রকাশ করে নিস্তন্ধ হয়ে আছে। বৈশাখে শস্তশৃন্য 
মাঠের ধূসরতার মাঝে মাঝে তরুচ্ছায়ায় আবিষ্ট এক একটি 
গ্রাম__ পিশ্ীকৃত গাছগুলোর নিবিড় আবেষ্টন ভেদ করে এক 


২৩৩ 


একটা তালজাতীয় গাছ আপন স্বাতন্ত্য উচ্ছিত করেচে মেঘ- 
লোকে । আমাদের বাগানে বিলম্বে ফলবার আমগাছে তখন 
বোল ধরেছে, দখিন বাতাসের বেগে দূরের থেকে তার গন্ধ মৃদু 
হয়ে আমার ঘরে প্রবেশ করচে। হঠাৎ কখনে। ব্যর্থ সন্ধানে 
কোনো একটা ভ্রমর ভন্‌ ভন্‌ করতে করতে এক দরজা দিয়ে 
প্রবেশ করে আর এক দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে যায়। নদীর 
ধার দিয়ে একটা বাঁকাচোরা পথ গ্রামগুলির সামনে দিয়ে 
কোনো একটা বড়ে। রাস্তার সঙ্গে মিলন লক্ষ্য করে চলেচে। 
এই গ্রামের রাস্তার দুই ধারে আম জাম কাঠাল আমার 
আমলে আমার হুকুমে লাগানে। হয়েচে। রাস্তার বাকের 
সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাঁকা ভঙ্গী উপর থেকে দেখতে পেতুম। 
বাংল! দেশের এই স্বুকোমল শুঙীধার পরিবেষ্টনের মধ্যে থেকে 
আমি তখন সাধনার জন্যে গল্প লিখচি প্রবন্ধ লিখচি, লিখচি 
ক্ষণিকা চিত্রা আরে। কত কি। তারি ফাকে ফাঁকে বাংল! 
পল্লিগ্রামের ষে স্পর্শ আছে তা আমার পাঠকেরা ঠিক বুঝতে 
পারবে না। আমার সেই সেদিনকার কল্পনা! তোমাদের গৌরী- 
পুরের উপরে আরোপ করচি। ঠিক মিলবে না বোধ করি। 
ওখানকার পল্লী বোধ করি এশ্বধ্যের সোনার শৃঙ্খলে বন্দিনী। 
তা হোক্‌ মাঝে মাঝে হাফ ছাড়বার অবকাশ আছে হয়তো। 
বুঝতেই পারিনে অর্থহীন সংস্কার নিজে স্থপ্টি করে কঠিন 
উৎপীড়নের জাল বিস্তার করাকে মানুষ কেন যে ধর্মমবুদ্ধির 
প্রেরণা বলে কল্পনা করে । নিজেকে নান! বিচিত্র বন্ধনে আষ্টে- 
পৃষ্ঠে বদ্ধ করতে যার! অভ্যস্ত, তারা কোনে! কালে কোনো বন্ধন 


৩৪ 


থেকে নিজেকে মুক্তি দেবার অধ্যবসায়কে উদ্বুদ্ধ করবে কোন্‌ 
বুদ্ধিতে? আপনার লোককে যার! বেঁধেছে পরের হাতের বাঁধন 
তাদের খুলবে না। থাকৃগে ওসব তর্ক। আপাতত নিজের 
শরীরটাকে সুস্থ করে তোলবার সাধনা সম্পূর্ণ মন দিয়ে গ্রহণ 
কোরো । যে শরীরটাকে অযাচিত দানরূপে পেয়েছ সেটার 
সম্বন্ধে স্ষ্টিকর্তীর কাছে তোমার দায়িত্ব আছে। 
তোমার পত্রোত্তরে আমার শেষ বক্তব্য এই যে, খ্যাতি 
অঙ্জন করবার জন্যে কোনো দ্রিন আমি কোনো। রকম উদ্যোগ 
করি নি। জয়ন্তী প্রভৃতি ব্যাপারে আমি আরাম বোধ করি নি 
এ কথা নিশ্চিত জেনো । আমি জনতার সমাদর কেবলি এড়িয়ে 
এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করি বলেই আমি জনপ্রিয় হতে পারি নে। 
মানুষকে খুসি করতে পেরেচি এবং তারা আমাকে খুসি করতে 
চায় এর প্রমাণ পেলে নিঃসন্দেহ আমার আনন্দ হয়। কিন্ত 
সেটা চেষ্টাকৃত যদ্দি হয় যদি অকৃত্রিম না হয় তবে তার চেয়ে 
বিতৃষ্ণাজনক কিছু হতে পারে না। কবির সত্যকার দণ্ড পুরস্কার 
কালের হাতে । মৃত্যুর ওপার পধ্যস্ত তার জন্যে সবুর করতে 
হয়__ অসময়ে সেটাকে ছিনিয়ে নেবার মতো! বেহায়াগিরি আর 
কিছু নেই । বিধাতার দান অমনিই অনেক পেয়েছি, আরো নাই 
বা পেলুম । ইতি ১১ বৈশাখ ১৩৪১ 
দাদা 


৩৫ 


৯৪২ 


২১ মে ১৯৩৪ 


৫ 


পানাদৌরা 


কল্যাণীয়াস্তু 

সিংহলে এসেছি সে খবর তোমাদের জানা । কিছু কাজ 
করতে পেরেছি__ সে জন্যে ওরা খুসি এবং কৃতজ্ঞ । অনেক দিন 
থেকে যুরোপের সংসর্গে ওরা আপনার স্বাঁতন্ত্য সম্পূর্ণ হারিয়ে 
ফেলেছিল। আধুনিকদের মধ্যে একদল সে জন্তে পীড়া বোধ 
করতে আরম্ত করেছে । এরাই আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিল । যা 
ফল পেয়েছে তা ওদের প্রত্যাশাকে অনেকদূর ছাড়িয়ে গেছে। 
স্বাজাত্যকে ফিরে পাবার প্রেরণা এদের মনে ইংরেজি শিক্ষা 
থেকেই এসেছে । এর! বৌদ্ধ অথচ অনেককাল থেকেই এদের 
শিক্ষিত সম্প্রদায় সে ধন্মকে ভূলে বসেছিল । 19801068691 
নামে একজন ইংরেজ এ সম্বন্ধে এদের সব প্রথমে জাগিয়ে 
তোলে । শিল্পকলা! নিয়ে আমাদের দেশে ঠিক সেই দশা! 
ঘটেছিল। স্বদেশীয় শিল্পরীতি নিয়ে দেশের লোকে যখন হয় 
উদাসীন নয় অট্টহাস্তমুখর তখন হ্যাভেল উড্ভফ প্রভৃতি কয়জন 
ইংরেজ তাকে শ্রদ্ধা ও উৎসাহের দ্বারা উদ্বোধিত করেন । মনে 
রেখো আমাদের প্রাচীন শাস্ত্র সম্বন্ধে একদা আমাদের মুখত৷ 
যখন অগাধ ছিল তখন ম্যাক্সমূলর এবং জন্মীনীর পণ্ডিতের! সেই 
শাস্ত্রের বিচিত্র ছুরগম পথ আলোকিত করেছিলেন। আজও এ 
শাস্ত্র তারা যেমন জানেন আমরা তেমন জানি নে ।-_ 

তুমি ব্যাকরণের বন্ধুর পথে ইংরেজি শিক্ষায় প্রবৃত্ত । আমি 


৩৬ 


এ পথ কোনোদিন পেরোই নি। আমি প্রায় প্রথম থেকেই 
সাহিত্যের পথেই ইংরেজি ভাষার পরিচয় পেয়েছিলুম। আমি 
কোনে। কোনে মেয়েকে ইংরেজি শিখিয়েছি__ একেবারে গোড়া 
থেকেই বই পড়াতে সুরু করেছিলুম। প্রথম প্রথম চার পাঁচ 
লাইনের বেশি এগোতো না৷ ছ মাসের পর অভিধান মিলিয়ে 
নিজেরা তার! গল্পের বই পড়েছেন। 
কলম্বো সহর থেকে ১৬ মাইল দূরে এসেছি । জানলা থেকে 
চেয়ে দেখচি সম্মুখে নারিকেলের ছায়া বিছানো তীর পেরিয়ে সমুদ্র 
ফেনিল তরঙ্গে পৃথিবীকে অভিষিক্ত করচে। বাতাস বইচে জিদ্ধ 
স্মন্দ__ নারিকেলের চঞ্চল শাখা মন্্র শব্দে আন্দোলিত।__ 
বাসম্তীকে আশীর্বাদ জানিয়ো । ইতি ২১ মে ১৯৩৪ 
দাদা 


১৪৩ 


৫ জুলাই ১৯৩৪ 


6€ 


কল্যাণীয়াস্ত 

তুমি হাত দেখিয়ে গ্রহবিচার করিয়ে আমার চরিত্র এবং 
জীবনের ঘটনা সম্বন্ধে অনেক খবর পেয়ে থাকো, কেন এ 
সংবাঁদটা সংগ্রহ করতে পারলে না যে আমি কিছুকাল থেকে 
নানাবিধ কর্মে, রচনায়, আতিথ্যসৎকারে, দুশ্চিন্তায়, দৈহিক 
দুর্বলতায় ভারাক্রান্ত হয়ে আছি। এই জন্যে অনেককাল কাজের 
চিঠি ছাড়া অন্য সকল চিঠি লেখাই বন্ধ হয়ে আছে। শুধু কাজের 


২৩৭ 


ভিড়ের কৈফিয়ংই যথেষ্ট নয়, বস্তরত আমার দেহ এখন কন্মবিযুখ 
হয়ে উঠেছে, সামান্য কর্তব্যকেও গুরুভার বলে মনে হয়। সম্পূর্ণ 
ছুটির জন্যে মন উৎসুক হয়ে আছে। আমি চতুরাশ্রমে জীবনের 
ভাগকে বিশ্বাস করি-_- আমার বানপ্রস্থ্যের বয়স হয়েচে__ কিন্ত 
এ যুগে তার ব্যবস্থা নেই । ঘরের মধ্যেই যথাসম্ভব বানপ্রস্থ্য 
রচনা করতে হয়। আমার বানপ্রস্থ্য দায়িত্ববিহীন অকাজের 
মধ্যে-_ যে কাজে কোনো কৈফিয়ৎ নেই-_ যাতে বিশ্বের ব! 
নিজের হিতও হবে না অহিতও হবে না যাতে হৃৎপিণ্ডেও 
ধাক্কা লাগে না, মস্তিষ্েও আলোড়ন চলে নাঁ_ অর্থাৎ! প্রাচীন 
বয়সের শৈশবতা৷ । সাহিত্যে একটা খ্যাতি পেয়েছি তার কাছে 
আমার দায় আছে, সে দায় বাঁচিয়ে চল্তে হয়__ কিন্তু যদি 
একখানা কাগজ টেনে নিয়ে একট। ছবি আকতে থাকি-_ তাহলে 
য। তা আকতে দ্বিধা করি নে। লোকে যি বলে আমি ছবি 
আকতে পারি নে, তবে তাতে সঞ্চিত যশের অপচয় ঘটে না। 
তাই যখন কর্তব্যের দায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, যখন মানুষের কাছ 
থেকে অকারণ বৈরিতায় মন ব্যথিত হয়ে থাকে, তখন সেই 
অবসাদের সময় চিঠিপত্র লিখতে চেষ্টা করলে লেখনীকে গুরুভার 
বলে মনে হয়। তখন যেমন তেমন করে ছবি আকতে আমার 
বাধে না। তাই আমার জীবধাত্রাপথের শেষ প্রান্তে যখন 
আলো ফ্লান হয়ে এসেছে তখন ইচ্ছা! করে ছবি একে সময় নষ্ট 
করি। সময় নষ্ট করবার অধিকার আমার হয়েচে। ছেলেবেলা 
থেকে আজ পর্যযস্ত বরাদ্দের অনেক বেশি কাজ করেছি-_ এখন 
যদি কন্মশালার দ্বার বন্ধ করি তাহলে বেতন কাট! যাবে না। 


২৩৮ 


তোমার কোনে! একটা পত্রে জনশ্রুতির কথা লিখেচ যে, 
আমি সীতার নিন্দা করেচি। এমন অদ্ভুত অপবাদ বাংল দেশেই 
জন্তব। “ঘরে বাইরে” উপন্যাসে সজীব বলে একটা মানুষ খাড়। 
করেছিলুম তার চরিত্রে ভদ্রতার আদর্শ নেই। সীতার সম্বন্ধে 
সে যদি এমন কিছু বলে থাকে য! সীতার পক্ষে সম্মানকর নয় 
তাহলে সেটাকে রবীন্দ্রনাথের বাণী বলা মূঢ়তা। ভ্রৌপদীকে 
কীচক নিঃসন্দেহ অপমান করেছিল, ছুঃশাসন সভাস্থলে তার 
বন্ত্রহরণের চেষ্টা করেছিল এ কথাও মহাভারতে পড়েছি, 
বেদব্যাসকে সে জন্যে বাঙালী সমালোচকও নিন্দা করে নি, 
আমার বেলাতেই তাদের বুদ্ধি যে যায় বিগড়ে তার কারণ তৃমি 
জিজ্ঞাসা কোরো আমার জন্মনক্ষত্রকে । আমার বাঙালী জন্ম 
প্রায় শেষ করে এনেচি, আজ আমার ক্লান্ত আয়ুর অন্তিম নিবেদন 
এই যে, যদি জন্মান্তর থাকে তবে যেন বাংল! দেশে আমার জন্ম 
ন! হয়__ এই পুণাভূমিতে পুণ্যবানেরাই জন্মে জন্মে লীলা করতে 
থাকুন__ আমি ব্রাত্য, আমার গতি হোক সেই দেশে যেখানে 
আচার শাস্ত্রসম্মত নয় কিন্তু বিচাঁর ধর্মসম্মত। 

সিংহলে লোকের! আমাকে পেয়ে খুসি হয়েছিল । আনন্দ 
দিয়েছি আনন্দ পেয়েছি। কবির পুরস্কার এইটুকুই। বাসম্তীকে 
আমার আশীর্বাদ জানিয়ো, বোলে! অলিখিত পাত্রোত্তরের জন্যে 
তার কর্তব্যবুদ্ধি তাঁকে কিছুমাত্র যেন গীড়ন না করে। আমি 
জানি এই তার ক্রটি গুদাস্তবশত নয়, চিঠি লেখায় তার হাত 
পাকা হয় নি সেই সঙ্কৌচেই। জীবনে অনেক চিঠি লিখেচি। 
কিন্তু আমার চিঠি লেখার শক্তি প্রায় বাসস্তীর কাছাকাছি এসে 


২৩৯ 


পেঁচেছে__ এই জন্তেই চিঠি লেখা সম্বন্ধে আমার কর্তব্যবোধ 
প্রতিদিন শিথিল হয়ে আসছে । ইতি ২০ আষাঢ় ১৩৪১ 
দাদা 


১৪৪ 


১২ জুলাই ১৯৩৪ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ম 

আমার চিঠির ভাষার থেকে মাঝে মাঝে তুমি কল্পনা করে 
বসো যে তোমার উপর আমি রাগ করেচি। কিন্ত কখনোই 
তোমার উপর রাগ করতে পারি নে। আমাদের দেশাচারের 
বিরুদ্ধে অনেক সময় ধিক্কার হয়, কিন্তু তুমিই যে তার প্রতীক 
তা৷ তে নয়, তুমি তাঁর দ্বারা আহত । এই উপলক্ষ্যে তোমাকে 
গীড়া দিয়েছি, সে জন্যে মনে অনুশোচনা জন্মেচে। তোমার 
গ্ররতি আমার করুণ। স্ঈগভীর সে কথা! নিশ্চিত জেনো । তোমার 
স্বভাবে অসামান্ততা আছে য। নাঁন। বাহ আঘাতে পরিণতি লাভ 
করতে পারে নি; যা মিশিয়ে রয়েছে এমন সব অন্ধ সংস্কারের 
সঙ্গে যা তোমার মনকে মুক্তি দেবার প্রতিবন্ধকতা করেছে । 
তোমার মধ্যে তোমার স্বাভাবিক স্বচ্ছ বুদ্ধি ও অভ্যাসগত 
নিরর্৫থকতার একটা ছন্দ রয়ে গেছে। সকল বিষয়েই চোখ বুজে 
বশ মানবার মতো। মন তোমার নয় সেই জন্যেই তুমি আপনাকে 
আপনি গীড়ন করো, আমার বিশ্বাস এই পীড়ন থেকে তুমি 


২৪০ 


বাঁচতে যদি যথেষ্ট বিষ্ভালোচনার দ্বারা তোমার স্বাভাবিক তীক্ষ- 
বুদ্ধির সমর্থন পাবার সুযোগ তোমার ঘটত । ত। হোক, মতে ও 
আচারে আমার সঙ্গে তোমার যতই পার্থক্য থাক তবু কখনো 
তোমাকে অশ্রদ্ধা করি নে। সেই পার্থক্যের পরিবেষ্টনের ভিতর 
থেকে তুমি তোমার মত ও বিশ্বাস নিয়ে তোমার চিঠিতে যে সব 
আলোচনা করো, এবং যে সব ভাষাচিত্র পাঠাও সে আমার 
বিশেষ ভালে লাগে । তার একটা কারণ আমি অনেক কথা 
জানতে পারি যা! আমার জানবার উপায় নেই-_ কিন্তু তার চেয়ে 
আর বড়ে। কথা, তোমার লেখার মধ্যে এমন একটা স্বাভাবিকত। 
ও উজ্জ্রলত! আছে যা ছুরলভ-- স্বত-উৎসারিত সাহিত্যরসে সে 
আমাকে আনন্দ দেয়। সুসংলগ্ন করে বিস্তারিত করে লেখবার 
সাধনা যদি তোমার পাকা হোতো! তাহলে সাহিত্যে তুমি কৃতিত্ব 
লাভ করতে পারতে । বিশেষত মেয়েরা বাংলা ভাষায় যে সব 
লেখ! আজকাল লেখে তা এমনি দুর্বল, বানানো, নকল করা 
জিনিষ যে তোমার লেখবার স্বাভাবিক শক্তি ও সাহস দেখে 
হুঃখ হয় তুমি সাহিত্যে প্রবেশ করতে পারো নি । প্রবেশ করলে 
তোমার প্রতিভার সাহসিকতা দেখে অনেকেই তোমাকে অজজ্্র 
গাল দিত; কিন্তু অযোগ্য নিন্দুকদের গালের দ্বারাই তোমার 
যথার্থ বিচার হোতো।। তোমার বুদ্ধি ও শক্তি ভূমিকম্পে বিদীণ 
উর্ববরা ভূমি__ জোড়। লাগবার সুযোগ পেল না। যাহোক 
তোমার চিঠি থেকে আমি যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছি-_ সে চিঠি 
প্রকাশ হতে পারবে না এইটেই আক্ষেপের বিষয় । 

কিছুদিন হোলো তোমার চিঠিতে অত্যন্ত অদ্ভুত যে সংশয় 


৯1১৬ ২৪১ 


প্রকাশ করেছিলে যে তোমাকেই লক্ষ্য করে বাশরীতে আমি 
কিছু বক্কোক্তি করেছি সেইটেতে আমাকে অত্যন্ত বিস্মিত 
করেছিল-_ আমার দ্বারা এমন অন্যায় যে সন্তব হতে পারে 
এ কথ তুমি মনে করলে কী করে । এর থেকে তোমার পীড়িত 

বিকল চিত্তের লক্ষণ দেখতে পাই । 
আমি যেমন ছবি আকি তুমি তেমনি গান লেখো! সে ভালোই। 
কোনোটা ভাল হবে কোনোটা হবে না কারো কাছে জে জন্যে 
জবাবদিহী নেই। আমাকে যদি পাঠাতে চাও পাঠিয়ো-_ 
চুপ করে থাকি যদি কিছু মনে কোরো না । কিন্ত গানের প্রধান 
ংশ সুর__ সে জন্যে খুকুর শরণ নিয়ো । তার বিয়ের প্রস্তাবের 
কথ শুন্লুম। পীত্রটির নাম জানি, তার বেশি পরিচয় জানি 
নে। সকল পাত্রেই নিজেকে মিশিয়ে নেবার শক্তি মেয়েদের 
স্বভাবে প্রচুর পরিমাণে আছে। না যদি থাকত তাহলে স্ত্রীহত্যা- 
পাতকে প্রতিদিন বিধাতাকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হোতো। ইতি 

২৭ শ্রাবণ [| আষাঢ় 1 ১৩৪১ 

দাদা 


পর অর্থাৎ ২৯শে তারিখে কলকাতায় যাব, পয়ল। শ্রাবণ 
তারিখে ফিরব। 


২৪২ 


৯১৪৫ 
১৮ জুলাই ১৯৩৪ 
কলিকাতা 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ু 

কলকাতায় কাজে এসেছি । বিশ্ববিষ্ভালয়ে বক্তৃতার দাঁয় 
ছিল-_ বিষয়টা! “সাহিত্যের তাৎপর্য” । তোমার চিঠিতেও দেখি 
তুমি সাহিত্যতত্ব নিয়ে কিছু আলোচনা করেছ। আমার লেখাটা 
যখন বের হবে তোমার মতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে পারবে । 
সাহিত্য জিনিষটা বুদ্বুদ নয় অর্থাৎ শূন্যগর্ভ গোলকের উপর সূর্্য- 
রশ্ির সাত রঙের খেলামাত্র নয়। তেমনতরো বাক্যের বুদ্বুদ 
একেবারে হয় না তা বলতে পারি নে কিন্ত সেগুলোর দাঁম নেই। 
ভিতরটাতে হৃদয় থাকলে তবে তাঁর নিবিড় আশ্বাদ পাওয়া যায় । 
তোমার চিঠিতে যদি সাহিত্যরস থাঁকে তবে সেটা হৃদয়সম্পর্কশূন্য 
নয় বলেই উপভোগ্য হয়ে থাকে। 

আজ সন্ধ্যার দিকে মহা'ত্বাজির সঙ্গে দেখা করতে হবে । এই 
কর্তব্যট! সমাধ। করেই কাল শান্তিনিকেতনে ফিরব |... আমি 
বোধ হয় পাঁচ দশ মিনিটের মত ছু চার কথ। বলেই ছুটি নেব। 

শ্রাবণ এলো-_ বর্ষা এবার যথোচিত সমারোহে দেখা 
দিয়েছে । আশ্রমে গিয়ে বর্ধামঙ্গলের আয়োজন করতে হবে। 
কিন্তু মনের মধ্যে তেমন উৎসাহ বোধ করচি নে। জগৎ জুড়ে 
ছুঃখ দারিদ্র্য নানা আকারেই দেখা দিয়েচে । এমন দেশ নেই 
যেখানে মানুঘ নানা রকমে মার না খাচ্চে। মনে হয় যেন একটা 
যুগান্তের পরে যুগান্তরের সুচনা । নূতনের অভ্য,দয় যখন হয় 


২৪৩ 


তখন নাড়িছেঁড়া ছুঃখই আনে তাকে আবাহন করে । পুর্ব 
যুগের ভূল চুক ক্রটি আপন ভাঙনের বিদারণরেখার উপর 
দিয়েই নবধুগের রথযাত্রীর পথ রচনা করে। সেই পথ রচনার 
কাজে মানুষ ঢেলে দিচ্চে তার হুদয়শোণিত। আমি মনে মনে 
ভাঁবচি আমার এ জন্মের প্রান্তভাগটা মিলে গেছে এই যুগেরই 
রক্তরশ্মিদীপ্ত দিগন্তরেখায়। সমস্ত যুগাঁবসানের বেদনা আমার 
মনের মধ্যে আজ ছায়াপাত করেচে। ইতি ২ শ্রাবণ ১৩৪১ 
দাদা 


১৪৬ 


৭ অগস্ট ১৯৩৪ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ 

অনেকদিন তোমাকে চিঠি লিখিনি। বিবিধ রকম কাঁজে 
নিরন্তর ব্যাপূত ছিলুম, তার মধ্যে সাহিত্যিক কাজও কিছু ছিল 
_-কিছু ছিল এখানকার ছাত্রদের প্রতি কর্তব্যপাঁলন, কিছু ছিল 
নানা লোকের নান। খুচরো দাবী মেটানো, সেগুলো যেন গাছের 
মধ্যে আগাছার জঙ্গল | মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, তৃণশ্যামল বিস্তীর্ণ 
প্রান্তরসীমায় ঘন বনশ্রেণীর নীল রেখা, আমার অলিন্দের 
তিন কোণে তিনটি রাধাচুড়ার গাছ পুষ্পগুচ্ছ নিয়ে বাতাসে 
আন্দোলিত, তার পিছনে বড়ো শিমূলগাছকে বিজড়িত করে 
উঠেছে মালতীলতা, দিনরাত কীঁকরবিছানো পথে টুপ টুপ 
করে মালতী ঝরে পড়চে, কদম্বকেশর ঝরার দিন শেষ হয়ে 


২৪৪ 


গেল, ছুটি একটি অসময়ের বেল ফুল দেখা দেয় তারা ক্লান্ত হয়ে 
এল বলে। আমার সামনেই পলাশ সৌদাল হিমঝুরি সোনী- 
ঝুরি কদম জারুলের বীথিক1 সোজ চলে গিয়ে সদর রাস্তায় 
উত্তীর্ণ হয়েচে। তাদের ফীকের মধ্যে দিয়ে রাঙামাটির পথের 
এক টুকরো! দেখা যায় ।- আমার ইচ্ছে করে সব দায়িত্ব ফেলে 
দিয়ে এই ছায়াবৃত দিনে সামনে তাকিয়ে বসে ভাবি আপন 
মনে । এই দানটুকু শুনতে সুলভ কিন্তু ভাগ্যে খুব অল্পই জোটে 
__ বন্দী আমি কর্তব্যের সশ্রম কারাঁবাসে । 

তোমার চিঠি পড়ি, তোমার কথা ভাবি। একটা কথা 
বার বার মনে আসে তোমার চিরাভ্যস্ত ধন্মমত ও আচার থেকে 
আমি তোমাঁকে বিচ্ছিন্ন করি নি বিক্ষিপ্ত করেছি। তাই নিয়ে 
তোমার নিরন্তর দ্বন্ব চল্চে-__ অথচ এ ছুঃখ আমি কোনোদিন 
তোমাকে দিতে ইচ্ছা করি নি। কারো মত নিয়ে আমার 
কোনো জেদ নেই, ধন্মবিশ্বাসের পার্থক্য নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে 
কারো প্রতি আমার মনের বিরুদ্ধতা জাগে না। কেবল গোঁড়া 
মুসলমানদের মতো যাঁর! ধন্মান্ধ তাঁদের প্রতি মনকে শাস্ত রাখা 
আমার পক্ষে কঠিন হয়। তোমার নিষ্ঠাভক্তির মধ্যে যে মাধুষ্য 
আছে সেটাকে আমি যে কেবলমাত্র শ্রদ্ধা করতে পারি তা নয় 
তার সৌন্দধ্যে আনন্দিত হতে পারি। আমার বুদ্ধিবিচারের 
সঙ্গে তার সম্পূর্ণ মিল হতে পারে না, এমন কি তার মধ্যে হয়- 
তো অনেক কিছু থাকতে পারে যেটা আমার মতে আমাদের 
দেশের কল্যাণের অন্তরায় । কিন্ত মতের সঙ্গে মতান্তরের সংঘাত 
যতই হোক তাতে মানুষের প্রতি আমার সৌহার্দ্যকে ক্ষু্ করে 


৪৫ 


না। আমার এতদিনকার অভিজ্ঞতায় এটা! আমি দেখলুম, 
আমার রচনায় বা কন্মে দেশের জন্যে যা কিছু করে থাকি নে 
কেন, আমার শক্তিকে স্বীকার করেও দেশ আমাকে ভালো- 
বাস্তে পারে নি। এই জন্যে খ্যাতনামা ব্যক্তিদের মধ্যে একমাত্র 
আমাকে কুৎসিত নিন্দা করতে নিন্দুক শুধু যে সাহস পায় তা 
নয় সে নিন্দা নিয়ে লাভের ব্যবসা সম্ভব হতে পারে । তাতে 
সাধারণের মনে সে পরিমাণে আঘাত লাগে না বলেই এমনটা 
হতে বাধা পেল না। তোমাদের গভীর অন্তরে এর বিরুদ্ধে 
তোমাদের ঘৃণা নেই করুণ! নেই-_ হয়তে৷ নিজের অজ্ঞাতসারেও 
তোমাদের মনের অবচেতন রাজ্যে এর সমর্থন এমন কি আনন্দ 
আছে। এ কথাটা আমি বুঝে নিয়েছি, স্বীকার করে নিয়েছি, 
দেশের কাছ থেকে এর বেশি আশা করি নে। প্রতিবাদস্মরূপে 
অনেকে বলেন ছুই এক জনের অপরাধ সকলের পরে আরোপ 
করা উচিত হয় না আমার উত্তর এই, যে-হিংঅ্তাকে সকলেই 
বিনা আপত্তিতে মেনে নেয় সে হিংআতায় সকলেরই ভাগ 
আছে। ব্যবসায়ে একজাতীয় ভাগীদার আছে যাকে ইংরেজিতে 
বলে ৪1697106 0৯:6097- অর্থাৎ ঘুমস্ত সরিক, তারা 
ব্যবসায়ের পরিচালনায় হাত দেয় না, লাভের অংশ অব্রিয়- 
ভাবে পায়। দেশে আমার নিন্দাব্যবসায়ের ঘুমন্ত সরিক 
তোমরা সবাই । একদিন এ কথা আমার মনে সুস্পষ্ট হয়েছিল 
যখন তুমি আমার ব্যবহারসামগ্রী সহজেই এমন কাউকে দান 
করতে পারলে ধার লেখনী আমার প্রতি কটুক্তিতে সর্বদা 
বিষাক্ত । মনে কোরো না এই ঘটনায় তোমার থেকে আমার 


২৪৬ 


স্নেহ স্থলিত হয়েছে । আমি কেবল এইটুকু বুঝে নিয়েছি 
অন্তরতর ভাঁবে তোমরা আমাকে আপন করে নিতে পারো না । 
আমার গুণের প্রতি তোমাদের শ্রদ্ধ! আছে কিন্ত ব্যক্তির প্রতি 
মমতা নেই । তাই নিন্দার শরবিদ্ধ হয়ে আজ ৩৪ বৎসর দেশের 
জন্যেই নিজেকে প্রায় দেউলে করে দিয়ে দেশের কাঁজ একলা 
করেছি-__ অহৈতৃক বিদ্বেষের মধ্যে দিয়ে নিঃসহাঁয় চলতে 
হয়েচে। দেশের বড়ো ছোটো! অনেকেই তাদের নিজের কাজের 
প্রয়োজন হলে আমার কাছ থেকে সাহায্য আদায় করতে কুষ্ঠিত 
হন নি কিন্তু এক দিনের জন্যেও মনে করেন নি আমারো 
সাহায্যের প্রয়োজন আছে, সাহায্যের না হোক অনুকম্পারও 
দাবী করতে পারি। কঠোর সত্যকে অবিচলিত চিত্তে স্বীকার 
করে নিতে একান্ত ইচ্ছা করি, এক এক সময়ে বেদনা প্রবল হয়ে 
ওঠে, তখন সেই অসহিফুতার জন্যে লজ্জিত হই। ইতি ৭ অগস্ট 
১৯৩৪ 

দাদা 


১৪৭ 
১৭ অগস্ট ১৯৩৪ 
ওঁ শান্তিনিকেতন 
কল্যাণীয়াস্ত 
আমার যথার্থ পরিচয় কখনে। তোমার কাছে স্পষ্ট হবে না। 
সেই জন্যেই এত বড়ো ধিক্কারের কথা মনে করতে পারলে যে 


488 র জঙ্গে তোমার সৌহ্দ্য ভেঙে দেবার জন্যে 


৪৭ 


আমার দরবার আছে। এমনতরো ভাঙাভাডির চেষ্টাকে আমি 
পুরুষোচিত মনে করি নে-_ এটা লজ্জাকর। ব্যক্তিবিশেষের 
দোষগুণের উপর সব সময়ে বন্ধুত্ব নির্ভর করে না । ভালোবাসতে 
পারি কারো স্বভাবের ক্রটি সত্বেও। এ নিয়ে লেশমাত্র আপত্তি 
করা আমার অযোগ্য । দেশের অধিকাংশ লোকে আমাকে 
হৃদয়ের মধ্যে গ্রহণ করতে পারে না, এবং আমার আঘাতে 
অপমানে যথেষ্ট ব্যথিত হয় না, এই সত্যকে আমি স্বীকার করে 
নিয়েছি-_ বুঝেছি দেশের মধ্যে তার স্বাভাবিক কারণ রয়েছে। 
যদি দেখা যায় সকল চেষ্টা সত্বেও আমার বাগানের মাটিতে 
আমের মধ্যে কীট জন্মায় তবে মনে আক্ষেপ হতে পারে কিন্তু 
আবহাওয়ার সঙ্গে রাগারাগি করতে গেলে ছেলেমানুষি হবে। 
তোমাকে আমি দোষ দিই নে। মনের অনেক ক্রিয়া স্বভাবের 
গুঢ় প্রবর্তনায় আমাদের অগোৌচরেই ঘটে, তার উপরে সচেতন 
চিত্তের কর্তৃত্ব খাটে না। আমি কখনো তোমার কাছে কোনো 
দাবী করি নি যা তুমি নিজের থেকে স্বীকার না করেচ। তোমার 
কাছে আমার পরিচয় ও স্বীকৃতি তোমার নানা গভীর সংস্কার 
শিক্ষা ও পারিপাণ্থিকের দ্বারা অনুরপ্ধিত হতে বাধ্য । তার 
অনেক মাল মসল। তোমার স্বকৃত। এক দিকে তোমার আপন 
হাতে গড়া এই মৃত্তিকে যেটুকু পরিমাণে সম্মান দাও তার মধ্যে 
হয়তো অতিশয়ত। আছে-_- অন্য দিকে তাকে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত- 
সারে যে পরিমাণে খবব করো তাও হয়তো বিধাতার আপন 
মাপের সঙ্গে মেলে না । দেশের যে মনোবৃত্তির সঙ্গে সহজেই 
তোমার মন মেলে তার অনেকাংশ আমার বিরুদ্ধ এটা অপরি- 


৪৮ 


হার্ধ্য । দোহাই তোমার আমার সন্তোষ কল্পনা করে .". ****"র 
সঙ্গে তোমার সম্বন্ধের লেশমাত্র ব্যত্যয় ঘটতে দিয়ো না, যদি 
দাও তবে তাতেই তুমি আমাকে খাটো করবে। তোমাদের 
সমাজের দিক থেকে আমি ব্রাত্য, আমি একঘরে, আমি অস্পশ্থয | 
এই বর্জন আমার জীবনে দেবতার বরের মতো৷ কাঁজ করেছে, 
এতে মানুষের অভিশাপ যদি লাগে, তবে তাতে সাপের নিঃশ্বাস 
লাগবে মাত্র বিষ লাগবে না । যে বিধাত!। আমাকে পৃথক করে 
স্ষ্টি করেছেন তিনি আমার বন্ধু। এই সামাজিক অস্পৃশ্ঠতা 
পার হবার সময় কিছু পরিমাণ ঘ্বণা মনে না নিয়ে আসতে পারো 
না। সেটাকে অতিক্রম করেও যদি আমাকে শ্রদ্ধা করে থাঁক 
সেটা কম কথা নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ অতিক্রম করবে এমন অসম্ভব 
আবদার করব কোন্‌ দাবীতে । তুমি লিখেচ আমার কতকগুলো! 
বইয়ের কতকগুলো কবিতা বাদ দিয়ে তোমার কোনো কোনো 
কবিতা ভালে! লাগে । এ কথা বলবার কি কোনো প্রয়োজন 
আছে। আমার কবিতা বুঝতে পারে না এমন পুরুষ ও মেয়ে 
সংসারে অনেক আছে তাদের আমি খুবই ভালোবাসি__ আমি 
তাদের কবি নাই হলুম আমি তাদের প্রিয়জন । আমার কবিতার 
কথাটা তোমাদের মুখে একেবারেই অবান্তর | তোমার মেয়ে 
হয়তো আমার কবিতার চেয়ে নজরুলের কবিতা ঢের বেশি 
পছন্দ করে সে কারণে আমি তাকে কিছুমাত্র কম স্নেহ করিনে। 

স্বদেশের বাইরে আমার জন্যে স্তুপ্রশস্ত ও স্থায়ী আসন 
আছে-_ যখন জীবলো'ক থেকে বিদায় নিয়ে যাব তখন আমার 
ভাগ্যবিধাতাঁকে অক্ষুঞ্ন প্রণাম নিবেদন করে যেতে পারব-_ তিনি 


২৪৯ 


আমাকে অনেক দিয়েচেন। কিন্তু সেই সঙ্গে এই মিনতি জানিয়ে 
যাব যে বাংলাদেশে আর নয়। ইতি ৩২ শ্রাবণ ১৩৪১ 


দাদা! 


১৪৮ 


২৩ অগস্ট ১৯৩৪ 


৫ 


কল্যাণীয়ান্তু 

তুমি আমাকে পরামর্শ দ্রিয়েচ আমি যেন ঝগড়া না করি। 
তোমার কথা রক্ষা করা আমার পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব যেহেতু 
আমি ঝগড়া করিই নে। ব্ঙ্গদেশে জন্মগ্রহণ করে অবধি গালি 
ও নিন্দা আমি নিরন্তর পেয়েছি কিন্তু একবারও তার প্রত্য,ত্তর 
দিই নি, প্রতিবাদ করি নি। আমার যে প্রবন্ধ নিয়ে ২ ১. ও 
৮০ ৩, ছেঁড়াছেঁড়ি করেচেন সেটা তাদের কোনো রচনার 
বিরুদ্ধে লিখিত নয়। তার কারণ এই, *-* *-। র রচনা ভালো 
লাগে না বলে ছু চার পাতা ছাড়া তাঁর কোনো বই আমি 
পড়তে পারি নি ! ..: -১, গোডাকার বই পড়ে আনন্দ পেয়েছি 
তার -.. *.. বই ভালে! লাগল ন! বলে তার হাল আমলের 
কোনো বই আমি পড়ি নি। তারা গায়ে পড়ে ধরে নিয়েছেন 
যে তাদেরই লক্ষ্য করে আমি লিখেছি । ঝগড়া তারাই 
করেছেন তাল ঠুকে, আমি চুপ করে আছি। এই চুপ করে 
থাকার চেয়ে আরো! বেশি কী করতে পারি সেই পরামর্শ আমাকে 


২৫০ 


দিয়ো । যদি বলো কোনো লেখাই না লিখে নীরবে আকাশের 
দিকে তাকিয়ে থাকাই আমার পক্ষে শ্রেয়, সেটা আমি স্বীকার 
করে নেব। কিন্তু এই পরামর্শ আরো! ৫০৬০ বৎসর পূর্বে 
পেলেই সুখের হোতো-_ এখন অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে । যদি 
বলো কেবলমাত্র সেই লেখাই যেন লিখি যাঁতে কোনো মানুষের 
সঙ্গে মতের ভেদ ন হয়, তবে সেই কোনো মানুষরা কারা জানতে 
চাই। এমন মানুষেরও সন্ধান মেলে যারা আমার মতকে শ্রদ্ধা 
করে। তুমিকি বল্বে কেবল তাদেরই সঙ্গে যেন আমার 
ঝগড়া বাধে এদের সঙ্গে নয়? তোমাকে আমার এই অনুরোধ, 

4:51 থেকে আরম্ত করে আধুনিক 225. 
ও ... .*৮ ০ পর্য্যন্ত কার সঙ্গে ঝগড়া করে আমি একটা 
লাইনও লিখেচি, সেটা আবিষ্কার করে আমাকে দেখিয়ে দিয়ো” 
তাহলে স্বভাব সংশোধন করবার চেষ্টা করব। একতরফা গাল 
খাওয়াকে যদি ঝগড়াটের লক্ষণ বলে! তাহলে সে সম্বন্ধে আমার 
কর্তব্য কী, আরো একটু স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়ো । তুমি 
লিখেছ অল্প ঘে কটা দিন আমার মেয়াদ আছে বিবাদে যেন 
প্রবৃত্ত না হই। এ অনুরোধ রাখা কঠিন হবে না। প্রায় বছর 
পর্াশেক যা না করেছি আরো! ছু চার বছর তা না করে থাকতে 
পারব । তোমারই প্রশ্নের উত্তরে একদা আমাদের দেশাচার 
প্রভৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করেছিলুম। তোমার সঙ্গে ঝগড়া 
করচি বলে সন্দেহ করিনি। সম্প্রতি তাঁও ছেড়ে দিয়েছি। 
আমার মতে| লেখকের পক্ষে সম্পূর্ণ মৌনব্রতই যদি একমাত্র 
সাধুপথ হয় তবে সে পথ আসন্ন হয়েছে জেনে নিশ্চিন্ত হতে 


২৫১ 


পারো-- যে চতুরানন একদিন আমার মুখে ভাষা দিয়েছিলেন, 
তিনিই সে ভাষা! সংহরণ করে নেবার জন্যে দ্বারের কাছে এসে 
দাড়িয়েছেন । ইতি ৬ ভান্র ১৩৪১ 

দাদা 


রি 
৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ 
ও 

কল্যাণীয়াস্থু 

গোটাকতক ইংরেজি লেখার দায় আমার কাধে চেপেছে। 
তাই ছুটি পাচ্চি নে। আমার পক্ষে ইংরেজি সরম্থতীর মহল 
বিমাতার মহল। তবু সৌভাগ্যক্রমে আমার প্রতি তার কিঞ্চিৎ 
প্রসন্নতা আছে। হলেও ও মহলে সহজে চলাফেরার অভ্যাস 
এখনো হয় নি। ইংরেজি কেন, আজকাল বাংলা লেখাতেও 
কলম কুঁড়েমি করে । চিরপরিচিত পথেও পা বেধে যায়-_ সে 
পথের দোষ নয়, পাঁয়েরই দুর্বলতা । এমন অবস্থায় আঙিনার 
বাইরে পা বাড়ানোই ভালো নয়। কিন্তু ওজর খাটে না__ 
এত দীর্ঘকাল আমারই পদক্ষেপের চাপে যে রাস্তা তৈরি হয়ে 
গেছে, তাকে পরিহারের উপযুক্ত কোনো! কৈফিয়ংই কেউ মঞ্জুর 
করতে চায় না। 

তোমার চিঠি পড়ে আমার বিস্ময় বোধ হয়। সব কিছু 
দেখবার আকাঙ্ষা এবং শক্তি তোমার মধ্যে যেমন প্রবল 
আমাদের দেশে এমন অল্প লৌকেরই মধ্যে দেখেচি । তোমার 


খ্৫৭ 


ইন্দ্রিয়বোধের খোলা জানলায় তোমার মন সর্ধ্বদা উৎসুক 
হয়েই আছে। এই উদাসীন আধেক কাণ। আধেক কালার 
দেশে বিশ্বপ্রকৃতির সম্বন্ধে এমন জাগরূক চৈতন্য কোথ। থেকে 
পেলে? আমাদের দেশের হাল আমলের ধর্মসাধনা এই 
জিনিষটাকে কম্বল চাপা দিয়ে রাখে, বিশ্ববিষয়ের প্রতি এই 
উপেক্ষাকেই আধ্যাত্মিকতার লক্ষণ বলে স্থির করে রেখেছে । 
এই প্রত্যক্ষ দৃষ্টির ক্ষীণতা যে মানসিক জড়ত্বের লক্ষণ তা তারা 
মানতে চায় না। তোমার মধ্যে একটা স্বাভাবিক বৈজ্ঞানিক 
উৎসাহ আছে-_ তুমি সব জিনিষকে স্পষ্ট দেখতে চাও-__ 
তোমার নিজেকেও তুমি খুব স্পষ্ট করে দেখে থাকো, তুমি 
আপনার কাছে আপনাকে ভোলাঁও না। এইখানেই তোমার 
প্রকৃতিগত আধুনিকতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। অদৃষ্টক্রমে তুমি 
মেয়ে হয়ে জন্মেছ__ শুধু যে কেবল সামাজিক আবরণ তোমাকে 
বেষ্টন করে রেখেছে তা নয়, আজন্মকাল শিক্ষার অভাবও কঠিন 
জেনেনা, তার দেয়ালে ফীক অল্পই। তোমার বুদ্ধি তোমার 
অশিক্ষার অভ্তরাল ভেদ ক'রে কিছু কিছু দেখে শুনে নেয়-_ কিন্তু 
জান! ও না-জানার মিশ্রণে তোমার অনেক ধারণা উপছায়ার 
আশ্রয় হয়ে উঠেছে। তোমার স্বাভাবিক শক্তি বাধাগ্রস্ত হয়ে 
যে এমনতরো ব্যর্থ হয়ে রইল এ কথা মনে করে ছুঃখ বোধ 
করি। 

কদিন ছুঃসহ গরম গিয়েছে অদৃশ্য বাম্পের আস্তরণের 
নীচে পৃথিবী দিনরাত হাঁপিয়ে ঘেমে মরছিল। কাল হঠাৎ 
ঘনঘোর মেঘ এসে সমস্ত আকাশ থেকে জ্বরের তাপ সরিয়ে 


৫৩ 


দিয়েছে! বাতাসে প্রফুল্পতা, আলোকে প্রসন্নতা ; গাছের 
কম্পিত ভালপাল। ঝলমল করচে, শরতের আশ্বাসবাণী জলস্থল 
আকাশে মন্দ্রিত হোলো । ইতি ৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ 

দাদা 


৯৫০ 


২২ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ 


৫৯ 


কল্যাণীয়াস্ত 

ব্যস্ত ছিলুম, এখনো ব্যস্ত আছি। অন্য নানা কাজ তো 
আছেই তার উপরে আমার বন্ধু এগুজ সাহেব এসেচেন__ তার 
আতিথ্যে ও আলাপ আলোচনায় অনেকটা সময় দিতে হচ্চে । 
তার মত বন্ধু আমার দ্বিতীয় আর কেউ আছে কিনা সন্দেহ। 
তার বন্ধুত্ব বলিষ্ঠ প্রকৃতির বন্ধুত্ব--_ শুধু ভাঁবাকুল বন্ধুত্ব নয় 
ত্যাগপ্রবণ বন্ধুত্ব, আমার জন্যে সব করতে পারেন তিনি | এ 
রকম ভালোবাসা ছুর্লভ। 

মুখভারকরা চাঁপা নিবিড় রাগ হঠাৎ কান্নাকাটি বকাবকিতে 
আলোড়িত হয়ে উঠলে যেমন হয় তেমনি হয়েছে এখানকার 
আকাশের ভাবখানা । গুমটের আবরণ ছিন্ন করে ঝোড়ো বাদলা 
প্রবল হয়ে উঠেচে। আমার সামনের গাছগুলো! খুব মাথা- 
বাঁকানি দিচ্চে আর সেই সঙ্গে মুখর মন্মরে ডাল নাঁড়ানাড়ি। 
বৃষ্টির ভিতর দিয়ে পাণ্ুর আকাশের জ্রকুটি দেখা যাচ্চে দিগন্তে 


৫৪ 


পরিষ্ফীত মেঘস্পে । উত্তাপ নেই, আন্দোলন আছে আমাদের 
দেশের মধ্যমপন্থী রাষ্ট্রনায়কদের নকল দেখা যাচ্চে আজ দেব- 
সভায় । মেঘের গর্জন নেই বিদ্যৎ নেই, কেবল অজস্র অবিশ্রান্ত 
ক্রন্দনের পাঁলা। চাষীরা তাকিয়ে ছিল এই বৃষ্টির আশায়। 
কচি ধানগুলো শুকিয়ে আসছিল সেই সঙ্গে চাষীদের মুখ । 
মর্ত্যলোকে ওদের আছে মহাজন, আকাশে আছেন পর্জন্য দেব, 
-_ উপরওয়াল। বর্ণ না করলে নিচেরওয়ালাঁও বর্ষণ বন্ধ করে। 
আর ওরাই বহন করচে কৃম্মের মতো আমাদের সবাইকে, 
জমিদারকে উকিলকে ডাক্তারকে পণ্ডিতমশায়কে । অথচ ওরাই 
অস্পৃশ্য উপেক্ষিত অশিক্ষিত, আধপেটা, আধমরা । 
কাল সকালের গাড়িতে কলকাতায় যেতে হচ্চে। দিন চার 
পাচ রাজধানীতে কাটবে । ইতি ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ 
দাদা 


১৫১ 


[ বরানগর ] ২৯ সেপ্ম্বর ১৯৩৪ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থু 

কিছুকাল থেকে নিব্বাসনে আছি । আমার শাস্তিনিকেতনের 
নীড় ছেড়ে চলে এসেচি রাজধানীপাড়ায়। শরৎংশ্রী সেখানে 
দেখা দিয়েছে তার সমস্ত এশ্বধ্য নিয়ে। শিউলি ফুলে বিছিয়ে 
দিয়েচে বনতল-_ কচিধানের ক্ষেতের আলের কাছে বিকশিত 
হয়েছে কাশের গুচ্ছ, বৃষ্টিধৌত কাঞ্চনের চঞ্চল পাতা থেকে 


৫৫ 


বিচ্ছরিত হচ্চে প্রভাতের স্ত্য্যকিরণ, চেয়ে চেয়ে চোখ ফেরাতে 
ইচ্ছে করে না। সেখানে আকাশ অবারিত, দিগন্ত পর্যন্ত দৃষ্টির 
অধিকাঁর_- আমার চোখের ছুটি মনের ছুটি দ্য,লোকে ভূলোকে। 
বরানগরের যে কোণে আশ্রয় নিয়েছি এখানেও বিশ্বপ্রকৃতির 
আতিথ্য পাওয়! যাঁয়। চোখ মেলে দেখতে পাই বাংলা পল্লী- 
শ্রীকে। জানলা থেকে সামনে দেখা যায় পুকুরের একটা প্রান্ত 
কলমি শাকে ঢাকা, নারকেল সুপুরি মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে 
সব গাছকে ছাড়িয়ে-_ আম কাঠাল জামরুল বাঁতাবিলেবুর ঘন- 
সন্নিবিষ্ট গাছে গাছে আকাশকে অন্তঃপুরে আবদ্ধ করেছে। 
কিছু দূরে আল্সেহীন দোতলা বাড়ির ছাঁদ থেকে সাড়ি ঝুলচে__ 
গাছপালার অন্তরালে প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে গ্রামোফোনের 
খেলো স্বর শোনা যাচ্চে, বাড়ির পিছন থেকে লিচুগাছের কোন্‌ 
প্রচ্ছন্ন ডালের থেকে ডাকচে “চোখ গেল”। প্রথম শরতের 
ঈষৎ স্সিপ্ধ বাতাস দিয়েছে রৌব্রে ঝিলমিল করতে করতে ছুলচে 
নারকেলের ডালগুলি। ইতি ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ 

দাদা 


৯৫২, 
৯ অকোবর ১৯৩৪ 
ও 
কল্যাণীয়াস্তু 
তোমার প্রেরিত ফলের ঝুড়ি এই মাত্র এসে পৌঁছল । তার 
ভোগও আরন্ত হয়েছে। ৰ রেলযাত্রায় ও প্রম্পরের পেষণে 


৫৬ 


ফলগুলি বেশি ক্রিষ্ট হয় নি। প্রায় সবগুলিই প্রসন্ন আছে। 
শীতলপাটিও ব্যবহারে লাগবে । আজ থেকে বিদ্যালয়ের ছাত্র 
ও অধ্যাপকদের এই প্রাস্তরের বাসা শুন্ত হতে আরম্ভ হোলো । 
পশু দিনের মধ্যে মানবজাতীয় নান! পক্ষীর প্রায় সকলেই দশ- 
দিকেতে অন্তর্ধান করবে । বাকি থাকবে আমাদের গাছপালা 
আর ভানাওয়াল! .পাহীগুলি। এই সময়টি এখানে অত্যন্ত 
মনোরম-_ এক মূহুর্তের জন্যে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না, 
এবং কাজকন্শ করতেও মন যায় না। দেবতারা যে আলম্তপাত্র 
পূর্ণ করে নন্বনবনে সুধাপাঁন করে থাকেন সেই পাত্রটি চুরি 
করে আনতে ইচ্ছে করে । তাদের কারো কাছে কোনো জবাব- 
দিহি নেই। আমরা কর্তব্যবিরত হলেই নীতিজ্ঞ সাধুজনের 
তর্জনী তূলে ভংসনা করতে আসেন। বিপদ এই, সেই নীতিজ্ঞ 
যে কেবল বাইরেই আছেন তা নয়, তিনি ভিতরেও কোথাও 
এক কোণে বাস। নিয়েছেন__- অন্যমনস্ক হলেই তাঁর সাড়া পাওয়া 
যায়, ধড়ফড় করে চমকে উঠতে হয়। অতএব এখানকার পালা 
শেষ করে দেবলোকে যদি আমার গতি হয় তবেই স্বর্গীয় 
অবকাশের অধিকার নিঃস্কোৌঁচে দাবী করতে পারব-_- অমরা- 
বতীতে কবির প্রয়োজন থাকতেও পারে এই আমার একমাত্র 
আশা। আমি বাসন্তীর জন্যে আমাদের বর্ধামঙ্গলৈর একটা 
প্রোগ্রাম পাঠাচ্ছি । গান শুনলে নাচ দেখলে নিশ্চয় সে খুসি 
হোতো-_ কল্পনায় প্রত্যক্ষতার অভাব যতটা পারে পূরণ করে 
নিতে বোলো । সঞ্চয়িতার ২য় সংস্করণ তোমার জন্যে পাঠাই-__ 
ওতে অনেক বেশি কবিতা আছে । ১৯ অক্টোবরে এখান থেকে 


৯১৭ ২৫৭ 


মাদ্রাজ অভিমুখে যাত্রা করব । ফিরতে এ মাসের শেষ। ইতি 
৯ অক্টোবর ১৯৩৪ 
দাদ। 


১৫৩ 
১৬ অক্টোবর ১৯৩৪ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত 

সঙ্গীয় চিঠিখানি কিছু কাল পূর্বে তোমাকে লিখেচি। 
কর্মচারীকে বলে দিয়েছিলুম লেফাফায় তোমার ঠিকানা লিখে 
পাঠাতে । সে গৌরীপুর আসাম লেখাতে অমিয়র বাবার ঠিকানায় 
পৌঁছয় । তিনি আমার ভাষ! দেখে চিঠিখানি নিশ্চয়ই আমার 
লেখা ঠাউরে আমাকে পাঠিয়ে দ্রিয়েছেন। এই সঙ্গে ছুখানা 
বই পাঠিয়েছিলুম তার কী গতি হোলে! জানি নে। পারি তো 
উদ্ধার করে পাঠাব । 

আজ ছু দিন থেকে ঝড় বুষ্টি চল্চে । মনে আছে বাল্যকালে 
সপ্তমী পুজোর দিন একবার প্রচণ্ড ঝড় নেমেছিল। এবারে 
আকাশের মুখখানা সেই রকমের অপ্রসন্ন । থেকে থেকে কালো, 
থেকে থেকে পাগ্রবর্ণ হয়ে উঠচে__ চঞ্চল গাছপালার উপর 
একটা আভা পড়েচে সে যেন উদ্বেগের আভা । ছেঁড়া ছেঁড়া বৃষ্টি 
প্রবল পুবে হাওয়ায় উড়ে উড়ে যাচ্চে। আজ পুজোর সকালে 
পাখীগুলোর উপোষ। ছুটো একট! শালিখ ভোরের দিকে 
আহারের চেষ্টায় বেরিয়েছিল, ঝড়ের প্রকোপে অনতিকালের 


৫৮ 


মধ্যে মন খারাপ করে চলে গেছে । মাত্রাজ যাত্রার আয়োজনে 
ব্যস্ত আছি। ইতি ১৬ অক্টোবর ১৯৩৪ 


দাদ! 


১৫৪ 
৩১ অক্টোবর ১৯৩৪ 
ও 

কল্যাণীয়াস্থ 

বই দুখান পেয়েছ খবর পেয়ে খুসি হয়েছি। আর যাই 
করে। অযোগ্য কোনে! ব্যক্তিকে দান কোরো না। 

আমাদের এখানে আজ শাপমোচনের পালার শেষ দিন। 
ফেরবার পথে ওয়াল্টেয়রে বিজিয়নগ্রামের মহারাণীর কাছে 
নিমন্ত্রণ পেয়েছি__ সেখানে অভিনয়টা শেষ করে তার পরে ছুটি 
পাব। 

প্রবল বৃষ্টিতে এখানকার সহরটা উভচর হয়ে উঠেছিল। 
রাজপথ জলপথ হলে সেটাতে পথের কাজ চলে না । সেইজন্যে 
অভিনয়ের প্রথম ছর্িন আমাদের পক্ষে ফাড়। গেছে। কাল 
বৃষ্টি ছিল না_ থিয়েটরে ফাঁকা জায়গা ছিল না অনেককে 
দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল-_- আজও ভিড় হবে । 

আশ্রমে শরত্শ্রী আমার জন্যে অপেক্ষা করে আছেন। 
একটা শুরু পক্ষ কেটে গেল-_ লক্ষ্মীপৃণিমার আবির্ভাব হয়েছিল 
এই মাদ্রাজে, কিন্ত মুখ ঢেকে । 

ষে জায়গায় আতিথ্য পেয়েছি এখানটা খুব সুন্দর । অদূরে 


৫৯ 


সমুদ্র, চারি দিকে বড়ো বড়ো প্রাচীন বনস্পতির ছায়া। 
ছায়ালোকখচিত অরণ্যবীথিকার সিপ্ধ শান্তি গিয়ে পৌচেছে 
তরঙ্গমুখর সমুদ্রের চঞ্চলতায়। এ বাড়ি সহর থেকে দশ মাইল 
দূরে। নইলে দর্শনার্থীর সখ্যা ছুঃসহ হয়ে উঠত। 
সময় জঙ্কীর্ণ। ইতি ৩১ অক্টোবর ১৯৩৪ 
দাদ 


১৫৫ 


৮ নভেম্বর ১৯৩৫ 


৫১« 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমার নামে অসংখ্য অসত্যের প্রচার হয়ে থাকে তার মধ্যে 
আরো! একটা তোমার কাছে শোনা গেল। সে হচ্চে আমার 
ব্লাড প্রেশরের জনশ্রুতি । মৃত্যুর সহত্র দ্বার খোল রয়েছে কিন্তু 
রক্তের উত্তেজনায় আমি মরব না সে সংবাদ আমার ভালো 
করেই জানা আছে। যুরোপে এবং এ দেশে বড় বড় ডাক্তার 
আঁমাঁর রক্তবেগ পরীক্ষা করে দেখেচেন, তারা বলেন আমার 
নাড়ী চৌত্রিশ বছর বয়সের নাড়ী। এমন কি, তীদের মতে 
আমার কোনো! দেহযন্ত্রেই ক্ষয় বা বিকৃতি ঘটে নি। আমার 
শরীরের একমাত্র অপরাধ তার দূর্বলতা । তাকে অতিপরিমাণে 
ক্লান্ত করা হয়েছে । তার প্রতিকার, যথেষ্ট পরিমাণে বিশ্রাম । 
কিন্তু চারদিকের সকলের সম্মতি না থাকলে বিশ্রাম অসম্ভব । 
দায় দাবীর অন্ত নেই__ বাজে কাজের মহাকায় দানব প্রত্যহই 


৬০ 


কাধে চড়ে মেরুদণ্ডের উপর তাণগ্ব নৃত্য করতে থাকে । বাঙালী 
অভিমানী জাত-_ বড়ো ছোটে! সকলেরই সকল প্রকার অনু- 
রোধই সব্বাগ্রগণ্য । তাই মরণের উপরেই অন্তিম ভার, তিনিই 
আছেন আমার বিশ্রীমের আয়োজন সাজিয়ে । 

মাদ্রাজের পাল! শেষ করে এলেম । ফেরবার পথে ওয়াল- 
টেয়রে ভিজিয়নগ্রমের মহারাণীর অতিথি ছিলুম। কিন্তু সে 
তো আতিথ্য নয়, ষোড়শোপচারে পুজা । এরোপ্লেনে করে 
মাদ্রাজ বাঙ্গীলোর থেকে প্রতিদিন ঝুড়ি ঝুড়ি ফুল আসত-_ 
আমার চলবার পথ ঢাকা পড়ত গোলাপের ভূপে। দেবতার 
নৈবেছ্য অসঙ্কৌচে গ্রহণ করবার মতো! স্পর্ধা আমার নেই-_ 
কিন্তু মহারাণীর অকৃত্রিম ও সুমধুর ভক্তিই আমার লজ্জা দূর 
করে দিত। মনে জানতুম এর মূল্য আমার নয়, সে এ ভক্তিরই। 
প্রশ্রবণ যেমন পাথরের মধ্যে দিয়ে আপনার পথ আপনিই 
খনন করে চলে, নারীহ্ছদয়ের পুজাউৎসও তেমনি আপন গতি- 
বেগেই আপন তটের স্টটি করে__ তার মধ্যে প্রবাহিত সেই 
ধারারই জয়। মহারাণীর একটি মেয়ে আছে, সুন্দর দেখতে, 
তাঁর নাম উন্মিলা। স্টেশনে আমাকে মালা দিয়ে অভ্যর্থনা 
করতে এসেছিল । প্রথমেই আমাঁকে পরিচয় দিলে আমি আপনার 
নাতনী । ওর! দাঁদামশায়কে বলে নানা । বজ্তৃত আমার দাদা- 
মশায়ের পদটা “নানা” বিশেষণ পাবারই উপযুক্ত হয়েছে । 

অনেকদিন পরে স্বস্থানে ফিরে এসে ভালো লাগচে। ইতিমধ্যে 
শরৎকে ঠেলে দিয়ে শীত চড়ে বসেচে সিংহাসনে | শিউলিশাখায় 
বীজ ধরে গেছে-_ চামেলি ছুটে! একটা ফুটচে কিন্তু মালতী চলে 


২৬১ 


গেছে নেপথ্যে। এখন আসর জমিয়েছে হিমঝুরি ফুল। ও 
নামটা আমারই দেওয়। নাম, ফুল তোমার চেন! কিন! জানি নে। 
পশ্চিমে এ গাছের খুব প্রাছ্র্ভাব। লম্বাবৃস্তওয়ালা শাদা শাদা 
ফুল-_ কেবলি ঝরে ঝরে পড়চে গাছতলায়। দীর্ঘ উচু গাছ, 
নিমের মত পাতা, ফুলে শাদা হয়ে গেছে তার শিখর, আমার 
মাথার মতো! । গন্ধটি সুমিষ্ট । উত্তর দিক থেকে হাওয়া দিচ্চে, 
কোনো কোনো গাছের পাতা ঝরে পড়তে স্থরু হোলো । দিন 
যত এগোতে থাকে মর্মমরিত বনভূমির মধ্যে রৌদ্রের লীলা ততই 
লাগে ভালো । এই অবারিত প্রান্তরের মধ্যে শীতের মধ্যাহ্ন 
আমার কাজ ভুলিয়ে দেয়-_ দিকপ্রান্তের নীলিমার মধ্যে আমার 
ুগ্ধদৃষ্টি হারিয়ে যায়। ইতি ২২ কাত্তিক ১৩৪১ 

দাদা 


১৫৬ 
২১ নভেম্বর ১৯৩৪ 
ওঁ শাস্তিনিকেতন 
কল্যাণীয়াস্ 
তোমার সঙ্গে অনেকদিন তর্ক করি নি আজ করব। আমাকে 
বিজয়নগ্রমের মহারাণী ভক্তি নিবেদন করেছিলেন, সেই ভক্তির 
সঙ্গে পাণ্ডার পা পূজোর সমমূল্যতা অবধারণ করেছ। উভয়ের 
মধ্যে প্রভেদ কী সেটা বলা আবশ্যক । আমাকে ভক্তি করার 
মধ্যে এহিক বা পারত্রিক কোনো ফললাভের প্রলোভন নেই। 
বোধ করি মহারাণী আমার মধ্যে ভক্তিযোগ্য কোনে মহত্ত 


২৬২ 


কল্পনা করেছিলেন, সেটা তার ভুল হতে পারে কিন্তু মহত্বকে 
ভক্তি করা অহৈতুক, সেট! বিশুদ্ধ ভক্তি । কিন্তু তোমাদের যে 
সব মেয়ের! স্বর্গফলের লোভে ঘটা করে দেবতার পূজো! দেন এবং 
সেই ফলকে সমাপ্তি দেবার জন্যে পাণ্ডার পা দেন মোহরে ঢেকে 
তাদের এই মনোবৃত্তিকে যদি ভক্তি নাম দাও, তাহলে বৈষয়িক 
ফৌজদারী মকদ্দমার অনুকূলে দারোগাঁকে যে ঘুষ দেওয়া হয় 
সেও তো! ভক্তি বলে গণ্য হতে পারে । এমনতরে। বিকৃতিকেও 
তোমর! ভক্তি নাম দিতে পারো সে আমাদের দেশের আব- 
হাওয়ারই দোষে । এই মনোভাবের থেকেই তোমাদের পণ্ডিত 
তর্ক করেন যে শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যখন অক্ষৌহিণী সৈন্য 
নাশ করতে পেরেছেন তখন পুজা উপলক্ষ্যে শত সহত্র পাঠা 
মহিষ বলি দিতে কুন্ঠিত হবার কারণ নেই। “বিনাশায় চ 
দুক্কৃতীং” ভগবানকে বারে বারে জন্ম নিতে হয় এই কথা গীতায় 
আছে। ধর্ম্যুদ্ধে অনিবাধ্য নিধনকাধ্য নিরাসক্ত মনেই করা 
যেতে পারে কিন্তু দেবী যে প্রত্যহ পীঠার রক্ত পান করে 
থাকেন তার! কি ছুক্ধতের দলে-_ যারা তাদের বধ করে তাদের 
চেয়েও কি তাঁর! ছুষ্কৃুত। মহাভারতের বকাস্ুর রোজ একটা 
করে মানুষ খেত-_ ভারতের পুজামন্দিরে দেবীও মহামাংস- 
নৈবেছ্যকে সব চেয়ে শ্রেষ্ঠ নৈবেছ্চ বলে গ্রহণ করেছেন তার 
প্রমাণ আছে, উক্ত অসুরের লোভের সঙ্গে এই লোভের প্রভেদ 
কি? পাঠার রক্তলোভও সেই জাতেরই। পুরাণ কাহিনীতে 
আছে চণ্ডী কোনো এক যুগে মহিষ নামধারী দানবকে বধ 
করেছিলেন-_ দানব যদ্দি ছুষ্টস্বভাব হয় তবে দেবী ভালোই 


২৬৩ 


করেছিলেন, কিন্তু হতভাগা মহিষ পশুটা কী দৌষ করেছে? কিন্তু 
মহিষের রক্তে দেবী প্রসন্ন হন এই কল্পনা করে যারা পুজা করে 
তাদের পুজা কি পুজা, না দেবতার অবমাননা? বোলপুরের 
কাছে কস্কালীতল। বলে এক তীর্থে বংসরে একবার বিশেষ পরবে 
নানা ভক্তের মানতরূপে বহু শত পাঁঠার বলিদান হয়, নিকটের 
জলাশয় রক্তে লাল হয়ে ওঠে । এই লুব্ধ হিংআ্রতাকে যদি পুজা 
নাম দিতে কৃ না হয় তাহলে পাণ্ডার পা পুজাকেও ভক্তি নাম 
দিতে পার। ভক্তিকে রিপুর দলে ফেলে! না । এমন কি ভক্তি 
দেখিয়ে দেবতার প্রসন্নতা লাভ করা যায় এ মনে করাতেও 
ভক্তির খর্বতা করা হয়। ভক্তি যে করে ভক্তিতে তারই 
চরিতার্থতা । 
আচার অনুষ্ঠানের দ্বারা পুণ্য হয় এও আধ্যাত্মিকতার নামে 
স্থল বৈষয়িকতা | পুণ্য অন্তরের সামগ্রী, এবং সে পুণ্যে পারত্রিক 
সদগতির কথাও স্থুল বস্তৃতন্্রতা । আমাদের দেশে পুণ্যকে পণ্- 
সামগ্রী করে তুলেছে-_ দেশ পায়ের ধুলো বিক্রি করে লোভীদের 
কাছে।-_- আচারের অনর্থক উপকরণ বাহা পদার্থ, হাটে নান। 
নামে তাদের বেচাকেনা চলে ; একদ। মণিকণিক! ঘাটে স্লানের 
পরে আমাকে তিলকচচ্চিত করে যে মানুষ মূল্য নিয়েছিল 
পুণ্যকে এতদূর শস্তা করার দ্বারা সে মনুষ্যত্বের যে অবমানন! করে 
থাকে সেই ছুর্গতির ভারেই ভারতবর্ষের মাথা আজ হেট হয়ে 
গেছে ।__ এই পধ্যস্তই থাক্‌। তর্ক করে কোনো লাভ নেই। 
ইতি ৫ অগ্রহায়ণ ১৩৪১ 
দাদ। 


২৬৪ 


১৫৭ 


১* ডিসেম্বর ১৯৩৪ 


ঠৎ 


কল্যাণীয়াস্থ 

আমি আজন্ম ব্রাত্য । মর্তধরণীর বুকের কাছে আমার বাঁসা 
__. এখানকার মাটির ভীড়ে যে অমৃত পাই তাই আমার যথেষ্ট। 
পারত্রিকের ঠিকানা জানি নে, যারা সেখানকার বিবরণ জটিল 
ভাষায় বিস্তারিত করে বল্তে আসে তাদের কথা বুঝতেও পারি 
নে বিশ্বাসও করি নে। সকল জাতির সকল শাস্ই দৈবদত্ত 
নিখুঁৎ সত্যের অহঙ্কার করে অথচ তাদের পরস্পরের সম্বন্ধ 
আদায় কাচকলায়। মধ্য আফ্রিকার বর্বরও তাদের নিরর্থক 
আচারকে ধর্মের পদবী দিয়ে তার শুচিতার অভিমানে রোমাঞ্চিত, 
আমাদেরও সেই একই দশা । এই পরম্পর প্রতিঘুধ্যমান 
শান্রকে আমি দূর থেকে নমস্কার করি-_ শ্রেয়োবোধের 
অনুমোদিত শুচিতাকেই পালন করতে আমার প্রয়াস, যে 
বান আচার মানুষে মানুষে ভেদ ঘটিয়ে প্রাচীর তুলে বেড়ায় 
মানবপ্রেমকে, ঈশ্বরদত্ত বুদ্ধিকে অবজ্ঞা করে শাস্ত্রের অক্ষর 
বাঁচাবার জন্যে খুনোখুনি করতেও অগ্রসর হয় তাকে বর্ন করে 
নাস্তিক অধাম্মিক পদবী নিতে আমার কোনো সঙ্কোচ নেই। 
পাণ্ডার পা পুজো করে যে আত্মাবমাননা হয় তার দ্বারাও ভক্তির 
সার্থকতা ব্যাখ্যা করবার মতো শাস্ত্রিক সুক্ষ তর্ক আমার বুদ্ধির 
অতীত। অতএব আমাকে ভিন্ন জাতের মানুষ বলেই জেনো, 
আমি তোমাদের ত্যাজ্য । আমার গতি হবে কোথায় সে জন্মে 


২৬৫ 


আমি ভাবিই নে__ খামক। যমদূত আমার ঝুঁটি ধরে যদি কুভ্তী- 
পাকের দিকে টানাটানি করে তবে তার সেই রূঢ় ব্যবহারের 
তীব্র প্রতিবাদ করব, বলব তার যে মনিবের এমনতরো বুদ্ধিহীন 
হৃদয়হীন বিধিবিধান তাঁর বিরুদ্ধে আমার চিরকালের বিদ্রোহ-__ 
তাকে ঘুষ দিয়ে ব্বর্গে যেতে চাই নে-_ কেনন! সেখানে গিয়ে 
শান্ত্রীয় ভাষায় নিয়ত যার খোষামোদ করে আত্মরক্ষা করতে 
হবে তাকে আমি জন্মান করতে অক্ষম । যে বিধাতা আমাকে 
বুদ্ধি দিয়েচেন, মানুষভ্রাতার প্রতি শ্রদ্ধা দিয়েছেন, মানব- 
প্রেমের ত্যাগপরায়ণ হুঃসাধ্য সাধনার দিকে আহ্বান করেছেন, 
তাকে ভক্তি করেই আমার ভক্তিবৃত্তিকে ধন্য বলে মানি__ 
তারই বিধান আমার যুক্তিতে আমার শুভবুদ্ধিতে সহজ বলে 
বোধ হয়, তাই আমার শিরোধাধ্য | 

৩৩০৩ ০০৩ আমাকে শ্রদ্ধা করতে করুণ করতে স্বভাবতই 
অক্ষম সে জন্যে আমি তাকে দোষ দিই নে। আমার রচনায় বা 
ব্যবহারে নিশ্চয়ই এমন কিছু আছে যা তাকে এতই উদ্বেজিত 
করে যে তিনি আমাকে অপমান না করে থাকতে পারেন না। 
নিক্ষাম সাহিত্যসমালোচনার সঙ্গে তার প্রভেদ আছে। যাকে 
আমরা শ্রদ্ধা করি ভালোবাসি তার ব্রটিকে নির্দেশ করা 
আমাদের কর্তব্য হলেও তাকে অসম্মান করতে আমরা সহজেই 
কুন্ঠিত হই। আমি জানি তিনি তাঁর বন্ধুবান্ধবদের অপরাধ 
সম্বন্ধেও নিঃশব্দে ধের্যয প্রকাশ করে থাকেন। সাহিত্যে তার 
আদর্শই যদ্দি একমাত্র আদর্শ হয় এবং সেই আদর্শের সঙ্গে 
আমরা মিলিয়ে না চললেই আমর! যদি সৌজন্যের অধিকার 


২৬৩৬ 


থেকে বঞ্চিত হই তবে তার সেই ছুর্জয় অভিমানকে মেনে চলে 
চলে মান রক্ষা করতে হবে এমন আশ! কী করে করবে !-_ কিন্ত 
নিশ্চিত জেনো তার প্রতি তোমার বন্ধুভীবকে আমি মনের এক 
কোণেও বাধা দিতে ইচ্ছ! করি নে। আমার খাতিরে যদি 
তার প্রতি তোমার সৌহার্দ্যের কিছু খর্ববতা ঘটাও সেটা আমার 
প্রতিই তোমার অসম্মান হবে। আমি নিজে তার অশ্রদ্ধার 
আবেষ্টন থেকে দূরে থাকতে চাই কিন্তু তাকে দণ্ড দেবার ইচ্ছ। 
আমার মনে যদি জাগে তবে সেইটেই আমারই জব চেয়ে বড়ো 
দণ্ড। আর ক'দিনই বা বেঁচে থাকব-_ যেখানে স্েহ পেয়েছি 
শ্রদ্ধা পেয়েছি করুণ পেয়েছি সেখানেই আসন পেতে আনন্দে 
কাটাতে চাই, বিরোধ বিদ্বেষের প্রতিবেশে মনকে কলুষিত গীডিত 
করতে যাব কেন? ইতি ১০ ডিসেম্বর ১৯৩৪ 


১৫৮ 


২৫ ডিসেম্বর ১৯৩৪ 


৫5 


কল্যাণীয়ান্সু 

অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলুম । এখনো ব্যস্ততার অবসান হয় নি__ 
জীবনের শেষ পর্যন্ত কবে হবে তাও জানি নে। নিষ্কৃতি চাই 
যে তাও সত্যি, চাই নে এও সত্যি । আমার মধ্যে নিভৃতচারী 
অবকাঁশবিলাসী ধ্যানপরায়ণ মানুষও আছে আবার আছে 


২৬৭ 


কন্মের মধ্যে যে আপন সার্থকতা সন্ধান করে। কর্তব্যের 
পরিকল্পনা মনের মধ্যে যখন জেগে ওঠে তখন তাকে রূপ দেবার 
জন্যে মন আগ্রহান্বিত হয়ে ওঠে । কিন্তু এ তো! কাব্য মহাকাব্য 
লেখা নয়, ভাব নিয়ে শব্ধ নিয়ে ছন্দ নিয়ে সাধনা নয়, বহুতর 
মানুষকে নিয়ে কাজ, অনেক বিষয়েই আমার স্বভাব ও ইচ্ছা 
থেকে স্বতন্ত্র স্বভাব ও ইচ্ছা তাদের। আমি রাষ্ট্রনায়ক নই, 
শীসননিপুণ নই, মানুষকে ভেঙেচুরে পিটিয়ে পিও্ড করে 
কুমোরের মতো! তাই নিয়ে মৃত্তি গড়ব আমার সে শক্তিও নেই 
প্রবৃত্তিও নেই। মানুষ স্বাধীন ইচ্ছায় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে মহৎ 
আদর্শের চারদিকে আকৃষ্ট হবে, তার সাধনায় আপনাকে উৎসর্গ 
করবে এই প্রত্যাশা করি। কিন্তু এমন প্রত্যাশা কবির যোগ্য। 
বস্তুত নানা মানুষ আসে নান! আকর্ষণে, কেউব। অর্থের কেউ- 
বা খ্যাতির কেউবা কর্তৃত্বের, তাদের শক্তির প্রকৃতি ও পরিমাণ 
নান! রকমের, তাদের মধ্যে বিরুদ্ধতাও থাকতে পারে-_ তাদের 
সবাইকে এক-শীসনে অভিভূত করে না আনতে পারলে এক- 
ফললাভের আশা থাকে না। সেই শাসনকাধ্যে আমার আনন্দ 
নেই। অথচ যে কন্ম্ের প্রবর্তন আমি করেচি সে কন্মকে বড়ে। 
বলেই জানি, এও জানি যাদের মনে কল্পন! নেই, বুদ্ধিতে কাঠিন্য 
ও তীক্ষতা থাকলেও দীপ্তি নেই এ কাজ তাদের নয়__ কাঁজেই 
এই কর্তব্যভার আমি ইচ্ছে করেই বহন করেছি । শুধু সাহিত্য 
নিয়েই জীবনযাপন যদি আমার পক্ষে স্বাভাবিক হোতো! তা- 
হলে মনের আনন্দে সেই পথেই চলতুম । সে আর হোলো না। 
অতএব নালিশ কর। আমাকে শোভ। পায় না। আমার কাব্য 


৬৮ 


আমার দেশের লোক অনেক পরিমাণে স্বীকার করেচে- আমার 
কাজকে যদি স্বীকার না করে তবে দৌষ দেব কাকে? বাঙালী 
দেশের কোন্‌ কাঁজকেই বা শ্রদ্ধা করে মেনে নেয়, কোন্‌ 
কাজকেই বা সাতখানা করে ভেঙে ফেলতে চেষ্টা না করে? 
বাঙালীর অপরিমীম অহঙ্কারের কাছে কোনে। কাজই তার 
সম্মতির যোগ্য বলে গণ্য হয় না। অহৈতুক প্রতিকুলতায় 
কণ্টকিত এই দেশে যে হতভাগ্য কোনো ছৃরূহ কন্মানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত 
হয় সে বঙ্গভূমির ভাগ্যগগনে নিত্যজা গ্রত দুর্গহের অভিসম্পাত- 
গ্রস্ত ৷ 

তুমি এক্জিমার ওষুধের কথ জিজ্ঞাসা করেছ। একটা 
ভালো ওষুধ আছে। জানি নে সে গাছের পরিচয় তোমাদের 
কাছে কোন্‌ নামে? এখানে তাকে বলে বন-টেপারি। তার 
ফল দেখতে ঠিক ট্যাপারির মতো, পোষাকপরা | বেঁটে নিয়ে 
তারি রস লাগাতে হয়। একবারের বেশি লাগাবার দরকারই 
হয় না, বড়ো জোর ছুবার। তার পরে আর প্রয়োগ না করে 
অপেক্ষ! করে দেখতে হবে । 

কাল কলকাতায় যাচ্চি_ প্রবাসীসাহিত্যসম্মেলনে । ইতি 
৯ পৌ ষ ১৩৪১ 

দাদা 


২৬৪ 


১৫৯ 


১৩ জানুয়ারি ১৯৩৫ 


৫৯€ 


কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার মানসপটে আমার মুখচ্ছবিতে তুমি একটি নিষ্ঠুর 
কৌতুকহাস্তরেখা দেখতে পাচ্চ ।-_ এতদ্বারা আমি তোমাকে 
জ্তাীপন করচি যে সেটা তোমারি কল্পনাতুলিকাদ্বারা আরোপ 
করা__ বিধাতার রচনার মধ্যে সেটাকে খুঁজে পাওয়া যাবে 
না স্থষ্টিকর্তা হিসাবে তারই উপর তোমার চেয়ে বেশি নির্ভর 
কর! যেতে পারে। 

অনতিকালের মধ্যে আমাকে বাংলাদেশের বাহিরে. চার 
জায়গায় যেতে হবে-__ অন্তত আটট! ইংরেজি বক্তা না হলে 
মান রক্ষা হবে না। সময়াভাঁব কাকে বলে সেটা তোমর! 
অনুভব ব! অনুমান করতে পারো না। বেকারশ্রেণীয় অভিজাতি- 
মণ্ডলীর মধ্যেই তুমি জীবনযাপন করে! তাই আমাদের মতো! 
কর্্মভারগ্রস্ত মানুষের অবস্থা তোমার মনোগোচর হতে পারে 
না। বর্তমানে আমার কী দশা, কর্মস্থানে কোন্‌ গ্রহের দৃষ্টি 
সন্ধান করে দেখলে প্রকৃত খবর সমস্তই জানতে পারবে । 

কাল রাত্রে এখানে আটজন জাপানী অতিথি এসেছেন। 
তাদের মনোরঞ্রন করতে হবে। স্বভাবতই আমি কুণো অথচ 
বিরাট বহিঃসংসারের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ঘটিয়েছে আমার 
ভাগ্য । আমার অন্তরের বিরুদ্ধে বাহিরের এই প্রতিবাদ নিয়তই 


চলেছে । অতএব ইতি ১৩ জানুয়ারি ১৯৩৫ 


দাদা 
২৭০ 


১৬৯ 


২২ জানুয়ারি ১৯৩৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

আমার সমস্ত দিনের ভোজনের তালিকা তোমাকে পাঠাতে 
বাধ্য হলুম-_- নইলে মনে মনে কাল্পনিক অর্ধভোজনের বিবমিষা 
তোমাকে পীড়িত করবে। 

প্রাতে ৬টা :-_ মাখন দিয়ে তোস্-করা রুটি ছুই খণ্ড। 
তৎসহযোগে বিলিতি বেগুনের জ্যাম, গৃহজাত | অনেক পরিমাণে 
ছুপ্ধসংযোগে চৈনিক চা। ছুটি কদলী। বেগুনটা বিলিতি, তথাপি 
নিরামিষ। 

মধ্যাহ্ছে :__ পালং, রাইশর্ষের শাক, ফুলকোফি, সেলা'রি 
€ এক প্রকার বিলিতি সবজি ) ট্যাড়স,__ সমস্তই কাচা, খণ্ড খণ্ড 
করে মিশিয়ে তাতে আদা ও নেবুর রস দিয়ে তৎসহ পুদিনা 
শুল্ফ শাক মিশিয়ে কিঞ্চিৎ শর্করাযোগে সেবন করে থাকি। 
যেটাকে সেলারি বলচি এট! বিলিতি বটে কিন্তু দ্বিপদ্র ব! চতুষ্পদ 
নয়, মাটি ফুঁড়ে ওঠে বটে কিন্ত শিং দিয়ে গুঁতিয়ে নয়। 
কালীঘাটে মান করবার মতো এর মধ্যে ব্যথা, ভয় বা রক্তও 
কিছু নেই। তার পরে তোস রুটি, ছুটো৷ লবণস্পৃষ্ট, বাকি দুটো 
মিষ্টপ্রলেপযুক্ত। ক্ষচিৎ সন্দেশ দিয়ে সমাপন করি । 

অপরাহে £ ছাগছুপ্ধযোগে চা। 

সায়ান্ছে : পূর্ধবোক্তবৎ সবজির মিশ্রণ । পরিণামে যদৃচ্ছা- 
কৃত মিষ্টান্ন, সেটা মাছ বা মাংস দিয়ে রচিত নয়। 


২৭১ 


প্রাতে মধ্যাহভোজনের পুর্বে আধপোয়া আন্দাজ ছাগছুগ্ধ 
খেয়ে থাকি, কিন্তু তার পুর জগন্মাতার প্রসাদী ছাগের পিতৃ বা 
ভ্রাতৃপুরুষকে ভক্ষণ করি নে। 
আর অধিক লেখবার সময় নেই । কাজের তাড়া আতিথ্যের 
কর্তব্য শারীরিক গীড়া সব একত্র মিশেচে | ইতি ৮ মাঘ ১৩৪১ 
দাদ 


১৬১ 


কল্যাণীয়াস্তু 
কাল অর্থাৎ রবিবারে যাত্রা করে সোমবার সকালে 
কলকাতা পেঁছব। হয় তো ছু তিন দিন থাকতে পারি । জোড়া- 
সাঁকোয় এসে নামব তার পরে আনাহার সমাপন করে যাব 
বরানগরে । হয় তো৷ বোটে থাকতেও পারি । ইতি 
দাদা 


১৬২ 
৫ মার্চ, ১৯৩৫ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত 

লক্ষৌ থেকে যখন যাত্রা করলুম কলকাতায় আসাই তখন 
সঙ্কল্প ছিল। কিন্তু শরীরটা আপত্তি জানালো । এবারে আমার 
ভ্রমণের গোড়া থেকেই শরীর বিগড়ে ছিল। ঘোরাঘুরিতে 
ক্রমেই সেটা বেড়ে চল্ল। তাই অবশেষে শান্তিনিকেতনে 


৭ 


আমার কুলায়ের কোণে এসে আশ্রয় নিতে হোলো । এখানে 
আমাদের বসস্ত উৎসবের জন্যে ছেলে মেয়েরা প্রস্তুত হচ্চে 
নৃত্যগীতবাছ্যের আয়োজনে আমার সহায়তার দাবী করে তারা, 
আমি তো ওদেরই পোয়েট্‌ লরিয়েট। এই পালাটা! শেষ হলে 
পর একবার কিছুদিনের জন্যে কলকাতায় যাব। সেই সময়ে 
রী বৌমা বিলেতে যাত্রা করবেন। ওরা গেলে আমার এখানকার 

বাড়ি অত্যন্ত শুন্য হয়ে পড়ে । মন টেকে না। 
নান! স্থানে ঘুরে এলুম। লাহোরে এই আমার প্রথম 
আবির্ভাব । আমাকে নিয়ে খুব ধূমধাম করেছে । তার সমারোহ 
অংশটা ক্লাস্তিকর। আমার এ জিনিষটাতে বিতষ্! ধরে গেছে। 
কিন্ত এখানকার মানুষ অত্যন্ত সরল, তাদের ভক্তি শ্রদ্ধা খুব 

অকৃত্রিম, সেটা! অজস্র পেয়েছি । ইতি ৫৩৩৫ 
দাদা 


১৬৩ 


৭ মার্চ ১৯৩৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

তোমার ফল উপহার পেয়েছি। ভোগ আরন্ত হয়েছে। 
আমার শরীরের জন্যে ভেবো না। আমার দেহে রোগের আঘাত 
প্রতিঘাত অনেক হয়েছে__ কিছুতে আমাকে একান্ত পরাভূত 
করে না। এই কারণেই আমার সম্বন্ধে কেউ দয় করতে পারে 
না। শয্যাগত হলেও অনতিকালের মধ্যেই এমনি খাঁড়া হয়ে 
উদ্ভঠি এবং পুরো অধ্যবসায়ে কাজ করতে বসি যে কেউ অনুভব 


৯১৮ ২৭৩ 


করে না যে আমার শুশ্রধা বা আমার বিশ্রামের দরকার 
আছে। তাদের দোষ দেব কেন? তাদেরই দরকারের অস্ত 
নেই, শেষ পধ্যস্ত যত দিন পারি তাদের সে দরকার মিটিয়ে 
যাব। আমি কৃতজ্ঞতার দাবী কর! ছেড়ে দিয়েছি কেননা জানি 
আশার অস্ত নেই, পূরণ করার শক্তি সীমাবদ্ধ । আমার উপরে 
লোকে এই জন্যেই রাগ করে-_ কিছু দিই বলেই মনে করে 
আরো! দিতে পারতুম, যারা কিছুই দেয় না তার! নিরাপদ । 
বন্কিমের সময় তাদের সঙ্গে কেউ দেখা করতে আলাপ করতে 
সাহস করত না। তাই তাদের সম্মানে কেউ আঘাত করে নি। 
তাই বলে নালিশ করব না। বিধাতাঁর কাছে প্রচুর বর পেয়েছি 
কোনো দানে কিছু অভাব পড়লেই দুঃখ করা অকৃতন্্রতা | 
তোমাদের কাছ থেকে যে শ্রদ্ধা! যে সমবেদনা! পেয়েছি সেকি 
কম কথা? এ তে অপ্রত্যাশিত।-_ এখানকার উৎসব সমাধা 
হলেই যাঁব কলকাতায় । তখন দেখা হবে। ইতি ৭1৩৩৫ 

দাদা 


১৬৪ 


১৬ মার্চ ১৯৩৫ 
ও 
কল্যাণীয়াস্থ 
উৎসবের আয়োজনে ব্যস্ত ছিলুম। এখনো। আছি । এবারে 
দোলপুণিমার আগেই ইদের একট! ছুটি পড়েচে। তার জঙ্গে 
শনি রবি যোগ দিয়ে সেটা তিন দিনে স্ফীত হয়ে উঠেছে। তাই 


২৭৪ 


কলকাতা থেকে আগন্তকরা এই ছুটিতেই ভিড় করে আসচে। 
কাল সন্ধে থেকে তাদের আবির্ভাব স্থুরু হয়েছে । আজ রাত্রে 
তাদের চিত্তবিনোদনার্ঘে চণ্ডালিকা অভিনয় হবে । নন্দলাল বস্তুর 
মেয়ে গৌরী চণ্ডালিকার ভূমিকা নেবে । মে চমতকার অভিনয় 
করতে পারে । বোঁধ হচ্ছে খুব ভালে! হবে । 
ঝতুরাজের অভ্যর্থনার কাজ শেষ হয়ে গেলে পর একবার 
কলকাতা অভিমুখে যাব। তোমার জন্যে স্ুরূলের তাতের পাঁচ 
জোড়া সাড়ি আনিয়ে রেখেছি । ভেবেছিলুম হাতে করে নিয়ে 
তোমাকে দেব-__ কিন্তু কী জানি কোনো কারণে যদি দেরি হয়। 
আজ কালের মধ্যে কেউ এখান থেকে কলকাতায় যদি যায় 
তবে তাঁর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দেব-_- সেখান থেকে আমাদের 
দরোয়ান তোমার দ্বারে পৌছিয়ে দেবে । সাড়ি কয় জোড়ার 
দাম সম্বন্ধে তোমার মনে বিতর্ক উঠতে পারে । আগে থাকতে 
জানিয়ে রাখা ভালো-_ হাজার পাঁচেকের কম তে হবেই 
না। কারণ, আমি স্বয়ং তোমাকে দিচ্চি তার মূল্য তো বাজার 
দরের সঙ্গে মিলবে না । এই দানের মূল্যকে বাদ দেবার চেষ্টা 
কোরে না । তোমাকে দেবার এই উপলক্ষ্যটা! আমার কাছেও 
অভিলধিত এই কথ! মনে রেখো । আমার পরিতাপ এই যে 
অত্যন্ত শস্তায় পুণ্যলাভের চেষ্টা করচি__ কিন্তু দানের মূল্য আথিক 
দামে নয়-_ এটা পেয়ে যদি খুসি হও তবে ব্রাহ্মণকন্যার সেই 
খুসিতেই আমার পুণ্যের পরিমাপ। আজ আর সময় নেই। 
ইতি ১৬।৩।৩৫ 
দাদা 


২৭৫ 


১৬৫ 


২১ মার্চ ১৯৩৫ 


« 


কল্যাণীয়াস্থ 

তোমার কন্যা তোমারি সম্মানের দিকে তাকিয়ে তোমাকে 
ভংসনা করেচে, আমার মানরক্ষার কথা ভাবে নি। একটু বুঝিয়ে 
বলি, চিঠিট। তাকে শুনিয়ো ।-- তুমি আমার কাছ থেকে কিছু 
চেয়েছিলে, এতে আমি খুসি হয়েছি। প্রমাণ হয়েছে তুমি 
আমাকে আপন করে অনুভব করেছো, তোমার মেয়ের পক্ষে 
তা সম্ভব হয় নি, তাই সে সঙ্কোচ বোধ করলে । তোমাকে কিছু 
দেবার স্বযোগ পেলুম এতে আমার আনন্দ। খুকু তর্ক করতে 
পারত সে স্থযোগ আমি নিজেই অযাচিতভাবে নিলুম না কেন। 
উত্তর এই, যদি তেমন করে দিতে হোতো। তাহলে দাঁমী জিনিষ 
না দিলে মান রক্ষা হোতো! না । তাতে দেওয়ার আনন্দ ছাপিয়ে 
উঠত দেওয়ার কৃচ্ছুসাধন। কারণ সময় এখন এত খারাপ যে 
ধনীরাঁও আপন দারিপ্র্য স্বীকার করতে কুষ্টিত হচ্চে না। তুমি 
বিশেষভাবে সামান্য কিছু দাবী করেচ, তাতে দেওয়ার আনন্দ 
পেয়েছি, দেওয়ার ছুঃখ কিছুই গায়ে বাজে নি, আর খুসি হয়েছি 
সন্কোচ করো! নি বলেই। সক্কোচ করে৷ নি বল্‌্লে অত্যুক্তি হয়, 
তুমি বলেছিলে স্ুুরুল থেকে পাঠিয়ে দিলে দাম দেবে। এটুকুর 
মধ্যে যে ছলন। ছিল বোধ হয় তারি জন্যে তোমার মেয়ের কাছে 
কথা শুনতে হোলো । কেন স্পষ্ট করে বলতে পারলে ন! যে 
আমি যদি তোমাকে আমাদের এখানকার তৈরি জিনিষ তোমাকে 


১১১ 


দিই তাহলে আমি দিচ্চি বলেই তুমি খুসি হবে, দামী জিনিষ 
গায়ে পড়ে দিচ্চি ব'লে না। খুকু যখন বিয়ে করে গিম্নিপনার 
উচ্চশিখরে অধিরোহণ করবে তখন যদি যেচে কোনোদিন 
আমাকে লেখে, মামা, তোমার বই আমাকে দিতে হবে, তাহলে 
আমি কখনোই মনে করব না, নতুন গিন্সি খরচ বাচাবার জন্যে এই 
কৌশল করেচে। আবদার করতে যদ্রি সে সক্কোচ করে তাহলে 
আমার মামাপদ তখনি রিজাইন্‌ করব। তাকে আগে থাকতে 
জানিয়ে রাখচি সে নিজে না চাইলে তাকে একখানা বইও আমি 
দেব না। চাইতে যদি পারে সে, তাহলেই জানব পাবার 
অধিকার তার হয়েছে__ স্বাতন্ত্্যের গৌরবই যদি বড়ো হয় 
তাহলে কিন্ুক আমার বই। আর যাই করো পাঁচ জোড়া 
সাঁড়ির থেকে আধখানাও তুমি তোমার গরবিণী মেয়েকে দিতে 
পারবে না। স্ুরুলের সাড়ি পরতে আপত্তি যদি না থাকে 
তাহলে মামার কাছে চাইতে হবে মিষ্টি গলায়-_ এমন কি যদি 
আমি সগ্ধ না দিই তাহলে আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে হবে। 
আমি হয় তো বলব আমার জমিদারী নিলেম হতে বসেছে, কিন্ত 
সে যেন ফস করে বিশ্বাস করে না বসে। এমন কি আমার 
দারিদ্র্যকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে উলটে আমারি জন্যে এক ডজন 
খদ্দরের পাঞ্জাবী ফরমাস যেন না দেয়। এই রইল কথা । 

কাল সকালের গাড়িতে কলকাতায় যাব। রথীর। বিলেত 
যাবার পূর্বে পধ্যস্ত জোড়াসীকোর বাড়িতেই থাকব । তিন চার 
দিনের মধ্যেই আবার ফিরতে হবে কাজ আছে । কাল আমার 
কোনো আত্মীয় সাড়ির গীঁঠ্রি ৯১। কালু ঘোষের লেনে 


২৭৭ 


পৌছিয়ে দেবে, উদ্ধার করে নিয়ো! । হয় তো! এই চিঠিখানিও 
উক্ত গাঁঠরির সঙ্গে তারি হাতে দিতে পারি। ইতি ২১৩৩৫ 


দাঁদা 


১৬৬ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 
খুব ব্যস্ততার মধ্যে তোমার চিঠি পেলুম । রথী বৌমা আজ 
সন্ধ্যার ট্রেনে যুরোপ অভিমুখে যাত্রা করবেন । চলে গেলে পর 
আর এই শুন্য বাড়িতে থাকব না যাব বরানগরে। মঙ্গলবার 
পধ্যন্ত মেয়াদ । 
দাদ 


১৬৭ 


২৪ মার্চ ১৯৩৫ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ু 
খুব খুসি হলুম। 
আমার সকল মনের আশীববাদ | ইতি ২৪।৩1৩৫ 
দাদা 


২৭৮ 


১৬৮ 


১ এপ্রিল ১৯৩৫ 


ঠ৫ 


কল্যাণীয়াস্থ্‌ 

ব্যস্ত আছি এখানে এসে অবধি । প্রুফ দেখতে হচ্চে, লিখ তে 
হচ্চে, লেখা সংশোধন করতে হচ্ছে, দর্শনাথাঁদের ভিড় হচ্ছে, 
সময়ের বাকি ছুই একটা টুকরো অংশ বিশ্রামের কাজে 
লাগাচ্চি । 

ক দিন থেকে মেঘের দল হাওয়ায় সওয়ার হয়ে দিগন্তে 
দিগন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, ধুলো উড়িয়ে হৈ হৈ করাই ছিল তাদের 
কাজ । এরা কন্গ্রেসের দলের মতো, এদের কাছ থেকে সার্থকতার 
আশা ছেড়েই দিয়েছিলুম | এমন সময় কাল সন্ধ্যার দিকে ওরা 
মন স্থির করলে, হাওয়া বইল বেগে, ধড়াধ্বড় পড়তে লাগল 
দরজা, ওদের লম্বা ফর্দ মাফিক বৃষ্টি এলো না, ধুলোর বৈরাগ্য 
শান্ত করবার মতো কিছু বর্ণও হোলো । বহিরাকাশের 
নিমন্ত্রণে বাধা পড়ল বলে সকাল সকাল শুয়ে পড়লুম । অনতি- 
কাল পরেই দেখলুম.ছুই একবার পা! ছুটো কেঁপে উঠল। ভূমিকম্প 
বলেই অনুমান করচি, কিম্বা বাতাসের বেগে খাট বিচলিত 
হয়েছিল তাও হতে পারে । আকাশে এখনে। কিছু কিছু মেঘের 
ষড়যন্ত্রের অবশেষ আছে, হয়তে। সন্ধ্যার অন্ধকারে আর একবার 
তাদের পরাক্রম দেখা দেবে । 

হৈমন্তীকে তোমার চিঠি দেব । কিন্তু ... কিছুকাল হোলো 
সভর্তৃক অন্তর্ধান করেছে। ওরা আমার সমস্ত কাজের মাঝখানেই 


২৭৯ 


হঠাৎ দৌড় দিয়েছে মাদ্রাজে ৷ স্পষ্ট বোঝা যাচ্চে বয়েস অল্প_- 
সব দায়কে হাল্কা করেই দেখে । কিন্তু আমার বয়স অল্প নয়, 
দায় বিস্তর, মোচন করবার শক্তি ক্ষীণ, বাহনদের পরেই নির্ভর-_ 
বিনা কারণে তাঁদের ভান! যদি চঞ্চল হয়ে ওঠে, অদৃষ্থ হয় 
মেঘের মধ্যে, আমার বোঝ! নামাবার উপায় দেখি নে। ছুঃখ 
করব না, নালিশ করব না, সব বোঝা যিনি নামিয়ে নেবেন তার 
রথের শব্দ অদৃরে শোনা যায়। 
আর যাই হোক্‌ ক্লান্তি ছাড়া আমার দেহে আর কোনো 
বালাই নেই-_ অতএব চিন্তা কোরো না। নান! দেশের নানা 
ডাক্তার আমাকে পরীক্ষা করেচে, তারা বলে আমার দেহের 
কোনো যন্ত্রই শিথিল হয় নি, কেবল হৃদ্যন্ত্রের মাংসপেশী অযথা 
পরিশ্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে । ইতি ১৮ চৈত্র ১৩৪১ 
দাদ! 


১৪ এপ্রিল ১৯৩৫ 
ও 
কল্যাণীয়াস্ 
আজ নববর্ষের দিনে তোমার চিঠিখানি পেয়ে আনন্দিত 
হয়েছি। আজ উৎসবের ব্যাপারে এবং অতিথিকৃত্য নিয়ে অত্যন্ত 
ব্যস্ত আছি । এখন কিছু দিন এই রকম চলবে । কারণ এই ছুটির 
সময় স্থযোগ পেয়ে চারদিক থেকে এখানে লোকের আমদানি 
হয়। তাছাড়া অন্য কাজ আছে। 


২৮৮০ 


রাণীকে ও হৈমস্তীকে তোমার চিঠি দিয়েছি । তাদের কাছ 
থেকে আমার সংবাদ জানতে পারবে । সংবাদ বিশেষ কিছুই 
নেই । আজ সায়াহ্ছে শুরুনবমীর জ্যোৎস্সায় নৃত্যগীত হবে। 

ইতি ১ বৈশাখ ১৩৪২ 
দাদ! 


১৭০ , 


২৬-২৭ এপ্রিল ১৯৩৫ 


৫০ 


কল্যাণীয়াস্থ 

দিনের বেলায় লিখি । লেখায় শ্রান্তি এলে অপরাহে 
কখনো ছবি আকতে বসি। দিন ফুরিয়ে গেলে বাইরে গিয়ে 
বসি সেই সময়টাতে দর্শনার্থীর সমাগম হয়। সন্ধ্যা হয়ে আসে 
যখন, তখন কোনো কোনো দিন এখানকার ছেলেমেয়েরা ধরে 
তাদের কিছু একটা পড়ে শোনাতে, কবিতা, বা নাটক, বা গল্প । 
গল্পগুচ্ছ থেকে সুপরিচিত পুরোনো গল্প শোনবার জন্যেও ওদের 
আগ্রহ আছে । পর শুনিয়েছি রাজটাকা, কাল শুনিয়েছি ক্ষুধিত 
পাষাণ। আজ ছিল ছুটি। সমস্ত দিন চলে তপ্ত হাওয়া, উড়তে 
থাকে ধূলো? সন্ধ্যার দিকে হাওয়ার বেগ বাড়ে, তাপ কমে, রাত্রে 
পড়ে ঠাণ্ডা। 

এই ছুরন্ত হাওয়ায় যখন চুল উড়ে পড়চে চোখে, টেবিলের 
উপর কাগজ পত্র সামলানো শক্ত হচ্চে এমন সময়ে তোমাকে 
চিঠি লিখতে বসলুম । এ মুল্লুকে খবর বলে কোনো বালাই নেই__ 
এ তো কলকাতা সহর নয়-_ দিনগুলে! জপমালার গুটির মতো, 


২৮১ 


অভাবিতপূর্ব্ব উপহারগুলিও এই বাণী বহন করত। তখনকার 
সেই জন্মদিনের ধারা এখন আর নেই। কিছু উৎসর্গ যে আসে 
না তা নয়-_-কিন্তুসে আসে দূরের দান পায়ের কাছে, কণ্ঠে 
আসে না হাতে আসে না_ উপহার আসে না অঞ্জলি থেকে 
অঞ্জলিতে । দেবতারা কি খুসি হন তাদের পুজায়, মত্ত্য যখন 
স্বর্গের দ্বারের প্রান্তে উদ্দেশে রেখে আসে তা'র নৈবেছ্য। সেই 
আমার অল্প বয়সের পঁচিশে বৈশাখের স্সিপ্ধ ভোরবেলাটা মনে 
পড়চে__ শোবার ঘরে নিঃশব্দচরণে ফুল রেখে গিয়েছিল কারা, 
প্রত্য,ষের শেষ ঘুম ভরে গিয়েছিল তারি গন্ধে__ তার পরে 
হেসেছি ভালোবাসার এই সমস্ত সুমধুর কৌশলে, তারাও 
হেসেছে আমার মুখের দিকে চেয়ে । সার্থক হয়েছে পৃথিবীতে 
জন্মগ্রহণ । 

আজ সকালে বসে বসে ছবি আঁকছিলেম-_ বেলা তখন 
নটা। এমন সময় তোমার উপহারগুলি এসে পৌছল। খুসি 
হয়েই হাসলুম । চিঠিতে সেট! পাঠাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। 
তোমার গরদের জোড় পরব আমার জন্মোৎসব অনুষ্ঠানে । 
তোমার পাথরের থালায় বোধ হয় এর! চন্দনের বাটি রাখবে । 
ছুটি যে সুন্দর গড়নের বাটি দিয়েচ তার একটা লাগবে আমার 
ছবি আকার কাজে, আর একটা' প্রাত্যহিক জলযোগের উপকরণ- 
রূপে । তোমার রাখীও সেদিন পরব । 

অপরাহু এখন রৌদ্রতাপে ক্লান্ত, মাঝে মাঝে একটা কোকিল 
ডাকচে বোধ হয় যুকলিপ স্‌ গাছের ডালে বসে__ এতে করে 
কোকিলের আধুনিকতার প্রমাণ হয়, উচিত ছিল ওর বকুলের 


২৮৪ 


ডালে আশ্রয়গ্রহণ। কিন্তু ওর দোষ নেই-__ সে গাছটা কাছা- 
কাছি নেই। পূর্ব আকাশে মেঘের প্রলেপ লেগেছে-_ কিন্ত 
বর্ণের আশা বারবার প্রতিহত হয়ে চলে যাচ্চে । ইতি ২৩ 
বৈশাখ ১৩৪২ 

দাদা 


১৭২ 


১৫ মে ১৯৩২ 
কল্যাণীয়াস্ত 
কাল তুমি আসতে পেরেছিলে খুসি হয়েছি। আগামী 
শনিবারে এখানকার কাজ সেরে আমাকে যেতে হবে বোলপুরে। 
এইবার আমার সেই মাটির ঘরে প্রবেশ করব__ আর একটা 
নৃতন পর্ব আরম্ভ করতে হবে-_ পুরাতনের যত কিছু উদ্বৃত্ত 
বোঝা হয়ে সামনেকার অবকাশকে আচ্ছন্ন করে আছে তাকে 
ক্রমে ক্রমে সরিয়ে দিয়ে যাত্রাপথকে অবারিত করে দেব এই 
মনে করে আছি। তোমাদের কাছ থেকে অযাঁচিত অর্ধ্য 
পেয়েছি__ তোমরা আমার জীবনের অনেক অসম্মান দূর করে 
দিয়েছ__ আমার জীবনের কাজকে হাটের পণ্যের মতো বিচার 
করে দর কষাঁকষি করে নি-_ তাকে আমার দাঁন বলে আনন্দিত 
মনে গ্রহণ করেছ__- তোমাদের সেই আনন্দই আমার শ্রেষ্ঠ 
পুরস্কার। ইতি ১৫ মে ১৯৩৫ 
দাদা 


খ৮্৫ 


১৭৩ 


২৪ মে ১৯৩৫ 


৫5 


চন্দননগর 


কল্যাণীয়াস্থু 

আমাদের পদ্মা বোটে আশ্রয় নিয়েছি। এই বোটেই 
যৌবনকালে লিখেছি সোনার তরীর কবিতা__ কতকাল বাস 
করেছি পল্মার চরে সম্পূর্ণ একলা । এমন হয়েছে মাসের পর 
মাস একটি শব্দও উচ্চারণ করি নি, নিঃশব্দ বাক্য বিস্তার করেছি 
লেখায়। ছোট গল্পের অধিকাংশই এই বোটে লেখা । তারও 
আগেকার দিনে যখন আমার বয়স ছিল আঠারো, এই 
চন্দননগরে গঙ্গার ধারে দীর্ঘকাল কেটেছে । এ সামনে দেখা 
যাচ্চে দোতল৷ বাঁড়ি, এখানে ছিলেম জ্যোতিদাঁদার সঙ্গে । মনে 
পড়চে কোন্‌ এক বাদলের দ্রিনে ঘন মেঘে ছায়াচ্ছন্ন নদী, নিবিড় 
বৃষ্টিধারায় দিগন্ত অবগুন্ঠিত, দীর্ঘ অপরাছেের কন্মহীন প্রহরে 
অকারণ বেদনায় মন বিরহাতুর, তখন একলা বসে বিদ্যাপতির 
গানটিকে সুরে বসিয়েছি-_ 

এ ভরা বাদর, মাহ ভাদর 
শূন্য মন্দির মোর। 

জানি নে আমার দেওয়। স্থরে এ গান কখনো শুনেছ কিনা । 
অনেকেই জানে । আমার নিজের বিশ্বাস স্থুরটা ভালো হয়েছে। 
আজ এ বাড়িটা অনাদরে জীর্ণ হয়ে পড়েছে নইলে এখানেই 
থাকতুম | 

আমার মনে হয় তুমি যদি গৌরীপুরে গিয়ে থাক তোঁমার 


২৮৬ 


দেহ মন সুস্থ থাকবে। তোমার সেই বাল্যকালের কুলায়ে 
তোমার মন আপন অভ্যস্ত আশ্রয় সহজে পাবে। পরিচিত 
গাছপালাগুলির আত্মীয়তা চারদিককে সিদ্ধ করে রাখে, 
তাদের নিরন্তর শুশ্রাধায় তুমি আরাম পাবে সন্দেহ নেই। তা! 
ছাঁড়া সেখানে বই পড়ে সময় কাটাবার উপায় যথেষ্ট আছে-_ 
দায়িত্বভারবিহীন বিশ্রীমকাল পড়াশুনার প্রবাহে ভরে উঠবে । 
যদি সেখানে যাওয়া সম্ভব হয় এবং মন দিতে পারো তাহলে 
ইংরেজি শেখবার চেষ্টা কোরো । ব্যাকরণের ছুর্গমতা পরিহার 
করে কোনো একটা হাল্কা বই নিয়ে যদি দ্রুত বেগে পড়ে যাও 
তাহলে ক্রমশই এই ভাষাটা মনে বসে যাবে । আমার ইংরেজি 
ও সংস্কৃত বিদ্া এই প্রণালীতেই। তুমি দেশ বিদেশের কথা 
শুনতে ভালোবাসেো-_ ইংরেজিতে ছবিওয়াল! জিওগ্র্যাফিক্যাল 
রীডার আছে, চেষ্টা দেখতে পারো । এমনি করে হাতড়ে হাতড়ে 
দশখানা বই যদি শেষ করতে পারো দেখবে ভাষাটা স্পষ্ট হয়ে 
উঠবে। অত্যন্ত তন্ন তন্ন করে পড়বার দরকার নেই-_ 
কোনোমতে মানে বুঝে হৃহ্‌ করে পড়ে যেয়ো । এমনি করে 
যত বেশি সংখ্যার বই পড়বে ততই আপনি পথ সুগম হয়ে 
উঠবে। 

গ্রামবাসীদের জন্যে তুমি কী করতে পারে জিজ্ঞাসা করেছ। 
এ কাজের অভিজ্ঞতা তোমার নেই এবং আমার বিশ্বাস তোমার 
মনোবৃত্তিও এ কাজের অনুকুল নয়। তোমার স্নায়ুর দুর্বলতায় 
তোমার মনকে ক্লান্ত ও বিক্ষিপ্ত করে দেবে । তখন অক্ষমতার 
ধিক্কারে তোমার মন গীড়িত হবে। যদি তুমি এমন কোনো 


২৮৭ 


সঙ্গী পাও যিনি মাঝে মাঝে একটু একটু ব্যাখ্যা করে দ্রতবেগে 
তোমার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি পড়ে যেতে পারেন তাহলে তুমি 
ফল পাবে। ইংলণ্ডে যে ভাক্তারের বাড়িতে ছিলুম, সেখানে 
রবিবার ছাড়া প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা! নিয়মিত ছুঘণ্টা বই পড়ে 
যেতুম, জমস্তটাই যে সম্পূর্ণ বুঝতুম তা! নয় কিন্তু কেবলমাত্র 
আবৃত্তির বেগে ভাষাটা দিনে দিনে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিল । 

অনেকদিন পরে জনতা ও কাজের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে 
পড়াশুনো করতে আরম্ভ করেছি। অনেকদিন এমন বিশ্রাম 
পাই নি। বাল্যকালে ইস্কুল পালিয়েছিলুম কিন্তু ইস্কুল 
আমার স্বভাবের মধ্যেই ছিল। মাস্টার মশায়কে ফাকি দিয়েছি 
কিন্তু কোনোদিন পড়া ফাকি দিই নি-__ রাত জেগে পড়েছি 
যে সব বই ভালো করে বোঝবার শক্তি ছিল না তাও পড়তে 
ছাঁড়ি নি। সম্প্রতি আমার সেই পড়ার ধার! নানাবিধ বিদ্বে 
অবরুদ্ধ হয়েছে-_ পড়বার সেই অভ্যাসটাও ছূর্বল হয়ে পড়েছে 
_- নান! চিন্তা এসে মনৌযোগকে পরাভূত করে দেয় তা 
ছাড়া শারীরিক দুর্বলতাও মনকে অভিভূত করে। এখানে এসে 
চারদিকে নানাবিধ বই জড়ো! করেছি-_ যখন যেটা খুসি টেনে 
নিয়ে পড়তে বসি-_ লিখতে এখন আর মন যায় না। 

জুন মাসের শেষকাল পধ্যস্ত এখানে থাকব স্থির করেছি । 
ইতি ১০ জ্যৈষ্ট ১৩৪২ 

দাদ] 


২৮৮ 


টা 


৫৮7 
(3 197৫ গা বু 2ব. £5%7ত (ছি 
4: এপার ঠা রি ৪1৮৮8 ৬97৫৭ 


& 1387 // 

এর ভি" রি (27744. 174 চি ক 
84) € /% ৪9 রি 147. 16+0%806) হোন 
9737477৮147 | থ54890074772 গিট, 


রিল ঢা ৮ঠা রি 21810080117 (97973 পি 
54-3-47 এগার পতিত চর এর০ গদি 
গথামত ৮ ঠারত গর্ঘি 19৭ 94721 পক 79276. 


রর 4%%% 97105 6181%79%974-418র রে 
16525” 


5 0৭ 1417099177৮ নি 
নি 451 হি 4৮৮41461911. (৪? ৮679 
গা বি 98 71464 7741 রা 9775) 

7 474৫ 


্ 410 (১599/01% 6 9৫777775414 
রে ১ চি, 

্ চা রি নি £74%8 (0%49224 তো 

175 ডি রি %1চ1 চারভি৫৮৭ ৭ রিতস্গিি (ডে 


818, %7তি- 1 / চারে ./ঠ97 ৮ (/% 


৫দি- 92 £০ 6 877-49-%404৭ 
রা রি ও77-581% 27977964619 979 
নেই রী রি 27712976270 4“ /(% 
4 ঠেকে ১০%742%2% 16৭-12%-47474%7 
£647876 থরে 9712- 4%৭-ঠারর 44870 
($14714- ৮7০617-/৩ 8727-4776--4%%2791 
77474 %% সি পকানতাধে তি 25 | 
477507721৫1 ভি/99র ৫9৫শ ৯9247 
2 গিরি £6%1773-74/-2727029 55” 
(৫ /27776-7% 77 4747৫৬7777674%- 
9714 27৮ প্রগাণ £7 81265 মর 
99৬ 
ফর 453 75 রত কে পরভি 97117 
এনা ০7949 নি এরি গীবত 
চঠিটি- 18742 (ে7ণ বেন ৬িতন519172 
গপস্ঠি্দোর কি 8%04-27470-ণন 57৩ । 
9 পি ঠুৰ ১১৪৫ 0077 


১৭৪ 


[ চন্দননগর ] ৭ জুন ১৯৩৫ 


কল্যাণীয়াস্তু 

তোমার পরে কত গভীর আমার স্নেহ এবং করুণ! তা তুমি 
হয়তো উপলব্ধি করতে পার না। আমার চিন্তা এবং বোধের 
দিক থেকে সত্যকে তোমার সামনে আনবার জন্যে সেইজন্যেই 
আমি এত চেষ্টা করেছি । তোমাকে তাতে দুঃখ দেওয়। হয়েছে । 
যে সংস্কার তোমাকে আশ্রয় দিয়েছিল তাতে হয় তে। তুমি 
আরাম পেয়েচ-__ তোমার নারীস্ভাব তার মধ্যে আপন সেবা- 
প্রবৃত্তিকে চরিতার্থ করতে পেরেছিল । আমাদের প্রকৃতি বুদ্ধি- 
প্রধান, ধ্যানের দ্বারা সত্যকে আপনার চিত্তের সঙ্গে মেলাতে 
পারলে মে আনন্দ পায়_- আমার বোঝ উচিত ছিল সে পথে 
তোমাকে যদি নাও আনতে পারি তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু 
এ কথা মনে রেখো তোমাকে স্নেহ করেছি শ্রদ্ধা করেছি বলেই 
আমি এত কথা বলেছিলুম তোমাকে । তোমার দ্বিধা ও বেদনা 
দেখে সে সব আলোচনা আমি অনেক দিন ছেড়ে দিয়েছি__ ইচ্ছা 
করেছি যেমন করে হোক তুমি শান্তি পাও। যে বিশ্বাসে 
মানুষের ক্ষতি ঘটায়, পরস্পরে ভেদ আনে, সমাজের মধ্যে 
মূঢতাকে অন্ধতাকে প্রশ্রয় দেয় তুমি তাতে আবদ্ধ হয়ে থাকো 
এটা আমি শ্রেয় মনে করি নি-_ তোমার সম্বন্ধে আমি উদাসীন 
থাকতে পারি নি বলেই এই সব আলোচনাদ্বারা তোমাকে ছুঃখ 
দিয়েছি । সে সমস্ত তর্কে আমি নিরস্ত হয়েছি কিন্তু এ তুমি মনে 


৯1১৯ ২৮৯ 


জেনো তুমি আমার স্সেহ পেয়েছ__ যখন তুমি ছুঃখ পাও 
তোমাকে সাস্তবনা দিতে পারলে আমি খুসি হতুম। আমার 
মধ্যে একটা সকলের থেকে দূরত্ব আছে বলে আত্মীয়স্বজনেরা 
অনেক সময়ে আক্ষেপ করেন-_ কিন্তু সেটার কারণ উপেক্ষা নয়, 
বৃহৎ নিলিপ্ত অবকাশের মধ্যেই আমার বিধাতাদত্ত স্থান__ সেই 
অবকাশের মধ্যে থেকেই আমার ভালোবাসা আপনাকে 
অব্যাহতভাবে প্রকাশ করে ; মানুষের সম্বন্ধকে সন্কীর্ণ অবরোধে 
পরিণত করলে সেই ভালোবাসার খর্ববতা ঘটে ।__ 
বোট ঘাটে আছে কিন্ত আমি তীরের একটি বাড়িতে 
উঠেছি__ এই জায়গাটি খোলা, বেশ ভালো লাগচে-_ জলস্থল- 
আকাশের সঙ্গমে আমার আসন পড়েছে । ইতি ৭ জুন ১৯৩৫ 
দাদ। 


১৭৫ 


[ চন্দননগর 1 ১২'জুন ১৯৩৫ 


ঠ€ 


কল্যাণীয়াস্ত 

আমার মনকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাব 
এমন কথা তুমি কখনোই কল্পনা কোরো না । হৃদয়ের অকৃত্রিম 
অর্থ্য ছর্লভ দান, তাকে অবজ্ঞা করায় অপরাধ আছে। বিধাতা 
তাঁর অরণ্যে আমাদের সামনে ফুল দিয়েছেন ফল দিয়েছেন ধরে 
__- তাঁর সৌন্দর্য তার মাধুর্য্য অনির্ববচনীয়, যে সন্াসী আপন 
গুদাসীন্তের অহঙ্কারে তাকে উপেক্ষা করে সে বিধাতার অযাচিত 


৪৩ 


দানকে নিন্দা করার দ্বারাই নিন্দনীয় হয়। মানুষের হৃদয়ের 
সৌন্দর্য্য তার চেয়ে বড়ো তার চেয়ে মূল্যবান, বিধাতা তার চেয়ে 
শ্রেষ্ঠ বর আর কী দিয়েচেন ? আমি একদিন লিখেছিলেম-- 
বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সে আমার নয়-_ 

আজও আমি সেই কথাই বলি-_ বিধাতার দানকে গ্রহণ না করে 
মুক্তি নয়, তাকে সত্য করে গ্রহণ করাতেই মুক্তি_- সৌন্দধ্যকে 
অস্বীকার করায় মুক্তি নয়, সৌন্দধ্যকে বরণ করে নেওয়াতেই 
মুক্তি। কতদিন আমি বাইরের দিকে যখন তাঁকিয়ে থাকি 
আমার মনের মধ্যে স্ুধার ঝরনা ঝরে পড়ে-__ আমার অহঙ্কারের 
বাধা সরিয়ে রাখি বলেই তারা অন্তরে প্রবেশ করে__ তোমাদের 
কাছ থেকে যখন সেব! পাই শ্রদ্ধা পাই, তখন আমি একান্ত খুসি 
হই, সে খুসিতে অহঙ্কার মিশ্রিত হলে তাঁর প্রশস্ত প্থট। রুদ্ধ 
হোতো। 

এখানে আমি জুন মাসের শেষ তারিখ পধ্যস্ত থাঁকব। তার 
পরে যাৰ কলকাতায়__ ছুই একদিন থেকে বরানগরে যাব। 
কলকাতা বড় শুষ্ক কঠোর, বেশি দিন টিকতে পারি নে। যত- 
দিন থাকতে বাধ্য হই বাইরে গাছপালার মধ্যে আশ্রয় নিতে 
হয়। রথী বৌম! ১০ই জুলাইয়ে আসবে দেশে ফিরে-_ কদিন 
তাদের জন্যে অপেক্ষ। করে তাদের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে ফিরে 
যাব। তুমি যখনি আসবে খুসি হব নিশ্চয় জেনো । তুমি 
আমাকে কোনো জিনিষ দেবার চেষ্টা কোরো! না- তোমার 
অন্তঃকরণের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আপন সম্পূর্ণ রপেই আমাকে স্পর্শ 
করে, আর কিছুই আমার দরকার হয় না। 


২৪১ 


এখান থেকে চিঠিপত্র যথাসময়ে আসাযাওয়া করতে বোধ 

হয় বাধা পায়। আজ জোড়াসাকো থেকে একজন কন্মচারী 

তোমার দেওয়া! বাটি ছুটি নিয়ে এসেছিল তার হাতে এই চিঠি 
পাঠাই। ইতি ১২ জুন ১৯৩৫ 

দাদা 


১৭৬ 


[ চন্দননগর ] ১৯ জুন ১৯৩৫ 


৫9৫ 


কল্যাণীয়াস্তু 

তোমার দেওয়া সব জিন্ষগুলিই পেয়েছি। পেয়ে যতই 
খুসি হই মনে মনে লজ্জা বোধ না করে থাকতে পারি নে। 
আমার জন্যে তুমি নিজেকে কিছুমাত্র বঞ্চিত করো এ কথা মনে 
করতে আমি ছঃখ পাই। অন্তর থেকে তুমি যা নিবেদন করে 
তা আমি অন্তরেই গ্রহণ করি। বস্তত বাইরে থেকে আমার 
দাবী খুব ক্ষীণ। ছেলেবেল। থেকেই বাইরের দিকে নিঃসক্ত 
থাকা আমার স্বভাঁব। অনেক সময়ে আমার আত্মীয়েরা এতে 
দুঃখ পেয়েছেন। কেননা আমি জানি, যাদের কাছে আমি 
প্রিয়জন বলে গণ্য তারা আমাকে স্বভাবতই সেবার দ্বার! নির্ভর 
দিতে ইচ্ছ! করে। আমি অধিকাংশ সময়ে এই অধিকার থেকে 
আমার নিকট আত্ীয়দেরও বঞ্চিত করেছি-_- এমন কি রোগের 
সময়েও আমি শুআষা যথাসম্ভব গ্রহণ করি নি, এখনো! করি 


৯২ 


নে। বাইরের দিকে আমার এই দূরত্ব স্তরের দিকে কিছুমাত্র 
কৃপণ নয় এ কথা নিশ্চিত জেনে 
এখানে আমি জুন মাসের ৩০শে পধ্যন্ত থাকব । তার পরে 
ছুই একদিনের জন্যে জোড়াসাকোয় কাটাব-_ যদি তার সুবিধে 
না হয় তাহলে বরানগরে ৪1৫ দিন থাকবার কথা । বরানগরে 
তোমার আসা যদি ছুঃসাধ্য হয় তাহলে আমাকে জানালে 
জোড়াসাকোয় গিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা করতে পারি। ইতি 
৪ আধাঢ ১৩৪২ 
দাদ! 


ঈগপী 


| চন্দননগর ] ২৩ জুন ১৯৩৫ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

তুমি যে ক'টি জিনিষ পাঠিয়েছ সবগুলিই আমার কাজে 
লাগবে। এইবার আমার নতুন কুটারে উঠব-_ সেখানে নতুন 
উপকরণের দরকার-_ তোমার কাছ থেকে তার কিছু সাহায্য 
পেয়েছি। তুমি আমাকে যে মনে করে এগুলি দিয়েছ সে কথ 
স্মরণ করে খুব খুসি হয়েছি। তোমার এই ত্যাগের প্রবর্তনার 
মূল্য আমার কাছে উপেক্ষিত হয় নি। অন্তরের দাঁনকে মন 
বাইরে রূপ দিতে চায়, তার মাধুধ্যে আনন্দিত হই, কেবল সক্কোচ 
হয় পাছে তুমি নিজেকে অতিমাত্র বঞ্চিত করো । 


২৯৩ 


আমি এখানে আরো সপ্তাহখানেক থাকব । ১লা জুলাই 
যাব জোড়াসাকোয়- ২রাও থাকব সেখানে তার পরে 
বরানগরে। ৫1৬ই তারিখে চলে যাব শাস্তিনিকেতনে-__ এখনো 
নিশ্চিত স্থির করি নি। এখানকার জমিদাররা আমাকে ত্রিশে 
তারিখে নিমন্ত্রণ করেছে, নইলে আগেই বেরিয়ে পড়তুম | 
গঙ্গার উপর আষাঢ়ের সমারোহ ভাল লাঁগচে-_ শান্তি- 
নিকেতনের প্রান্তরে তার মহিমা আরো অবারিত। ইতি ৮ই 
আষাট ১৩৪২ 
দাদা 


রর 
[ চন্দননগর ] ২৭ জুন ১৯৩৫ 
ও 

কল্যাণীয়াস্তু 

এইমাত্র খবর এল জোঁড়াসাকে। বাড়ির এক অংশ ... '.. 
কিছুদিনের জন্য মাড়োয়াড়িদের ভাড়া দিয়েছে । তাদের বিয়ে 
চল্চে__ সুতরাং যাদের বিয়ে নয় তাদের পক্ষে ওখানে দিন 
যাপন আরামের হবে না। তাই ঠিক করেছি সোমবার 
অপরাহরে যাব বরানগরে । বৃহস্পতিবার প্রাতে দৌড় দেব 
শান্তিনিকেতনে | বরানগর বোধ করি তোমার পক্ষে দুর্গম হবে। 
তবু যদি আসা জস্তব হয় তবে খুসি হব। 

আমাকে তুমি যত দূরস্থ করে কল্পনা করে! সেটা! সঙ্গত নয়। 
আমি শ্ঘভাবত নিজ্জনচর-_ কিন্ত তোমার মধ্যে আত্মোৎসর্গের 


২৯৪ 


যে দাক্ষিণ্য আছে তাকে আমার কবিপ্রকৃতি কখনই উপেক্ষা করে 
না। আমি খ্যাতি প্রতিপত্তি লাভ করেছি কিন্ত সেটাকে আমি 
অনুভব করি নে-_ সেই কারণে তোমাদের সঙ্গে আমার আন্তরিক 
ব্যবধান নেই বলেই তোমাদের হৃদয়ের দান আমি হদয়ের 
সঙ্গেই সহজে গ্রহণ করতে পারি। ইতি ২৭ জুন ১৯৩৫ 

দাদ] 


১৭৭ 


১২ জুলাই ১৯৩৫ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ু 
একখানি সাড়ি এবং চামডার পোটফোলিয়ো তোমাকে 
পাঠাচ্ছি, গ্রহণ কোরো । বিশ্বভারতী পাঁড়ট। অন্য পাড় দিয়ে 
ঢেকে নিয়ো-_ ওটা ব্যবহাধ্য নয় । ইতি ১২ জুলাই ১৯৩৫ 
দাদা 


১৮৩ 
[ শান্তিনিকেতন ] ১৭ জুলাই ১৯৩৫ 
ও 
কল্যাণীয়াস্থু 
ক্ষিতিমোহনবাঁবু দাঁছ-চরিতের যে উপক্রমণিকা লিখেচেন 
সেটি আমার ভালো লেগেছে বলেই তোমাকে পড়তে পাঠি- 
যেছি। ভারতের মধ্যযুগে এই যে সব বড়ো বড়ো সাধকদের 


৪৫ 


আবির্ভাব হয়েছিল এরা সমাজ ও শাস্ত্রের প্রাচীর তোল। 
হুর্গের বাইরে বাম করতেন বলেই এঁদের প্রতিভার স্বচ্ছতায় 
আধ্যাত্মিক সত্যের প্রকাশ এমন বিশুদ্ধ ও সার্বভৌমিক হয়েছিল। 
এই সকল ধর্মসাঁধকদের প্রায় সকলেরই উৎপত্তি অস্ত্যজ 
জাতির থেকে । সমাজ তাদের বাইরে বসিয়ে রেখেছিল) __ সেই 
অনাদর অবজ্ঞাতেই তাদের মুক্তির সহাযুতা করেছিল । এ বই 
বাজারে বের হবার পুর্বে আমাকে দেখতে দেবার জো যে কপি 
পাঠানো হয়েছিল সেই কপিই তোমাঁকে দিয়েছি । এ মলাটে 
যে আকাজোখা আছে সে আমার নয়, কার তাঁও জানি নে। 
শ্যামলীতে প্রবেশ করার পর থেকেই কাঁজ সংক্ষেপ করার 
চেষ্টায় আছি-_ এখনে! কৃতকাধ্য হতে পারি নি। ইতি ১৭ 
জুলাই ১৯৩৫ 
দাদ। 


৯৮১ 


১২ অগস্থু, ১৯৩৫ 


ঠ€ 


কল্যাণীয়াস্ত 

অনেক দিন চিঠি লিখতে পারি নি। দেহে মনে উদ্যমের 
অভাব-_ জীবনের দিবসান্তে যেন প্রদোষের ছায়া ঘনীভূত । মন 
অত্যন্ত কর্মবিমুখ অথচ কর্তনের অভাব নেই । 

বর্ধামঙ্গল উৎসবের আয়োজন চলচে। আগামী বৃহস্পতি- 


২৯৬ 


বারে দিন স্থির হয়েছে । খুকু যদি আসতে পারত নাচ গানে 
সে নিশ্যয় খুসি হয়ে যেত। গোটা কয়েক নতুন গানও তৈরি 
করতে হোলো, নইলে এর! ছাড়ে না। 
যেমনি বর্ধামঙ্গলের গাঁন সুরু করেছি অমনি বৃষ্টি অজত্রধারে 
নেমেছে । অথচ অনেক দিন থেকেই অনাবৃষ্টিতে এ প্রদেশে 
চোখের জল ছাড়া আর সবকিছু শুকিয়ে গিয়েছিল । এমন আরো 
অনেকবার ঘটেচে। এই দৃষ্টান্তে কবিত্বের মন্ত্রশক্তি দাবী করতে 
পারি। 
তোমার চিঠিতে বোধ হচ্চে ভিক্টোরিয়ার উল্লেখ করেছ। 
তিনি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছেন কিন্তু সে সব ব্যয় হয়ে 
গেছে। অনেক খরচ করে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে 
আসবার উপায় করে দিয়েছিলেন__ সেই উপলক্ষ্যে প্রচুর 
অনাবশ্যক ব্যয় করেছেন । প্যারিসে আমার চিন্রপ্রদর্শনীর সমস্ত 
ব্যয়ভার তিনি নিজে নিয়েছিলেন-_ তার পরিমাণ অল্প নয়। 
তিনি আমার জাহাঁজযাত্রার জন্যে যে একটি আরামকেদারা 
দিয়েছিলেন সেইটেই কেবল তার সঙ্গে আমার সাক্ষাতের সাক্ষ্য- 
স্বরূপে রয়েছে । ইতি ১২ অগস্ট ১৯৩৫ 
দাদা 


২৯৭ 


১৮ 


২১ অগস্ট ১৯৩৫ 


৫9« 


কল্যাণীয়াস্ত 

কিছুদিন শরীর অসুস্থ ছিল-_ কাঁজকন্ম্ম সম্পূর্ণ ই বন্ধ করতে 
হয়েছিল। আমার শরীরে ছুর্বলত! যতই থাক প্রায় সে অসুস্থ 
হয় না-_ তার কারণ শরীরঘন্ত্রগুলি জীর্ণ হয়নি। এবারকার 
অন্খে মনে হোলে! কোথাও যন্ত্র বিকল হয়েছে । সেটা কাটিয়ে 
উঠতে কিছু সময় লেগেছে কিন্তু এখন সে নিষ্কৃতি দিয়েছে। 
যাই হোক নোটিস পাচ্চি যে বুকালের এই দেহটাকে নিয়ে 
সামান্য পরিমাণেও টানাটানি আর চলবে না । কাজ তো৷ কম 
করি নি-_ এত বেশি জমা হয়েচে যে অনেকবার মনে হয় এতটা 
বাড়াবাড়ি ভালো নয়। কেননা উৎপত্তি যদি পরিমিত না হয় 
তাঁহলে তাঁর উৎকর্ষ সম্বন্ধে সন্দেহ জন্মে। অন্তত তাঁর মধ্যে 
অনেক বর্জনীয় জিনিষ থেকে যায়-__ তারই প্রভাবে রক্ষণীয় 
জিনিষেরও মূল্য কমবার কথা । এ নিয়ে মনে আন্দোলন করে 
লাভ নেই। কারণ, মহাকাল স্বয়ং হচ্চেন ভাণ্ডারী, তিনি নিজের 
গরজেই যাচাই করতে ভুল করেন না । আজ পধ্যন্ত যা তিনি 
জমা করেচেন তার চেয়ে অনেক বেশি দিয়েছেন ঝাঁটিয়ে। সেই 
যারা নিষ্কৃত হয়েচে তাদের বেদনা কোথাও নেই-_ কারো ভ্রম- 
ক্রমে তারা যদি থেকে যেত তাহলেই স্থষ্টির মধ্যে ব্যথা দিয়ে 
থাকত। 

কাল থেকে অপর্ধ্যাপ্ত বৃষ্টি চলেছে । আজ অপরাছে পশ্চিম 


৪৮ 


দিগন্তে কালো মেঘের আসর জমে উঠ ল-_ হঠাৎ সুদূর প্রান্তর 
পেরিয়ে গর্জন করে প্রবলবেগে ছুটে এল ঝড়ের হাওয়া, একটু 
পরেই তার পিছন পিছন এল মৃষলধারে বর্ণণ-_ দেখতে দেখতে 
ভেসে গেল মাঠ বাট-__ তার পর থেকে রিম্বিম ধারাপতন 
চলেইচে। এখন নিকষকালো অন্ধকার-__ ঝিল্লিধবনিতে 
আকাশের নাড়ীতে কাপন ধরিয়ে দিয়েছে । ভিজে হাওয়ায় 
গায়ে বালাপোষ জড়িয়ে বসে আছি। ইচ্ছে করচে আলোট। 
নিবিয়ে দিয়ে অন্ধকারের গভীর তলায় চোখটাকে মনটাকে 
অবগাহন স্নান করিয়ে নিই। এখনি তাই করব। এখানকার 
কৃষ্ণপক্ষের রাত্রির ভারি একটি গম্ভীর মহিমা আছে। আকাশ 
নিম্মল থাকলে মনে হয় তারাগুলো যেন খুব কাছে এসেছে, 
তার অপরিসীম রহস্তে মন অভিভূত হয়। 
আজকাল মাঝে মাঝে অনেকদিন যদি আমার চিঠি বন্ধ 
থাকে তবে উদ্দিগ্ন হোয়ো না। আমার বয়সে সংসারের ছোটো- 
বড়ো সমস্ত দায়িত্বকে অস্বীকার করবার সময় এসেছে-_ কর্তব্য 
মন না দেওয়াই আমার এখনকার প্রধান কর্তব্য। ইতি ৪ ভাঙ্র 
১৩৪২ 
দাদী 


২৪৯ 


৯৮৩ 


১* সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ 


ঠ« 


কল্যাণীয়াস্থ 

বড়ো চিঠি লেখার মতো! শক্তি ও উৎসাহ আমার নেই, 
সংক্ষেপে ছুই একটা কথা বলি। জনসাধারণের মধ্যে চরিত্রের 
দুর্বলতা! ও ব্যবহারের অন্যায় বুব্যাগী, সেইজন্যে শ্রেয়ের বিশুদ্ধ 
আদর্শ ধন্মসাধনার মধ্যে রক্ষা করাই মানুষের পরিত্রাণের 
উপায় । নিজেদের আচরণের হেয়তার দোহাই দিয়ে সেই 
সর্বজনীন ও চিরন্তন আদর্শকে যদি দূষিত করা যায় তাহলে 
তার চেয়ে অপরাধ আর কি কিছু হতে পারে? ঠগীর! দস্যু- 
বুক্তি ও নরহত্যাকে তাদের ধনম্মেরি অঙ্গ করেছিল। নিজের 
লুব্ধ ও হিংস্র প্রবৃত্তিকে, চরিত্রবিকারকে, দেবদেবীর প্রতি 
আরোপ করে তাকে পুণ্যশ্রেণীতে ভুক্ত করাকে কি দেবনিন্দ৷ 
ও পাপ বল্বে না? যারা নিজে লোভী রক্তলোলুপ, তাদের নিন্দা 
করো, কিন্তু দেবীকে রক্তলোলুপ প্রমাণ করার মতো বীভৎস 
নিন্দনীয়তা আর কী হতে পারে? এই কুৎসিত আদর্শবিকৃতি 
থেকে দেশকে রক্ষা করবার জন্যে যিনি প্রাণ উৎসর্গ করতে 
প্রবৃত্ত, তিনি তো ধন্মের জন্যেই প্রাণ দ্রিতে প্রস্তরত ; শ্রীকৃষ্ণ 
অর্জুনকে এই ধর্মের উদ্দেশেই প্রাণ দিতে ও নিতে ত্বয়ং উপদেশ 
দিয়েছিলেন। সেই উপদেশই তো রামচন্দ্রশম্্ পালন করচেন, 
ধন্মের নামকে কলঙ্কিত করে অনিচ্ছুক অশক্ত প্রাণীকে বলি 
দেওয়ার সঙ্গে রামশন্মার ধর্মোদ্দেশে ইচ্ছাকৃত আত্মবলিকে 


৩০৩ 


তুমি এক কোঠায় ফেলে নিন্দা করলে কী মনে ক'রে, আমি 
বুঝতে পারলুম না। সাধারণ মানুষের হিংস্রতা নিচুরতার অস্ত 
নেই-_ স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ তাকে সম্পূর্ণ রোধ করতে পারেন নি__ 
কিন্ত পাঁপচিত্তে ধম্মের দোহাই দিয়ে ধন্মকন্মে হিংঅ্রতার বিরুদ্ধে 
আত্মোৎসর্গের মতে! ছ্ষর পুণ্যকম্ম আর কিছু হতে পারে না; 
তাতে আশুফল কিছু হতে পারে কি নজানি নে কিন্তু সেই 
প্রাণউৎসর্গই একটি মহৎ ফল। তিনি আপনার প্রাণ দিয়ে 
নিরপরাধ পশুর প্রাণঘাতক ধন্মলোভী স্বজাতির কলঙ্কক্ষালন 
করতে বসেচেন এই জন্যে আমি তাকে নমস্কার করি। তিনি 
মহাপ্রাণ বলেই এমন কাজ তার দ্বারা সম্ভব হয়েছে । 

হঠাৎ খবর পেলুম আমাদেরি -.. :-" কোনো লোক সজনী- 
কান্তকে নিন্দা করে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে । কিছুদিন 
আগে সজনীকান্ত রজতজুবিলির অভিনন্ননস্চক পত্রে প্রকাশ 
করবার অভিপ্রায়ে আমার কাছ থেকে লেখা চাইবাঁর জন্য 
আশ্রমে এসেছিলেন । আমি দিতে পারি নি, তাকে উপেক্ষা 
করা তার কারণ নয়। এই অন্থরোধ নিয়ে তার ভাষায় বা 
ব্যবহারে আত্মলাঘবজনক কিছুই প্রকাশ পায় নি। লেখার 
জন্যে আমার কাছে অনুরোধ জানান নি বাংলাদেশে এমন 
সম্পাদক অল্পই আছে, তার দ্বারা তারা আমাকে সম্মান করেচেন 
কিন্তু আত্মসম্মানের হানি করেচেন এমন কথা বলা অসঙ্গত | 
যা হোক আমাকে জড়িত করে এই রকম অন্যায় কুৎসাবাদের 
সষ্টি করায় আমি অত্যন্ত সঙ্কোচ ও ছুঃখ বোধ করেচি। 

আমার শরীর ভালে! নেই কিন্তু আমার এ বয়সে সেটাকে 


৩০৬ 


বিশেষ সংবাদ বলে গণ্য করা চলবে না। ইতি ২৪ ভাদ্র 
১৩৪২ 
দাদা 


১৮৪ 
৬ অক্টোবর ১৯৩৫ 
ও 

কল্যাণীয়াসসু 

তোমার হাত থেকে ছুটির পাবর্বণী পেয়ে খুব খুসি হয়েছি__ 
ভোগ করেছি যথাসাধ্য-_ কাল বিজয়ার দিনে পরব তোমার 
দেওয়। কাপড়খানি। আজকাল তলিয়ে গেছি নৈষ্ষম্ম্যে-- কর্তব্য- 
সাধনা এখন আমার সাধনার অন্তর্গত হয় [? নয়] মানব- 
সংসারের সমস্ত দায়িত্ব থেকে ছুটির আবেদন করচি-- পুর্ব্ব 
কন্মবেগ এখনো আমাকে ধাকা দিয়ে চালায় কিন্তু সেটা ক্ষীণ 
হয়ে আসচে। দিন ম্নান হয়ে এসেছে সায়াহে, সায়াহু নিঃশব্দে 
বিলীন হবে রাত্রির মধ্যে । এই শান্তির পথে যাত্রা প্রতিদিন 
সহজ হয়ে আস্থক এই আমি কামনা করচি-__ অভ্যাসের 
গোপনে থেকে যায় ক্ষোভের কারণ, হয়তো তার মূল শিথিল 
হয়ে আসচে। 

শরৎকাল দিনে দিনে রমণীয় হয়ে আসচে । মনে হচ্চে 
এই আমার কাল__- এই শিশিরধোয়া ঘাসে শিউলি ঝরার 
কাল। এই যে শুভ্রতার স্তব্ধ ফোয়ারা দেখি কাশের বনে-_ 
এই ফোয়ার! উচ্ছসিত হবে আমার মনের প্রীস্তরে সেই খবরের 


৩০৭ 


যেন আভাস পাই এ নিন্মল নীলাকাঁশে। ইতি শুক্লানবমী 
আশ্বিন ১৩৪২ 
দাদা 


নে 
৮ অক্টোবর ১৯০৫ 
ও শান্তিনিকেতন 
কল্যাণীয়াস্তু 

কার্ডখানা যে রমণীয় তা নয়__ হাতের কাছে বিন! চেষ্টায় 
পেয়েছি-_ পড়ে আছে সামনে, লিখে দিচ্চি ছু চার কথা । 
কলকাতায় আমার যাওয়া সহজে আর ঘটবে না জরার 
জড়িমা তাকে পেয়ে বসেছে । যদি দেখি কোনো কারণে এই 
ছুটিতে অন্বাত্র কোথাও যাওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে-_ তাহলে 
কলকাতা রাস্তায় পড়তে পারে-_ তখন তোমাকে নিশ্চয় খবর 
দেব। এখানে শরতের স্িগ্ধ শুভ্র সৌরভের উৎস উদ্বারিত-__ 
পরিবর্তনের ছুরাশায় এখান থেকে কোথাও যাওয়া সম্পূর্ণ 
অনাবশ্যক। বস্তৃত ঠাইবদল বা হাওয়াবদল তেমন প্রয়োজনীয় 
নয়, আসল দরকার মানুষবর্দল। এখানকার মানুষ অত্যন্ত 
পরিচিত, তাদের ঠেকানো যায় না__ পলায়ন ছাড়া ভদ্রভাবে 
নিক্কতির উপায় নেই । তোমার দেওয়া ধৃতিটি পরে এখানে কাল 
বিজয়ার অভ্যর্থনা সম্পন্ন করেছি । মাঁলপোয়া নানা আকৃতির 
ছিল বটে কিন্তু তার প্রকৃতিতে একই রকমের মিষ্টতা। ইতি ৮ 
অক্টোবর ১৯৩৫ 


দাদা 


১৮৬ 


৯ অক্টোবর ১৯৩৫ 


কল্যাণীয়। শ্রীমতী হেমস্তবাল। দেবী 


বিজয়ার আশীব্বাদ 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
২২ আশ্বিন 
১৩৪২ 
টা 
১৯ অক্টোবর ১৯৩৫ 
ও 
কল্যাণীয়াস্ত 


তুমি আধ্যাত্মিক জীবনের দ্বন্দের কথা যখন বলো সেটা 
আমি বুঝতে পারি নে বলে মনে কোরো না। যে তুরীয় ধামের 
পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছ বলে তুমি পীড়া বোধ করে৷ তার 
সত্যতাকে আমি মনে মনে লাঘব করি নে। তোমার ধর্মমদীক্ষা 
তোমার সংসারকে এবং উপাস্তকে পরস্পর প্রতিদ্ন্ী করে 
দিয়েছে-_ একটাকে ত্যাগ না করলে তুমি স্থিতির আশা করতে 
পার না। আমি ছুটোর মধ্যে সামঞ্জস্ত করতে চাই আপন 
স্বভাবেরই প্রবর্তনায়। এই আমার চারদিকেই সকল সম্বন্ধের 
মধ্যেই যেখানেই সুন্দরকে দেখি, যেখানেই কল্যাণের সাধন। 
করি সেখানেই আমার মর্ত্য অমর্ত্য এক হয়ে যায়। সত্যের 


৩০৪ 


মধ্যে আত্মবিচ্ছেদ নেই, সত্য সব নিয়ে এক। মর্ত্যজগৎ 
সয়তানের স্ষ্টি নয়, আমারও ঘরের বানানো নয়, সে সেই 
মহাসত্যেরই অন্তর্গত যার মধ্যে তৃমি সংসারাতীতকে খুঁজে 
বেড়াচ্চ। পরমার্থসাধনাকে অশুচি করা হয় যখন সত্যের 
কোনো অঙ্গকে অশুচি কল্পনা করে ঘ্বণার অন্ধ সংস্কার রচন। 
করো । অশুচিতা আমাদের নিজের বিকৃতিতে ৷ পরমার্থ- 
চিন্তাকেও আমরা অশুচি করি যখন তার মধ্যে অহঙ্কার আসে, 
অন্ধতা আসে, ভেদবুদ্ধি দেখা দেয়। সংসারও পবিত্র, স্বয়ং 
পরমাত্মার আনন্দরূপ, যখন তাকে সেই ভাবে দেখতে পারি । 
শুচিতা জলে মাটিতে অশনে বসনে মন্ত্রে তন্ত্রে নেই__ শুচিতা 
অন্তরপ্রকৃতিতে-__ যেহেতু মানুষ মুখ্যতঃ আধ্যাত্মিক । যিশুধুষ্ট 
এই কথাই বলেছেন, ভগবান বুদ্ধেরও এই উপদেশ | ভগবদ্‌- 
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ তাই বলেন যখন যজ্ঞকে তিনি বাহা উপকরণগত 
না বলে বলেছেন আন্তরিক । সত্যই যজ্ঞ, দান যজ্ঞ, জীবে 
দয়! যন্ত্র, সর্কব মানুষে মেত্রী যজ্ভ। যেখানে সত্য নেই, দয়া 
নেই, চিত্তের নিম্মলতা নেই আছে পুজা অচ্চনা, আছে ভক্তিরসের 
সন্তোগ সেখানে আধ্যাত্মিকতা আত্মপ্রবঞ্ণনা। বিধাতার জগৎকে 
অবিশ্বাস কোরো না, ঘৃণা কোরো না, তিনি পুথক একটা স্বর্গ 
সষ্টি করে নিজের পরিপূর্ণ সত্যের মধ্যে বিরোধ বাধান নি। 
সব কিছুতে আনন্দিত হও, সবাইকে আনন্দিত করার সাধন। 
করো, এতেই মুক্তির স্বাদ। ইতি ১৯ অক্টোবর ১৯৩৫ 

দাদা 


৯২০ ৩০৫ 


১৮ 


৩ নভেম্বর ১৯৩৫ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত্ 

অনেক দিন তোমাকে চিঠি লিখি নি, তার কারণ কুঁড়েমি। 
যথাসম্ভব কাজ সংক্ষেপ করে চলেছি। মনের বায়ুমণ্ডলকে হচ্ছ 
করে তোলার প্রয়োজন আছে ।-- সাকার নিরাকার উপাসনা- 
ভেদ নিয়ে আমার মনে কোনো তর্ক নেই। যে মুঢ়তায় মানুষের 
মনকে নিরালোক করে, যে ভেদবুদ্ধিতে পরস্পরের সম্বন্ধকে 
অপমানিত করে, যে পুজাবিধি বাহ্ানুষ্ঠানকে প্রাধান্য দিয়ে 
আত্মাকে খর্ব করে,ধন্মের নামে যে সকল নিরর্থক প্রথা স্ুদীর্ঘ- 
কাল হিন্দুকে ছুব্বল ও পরাভূত করে রেখেছে তাকে নিন্দা না 
করে থাঁকতে পারি নে। 

তোমার চিঠিতে মুসোলিনিকে আমার পুরাতন বন্ধু বলে 
উল্লেখ করেছ । একদিন 'প্রকাশ্যভাবে আমার বন্ধুর অত্যাচারের 
নিন্দা করেছি__ সেই অবধি তার রাজ্যে আমার প্রবেশ করা 
নিরাপদ নয়, তার প্রজার! আমাকে সম্মান দেখাতে ভয় পায়, 
ইটালিতে আমার ছবি অনেককে গোপন করতে হয়েছে । এই 
বন্ধুর সন্তষ্টির দিকে লক্ষ্য করে আমি প্রিয়বাক্য বলি নি। 
রামচন্দ্র প্রজারগ্জনের জন্যে ধন্মপত্বীকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন, 
সেই পথ অনুসরণ করে লোকরঞ্জনের খাতিরে যদি সত্যকে বর্জন 
করতে পারতুম, তাহলে দেশের জনসাধারণের প্রিয়পাত্র হতে 
বাধা থাকত না, এবং রাঁজদত্ত সম্মানের শিরোপা আজও আমার 


৩০৬ 


ললাটকে ভূষিত করত।-_ দেশের কাছে অনেক আপিল অনেক- 
দিন করেছি, কখনো কোনো ফল পাই নি। নিক্ষল প্রয়াসের 
উৎসাহ এখন আর নেই। ধাদের বয়স অল্প সংসারের ভার 
তাদেরই পরে । ইতি ৩ নবেম্বর ১৯৩৫ 


দাদা 


১৮৯ 


১৪ নভেম্বর ১৯৩৫ 


৫১€ 


কল্যাণীয়াস্ু 

যদি আ্বিসীনিয়ার রেড ক্রস সোসাইটি ফণ্ডে টাকা পাঠাতে 
ইচ্ছা করে৷ তাহলে সোজ! দিল্লির ঠিকানাতেই পাঠানো ভালে! । 
যথাস্থানে পে ছবে সন্দেহ নেই | 

রাজা নাটকটি অভিনয় কর! যাবে এই রকম সঙ্কল্প হয়েছে। 
তাই নিয়ে ব্যস্ত আছি-- আমাকেও নামতে হবে ঠাকুর্দার 
পালায়। কিছুদিন আগে এখানে শারদোৎসব অভিনয় হয়ে 
গেছে তাতে আমি ঠাকুর্ধী সেজেছিলুম-_ ঠীকুর্দার বাহা সাজ 
বিধাতা স্বহস্তে রচনা! করেচেন-__ পরচুলোর খরচ বেঁচে গিয়ে- 
ছিল। 

খুকুর বিয়ে নিয়ে তোমরা ব্যাপূত আছ। বিয়ের পরে ওদের 


ছুজনকে আশীববাদ করবার সুযোগ হয় তো পাওয়া যাবে। 
ইতি ১৪ নবেম্বর ১৯৩৫ 


দাঁদা 


১৯৩ 


[ কলিকাত৷ ] ১২ ডিসেম্বর ১৯৩৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

এই মাত্র অভিনয় শেষ করে আসচি। নিরতিশয় ক্লান্ত 
তোমরা দেখতে এলে খুসি হতে । 

আগামী কাল বরানগরে যাচ্চি-_ এখানে ভিড়ের চাপ আর 
সইচে না । বোঁধ হয় ১৬ তারিখে কটকে যাবো । ৭ই পৌষ 
উপলক্ষ্যে ফিরতে হবে তার আগে নয়। ইতি ১২।১২৩৫ 


দাদ 


১৯১ 
[ কলিকাতা ] ১৪ ডিনেম্বর ১৯৩৫ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত্ 
অনুস্থ হয়ে পড়ে আছি। শধ্যাতল*থেকে এখনো নিষ্কৃতি 
পাই নি। তোমার মিষ্টান্ন অর্থ্য পেয়ে আনন্দিত হলুম খেয়ে 
আনন্দবর্ধনের উপায় নেই। তোমরা দ্বারে এসে চলে গিয়েছিলে 
সেজন্যে দুঃখিত হয়েছি। ইতি ১৪ ডিসেম্বর ১৯৩৫ 
দাদ! 


২৯২ 
1 কলিকাতা | ডিসেম্বর ১৯৩৭ ] 


৪ 


কল্যাণীয়ান্ত 
এখনো! ছুটি মেলেনি। দুর্বল । চিকিৎসকের শাসনে আছি। 
যখনই চলৎশক্তি ফিরে পাব যাব শান্তিনিকেতনে । তোমার 
ফুল পেয়ে খুব খুসি হলুম । 
দাঁদা 


১৯৩ 


২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৫ 


প্ে৫ 


কল্যাণীয়ান্মু 

কন্গ্রেসের বিরুদ্ধে তুমি যে অভিযোগ করেচ তার মর্ম 
বুঝতে পারলুম না। কনগ্রেস মুসলমান খ্রীষ্টান শিখ ব্রাঁ্ম প্রভৃতি 
সকল জন্প্রদায়ের প্রাতিই সহানুভূতি প্রকাশ করে কেবল 
সনাতনী হিন্দুদের প্রতি নয় আমি তো তার কোনো প্রমাণই 
পাই নি। কন্গ্রেসের একমাত্র লক্ষ্য রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম্ম বা সাম্প্রদায়িক 
সমাজ তার উদ্দেশের মধ্যে পড়ে না। যদি পড়ত তাহলে 
একই কালে শিখ ও মুসলমানকে সে গ্রহণ করতে পারত না । 
কনগ্রেসের ধারা নেতা তারা ভারতের সকল সম্প্রদায়কে 
সম্মিলিত করে বললাভ ও জয়লাভ করতে স্বভাবতই ইচ্ছা 


৬৩০ ২১ 


করেন। সনাতনীদের ধন্মই ভারতীয় সমাজকে চিরবিচ্ছিন্ন 
করবার পন্থা! আশ্রয় করেছে__ এই কারণেই ধার! রাষ্ট্রনীতি- 
ক্ষেত্রে. সফলতা লাভ করতে ইচ্ছা করেন তাদের সঙ্গে সনাতনী- 
দের মত ও আচারের মিল না থাকাই সম্ভব-_ কিন্ত তাই বলে 
কনগ্রেসের কাধ্যবিধির মধ্যে বিশেষ করে সনাতনীদেরই 
ঠেকিয়ে রাখা হয়েচে এমন অপবাদ আমি তো! আর কখনো 
শুনি নি। সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র ভারতবধষেই ভগবানকে 
পুজার ক্ষেত্রে জাতের বেড়ায় বিভক্ত করা হয়েছে__ অর্থাৎ 
যেখানে শত্ররাঁও মেলবার অধিকার রাখে হিন্দুরা সেখানেও 
মিলতে পারে না। এই মন্মাস্তিক বিচ্ছেদে হিন্দুরা পদে পদে 
পরাভূত । তারা সব্বজনের ঈশ্বরকে খব্ব করে নিজেদেরই পদ্থু 
করেছে__ তাদের এই নিত্যধন্মবিরোধী আত্মঘাতী আচরণকে 
দেশের হিতাকাজ্্ীরা কখনোই শ্রেয় বলে স্বীকার করতে পারে 
না। বাংলাদেশে আজ যে মুসলমানের সংখ্যা এত অত্যন্ত বেশি, 
তার কারণ ঘটিয়েছে সনাতনীরা, আমি যখন জমিদারী 
পরিদর্শনে মফন্বলে যেতৃম প্রতিদিন তাঁর প্রমাণ পেয়েছি । 
মানুষকে হিন্দুসমাজ অবমাননার দ্বার! দূর করে দিয়েছে, সকলের 
চেয়ে লজ্জার বিষয় এই যে সেই অবমাননা ধন্মের নামেই । 
সনাতনীরা নিত্যধন্ম্ববিদ্রোহী বলেই দেশবিদ্রোহী। মুনলমানের 
কাছে একদিন তারা হেরেছে আবার হারবে । মুসলমানের 
আর যত দোষ থাক তাঁর! ঈশ্বরকে খণ্ডিত করে নি, তাদের ধন্মেরি 
বিধানেই তাদের এঁক্য । আমাদের ধন্মের বিধানেই আমাদের 
অনৈক্য। এই অনৈক্যের ফাটল দিয়েই বছুশতাব্দী ধরে আমাদের 


৩১৩ 


শক্তি গেল বহিঃস্যত হয়ে । সনাতনীরা যদি এই অন্ধ সংস্কারের 
ভেদবুদ্ধিকেই, এই নরনারায়ণের অবমাননাকেই ধর্ম্মের অন্থু- 
শাসন বলে আকড়ে ধরে থাকে তাহলে স্বদেশের মুক্তির 
সাধকের কদাচ তাদের এই আত্মবিনাশের পন্থাকে শ্রদ্ধা করতে 
পারে না। বিদেশী যারা বাহির থেকে আমাদের হাঁতে হাতকড়ি 
লাগিয়েছে, ভিতর থেকে হিন্দুরা নিজের হাতে তাদের চেয়ে 
আরও বেশি কড়া শিকল এঁটে দিয়ে সেই শিকলকে ফুলচন্দন 
দিয়ে পূজো করচে । আমাদের এই ছূর্ভাগ্য নিয়ে কন্গ্রেস 
সাহস করে সমালোচনা করে নি-_ মহাত্মাজি প্রভৃতি ছুই 
একজন ব্যক্তিগত ভাবে করে থাকবেন | কন্গ্রেমের এই 
ভীরুতা তার কর্তব্যবিরুদ্ব__ কিন্তু তবু কেন তুমি সনাতনীদের 
পক্ষ থেকে কনগ্রেসের নামে নালিশ এনেছ তা আমি বুঝতে 
পারলুম না। ইতি ২৮ ডিসেম্বর ১৯৩৫ 

দাদ! 


১৯৪ 


৮ জীনুয়ারি ১৯ ৩৬ 


৫ৎ 


কল্যাণীয়াস্ত 

ইন্ফ্লুয়েীয় পীড়িত হয়ে পড়ে আছি। পত্রাদি লেখ! 
দুঃসাধ্য । এই ধাক্কায় দেহের ভাঙনের কাজ আরো কিছুদূর 
এগিয়ে দেবে। 


৩১১ 


তোমার মধ্যে নিয়ত ছ্বন্ চল্চে-__ কেবলি নিজেকে হছুঃখ 
দিচ্চ। তোমার অভ্যস্ত সংস্কার এবং তোমার বুদ্ধির মধ্যে 
কিছুতেই মিল হচ্চে না । মেয়েরা স্বভাবতই বিচারবুদ্ধির চেয়ে 
প্রথার প্রতি অন্ধভাবে আসক্ত । আমাদের দেশে বারো আনা 
পুরুষ স্ত্রীন্ঘভাবাপন্ন__ ভীরুতা এবং মূঢ়তায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত। 
কিন্তু ধাক্কা লেগেচে। জাগতেই হবে । | 

স্থজিতকুমার বেদজ্ঞ পণ্তিত, কুলীন ব্রাঙ্গাণ | তার বইখানি 
তোমাকে পাঠালুম । পড়ে দেখো । ইতি ৮ জানুয়ারি ১৯৩৬ 


দাদ! 


তোমার নামের লেব্ল্‌ নিয়ে একটিন মধু আমার কাছে আজ 
এসে পৌঁছল 


১৯০ 


২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ 


কল্যাণীয়াস্থু 

কন্যার সঙ্গে এতদিন পরে প্রথম বিচ্ছেদের দুঃখ তোমাকে 
অত্যন্ত বাজবে সে তো ধরা কথা । কিন্তু তার উপরে কাল্পনিক 
আশঙ্কা ও উদ্বেগের বোঝা চাপিয়ে নিজেকে অতিরিক্ত গীড়িত 
কোরো না। যেমন অবস্থাতেই থাক্‌ বাসন্তী স্বামীর ঘরে নিশ্চয়ই 
স্থখে থাকবে, কেননা সে ঘর যে ওর নিজেরই ঘর-_ তোমাদের 


৩১২ 


কাছে ও ছিল আশ্রিত, সেখানে ও হোলো কত্রী- আপন 
সংসার আপন জাবন দিয়ে সেখানে স্থ্টি করতে হবে-_ এই 
স্থপ্টিকাধ্যে মেয়েদের যেমন সুখ এবং কল্যাণ এমন আর 
কিছুতেই নয়-_ তোমার বিয়োগছুঃখদ্বারা কল্পনায় তাকে ক্ষুপ্ 
কোরে দেখো না । তার সংসারে তোমাদের মনের মতো স্বচ্ছলতা 
না থাকতে পারে-_ তাতে কী আসে যায়। বাসম্তীর স্বামী 
নিজের পৌরুষের জোরেই নিজের উন্নতি সাধন করবে । তোমরা 
প্রশ্রয়দ্ধারা ওকে যদি দুর্বল ও নির্ভরপরায়ণ করো তাহলে 
পরিণামে ওর ক্ষতিই হবে। আমাদের দেশে শ্বশুরনির্ভরী 
পুরুষের ছূর্গতি অনেক দেখেছি । কিছু পরিমাণে সাংসারিক 
অভাব মারাত্মক নয়, তাতে করে উদ্ভমকে চেতিয়ে তোলে। 
তাছাড়া সাধারণ গৃহস্থালির আদর্শে অভ্যস্ত হওয়া তোমার 
মেয়ের পক্ষে ভালো শিক্ষা | যারা ভালো গিন্নি হয় তাঁরা অতি- 
স্বচ্ছলতার মধ্যে মানুষ নয়। বস্তুত স্সেহের আতিশয্যে তোমরা 
যা নিয়ে আহাউহু করো! সেটা তোমাদের নিজেরই মানসিক 
আরামের জন্বে-_ সেটা মেয়ের পক্ষে স্বাস্থাকর নয়। অবস্থার 
অনতিধনশালিতা অসম্মানের নয়, অসম্মান বাইরের সাহায্যের 
প্রতি নির্ভর । তোমার মেয়েকে প্রথম থেকে এই অপমানে 
দীক্ষিত কোরো না, তার নিজের চেষ্টাকে অবকাশ দিয়ো । ইতি 
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ 

দাদা 


৪ এপ্রিল ১৯৩৬ 


ও শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্থ 

বহু দেশ ঘুরে অবশেষে শ্তামলীর আশ্রয়ে এসে ফিরেছি । 
বিশ্রামের জন্যে মন উৎকষ্টিত হয়ে আছে-- কিন্তু আমার গ্রহ 
বিশ্রাম করেন না, আমাকেও করতে দেন না। দিল্লিতে 
বাঙালীদের অভ্যর্থনার আতিশয্যে আমাকে শয্যা আশ্রয় করতে 
হয়েছিল। ডাক্তার ডিজিটলিন খাইয়ে আমার ক্ষুব্ধ হৃদয় শান্ত 
করেছিলেন । 

চিত্রাঙ্গৰার অভিনয় দেখে পশ্চিমপ্রদেশের সকলেই প্রশংসায় 
মুখরিত। সেখানকার গুণগ্রাহীরা বলেছেন সৌন্দধ্যের এমন 
চরম উৎকর্ষ তারা কখনো দেখেন নি-_ ও অঞ্চলের শ্বেত- 
ছৈপায়নেরাও বিন্ময়বিমুগ্ধ । আমার ছুর্গহের চক্রান্তে আমি 
বাংলাদেশে জন্মেছি__ সেখানকার মানুষ মন খুলে ভালো 
বলবার অসহা ছুঃখ সইতে পারে না, সেখানে সকলেই সকলের 
চেয়ে প্রথর বুদ্ধিমান-_ প্রখর বুদ্ধির লক্ষণ এই যে খাটো বাট- 
খারায় ভালো জিনিষের গৌরব পরিমাপ করা-- যেমন করে 
হাঁটে সুচতুর মহাজন পাট কেনবাঁর সময় চাষীকে ঠকিয়ে ওজন 
চড়ায়। পুরো প্রশংসা পেয়েছি আধ্যাবর্তের সর্বত্রই, কেবল 
পাণডববর্িত দেশ ছাড়া । আমি বলি ভাগ্যের হাতে বঞ্চিত 
হওয়াই ভালো-_ তাতে বিধাতাকে খণী করে রাখা যায়। , 

নন্দিতার বিবাহ আশ্রমেই হবার কথা । এখন বিদ্যালয়ের 


৩১৪ 


লম্বা ছুটি। যাদের নিয়ে এখানে সমারোহ, তারা অন্ধুপস্থিত: 
থাঁকবে-_ কাজটা শান্ত ভাবেই সম্পন্ন হবে । আমার পক্ষে 
সেটা ভালো । 

যেদিন সন্ধ্যাবেলায় এখানে এসে পৌছন গেল সেই দিনই 
দেবতার বর্ণ আমাদের অভিনন্দিত করেছে । এখনে ঠাণ্ডা 
আছে হাওয়া । পশ্চিমে ভ্রমণের সময় যে ধুলো অন্তর্গত হয়েছে 
তাতে বোধ করি আমার ওজন সের চার পাঁচ বেড়ে গিয়ে 
থাকবে। 

একটা কথা মনে রেখো, তোমার চিঠিগুলি আমার কাছে 
আসে অধ্যের মতো-_ আমি তাকে কিছুমীত্র অনাদর করি নে। 

কলকাতায় কী উপলক্ষ্যে কবে যাঁওয়া হবে তা কিছুই বলতে 
পারি নে। তোমার জ্যোতির্ভ ষণকে জিজ্ঞাসা করে পাঠিয়ো । 
ইতি 818৩৬ 


দাদ! 


১৯৭ 


[ শান্তিনিকেতন ] ৩০ এপ্রিল ১৯৩৬ 


৫9 


কল্যাণীয়াস্থ 

বিবাহের ব্যাপারে অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলুম__ কাজটা স্ুসম্পন্ন 
হয়ে গেল, এখন আমার ছুটি । এখানকার বাগানের ফল 
তোমাকে পাঠাবার সঙ্কল্প ছিল কিন্তু ফলের আশা! ত্যাগ করতে 


৩১৫ 


হোলো । অনাবৃষ্টিতে ধরণীর রসসঞ্চয় নিঃশেষপ্রায়। পেঁপে 
গুলো বালখিল্য মুনিদের মতো গাছে ঝুলচে উপবাদে জীর্ণ, 
যে কয়টা লেবু ফলেছে তাদের অবস্থা দেখে আমার বাগান 
লজ্জিত । কাচা আমগুলো ছুদিন বাদেই শুকিয়ে ঝরে পড়বে 
এমন তাদের ক্রিষ্ট দশা । অপরিণত ফলসা এখনো গাছে আছে 
কিন্তু তাদের ফল বলে গণ্য করা চলবে না। গাঁছভরা ছিল 
বেল, আমার চেয়ে সতর্ক লোৌকের। সেগুলো গাছে রাখে নি, 
সর্বতী লেবুগুলো৷ আমাদের অগোচরে যাদের ভোগে লেগেছে 
তারা আমার অপরিচিত। লিচুগুলো চুরির যোগ্য অবস্থা হবার 
পুবের্বই ধরাশয্যাশীয়ী । 

এই ছুর্গতির দিনে অনন্তগতি হয়ে আমার সাহিত্যবুক্ষের 
ফল তোমাকে পাঠিয়েছিলুম, কিন্ত সেও নৃতন গাছ থেকে পাড়া 
নয়। কিন্ত এই উপলক্ষ্যে বিনয় আমি করব না। ছাপবার 
সময় প্রুফ দেখতে হয়েছিল, তখন অনুভব করেছিলুম এর মধ্যে 
জীর্ণতার কোনো লক্ষণ নেই । আমি তরুণের কবি, আমার 
লেখায় তার প্রমাণ কখনো ক্ষীণ হবে না। চিত্রাঙ্গদা বাঁসন্ভতীকে 
লক্ষ্য করেই পাঠিয়েছিলুম, কেননা ছাপার অক্ষরের অন্তরালে 
নৃত্যের রূপ প্রচ্ছন্ন । তুমি নাচ দেখ নি অতএব এট তোমার 
কাছে নিরর্থক । অন্য বই দুটি তরুণদের হাতে পৌচেছে এতে 
আমি যথার্থই খুসি হয়েছি । আমার বিশ্বাস ওরাই এর স্বাদ 
গ্রহণ করতে পারবে । এর মধ্যে তথ্য নেই, ঘটনার বিবরণ 
নেই, পুরাণ কথার ব্যাখ্যা নেই । এর মধ্যে যে চিন্তার ও রসের 
ধারা আছে সে তাঁদেরই উপভোগ্য যাঁদের বুদ্ধি ও হৃদয় তাজা, 


৩১৬ 


স্বাদগ্রহণের শক্তি যাদের ক্লান্ত ও ক্ষীণ হয় নি-- তাদের কাছে 
এ বইগুলির সকল সংস্করণই প্রথম সংস্করণ । আমার রচনা 
যে জাতীয় ফল, জীর্ণ রসনা ও নিজ্জীব মস্তিক্ষের কাছে ত। পথ্য 
নয় এ কথা স্পদ্ধা করেই বলতে পারি । ইতি ১৭ বৈশাখ 


১৩৪৩ 


দাদা 


১৯৮ 


জোড়াসাকে। ] ১৩ মে ১৯৩৬ 


কল্যাণীয়ান্মু 

আমার শরীর মন আজকাল একান্ত কম্মবিমুখ হয়ে পড়েছে। 
অধিকাংশ সময়ই স্তন্ধ হয়ে বসে থাকি । এইবার মনে করচি 
ছুটি নেব। বভকাল পড়বার সময় পাই নি। বাল্যে ইস্কুল 
পালিয়েছি বটে কিন্তু পড়ায় ফাকি দিই নি। এমন বিষয় ছিল 
না যা নিয়ে নাড়ীচাড়! করি নি। এখন আরএকবার সেই পবেব 
ফিরে যেতে ইচ্ছা করে। সেদিনকার বালকের মতোই মনটা! 
পড়তে চাচ্চে। বয়স্কঘুগের কঠিন কাজের দায় কিছুতেই ছাড়ে 
না-_ অবকাশের আকাশটা তাই স্বচ্ছ হতে পারচে না, কোনো 
একট! ছুর্গমে দৌড় দ্বিয়ে পালাতে ইচ্ছা করে। অল্পদিন আগে 
ভুবনেশ্বরের একজন পাণ্ডা এসেছিল । বৌমা সেখানে থাকতে 
তাকে এই ব্যক্তি যত্ব করেছিল। ভূবনেশ্বর যদি সম্বংসর আরামে 


৩৯৭ 


থাকবার জায়গা হোত তাহলে সেখানে একটি ছোটো 
পাহাড়ের উপর কুটীর বানাতৃম। তার সুযোগও ঘটেছিল। 
কিন্ত স্থায়ীভাবে আশ্রয় নেবার জায়গা ও নয়। সে হিসাবে 
শান্তিনিকেতনের সঙ্গে আর কোনো স্থানের তুলনা হয় না। 
আমার ভোগের সামঞ্জী ইতিমধ্যে তুমি আমাকে অনেক 
পাঠিয়েছ। সেই দানের মধ্যে তোমার হৃদয়ের যে জিগ্ধতা 
প্রকাশ পায় সে আমার কাছে রমণীয়। আজ সকালে জোড়া- 
সীকোয় এসেছি । আর কিছুক্ষণ পরে আবার বরানগরে ফিরে 
যাব। সেখানে মেঘৈর্মেছরমন্থরং বনভুবঃ শ্যামাস্তমালক্রমৈঃ | 
ইতি ৩০ বৈশাখ ১৩৪৩ 
দাদ 


১৯০ 


বা বদন 
ও 

কল্যাণীয়াস্থু 

আমার জীবনের একটা দিক তোমার ভালো করে জান। 
নেই। প্রথম বয়সে বৈষ্বসাহিত্যে আমি ছিলুম নিমগ্ন, সেটা 
যৌবনচাঞ্চল্যের আন্দোলনবশত নয়, কিছু উত্তেজনা ছিল না 
এমন কথা বলা যায় না। কিন্তু ওর আন্তরিক রসমাধুধ্যের 
গভীরতায় আমি প্রবেশ করেছি। চৈতন্তমঙ্গল চৈতন্যভাগবত 
পড়েছি বারবার। পদকর্তাদের সঙ্গে ছিল আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় । 


৩১৮ 


অসীমের আনন্দ এবং আহ্বান যে বিশ্বপ্রকৃতির সৌন্দর্য্য ও 
মানবপ্রকৃতির বিচিত্র মধুরতায় আমাদের অন্তরবাঁসিনী রাধিকাকে 
কুলত্যাগিনী করে উতল! করচে প্রতিনিয়ত, তার তত্ব আমাকে 
বিস্মিত করেচে। কিন্তু আমার কাছে এই তত্ব ছিল নিখিল 
দেশকালের-_ কোনো বিশেষ দেশে বিশেষ কালে বিশেষ 
পাত্রে কতকগুলি বিশেষ আখ্যায়িকায় আবদ্ধ করে ঞকে 
আমি সন্কীর্ণ ও অবিশ্বীন্ত করে তুলতে পারি নি-_ আজও 
পারি নে নিকৃসন্‌ সাহেবের দৃষ্টান্ত সত্বেও । আমি মানি রস- 
স্বরূপকে, ধার পরমানন্দের মাত্রা জীবে জীবে । আমি সেই 
আনন্দকে উপলব্ধি করতে চাই বিশ্বের সব্বত্র-_ বিশ্ব প্রকৃতিতে 
বিশ্বমানবে । সত্যকে প্রত্যক্ষ দেখবার সাধনা আমার, বপককে 
সত্য বলে কল্পনা করা কেবল যে আমার পক্ষে অনাবশ্যক 
তা নয় কিন্তু তা বাধাজনক | তবু বুঝতে পারি আমার পুরুষের 
স্বভাবে যেটা যথেষ্ট, মেয়েদের স্বভাবে তা নয়। তোমাদের 
উপাসন। পালন করা সেবা করা, অর্থাৎ ঈশ্বরকেও তোমাদের 
নারীপ্রকৃতির কাছে নির্ভরশীল করে তবে তোমর! আনন্দ পাও । 
ক্ষতি নেই। যেখানে তার সত্য প্রয়োজন আছে সেখানে তার 
উপায় থাক ভালো । কিন্তু তবু আমার মনে হয় তোমাদের 
এই প্রবৃত্তিকে চরিতার্থ করবার স্থান থাঁকা উচিত মানবলোকে, 
জানা উচিত মানুষের সেবাতেই ঈশ্বরের সেবা । শিলাইদহের 
বৈষ্বীর আচরণে এই সত্যের আভাস পেয়েছিলুম। কিন্তু ষে 
পথ তোমার চিরাভ্যস্ত আনন্দের পথ তার গভীরে সত্য নেই 
এমন কথা বলি নে-- তুমি নিঃসন্দেহ জেনে বা না জেনে সেই 


৩১৪৯ 


সত্যকে স্পর্শ করেছ-_ স্ুম্পষ্টভাঁবে যথার্ঘভাবে তাকে লাভ কর 
এই আমি কামনা করি । ইতি ১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩ 
দাঁদা 


স্৬ ৩ 
৪ জুন ১৯৩৬ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 
কিছু কাল হোল তোমাকে একখানি চিঠি লিখেছি তাতে 
জানিয়েছিলেম যে ভ্রমক্রমে, আমার চিঠির মধ্যে তোমার 
বৈবাহিককে লেখা একখানি চিঠি পাঠিয়েছিলে, সেখানি আমি 
ছিড়ে ফেলেছি। এ চিঠি কেন তুমি পাঁও নি বুঝতে পারলেম 
না। তদনুসারে এ চিঠিও না পেতে পার । অতএব বাহুল্য 
লিখে কোনো ফল নেই । 
ঝড় বৃষ্টি চলচে, ঠাণ্ডা পড়েচে। ইতি ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪৩ 
দাদা 


২০ ৯ 
[ শান্তিনিকেতন ] ২৫ অক্টোবর ১৯৩৬ 


কল্যাণীয়াস্থ 
বিজয়ার আশীর্বাদ গ্রহণ করবে । তোমার নতুন বাসায় 


ঠাকুরঘরের সৌন্টব সাধনে ব্যস্ত আছ। আমিও উঠেছি নতুন 


৩২৩ 


বাসায়-_- আমার ঠাকুরঘর সাঁজাবার ভার আমার উপর নেই 
_- আমার আকাশের মিতা এই কাজে লেগেছেন__ চারদিকে 
শিশিরে ঝলমল করচে পত্রপুঞ্জ, হেমন্তের আলোয় লেগেছে কাচা 
সোনার রঙ, পাখীরা আনন্দে চঞ্চল। গাছের ছায়ায় বসে দিন 
কাটে-_ ঠাকুরকে সাজাবার স্পর্ধা রাখি নে-_ তিনি তাতে 
আপত্তি করেন না আমাকেই খুসি করবার জন্যে তার 
আয়োজন । বিজয়দশমী [৮ কান্তিক ] ১৩৪৩ 

দাদ। 


২০২ 


২৮ অক্টোবর ১৯৩৬ 


কল্যাণীয়াস্থু 

তোমার আজন্মকালের অভ্যাসবশত এক জায়গায় তুমি 
আমাকে ঠিকমত বুঝতে পারবে না। আমার কবিপ্রকৃতি, 
স্থতরাঁং আমি সীমার মধ্যেই অসীমকে উপলব্ধি করি, সে সীমায় 
তিনি নিজেই নিজেকে প্রকাশ করেছেন__ কোনো দেশবিশেষের 
সম্প্রদায়বিশেষের আপন খেয়ালে গড়া এমন সীম] নয় যা সেই 
সম্প্রদায়ের বাইরে বিশ্বভুবনে আর কোথাও কোনো সাক্ষ্য 
রাখে না। যদি বল, নিজস্থষ্ট সীমার মধ্যে তীর যে প্রকাশ- 
রূপ, তার ইচ্ছা তাকেও আমরা আপন এশ্বধ্যে সাজাই । সে 
কাঁজ তো। করেই আসচি, ছন্দ দিয়ে, স্বর দিয়ে আনন্দ দিয়ে__ 


৯॥২১ ৩২১ 


ঠাকুরঘরের সেই শাশ্বত সেবাই ত কবিদের হাতে । আমাদের 
এই সাজের ফুল তোমরাও ব্যবহার করতে পার-- যেমন করে 
ব্যবহার করো বাগানের ফুল।-_ পুজারি ঠাকুরের পথ তাকিয়ে 
তোমার ঠাকুরের অপমান করো! কোন্‌ সাহসে ভেবে পাই নে। 
তার হাতের পূজার বিশেষ মূল্য আছে না কি তার কাছে? 
তাহলে আমি ম্রেচ্ছ যে ঠাকুরঘরের দ্বার খোল! পাই দিন রাত্র, 
সেখানে কেবলমাত্র তারই দ্বার রুদ্ধ । 

ভুল কোরো না, আমি খুবই বেঁচে আছি, গভীর আনন্দে 
আছি। সে আনন্দের প্রকাশ তোমার অভ্যস্ত পথে নয় বলেই 
তোমার দৃষ্টি এডিয়ে যায়। আমার আনন্দ আজও নব নব ভাষার 
ভঙ্গীতে রূপ নিচ্ছে, সে রসে যাদের স্বাভাবিক অধিকার আছে 
তার! চিনতে পারবে । যারা কেবলি এক অভ্যাস থেকে আর 
এক অভ্যাসের গণ্তীতে বাঁধা পড়ে__ তারা তাদের অভ্যাসের 
বাইরেকার রসউৎসে পৌছতে পারবে না। ক্ষতি কী, স্বভাবদত্ত 
তাদের বরাদ্দ থেকে তারা বঞ্চিত হয় নি। 

ষে জনসাধারণকে গণমহারাজবর্গের মধ্যে ফেলেছ, তাদেরই 
ভিতরে একটি স্বচিহিত সীমা! এঁকে যত বীভৎসতা। দেখতে পাঁও 
সেইখানেই-_- আর মনে কর সেইটে এড়িয়েই তোমার শুচিত। 
বাঁচিয়ে চলচ। আর তার বাইরে যেখানে তোমার প্রত্যহ 
স্বচ্ছন্দ সঞ্চরণ, যেখান থেকে তাড়কেশ্বরের পান্ডা ও পুজারি- 
ঠাকুরদের আমদানি, সেখানকার সকল কলুষ সকল বীভৎসতা 
অভ্যাসের অন্ধতাবশত নিব্বিচারে সয়ে যাও । এ কথা! মনে 
আনতে পারো না পাপের দ্বণ্যতা জাতিবর্ণের মধ্যে বদ্ধ নয়, 


৩৫২ 


প্রত্যহ সহত্র প্রমাণ সত্বেও। এই গণমহাঁরাঁজবর্গের মধ্যেই 
তোমরাও আছ, আমরাও আছি, তারাও আছে-_ পাপপুণ্যের 
গতায়াত এর সর্বত্রই ;₹_ বিশেষ অভ্যস্ত আচারের কৃত্রিম 
সিলমোহরের ছাপ মেরে কলুষের গায়েও জাতের তিলক কেটে 
দিয়ো না। মানবলোকে যদি তার স্পর্শ বাচিয়ে নির্মল থাকতে 
চাও তাহলে ঘরে বাইরে কোথাও পা ফেলতে পাবে না। 
নিজেকে ঘরগড়া নিয়মে একান্ত সাবধানে শুচি রাখবার সাধনা 
না করে যথাসাধ্য সকলকে ক্ষমা করবার করুণা করবার আপন 
করবার সাধনা কোরো । আমাদের দেশে পাপকে তেমন নিন্দা 
করে নি যেমন নিন্দা করেছে কৃত্রিম আচারের ক্রটিকে। বিধাতা 
এই অপরাধকে ক্ষমা করেন নি__ বহু শতাব্দী ধরে মার খেয়ে 
আসচি এই দোষে, মরব এরই হাঁতে। 

একটা! ভুল ধারণ! তোমার চিঠি থেকে বুঝলুম। নব্যারা 
আমাকে উপেক্ষা করে কি না নিশ্চিত জানি নে। আসল কথা, 
কেউ বা করে, কেউ বা! করেও না, তার বেশি আশা কর! যায় 
না। এ প্রসঙ্গে প্রাচীনাদের এবং প্রাচীনদেরও কথা না তোলাই 
ভালো । কবিধন্মের অন্ুবত্ী আমি নব্যাদের উপেক্ষা করি নে। 
যদি প্রাচীনকালে জন্মে থাকি তবে নিঃসন্দেহ তখনকার নব্যাদের 
প্রতিও আমার হৃদয় সকরুণ ছিল, প্রপৌত্রদের যুগে যদি জন্মাই 
তবে তখনো থাকবে । আমি যখন নবীন ছিলুম, বাংলাদেশের 
নব্যারা তখন ছিলেন অদৃশ্য । যদি এত বেশি দৃশ্যমান থাকতেন 
তাহলে আমার তখনকার ইতিবৃত্তান্তে ভাগ্যলিপি কোন্‌ রডের 
কালীতে কোন্‌ রসের লিখন প্রকাশ করত জানি নে। এখন 


৩২৩ 


যেখান দিয়ে তারুণ্যের প্রবাহ বয়ে চলেছে তার তীরে আছি 
বটে কিন্তু আছি শিখরচূড়ায়। প্রবাহিণীর কলধ্বনি শুন্তে 
পাই, চলচাঁঞ্চল্যও চোখে পড়ে । কিন্তু থাকি নিরাসক্ত। সেই 
নিরাসক্তির ভূমিকাতেই প্রশস্ত আকাশে গানের স্বরবৈচিত্র্য 
ছন্দোবৈচিত্র্যে খেলবার জায়গা পায়। গিরিশূঙ্গ যেমন ফাল্তুনের 
সুর্ধ্যতাপে তুষারবিগলিত নির্বরধারা দান করে যায় দূর দেশ 
দেশীস্তরকে, আমিও তেমনি দূর থেকেই দান করে যাব নব নব 
কালকে নবীন নবীনাদের গান। যদি অত্যন্ত নিকটে তাদের 
সমভূমিতে থাকতুম তাহলে এই ধারায় থাকত না এত অবাধ 
দাক্ষিণ্য, পদে পদে অনেক ধুলো বালি একে নিকটের সীমায় 
অবরুদ্ধ করত। ইতি ২৮।১০।৩৬ 

দাদা 


২৩ 
[ শ্রীনিকেতন ] ১৯৭ নভেম্বর ১৯৩৬ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

আমার সেক্রেটরি কলকাতায়। আমার কাজের ভার 
দূর্বহ। শান্তিনিকেতন ছেড়ে পালিয়ে এসেছি শ্রীনিকেতনের 
বাড়িতে। এই জায়গাটাতে শ্রীর চেয়ে শান্তিই বেশি । তেতালার 
নির্জন ঘরে হেমস্তের স্বর্ণালোকপ্লাবিত উন্মুক্ত আকাঁশের মধ্যে 
দেহ মন নিমগ্ন । শীতকাল অতিথি সমাগমের সময়। দূর দেশ 


৩২৪ 


থেকে দর্শনার্থী আসচে-_ শ্রদ্ধা জানিয়েই চলে যায়, আমার 
অবকাশকে ভারগ্রস্ত করে না। ৩ অগ্রহায়ণ ১৩৪৩ 
দাদা 


০ 


কল্যাণীয়াস্থ 
শ্রীনিকেতন থেকে ফিরে এসেছি। সেখানে নির্জনে তেতালার 
ঘরে খোল! আকাশের মাঝখানে একটা মুক্তির অবকাশ ছিল। 
অনেক রাত্রি পধ্যস্ত স্বচ্ছ গভীর অন্ধকারে আমি যেন নক্ষত্র- 
লোকের নীরব সভাকবির মতো বিরাজ করতুম। বামে 
স্্যোদয় এবং দক্ষিণে সূর্যাস্তের মাঝখান দিয়ে বইত আমার 
চিন্তাধারা । এখানে জনতা এবং কর্মজালে আবৃত করে রাখে 
মনকে-__ খাঁচার পাখীর মতো সে কেবলি পালাবার ফাক খুঁজতে 
থাকে । ইচ্ছা আছে এখান থেকে ছুটি পেলেই পল্মাতটে শিলাই- 
দহের চরে গিয়ে আশ্রয় নেব। নিজের কাছ থেকে দৌড় 
দেবার মতো! সেখানে যেমন খোল! দরজা! এমন আর কোথাও 
নেই । 
দাদ 


৩২৫ 


৫ 


২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ 


ঠ« 


কল্যাণীয়াস্ত্ 
অনেক দিন পরে তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম । 
আমি নান। কাজে নিবিষ্ট আছি, অথচ কাঁজে আমার আগ্রহ 
নেই। জীবনের সায়াহুকাল কাজ করবার নয় সেট। প্রতিক্ষণ 
উপলব্ধি করচি। মানুষ কন্মের দাস, সায়ংসন্ধ্যাকে মানে না; 
সর্ষ্য যখন ছুটি ঘোষণা করে দিয়ে অস্তে যান, মানুষ তখন 
আলো! জ্বালিয়ে দিনকে টেনে রাখে । -_ বিশ্ববিদ্ভালয়ের একটা! 
দায় নিয়েছি, ছাত্রদের সমাবর্তনের দিন বক্তৃতা করতে হবে, 
আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারিতে । বোধ হয় ১১ই তারিখে কলকাতায় 
যাব। হয় তো বেলুড়েও আমাকে টাঁনবে। বিশ্ববিদ্যালয়েও 
আমি যেমন অসঙ্গত, বেলুড়েও তেমনি । আমার নামটাকে 
নিয়ে সবাই আপন আপন ঢাক বানাতে চায়, কাঠি পড়ে 
আমারি পৃষ্টে। শরীরট! মাঝে মাঝে জবাব দিতে চায়, তাকে 
দোষ দিতে পারি নে, তার সহিষণুতার অন্ত নেই। ইতি ২০ 

মাঘ ১৩৪৩ 
দাদা 


৩২৬ 


৩০৬ 


[ কলিকাতা । ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ ] 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ম 

এ চিঠি যদি ঠিক সময়ে ডাকে পাঁও তবে জানবে কলকাতায় 
সবেমাত্র এসেছি । 

তোমাকে স্ুুরুলের তাতের কাপড় ছু জোড়! পাঠিয়েছি। 
জানি নে ভালে! কি না। গুণের মধ্যে এখানকার পল্লীর জিনিষ। 

হয়ত ১৫ই পধ্যস্ত জোড়াসীকোয় থেকে চন্দননগরে যাব। 
সেখানে কিছুদিন গঙ্গার হাওয়া খাবার ইচ্ছে। তার পরে 
বক্ততাদি শেষ করে যাব কালিগ্রাম পরগণায়, প্রজাদের আমন্ত্রণে 
__ তোমাদের জমিদারীর সান্গিধ্যে। 

দাদা 


২০৭ 


| শান্তিনিকেতন ] ৫ মাচ ১৯৩৭ 


০ 


কল্যাণীয়াস্ু 

অনেক দিন তোমার চিঠি পাই নি, পেয়ে খুসি হলুম। 
কিছুদিন থেকে নান! কর্তব্যে বিজড়িত হয়ে পড়েছি তার উপরে 
শরীরট। অবসাদগ্রস্ত হয়েছে-_- তার সঙ্গে সম্বন্ধবিচ্ছেদের সময় 
আসন্ন হোলে! তাতে আর জন্দেহ থাকচে না। আগামী ১লা 
বৈশাখে এখানে একটা উৎসব আছে-_ জনতার আশঙ্কা করি-_ 


৩২৭ 


আগন্তকদের যথোচিত অভ্যর্থন। করবার মতো উদ্যম দেহে মনে 
নেই। চীনরাষ্ট্রপতিরা অনেক টাকা খরচ করে ভারতের সঙ্গে 
যোগরক্ষার উদ্দেশে এখানে একটি গৃহনিম্নাণ করেচেন-__ অনু- 
ানটা তাই নিয়ে । ইতি ৫1৩৩৭ 

দাদ 


নখ ০ট৮ 


১৭৯ এপ্রিল ১৯৩৭ 


কল্যাণীয়াস্ 

সাহিত্যের বইয়ের চেয়ে বিজ্ঞানের বই আমি বেশি পড়ে 
থাকি। আমার রচনায় যদি এ অনুরাগ রূপ ধারণ করে 
তোমরা তার সম্ভোগ থেকে বঞ্চিত হবে না। ইতি ৬ বৈশাখ 
১৩৪৪ 


ও 


দাদ! 


২০৯ 


৬ মনমে১৭৩৭ 


৫ৎ 


আলমোড়। 
41100019910 
কল্যাণীয়াস্থ 

তোমার কাছ থেকে আমার জন্মদিনের অভিবাদন পেয়ে 
আনন্দিত হলুম। এখানে এসে ভালো আছি, ভালো লাগচে । 


৩২৮ 


জায়গাটি স্সিগ্ধ সুন্দর নির্জন। বাড়িটি বড়ো, ঘরগুলি আলোয় 
উজ্জ্বল, বারান্দা প্রশস্ত, চারদিক খোলা, আকাশ মেঘমুক্ত, 
ঢালু পাহাড়ে শ্ঠামল বনস্পতির দল রোদ পোহাচ্ছে, সামনের 
পাহাড় নীলিম বাম্পে অপরিস্ফুট । ১৫ বৈশাখ এত উদ্ধে দলে 
বলে আমাকে আক্রমণ করতে আসবে না মনে করে শান্তিতে 
আছি। তোমরা সকলে আমার আশীর্বাদ গ্রহণ কর। ইতি 
২৩ বৈশাখ ১৩৪৪ 

দাদা 


২১০ 


[মে ১৯৩৭ ] 


ঠে€ 


কল্যাণীয়াস্ত্ 


আমরা যা লিখি সে তে। বেদবাক্য নয়। যে সাম্প্রদায়িকতা 
মানুষকে বিধিদত্ত বুদ্ধি খাটাতে নিষেধ করে,হাজার বছর পুর্বকার 
বিধিনিষেধের বোঝা নিব্বচারে কাধে নিয়ে চলতে বলে, না 
চল্লে চাবুক তোলে আমি তার বিরুদ্ধে যা বলি সে তো কেবল 
মানুষকে ভাববার [?ভাবাবার] জন্যে । আমি তো কাউকে জাতে 
ঠেলতে পারি নে, কারো মেয়ের বিয়ে বন্ধ করা আমার সাধ্যে 
নেই, আমি কেবলমাত্র যুক্তি দিতে পারি । যুক্তি যারা মানতে 
অক্ষম, বুদ্ধিকে যারা স্বীকার করতে অনভ্যস্ত, তাদের উপর তে৷ 
বিধাতার দণ্ড উদ্যত হয়েই আছে-_ বহু শতাব্দীর পরাভবে 
অপমানে তাদের মাথা হেট হয়ে রইল, এখনো শুচিতার বড়াই 


৩২৪৯ 


করে ব্যর্থতার পথে যদি তারা চলতে চায় তাহলে তার শাস্তি 
কালেরই হাতে । আজ পর্য্যস্ত শাস্তি অন্য পক্ষেই দিয়ে এসেছে, 
দলে বলে করে এসেছে জোরজবরদস্তি, এত পীড়ন অন্য কোনে। 
সমাজেই নেই, সেই জন্তেই এত ভুর্র্বলতা অন্য কোনে সমাজকে 
জীর্ণ করে নি। ভাবিয়ে তুলে তোমার মনকে আমি অস্থির 
করেছি-_- অস্থির করতেই এসেছি আমি, বিচারবুদ্ধিকে যারা 
পাথরচাপা দিয়ে রেখেছে তাদের মনকে আমি কথার ধাক্কা দেব, 
এর বেশি আর কিছু করতে পারব না। তারাও আমাকে ধাকা 
দিতে থাকবে । এতে মনোরাজ্যে একটা নড়াচড়ার স্থষ্টি হবে__ 
সেটা ভালোই। 

দাদা 


২১১ 
[ আলমোড়। ] ২* মে ১৯৩৭ , 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত 

এখানে এসেও জয়ন্তীর হাত এড়াতে পারি নি। অল্পশ্বল্পের 
উপর দিয়েই গেছে, অসন্ গোছের কিছু হয় নি। বিদেশী লোক, 
আমাকে দিয়ে আমার ইংরেজি কবিতা পড়িয়ে নিলে । ফুলে 
ভরে গিয়েছিল ঘর-_ জলযোগটা লোকের রুচিকর হয়েছিল। 
বাসন্তী যে সেদিন শূন্য সভায় গান গাইতে রাজি হয় নি তার 
থেকে বোঝা গেল মে আধুনিক মেয়ে । আনুষ্ঠানিক সমারোহ 
করতে তার সঙ্কোচ বোধ হতেই পারে সে তোমার মত সেকেলে 


৬৩৩ 


নয়। আমাকে নান! উপলক্ষ্যে নান! অনুষ্ঠান করতে হয় কিন্ত 
ওটা আমার স্বাভাবিক নয়। 

ইতিমধ্যে এখানে দারুণ শিলবৃষ্টি হয়ে গেছে । মাঝে মাঝে 
অকাল বধণও হচ্চে । বোধ হয় বাতাসে বধামঙ্গলের কবির 
ছোয়াচ লেগেচে। 

দিন ভালোই যাচ্চে । ইতি ২০ মে ১৯৩৭ 

দাদা 

বাসম্তীকে বোলো আমার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সে যে 
কোলাহল বাড়িয়ে তুলতে অসম্মত হয়েছিল সে জন্তে আমার 
কোনো নালিশ নেই । 


২১২ 
[ আলমোড়া ৷ ২৯ মে ১৯৩৭ ] 


কল্যাণীয়াস্থ 

শরীর ভাল নেই এ ওজর চলবে না । কিন্তু ভালো থাকলে 
এবং ভালে! জায়গায় থাকলে কুঁড়েমি পেয়ে বসে কর্তব্যের 
প্রতি অবহেলা জন্মে এমন কি খেতে শুতেও গড়িমসি করি। 
অর্ধেক রাত্রি চৌকিতে হেলান দিয়ে কাটে, আর দিনটা কাটে 
দিবাম্বপ্ণে বারান্দায় বসে। নীল আকাশে বেগ্নি কুহেলীর 
চাদর জড়িয়ে পাহাড়গুলেো৷ যেন তন্দ্রাবিষ্ট__ শ্গন্তীর নৈকষর্ম্য- 
সাধনায় ওদেরি অনুসরণ করতে ইচ্ছে করে। 

এখন বেজেছে সাড়ে দুপুর, বাতাসে যে তাপ ও চাঞ্চল্য 


৩৩৯ 


দেখা দিয়েছে সেটা গিরিরাজের খ্যাতির যোগ্য নয়। এ 
আমাদের নিম্ধরাতলের শীতমধ্যাহ্নের আতপ্ত নিশ্বামেরই মতো। 
গরম কাপড়টা আচারপালন মাত্র। কিছুকাল পুর্ববে মীরার 
শরীর খারাপ হয়েছিল, মহারাণী সেই সময়কার সংবাঁদটা এখনে! 
তাজা রেখেছেন । ইতি ২৯ মে ১৯৩৯ [ ?১৯৩৭ ] 

দাদা 


মহ 
[ আলমোড়া ) ৩০ মে ১৯৩৭ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত 

তুমি ভূল কোরো না । বাদ প্রতিবাদে উত্তেজিত হবার মতো 
মেজাজ আমার নয়। আমি যা বল! উচিত মনে করি | “বলি? 
কিন্তু আমার কথ! না মানলেই মনে মনে বা বাইরে কাউকে 
শাস্তি দিতে হবে সে রকম চিন্তা করাও আমার স্বভাববিরুদ্ধ | 
তোমার চিরাভ্যস্ত আচার তুমি পালন করবে এ নিয়ে আমার 
মাথ! গরম হবে কেন? আমার শীস্তিনিকেতনেই অনেকে আছেন 
ধারা আমার মতানুবত্তী নন, এমন কি আমার মতবিরোধী, 
আমি তাদের তেড়েও যাই নে, তাডিয়েও দিই না। আমি 
স্বাধীনতার পক্ষপাতী, আচারের স্বাধীনতা থাক্‌ অন্যের, বিচারের 
স্বাধীনতা থাক আমার, এ জন্যে ঝগড়া করার ছুঃখ পোষণ করা 
মুঢতা। ইতি ৩০ মে ১৯৩৭ 

দাদ] 


৩৩২ 


৯৪ 


[ আলমোড়া ] ১১ জুন ১৯৩৭ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ত, 

আমি কতকগুলি লেখা নিয়ে দিন রাত ব্যাপূত আঁছি। 
এখানে যে অবকাশ পেয়েছি সে আর কোথাও পাব না তাই 
এর অল্প অংশও নষ্ট করতে ইচ্ছ! করচে না। 

তোমার শেষ ছুই একটি চিঠি খুব ভালো লাগল । তোমার 
রচনার শক্তি যখন তোমার মানসিক অবসাদ বা বিরক্তি ভেদ 
করে উজ্জ্বল হয়ে প্রকাশ পায় তখন তার অসামান্ততা আমাকে 
বিস্মিত করে। মনে ছুঃখ হয় যে বাহক ও আন্তরিক নান। 
বাধার ভিতর দিয়ে তূমি মানুষ হয়েছ, অন্তরে বাহিরে প্রতিহত 
হয়েছে তোমার সহজ শক্তি। 

বাংলাদেশে গন্পগুচ্ছ পড়বার যুগের অবসান হয়নি কি? 
অল্পবয়সে বাংল। দেশের পল্লীপ্রকৃতির সঙ্গে যখন আমার চোখে 
চোখে পরিচয় হয়েছিল তখন প্রতিদিন আমার মনে যে আনন্দের 
ধারা উদ্বারিত হয়েছিল তাই সহজে প্রবাহিত হয়েছিল এ 
নিরলক্কুত সরল গল্পগুলির ভিতর দিয়ে। আমার নিজের 
বিশ্বাস এই আনন্দবিস্মিত দৃষ্টির ভিতর দিয়ে বাংলাদেশকে 
দেখা আমাদের সাহিত্যে আর কোথাও নেই। বাংল পল্লীর 
সেই অন্তরঙ্গ আতিথ্য থেকে সরে এসেছি তাই সাহিত্যের সেই 
শ্যামচ্ছায়াশীতল নিভৃত বীথিকার ভিতর দিয়ে আমার বর্তমান 
মোটরচলা কলম আর কোনে! দিন চলতেই পারবে না। 


৩৩৩ 


আবার যদি শিলাইদহে বাসা উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে 
মন হয় তো আবার সেই স্সিগ্ধ সরলতার মধ্যে প্রবেশ করতে 
পারবে । কিন্ত আর সময় নেই। অতএব ইতি ১১।৬।৩৭ 


দাদা 


৯৫ 


১৭ জুলাই ১৯৩৭ 


৫৫ 


কল্যাণীয়ান্ত্ 

শরীরটা নিঃসন্দেহভাবেই অস্থুস্থ | কিছুতে মন লাগাতে বা 
হাত লাগাতে পারচি নে। 

তোমার কবিতা ইতিপূর্বেব কখনো কখনো! যা পেয়েছিলুম 
সেগুলি ছিল বেশ তাজা__ এখন যে কবিত! পাঠিয়েছ সে যেন 
সাবেক কালের দাগ ধরা । বোধ হচ্চে তোমার দেহ মনে 
অবসাদ নেমেচে তাই পুরানো কালের গুঞ্জনধ্বনিই চলচে। 
জোর করে লিখে কোনো লাভ নেই-_ খাঁটি লেখা খাটি হীরের 
মতো! খনির মধ্যে হঠাৎ হাতে ঠেকে । 

শ্রাবণের শ্যামমৃত্তি দ্য,দলোকে ভূলোকে প্রকাশ পেয়েছে। 
নিরন্তর ধারাবষণ চলেছে-_ ছিন্ন মেঘের ভিতর থেকে মাঝে 
মাঝে রোদ্ছুর নেমে এসে দিকে দিকে সবুজের উপর সোনালির 
তুলি বুলিয়ে দিচ্চে-_ পাখীগুলো ডাকচে আর লাফাচ্ছে, তারা 
খুসি হয়েছে এই কথাটা! প্রকাশ কর! ছাড়া আর কোনো জরুরি 


৩৩৪ 


কাজ তাদের হাতে নেই। বেল! যাচ্চে শরংশেষের স্বল্পজল 
নদীটির মতো, মন্থর স্রোতে । দক্ষিণের বারান্দায় বাগানের 
সামনে চুপ করে বসে আছি-_ কাজ করবার প্রয়োজন ছিল 
কিন্তু উৎসাহ নেই । 

0810809 দা]0০: 6স্র» (বায়োকেমিক, অর্শের একটা! 
ভালো ওষুধ। রাত্রে হোমিয়োপ্যাথী নাক্স্‌ ভমিকা ৩০ এবং 
প্রাতে সালফর ৩০ষ উপকারে লাগতে পারে। 

বাংলায় বায়োকেমিক বই আছে এই পধ্যন্ত জানি এর বেশি 
আর জানা নেই । মহেশ ভট্টাচাধ্যের দোকানে খোঁজ করলেই 
পাবে। ইতি ১ শ্রাবণ ১৩৪৪ 

দাদ] 


স্১৬ 
২* [? ১৯ ] জুলাই ১৯৩৭ 
ঙ শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াসু 

কাল মঙ্গলবারে কলকাতার উপকণ্ঠে যাত্রা! করচি। প্রশান্ত 
তার পূর্বের বাসা পরিহার করে তার থেকে আরো কিছু দূরে 
বেলঘরিয়ায় একটা বাগানবাড়িতে উঠেছেন। তার নাম গুপ্ত- 
নিবাস । জন্ধান করে সেখানে আসা হয় তো। তোমার অসাধ্য 
হবে-_- অতএব আশ করব না। জ্বরনাঁশক দ্বারিক গুপ্তদের 
বাড়ি-__ ভাড়। দ্রিয়েছেন। দিন তিন চার থাকব, কাজ আছে-_ 


৩৩৫ 


কাজ এখানেও আছে-_ তাই শীঘ্র চলে আসতে হবে। ইতি 
৪ [? ৩] শ্রাবণ ১৩৪৪ 
দাদ! 


বেলঘরিয়া 
গুপ্তনিবাস 
কল্যাণীয়ান্ত্ 
আচ্ছা, শনিবারে জোড়াসাকোয় যাঁব। সেখানে মধ্যান্ 
ভোজন সেরে অপরাছের দিকে ফিরে আসব । ইতি বুহস্পতি- 
বার 
দাদ! 


১৮ 


৪ অগস্ট, ১৯৩৭ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত্ 

উদ্ধশ্বাসে পালিয়ে এসেছি আমার নিভৃত কুলায়ে। সহরে 
চারদিকে জাল পাতা-_ পালাবার জে। নেই। বেলঘরিয়া অপেক্ষা- 
কৃত দুর্গম কিন্তু জনসমাগমের বাধ! হচ্ছিল না। সকাল থেকে 
সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অবকাশ নীরন্ হয়ে উঠেছিল । ইতিমধ্যে টাউন- 
হলে বক্ততাও দিতে হোলো, উপলক্ষ্যটি এমন যে না! বলতে 


পারলুম না। 


এখানে বৃষ্টিবিহীন শ্রাবণ আকাশে মেঘ বিছিয়ে বসে 
আছে | ক্ষণে ক্ষণে অত্যন্ত কুপণ ধনীর ঘরে কাঙালি বিদায়ের 
মতো! ছিটে ফৌটা বুষ্টি হয়ে যাচ্চে। চাষীদের আশা দিচ্চে কিন্ত 
আশ! পূর্ণ করচে না । ইতি ১৯ শ্রাবণ ১৩৪৪ 


দাদা 


২১৯ 
১৩ অগস্ট ১৯৩৭ 


ঙ শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্ত 

তমি আমার পতিসর ভ্রমণবৃত্তাস্ত শুনতে চেয়েছ। আমার 
কলম অলস এবং নান! কাজে ব্যস্ত। আমার যে অন্ুচর ছিল 
সে বিস্তারিত বিবরণ লিখবে এমন জনশ্রুতি শুনতে পাই। 
আমার লেখবার একট] মস্ত বাধা আমার অসাধারণ বিস্মারণ- 
শক্তি এবং নিজের কথ! আলোচনা সম্বন্ধে বিতৃষ্ণ। মোটের 
উপর বলবার বিষয় এই যে খুব ভালে! লেগেছিল-_ প্রথম 
থেকেই আমার প্রজাদের ভালোবেসেছি তারা তা ভুলতে পারে 
না, আমার প্রতিও তাদের ভালোবাস! অকৃত্রিম ও গভীর । 
দীর্ঘকাল বিচ্ছেদের পর তারি প্রচুর পরিচয় পেয়ে যত খুশি 
হয়েছি এমন খুশি আমার রচনা সম্বন্ধে সমালোচকদের স্ততি- 
বাদে হই নে। 

শ্রাবণ এবার তার আদিপব্বে কৃপণতা করেছিল, বিদায় 


৯0২২ ৩৩৭ 


কালের কাছাকাছি পূর্ধবন্রটি পুরণের চেষ্টা করচে। আগামী 
রবিবারে এখানে বর্ধামঙ্গলের দিন স্থির করেছি কিন্তু উপর- 
ওয়ালার! যদি এরাবতে চড়ে বধামঙ্গলে লেগে যান তাহলে 
আমাদের হার মানতে হবে। ব্যস্ত আছি। ইতি ২৮ শ্রাবণ 
১৩৪৪ 

দাদা 


৫€ 


কল্যাণীয়াস্থু 
এবার তুমি যথারীতি আরোগ্যচর্চায় মন দিয়েছ শুনে খুশি 
হলুম। শরীরটা! বিধাতার দুর্লভ দান, ওটাকে অবহেলা করবার 
অধিকার কারো নেই-_ লক্ষ টাকা দাম দিয়ে দি ওকে কিনতে 
হোত তবু ওর উপযুক্ত মূল্য হোতো না। বিশ্বজগতের সঙ্গে এ তো 
যোগের সেতু, যতদিন বেঁচে আছো ওটাকে মেরামতে রাখবে 
স্থট্টিকর্তার সঙ্গে এই সর্ত আছে ।__- আমি কাল সকালের গাড়িতে 
জোড়ান্সীকোয় যাচ্ছি দিনট1 কাটিয়ে রাত্রে অন্তর্ধান করব 
বেলঘরিয়াতে । তোমার রুগ্ন দেহ এবং অন্যান্য অসুবিধা নিয়ে 
আসবার চেষ্টা কোরো না। এবারে আমি ৮৯ দিন থাকব । 
ব্যস্ত থাকতে হবে । ইতি 
দাদ। 


৩৩৮ 


-২১ 


৬ অক্টোবর ১৯৩৭ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

তোমাকে বিশ্বপরিচয় ও ছড়ার ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে 
বলে খবর পেয়েছি । বোধ হচ্চে পাও নি না পাবার কারণ 
তোমাদের ঠিকানা বদলের খবর বিশ্বভারতী আপিসে জানাও 
নি। সে ছুটে বই পুরোনে। ঠিকানা থেকে উদ্ধার করতে ["না?] 


পারো তাহলে যথাস্থানে আর দুখানা দাবী করে আনিয়ে 
নিয়ো। 


শরীরে এখন বিশেষ কোনো উপদ্রব নেই__ শান্ত হয়ে বসে 
আছি। ইতি ৬।১০।৪৭ 


দাদ] 


শান্তিনিকেতন 
কল্যানীয়াস্তু 
স্রস্থ হয়েছি কিন্তু দেহ নিশ্টেষ্টপ্রায়। আশীবাদ। ইতি 


দাদা 


৩৩৯ 


২২৩ 


৯ অক্টোবর ১৯৩৭ 


৫০ 


কল্যাণীয়াম্থ 

বারান্দায় বসে সন্ধ্যার সময় সুনন্দা স্ধাকান্ত ও ক্ষিতিমোহন 
বাবুর স্ত্রীকে মুখে মুখে বানিয়ে একট। দীর্ঘ গল্প শুনিয়ে তার পরে 
বাদল! বাতাস ঠাণ্ডা বোধ হওয়াতে ঘরে গিয়ে কেদারাতে বসে- 
ছিলুম, শরীরে কোনো প্রকার কষ্ট বোধ করি নি, অন্তত মানে 
নেই ; কখন মৃচ্ছা এসে আক্রমণ করল কিছুই জানি নে। রাত 
নটার সময় সুধাকান্ত আমার খবর নিতে এসে আবিক্গীর করলে 
আমার অচেতন দশা । পঞ্চাশ ঘন্টা কেটেছে অজ্ঞান অবস্তায়, 
কোনো রকম কষ্টের স্মৃতি মনে নেই । ইতিমধ্যে ভাক্তার এসে 
রক্ত নিয়েছে, গ্রকোজ শরীরে চালনা করেছে, কিন্তু আমার 
কোনো ক্লেশবোধ ছিল না। জ্ঞান যখন ফিরে আসছিল তখন 
চৈতান্যের আবিল অবস্থায় ডাক্তারদের কৃত উপদ্রবের কোনে। 
অর্থ বুঝতে পারছিলুম না। দীর্ঘকাল পরে মন মোহমুক্ত হোলো । 
তোমরা দূরে বসে আমার রোগের যেসব বিভীষিকা কল্পন। 
করছিলে তার সমস্তই অমূলক । রোগের আকস্মিক আবির্ভাব 
হয় তো সাংঘাতিক, কিন্ত তার আদি আন্তে মধ্যে লেশমাত্র ছঃখ 
আমি পাই নি। 

একটা সুবিধা এই হয়েছে সংসারের হাজার রকম দাবী 
থেকে নিৃতি নিতে পেরেছি। প্রতিদিন চিঠি আসচে বাঁকে 
বাঁকে, কেউ চায় প্রবন্ধ, কেউ চাঁয় তাদের কোনো আধ্যবসায়ের 


৩৪০ 


জন্যে আশীর্বাণী, কেউ চায় তার মেয়ের জন্যে নাম, কেউ চায় 
কোনো দার্শনিক বা সাহিত্যিক জমস্তার সছুত্তর-_- তা ছাড়া 
রচনার অভিমত, কারো আর ত্বর সয় না। আগে হলে 
নিরুত্তরে বসে থাকতে ছুঃখ বোধ হত, এখন কর্তব্যবুদ্ধিতে 
পীড়া দেয় না, কিছুকীলের জন্যে মৃত্যুদূত এসে আমার ছুটির 
পাওন! পাকা করে গিয়েছে । মনে করচি আমার ভীক্মপৰ শেষ 
হোলে অনবরত তুচ্ছ দাবীর শরববণ আজ থেকে ব্যর্থ 
হবে__ স্ব্গীরোহণ পৰ পধ্যন্ত এই রকমই যেন চলে এই আমি 
কামনা করচি। 
তুমি বুথা কল্পনায় মনকে গীড়িত করেছিলে সেই জন্যে আসল 
খবরটা! তোমাকে জানালুম ৷ ইতি ৯১০।৩৭ 
দাদা 


স্*৪ 


[ ১৩ অক্টোবর ১৯৩৭ ] 


পি 


“গুপ্তনিবাস” 
বেলঘরিয়। 
২৪ পরগণা 


কল্যাণীয়ান্ত 

শরীরটার আরো মেরামৎ দরকার আছে তাই টেনে এনেছে 
কলকাতার দিকে । আছি সেই বেলঘরিয়ার বাগানে__ গৃহ- 
স্বামীরা তাদের বাঁস। ছেড়ে চলে গিয়েছেন গিরিডিতে । মাস- 


৩০১ 


খানেক লাগবে নিষ্কৃতি পেতে । ইতিমধ্যে কাল তোমার কাছ 
থেকে পরিধেয় উপহার পেয়ে আনন্দিত হয়েছি। ঘনঘোর ঘট 
করে বাদল চলচে-__ এখানে চারদিকের গাছপালার সঙ্গে তার 
সুসঙ্গতি আছে-_ কলকাতার ইট কাঠের দেয়ালগুলোর মধ্যে 
তার সুর নষ্ট হয়, তাল কেটে যায়। ইতি নবমী [ ২৭] আশ্বিন 
১৩৪৪ 


দাদা 


২২৫ 


২৪ অক্টোবর ১৯ ৩৭ 


৫১ৎ 


বেলঘরিয়। 


কল্যাণীয়াস্থ 

আমার শরীর সমান ভাবেই আছে। চিকিৎসা চলচে। 
চিকিৎসার মেয়াদ নবেশ্বরের মাঝামাঝি পধ্যন্ত। জওহরলাল 
কাল দেখা করতে আসবেন মহাতআ্মীজি কবে আসবেন জানি নে। 
তোমাদের ছুঃসময় চলচে এখন বোধ হয় এখানে তাদের দেখতে 
আসা তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না। ইতি ১৪।১০।৩৭ 


দাদা 


৩৪২ 


২২৬ 


২৬ অক্টোবর ১৯৩৭ 


৫৩ 


কল্যাণীয়ান্ত 
শ্রীনিকেতনের তাতের কাপড় তিনখাঁনি তোমাকে পাঠালুম। 
ব্যবহাধ্য বলে গণা হলে খুশি হব । 
তোমার যেদিন সুবিধা হয় আসতে পার। আমি তো 
তোমাকে নিষেধ করি নি। ২৮।১০।৩৭ 
দাদা 


২৬৭ 


৫ নুভম্বর ১৯৩৭ 


কল্যাণীয়ান্ 

আশীবাদীস্বরূপ সাঁমান্যা কিছু দক্ষিণা তোমাকে দিতে ইচ্ছ। 
হোলো । যেমন খুশী ব্যবহার করলে আনন্দিত হব। 

এখনি চলেছি শান্তিনিকেতন অভিমুখে । ইতি ৫১১৩৭ 


দাদা 


৩৪৩ 


২২৮ 
১৪ নভেম্বর ১৯৩৭ 


৫১৫ 


কল্যাণীয়াস্থু 
আশীরাদের স্বরূপ তোমাকে সামান্য কিছু পাঠিয়ে- 
ছিলুম, তাতে তোমার অভাব মোচন হবে এমন অদ্ভুত কথা 
মনে করে দিই নি-_ তুমি খুশি হবে এই ছিল তার উদ্দেশ্য 
কোনো আকারে তার প্রতিদান দেবার চেষ্টা কোরো ন৷ 
আমার শরীরে কোনো উৎপাত উপসর্গ নেই,কিন্ত জডতা আছে । 
মনটা কাজের ক্ষেত্র থেকে পলাতকা। সামান্য কোনে দায় 
উপস্থিত হলেই ভয় লাগে । অথচ সম্পূর্ণ নিরর্থক দিনযাপনও 
অবসাদজনক | ইতি ১৪1১১।৩৭ 
দাদা 


২২৯ 
[ ২৮ নভেম্বর ১৯৩৭ ] 


বেলঘরিয়। 


৫ 


কল্যাণীয়ান্ত 

চিকিংসার জালে আবার আমাকে টেনে এনেছে । শান্তি 
নিকেতনের আকাশে উজ্জ্বল রৌদ্র, আমার ঘরের কাছের 
বাগানে এখনে সেখানে লুকিয়ে লুকিয়ে ছু চারটে করে শিউলি 
ফুটছে, হিমঝুরি-বীথিকায় পুষ্পবৃষ্টি আরম্ভ হয়েছে, প্রাঙ্গণে 
আমার প্রাতরাশের সময় লক্ষ্য করে শালিখগুলে। চঞ্চল হয়ে 


৩৪৪ 


লাফিয়ে বেড়াচ্চে, একটি পাটলবর্ণ গ্রাম্য কুকুর সেও আসে 
প্রসাদপ্রত্যাশায়, থেকে থেকে ইঙ্কুলের ঘণ্টা বাজে, পূরদিগন্তে 
রেলগাড়ি ধূমকেতু উড়িয়ে চলে যায়__ যথেচ্ছ অবকাশের মধ্যে 
আমার আরামকেদারা আশ্রয় করে পড়ে থাকি-__ ভালে লাগে 
না ওখান থেকে সরে আস্তে । এখানে দেহে এক্স্রে প্রয়োগ 
করবে তিনদিন আজ থেকে আরন্ত মঙ্গলবারে সমাধা9_ 
বুধবারে ফিরে যাব যদি কোনো বিদ্ব না ঘটে । ইতি রবিবার 
| ২৮ নভেম্বর ১৯৩৭ ] 

দাদ। 


২৩০ 


২৯ নভেম্বর ১৯৩৭ 


কল্যাণীয়াস্থু 

তোমার পাঠানো ভোগের দ্রব্য পেলুম__ যথাসাধ্য ভোগে 
লাগাব-_ সাধ্যের সীমা বেশিদূর নয়। 

আজ আর খানিক বাদে যেতে হবে ডাক্তারের দরজায়__ 
আলোকবাণ বর্ণ হবে। কাল এই চিকিৎসার পাল! শেষ 
হবে-_ কালই জন্ধ্যার গাড়িতে ফিরব। এখানে মন বসচে না 
শরীরও বিকল আছে-_ কিন্ত বিশেষ কোনো! উপসর্গ নেই। 
আসলে এখানে আমার সবপ্রধান ব্যাধি হচ্ছে নান। দাবী নিয়ে 
সমস্ত দিন লোকের ভিড়। আজ সক্কাল থেকে আরম্ত হয়েছে 
এখন তিনটে-__ এর মধ্যে ফাঁক ছিল না এখন হেলান দিয়ে 
পড়েছি লম্ব। কেদারায়। 


৩৪৫ 


আমার পূর্বের চিঠি হয় তো ইতিমধ্যে পেয়ে থাকবে। ইতি 
২৯।১১/৩৭ 
দাদ] 


৩১ 
৮ ফেঞ্টয়ারি ১৯৩৮ 


ওঁ শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়ান্ত্ 

অবসাদের ছায়াচ্ছন্ন তোমার চিঠিখানি পেয়ে আমি ছুঃখবোধ 
করেছি । আমার বিশ্বাস তোমার এই মানসিক গ্লানি তোমার 
শারীরিক অস্বান্থ্যেরই অন্ুবত্তী। সংসারে সকলেরই ভাগ্যে 
মাঝে মাঝে ছুধোগ ঘটে, অনেক সময়ে অবিবেচনাবশত 
কম্মজালে গ্রন্থি পাকিয়ে তুলি-_- নানা কষ্টের কারণ নিজের 
ভিতরে এবং নিজের বাইরে আছে, এক এক সময়ে স্মস্তট। 
মিলে ব্যাপারখান! জটিল হয়ে ওঠে_ এ সমস্তকেই স্বীকার 
করে নিয়ে নিজের জোরেই নিজেকে সাংসারিক সংকট থেকে 
উদ্ধার করতে হয়-_ উদ্ধার বল্‌্তে বাইরেকার সমস্যাকে সহজ 
করা নয়, নিজের ভিতরে সমস্যার সমাধান করা, আন্তরে ছুঃখের 
ঠোঁকাঠকিতেই আলোককে জালিয়ে তোলা । নিজেকে বুঝিয়ে 
বল্তে হবে এ সমস্তই ক্ষণস্থায়ী কৃহেলিকাঁ, চিরকালের জ্যোতিষ 
আছে দিগন্তে । যদি বলো আমার জোর নেই, দৃষ্টি নেই, আমি 
ছুঃংখকেই মান্তে পারি, ছুঃখের অতীতকে মানবাঁর মতো বীর্ধ্য 


৩৪৩৬ 


পাই নে__ তাহলে কী আর বলব ! বলব ছুঃখ পাবেই, নালিশ 
করে তার অবসান হবে না। 

আমি কোনো রোগের অধিকারে নেই, যে শারীরিক 
অপটুতা৷ সেটা জরাজনিত। তাতে চলাফেরার পথ রোধ করেছে, 
মনের গতি বন্ধ করে নি-__ কখনো বই পড়ি, কখনো লিখি, 
কখনো পরিপূর্ণ নৈক্ষম্ম্য উপভোগ করি। তোমার চিঠি থেকে 
মনে হয় তমি কল্পনা করচ আমি কবিত্বলোকে চিরযৌবনধামে 
মধুপগুঞ্জন্ুখর নববসন্তের দক্ষিণ জমীরণে পুলকিতদেহে শ্প্প- 
বিহ্বল হয়ে থাকি । চারিদিকে তার আভাসও দেখতে পাই 
নে। তোমার এই কল্পনার সত্যরূপ দেখবার জন্ে জন্মান্তরের 
অপেক্ষা করতে হবে, জীবনসায়াহ্কে স্তিমিত দীপালোকে 
আপনার সঙ্গ নিয়ে আপনি আছি একা। ভালোই আছি, 
কোনো দায়িত্ব নেই, রসাভিষিক্ত চতুর্দশপদী কবিতা লেখবার 
দাবীও আসচে ন। কোনোখান থেকে- ঞকেই তো! বলে 
যুক্তি। 

আজ মাঘের আকাশ শ্রাবণের মুখোস পরে আছে। বৃষ্টি 
নেই, কেবল নিবিড় ছায়া, আর ভিজে হাওয়া বইচে চারদিক 
থেকে । স্ষ্যালোকপিপাস্থ্ আমার মন [ *” ] স্বাধিকার প্রমত্ত 
ধাতুর এই অন্যায় ব্যবহার সইতে পারচি নে। 

মধ্যাহ্ন পেরিয়ে যাচ্চে জানলার ধারে আমার কেদারাটা 
আশ্রয় করি গে। ইতি ৮২1৩৮ 

দাদা 


২৩২ 
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৮ 


কল্যাণীয়াস্ু 

কাজে কর্ধে চিন্তায় জড়িত আছি । কলকাতা অভিমুখে 
যেতে হবে পয়লা মার্চে । আশ্রয় নেব বেলঘরিয়ায়। চিকিৎসার 
কিছু অবশেষ আছে। উৎপাত হয় তো চলবে কয়েক সপ্তাহ 
ধরে। তার পরে কিছু দিনের জন্যে আর কোনো নিভৃতে আশ্রয় 
খুঁজে নেব। ইতি ২৩।২/৩৮ 


দাদ! 


৩৩ 


৬ মার্চ ১৯৩৮ 


কল্যাণীয়াস্ু 


৮ই তারিখে এখান থেকে যাত্রা করব | বেলঘরিয়ায় আশ্রয় 
নেব স্থির করেছি । চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছে। দেহখান! 
বেমেরামৎ হয়ে পড়েচে_ চোখে কম দেখচি, কানে কম শুনচি, 
কলম চলচে খুঁড়িয়ে, স্মৃতিশক্তির উপরে প্রদৌষের ছায়া! পড়েছে । 
ইতি ৬।৩/৩৮ 


দাদা 


৩৪৮ 


২৩৪ 


৯ মার্চ, ১৯৩৮ 


৫৩ 


কল্যাণীয়ানু | 

কলকাতার দিকে আমার যাওয়ার বিদ্ব ঘটেছে । কবে যেতে 
পারব তাঁর নিশ্চয়তা নেই । যাতায়াতের ক্লান্তি স্বীকার করতে 
মন এখন অনিচ্ছুক । শান্ত হয়ে বসে নিভৃতে কিছু কাজ 
করতে ইচ্ছ! করি। ডাক্তারের চিকিৎসার চেয়ে বিশ্রাম বেশি 
ফলদায়ক | ইতি ৯।৩1৩৮ | 


দাদা 


৩৫ 


৪ এপ্রিল ১৯৩৮ 


৫১€ 


কল্যাণীয়াস্ 
হঠাৎ আমার দৃষ্টিশক্তির ক্ষীণত! ঘটেছে-_ পড়তে এবং 
লিখতে কষ্ট হয়। এবার সবসম্মতিক্রমে আমার জন্মোৎসবের 
দিনস্থির হয়েছে ১লা বৈশাখে । বীরেন্দ্রকিশোরের কাছ থেকে 
ওঁদের কালিম্পঙের বাড়িটা ব্যবহার করবার সম্মতি নিয়েছি__ 
জীর্ণ দেহ সংস্কারের জন্যে হিমগিরির আতিথ্যের প্রয়োজন ঘটেছে। 

ইতি 8181৩৮ 
দাদ। 


৩৪৯ 


সই ৩৬ 


[ এপ্রিল ১৯৩৮ ] 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 
দেবাৎ তোমার চিঠিতে এইমাত্র তোমার ঠিকানা পাওয়া 
গেল। তোমার জামাতাকে বোলো তিনি যেন অবিলম্বে তার 
শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার একটা সম্পূর্ণ তালিকা জোড়ার্সাকোয় 
শ্রীযুক্ত স্ধাকান্ত রায়চৌধুরীর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন__ যথাস্থানে 
সে পাঠিয়ে দেবে । কাল রাত্রে কালিম্পঙ রওনা হব। কয়দিন 
অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলুম । 
দাদা 


২৩৭ 


[ কালিম্পও ] ৩০ এপ্রিল ১৯৩৮ 


তোৌ€ 


কল্যাণীয়াস্তু 

এখনো পর্ষস্ত কালিম্পঙের ছুর্নামের যোগ্য কোনো লক্ষণ 
দেখি নি। দাজ্জিলিডের চেয়ে ভালো যেহেত শুকনো, তাছাড়া 
ফ্যাসানের ফরমাসে যাদের বেশভূষা চলাফেরা তাদের ভিড় 
এখানে বন্ধ শিলঙের মতো! এখানে কেরাণী ও কেরাণীদের 
প্রভৃদের আবহাওয়া নেই। ভারতশীসনকর্তাদের রথচক্রের 
ঘর্থর এখানে কানে আসে না। যাকিছু সমস্ত বেশ পরিমিত 


৩৫০ 


মাত্রার, অশন বসন মেলে না যে তা নয় কিন্তু বড়ো দরের 
বাবুগিরির মাপে নয়। সব চেয়ে যেটা উল্লেখযোগ্য সে হচ্ছে 
এখানকার এই বাড়ি, ঘরে ঘরে প্রচুর আলোর সংস্থান, বড়ো 
বড়ে৷ দরজা! জানলা আকাশের বিরুদ্ধে দরোয়ানি করে না 
বাইরে তাকালেই দেখতে পাই গিরিরাজের সঙ্গে মেঘমালার 
নিরন্তর মিলনলীলা চল্চে। এ রকম উদার ব্যবস্থার বাঁড়ি 
পাহাড়ে সচরাচর মেলে না। আমার মতো শান্তিপ্রিয় আলোক- 
পিপাসু মানুষের পক্ষে অত্যন্ত উপযুক্ত, ছুর্লভ বললেই হয়। 
বিশেষত এখানে গৃহন্বামীদের আগমনের বিশেষ তাগিদ নেই 
শুনেছি অতএব তাদের ভোগের অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত 
করচি নে জেনে মন স্বস্তিতে আছে। কেসরবাইয়ের সম্বন্ধে 
অত্যন্ত অত্য,ক্তি শুনেছিলুম বলে সেদিন সঙ্গীত উপভোগের কিছু 
ব্যাঘাত হয়েছিল। তুমি যদি নেপথ্যে সেখানে থেকে যেতে 
তাহলে তোমার ব! অন্য কারো পরিতাপের কোনোই কারণ 
ঘটত না। তুমি মনে মনে কাল্পনিক বিদ্ব রচনা করে অকারণে 
কুষ্ঠিত হয়ে পড়ো বলে অনাবশ্যক দুঃখ বোধ করো । সেদিন 
গৃহন্থামিনী অতান্ত ব্যস্ত ছিলেন কিন্তু তুমি তো তার তিলমাত্র 
পথ রোধ কর নি। ইতি ১৭ বৈশাখ ১৩৪৫ 


দাদা 


৩৫১ 


২৩৮ 


| মংপু ] ২২ মে ১৯৩৮ 


৫9 


কল্যাণীয়ান্তু 

কালিম্পঙের কাছাকাছি এক জায়গায় সিনকোন। চাষের 
ক্ষেত্র । সেখানে মৈত্রেয়ীর স্বামী কাজ করেন । মৈত্রেয়ীর সনি্বন্ধ 
অনুরোধে এখানে এসেছি-_ ফেরবার পথ সে আটক করে 
আছে। বিধাতাও তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন-_ অকালে ঘোর 
বৃষ্টি নেমেছে__ এ অবস্থায় পাহাড়িয়া পথে চলনের চেয়ে পতনের 
আশাঙ্কাই বেশি । তবে কিন! জায়গাটি ভালো, বাড়িটি 
প্রাসাদবৎ, ত! ছাড়। যত্বের সীমা নেই । উচ্চতায় এ জায়গাটা 
দাজ্জিলিঙের কাছে মাথা হেট করবার নয়। কালিম্পঙ কিছু 
রুক্ষ, তার বাইরের পাহাড় শ্রেণী পর্জন্যদেবের পথ আটকে 
আছে। 


৮২1৪৫ 
দাদ। 
ভ্রমক্রমে ছুটে! কার্ডের পিঠে এই ছোটো লিপিখানি 
লিখিত হয়েছে। রিক্তস্থান ভরাট করে দেবার মতো এশ্বর্ষ 
কলমের নেই । 
বৌমা এখানে নেই-_ আমার সংসারের অধিকাংশই আছে 
কালিম্পঙে। আমার শরীর পূর্বের চেয়ে ভালোই। 


৩৫২ 


২৩৯ 


[ কালিম্পউ ] ৯ জুন ১৯৩৮ 


৫১৫ 


কল্যাণীয়াস্ 

কয়েকদিন মংপু পাহাড়ে ছিলুম। আজ ফিরচি কালিম্পং। 

জায়গাটি মনোরম-__ সম্মুখের পাহাড়গুলির ব্যবহার অন্ত- 
রঙ্গের মত _ অর্থাৎ তারা দূর আকাশের থেকে নিয্নতলবাসীদের 
প্রতি ভ্রাকুটিবিক্ষেপ করে না-- তাদের উদার নীল বক্ষ প্রসারিত 
করে কাছাকাছি ঘিরে এসেছে-- ন্বীকার করচে তারাও 
পৃথিবীতে আমাদের প্রতিবেশী । এখানে ফুলের অভ্যর্থনাও 
চারদিকে অজস্র । দৃষ্টির ভোজ পেতে দেওয়া হয়েছে চারদিকে-_ 
ছুঃখ এই দৃষ্টির উপর আবরণ নামচে | এট! বিধাতার অকৃতজ্ঞতা 
কেনন। আমার চক্ষু সেই শিশুকাল থেকে তার স্ষ্টিকে যে রকম 
বাহবা দিয়ে এসেছে এমন কোনো রূপকার কাঁরো কাছ থেকে 
পায় নি__ তার রসরচনার এমন রসজ্ঞ সহজে মিলবে না সে 
আমি গৰ করেই বলতে পারি। বোধ হচ্চে সব চেয়ে বড়ো 
পর্দাখান। পড়বার আগে ইয়ে নিচ্চেন। চোখের কুয়াষা ঠেলে 
কিছু কিছু লিখতে হচ্চে, কেনন। কলমের অপযশ সইতে পারব 
না অনেকদিন সে আমার ভাবের বাহনগিরি করে আসচে 
এখনো প্রস্তুত আছে-_ কিন্তু যে মন চালনা করেন সেই সারথির 
তেমন উৎসাহ নেই-_ তিনি বলেন ওস্তাঁদরা ঠিক সময় যেমন 
চলতে জানে ঠিক জায়গায় তেমনি থামতেও ভোলে না এই 


৯॥২৩ ৩৫৩ 


যথোচিত থামাটাও স্যট্টিরও অঙ্গ । আজ এই পর্যন্ত ইতি 


৯1৬।৩৮ 


দাদা 


চিঠিতে ঠিকানা কেন লেখনা-_ আমার স্মৃতিশক্তি কি 
আমার দৃষ্টিশক্তির চেয়ে প্রবল। 


২৪০ 


হ জুলাই ১৯৩৮ 
গৌরীপুর ভবন 
কালিম্পঙ 


কল্যাণীয়াস্ত 
কাগজে পড়েছ যে সবসাধারণের কাছে আমি বিশ্রাম 
কামনায় ছুটি চেয়েছি__. তার থেকে তৃমি কল্পনা করেছ যে এই 
সাধারণের মধ্যে তৃমিও আছ । ভুমি জাঁনো তোমার চিঠি পড়তে 
আমার ভালই লাগে, যদিও আজকাল চিঠি লিখতে আমার 
কলম সরে না_ সেটা আমার দুর্বলতা । যাই হোক কাল্পনিক 
আশঙ্কায় আমার প্রতি অন্যায় বিচার করে আমাকে ছুঃখ দিয়ো 
না, এবং নিজের মনকে বৃথা পীড়িত কোরো না আমার প্রতি 
বিশ্বাস রেখো! | ইতি ২৭1৩৮ 
দাদ! 


৩৫৪ 


২৪৯ 


[ শান্তিনিকেতন ] ৮ ভুলাই ১৯৩৮ 


৫ৎ 


কল্যা ণীয়াস্থ 

নাতনী না হয়ে নাতির জন্মসংবাদে কিঞ্চিৎ ক্ষু্ন হবার কারণ 
ঘটল কিন্তু নাতবৌয়ের সমাগমপ্রত্যাশায় মনকে সান্তনা দেব। 
নবাগত এবং প্রন্ততির পরে আমার আশীবাদ রইল । 

অনেকদিন পরে শান্তিনিকেতনে ফিরে এসে দেখি সবুজ 
সমুদ্রের ঢেউগুলি মেঘমেছুর আকাশের দিকে সকৃতজ্ঞ জয়ধ্বনি 
বিস্তার করে নিস্তব্ধ হয়ে আছে। চোখ জুড়িয়ে গেল। কর্তব্য 
থেকে ছুটি নিয়েছি__- এখানকার বনভূমির সঙ্গে নিভৃতে মোকা- 
বিলার কোনো বিদ্বু ঘটবে না। 

জুলাই মাসের অন্তে নগাধিরাজের অতিথিশালায় আমার 
নিমন্থণ রয়েছে, সেখানে শরৎ খতু যাপন করব। পারি যদি, 
সপুত্রক বাসন্তীকে যাবার সময় সশরীরে আশীবাদ জানিয়ে 
যাব । ইতি ৮৭৩৮ 


দাঁদা 


৩৫৫ 


২৪২ 


[* শান্তিনিকেতন ] ৮ অগস্ট, ১৯৩৮ 


৫১৭ 


কল্যাণীয়ান্তু 
ভালই আছি কিন্তু অত্যন্ত ব্যস্ত আছি-_ একটুও বিশ্রামের 
সময় পাই নে। যে বিষয়টা লেখার ভার নিয়েছি সেটা কঠিন__ 
ও দিকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার জন্যে তাগিদ আসচে। তা 
ছাড়া এখানকারও অনেক দায়িত্ব আছে। অথচ মনটা ছুটি 
পাঁবার জন্যে উৎসুক হয়ে আছে । কিশোরকাস্ত নামটা আমি 
ময়মনসিংহ আভিজাত্যের মাপেই কল্পনা করেছিলুম__ ভালো 
লেগেছে শুনে খুশি হলুম। কবিতাটি আমার নিজেরই শুভ- 
কামনার ছাদে রচিত । ইতি ৮৮৩৮ 
দাদা 


২৪৩ 


১৫ মেপ্টেম্বর ১৯৩৮ 


৫১৫ 


কল্যাণীয়া্ত 

চিঠিপত্র কখনো লিখি কখনো লিখি নে। যখন লিখি সেটা 
দৈবাৎপাওয়া অবকাঁশে দৈবাতের খেয়ালে । ছুটি নিয়েছি-_ 
কিন্ত ছুটির মধ্যেও কখনো! কখনো ফাক এসে পড়ে। তবু 
মোটের উপরে মনটা বিমুখ, কলমটা সত্যাগ্রহের ভয় দেখায় । 


৩৫৬ 


দেহযন্ত্রে যে তন্তগুলোকে বলে 76£59৪১ সেতারের আল্গ। 
তারের মতো! তারা বাজতে চায় না, যদি বাঁজে সুরে বাজে না। 
অল্প কোনো! ধাকাতেই আমার মনটাকে সরিয়ে দেয় আমার 
কর্মশালা থেকে । জানালার বাইরে ফুটেছে দোলনটাপা তার 
গন্ধে যখন ভরে ওঠে ঘরের আকাশ, তখন সেটা একটা ছুতো 
হয় মনকে বাইরে দৌড় করাতে । ইস্পাহানি গোলাপের গুচ্ছ 
এনে মালী সাজিয়ে দেয় ফুলদানিতে,__ তখনি আবধখানী লেখা 
লাইনের দায়িত্ব কাটিয়ে কলম ফেলে দিয়ে বল্তে ইচ্ছে করে, 
তবে থাক্‌। আমার ছায়াদেহী দলবল জুটেছে শরতের শিশির- 
ভজা! ঘাসের উপরে, ছেঁড়া মেঘের আলো ঢালা আকাশে +- 
আমার কাধের উপর চড়িয়ে দেওয়া সামাজিক মানুষটাকে 
কোনোমতে ফেলে দিয়ে এই ফুরফুরে হাওয়ায় মেঠো রাস্তা বেয়ে 
বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে পালামৌ কিম্বা ছুম্কা' জেলার দিকে । 
কিন্তু এ সমস্তই নিছক কবিত্ব। ছেলেবেলার আমাকে গণ্ডি 
এঁকে জানালার কাছে বসিয়ে রাখত-_ আজও সেই গণ্ডি 
জানল একট আছে, তার ভিতর দিয়ে দেখতে পাই অগমকে 
অধরাকে-- মনে মনে ভাবি গণ্ডি ভাঙবার সময় আসচে, 
তার পরে ?-_ জানি নে। ইতি ১৫।৯।৩৮ 

দাদ! 


৩৫৭ 


8৪ 


৬ অক্টোবর ১৯৩৮ 


কল্যাণীয়াস্ম 

এবার কালিম্পঙ অভিমুখে চল্লুম । গরমে তাড়৷ করেছে । 
শনিবারে কলকাতায় পৌছব-_ সোমবারে যাত্রা করব | নড়বাঁর 
ইচ্ছা ছিল না-_ কিন্তু স্থির থাকতে দিল না। ইতি ৬।১০।৩৮ 


দাদ! 


২৪৫ 


৫ নভেম্বর ১৯৩৮ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 
তোমার পুরাতন জন্মতিথির অস্তর হতে উদ্ভিন্ন হয়ে উঠুক 
নব জন্ম, নব সফলতার প্রত্যাশা বহন করে নিয়ে এই কামনা 
করি । ইতি ৫১১৩৮ 
শুভার্থা 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৩৫৮ 


২৪৬ 


| নভেম্বর-ডিসেম্বর ১৯৩৮ ] 


৫5 


কল্যাণীয়ান্তু 
তোমার চিঠির একট উত্তর দিতে ভুলে গিয়েছিলুম ৷ তত্ব- 
বোধিনীতে ধর্ম সম্বন্ধে তুমি যেমন ইচ্ছা আলোচনা করতে পার 
তাতে ক্ষতি নেই । সম্পাদক প্রেমানন্দ সঙ্জন সচ্চরিত্র এবং 
ধর্মনিষ্ঠ। ইতি 
দাদ! 


আমার কাছে নাচনের চিঠি এসেছিল সজনীর দৌত্যে-_ 
উত্তর গেছে তারই হাত দিয়ে-_ :. ০12 তত 
৮. ২৭ _ শনিবারের চিঠিতে ওট! 
বের হবে ভাবিনি_ মনে করেছিলুম ওট। অলকায় বেরবে । 


২৪৭ 


১৬ ডিসেম্বর ১৯৩৮ 


শীম্তিনিকেতন 


৫৪ 


কল্যাণীয়াস্তু 

সমস্ত পৃথিবীর হাওয়া আবতিত আবিল। মানবজাতির 
উপরে একটা অভিশাপ নেবেছে। এর মধ্যে আমাদের ব্যক্তিগত 
জীবনেও যদি অশান্তির ঘূরিপাক দেখা দেয় তবে সেটাকে মেনে 


৩৫৯ 


নিতে হয়। তুমি বলচ সম্প্রতি তোমার জীবনে প্রশংসাও চলচে 
গালমন্দও জাগচে, এটা খুব খারাপ লক্ষণ নয়, এই অভিজ্ঞতার 
মধ্যেই আটাত্তর বছর কাটিয়ে দিয়েছি-_ শেষ পর্যন্তই কাটবে__ 
নিরবচ্ছিন্ন সমাদর সত্য হয় না । ** **" র হাতে আমার লাঞ্ছনা 
কম হয় নি-__ আবার কিছু দিনের জন্যে বাঁক ফিরেছে, সম্মানের 
আঁশ! হয়েছে__ কিন্তু তাকে স্থায়ী বলে নিশ্চিন্ত হওয়া মূঢ়তা। 
নাই বা হোলো স্থায়ী। ভিতরের সত্য যদি মুখের কথার 
একটু গরম হাওয়া লাগলেই শুকিয়ে পড়ে, তাহলে সে সত্যই 
নয়, তার মরাই সদগতি। সংসার আমাদের প্রএয় দেবে না 
আমরাও পদে পদে মাথা হেট করে তাকে সেলাম ঠুকব না। 
দেখচ তো ইংলগ্ড আজকাল শান্তিলাভের ছুরাশায় ধুলোয় 
লুটিয়ে পড়ে কী রকম ল্যাজ নাড়চে__ এই অপমানিত শান্তি 
টিকতে পারে না অথচ অপমানটা টিকবে। ভীরুর মত 
অসম্মীনের সঙ্গে রফা করতে চাইব না, তাকে অগ্রাহ্থা 
করলেই সম্মান অক্ষুপ্ন থাকবে ।-_ এই মাত্র দেখা গেল যাকে 
বিশ্বাস করেছি আদর করেছি সে বিনা কারণে 
ফণা ধরে উঠেছে তাই বলে মনসার পুজো দিতে ছুটব না 
আমি যে শিবের পুজারি তার জটার পাকে পাকে সাপ থাকে 
বীধা, কণ্ঠে মিলিয়ে যায় বিষ । ইতি ১৬।১২।৩৮ 

দাদা 


৩৬০৩ 


২৪৮ 


২৭ ডিসেম্বর ১৯৩৮ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 
সংসারে যাকে আমরা চেয়ে পাই নে সেও আমাদের ব্যর্থ 
করে না। না চাইতে পারাই হচ্ছে মরুভূমির ধর্ম। সে মেঘের 
কাছ থেকে বধণ চাইতে জানে নি, সে ভূমিমাতার কাছ থেকে 
কোনো বর প্রার্থনা করলে না এতেই তার যথার্থ অকিঞ্চনতা, 
বেদনাহীন তার দেন্ত | জীবনে আমরা অনেক জিনিষ পাই আর 
অনেক জিনিষ চাই-_ দুইয়েতেই রক্ষা করে আমাদের চিত্ত- 
ক্ষেত্রের সরসতা । নিজের অতীতের দিকে চেয়ে দেখলে দেখতে 
পাই কত প্রতিহত আকাজ্ষার সুতীব্র বেদনা । বুঝতে পারি 
চাইবার প্রবল শক্তিতে প্রাণ আপনাকে সপ্রমাণ করেছে__ 
আতত্মস্থষ্টির মধ্যে এই অভিজ্ঞতার আগুন একটা প্রধান উপকরণ । 
তোমার প্রাণের বীণায় তোমার ভাগ্য যদি মীড় দিয়ে থাকে 
কঠিন টানে, তাতে সমগ্র রাগিণীকেই পূর্ণতা দিয়েছে । আসলে 
ভাগাহীন সে-ই ভাগ্য যাকে নিরবচ্ছিন্ন প্রশ্রয় দিয়ে অসম্মান 
করে। তার! অদৃষ্টের পুতুলনাচের পুতুল, যেমন সব আমাদের 
রাজাবাহাছুরের দল । আমি তে। জানি কতবার আমি প্রাণান্তিক 
দুঃখ পেয়েছি কিন্ত সেই আমার সৌভাগ্য । বিধাতা আমাকে 
অনেক দিয়েছেন কিন্ত আদর দেননি ইতি ২০।১২৩৮ 
দাদা 


৩৬১ 


২৪৭ 


৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯ 


৫€ 


কল্যাণীয়াস্ত 
ছুই একদিনের জন্বে শরীরটা] বিগড়িয়ে ছিল সেই খবরটা 
অতিকৃত হয়ে খবরের কাগজে প্রচারিত হয়েছিল। এখন ভাল 
আছি। কিন্ত কলকাতায় যাবার মতো অবস্থা নয় । বসন্তকাল 
এইখানেই কাটবে__ গাছপালার মধ্যে সেই অভ্যর্থনারই 
আয়োজন চলচে | ইতি ৪81২।৩৯ 
দাদ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ু 
তুমি আমাকে ভয় কোরো না। মানুষের মনের সম্বন্ধে 
আমার অন্ত্দষ্টি আছে । আমি নিঞ্মভাবে অবিচার করতে 
পারি নে। ভালোমন্দ নিয়ে সাজে অনেক কৃত্রিম বুলির চলন 
আছে আমার কাছে তার মূল্য নেই । যা সত্য আমি তাকে 
স্বীকার করি । 
দাদ! 


৩৬৭ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 

কিছু কাল থেকে হাটে হাটে তোমার সাওতালি সাজের 
অলঙ্কার খৌজাখুজি করচি- এখনো ফল পাই নি। ণই 
পৌষের মেলার সময় এই গয়নার আমদানি হয়। যাই হোক 
সন্ধান ছাড়ি নি।-_ বসম্ত উৎসব কাছে এসেছে-_ তাই নিয়ে 
সুরতরঙ্গে খেয়। দিতে হচ্চে__ কাজটা ভাঁলো৷ লাগে বলে অবকাশ 
খোওয়ানোর অভিযোগে নালিশ করচি নে। 

আমাকে উড়িষ্যার বর্তমান শাসন দরবার নিমন্ত্রণ করেছে। 
মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তছুপলক্ষ্যে পুরীতে যাব স্থির 
হয়েছে । 


দাদা 


নি 
২৩ মার্চ, ১৯৩৯ 
ও 

কল্যাণীয়ান্ত্ 

আমার ধারাবাহিক ব্যস্ততা ও নিরবচ্ছিন্ন ক্লান্তির ভার 
বেড়েই চলেছে । আগামী ১লা এপ্রেলে যাৰ কলকাতায়। 
থাকব ছু চার দিন-__ হয় তো! তোমার সঙ্গে দেখা হতে পারে। 
ইতি ২৩৩৩৯ 


দাদা 


৩৬৩ 


হ৫৩ 


২৭ এপ্রিল ১৯৩৯ 


৫৫ 


পুরী 
কল্যাণীয়াস্ু 

জ্বর নিয়ে এসেছিলুম তার আক্রমণ ছেড়েছে । কিন্ত 
অকর্মণ্য হয়ে পড়ে আছি কেদারাঁয়, দেখচি টেউয়ের লুটোপুটি, 
শুনচি তাঁর কলধ্বনি, প্রবল হাওয়া দিন রাত্রিকে দিচ্চে নাড়া । 
মাঝে মাঝে ঘুমের আবেশ দেহটার উপরে গড়িয়ে যাচ্চে। 
কর্তব্যের দ্রিগন্তসীমা বহুদূরে ফিকে হয়ে দেখা যাচ্চে । এখান 
থেকে নড়ব কবে জানি নে। ১৭।৪1৩৯ 
দাদ! 


১৮ মে ১৯৩৯ 
1] 91001)099 

108৮9211105 

(7/0 1)1 11. 5210 


কল্যাণীয়াস্সু 

তোমার পীড়িত কল্পনা তোমাকে বল পরিমাণে অনাবশ্যক 
কষ্ট দেয়। তোমার সম্বন্ধে আমি যদি উদাসীন হতে পারতুম 
তাহলে আমি তোমার এই বেদনাকে উপেক্ষা করতুম-_ কিন্ত 
জানি আমার সংসর্গে এসে তোমার জীবনের পুরাতন আশ্রয় 


৩৬৪ 


বিচলিত হয়ে গেছে তাতেই তোমাকে দোলাযিত করে ছ্‌ঃখ 
দিচ্চে। তোমার সংস্কার তোমাকে আকড়ে আছে অথচ তোমার 
স্বাভাবিক বুদ্ধি তাঁকে সম্পূর্ণ স্বীকার করতে পারচে না। কিন্ত 
তাই বলে বুদ্ধিকে অন্ধ করে রাখায় শ্রেয় নেই। বুদ্ধি যিনি 
দিয়েছেন তাকে অমান্য করলেই তবে ধর্মপালন সম্ভব হবে এমন 
বিশ্বাস মনুুষ্যোচিত নয়। তাই তোমার দ্বিধান্দোলিত মনের 
গীড়ায় ছুঃখ বোধ করি কিন্তু পরিতাঁপ করি নে। অন্যান্থ আনেক 
মেয়ের মতো তোমার চরিত্রে মুটতাই যদি মুখ্য হোত তাহলে 
তারি গতে চোখ বুজে থেকে সংশয়ের আঘাত থেকে নিরাপদ 
থাকতে-_ কিন্ত তোমার দীর্ঘকালের অন্ধ অভ্যাস সন্বেও ধর্মমুতা 
তোমাকে অভিভূত করতে পারে নি এই দেখেই আমি তোমাকে 
শ্রদ্ধা করেছি এবং আমার চিন্ত! থেকে তোমাকে দূরে রাখতে 
পারি নি। পৃথিবীতে অনেক লোকেরই সংস্রবে আসতে হয় 
কিন্তু যথার্থ পরিচয় হয় অন্ন লোকেরই সঙ্গে | তুমি এসেছ আমার 
পরিচয়মগুলের মধ্যে_ তাতে তুমি সুখ না পেতে পারো কিন্তু 
সে তোমার আত্মসম্মানের কারণ হয়েছে ।- আমার শরীর 
পাহাড়ে এসে ভালোই হয়েছে । ৪ জ্যৈঠ ১৩৪৬ 


দাদা 


৩৬৫ 


৫৫ 


২৯ জুলাই ১৯৩৯ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 
ব্যস্ত এবং ক্লান্ত আছি । মাঝে কলকাতায় যাবার জন্তাবন৷ 
ঘটেছিল কিন্তু ফাড়া কেটে গেল। শীঘ্র যাবার আশঙ্কা নেই। 
বর্ধামঙ্গলের তালিম দিতে হচ্চে__ তাছাড়া ডাকঘরের রিহর্পল | 
আজ শ্রীবণের দিন ঘন মেঘে অন্ধকার-_ সকাল থেকে নিরন্তর 
বৃষ্টি পড়চে__ কোনো কাজের দায়িত্ব না থাকলে এই রকম দিন 
অত্যন্ত মনোরম | ইতি ২৯।৭।৩৯ 
দাদা 


৫৬ 


২ অগহু, ১৯৩৯ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্ 

তোমার ফলের অধ্য পেরে ভোগে লাগিয়েছি। 

আকাশে শ্রাবণের ধার। অবারিত-_ এখানকার ডাউ। জমি 
পর্বন্ত জলে থৈ থে করচে-_ পুকুরের মাছ পালিয়েছে ধানের 
ক্ষেতে, সেখানেও মানুষের হাতে কৈ মাগুর মাছের নিষ্কৃতি নেই। 
জোর হাওয়া দিয়েছে । গাছে গাছে মহা দোৌলাছুলি-- কোপাই 
নদী ছুই তীর ডুবিয়ে দিয়ে খরধারায় ছুটে চলেচে। 


৩৬৬ 


বামঙ্গল অভ্যাসের পাল! চলেচে। ছুই একটা করে নতুন 
গানের স্যষ্টি এগোচ্ছে। 

কলকাতায় হয় তো ২০শে নাগাদ একবার যেতে বাধ্য হব। 
এখান থেকে নড়তে ইচ্ছে করে না। ইতি ২৮৩৯ 


দাদ! 


৫৭ 


৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ 


৫29 


কল্যাণীয়ান্ু 

আমার রচনাবলী আমি প্রকাশ করচি নে। বিশ্বভারতীর 
প্রকাশকসংঘ এর উদ্যোক্তা, সম্পূর্ণ এর কর্তত তাদের হাতে । 
এই বই ঘদি তুমি রাখতে ইচ্ছা করে! রেখো-_ রাখবার পক্ষে 
যদি তোমার মনে কোনো দ্বিধা থকে আমি তা জানতেও পারব 
না। ইতি ৪1৯৩৯ 


দাদা 


দু 
৯ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ 
ও 
কল্যাণীয়াস্থু 
সাহিত্যের ছেলেখেলার সময় উত্তীর্ণ হলে সেটাকে চির- 
স্মরণীয় করে রাখা শোভন নয়, যেমন শোভন হবে না বিশ 


৩৬৭ 


পঁচিশ বছর বয়সে তোমার নাচনের চোখের কাজল আর পায়ের 
ঘুঙুর লোপ করে ন! দেওয়া । বয়স হোলে ছেলেবেলা নেপথ্যে 
পড়ে যাঁয় এইটেই নিয়ম-_ খোকার পরিচয়ে বয়স্ককে লাঞ্ছিত 
কর! তার প্রতি সদ্যবহার নয়। তুমি যাকে আদি রচনা বলো 
তাঁর পিছনেও আদি আছে যেমন 

কয়ে আঁকার কা 

খয়ে আকার খা 

গয়ে ইকার গি 

ঘয়ে ইকার ঘি 
এর ছন্দ ঠিক আছে অর্থেও দোষ হয় নি-- কিন্ত এর 'প্রতিভা- 
বান লেখক শিশুকে সাহিত্যসভায় কলরব করতে দেখলে 
মা সরম্ঘতীরও নারীহ্গদর বিগলিত হবে না, আমি তো এই রকম 
অনুমান করি । ইতি ৯1৯৩৯ 

দাদা 


২৫৯ 


২৪ অক্টোবর ১৯৩৯ 


ডং 
রঃ 
৮৭ 


কল্যাণীয়াস্তু 
বিজয়ার আশীবাদ গ্রহণ কর। এখানকার দিন এখন 
মেঘাচ্ছন্ন কুহেলিকাবগুষ্টিত নিবিড় শীতে আড়ষ্টপ্রায় | 
অস্ত্র্যম্পশ্য হয়ে নিষ্কর্ধা বসে আছি । ইতি ২৪।১০।৩৯ 
দাদ! 


৩৬৮ 


২৬৩ 


[? ডিসেম্বর ১৯৩৯ ] 


ঙঁ শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্ু 

জ্বরে পড়েছিলুম সেরে উঠেছি। 

তোমার লেখার যে অংশ আমাকে পাঠিয়েছিলে তা প্রধানত 
বর্ণনা । তার মধ্যে আখ্যানের ঠিক আরম্ত হয় নি। এর মধ্যে 
এমন কিছু নেই যাতে কোনো ব্যক্তি কিম্বা কোনো শ্রেণী আঘাত 
পেতে পারে। 

আমাকে মেদিনীপুরে অপহরণ করে নিয়ে যাবার চক্রান্ত 
হচ্ছে সে জন্যে চিন্তিত আছি। টানাটানি সহ করার যোগ্য 
বয়স পেরিয়ে গেছি-_ কিন্তু দোহাই পেড়ে লাভ নেই । ইতি 

দাঁদা 


১১৩১ 
১৫ জানুয়ারি ১৯৪০ 


শান্তিনিকেতন 


ঠ« 


কল্যাণীয়াস্ত 

ব্যস্ততায় জীর্ণতায় মিলে আমার সমস্ত অবকাঁশ অবরুদ্ধ 
করে রেখেছে__ উদ্বৃত্ত সময়ের ছোটো বড়ো কাঁজগুলি সব 
স্থগিদ আছে । কর্তব্যের পরিধি সঙ্কীর্ণ হয়ে এসেছে । সাঁধারণ- 
ভাবে স্বাস্থ্যের কোনো হানি হয় নি কিন্তু বার্ধক্যের ভার 


৯|২৪ ৩৬৯ 


নিয়তই বহন করতে হয় এই অবস্থায় আমার প্রধান আশ্রয় 
ঘরের কোণ ও পা ছড়ানো কেদারা, এবং যথাসম্ভব নৈষম্য 
আমাকে একটু নড়ালেই বোঝা যায় আমার রথের স্প্রিউ 
ভাঙা । ইতি ১ মাঘ ১৩৪৬ 

দাদ 


৬ 


১৫ মার ১৯৪০ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াম্্ 

যে ক্লান্তি ও কর্মজালে জড়িত হয়ে আছি সেটা স্থায়ী হয়েই 
রইল এর মধ্যে কোনে পরিবর্তনের বৈচিত্র্য আশা করতে পারি 
নে। পা চলেছে অন্তিমের ঢালু রাস্তায় সমস্তটাই গড়ানে । 

প্রমথর অনুরোধ রক্ষা করতে পারো যদি ভালোই হবে-- 
গল্প একটা লিখে।_ কিন্ত ময়মনসিংহের যে ভাষার নমুনা দিয়েছ 
সে ভাষা অবলম্বন করলে সাংঘাতিক হবে। তোমার যে গদ্গদ- 
ভাষী প্রণয়ীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে বিরহাবস্থায় আছো তাকে 
তোমার গল্পের প্রধান নায়ক করলে লেখা সরস ও করুণ হতে 
পারবে । ইতি ১৫৩৪০ 

দাদ! 


৩৭৩ 


৬৩ 


২১ মারি ১৯৪০ 


৫ 


কল্যাণীয়াম্ত্ 
আমার চোখের অবস্থা এখন এমন ঘে তোমার গল্পটি ভূমি 
যে লিপিতে লিখেছ সে পড়ে ওঠা আমায় পক্ষে অসাধ্য না হোক্‌ 
ছুঃসাধ্য বটেই । তবু আধা অন্ধের মতো হাতড়ে হাতড়ে যতটা 
পড়েছি তাতে বুঝতে পারলুম যে রকম লেখায় তোমার সহজ 
দক্ষতা আছে এই গলে সেটা প্রকাশ পেয়েছে, ভালোই হবে। 
ইতিমধ্যে আমি যথেষ্ট অসুস্থ হয়েছিলুম, তবু কাজ চালিয়ে 
চলেছি, কাউকে জানতে দিই নে কলনটা ধকচে। ইতি ২১।৩।৪০ 
দাদা 


৩৭১ 


২৬৪ 


১০ মে ১৯৪১ 


কল্যাণীয়ান্ত্। 
জরার প্রান্তসীমায় আমি আজ শয্যাগত। তোমরা যে অধ্্য 
আজ আমাকে পাঠিয়েছ মুখে উপযুক্ত সমাদর প্রকাশ করতে 
পারলেম না। আনন্দ অন্তরে অব্যক্ত রইল। নিশ্চিত জানি 
তোমার কাছে তা অগোচর থাকবে না। ভুমি আমার আশীবাদ- 
পূর্ণ অভিনন্দন গ্রহণ করো । ইতি ১০৫৪১ 
শুভাকাজ্্ষী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরীকে লিখিত 


পত্রসংখ্যা ১২ 


১৩ নভেম্বর ১৯২৭ 


৫১€ 


শীস্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়েষু 
তুমি আমাকে দেখ তে চাও তার তো কোনো বাধা নেই-_ 
এক বাধা আমি প্রায়ই কলকাতায় থাকি নে-_ কখন যাঁব তাও 
নিশ্চিত বলতে পারি নে। তা হোক্‌ কলকাতায় গেলে হয় ত 
খবর পাবে__ তখন অসঙ্কোচে আমার কাছে এসো । ইতি ২৭ 
কাণ্তিক ১৩৩৪ 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


চি 


২৩ জুন ১৯৩২ 


ও শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়েষু 
ক্লান্তির বেড়া দেওয়া কাজের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছি। 
একটু ফাক পাচ্চি নে। যদি পেতুম তাহলে আর কিছু না হোক, 


৩৭৫ 


এখানকার আকাশের সঙ্গে আর প্রাস্তরের যে দিগন্তে দিগান্তে 
শ্যামল সরসতার সম্ভাষণ চল্‌্চে সেই দিকে মন দ্রিতে পারতুম । 
সমুদ্রের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ে তোমার তীর্ঘদর্শন সার্থক হোক। 
একদিন এ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে পুরীর বেলাতটে লিখে- 
ছিলুম “হে আদিজননী সিন্ধু ।” তখন বয়স অল্প ছিল। তোমার 
কবিত্ব চলচে তোমার সেতারে । তোমরা ভালো আছ শুনে 
খুসি হলুম । তোমরা সকলে আমার আশীর্বাদ গ্রহণ করো । 
ইতি ৯ আষাঢ ১৩৩৯ 


শুভানুধ্যায়ী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
৩০ অক্টোবর ১৯৩২ 
ওঁ খড়দহ 
কল্যাণীয়েষু 
তোমার তোল ফোটোগ্রাফটি ভালোই হয়েছে । সই করে 
দিলেম। 


আমার আশীর্বাদ গ্রহণ করো । ইতি ১৩ কাত্তিক ১৩৩৯ 


শুভাকাতঙ্গী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৩৭৬ 


৪ 


১৩ মে ১৯৩৩ 
ও (9167) 17,091) 

1)8০19811700 
কল্যাণীয়েঘু 


তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম । 

একটা কথা তোমাকে বলি, যেখানে আমার চরিত্রের সীমা 
তাঁকে অতিক্রম করে আমাকে যদি বাড়িয়ে দেখো তাতে ফল 
পাবে না। ছুধে জল ঢেলে তার পরিমাণ বাড়িয়ে তুললে যে 
তার থেকে পুষ্টি বেশি পাওয়া যায় তানয়। আমার যাকিছু 
পরিচয় তা নিঃশেষ হয়েছে আমার লেখায় | তার চেয়ে বেশি 
কিছু খুঁজতে যাওয়া বিডম্বনা। আমাদের দেশে প্রায় দেখতে 
পাই আমাদের একান্ত ইচ্ছার তাগিদে আমরা মানুষকে বাড়িয়ে 
বানিয়ে তুলি। আমাদের দেশে অনেক গুরুর উদ্ভব এই তাড়নায়। 
একান্ত প্রয়োজন বোধ করি বলেই চোখ বুজে নিজেকে ঠকাই | 
কোনোমতে একজন কাউকে আশ্রয় করতে পারলে বেঁচে যাই 
এই জন্যে বাংলাদেশে গুরুর বাজারদর এত বেশি বেড়ে গেছে । 

আমি মানুষটা স্বভাবতই একা । নিজে নিজে চিন্তা করি, 
চেষ্টা করি, লেখায় প্রকাশ করি কিন্তু কাউকে চালনা করতে 
পারি নে। ছেলেবেলা থেকে সমাজ থেকে দূরস্থ বাড়িতে বাস 
করে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার আমার পক্ষে যথেষ্ট সহজ হয় নি। 
লোকে মনে করে সে আমার অহঙ্কার। কিন্তু আমার উপায় 
নেই। 


যদি নিজগুণে তুমি আমার কাছে আস্তে পার, তবে 
আমার যতটুকু দেবার আছে সে হয় তো দিতে পারি। জানি নে 
সে তোমার প্রয়োজনের পক্ষে ঠিক জিনিষ কিস্বা যথেষ্ট কিনা । 
কিন্ত অগ্রসর হয়ে কিছু দিতে পারি এমন শক্তিই আমার নেই । 
আমার উপর নির্ভর কোরো না, আমি তোমার অগ্রবত্তী নই, 
আমি তোমাদের সমান পথের পথিক | 
তুমি আমার আন্তরিক আশীর্বাদ গ্রহণ করো । ইতি 
৩০ বৈশাখ ১৩৪০ 
শুভাকাতক্ষী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৫ 


[ শান্তিনিকেতন ] ১২ অক্টোবর ১৯৩৩ 


কল্যাণীয়েষু 

তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম__ আমার সব্বাস্তঃ- 
করণের আনীব্বাদ গ্রহণ করো । অনেকদিন তোমাকে দেখি নি। 
কলকাতার আবর্ত থেকে দূরে গিয়ে নিশ্চয় শান্তিতে আছ। 
আমাদের এখানে অনেক কাল পরে এতদিনে শরতের প্রসন্ন শ্রী 
প্রকাশ পেয়েছে । বাতাসে শিশিরের আভাস এবং আলোতে 
কাচা সোনার রঙ লেগেচে। মেঘের দল আকাশে ঘোরাফেরা 
করে কিন্ত শ্রাবণের কালো উদ্দি খুলে ফেলেছে__ দিগন্তের ধারে 


৩৭৮ 


ধারে জড় হয়ে অলসভাবে রোদ পোয়াচ্চে। ওদের এই নৈর্ময 
যোগ দিতে ইচ্ছে করে__ ছুটি মঞ্জুর হয় না। 
আমার ঘরের প্রাঙ্গণে শিউলি মালতী এবং চামেলির উৎসব 
জমে উঠেছে__ এখানে যেন শাদা আবিরের হোলি খেলা । 
এখনো পথের ধারে ও প্রান্তরে কাশগুচ্ছ দেখ দেয় নি- 
অকাল বর্ষার আড়ম্বরে চিনতে পারে নি তাদের সময় এসেছে । 
এগুজ সাঁহেব এসেচেন--চিঠি বন্ধ করি। ইতি ১২ আক্টোবর 
১৯৩৩) 
শুভানুধ্যায়ী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৬ 


২১ মে ১৯৩3 


পানাদৌর 
সিংহল 


৫6 


কল্যাণীয়েষু 

রবীন্দ্রজয়ন্তীর বিবরণ পেলুম। আমার পরে তোমাদের 
শ্রদ্ধা অকৃত্রিম, তার পরিচয় পেলে খুসি না হয়ে থাকতে পারি 
নে, কিন্ত মনে মনে, এই রকম প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে, আমি সঙ্কোচ 
বোধ করি। বোধ হয় তার একটা কারণ, আমি স্মভাবত 
আনুষ্ঠানিক নই, আমি আপনার মধ্যে অত্যন্ত একল। | ছেলে- 
বেলা আমি জঙ্গ পাই নি, সেই অভ্যাস আমার মন্মগত হয়ে 


৩৭৯ 


গেছে, সেই জন্যে আমি ন্বয়ং সশরীরে অনুপস্থিত থাকলেও 
আমাকে কোনো উপলক্ষ্যে জনতার মধ্যে আলোচনার বিষয় 
করলে কুষ্িত হই। বোধ হয় আর একটা কারণ এই যে 
এ রকম অনুষ্ঠানকে অনেকখানি অবাস্তব দিয়ে পূর্ণ করতে হয় । 
আমাকে শ্রদ্ধা ধারা করেন তাদের সংখ্যা পরিমিত, ধারা করেন 
না বহুল পরিমাণে তাদের দিয়ে সভা ভরাট করতে না পারলে 
আসর জমে না। 

বয়স আমার ৭৩ পেরোলো । এত দিন ধরে বাহির থেকে 
নিজের সম্বন্ধে ভালো মন্দ অনেক শুনেচি_ নিজের মধ্যেও 
ভালো মন্দর ছন্দ যথেষ্ঠ আছে। বয়স যখন অল্প ছিল তখন 
স্বভাবতই নিজের সম্বন্ধে একট! গুৎস্ুক্য ছিল, এখন ক্লান্তি এসেচে, 
এখন নিজেকে নিয়ে তোলাপাড়। করতে আর ভালো লাগে 
না-_ এখন চুপচাপ করে ছায়ালোকখচিত তরুবীথিকায় মুণ্ময়ী 
পৃথিবীর আতিথ্য ভোগ করতে ইচ্ছে করে । আমি কবি কি 
অকবি ভালোলোক কি মন্দলোক কী হবে সেই বিচার বিতর্কের 
উত্তেজনায়-_ নানা ভুলের মধ্যে ভালোর মধ্যে দিয়ে আমার 
কাজ তো৷ শেষ করেছি-_- এখন চল্লুম নেপথ্যে হাততালির 
শব্দটা! অনাবশ্যক বোধ হয়। কন্মের শেষ দণ্ড পুরস্কার দেবে 
ভাবীকাল, তখন তো উপস্থিত থাকবো না-_ তার পূর্বেব থেকেই 
যত দূর সম্ভব নিরাসক্ত হতে পারাই ভালো । আমার কাজের 
মধ্যে যেটুকু অংশ মহাকাল দক্ষিণ হাতে ভুলে নেবেন সে তারি 
মর্জি, তা নিয়ে আমার আর কোনো কর্তব্য নেই, ভিড়ের লোকের 
নিন্দা প্রশংসারই বা মূল্য কতটুকু ? বেঁচে থাকৃতে যে কয়জনের 


৩৮৩ 


কাছ থেকে সত্যকার শ্রদ্ধা ভালোবাঁসা পেয়েছি তাদেরই দান 
নিলেম বুকে তুলে বাকি থাক্‌ পড়ে। আমার আশীবরবাদ 
জেনো । ২১ মে ১৯৩৪ 
শুভার্থী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


ণ 


২৫ অটোবর ১৯৩৪ 


আভিয়াঁর 
মাদ্রাজ 


৫০« 


কল্যাণীয়েষু 

আমার বিজয়ার আশীর্বাদ গ্রহণ করো । মাদ্রাজে এসে 
অবধি অভিবাদন প্রত্যভিবাদন বক্তৃতা প্রভৃতি চলচে। লোকের 
ভিড়ে পরিবেষ্টিত হয়ে আছি । অভিমন্ুর মনের ভাব কতকটা 
আন্দাজ করতে পারি। অক্টোবরের শেষ পধ্যন্ত এখানকার 
পাল! চল্বে। এখন পুজোর ছুটি, কিন্ত আমার ছুটি সম্পূর্ণ 
তলিয়ে গেছে এই আবর্তের মধ্যে । ইতি ১৫ অক্টোবর ১৯৩৪ 


শুভাকাজ্্ী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৮ 
৯ অক্টোবর ১৯৩৫ 
ও শান্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়েষু 

তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম । তোমার মামা এসে- 
ছিলেন শান্তিনিকেতনে খুব আসর জমিয়েছিলেন-__ তার 
বক্তুতা সকলের ভালো লেগেছিল । 

তুমি আমি উভয়েই যখন কলকাতায় সম্মিলিত হব সেই 
সুযোগে তোমার সেতার শুনতে পাব এই আশা রইল | 

যন্্রসঙ্গীত শেখাতে পারে এমন কোনো লোকের সন্ধান 
তোমার আছে? যন্ত্রের অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে মাদকের অভ্যাস 
থাকলে চলবে না। 

আমার শরীর প্রায় অচল অবস্থায় আছে। ইতি ৯১ আশ্বিন 
১৩৪২ 

শুভাথা 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


নি 


২৬ অক্টোবর ১৯৩৬ 


৫৯৫ 


কল্যাণীয়েষু 
তোমর! উভয়ে আমার বিজয়ার আশীব্বাদ গ্রহণ কোরো, 
বাসম্তীকেও জানিয়ে | 


৩৮২ 


শরীর অত্যন্ত উৎগীড়িত হওয়াতে তাড়াতাড়ি পালিয়ে 
এসেছি । নানা লোকের নানাবিধ দাবী আমাকে আক্রমণ 
করেছিল। তোমার সেতার শোনবার জন্যে সবুর করতে 
পারলুম না। কিন্তু কালোহায়ং নিরবধিঃ ভবিষ্যতের সীমা 
নেই । ইতি ২৬ অক্টোবর ১৯৩৬ 
শুভার্ধা 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


২৩ ডিসেম্বর ১৯৩৭ 
ও 

কল্যাণীয়েষু 

তোমার চিঠিখানি পাড়ে খুশি হলুম। ধন্মের যে দিকটা 
বিশুদ্ধভাবে আধ্যাত্মিক, সেখানে ধন্ম জ্প্রতিষ্ঠ। যে দিক 
প্রাকৃতিক সে দিকে ইতিহাস বা বিজ্ঞানের বিচার চলবেই । 
যেখানে খুষ্ট ভক্তের খুষ্ট সেখানে তিনি তাঁর আধ্যাত্মিক সম্পদে 
মহীয়ান, সেখানে বিজ্ঞানের অধিকার নেই-_ কিন্তু যেখানে 
জেরুসালেমে তার জন্মকথা কীন্তিত হয়েছে সেখানে তার 
জন্মবিবরণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানের বিচার মান্ব, মান্লেও তাকে খবব 
কর! হয় না। বুদ্ধ জন্বন্ধেও সেই একই কথা ; বুদ্ধ যে পূজনীয় 
তাঁর কারণ এ নয় যে তার ইতিহাম অতিপ্রাকৃত, তার কারণ 
তার চরিত্রমহিমা অলোকসামীন্য | ভগবদগীতায় শ্রীকষ্ণের 
মহাবাণী মহীয়সী, ইতিহাস যদি বলে ব্যাধের হাতে তার 


৩৮৩ 


মৃত্যু হয়েছিল তাতে কিছু আসে যায় না। আধ্যাত্মিক গৌরব 
আত্মায়, আধিদৈহিকে নয়। খুষ্ট সমুদ্দের উপর দিয়ে হেঁটে 
গিয়েছিলেন বিজ্ঞান এ কথা অস্বীকার করলেই যদি ভক্তের ভক্তি 
কুগ্র হয় তবে সে ভক্তি ছেলেমানুষী। আধুনিক কালে রামকুষঃ 
পরমহংসকে ভক্তেরা ভগবানের অবতার বলে ধরে নিয়েছেন, 
তাই বলে তার জন্ম ও মুত্যঘটনা এবং তার প্রতিদিনের দেহ- 
যাত্রায় অলৌকিকত্ব আরোপ করতেই হবে এমন কোনো কথা 
নেই । বিশ্বের স্থ্টিকর্তী স্বয়ং ভক্তের আবদার রক্ষা করতে বা 
বিপদ থেকে রক্ষা করতে হঠাৎ বারে! ঘণ্টার দিনকে আঠারো 
ঘণ্টা করেছেন বা করতে পারেন বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে এ 
কথা হেসে উড়িয়ে দিতে পারি কিন্তু তাতে ঈশ্বরকে হেসে 
উড়িয়ে দেওয়া হয় না। ছেলে ভুলিয়ে যে সব ভক্তের ভক্তি 
উদ্রেক করতে হয় তাদের ভক্তির কোনো মূল্য নেই। 
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞীনকে মান্লে ভক্তিকে খবব কর! হয় না 
তার কারণ এই যে সেখানে বিজ্ঞীনেই ঈশ্বরের প্রকাশন সব- 
শক্তিমান আপনার প্রকাশের আপনি প্রতিবাদ করতে পারেন 
না, যেমন আত্মহত্যা! করা তার সাধ্যের অতীত। বিজ্ঞান ও 
ইতিহাসের যাথার্থ্য মানা তারই যাথার্ধা মানার অঙ্গ__ বিজ্ঞান- 
বিরোধিতা নাস্তিকতা, কারণ স্বয়ং ঈশ্বরের স্যষ্টি বৈজ্ঞানিক-_ 
বিভ্ঞানেই তার লীলা, অবৈজ্ঞানিক ছেলেমানুষধীতে নয় । ইতি 
৮ পৌষ ১৩৪৪ 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৩৮৪ 


১2 €049৩৩ 4852 ও ০94২১ ৮০৮৬ ১6৬৩ ৪৯ 4০৮৮ 

৮৮০ 54০658744৬8 4৮8৮ ৩১ 2৯৮৩ 445০১-/৬৯১ 

2৮ 4285 15)2 4১৩ 2৮০৩) 9০০৩৪ 481% ০৮৪ 
২2/১৪/১/৪/836) ৮০০৮ ৮ ০8/৮2/৬৪০০ 2458 

লট 2০48৮ 4৫০৮ ৩546৫ ৮৪০১ ৯০০০৩ 
(০ ৫৪০৮ -45/49 ৫৮১৪ 24 ৪:১৯ 
/4৩458 ৩০৬/০ ৪০6 ১৪ ০ 18493) 

বা লাস 

4 ু ও 


৫ রি 


“১538 "4৩43 11 455 ০৩৪ 
সাআদএএাএ৩৩এ। এ ০০৮০), 2) 2 রি লৈ 
চ৬০০ 6৮৩ মি? তর ১৯৮৫ ১৪) 9 5 


১544০9/৬7 49১2৮ 892 4৪৮১৪) ২৪৪) ৮৮8৫2 49) 14458 ১৩২ 
, /০/$৩/-৯5৭3 ০৬8৩ 38৬ 5056 ০০9৬-4০-৯৬ ৪ বত 
৯১/ ২৮৯৩০ 4৩৪৪৮ 4০/০৯/১০৪১ 4৫৮৪7৮৮০৬০০ ১৬৯ 
১৮৫০১০০৩ ৯২৪১৯৫৪১১০১) ৬৩৪ 4০০-৮৯-০৪৯১-০/০/০০ 89৪ 
“৯৪৯৯৮ ২2০) 1 ২)৩১০৬৯ 4৬০০০ ৭৩ ঢা ০১৪ 857৯-/45৬১05০8৮ 
২%১/৮০০4৯/০ ৯১০৮-০৪-৪৬ ৮ ৯৬০৫০-১৪ ০৪ ১৯৩ ৯তা 
:৪)5/45/ ৯) 4১০ ০০০ ১১৬১দ 4১/০৯3)2)৩ 24৮ পাত 
১২৬০6১৩০165) 44-4১-৯১২৪ 84 ৬০০৪১৮৮২৯১৯ 
০০৯০০০৪৮428 ৫০৯০১১৬ ৫১২৭ ৬ -৮৬৪ ৩%৮৫1১ 
০৯৫৪৮ ৮4০৮ 4৮১৫৩ ৩৮//০৪/০ 1444 ১০১০০ $৬৬/ ০০৬১ 
4৬২১-৮৬-০৫ 4৪৮০ ১২৮১৮১৩১৪৬ ০১৬৯ ৩৬৬৯৪ 
৮/054০0০৬৮০৬০ 14/49৩2/৬515-4525 ৮5৭ ৩৬ ৩৬৬ 


৯০ 


৩০ মার্চ ১৯৪০ 


৫৭ 


কল্যাণীয়েঘু 

অত্যন্ত অসময়ে এসেছিলে । কেবল যে আধঘাটায় উত্তীর্ণ 
হয়েছিলে বলেই সেটা পরিতাপের বিষয় হয়েছিল তা নয়। 
দেশের যত সব পোলিটিকাল জনতার আবর্জনা সূপাকার হয়ে 
জমেছিল - শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তাদের দরদের কোন যোগ 
নেই তারা ছুটির কন্সেশনের ধূলিআবর্তে এখানকার আকাশ 
আবিল করে জুটেছিল, শস্তায় কৌতুহল মেটাবার জন্যে । 

আজকাল মাঝে মাঝে বৈকালিক ছুর্গহ আমার দেহ আশ্রয় 
করে। সেদিন ঘটল তাই-_ ব্যাপারটা গুরুতর নয়। রক্তের 
তাপ একশোর প্রান্তে এসে উকি মেরে যায় কিন্তু দুর্বলতা 
চাপিয়ে রাখে । এই সব উপদ্রবে কাজে অত্যন্ত বিতৃষ্ণ ধরে 
যায়। তাই ভাবচি পয়ল! বৈশাখের অনুষ্ঠান চুকিয়ে দিয়ে 
গিরিরাজের আশ্রয় নেব। 

তোমাদের সঙ্গে একট! কথা নিষ্পত্তি করে নিতে চাই-__ 
কোনো একটা শান্ত সময়ে শান্তিনিকেতনের পরিচয় নিয়ে 
যেয়ো । 

ইতিমধ্যে একজন মুসলমান অতিথি এখানে এসেছিলেন 
তিনি এখানকার সম্বন্ধে তন্ন তন্ন আলোচনা করে একটি সুন্দর 
প্রবন্ধ লিখে পাঠিয়েছেন। পড়ে খুশি হয়েছি। কখন তিনি 
এমন সর্বাঙ্গীণ পরিচয় নেবার অবকাশ পেলেন জানি নে। 


৯২৫ ৩৮৫ 


তোমরা উভয়ে আমার আশীর্বাদ গ্রহণ করো। ইতি 
৩০।৩।৪ ০ 
শুভার্থা 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


১২ 
[ ১০ মে ১৯৪০ ] 


কালিম্পড 


কল্যাণীয়েষু 
শরীর ক্রান্ত, মন ক্রিষ্ট। তোমরা আমার আশীর্বাদ গ্রহণ 
কর। ইতি ১৭ [২৭] বৈশাখ ১৩৪৭ 
স্লেহা বন্ধা 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


শ্রীমতী বাসম্তীদেবীকে ও 
জ্রীনিখিলচন্দ্র বাগচীকে লিখিত 


পত্রসংখ্যা ৩২ ও ১ 


২৭ জুন ১৯৩১ 


দাজ্জিলিং 

কল্যা ণীয়া বাসন্তী 
“জীবনে যত পুজা হল ন1 সারা 
জাঁনি গো জানি তাও হয় নি হারা” 
গানটি আমার তাতে সন্দেহ নেই । এর স্বরলিপি কোথায় 
প্রকাশিত হয়েছে এখান থেকে নিশ্চিত বলতে পারচি নে। 
কলকাতায় ফিরে গিয়ে সন্ধান করে তোমাকে জানাব । আমি 
স্তর রচনা করি, স্রুর ভুলি, স্বরলিপি করতে জানি নে। আমার 
জীবনে যত সুর বেঁধেচি তার অনেকগুলিই হয়েচে হারা যারা 
শিখেচে এবং লিখেচে, আমার প্রয়োজন ঘটলে তাদের কাছ 
থেকেই আমার নিজের গান পুনরায় সংগ্রহ করে নিতে হয়। 
তোমার অনুরোধ শুনে বোধ হচ্চে, সরলিপি থেকে তুমি আপন 
কণ্ঠে গান ভুলে নিতে পারো, সকলে ঠিকমতো পারে ন1। স্রটা 
পাওয়। যায় কিন্তু লয়টা ঠিক ধরা অনেকের পক্ষে কঠিন । 
আমার আশীব্বাদ গ্রহণ কর। ইতি ১২ আষাঢ় ১৩৩৮ 


শুভাঁকাজ্ষী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৩৮৯ 


২ 
৫ জুলাই ১৯৩১ 


৫ৎ 


কল্যাণীয়াস্ত 
বৎসে, তোমার মা আমাকে দাদা বলেন অতএব তুমি যদি 
মামা বলে তাহলে অসঙ্গত হবে না। একদা তোমার বয়সী 
একটি বালিকা আমার পিতৃদত্ত নাম বদলিয়ে দিয়ে নূতন নাম- 
করণ করেছিল কিন্তু আমি যদিও খ্যাতনাম! হবার উপদ্রব সঙ 
করতে বাধ্য হয়েচি তবু বহুনাম1 হবাঁর ইচ্ছে করি নে। তথাপি 
বিশেষ কোনো ডাকনাম তুমি যদি নিজে পছন্দ করে নিতে 
পারো আমি বিনা আপত্তিতে সেটা স্বীকার করে নেব-_ কিন্তু 
শ্রুতিকটু হয় নাযেন। যে নাম নিয়ে সংসারযাত্রা সুরু করে- 
ছিলেম ধরাতলে সেটা একমাত্র আমারি ছিল, আজ ও নামটা 
অত্যন্ত সুলভ হয়ে গেছে__ নামধারীরাও সকলেই যে স্বমামধন্থা 
হয়েছেন তা নয়। সেই জন্য আমার আকাশের মিতার অনুসরণ 
করে রবিঠাকুর নামটা স্বীকার করে নিয়েছি, আমার স্পর্দ! দেখে 
আকাশের রবিঠাকুর প্রচুর হাস্য করেন কিন্তু তাতে প্রসন্নতার 
অভাব লক্ষিত হয় না। আশীর্বাদ গ্রহণ কর । ইতি ১০ আষাঢ় 
১৩৩৮ 
শুভাকাজ্মী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৩৪৯০ 


১ অগস্ট ১৯৩১ , 
ও 

কল্যাণীয়ান্ু 

বসে, তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম । চিঠি লিখতে 
পারেন না বলে তোমার মা যেন কিছুমাত্র উৎকা বোধ না 
করেন। সাধনের পথ সম্বন্ধে আমি অনেক কথা ভেবেছি এবং 
নিজের মনে নিজের কর্তব্য ঠিক করেচি। কিন্তু তোমার মা! 
যে পথ আশ্রয় করে শাস্তি ও আনন্দ পান তার থেকে তাকে 
বিচলিত করার ইচ্ছা আমার মনেও হয় না। সত্যকে যে ভাবে 
স্বীকার করে নিয়েচেন সেটাতে তার স্বভাবের সম্মতি আছে; 
তার থেকে শহ্থলনে তার অপরাধ আছে বলে আশঙ্কা করেন। 
অতএব সত্যকে সেই বিশেষ সীমার মধ্যেই তিনি গ্রহণ করুন, 
তার বাইরে আসতে গেলে হয় তো তাঁর ক্ষতি হতে পারে । যে 
কোনো দিকেই মানবচিত্তের উৎকর্ষ, জ্ঞানে প্রেমে কর্মে, সব 
দিকেই আমাদের মন্দিরের দ্বার ; সব দিক দিয়েই আমাদের অগ্য 
পৌছিয়ে দিতে হবে, নইলে আমাদের মানবাত্মার যিনি অধীশ্বর 
তাকে বঞ্চিত করা হবে-_ সুতরাং সেই সাধনার সঙ্কীর্ণতায় 
নিজেরাই ছুর্গতিগ্রস্ত হব। জ্ঞানকে যদি খর্ব করি, কন্মকে 
যদি পঙ্গু করি, তবে একমাত্র ভক্তিকে বাড়িয়ে তুলে আমাদের 
পরিত্রাণ নেই এ কথা আমি নিশ্চিত জেনেচি, স্থতরাং এ কথা 
আমাকে জানাতেও হবে কিন্ত গুরু হয়ে উঠে কাউকে 
মানাতেই হবে এমন আমার স্বভাব নয়। এক এক সময়ে 
আমার মনে হয় যে আমি পুরুষ বলেই এই সমগ্রমানবচিত্তের 


৩৯১ 


সম্পূর্ণ পূজাকেই সত্য বলে সহজে উপলব্ধি করি। হৃদয়বৃত্তিই 
মেয়েদের স্বভাবে একান্ত প্রবল, এই জন্যে যে সাধনায় আর 
সমস্তকেই তিরস্কৃত করে একমাত্র ভক্তিবৃত্তিরই পরিতৃপ্তিকে বড়ো 
করে তোল। হয় মেয়েদের পক্ষে সেটাই হয় তো সহজ | তাই 
ভাবি মেয়েদের পুজা আরাধনায় ভক্তি ছাড়া মাঁনব প্রকৃতির অন্য 
সমস্ত এশ্বধ্যই যদি বজ্জিত হয় তবে সেটা অগত্যা স্বীকার করে 
নেওয়া ছাঁড়। হয়ত উপায় নেই । কিন্তু মানুষের এই সব এশ্বর্য 
কার দেওয়। ? যিনি দিয়েচেন তার কাছেও কি এর আদর নেই? 
আমাদের দেশে পুজায় বিদেশী ফুল অব্যবহাধ্য, কিন্ত সে ফুল 
ফুটিয়েছেন কে? ভক্তরা যদি তাকে অবমাননা করে তবে সেটা 
পৌছয় কোথা? ঠাকুরকে আমরা যে অলঙ্কার দিই তার 
রত্বগুলি ঠাঁকুরেরই স্থষ্টি ; আমাদের পুজা তীঁকে ভূষণ পরায়, 
সেই ভূষণের রত্বগুলি আমাদের মনে, সে তো একটি রত্ব 
নয়। যত রত্ব সাজাতে পারব ভূষণের মূল্য ত ততই বেশি হবে__ 
অর্থাৎ পূজার ষোড়শোপচার ত ততই পুর্ণ হবে। রামচন্দ্র 
পুজায় একশো! পদ্ম থেকে একটি পদ্ম কম পড়েছিল বলে বিপত্তি 
ঘটেছিল। মানবপ্রকৃতিতেও একশো পদ্ুই আছে, সবগুলিই 
পুজায় লাগে। কে বলবে তার নিরেনববইটাকে বাদ দিলেই 
ভগবানকে খুসি করা হবে? তবে তিনি এত অপব্যয়ের 
আয়োজন করেচেন কেন ?-_ চিঠি লেখার সময় করা আমার 
পক্ষে সহজসাধ্য নয় সেই জন্যে বলে রাখচি চিঠি লিখতে পারি 
বানা পারি তোমার জন্য আশীব্বাদ রইল । ইতি ১৬ শ্রাবণ 


২৩৩৮ 


মামা 
৩৯২ 


রি 


€০9177779 রর 
লেট ০১৮৭৮ নিচ নি 7 ূ 
/1%৫৩. %৮972-4%৭7 ০680. 7৫4 

/2১৮7৮ ৯৯7-৫৪7 ৭7 ৫6৫০+"1 9779 97 

21176৮৮৬706 ০. দিনার বনি 

₹4১3/6 1 রিট 3১76 9৫৮ প478 পির বাগ 
এ 774৮, ৮7), গঠর (৫4 975" ঠিার্তিতা ৫2৯ ৮ 
20445 24শ। সি থে গার শর পণ ৭ 
(1877৩ টা 1৬115 পতি 177) 6447 সপন টব 
24 /1% এন নাউ বিন ৮329 ঠা দে বান্ঠি 
৮ রর তির্ধিতর্নে পর্ণ? £ ৫3 4191৭ ৩07 
সত 1052৩" 971 গেলি 27 
7 ৮০64, 5-98 47773 গরিবের" /১৫-4488 
76%- দিক %৮74773-44% দি? রি কো পর্ন 
5/9019447927216 থো্বি এ 29 বণ, 
গং পন 11879 [চষ্গিপায €ও| ৪4৫ 
ধর এঠ বারি কর 4? 1 পর 
(ন51/1713 পরি রই এ 1ি রি 2৭72 পুরে 
1৮127714585 বর কি 2০ 2 ঠপাদির 84৮৩৯ 
চর দন এর এুভির নথ 46 4৫ পদ 4802 4444 


খুকুচে দেই এই স9/2৭16ঠত ০ রদ 27 দু সক 

চি ঈশা কার্তি চার্ট 46%8৬7-%৭ পঞ্ণ, 
গ£ এন /৮-2৮ 425)4- আর গথথুকেট ভিডি পঞ্ফণগা- 
চাটার গরিভুর্িক০ ঠাপ তেন হর থেধিরপঠিা 
(১৮ £০৮ গর) 28 আহি অেখেদেক 5৮3187271৩৭ 
22257644 গর্ি্ি ৬ 5৫78 
593 ঝট পত90৬৮ 7৫8 :৯৯7.০0))র /র১ 

98 9444 84৮ ভিন্ন এতে /4628. 29. 
ব? 2থ17র দেল 9৫ বাতা ৭ +2৫১% কিছু মে টন 
খলিংছেম কে! রর ৮০১7 77577 ননী চিত গরে১৮ 
8%১৮৮৮- 9 ধান 214৫ টি ৮ গতি 
রণ ্ধী; এ 8748 তক চা পি ৮22 
টেগারলি গাজার মান; (80. 44 টান /৮857077 
গত ধু 9৮৮5৩ রো ৫. এঠিির পুত 01174 
রি ৮৮ গুন পর্ণ ৫ তর রিনার পু .0417)15১৫/%7ক, গ্ি %1- 
87 গিট এনে ভিত 991 গনিত পকা922 47০77%/ 
এছ, গতি পুজা পালি] কএপার গর িকম্রঠ৯ঞএপ 

দিন ৬গরনাকা পু গিক্2 ৫72 )তার্রি ৪ পভ 
এবি বরে বে কে রি ি্ঠ ০৫47779৫740 47০58 
দির) নখ (৮ 674৭ 47% (তেরে 79 গার 27%5 
0-৪9% এনার্নী পে? ঠি ১৯250 717 

2721 


৪ 


১১ অক্টোবর ১৯৩১ 


কল্যাণীয়াস্থ 
বসে, শরীর যে ভালো আছে এমন কথা বল্তে পারি নে। 
অথচ কাজকন্ম করতে হয়। শরীরের উপর জবরদস্তি করেই 
করি। সময়ও পাইনে বিশ্রীমও পাই না। তাই স্থির করেচি 
দাজ্জিলিং যাব। সেখানে আমার বৌমা আছেন এবং নন্দিনী 
নামে একটি নাংনি আছে। তাকে পুপে বলে সবাই ডাঁকে। 
তার বয়স দশ। আমাকে গল্প বলিয়ে খুব খাটিয়ে নেয়। কাল 
তার একখানি চিঠি পেয়েছি-_ আমাকে ডেকে পাঠিয়েচে। 
সুতরাং যেতেই হবে । ইতি ১৪ আশ্বিন ১৩৩৮ 
মামা 


৫ 


১৯ ডিসেম্বর ১৯৩১ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

বৎসে, তোমার মা যে অনেক কথা বানিয়ে বানিয়ে লেখেন 
সে আমিজানি। তোমার সম্বন্ধে অত্যুক্তিগুলি আমি বাদসাদ 
দিয়েই নেব। আমার কথাও তিনি কম বানিয়ে তোলেন নি। 
সে জন্যে মাঝে মাঝে ক্ষমাও চাঁন। কিন্তু তার কোনো প্রয়োজন 


৩৯১৩ 


নেই-__ কেননা! যাদের সাহিত্যিক ধাত, বানিয়ে বলাই তাদের 
ব্যবসা__ আমিও এ কাজ অনেক করেছি। আমার মুদ্ষিল এই, 
তোমার মায়ের হাতে যত সময় তার এক অংশও আমার নেই, 
যদি থাকত তাহলে এ বানিয়ে তোলবার কাজে তাঁর উপরে 
আমিও শোধ তুলতুম। হয় তে! কোনো এক সময়ে আমারও 
দিন আসবে । 
অসম্ভব রকম ব্যস্ত আছি। তুমি বলেই চিঠি লিখলাম । 
তোমার মাকে তো কিছুদিনের মতো নিষ্কৃতি জানিয়ে রেখেচি। 
তোমাঁর মাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করে জানিয়ো, আমার 
জন্মমুহূর্তটা কি। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে একজন ঘুরোপায় গণক 
আমাকে জিজ্ঞাস। করে পাঠিয়েছে । তোমার মা নাড়ী নক্ষত্রের 
খোঁজ খবর রাখেন বলেই এই প্রশ্ন । 
তোমার মাকে একটা খবর জানিয়ো- আমার এক 
প্রদৌহিত্রী তার নিজের স্ষ্ট পদ্ধতিমতো চাপড়ঘণ্ট রেঁধে আমাকে 
খাইয়েচে তার অধিক আর কিছু বলতে ইচ্ছে করি 
নে। আমার ভোজনস্থানে নিশ্চয় শনির দৃষ্টি পড়েচে। ইতি 
৩ পৌষ ১৩৩৮ 
স্রেহা শীর্ববাদক 
শ্রীরবীক্্রনাথ ঠাকুর 


৩৪৯৪ 


ঙ৬ 


[ ডিসেম্বর-জানুয়ারি ১৯৩১-৩২ ] 


৫০১৫ 


কল্যাণীয়াস্ত 
বৎসে, পিঠে পেয়ে খুসি হলুম । আমার জ্বর কাল থেকে 
ছেড়েচে। দুর্বলতা দেহের উপর চেপে বসেচে। বোধ হয় 
এনা দিন খড়দহে গঙ্গার ধারের বাগানে যাব । তুমি আমার 
স্ববান্তঃকরণের আশীব্বাদ জানবে। ইতি পৌষ ১৩৩৮. 
মাম! 


ণ 


৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 
বৎসে তুমি যে ছুটি গান পাঠিয়েছ সে ছুটোই বড়ো এলো- 
মেলো-__ তার মধ্যে অর্থসঙ্গতি নেই । তুমি যদি আমার সামনে 
থাকতে তোমাকে, লাইন ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতে অনুরোধ 
করতুম। পারতে নাঁ। হয় তো স্থুরে শুনতে ভালো লাঁগে। 
তেলেন! গানও তো মন্দ লাঁগে না, অথচ তোম্‌ তানানানার 
কোনে মানে নেই ।_ আমি হয় ত আর ছু" তিন দ্রিনের মধ্যেই 
কলকাতার দিকে যাব। ৯ ফ্রেক্রয়ারি ১৯৩২ 
মামা 


৩৯৫ 


টপ 


১১ মার্চ ১৯৩২ 


৫৩ 


কল্যাণীয়াস্তু 
তুমি হয়ত আমার দেওয়া সেই কলমেই আমাকে লিখেচ। 
তাহলে আমার লক্ষ্মীছাড়া কলমটা তোমার সঙ্গে ভদ্র ব্যবহার 
করেছে, কূপণতা করেনি-_ খুসি হলুম। কিন্তু ওর অবস্থাটা 
কতকটা আমারই মতো!__ খানিকটা কাজ করতে পারে তার 
পরেই ওর শক্তি ফুরিয়ে যায় । স্মৃতিচিহ্ুরূপে বাঝ্সতে তুলে 
রাখবার কাজই ওকে সব চেয়ে মানায়_ লেখার চেয়ে বিশ্রাম 
করার দিকেই ওর ঝৌঁক। ওর আরো একটি গুণ আছে, 
তোমার দাদার কলমের সঙ্গে যদি ভুল করে বদল করো তাঁতে 
তোমার লাভ ছাড়া লোকসান নেই । পরীক্ষা করে দেখতে 
পার। এখানে এসে চুপচাপ আছি-_ রবিঠাকুরের পাঁচালি 
একেবারে বন্ধ । ইতি ১৭ ফাল্তুন ১৩৩৮ 
মাম। 


নি 


[ শান্তিনিকেতন ] ২০ মাচ, ১৯ ৩২ 


কল্যাণীয়াস্ত 
বংসে, অতিথি অভ্যাগতদের নিয়ে ব্যস্ত তাই তোমাদের 
চিঠি লিখতে পারি নে। যেখানে তোমার মন প্রসন্ন থাকে 


৩৯৬ 


নিশ্চয়ই সেখানেই তুমি থাকবে-_ তোমার মা তো একলা ই 
যেতে পারেন। নিজের ইচ্ছের বন্ধনে অন্যকে বাঁধা কিছুতেই 
ভালে নয়। যেখানে কর্তব্যের দাবী অপরিহাধ্য সেখানকার 
কথা আলাদা । অনিচ্ছুক সঙ্গিনীকে হরণ করে না নিয়ে গেলে 
তোমার মা আরো আরামে থাকতে পারবেন । 
বিশেষ কারণে আমার পারস্তে যাওয়া আরো এক সপ্তাহ 
পিছিয়ে গেল । কলকাতায় থাকতে একজন হিন্দৃস্থানী ভদ্রলোক 
আমার করকোষ্ঠী দেখতে এসেছিলেন । তিনি বলেছিলেন অনতি- 
কালের মধ্যে আমার ভ্রমণ আছে কিন্তু যেদিন যাবার কথা তার 
পরে আরো সময় পিছিয়ে যাবে । তাই ঘটল । কিন্তু তোমার 
মা যে ববফল তৈরি করিয়েচেন তার মধ্যে ভ্রমণের উল্লেখমাত্র 
নেই, আর আর যা আছে তাও কিছু মেলে না। তোমার 
মাকে বোলে। তার এক্জিমার ওষুধ কেলি সাল্ফ ও নেট্রম 
ম্যর, ৬-এর পধ্যায়ে | [5]1 9917 6 ৪0010 11 01 6 
এখানে এসে আমার অনেকগুলি রোগী জুটে গেছে। তা ছাড়া 
একজন ভদ্রলোক গ্রামোফোনে সুর ধরাবার বিদ্যা যুরোপে শিখে 
এসেছেন। তিনি এখানে এসেছেন আমার ক থেকে কিছু 
আদায় করবার প্রস্তাব নিয়ে । এই রকম সব নানাবিধ নিত্য 
ও নৈমিত্তিক কাজ চারদিকে ভিড করেচে । দোলের সময় বসম্ত- 
উৎসব হবে সেও একট দায় । ইতি ৭ চৈত্র ১৩৩৮ 
মামা 


৩৯৭ 


[ ৩ জুন ১৯৩২ ] 


৫৯ 


কল্যাণীয়াস্ত 
বংসে 
শরীরটাকে দূর দুরান্তরে ঘুরিয়ে নিলুম ঠিক ঘরের 
ছুয়ারের কাছটায় এসে সে হর্তাল করে বসল। এখন তাকে 
নড়ায় কার সাধ্য । ডাক্তার লাগিয়ে দিয়েছি তার পিছনে-_ 
আশা করচি ছু চার দিনে শায়েস্তা হবে। ভ্রম্ণবৃত্তীস্ত শোনবার 
জন্যে তোমার ইচ্ছা__ চিঠিতে কুলোবে না, ভাঙা শরীরেও 
নয়__ কোনো এক সময়ে দেখা হলে গল্প করব। আপাতত 
চল্লুম বিছানার । ইতি ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৮ [ ১৩৩৯ ] 
মামা 


৯৯ 


২৮ অগস্ট ১৯৩২ 


৫€ 


কল্যাণীয়াস্ত্ 

ভালোই আছি আমার জন্যে ভেবো না। 

এখনো মীরার ফেরবার সময় হয় নি। 

তোমাদের চিঠি লিখে কোনো সম্কট বাধাতে ইচ্ছে করে 
না। 


৩৪৯৮ 


আমারও শরীর ক্লান্ত, সময়ও অত্যন্ত অন্ন। বিশ্রামের 
দরকার। 

তোমরা আমার আশীর্বাদ গ্রহণ কর। ইতি ১২ ভান্র 
১৩৩৯ 


মামা 


টি 


১৩ অট্টোবর ১৯৩২ 


শান্তিনিকেতন 


ত« 


কল্যাণীয়াস্ত 

বসে, আমার বিজয়ার আশীব্বাদ গ্রহণ করো | তোমার 
মাকে কিছুদিন পুব্বে একখানি চিঠি দিয়েছিলুম, বোধ হচ্ছে 
সেট! তিনি পান নি। গুরুতর কাজের ভিড পড়েচে__ চিঠি 
লেখবার অবকাশ ব্রমেই সঙ্কীর্ণ হয়ে এলো । কিন্তু তা নিয়ে 
তোমর। আক্ষেপ কোরো! না । তোমরা আমার হৃদয়ে েহের 
আসন অধিকার করেচ সে সম্বন্ধে মনে সংশয় রেখো না। যদি 
শান্তিনিকেতনে আসা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হোত তাহলে 
দেখতে পেতে এখানে শরৎকাল কি সুন্দর হয়ে দেখা দিয়েচে 
চার দিকে খোলা আকাশ, অপধ্যাপ্ত শিউলি ফুলের নিঃশ্বাসে 
স্থগন্ধ বাতাস, গাছে গাছে প্রজাপতির দল মেতে উঠেচে, 
দিনগুলি সোনার আলোর পাল তুলে চলেচে ভেসে, আর 
রাতগুলি এখন শারদজ্যোৎস্সায় মন্ত্রমুগ্ধ। কিন্তু তোমাদের মন 


৩৯৪ 


কলকাতার ইটকাঠের খাঁচায় আটকা পড়ে আছে, এখানকার 
নিভৃত শান্তি হয়তো! তোমাদের ভালোই লাগত না-_ অন্তত 
বেশিদ্রিনের জন্যে না । আমার মনটা এখানে আছে সমুদ্রের 
মাছের মতো'-_ কলকাতায় যখন যাই তখন মনে হয় পথ হারিয়ে 
ঘোল! জলের আবর্তের মধ্যে পড়ে গেছি। শীত্র কলকাতায় 
যাব দে আশঙ্কা নেই। পুজোর ছুটির পরে ইউনিভসিটিতে 
লেকচার দিতে একবার যেতে হবে- সে কথা মনে করলেই 
মন ক্রান্ত হয়ে ওঠে। পুজোর কয়দিন তোমাদের ওখানে 
বোধ হয় খুব আমোদে গেছে। এখানকার কাছাকাছি গ্রামে 
পুজোর ধূম ছিল, কলকাতা থেকে যাত্রাও এসেছে । আমার 
এ জায়গাটি ছিল নিস্তব্ব__ শুক্লসন্ধ্যার আলোতে শান্ত নিঃশব্দ 
নিশ্মল উৎসব হোতো সাঁমনেকার এ বীথিকায়, লাল রঙন 
ফুলের মঞ্জরী ছাড়া আর কিছুতে রক্তের চিহ্ন ছিল না। 
ইতি ১৭শে আশ্বিন ১৩৩৯ 

মামা 


্ 
১৪ এপ্রিল ১৯৩৩ 
ও 
কল্যাণীয়াস্ 
আজ নববর্ষের আরন্তদিন। তুমি আমার অন্তরের আশীববাদ 
গ্রহণ করো । ইতি ১ বৈশাখ ১৩৪ 
মামা 


৪০০ 


১৪ 


৫ জুন ১৯৩৩ 


৫ৎ 


কল্যাণীয়ান্থু 
বাসন্তী, নিজ্জীবকুমারের বিবাহের সমারোহ আমার কাছ 
পর্য্যন্ত এসে পৌচেছে__ আমরা! নিজ্জীব নই তার প্রমাণ হবে। 
আয়োজন দেখে ইচ্ছা! করচে আশীর্বাদ করি কিন্তু শক্তির অভাব 
ঘটেচে। দেহ এবং কলম কিছুই সচল অবস্থায় নেই। তা 
ছাড়া আশীর্বাদ করে যাদের লেশমাত্র বিচলিত করতে পারব 
না তাদের প্রতি ও জিনিষটার অপব্যয় করে কী হবে? তার 
চেয়ে আমার অন্তরের আশীর্বাদ তুমিই গ্রহণ করো। ১১ আষাঢ় 
১৩৪ ০ 
মাম 


১৫ 


৫ নভেম্বর ১৯৩৩ 


কল্যাণীয়াস্থ 

বসে, তোমার মা এতকাল ধন্মমত নিয়ে ছর্দাম উৎসাহে 
আমার সঙ্গে ঝগড়া করে এসেচেন। আমি চুপ করে গেছি 
তাই তিনি বেকার । এখন তোমাকে খাড়া করে সেই ধামাচাপা 
ঝগড়। আবার জাগাবার চেষ্টায় আছেন। কিন্তু কৃতকাধ্য হবেন 


৯0২৬ ৪০১ 


না, তোমার সঙ্গে আমি কিছুতেই ঝগড়া করব না। মতের মিল 
না হলেও আমি চুপচাপ থাকব। 

শুনে আশ্চধ্য হবে তোমার সঙ্গে আমার ধন্মের অমিল 
নেই । আমি দীক্ষা নিই নি, নেবও না । আমার ভগবান কোনো 
সম্প্রদায়ের ছাীঁচে ঢাল! ভগবান নন। তিনি নিরাকার তাই 
অন্তহীন আকার তার-_ তার স্বষ্টিতে তার আকার ছাড়া আকার 
আসবে কোথা থেকে । কারো হাঁতগড়া মনগড়া আকার নয় 
তার-__ কোনো বিশেষ স্থানে বিশেষ কালে বিশেষ রূপে সীমাবদ্ধ 
নন তিনি । 

যে সব প্রচলিত আচারের কোনোই অর্থ নেই-__ যেমন 
গ্রহণের সময় গঙ্গান্সীন করা তাকে মানতে গেলে নিজের 
বুদ্ধিকে অপমানিত কর! হয়-- এই বুদ্ধি ভগবানেরই দান। 
যার৷ অর্থহীন ক্রিয়াকন্মের মূঢতায় ভারগ্রস্ত তাদের মন শেওলায় 
বাধাগ্রস্ত জলের মতো! গতিহীন, অন্ধ, অস্বাস্থ্যময়-_ তারা শত 
শত বৎসর পরের কানমলা খেয়ে অপমানে নত হয়ে থাকে, তারা 
অসংখ্য বার্থতা দ্বারা শতধাবিভক্ত। জীবহত্যা সম্বন্ধে তোমার 
সঙ্গে আমি একমত-_ অনিচ্ছাক্রমে কখনো কখনো মাছ মাংস 
খেয়ে থাকি, সেটাকে আমি অপরাধ বলেই গণ্য করি । এক 
সময়ে সুদীর্ঘকাল নিরামিষাশী ছিলেম__ এখনো আমিষভোজন 
কচিৎ হয়। 

মিলিয়ে দেখো, তোমার সঙ্গে আমার ধন্মমতের প্রভেদ 
নেই । তার কারণ তোমারও তরুণ মন, আমারও তাই । অন্যান্য 
রোগের মতোই মূঢ়তা দুর্বল মনকেই অধিকার করে, এই 


৪০. 


দুবর্বলতা মানসিক জরার লক্ষণ, সেই জর! ১৪১৫ বছরেরই হোক্‌ 
আর ৮০।৮৫ বছরেরই হোকৃ। এই জরা চিরজীবন তোমাকে 
স্পর্শ না করুক, স্বচ্ছ থাঁক তোমার বুদ্ধি, প্রশস্ত হোক্‌ তোমার 
হৃদয়, উদার হোক মানুষের সঙ্গে তোমার ব্যবহার, একদিন 
ধার সঙ্গে তোমার মিলন হবে তিনি যেন নিম্মল মুক্তির পথেই 
তোমাকে অগ্রসর করে দেন এই আমার আশীব্বাদ। ইতি 
৫ নবেম্বর ১৯৩৩ 

মাম। 


৯* জানুয়ারি ১৯৩৪ 


পে 


কল্যাণীয়ান্ু 

বংসে, লক্ষ্মী মেয়ে তুমি । তোমাদের করুণার মধ্য দিয়েই তো 
বিধাতার করুণ গীড়িত পৃথিবীর উপরে অবতীর্ণ হয়। তুমি 
অসংশয়ে কল্যাণকন্মে প্রবুত্ত হয়েছ তোমার এই কম্মের যোগেই 
তুমি ঈশ্বরের আশীববাদ লাভ করচ। লোকহিতের আগ্রহ, 
এই তো জীবনের সার্থকতা । অনেক আছে বিদ্বান অনেক 
আছে ধনী তাদের হদয় পাথরের মতো, তাদের মতো হতভাগ্য 
আর কে হতে পারে? 

ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আমি কলকাতায় যাব, 
যদি তোমাদের সঙ্গে দেখা হয় খুসী হব, নইলে দূরের থেকে মনে 
মনে কল্যাণ কামনা করব । ইতি ১৩ মাঘ ১৩৪০ 

মামা 


১৭ 
১৬ এপ্রিল ১৯৩৪ 


৫৫ 


শীম্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্ 
বংসে নববর্ষ প্রভৃতি নানা উপলক্ষ্যে অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতে 
হয়েছে। নানা অতিথি, নানা কাজ, নানা চিন্তা । এই মাসের 
শেষভাগে আমার গ্রহ সিংহলযাত্রার তাগিদ করেছে-_ এখন 
থেকে তার ব্যবস্থা করতে হচ্চে । খুব সম্ভব আমার জন্মদিন 
পড়বে সমুদ্রে কিম্বা বিভীষণের রাজত্বে । তাই আমার আশ্রমের 
বন্ধু ও ছাত্ররা এ বছর আমার জন্মদিন এগিয়ে দিয়েছেন। 
তাদের ষড়যন্ত্রে এবার দিনটা পড়ল পয়লা বৈশাখে! গ্রহদের কথ! 
জানি নে কিন্ত দিনটি ছিল ক্সিপ্, আকাশ ছিল বৃষ্টিধারাবিধৌত, 
রবির প্রতাপ ছিল অপ্রখর-_ এর থেকে মনে করা যেতে পারে 
বর্ষফল কষ্টদায়ক হবে না। কী বল? তোমার মায়ের মত কী 
জানিয়ো । গৌরীপুরে যাচ্চ, সেখানে তোমার দাদামশায়ের 
আদরে থাকবে সন্দেহ নেই-__ যদি কোনে! ক্রটি দেখো তবে 
সেই উপলক্ষ্যে নানীর দৌরাত্ম্য করবার অধিকার আছে এ কথা 
ভুলো না। তোমর৷ আমার নববধের আশীব্বাদ গ্রহণ কর। 
ইতি ৩ বৈশাখ ১৩৪১ 
শুভানুধ্যায়ী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


স্ুধার পত্রের উত্তর এই সঙ্গে পাঠাই । 


৪০৪ 


১৮ 

৬৭ ভন ১৯৩৪ 

জাঁফন। 
সিংহল 


নে 


কল্যাণীয়াস্ত 

বংসে তোমাকে চিঠি লিখিনি বলে রাগ করেচ। তোমার 
দাদামশায়ের আদরের নিবিড় পরিবেষ্টনের মধ্যে ফাক পাওয়া 
যাবে না আশঙ্কা করে নীরব ছিলুম। কিছু বানিয়ে এবং বাড়িয়ে 
বলা গেল। আসল কথা আমি নিজে আছি নিয়ত সমাদরের ব্যুহ- 
বেষ্টিত হয়ে, তার উপরে কাজ আছে যথেষ্ট-_ বক্তৃতা দিতে দিতে 
নিজের কগন্বরের উপর বিতৃষ্ণা ধরে গেছে__ এখানকার এরা 
সরল ভাবুক স্বভাবের মানুষ, স্সিগ্ধ এদের মন-__ এদের খুসি করা 
ছুঃসাধ্য নয়-- বাঙালীদের মতো এরা সর্বদা খুৎ-ধরা ছুঃসহ 
বুদ্ধিমান নয়-- এদের আনন্দ দিয়ে আনন্দিত হয়েচি। 

কাল যাত্রা করব স্বদেশের অভিমুখে__ দীর্ঘ পথ অতিবাহন 
করে কলকাতায় পেঁইছব বোধ করি ইংরেজি চবিবশে তারিখে । 
ততদিনে দেশে বধা নেমেছে, বার কবি পাবে আকাশের 
অভিনন্দন অভিষেক, সজল মেঘের নববারিধারায় । 

আমার আশীব্বাদ। ১৭ জুন ১৯৩৪ 

শুভাকাজ্ষী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


১৯ 
২৫ অক্টোবর ১৯৩৪ 
মাত্রাজ 


শু 


কল্যাণীয়াস্্ 

তোমাকে বর্ধামঙ্গলের যে সুচনা পাঠিয়েছিলুম এতদিনে 
সেটা নিশ্চয় পেয়েছ। আসাম গৌরীপুরের দ্বিজেন্দ্র চক্রবস্তীকে 
তার খোজ করতে বলেছিলুম। তিনি লিখেছেন বই ছুটো 
সেখানকার পোষ্ট অফিসে অপেক্ষা করছিল তিনি ময়মনসিঙের 
ঠিকানায় পাঠাবার ব্যবস্থা করেছেন । 

এখানে আমার বক্তৃতা চল্চে। পর্শদিন থেকে অভিনয় 
সুরু হবে-_ অক্টোবর মাঁসটা এই রকম কাটবে । শাপমোচন 
যদি দেখতে, নিশ্চয়ই তোমার ভালো লাগত ৷ তোমাদের ওখানে 
যে অভিনয়গুলি হয়ে গেছে তার চেয়ে মন্দ নিশ্চয়ই নয়। 
অনেক নতুন গান আছে। 

তোমার গানের ছাত্রদের উন্নতির খবর পেয়ে আশান্বিত 
হয়েছি । ময়মনসিং জেলায় তুমিই আমার গানের প্রতিষ্ঠা 
করলে-_- আশা করি উচ্চারণ এবং স্রর কিছুদিন পধ্যস্ত অবিকৃত 
থাকবে । ইতি ১৫ অক্টোবর ১৯৩৪ 

শুভাকাজ্ষী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


২০ 
১৪ এপ্রিল ১৯৩৫ 


বসে, 

তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হয়েছি । আমার আশীর্বাদ 
গ্রহণ করো। 

আমাদের ভারতীয় গানের কোনো কোনো স্থরের হাম্মো- 
নিয়মের বাধা স্রুরের সঙ্গে ঈষৎ অনৈক্য হয়। তারের যন্ত্রে 
কোনো অস্থবিধে হয় না। সে স্থলে হয় শুদ্ধ নয় কোমল 
লাগালেই চলে-_ তোমার নিজের কান তাঁর পথ নির্দেশ করে 
দেবে। ইতি ১লা বৈশাখ ১৩৪২ 

মামা 
শান্তিনিকেতনের ফটো! আমার কাছে নেই 
যদি পাই তোমাকে পাঠাব । 


১ 


২৮ অগস্ট ১৯৩৫ 


6৭ 


কল্যণীয়াস্থ 

তোমাকে আমাদের এখানকার চামড়ার কাজ কিছু পাঠাচ্চি। 
একটি হচ্চে অটোগ্রাফ বইয়ের মলাট-_ এই মাপের খাতা এর 
মধ্যে ভন্তি করে নিলে এটা সম্পূর্ণ হবে। আর একটি 


৪০৭ 


পোর্টফোলিয়ো৷। এটা আমার নিজের ব্যবহারে এতকাল নিষুক্ত 
ছিল-_ সেই বিশিষ্টতার জন্যেই এই পুরোনো জিনিষটা তোমাকে 
দিলুম__ অন্য ঘরে যখন কুলাস্তরিত হবে তখনো আমার সরে 
তোমার স্মরণে থাকবে এই আঁশা করেই তোমাকে পাঠাচ্চি। 
আজ প্রভাতে আকাশ নিন্মল, শরতের দাক্ষিণ্যে এখানকার 
বনশ্রেণী আনন্দোজ্জল-_ রবির আশীব্বাদের জন্য আজকের 
দিনই প্রশস্ত । ইতি ১১ ভান্র ১৩৪২ 
মামা 


২ 
২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ 


১ 


কল্যাণীয়া বাসন্তী 

আমি চিঠিপত্র লেখা প্রায় ছেড়ে দ্িয়েছি। এখন আমার 
বিশ্রাম নেবার সময়-_ এতদিন ধরে কাজ কন্ম অনেক করেছি। 
শক্তি প্রায় নিঃশেষ হয়ে এল । 

কিছুদিন হোলে তোমার মাম! এখানে এসেছিলেন । সঙ্গীত 
সম্বন্ধে বক্তৃতা দিয়ে গেলেন । মাঝে মাঝে আসবেন এমন আশা 
রইল। সঙ্গে যদি ভাগ্রীটিকে নিয়ে আসেন তাহলে আরো 
ভালো হয়। 

তোমার মার চিঠিতে খবর পেলুম তুমি ্বহস্তে নানাবিধ 
ভোজ্য তৈরি করে আত্মীয়স্বজনের পরিতোষ বিধান করচ। 


৪০৮ 


শুনে লৌভ হয়__ দূরে আছি অতএব ভাগ পাবার আশা করতে 
পারি নে। আমাকে পেটুক বলে যদি কল্পনা করো তাহলে ভূল 
করবে । আমি যতটা খাই তার চেয়ে গুণ গাই বেশি । যখন 
কলকাতায় যাব তখনকার জন্যে দাবী রইল । কাছের লোকদের 
পেটভরা মাপের পরিবেষণ করেও যেটুকু উদ্বৃত্ত থাকবে তাতেই 
আমার চলে যাবে । ইতি ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ 

মামা 


২৩ 
৯ অক্টোবর ১৯৩৫ 


নীমতী বাসম্তী দেবী 
কল্যাণীয়ান্ত 
সব্বাস্তুকরণের আশীব্বাদ 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


২২ আশ্বিন 
১৩৪২ 


২৪ 
৫ জানুয়ারি ১৯৩৬ 


৫৫ 


কল্যাণীয়াস্থ 

তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম। কিছুকাল থেকে 
নানা কাজ এবং অতিথিসমাগম নিয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলুম 
শরীরও বিশেষ ভালে! ছিল নাঁ। কাঁজকন্ম বন্ধ করে দিয়ে 
কোথাও পালাবার জন্তে মন উৎসুক হয়ে আছে। কিন্ত 
যেখানেই যাই উপদ্রব সঙ্গে সঙ্গেই চলে-_ তাই চিরপরিচিত 
আরাম কেদারাট। আকড়ে পড়ে থাকি । 

পরিশোধ গল্পটি এতিহাসিক নয়, বৌদ্ধ উপাখ্যান থেকে 
নেওয়া । 

তুমি আমার আশীর্বাদ গ্রহণ করো । ইতি ৫ জানুয়ারি 
১৯৩৬ 

মামা 


৪১৬ 


২৫ 


১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ 


৫৫ 


কল্যাণীয়৷ শ্রীমতী বাসন্তী দেবী 


নৃতন সংসার স্থষ্টি করিবে আপন প্রতিভায়, 

হে কল্যাণি, তব নারী-জীবনের চরিতার্থতাঁয় 
ধন্য হবে তুমি, বসে, ধন্য হবে বান্ধব আতীয়, 
তোমার গীতির রসে নিত্য হবে সবাঁকার প্রিয় 
আপন জগৎ তব ; হবে সত্য-প্রভায় উজ্জ্বল ; 
অক্লান্ত সেবায় ত্যাগে পুণ্যে হবে শুভ সুনিন্মল | 
জীবনযাত্রার পথে কল্যাণনিষ্ঠার প্রুবতারা 
মোহকুহেলিকাজালে কখনো না হয় যেন হারা । 
ভক্তির মাধুধ্যে পাও অন্তরের কান্তি নিরুপমা, 
বিশ্বেরে করিয়া ক্ষমা লভ' বিশ্ববিধাতার ক্ষমা । 
বাহিরের আক্রমণ জয় তুমি কর? আত্মজয়ে, 
এই মম আশীর্বাদ তোমাদের শুভ পরিণয়ে ॥ 


২রা ফাল্গুন শুভান্ুধ্যায়ী 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৪১১ 


৬ 


৫ জ্নাই ৯৩৬ 


৫ৎ 


কল্যাণীয়াসু 

তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হয়েছি । আমাদের এখানে 
চল্চে কখনো বৃষ্টি কখনো গুমট, এতক্ষণ পরে আজ দিয়েচে 
একটু হাঁওয়া__ হয়তো সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ আঁস্বে খুব ঘট 
করে বর্ণ। জানো তো৷ এবার এদেশে দীর্ঘকাল অনাবৃষ্টি গেছে, 
ক্ষেতে ফসল নেই, লোকের পেটে নেই অন্ন, গায়ের বস্ত্র জীর্ণ। 
এসব দেখে সংসারের উপর ধিক্কার জন্মে। কিছু কিছু চেষ্টা 
করচি এদের বাচিয়ে রাখতে, কিন্ত আমাদের সাধ্যের অতীত । 
এখানে একটা সাবেক কালের দীঘি ছিল, সেট। প্রায় বুজে 
এসেছিল-_ খোঁড়াবার ব্যবস্থা করেছি, তাতে গেল ছুই মাস 
ধরে পাঁচশো লোক খেটে খেতে পাচ্ছে । যে পধ্যস্ত না অভ্রাণ 
মাসে ফসল ওঠে সে পধ্যন্ত এদেশের লোকের অনাহার চলবে । 

হয়তো শ্রাবণ মাসের মধ্যে কোনো এক সময়ে কলকাতায় 
যাওয়া ঘটবে-_ তখন তোমাদের সঙ্গে দেখা হতে পারবে। 

তোমরা সবাই আমার আশীর্বাদ জেনো । ইতি ২১ আষাট 
১৩৪৩ 

শুভানুধ্যায়ী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৪৯২ 


৭ 


৩০ অগস্ট, ১৯৩৬ 


শাস্তিনিকেতন 


কল্যাণীয়াস্তু 

তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম। নানা কাজ নিয়ে 
আজকাল অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে আছি। তার উপরে শরীরটা যে 
খুব ভালো। আছে তা বলতে পারিনে। কিন্তু আমার এই ভাঙা 
শরীরে কাজ কামাই হয় না। এখানে বর্ষামঙ্গল হয়ে গেল। 
কথা ছিল কলকাতায় গিয়ে করব কিন্তু স্ববিধে হোলো! না । তবু 
হয়ত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে একবার কলকাতায় 
যাব। তুমি তো জানই যখন যাই বরানগরে গিয়ে থাকি, 
এবারেও সেখানেই হবে আমার বাসা। যদি পারো তো দেখ। 
করতে এলে খুসি হব। 

তোমার মা আর কতদিন পুরীতে থাকবেন । আশা করি 
ভালে আছেন। আমার আশীব্বাদ। ইতি ৩০ অগস্ট ১৯৩৬ 


শুভাথী 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৪১৩ 


২৮ 
[ শ্রীনিকেতন ] ৩১ অক্টোবর ১৯৩৬ 


৫ 


কল্যাণীয়াস্তু 
তুমি আমার বিজয়ার আশীব্বাদ গ্রহণ করে৷ । তোমরা 
বাসা বদল করেছ-__ বোধ হয় ভালোই লাগচে। আমিও 
কিছুদিনের জন্যে বাসা বদলিয়েছি, এসেছি শান্তিনিকেতন থেকে 
্রীনিকেতনে। এখানে তেতল৷ বাড়ির তেতলার ঘরে নির্জনে 
আরামে আছি। যতদুর দৃষ্টি যায় ধানক্ষেতে সবুজ রঙের সমুদ্র। 
ইতি ৩১ অক্টোবর ১৯৩৬ 
মামা 


সন 


১৪ ডিসেম্বর ১৯৩৬ 


কল্যাণীয়াস্ত 

ডিক্রগড় থেকে তোমার চিঠিখানি পেয়ে খুসি হলুম। সুন্দর 
জায়গাতেই গেছ, সুখে থাকবে । অনেকবার ইচ্ছা করেছি ষ্টীমারে 
করে ব্রহ্মপুত্র বেয়ে ডিক্রগড় পধ্যন্ত বেড়িয়ে আসব-__ এ পর্যন্ত 
ঘটে ওঠে নি। হয় তো যাব কোনে! সময়ে, তখন তোমাদের 
ঘরকন্নার আম্বাদ পাওয়া যাবে। খবরের কাগজে পড়েছিলুম 
যে আমি কলকাতায় যাব, কিন্তু আমি নিজে তার কিছুই জানি 


৪১৪ 


নে। এখনো! এখানেই আছি, ৭ই পৌষের জন্য প্রস্তুত হচ্চি। 
ইতি ১৪।১১।৩৬ 


আশীব্বাদক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


২২ এপ্রিল ১৯৩৭ 
ও 

কল্যাণীয়াস্ত 

ডিক্রগড় থেকে কলকাতায় ফিরে যে চিঠিখানি লিখেচ পেয়ে 
খুসি হলুম। তোমরা আমার বর্ধারন্তের আশীর্বাদ গ্রহণ করো । 
আমরা আলমোড়া পাহাড়ে যাবার জঙ্কল্প করেছি। আগামী 
২৬শে রাত্রে কলকাতায় পেঁছব, ২৯শে সন্ধ্যাবেলায় যাত্রা! করব 
পাহাড়ে । আমি সহজে নড়তে ইচ্ছে করি নে এবার শরীর 
বিশেষ ক্লান্ত বলেই তল্লি বাধচি। কিন্তু কাজ আমার সঙ্গে 
সঙ্গেই ফিরবে, এবং ভিড় জমতেও বোধহয় দেরি হবেনা । ইতি 
২২।৪।৩৭ 

মামা 

্ 


২৬ অগন্ট, ১৯৩৯ 


কল্যাণীয়াস্তু 
তোমার সঙ্গে জোড়াসাকোয় ক্ষণকালের জন্যে দেখা হয়েছিল 
খুশি হয়েছিলুম । পরের দিনেই পালিয়ে এসেছি । কলকাতা 


৪১৫ 


আমার জন্বস্থান কিন্ত আমার আবাস্ত নয়। শরৎকালে আর্্রতাঁপ 
ছুঃসহ হয়ে উঠচে__ যত শীঘ্র পারি গিরিশুঙ্গে আশ্রয় নেব। 
পথের মধ্যে কলকাতায় চোখের চিকিৎসা উপলক্ষ্যে থাকতে 
হবে। তখন হয় তো তোমাদের সঙ্গে দেখা হতে পারবে। 
আমার আশীবাদ গ্রহণ করো । ইতি ২৬৮৩৯ 


ন্নেহরত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৩২ 


২৯ অক্টোবর ১৯৩৯ 


৫ৎ 


মংপু 
কল্যাণীয়াস্থ 

তোমর! দুজনে মিলে আমার আশীবাদ গ্রহণ করো । 

আমার এখানকার মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এল। আগামী 
৫ই নবেম্বরে এখান থেকে অবতরণ করব । চোখের চিকিৎসার 
জন্যে ছু চার দিন কলকাতায় থাকতে হবে। তার পরে যাৰ 
আশ্রমে । এখানে যে কতটা শীত তোমাদের ওখান থেকে তা 
কল্পনা করতে পারবে না । ইতি ২৯।১০।৩৯ 


শুভার্থী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৪১৬ 


১২ অক্টোবর ১৯৩৮ 


৫8৫ 


কল্যাণীয়েষু 

যাত্রা করে বেরিয়েছিলুম কালিম্পঙের দিকে-_ কিন্তু হুর্বল 
দেহের প্রতি ভরসা করতে পারলুম না । ক্লান্তির ভয়ে কলকাতা 
থেকেই পালিয়ে এলুম । তোমাদের দেশের বর্ণনা শুনে লোভ 
হয়-_ কিন্তু পথের লীলা এবার থেকে সাঙ্গ হোলো । 

সেদিন সন্তানসহ বাসন্ভীকে দেখে খুব খুশি হয়েছি । এখানে 
এখন বুষ্টি বাদলের প্রাছুর্ভাব। আপাতত হাওয়ার মেজাজ ঠাণ্ডা 
-- আবার খেয়াল বদলাতে পারে। আশীবাদ জেনো । ইতি 
১২।১০।৩৮ 


শুভার্থী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


এই পত্রখানি শ্ীনিখিলচন্দ্র বাগচীকে লিখিত 


৯২ ৭ 


শ্রীবীরেন্্রকিশোর রায়চৌধুরীকে লিখিত পত্র 


কবির আশীর্বাদ ও শ্রীমান্‌ কিশোরকান্ত -সহ পত্রালাপ 


১৭ অগস্ট ১৯৩১ 


৫5৫ 


কল্যাণীয়েষু 

তুমিযে ওস্তাদের কথা লিখেচ তাকে পেলে আমাদের 
ভালোই হয় । কেবল একটিমাত্র ভাবনার কথা, আমাদের আশ্রম 
আঘিক দুর্গতিগ্রস্ত। কি পরিমাণ বেতন পেলে তিনি অন্ত 
হবেন সেটা আমাকে জানিয়ো । 

তোমার কন্ঠার অসুখের কথা শুনে উদ্দিগ্ন হলুম। 

আজ দিলীপকুমারের পত্র পেলুম। তাতে সে জানিয়েচে 
যে শ্রীঅরবিন্দ কবে সর্বসাধারণের কাছে আত্মপ্রকাঁশ করবেন 
তা নিদ্দিষ্ট করে বলেন নি-_ হয় তো আমি ভুল বুঝেছি কিন্বা 
আর কারো কাছ থেকে এ কথা শুনে থাকব। ইতি ২ ভাদ্র 
১৩৩৮ 

স্নেহরত 


শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


শরীবীরেন্রকিশোর রায়চৌধুরীকে লিখিত 


৪২১ 


২৩ অগস্থী ১৯৩১ 
তু শান্তিনিকেতন, 


কল্যাণীয়েষু 

আমাকে হয় তো আর দিন দশেকের মধ্যে কলকাতায় যেতে 
হবে। বন্যাপীড়িত বাংলার সাহায্যের জন্যে কিছু চেষ্টা না করে 
স্থির থাকা অসম্ভব । বন্যায় আমাদেরও উপজীবিকা ভাসিয়ে 
নিয়ে গেছে। এর আগে যে বন্থা হয়েছিল তাতে খণ করে 
প্রজাদের সাহায্য করেছি-_ দ্বিতীয় বার খণ বাড়াতে সাহস 
হয় না। তাই স্থির করেছি কলকাতায় বধামঙ্গল দেখিয়ে 
বধাজনিত অমঙ্গল কথঞ্চিৎ দূর করতে চেষ্টা করব । আট দশ 
দিনের পুবে প্রস্তুত হওয়া সন্তব হবে না তার চেয়ে বিলম্ব 
করলে উৎসবের নামটাকে ব্যর্থ করা হবে । শরীর গীডিত কিন্তু 
দেহের দোহাই মেনে কর্তব্য মুলতবি রাখবার অবকাশ আমার 
আর নেই। 

ডাক্তার সরসীলাল সরকার আমার ধন্মমত সন্বন্ধে ব্যাখ্যা 
দ্রাবী করে পত্র লিখেচেন। প্রবন্ধ যদি কোমর বেঁধে লিখি 
পনেরো আনা লোক তার তাৎপধ্য বুঝতে পারবে না অথবা ভূল 
বুঝবে । তোমার দিদিকে যে চিঠিগুলি লিখেচি তাতে আমার 
কথা যত সহজে ব্যক্ত হয়েচে কোনো প্রবন্ধে তা সম্ভব হবে না । 
যদি তার ব্যক্তিগত ও অবান্তর অংশ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে এ পত্রগুলি 
থেকে সার উদ্ধার করে গেঁথে দ্রিই তাতে তোমাদের কি কোনো 
আপত্তির কারণ হবে? শুনেছি এ চিঠিগুলি এখনি ছাপানো 
সম্বন্ধে তোমার বাবার সম্মতি নেই। কিন্ত আমি যে ভাবে 


৪২২ 


ছাপতে ইচ্ছা করচি তাতে কারো সঙ্কোচের কোনো কারণ 
থাকবে না। একবার তাকে ও তোমার দিদিকে জানিয়ে 
আমাকে লিখো । এই ক্লান্ত জীর্ণ দেহে নতুন করে কিছু লিখতে 
উৎসাহ হয় না অথচ আমার যা শেষ কথা তা আমাকে বলে 
যেতেই" হবে। রচনাটি সঙ্কলিত হলে পর ছাঁপবার পুব্ধে তার 
এক কপি তোমাদের সম্মতির জন্যে পাঠিয়ে দিতে পাঁরি। ইতি 
৬ ভান্র ১৩৩৮ 
শুভাকাজক্ষী 
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


শ্রীবীরেন্দ্রকিশোর রাঁয়চৌধুরীকে লিখিত 


রষটব্য : শ্রীমতী হেমন্তবালাদ্রেবীকে লিখিত ২৪ অগস্ট, ১৯৩১ তারিখের চিঠি, পৃ ৮৩ 


৪২৩ 


আশীবাদ 


শ্রীমান কিশোরকান্ত 


৩০।৭।৩৮ 


নবীন আগন্তক, 
নবযুগ তব যাত্রার পথে 

চেয়ে আছে উৎসুক | 
কী বার্তা নিয়ে মত্যে এসেছ তুমি | 

জীবন-রঙ্গভূমি 
তোমার লাগিয়া পাতিয়াছে কী আসন । 

নরদেবতার পুজায় এনেছ 

কী নব সম্তাষণ। 

অমরলোকের কী গান এসেছ শুনে? 

তরুণ বীরের তৃণে 
কোন্‌ মহাস্ত্র বেঁধেছ কটির পরে 

অমঙ্গলের সাথে সংগ্রামতরে | 
কে বলিতে পারে তোমার ললাঁটে লিখা 

কোন্‌ সাঁধনার অদৃশ্য জয়টিকা । 
রক্তপ্লাবনে পঙ্কিল পথে বিদ্বেষে বিচ্ছেদে 
হয় তে! রচিবে মিলন্তীর্থ শান্তির বাধ বেঁধে । 
আজিকে তোমার অলিখিত নাম আমরা বেড়াই খুঁজি 
আগামী প্রাতের শুকতারাসম নেপথ্যে আছে বুঝি । 
মানবের শিশু বারে বারে আনে চির আশ্বাসবাণী 
নৃতন প্রভাতে মুক্তির আলো! এই বুঝি দিল আনি ॥ 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


৪২৪ 


১৮ অক্টোবর ১৯৩৮ 


শ্রীচরণেষু, 

দাছু, আপনি আমার প্রণাম জানবেন । আমাকে চেনেন 
কি? আমি “নাচন', ভালো নাম “কিশোরকান্ত'-- আমি 
আপনার সারা জীবনের স্বপ্ন, চিরনবীন, চিরন্ুন্দর নটরাজ। 
কিন্তু নটরাজ তো ভাঙ্গনের দেবতা, আমি তা নই। আমি 
গড়নের ও স্থাপনের দেবতা, আমি তাই নাচন বা নটশেখর | 

দাদ, আপনি মাকে, মামাকে, দিদিমাকে অনেক ভালো- 
ভালো বই দিয়েছেন, চিঠি লিখেছেন, সে সব চিঠি দিয়ে আবার 
বই তৈরী হবে। কিন্ত আমাকে আপনি, যদিও কবিত। দিয়ে 
সম্বর্ধনা করেছেন, নিজের প্রিয় নামটিই দান করেছেন আমাকে, 
কিন্ত আমাকে কোনো বই দেন নি। তাই আমিও ভেবেছি 
যে আপনাদের ভাষার কোনো বই আমি পড়বই না। আমি 
নিজেই কত ভালো ভালে! বই রচনা করতে পারি, কত নতুন সুরে 
নভন নতুন গাঁন রচনা করতে পারি, সে সব রচনা আপনার মত 
লোহার কাঠি দিয়ে বাশ কাঠের মাড়ের সরের ওপর কালো 
রডের আঁচড় কেটে বানাতে হয় না, আর রূপো কিংবা তামার 
চাঁকৃতির সঙ্গে বদলাবদলি করেও নিতে হয় না। আমার 
বই আমার গান প্রভাতী আলোয় পাখার সুরের মত হাওয়ায় 
ভেসে ওঠে, হাওয়ায় ভেসে ভেসে চ'লে যায় দূর দৃরান্তরে, 
আমার ভাষ! বুঝতে পারে কেবল তাঁরাই, যারা হাওয়ার ভাষা, 
গাছের পাতার ভাষা, আর পাখীর ভাষা পড়তে শিখেছে। 


৪২৫ 


আমি নাঁচন কি না, তাই আমার সুরের লহর নাচতে নাচতে 
চ'লে যাঁয় ওই গাছের পাতাকে মন্মরিত দোল! দিয়ে দিয়ে নীল 
আকাশের শেষ পারে । সুরপরীরা আমার কাছেই সুর শিখতে 
আসে, নাচের তালে মীর! বাজিয়ে তারা আমার কাছে শেখা 
গান গাইতে যায় আবার হয়তো ওই আপনারি কাছে। তাদের 
গন শুনে আপনি ভাবেন, ওরা বুঝি আপনিই শিখেছে । তা 
নয় গো মশায়" 


১৮1১০।৩৮ নিবেদন ইতি 
শ্রীমান নাচনবাবু 


পুনশ্চ নিবেদন, বলেইছি, ও লোহার কাটা দিয়ে আচড় 
কাটা আর নকল বুলি দিয়ে কথা বানানো আমার আসে না। 
ভালোও লাগে না। তাই এ কাজের ভার দিদিমাকে দিলাম | 
নইলে আবার আপনি হয়তো বুঝতেই পারবেন না, আমি কি 
বলতে চাচ্ছি। 


৪২৬ 


২* অক্টোবর ১৯৩৮ 


৫9 


শান্তিনিকেতন 
নাচনবাবু, 


একেবারে খাঁটি আধুনিক তুমি । পাঁজিও সেই কথা বলে, 
তোমার ভাষার থেকেও তার প্রমাণ পাই । এ ভাষায় শব্দ 
আছে যথেষ্ট কিন্তু অর্থ খুঁজে পাইনে। ভাষা যে কিছু বোঝাবার 
জন্যে সে দায়িত্ব বুঝি একেবারে অস্বীকার করেছ। আমি 
সেকেলে লোক আমার কেমন একট ধারণ হয়ে গেছে যে, যা 
বলব সেটা যেন পাঁচজনে বুঝতে পারে। যেন না ভাবতে বসে 
আমি পাগল হয়েছি, না, তারা পাগল হয়েছে । পাঁচজনের 
সম্বন্ধে তোমার মনের এই দীনতা নেই-_ তার থেকে প্রমাণ হয় 
তুমি আধুনিক। যারা সাধারণ ব্যক্তি তারা অন্যকে লক্ষ্য ক'রে 
যা বলে তা বোঝা যায়__ তুমি অসাধারণ, তুমি আধুনিক, 
তুমি কাকে লক্ষ্য ক'রে কী যে বলো তা যারা বোঝে তারাও 
তোমার মতোই অদ্বিতীয় । আমার শব্দের মধ্যে অর্থ ঢুকে 
পড়েছে__ ওটা বয়সের দোষ। জ্ঞানবুক্ষের ফল খাওয়ার পর 
থেকেই এই বিভ্রাট ঘটেছে । তোমার মতোই আধুনিকতার 
প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলুম কিন্তু লজ্জা এসে গেছে । তোমার 
অজস্র ক্ষমতা আছে লজ্জা না পাবার। এর থেকে বুঝি তুমি 
থাঁটি। তোমার অসংলগ্ন বাক্যাবলীতে ভক্তবুন্দ মুগ্ধ হয়ে যায়। 
আমার সাহস নেই । আজ কিছু কালের মতে! তোমারি জিৎ 
রইল নাচনচন্দ্র_ কিন্তু কাল! বলা যায় না, যদি জাতশ্াশ্র 
আধুনিকতার ছ্োয়াচ তোমার ভাষায় লাগে তাহলে আমাকে 


৪২৭ 


লক্ষ্য ক'রে যা বলবে সেই শব্দভেদী বাণ গিয়ে পৌছবে একে- 
বারে বৈতরণীতীরে। দোহাই তোমার আমার কথার মধ্যে 
সহজ অর্থ খুঁজে পেয়ে তোমার মনে যদি অত্যন্ত ধিক্কীর জন্মে 
তাহলে কথাগুলোকে উলটে পালটে দিয়ো তোমাদের কাজ 
চলবে । একুটা নমুনা দেখাই-_ 
কুলে গরজে। গগনে বসে আছি। 
মেঘ একা, ভরসা! নাহি 
ঘন বরষা । 

মনে হচ্ছে না কি, কিছু যেন বলা হোলো, কিন্ত কীযেতা 
বোঝবার দরকারই নেই । তোমার অভিনন্দনপত্রে বীর হও এ 
আশা জানিয়েছি কিন্ত কবি হও এ কামনা করি নি। হোঁতে 
হোতে হয়তো! তোমার ভাষা কোথায় গিয়ে পৌছবে বলা যায় 
না, কোন্‌ অকথনীয়ে কোন্‌ অচিন্তনীয়ে, বাক্যকলেবরের কোন্‌ 
অসংযুক্ত১ অপঘাতে, তখন তুমি কি আমাকে ক্ষমা করতে 
পারবে, যে হেতু বুঝিয়ে বলার চির-প্রচলিত সংস্কীরে আমি 
অভ্যস্ত । যে হেতু এ কালের পরে আমার বিশ্বাস ছিল না, 
আমার বিশ্বাস চিরকালের পরে। 

পুনশ্চ নিবেদন :- আর বিশ বছর পরের তারিখের প্রতি 
লক্ষ্য ক'রে আমার এ চিঠি লেখা । ইতিমধ্যে তোমার কাকলীপর্ব 
শেষ হোক । তোমার এখনকার কলালাপ তর্জম1 করবার ভার 
নিয়েছেন দিদিমা । কিন্তু ভূল করেছেন সন্দেহ নেই, কেননা 
তিনি যা ব্যাখ্যা করেছেন তার আগাগোড়া বোঝ গেল। হে 
অভাষিক, হে আধুনিক, এই আমার বুঝতে-পারা-ভাষার সহজ 


৪২৮ 


সীমানা থেকেই আজ তোমাকে আশীর্বাদ জানিয়ে গেলুম-_ এর 
পরে সেদিন যে-কোনো ভাষায় ইচ্ছা তুমি উত্তর দিয়ো, আমার 
আরং২ প্রয়োজন হবে না। এই প্রসঙ্গে একটা কথ। মনে পড়ছে, 
বিনা ভাষায় নীরব চোখ মুখের আলাপ থেকে যার! প্রলাপ 
মথিত ক'রে তুলতে পারে, তারা নাচন নয়, তারা নাচনীর দল, 
তারই একটির জন্যে আবেদন জানিয়ে রাখলুম তোমার মায়ের 
দরবারে । হায় রে, বারবার ভূলে যাই__ নাচনী আসবে, কিন্ত 
( একটা দীর্ঘনিশ্বাস ) _- ইতি ২০।১০1৩৮ 


সপ্তকপারব্তী 
কবি 


[ মন্তব্য ] 


আপন সম্বলের প্রতি যে শিশু-ভোলানাথের কোনো আসক্তি 
নেই, আনন্দমত্ত প্রলয়লীলায় যিনি তার প্রতি মুহুর্তের নেবেছ্ 
প্রতি মুহুর্তেই সগর্জনে ধুলিসাৎ ক'রে দেন তার সেই বিলুপ্তি- 
ভাঁঙের সগ্ঠ ভাঙন নেশার প্রতি ভরসা রেখে সেই অবুঝ 
দেবতার অবোধ্য ভাষা সম্বন্ধে গোপনে একখানি পত্র লিখে- 
ছিলেম। শনিগ্রহের চক্রান্তে পত্রখানি ধুলির ঠিকানা এড়িয়ে 
পড়েছে সম্পাদকের ঝুলির ঠিকানায়। মনে আছে সংস্কৃত 
ভাষার একটি প্লোকে পড়েছিলুম__ চোখে যে কাঁজল ভূষণ, সেই 
কাজলই দূষণ মুখের উপরে । আমার কাজল ঠিকা নাভষ্ট হয়েছে 


৪২৯ 


আমার দোষে নয়। চোখের কালিমা যে শিশুর মুখে লাগলেও 
মানায়, আমার লেখ! তাঁকেই লক্ষ্য ক'রে। আর কেউ যেন 
আত্মীভিমাঁনে এর প্রতি দাবী না করেন । 


নাচনচজ্দের দাছ 


আ ণীর্বাদ কবিতাটি মূল পাগুলিপি -অনুযায়ী এবং "নাচনবাবু' কিশোরকানস্তকে দা 
রবীক্রনাথের পত্র রবীন্্রসদনের অনুলিপির অনুসরণে মুদ্রিত । নাচনচক্জের চিঠি ও কবির 
“মন্তব্য -সহ উভয়ই "শনিবারের চিঠির ১৩৪৫ অগ্রহায়ণ সংখ্যায় 'অতি-আধুনিক ভাষা" এই 
শিরোনামে ও ভিন্নরপ পারম্পর্ষে মুদ্রিত। সে স্থলে কবির পত্রের তারিখ আছে ২১/১০।৩৮। 
“শনিবারের চিঠিতে উল্লেখষোগ্য পাঠান্তর- 

১ অনংশ্রিষ্ট 

২ “আর' স্থলে : বোঝবার আর 


9৩০ 


পরিশিষ্ট ১ 


পূর্বপত্রের পাঠাস্তর ও রূপান্তর 


আত্মীয়-বিরোধ 


কল্যাণীয়ান্ু 

কাজের ঝঞ্চাট বেড়ে উঠেচে | নানা লোকের নানা রকমের ফরমাঁস 
খাটতে হয়; তবু সে আমার বহুদিনের অভ্যাসে কতকটা সহ হয়ে 
এসেচে | 

কিন্ত নিরতিশয় পীড়িত ক”রে তোলে অত্যাচারের কথা । আমার 
বেদনাবহ নাঁড়ী এই রকম কোনও সংবাদের নাড়া খেয়ে যখন ঝন্ঝন্‌ 
করে ওঠে, তখন সে যেন কিছুতে থামতে চায় না। সম্প্রতি দেহমনের 
উপর সেই উপদ্রব দেখা দিয়েচে 

এতদিন বন্টাপ্লাবনের ছুঃখ দেশের বুকের উপর জগদ্দল পাথরের মত 
চেপে বসে ছিল; তার উপরে চট্রগ্রামের বিবরণট]1 সাইক্লোনের মত 
এসে তার সমস্ত বাসাটা যেন নাড়া দিয়েচে। 

আমাদের আপন লোক যখন নিশ্মম হয়, তখন কোথাও কোন সাস্বন! 
দেখিনে । এর পিছনে আর কোনো ছুরুগ্রহের যদি দৃষ্টি থাকে, তবে 
তা নিয়ে আক্ষেপ ক'রে কোনে! লাভ নেই। বল্তে হবে-_- “এহ বাহ্‌।? 
সকলের চেয়ে আমাদের সংঘাতিক ক্ষতি এই ষে, হিন্দুরা পাছে সমস্ত 
মুসলমান সমাজের প্রতি বিরুদ্ধ হয়ে ওঠে। এ কথা বলাই বাহুল্য, 
এবং আমার অভিজ্ঞতা থেকে এ আমি নিশ্চিত জানি মোটের উপরে ভাল- 
মত পরিচয়ের অভাব থেকেই আমাদের পরস্পর আত্মীয়তার ব্যাঘাত 
ঘটে। কোনে! জাতের একদল মাত্র যখন অপরাধ করে, তখন সেই 
জাতের সকলের উপরেই কলঙ্ক লাগে এটা অনিবাধ্য__ কিন্ত এ রকম 
ব্যাপক অবিচার কঠিন দুঃখেও আপন লোকের উপর কর! চলবে না। 

দেশের দিক দিয়ে মুসলমান আমাদের একাস্ত আপন, এ কথা 
কোনো উৎপাতেই অস্বীরুত হ'তে পাবে না। একদিন আমার একজন 


৯২৮ ৪৩৩ 


মুসলমান প্রজা অকারণে আমাকে একটাক সেলামী দিয়েছিল। আমি 
বললুম, আমি তো কিছু দাবি করিনি । সে বল্লে, আমি না দিলে 
তুই খাবি কি। কথাটা সত্য। মুসলমান প্রজার অন্ন এতকাল ভোগ 
করেছি । তাদের অন্তরের সঙ্গে ভালবাসি, তারা ভালবাসার যোগ্য। 
আজ যদি তার]! হঠাৎ আমাকে আঘাত করতে আসে, তা হলে পরম 
দুঃখে আমাকে এই কথাই ভাবতে হবে, কোনো আকম্মিক উত্তেজনায় 
তাদের মতিভ্রম ঘটেচে__ এটা কখনোই তাদের ম্বাভাবিক বুদ্ধি নয়। 
দুর্দিনে এমন ক'রে ষদ্দি আমি ভাবতে পারি, তা হলেই এই ক্ষণকালের 
চিন্তবিকার দূর হতে পারবে । আমিও যদি রাগে অধীর হয়ে তাদেরই 
অস্ত্র কেড়ে তাদের উপর চালাই, তা হলেই এ বিকার চিরদিনের মত 
স্থায়ী হবে-_ শেষকালে আসবে বিনাশ । 

মুসলমান যদি কোনোরকম প্রবর্তনায় হিন্দুকে নিপীড়ন করতে কুন্ঠিত 
না হয়, তা হ'লে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, এ শেল বাইরের নয়, 
এ মন্বস্থানের বিক্ষোটক-- এ নিয়ে রাগারাগি লড়াই করতে গেলে ক্ষত 
বেড়ে উঠতে থাকবে । বুদ্ধি স্থির রেখে এর মূলগত চিকিৎসায় লাগা 
ছাড়া আর কোন উপায় নেই । বিলম্ব হলেও সে-ই একমাত্র পন্থা । 

যে পরজাতির পক্ষে ভারতবর্ষ অন্নের থালি, তার যদ্দি সেই অন্ন হ্রাস 
বা নাশের আশঙ্কায় আমাদের "পন্রে কগোর হয়ে ওঠে, তা ভ'লে বুঝতে 
হবে সেটা স্বাভাবিক, এবং সেট? স্বার্থের জন্যে । এস্কলে তাদের শ্রেয়ো- 
বুদ্ধি বিচলিত হ'লে পরমার্থের দিকে না হোক, অর্থের দিকে একট! 
মানে পাওয়া যায়। কিন্তু আপন লোকের কৃত অন্ধ অন্যায় তাদের 
নিজেরই স্বার্থের বিরুদ্ধ | তারা চিরদিনের মত দেশের চিত্তে অবিশ্বাসকে 
আবিল ক'রে তোলে; তাতে চিরদিনের জন্যই তাদের নিজের ক্ষতি । 
যে নৌকোয় সবাই পাড়ি দিচ্চি, দাড় মাঝি বা কোনো আরোহীর "পরে 
রাগ ক'রে তার তলা ফুটো ক'রে দেওয়াকে জিৎ হওয়া মনে কর চলে 


৪৩৪ 


না। ইংরেজ যখন একদা সমস্ত চীনদেশের কণ্ঠের মধ্যে তলোয়ারের 
ডগা দিয়ে আফিমের গোলা ঠেসে দিয়ে তাদের আরাধ্য দেবতাকে 
চিরদিনের মত অপমানিত করলে, তখন এ পাপ থেকে অস্তত তার! 
বৈষয়িক পুরস্কার পেয়েছে । কিন্তু কল্পনা কর, দক্ষিণচীন যদি রাগের 
মাথায় উত্তর-চীনের মুখে বিষ ঢালতে থাকে, তাতে চীনের যে মৃত্যুর 
সঞ্চার হবে, তাতে দক্ষিণ তার থেকে নিষ্কৃতি পাবে না। আত্মীয়দের 
শত্রুতাস্থলে লিৎলেও মৃত্যু, হারলেও মৃত্যু । আমাদের মধ্যে যেকোনো 
সম্প্রদায় উগ্র উৎসাহে ম্বাজাতিক সত্তার মূলে যদি কুঠার চালায়, তবে 
নিজে উচ্চ শাখায় নিরাপদ্দে আছে মনে ক'রে খুসি হওয়াটা অধিকদিন 
টেকে না। দুঃখ এই, এই সব কথা দুঃখের দিনেই কানে সহজে পৌছয় 
না। যখন মানষের রিপু যে-কোনো কারণেই উত্তেজিত হয়, তথন 
আত্মীয়কে আঘাতের দ্বার! মানুষ আত্মহত্যা করতেও কুম্তিত হয় না। 
ইতিহাসে শোচনায়তম ঘটন1 য| ঘটে, তা এমনি করেই ঘটে । মরবার 
বুদ্ধি পেয়ে বসলে মান্য আপনিই মরবে জেনেও অন্যকে মারে | আমাদের 
সাধনা! আজ কঠিন হয়ে উঠল। আজ অসহা আঘাতেও আত্মসম্বরণ 
করতে যদি না পারি, তবে আমাদের তরফেও আত্মহত্যার আয়োজন 
করা হবে? শক্রগ্রহের হবে জয়। 

মন ক্ষু্ব আছে বলেই তোমার চিঠির মধ্যে এসব কথা লিখ লুম | 
কথাটা এ-স্থলে প্রাসঙ্গিক না হ'তে পারে, কিন্ত মন্মাস্তিক । ইতি ২শে 
ভান্্র, ১৩৩৮ । [৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ ] 


শ্রীমতী হেমন্তবালাদেবীকে লিখিত ৩৯-সংখাক পত্র দ্রষ্টব্য 


৪৩৫ 


পরিশিষ্ট ২ 


রবীন্দ্রনাথকে লিখিত 
শ্রীমতী হেমন্তবালাদেবীর তিনখানি পত্র 


আপনার ব্যথা! ভূলবার 
সঙ্কেতটি আমি পরীক্ষা করে; 
দেখব | 


শ্রীশ্রীহরি 


শুক্রবার 


শ্রীচরণেযু__ দাদা, আপনাকে দেখলে আমি সকল ছুঃখ ভূলে" যাই, 
কোনো কথাই মনে থাকে না। মনে হয়, এক শান্ত নিস্তব্ধ গভীর 
মহাশূন্যে এসে পড়েছি। এখানে অনাহত প্রণবের ভাষায় শাস্তিমনত্ 
উচ্চারিত হচ্ছে । বৈষ্ব-দর্শন বলেন, বিশ্বত্রঙ্গাণ্ডের অতীত “মহাঁকালপুর” 
নামক জ্যোতিশ্ময় কারণলোকে ত্রক্ষানন্দমগ্ আত্মারাম খধিগণের চরম 
গতিশ্থান । আপনাকে দেখলে সেই ব্রহ্গবাঁদী বেদজ্ঞ ঝষিগণের সত্তারই 
উপলব্ধি করি 1... দাঁদা, আপনি যে আমাকে মার সঙ্গে (আপনার বৌমা) 
পরিচিত করে' দেবেন বলেছেন, আমার ভাঁরি লজ্জা করছে । মাঁকি 
তার অযোগ্য সন্তানকে দয়া করবেন? কেন যে অঙ্কোচ করি দাদা, 
তার কারণ এই, আমি মূর্খ, তাঁর উপর স্পর্দা ও নির্ব,দ্বিতাঁর পার 
নেই। দাদী, আপনি মহান্‌, উদীর, আপনি আমার দেবতা, আপনি 
এ বিশ্বের আপন জন, আমি মায়ার অঞ্জন চোখে দিয়ে আপনাকে দেখি, 
যেন আপনি আমার কল্পলোকের রাজী । আপনি সর্বগুণাকর, আমি 
দোষের আধার, তবুও আপনার স্নেহের ভাঁকে আমি মায়ামুগ্ধ হয়ে 
আসি, নিজের ওজন ভূলে যাই, মনে থাকে নী, যে, আমাদের মধ্যে 
বৈষম্য কতখানি! আঁপনি অভয় দিয়েছেন, সেই সাহসে যা” তা, 
লিখি, যা” তা” বলি, (আপনি আবার সেই সব চিঠিগুলো রেখে দিয়েছেন, 


৪৩৭ 


ছি, ছি ) আপনি মহৎ অন্তকরণ নিয়ে আমাকে এতটা প্রশ্রয় দেন, 
তাই আপনার কাছে আমার কোনো লজ্জা কোনো আবরণ নেই। 
যে চোঁখে একবার দেখে ফেলেছি, তা তো আর বদলায় না, সেইজন্যে 
এখন মম্পূর্ণরূপেই এ চরণে আত্মনিবেদন করেছি, আপনার ইচ্ছার উপর 
নিভভর করে? । কিন্তু, কল্পলোক ছেড়ে একবার বান্তবরাজ্যে নেমে এলে 
তখন এই পার্থক্যটা বিশেষভাঁবেই পীড়াঁদায়ক হয়ে পড়ে। তখন কি 
আর আপনার সামনেই দ্রীড়াতে পারি ? কিন্ত, একমাত্র ভরসা, 
আপনার দয়া এবং স্সেহ। তাই বলছিলাম, মী তার মুর্খ মেয়েকে 
আপনার মত করুণার চোখে দেখবেন কি? মা যদি দয়া করে? আমার 
সব ক্রটি মাজ্জনী করেন, তা" হলে সেটা আশাতীত সৌভাগ্য মনে 
করব। আর একদিন আপনার চরণদর্শন করতে ইচ্ছা করেছি, কিন্তু, 
পরাধীন অবস্থা, কাজেই ঠিক করে” কিছু বলতে পারছি না। দাদা, 
দর্শন পাই আর না পাই, আপনার চরণপ্রান্তে যেন আমার বাস! থাকে, 
যখন আসি, আশ্রয় পাই যেন। দাঁদা আমার, তৃষ্ণার্ত পথিক পাস্থ- 
পাদপের গাত্র-নির্ঝর হ'তে জল খেতে চেয়েছিল, পেল না। তাঁর ঘরের 
জলসত্র বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু, আর কেন, স্বখের অভিলাষ সর্ববক্রই 
বঙ্জনীয়। স্থৃতরাং ওই রাতুল চরণ ছু'খানি আমার প্রণম্য হয়েই 
রইলেন। খেলায় কাজ নেই আঁর। হে খধি,_ আমার কবি আমার 
ইষ্টদবেবতার অঙ্গে লীন হয়ে রয়েছেন, যখন তীকে প্রণাম করব, সেই 
প্রণামেই কবিকে প্রণাম করা হবে। যখন সেই চিরকিশোরের সুন্দর 
চরণকমল আমার লীলাম্পদদ হয়ে শিরে, নেত্রে, ললাটে, কপোলে পেলব- 
স্পর্শ দান করবেন, তখন আমি আমার কবির স্রেহস্পর্শ যুগপৎ অনুভব 
করব । 

প্রণাম । নিবেদন ইতি সেবিকা 


8৪8০ 


শ্ীশ্রীহরি 


ভরসা 


শ্রারণেযু_ দাদা, আপনি ভেবেছেন, আমি বিরক্ত হয়েছি, এটা সম্ভব ? 
ঠাঁট্া করি বলে” চঞ্চলতা ও দুষ্টুমি করি বলে” আপনার উপর বিরক্ত 
হতে পারি ?-* আপনি জানবেন, আপনার সঙ্গে যে তর্ক করি, সে 
আপনাকে হারাবার ছুরাঁশীয় নয়, সত্যআবিষ্কারের জন্ত । আমার গ্রহে 
দৃঢ় বিশ্বাস আছে । ভক্তি করার কথা হচ্ছে না। আমি বিশ্বাস করি 
না যে নবগ্রহন্তোত্র পড়লেই গ্রহের গতি ফিরবে । কারণ, আমার 
মতে গ্রহ প্রাকৃতিক শক্তি, গ্রহের দেবতা থাকেন তো থাকুন, যেমন 
রাগ রাগিণার দেবতা আছেন। সরম্বতীপুজার বেলায় তাদের পুজ! 
হয় কিনা, জানি না। আমরা কেউ রাগ রাগিণার পুজা করি না এটা 
সত্যি। তেমনি গ্রহও হয়ত কোনো কারণে কারো কারো! পুজনীয় 
হতে পারেন, আমি নিজে সে পুজায় দীক্ষিত হইনি । আমার মতে চন্দ্রসয্য 
যেমন প্রতাক্ষ, বাঁকিগুলিও তাই। পুণিমা অমাবস্যার ভরণের মতন 
সব গ্রহের শক্তিই এই পৃথিবীতে কাজ করে। রাগ্রিক, সামাজিক, 
প্রাদেশিক, ব্যক্তিগত, সর্বপ্রকার দৃষ্টিই গ্রহের আছে। গ্রহসংস্থান দ্বারা 
ম্যালেরিয়া দূর হবে কিনা তারও বিচার হয়। ঝড়বুষ্টি, ভূমিকম্প, 
যুদ্ধবিগ্রহ, আকম্মিক দুর্ঘটনীর বিচারও হয়। আপনি পরীক্ষা করে' 
দেখুন, এইমাত্র আমার নিবেদন। আপনি ভক্তি না করুন, ভক্তি চাই 
না। পুরুষকার দ্বারা গ্রহখণ্ডন হয় কিনা, জানি না। আমার মতে 
হয় না। যার কোষ্ঠাতে এ খণ্ডনের ব্যাপারও আছে অন্য গ্রহের যোগে, 
তারই গ্রহথগুন হয়, অন্যের হয় না। বিশ্ববিধাতা আমাদের কাঁধ্য- 
প্রণালী নিদ্ধীরিত করে দিয়েছেন, জন্মের ষষ্ঠ দিনে নয়, মাতৃগর্ভে 
আসবার সঙ্গে সঙ্গেই । সেইটেই সুব্যক্ত হয় ভূমিষ্কালে। গ্রহ যেন 


৪8৪৯ 


ঘড়ি। ঘড়ির হুকুমে সময় চলে না, সময়ের তালেই ঘড়ি চলে। তবুও, 
ঘড়ি দেখেই সময় ঠিক করতে হয়। তেমনি গ্রহ বিধাঁতাঁর উপর টেক্কা 
দ্বেয় না, বিধাতার ইচ্ছাকেই গ্রহ প্রকাশ করে। কোষ্ঠা দেখে সেটা 
আমরা বুঝতে পারি । আমার এই বিশ্বাস ষদ্দি ভ্রীন্ত হয়, সেটা! আপনি 
প্রত্যক্ষ দেখিয়ে দিন। গ্রহের সঙ্গে হিন্দুধ্খশের সম্পর্ক নেউ। গ্রহ 
সকলের নিয়ামক । তবে হিন্দুরা এই শাস্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন 
বলে” তাই জ্যোতিষ হিন্দুয়ানির মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে । আমি তর্ক 
করছি না, জানতে চাই যে, গ্রহ সত্যই বুজরুকির ব্যাপার কিন1? 
আপনার ন্যায় ব্যক্তি যে জিনিষটি উড়িয়ে দেন, সেটি অন্য পণ্ডিত ও 
বুদ্ধিমান লোক কোন্‌ সাহসে আকড়ে আছেন? আমি সেইজন্য কোী 
বিচার করে" জানতে চাই যে, জ্যোতিষ সত্া কিনা? গোবর যে 
শুচি, এর প্রমাঁণ দেওয়া শক্ত, ওটা অভ্যস্ত সংঙ্গার মাত্র । কিন্ত, গ্রহ 
যে সত্য, এর প্রমাণ দেওয়া খুবই সোজাঁ-- বিচার করে' দেখলেই হ'ল । 
তবে কি পুরুষকার মান্ব না? মান্ব। সে এইভাবে, যেমন মুনূ্ধ, 
রোগীরও চিকিৎসা করা হয়, সে মরবে জেনেও । আমার এত দৃঢ় 
করে" বলা স্পদ্ধী, কি্তু স্পদ্ধা করছি না দাদা, আমার বিশ্বাসটা নিবেদন 
করছি মাত্র । আমার মনে হয়, যাঁচাই করে? দেখা ভাল যে সত্যি 
কিনা । ভক্তিশ্রদ্ধার কোনো কথা নেই এতে । 

আপনি ঠিক জানবেন, আপনার প্রতি আমার ভক্তি আঁছে। কেবল 
পুর্বব প্রতিজ্ঞা স্মরণ করে?, আশ্রমের মুখ চেয়েই আমি নিজের বিশ্বাস 
নিয়ে আডি । নইলে, আপনি কি বিশ্বীম করেন দাদা, আপনার ভাক 
শুনবার পরও আমি নিজের গণ্ডীতে পড়ে" খাঁকতাম ? ষেদ্দিন 
শ্রীগুরুদেবের ডাক শুনি, সেদিন কি আমার সংসার সমাজ আমাকে 
আটকাতে পেরেছিল? সে সময়ে তখনকার অভ্যন্ত সংস্কার ও অভ্যাস 
কি আমি ছাঁড়িনি? আজকের এ দ্বিনকে তাঁর চেয়ে কম বলে” আমি 


৪8৪8 


মনে করি না। আপনাকে আমি কারুর চেয়ে কম ভাবতে পারি না। 
তবে যে তর্ক করি, সেটা সত্যের সন্ধান পীবার জন্তে এবং আঁচারকে 
যে আকড়ে আছি, সে কেবল পুর্ব প্রতিজ্ঞার জন্যে । আমার ছূর্ভাগ্য 
যে, আমার পুর্ণ পুজ। আপনার চরণে দিতে পারছি না। আপনি কি 
আমার মন দেখতে পাচ্ছেন না দাদ? এই আচার নিয়মের দরুন 
আমার ইচ্ছামত অনেক কাজই হয় না আমি অলস, আমার এই 
আচারের জন্য আমার ইচ্ছামত খাওয়া দাওয়া হয় না। এইজন্য 
আচার আছে যে, হয়ত কোন না কোন দিন আমি আশ্রমে যেতে 
পারব । আশ্রমে আমার শ্রাগুরুদেবের ম্মরণতীর্থে যেতে পারলে 
সেখানকার পাঁচজনের একজন বলে' গণ্য হ'তে পারলে-_ শ্রীগুরুদেবের 
শেষ ইচ্ছা সার্থক হবে । তবে যে গুদের আজ্ঞা অমান্য করে আপনার 
কাছে এসেছি, এট| গুদের মতে অপরাধ, এবং আমার মতে আমার 
প্রাণের টীন। আমি এ অপরাধ মেনে নিলাম । আমি যদি আচার 
ত্যাগ না] করি, তবে গুদের এ ক্রোধ চিরদিন থাকবে না অন্ততঃ 
বাইরে থেকেও আমার পুজা নিবেদন করা৷ চলবে । এইজন্য আচার 
করি। আপনার সঙ্গে তর্ক করি এই বলে” যে, এগুলি সত্য নয় তা'' 
আপনি কি প্রমাণে সাব্যস্ত করলেন ? স্ত্ীআচার দেশীচার লোকাঁচারে 
গলদ আছে হয়ত। কিন্ত, স্মৃতির আচারের দোষগুণ বিচারসাপেক্ষ | 
আমি চাঁই, এর দৌঁষগুণের সম্যক বিচার হোক। ভারতকে 
প্রকতিদেবী পর্বত ও সমুদ্র দিয়ে অন্য দেশের থেকে পুথক করেছেন । 
অন্তান্ত দেশের বিশেষত্ব মরু, সাগর, পর্বত, তুষাঁর, শ্ামলতা, একা 
ভাঁরতে সবই আঁছে। ভারতের রীতি নীতি অন্য দেশের থেকে পৃথক । 
শাস্্রও তাই । এক্ষেত্রে ভারত কেন তাঁর স্বকীয় রীতি নীতি নিয়েই 
উন্নতির চেষ্টা করবে না, আমার এই অভিযোগ । যদ্দি সে অশক্ত হয়ে 
থাকে, স্পষ্ট জবাব দিক, আমি এই চাই । তাই আপনার চিঠি আমি 


৪৪৩ 


'রক্ষণশীলদিগকে পড়তে বলি এবং আপনাকে বারংবার খোঁচা দিয়ে দিয়ে 
চিঠি আদায় করি । আমি চাঁই যে, প্রাচীন ও নব্য ভারত তর্ক দ্বারাই 
হোক বা যেরূপেই হোক, একটা মীমাংসীয় আন্বক। পঞগ্ডিতের। যা? 
বলবেন তারি অন্থমান করে আমি আপনাকে বলি। কিন্ত, দাত্তিক 
পণ্ডিত ধাঁরা তাঁরা তর্কই করবেন না, বলবেন, “মস্বৃতির বাইরের কারু 
সঙ্গে স্থতির বিচার কেন করব ?” কিন্তু, এ দম্ভ অসার । আমি প্রাচীন 
ভারত বলতে মাত্র ম্মার্ত ভারতকে লক্ষ্য করে বলছি-_ কলির পূর্বব যুগের 
ভারতকে নয় । যদি উপায় থাকৃত, আমার কাছে যে সব চিঠি আপনি 
লেখেন, তা” আশ্রমকে দেখাঁতাম | কিন্ত, নিরুপায় । তীরা গণ্ডীর 
বাইরের কোনো জিনিষ চোখে দেখতেও চাইবেন না। 

আমি ষে ঘরে বাইরে দোঁধী হয়েও এ সব চিঠি লিখছি আর চিঠি 
আদায় করছি, নব্য ভারত এর থেকে তার পথ চিনে নেবে । আমার 
উপকার না হোক, আমার দেশের আর সকলে উপরুত হতে পারবে । 
স্থতরাং আমার তর্ক দেখে আপনি আর কিছু মনে করবেন না। যদি 
আমি পণ্ডিত হ"তাম, বুদ্ধি করে? তর্ক করতাম । 

আমার ক্ষুপ্র মাথায় যা" আসছে, তাই বলছি মাত্র । আমি স্বৃতি- 
শাক্স মোটেই আলোচনা করি নি-_ মা ছেলেবেলায় উনবিংশতি সংহিতা! 
প্রভৃতি একবার পড়তে দিয়েছিলেন, সে মনেও নেই । এটুকু মনে আছে 
যে, স্বৃতিসংহিতার বিধান আমাদের দেশাচার লোকাঁচারের নীচে, চাপা 
পড়ে গেছে__ আমরা ঠিক মন্্ুর শিষ্য নই ।--- --। 

আমি আপনাকে মানি, তাই আপনার সঙ্গে এত তর্ক করি | আপনি 
আমাদের হিন্দুসমীজের নাঁড়ীনক্ষত্র জানেন, আপনার কথার দাম আঁছে-_ 
এবং আপনার বিধান মেনেই বাংলার ছেলেরা চলছে__ অবশ্ঠ আপনার 
সছুপদেশগুলো বাদ দিয়ে । কেননা, আপনি পরমাত্মা মানেন, উপনিষদ 
মানেন, সাধনা মানেন, সংযম মানেন, ওর তার ধার দিয়েও যায় না। 


88৪8 


গ্রহ সম্বন্ধে দু'খানা বই,_- আপনি দয়া করে” একটু চোখ বুলিয়ে 
দেখবেন এবং অন্ততঃ একজনের জন্মসময় আমাকে জানীলে আমি সমস্ত 
ফলাফল এনে দেব, মিলিয়ে দেখে যদি ঠিক ন1 হয়, আমি গ্রহকে আর 
মান্ব না । আমার মঙ্গলের জন্যই আশা করি আপনি এটা করবেন । 
আঁপনার স্মেহের ওপর নির্ভর করেই আমি এত স্পর্দা প্রকাশ করছি 
দাদা রাগ বা বিরক্তির কথা মনে আনবেন না ছুটি পাঁয়ে পড়ি । 
প্রণাম নিবেদন ইতি 
আপনার 
সেবিকা 


শ্রীশ্রীহরি 
বুধবার রাত্রি ও. 
বৃহস্পতি সকাল 


শ্রীচরণেধু-_ শ্রীগীতায় শ্রীভগবান বলিতেছেন, 

“আপুধ্যমীণমচল প্রতিষ্ঠং সমুদ্রমাপঃ প্রবিশস্তি যদ্বৎ । 

তদ্বৎ কাম যং প্রবিশন্তি সর্বেব স শান্তিমাপ্রোতি ন কাঁমকাঁমী ॥৮ 
স্থিতপ্রজ্জঞের লক্ষণেও বলিয়াছেন, 

“প্রজহাতি যদ] কামান্‌ সর্ববান্‌ পার্থ মনোগতান্। 

আত্মন্যেবাত্মন। তুষ্ট; স্থিতপ্রজ্ঞন্তদেচ্যুতে ॥ 

“যঃ সব্ধত্রানভিন্েহস্তত্তৎ প্রাপা শ্ুভীশুভম্‌। 

নাভিনন্দতি ন ছেষ্টি তন্ত প্রজ্ঞা গ্রতিষ্ঠিত।” 

ইত্যাদি 


98 ৫ 


এগুলি আমার জীবনে আসা অসম্ভব বলিয়াই আমার চিরদিনের 
ধারণা । কিন্ত, এমন মীন্গুষ তে! চোখে দেখিতে পাইলীম। যেদিন 
শ্রীগুরুদেবকে দর্শন করি, তখন জ্ঞানবুদ্ধি বেশী ছিল না। পধ্যবেক্ষণ- 
ক্ষমৃতা ছিল না, আনন্দে মাতিয়া৷ আত্মহার1 ভাবে দিন কাঁটিত। যখন 
তিনি গভীর হইয়া উঠিলেন, তখন আমি তো! সংসারে ফিরিয়। 
আসিয়াছি। তিনি ২৫২৬ বৎসর বয়সে সন্াস গ্রহণ করেন। তার 
৩৩ বৎসর বয়সে আমি চলিয়া আমি। তাঁহাকে এসব দিক দিয়া বিচার 
করিয়! দেখি নাই কখনো । তিনি গম্ভীর, সরস, স্ন্দর, আনন্দময়, সরল 
ও করুণার্দ ছিলেন, কিন্ত, প্রয়ৌোজনমত উগ্র কঠোরও হইতে জাঁনিতেন । 
শক্ত শক্ত কথা বলিয়া মানুষের মশ্বস্থানে আঘাত দিতে জানিতেন-_ 
কাদাইতে জানিতেন। তখন একটুও দয়ামায়া আসিত ন|। রাঁশভারি 
ছিলেন, কগরধধ্বনি ছিল গম্ভীর ।-.. এগুলি দেখিয়াছি, কিন্ত, অত বিচার 
করিয়া কখনে। দেখি নাই । 
আমার মনে হয়, আপনার প্ররুতি অধিকতর দৃঢ়, স্থির, আ্ঘনিভর, 
ও সহিষ্ণু । আপনি প্রশান্ত, আপনার করুণার-__ স্সেহের অন্ত না, 
কিন্তু, তাহার আবেগ প্রচ্ছন্ন । আপনার বল এত বেশী যে, সে বল- 
প্রয়োগের জন্ত কোনো কৃত্রিম উপায়ের প্রয়োজন হয় না। না মিনতি, না 
দণ্তপ্রয়োগ। আপনার কঠোর আদেশেরও প্রয়োজন নীই | মুখের অতি 
সাধারণ কথাই যথেষ্ট । নিজের শক্তি সম্বন্ধে যথেষ্ট আস্থা আছে বলিয়াই 
আপনি তাঁর অপপ্রয়োগ দূরের কথা, প্রয়োগ করিতেও ইতস্ততঃ করেন । 
পাঁশুপত অস্ত্র ছিল বলিয়াই অজ্ুন যুদ্ধে অনিচ্ছু হইয়াছিলেন, খাদের সে 
অস্ত্র ছিল না, যুদ্ধোৎসাহ তাদেরই ছিল বেশী। আপনার ধশ্ম আমি হয়ত 
গ্রহণ করিব না । আপনার চেয়ে আপনীর ধশ্মের শ্রেষ্ঠতা আমার অনুভবে 
আসে না । আপনি স্বয়ংই পুথিবীর আশ্চর্য পদার্থ । আপনি নিজের চেয়ে 
বড় কোনে ইঠ্টদেবতাকে খুঁজিয়া পাইয়াছেন কিনা, জানি না। তাই, 


৪৪৩৬ 


আপনার চেয়ে আমার নিজের কল্পনাই ধর্খ বিষয়ে আমার ভাল লাগে। 
আমি নিজের ইষ্টর্দেবতাকে নিজের চেয়ে বড় দেখি, নিজেকে দেখি হীন। 
আর, আপনার ই্টদ্বেবত1 যেন আপনার সন্খে প্রভাহীন হইয়া পড়েন। 
আমার তাই মনে হয়|... আপনি আমার জননীর মতই ভোৌগবিরক্ত 
উদীসীন। প্রয়োজনীয় ভোগ্য বিষয় অনাসক্তভাবে গ্রহণ করেন। 
আপনার হৃদয় তীহারই মত কারুণ্য ও মমতায় বিগলিত। কিন্ত, তার 
মত অসহিষ্ক হঠাৎক্রোধী আপনি নহেন। আপনি বুদ্ধদেবের মত বলিতে 
শিখিয়াছেন, “আসক্তি ও প্রেম হইতেই শোঁক হয়, ভয় হয়। উহা হইতে 
বিপ্রমুক্ত ব্যক্তির শোঁক নাই, ভপ্নউ বা কোথায় ?” আপনি আপনার প্রিয় 
দেবতা নটরাজের মতই সন্াসী ত্যাগী, অথচ অর্দনারীশ্বর | সে নারী 
আপনার অন্তরলোকবামিনী । 'আঁপনি তীহাঁর মতনই জ্ঞানী, ধ্যানী, 
যোগী, আবার সঙ্গীতকলাঁরসিক, নটনাথ। আপনি কখনও মুসলমান 
ফকির, কখনও হিন্দু আধ্য খষি, কখনও বা! খৃষ্টান বিশপ | আঁপনি বলেন, 
আপনি গুরু নন, গুরুমশাই নন, পণ্ডিত নন, কিন্ত, আপনিই যথার্থ 
আঁচাঁধা, শিক্ষক, অধ্যাপক | আপনিই পৃথিবীর দৈহিক মানসিক সামাজিক 
ও আধ্যাত্মিক সকল রোগের চিকিৎসক | আপনি ত্রাঙ্গণ, ক্ষত্রিয় এবং 
বৈশ্তা। শুদ্রও আপনি । যখন আপনি জ্ঞানদাতা, তখন ব্রাহ্মণ । যখন 
পালক ও শাসক, তখন আঁপনি ক্ষত্রিয়, চক্রবত্তাঁ, সার্বভৌম, সম্রাট । 
যখন কুষিশিল্পের উদ্ভাবক তখন বেশ্তা, যখন সেবাধশ্মশিক্ষক তখন শুন্র। 
আপনি এত নিরাঁসক্ত অথচ এমন স্েহকরুণ ! আপশীর টেলিফোনের 
কথাগুলি এমন স্েহ ও করুণার অমুতমাঁথা! কি সৌভাগো আপনাকে 
আশাতীত কল্পনাতীত রূপে পাইলাম, কি দুর্ভাগ্যের ছুভৌগে হারাইতেছি? 
আমার শৈশবে আপনি একজন সাধারণ লেখক বলিয়া গণ্য হইতেন, কিন্ত, 
তখনি চিরস্বন্দর বলিয়া আপনার খ্যাতি ছিল। আপনি সৌন্দর্যের জনক, 
লক্ষ্মীর জনক। আমি আপনার বিরুদ্ধ পক্ষের কথাই চিরদিন শুনিয়া 


88৭ 


আসিয়াছি, ন্বপক্ষের কথ! শুনিতে পাই নাই । কি মায়ামন্ত্রে আমাকে 
দিব্যদৃষ্টি দান করিলেন! আজ আপনি লেখক নন, হয়ত কবি, কিন্ত সে 
কোন্‌ কবি? কালিদাস কি? কদীচ নয়। কলিদাসের সঙ্গে আপনার 
তুলনা আপনার পক্ষে অবমাননাকর । আপনি কবি-সার্বভৌম। এ 
উপাধি দিয়াছেন যিনি, তাঁর বুদ্ধিকে আমি বিস্ময়ভরে নমস্কার করি। 
সৌন্দর্যের, রসের, আনন্দের, প্রেমের, জ্ঞানের, কম্মের, বুদ্ধিমত্তার, প্রাণের 
যেদ্দিক দিয়াই হউক, আপনি প্রত্যেক ভূমিরই রাজা । আপনি কবির 
বিশেষ শক্তি দিয়া সব কিছু জন করেন, রক্ষা করেন, আবার বিনাশও 
করেন (যিনি বন্ধমোক্ষরত, তিনিই কবি। ) আপনি অনন্ত-কম্মা, 
অনন্তরূপ। আপনি যে কি, কি যে নন, তা" তো বুঝিতে পারি না। 
এতদিন আপনি আমার অদেখা হইয়া কোথায় লুকাঁইয়া ছিলেন ?... 
আমার শ্রীগ্তরুর যে সকল সদগুণে আমি আকুষ্ট, তাহার অনেকটাই 
আপনার হৃদয়-প্রস্তত। একথা আশ্রম হয়ত স্বীকার করিবেন নী 
আমাকে দোঁষ দিবেন ।".. 

আপনি নরদেহে ভগবৎবিভূতি, তাই আপনি বিশ্বের পরমাত্মীয় | 
আপনাকে কেহ স্বীকার করুন আর নাঁ'ই করুন, আপনি নিজমহিমাঁয় 
চিরবিরাঁজিত। আপনি যদি হিন্দু আচারনিষ্ঠ হইতেন, বিশ্ব বঞ্চিত 

ত। যদি ব্রাহ্মধশ্মনিষ্ঠ হইতেন, নটরাঁজের বন্দনাগান হইত নাঁ_ 
মীনবরূপী ভগবাঁন আপনাকে ধরা দিতেন না। সেদিন যখন আপনার 
অমৃতকগে “সত্যং জ্ঞানমনন্তৎ ব্রহ্ম” এই মহামন্ত্র শুনিলাম, মনে হইল, 
কলির অতীত কোনও যুগে আসিয়াছি, মহষির দর্শন পাইয়াছি। সেই 
পুণা মন্ত্রের সুমধুর ধ্বনি আমার অন্তরে প্রতিপবনিত হইতেছে । আশীর্বাদ 
করিবেন, যেন তাহা বিশ্বৃত না হই |". 

আমি নিজেকে একটুও বিশ্বাস করি না, তাই আশঙ্ক। হয়, আপনাকে 
বুঝি বা ভুলিয়া! যাইব । কিন্তু'আমার লেখাগুলি জাগ্রত থাকিয়া সাক্ষ্য দিবে 


৪8৪৮ 


যে, জীবনের কোঁনো এক অবসরে, আমি সারা জীবন যে রসের পিপাস্থ, 
তাঁর উৎস খুঁজিতে বাহির হইয়াছিলাম, খুঁজিয়া পাইয়াছিলাঁম। আঁমার 
শীগ্ুরুকে আমি আপনার হদ্য়নন্দনেরই অমূল্য পাঁরিজাতি বলি, অথবা 
আপনার হৃদয়কুঞ্জের মঞ্জুতুলসী । তিনি যখন তাহার হদয়দয়িতের কলগ্ন 
হইলেন, তখন তাঁহার জন্মস্থান হইতে ছাঁডাঁছাঁডি হইল | তীর নবজীবন- 
ধার! নৃতন খাতে বহিল, তথাপি তার চলন বলন, সৌন্দধ্যজ্ঞান কবিত, 
ভাবুকতা, প্রেম, রস, তাহাকে বিশেষ করিয়া তুলিলেও এ কথা ভূলিতে 
দিল নাঁ_ যে, অমুক কাননকুঞ্জে তীহার জন্ম। তার শৈশবের__ বাঁলোর 
কুলাচরিত প্রথায় সংপ্রাপ্চ শ্রগৌরগোবিন্দ-উপাসন1 সেদিন নবভাঁবে 
নবরূপে সুন্দর হইয়া উঠিল, যেদিন তিনি আপনার কাবারস পাঁন করিলেন। 
আপনার “অন্যর্ধামী” “জীবনদেেবতা” আর তীর হৃদয়দয়িত ও প্রাণেশ্বরী 
সেদিন এক হইলেন । তাহার বহুকাল পরে, সংসারের নান। ছূর্ববাবহাঁরে 
তিনি যখন কাব্যের পুষ্পহার খুলিয়! ফেলিয়া কঠোর কশ্খের স্বণশঙ্খল 
পরিলেন, তার তথনকাঁর রূপ আমার কাছে স্বম্পষ্ট না হইতেই আমি 
চলিয়। আসিয়াছি। সেই চিরকিশোরের কৈশোর যৌবনকে না ঈ,উতেই 
প্রৌত্র তাকে গ্রাস করিল 1: ০১১ আজ সেই কাবোর উতৎসকে অকম্মাঁৎ 
অভাবশীম্ রূপে পাইয়া আমি যত্র করি নাই, জড়ত্বের তামসিকতার 
আধেসে চক্ষু মুদিয়। চণ্ড টাঁনিতেছিলাম, ইত্যবসরে কোন্‌ কঠোর হস্তের 
টানে আম্বার ধন চলিয়া যায় ! এ জন্মে আর আপনাকে দেখা, আপনার 
কথা শোনা, আপনাকে জানা চেন আমার হইল না। আমার জীবন 
অসমাপ্ধ সৌভাগ্যে, স্থসমাঞ্* ছুভাগ্যে পুর্ণ রহিয়া গেল | তবুও মনে 
রাখিবেন, আমি যতই কেনন। অধম হই, আমি আপনার । কারণ, আমি 
আমার শ্রীপ্তরুর যে আনন্দসৌরভে মত্ত হইয়াছিলাম, তাহা শ্রীরুষ্ণঅঙ্গ- 
বাহিদ্ত হইলেও তাহাঁর মুল বনিয়ার্দের অনেকখানি আপনারই হৃদরণ্য- 
প্রন্তত। সেই গন্ধ ধরিয়। খু'জিতে খু'ঁজিতে আপনাকে পাইয়া গিয়াছিলীম, 


৯২৯ ৪৪৯ 


রাখিতে পাঁরিলাম নাঁ_ নিজের কশ্মদোঁষে। আপনি আমার নন, আপনি 
বরঞ্চ & যুরোগীয়দেরই | কিন্তু, আপনার বুকের অন্তস্তলে সেই কষ্ণতুলসীর 
শিকড এখনো বর্তমান যাঁর মগ্রী একদিন শ্রীশ্রীগৌরকিশোৌরের 
বনমালাবৈজয়ন্তীর স্তবকে ছুলিয়াছিল, আর শোঁভিত হইয়াছিল কনক- 
কিশোরীর ছুটি চারুকর্ণে। আপনার মন্মের সেই তুলসীমুলটুকু যেন বিল্ব 
বট অশ্ব সহকারের শিকড়ের চাপে মরিয়! না যায়, এই আপনার সেবিকার 
শেষ নিবেদন |". 

আপনি বিশ্বাস করুন, ব্রজের প্রেম কামনাছুষ্ট নহে । ধাহারা তার 
নিতান্ত স্থুল দ্রিকটা খুলিয়া দেখাইয়াছেন, ভীহাঁদিগকে সসম্থমে প্রণতি 
নিবেদন করিয়াও আমি আপনাকে জানাই, ব্রজের প্রেম কিরূপ। 
তাহ! জানিতে হইলে পুর্ণব্রহ্ষচারী শ্রীনবদ্বীপকিশোরের জীবনী যেন 
আলোচনা করেন। অর্থাৎ তাহার ভক্তভাবগত জীবনী নয়, স্বকীয় 
আনন্দময় জীবনী । শ্রীগৌরাঙ্গ যে অংশে পণ্ডিত, মন্যাসী, ভক্ত, যে 
অংশে তিনি শ্রীকুষ্জোপাসনামপ্র, সে অংশে নয়৮ যে অংশে তিনি 
প্রিয়মগ্ুলীকে লইয়া ব্রজের লীলান্গকরণ করিতেছেন, রাসে, দোলে, 
ঝুলনে, শারদীয় রাসে, সেইখানে দেখিবেন, তিনি পুর্ণ সংখমী, 
অথচ প্রেমের অফুরাঁণ অক্ষয় মানসপরোবর । আপনি আমার ঠাকুরকে 
এ দিক দিয়! দেখিলে বুঝিতে পারিবেন যে, বৈষ্ণবধশ্ম বাস্তবিক 
লালসাছুষ্ট নহে। নিরুপাঁধি প্রেমই তাহার বিশেষত্ব । সে প্রেম 
নিফাম। ব্রজকিশোরকিশোরীদের চঞ্চলতা ছিল গৌণতম, প্রেমই ছিল 
মুখ । সেই যে প্রেম» তাহা অনাদি অনন্ত নিত্য সত্য সচ্চিদানন্দ 
. পরত্রহ্মেরই অনুকরণ । সেই পরক্রদ্ধ জ্যোতিম্ময়, হিরগ্য় পরম পুরুষ । 
তিনি একাধারে নারী ও নর। তিনি আত্মারাম। তিনি রস ও 
আনন্দের নিত্য উৎস। তিনি বিশ্বকম্ম।, কিন্ত “কম্মকাঁর” নহেন-_ তার 
কম্মও কাব্যেরই রূপাস্তর । আমার এ কথার সাক্ষ্য পাইবেন শ্রীচৈতন্ত- 


8 ৫০ 


চরিতাঁমৃতের এই শ্লোক পধ্যালোচনা করিলেই । 

“রাঁধাকষ্প্রণয়বিকৃতিহলাদিনী শক্তিরম্মাৎ 

একাঁক্মানৌ অপি, ভূবি পুরা দেহভেদৌ গতৌ তৌ 

চৈতন্যাখাং প্রকটমধুন। তদ্দ্য়ং চৈক্যমাপ্তং 

রাঁধাভাবছাতিস্তবলিতং নৌমি কুষ্ম্বরূপং |” 
শ্রীরাধ। শ্রীরুঞ্ণের প্রণয়বিক্রুতি হলাদিনী শক্তি, অতএব উভয়ে একাত্ম । 
একাঁআা হইয়াঁও ভমগ্ডলে অনতরণকালে দেহভেদে দ্বিধা হইয়াছিলেন । 
এক্ষণে এ দুই এক হইয়া চৈতন্য নাঁম ধাঁরণ করিয়াছেন | সেই রাঁধাঁভাঁব- 
দাতি-স্থবলিত প্রীরুষ্ণস্বূপ চৈতন্যকে প্রণাম করি |---, 

আঁমি আপনাকে স্বধশ্মন্রষ্ট হইয়া বৈষ্ণবধম্ম গ্রহণ করিতে অনুরোধ 
করার স্পদ্দী রাখি না। আমি শ্রধু বলি, আপনি যেন অনুকলনেত্রেই 
ইহাকে দেখেন__ প্রতিক্ল না হন। আপনি যেন বিশ্বাস করেন, যে, 
আসল বৈঞ্ণবধম্ম যাহা, তীহা! প্রক্রতপক্ষে কামনীকলুষিত নয় । তাহার 
অন্তশীলনে নিম্মল ভগবংপ্রেমানন্দ প্রাপ্তি হয়। আপনার অন্তরও 
তাহাউ চায়, ভাবিয়া দেখিবেন । আমি নিজদোষে বঞ্চিত বলিয়া ধশ্ম 
দোষী নন। আমার ইচ্ছা করে, আমার সতীর্থগণ ধাঁরা প্রকৃত 
নিম্বল ভক্তিমান__ ভীহারা দেশে দেশে এই মঙ্গলবার্তা প্রচার করুন| 
কিন্তু, তাহাঁর। “প্রচার” ভালবাসেন না। যাক ।*.. আমি একে দীনহীন 
মলিন, অলস জড় অকন্মণ্য ও কামনাকলুঘিত, তাহাতে আবার বন্দী । 
আমার বন্ধন কেহ দয়! করিয়া যদি খুলিয়া দেয়, তবে আমিও প্রাণ- 
স্পর্শে নিম্মল হইব, অন্ততঃ কিছুকালের জন্য । আমাকে ছাঁড়িয়। দিক, 
আমি একবার দেশদেশীন্তরে ঘুরিয়া আঁসি। কিন্ত, যতদিন বীচিব, 
আমার নিত্য কারাদশ। খুচিবে নী । আমি মুক্তি পাইব না। 
“গৌরনামের জয়পতাকা 
উড়াইব দেশ বিদেশে” 


৪৫১ 


এ বাসনা নফল হইল না । হাহারা এ কাজ করিতেছেন, সেই শ্রীরামদাস 
বাবাজী মহাশয় শ্রীপ্রেমানন্দ ভারতী প্রভৃতি ও শ্রীগৌড়ীয় মঠের 
সন্নযাসিগণ, তীহাদিগকে আমি বন্দনা করি, তবুও বলি, আমল জিনিষের 
সন্ধান তীাহারাঁও পাঁন নাই । তীহারাঁও বাঁহা অনুষ্ঠানে ভারাক্রান্ত, 
প্ররুত সন্্যাসীর বাহ্‌ অনুষ্ঠান স্বল্প, ভাবই বেশী । 

“প্রতি পুষ্প ধ্যানে করেন 


রুষের সমপণ |” 
দিল্লীর বাজারের জিলাপীগুলি ধ্যানযোগে শ্রীকুষ্চসাং করিয়। দিলেন । 
বিশ্বের সন্দত্রর. “বন দেখি মনে হয় 
এই বৃন্দাবন । 


শৈল দেখি মনে পড়ে 
এই গোবদ্দন ॥ 
যাহা নদী দেখে, তীহা 
মানয়ে কালিন্দী |” 
এই দৃষ্টি লইয়া, এই ভাঁব লইয়া যিনি বিশ্বের সর্ধত্র ব্রজলীল! দর্শন করেন, 
তিনিই উত্তম ভক্ত। তীর বাহ্ানুষ্ঠান কমিয়! খাঁয়। পরিব্রাজক হইবার 
বাধা তাহার থাকে না। আনন্দ তাহার প্রতি পদক্ষেপে সহজ | আজ 
তবে আসি ।-_ 


প্রণাম । 


নিবেদন ইতি 
আপনার সেবিকা 


১ শেষাংশ বচিত। তিনগানি পত্রের অন্ত কোনো অংশ বজিত হয় নাই। 


গ্রন্থপরিচয় 


রবীন্দ্রনাথের মহিত পত্রব্যবহার প্রসঙ্গে শ্রীমতী হেমন্তবাঁল! দেবী (জন্ম 
১৩০১ বঙ্গীব্ষ ) এক স্থানে লিখিয়াছেন-_ 

“আমি যে ঘরে বাইরে দৌষী হয়েও এ সব চিঠি লিখছি আঁর চিঠি 
আদায় করছি, নব্য ভীরত এর থেকে তাঁর পথ চিনে নেবে । আমার 
উপকার ন। হোক, আমার দেশের আর সকলে উপকৃত হতে পারবে ।' 

বস্ততঃ শেষ জীবনে লেখা রবীন্দ্রনাথের পত্রধাঁরারি মধ্যে শ্রীমতী 
হেমন্তবাল| দেবীকে লিখিত পত্রাবলী কেবল যে সংখ্যাঁগৌরবেই বিশিষ্ট এমন 
নয়, রবীন্দ্রনাথের ধর্মমত ও আত্মপরিচয়ের ব্যাখ্যানের দিক দিয়াঁও একটি 
ব্বতন্ধ স্থান ও মধাদ1 অধিকার করিয়া আছে । 

“আমার যা শেষ কথা তা আমাঁকে বলে যেতেই হবে": মতে স্বতন্ত্র 
কিন্তু শ্রদ্ধায় অনুগত পত্রলেখিকাঁর সহিত বিতর্কে রবীন্দ্রনাথের সেই 
শেষ কথা' বিশেষ একটি দীপ্তি ও দৃঢ়তার সহিত ব্যক্ত হইয়াছিল। 
জানা যায়__ আচার বিচার" নাঁম দিয়! রবীন্দ্রনাথের জীবিতকাঁলেই ইহার 
অনেকগুলি পত্র গ্রন্থাকারে সংকলনের কথা হয়, সেজন্য কবি-কর্তৃক 
সম্পাদিতও হইয়াছিল। শেষ পরধন্ত গ্রন্থ প্রকাশিত হয় নাই, তবে 
প্রবাসীতে মুদ্রিত হইয়াছিল ।+ 

শ্রীমতী হেমস্তবাঁলা দেবী রবীন্দ্রনাথের সহিত তীহার পত্রব্যবহাঁরের 
ও সাক্ষাৎ-পরিচয়ের যে বিবরণ, আমাদের নিকট প্রেরিত তাহার বিভিন্ন 
সময়ের বিভিন্ন রচনায় লিখিয়ী দিয়াছেন, তাহাঁরই কিয়দংশ অতঃপর 
মুদ্রিত হইল ।__ 


৪8৫৫ 


পরিচয়লাভ ও পত্রবিনিময় 


আমি যখন কলিকাতায় পতিগৃহে তখন পারিবারিক ও অন্যবিধ 
অশান্তিতে কাতর হয়ে সাহিত্যের আশ্রয় নিই। আমি বৈষ্ববধম্ম গ্রহণ 
করেছিলাম আমাদের পরিবারের মতের বিরুদ্ধে । এক সময়ে শ্রীবৃন্দাবন- 
দর্শনে যাঁবাঁর অনুমতি পাঁবাঁর জন্য বনু চেষ্টা করেও অনুমতি পেলাম না। 
সেই উপলক্ষ্যে একটা দারুণ বিক্ষোভ ও অশান্তি চলছিল | বিক্ষুব্ধ মনকে 
শান্ত করবাঁর জন্ত আমি অন্য পথ ধরলাম । 

রবীন্দ্রনীথের যোগাযোগ, শেষের কবিতা ও সঞ্চয় পড়ি, তার কবিতা 
ও গান কিছু কিছু পড়! ছিল__ অকন্মাঁৎ তার একটি নৃতন পরিচয় আমীর 
কাছে উদ্ঘাঁটিত হয়, এবং আমার মানসিক অশান্তির সময় আমি তার 
প্রতি শ্রদ্ধা ও রুতজ্ঞতায় উদ্বেল হয়ে তাকে একখানি পোস্টকাড লিখি 
যোগাযোগের গ্রন্থকারকে অজন্র নমস্কার নিজের নামঠিকানাহীন 
পত্র।_- তার পর তার আশীব্বাদ্‌ প্রার্থনা করি, নিজের ছদ্মনাম 
“জোনাকি” নামে, অন্য একটা ঠিকানা দিই । এ চিঠির উত্তরে ভার 
আশীর্ধাঁদ পেয়ে খুশি হই। তার পর একটি কবিতা প্রার্থণী করি, এবং 
জানতে চাঁই, তিনি কাঁর উদ্দেশে কবিতা! লেখেন, ভগবান্‌ না মান্টিষ। 
উত্তরে কবিতাঁটিই পাই শুধু, কবিতাটির নাম নীহারিকা? | 

এর পর থেকে নান প্রশ্ন করে করে চিঠি লিখতে থাকি এবং উত্তরও 
পাই। 

“আপনি এমন কবি ও ভাবুক হয়েও বৈষ্ণবধম্মকে কেন সমর্থন করেন 
নি, এবং সাঁকার-উপাসনার বিরুদ্ধে বলেন কেন ?' এই একটি প্রশ্ন । 

কবিগুরুর সঙ্গে আমার প্রথম পত্রালাপের সময় আমার একটি 
উপনাঁম “জোনাঁকি' ও আমার রাঁশিনাম পক্ষবাঁলা” এই নাম ছুটির অন্তরালে 
আমার পরিচয় প্রচ্ছন্ন ছিল। ইতিমধ্যে তার শরীর অসুস্থ হয়, আমার 


৪৫৬ 


মনে তখন পরিতাপের উদয় হল, এই প্রাচীন প্রবীণ পুজনীয় ব্যক্তিটির 
সঙ্গে কপট ব্যবহার করেছি বলে”, অভিভাবকদের ভয়েইও অবশ্য আত্ম- 
পরিচয় দিই নি তখন। কিন্তু এখন সমন্ত ভয়-সংকৌচের বাঁধা ঠেলে 
ফেলে একদিন তাকে নিজের পরিচয় আর প্রচলিত নামটি জানিয়ে 
দিলাম পত্রযোগে । 

কবি আষাঁঢ মাসে কলকাতায় এলেন । আমার ভাইৎ গিয়েছিলেন 
দেখা করতে । কবি বললেন, “বীরেন্্রকিশোর, তোমার দিদি ইস্কুল- 
কলেজে পড়েন নি, কিন্ত তার লেখা দেখে তা বোঝা যায় নী 
ইত্যাদি, আমাকে একবাঁর দেখতে চাইলেন । আমার ছেলে, বাঁড়ির অন্য 
সকলের প্রতিকুলতায় পাছে বিদ্ব ঘটে এজন্য অন্য সকলের অগোঁচরে, 
১৪ আঁষাঁ ১৩৩৮ [৯ জুলাই ১৯৩১1] আঁমাকে নিয়ে জোড়ার্সীকোয় 
যান, সেই প্রথম দর্শন । সেই মুভর্ত থেকেই আঁমাঁর জীবনে একটি 
স্মরণীয় পরিব্ন্তন আসে । নানা কথা, সব মনে নেই; আমি জপ 
করে থাকি শুনে ম্মিতমুখে বললেন, “আমিও জপ করি'__ তার পর 
কয়েকটি সংস্কৃত শ্লোক এমন করে আবৃত্তি করলেন যে আমি মুগ্ধ হয়ে 
গেলাম । 

প্রণাম করে যখন উঠে আমি, মনে হয়েছিল, আমি তীর্ঘন্নান করে 
উঠলাম । 


৪৫৭ 


১ প্রবাসীর "পত্রধারা' সংগ্রহ করে বই ছাপাৰার চেষ্টাও হয়েছিল কবি বেঁচে 
থাকতেই । কিন্তু বিরুদ্ধ অনেক কথ! সাধারণের মধ তিক্ততা স্ষ্টি করতে পারে ঝলে সে চেষ্টা 
তখন স্থগিত রাখ হয়। 

_প্রীসুধীরচন্ত্র কর । কবি-কথা (১৯৫১) পু *৮ 
অপিচ উক্ত গ্রন্থে বর্তমান 'পত্রধারা' প্রমঙ্গে ভ্রষ্টব্য পূ ৪৭-৩৮ 


২ বর্তমান সংকলনের প্রথম পত্র ৷ 


৩ এই কবিতাটি ১৩৩৮ টোষ্টের প্রবাসীতে প্রকাশিত ও পরে “বিচিত্রিতা? গ্রন্থে 
সংকলিত । রচনা: ১ এপ্রিল ১৯৩১। 


৪ আমার অশিক্ষিত মনের ম্পদ্ধীয় সারা অসন্তুষ্ট হতে পারতেন, কেননা, আমাদের 
বাড়ির কর্তৃপক্ষ এবং আমার মামান্বশুরবাড়ির সকলেই পূজনীয় কবিগুরুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল 
ছিলেন। সাম্প্রদায়িক ধর্মের বিধিনিষেধ ছিল না '্ভাদের মধো | কিন্তু আমার মত মু 
গ্রাম্যবধূর অসম্ভব ধুষ্টৃত! ও স্পদ্ধী তার! সইবেন কি করে, এই ভয় আমার মনে ছিল। 

লেখিকা 


€ শ্রীবীরেন্্রকিশোর রায়চৌধুরী, ময়মনসিংহ গৌরীপুরের ন্থবিখ্যাত ভূমাধিকারী দেশ 
প্রেমিক ব্রজেন্ব্ কিশোরের পুত্র ও শ্রীহেমন্তবাল। দেবীর অনুজ । 


৪৫৮ 


ন্‌ 


শ্রীপ্তরুদেব বহুদিন পুর্বে অন্তহিত | তীর স্মৃতি শোকস্বৃতি । এবংবিধ 
মনের অবস্থায় আশ্রয়প্রাথিনী হইয়া! কবিগুরুর কাছে আসি। কবিগুরু 
আমার নিকট হইতে কিছুই পাঁন নাই বা প্রত্যাশাঁও করেন নাই, তিনি 
আমার ক্ষুধিত পিপাসিত বঞ্চিত চিত্তকে কিছুদিনের জন্য আশ্রয় দিয়া- 
ছিলেন; কিছু সৌহাদ্দোর, কিছু করুণাঁর,কিছু স্সেহের আস্বাদ দিয়াছিলেন। 
আমি শ্রীরাণী মহলানবিশ, শ্রীরাঁণা চন্দ, শ্ীমৈত্রেয়ী দেবী এবং অন্যান্দের 
মত উহার সেবাঁধত্ শুশ্ধষা করিবার সৌভাগ্য অজ্জন করি নাই |... আমি 
বাহিরের লোৌক, মাঝে মাঝে আসিয়া চোখের দেখা দেখিতাঁম ও 
বিশ্রামভঙ্গ করিয়া বিরক্ত করিতাম, তাঁর কোনো কাছেই আসি নাই । 

উহার সংস্পর্শে আমি মুক্তির আনন্দ পাইতাম । তাই নানা কৌশলে 
পত্র আদায় করিতাম। জোড়ার্সীকোয়, বরাঁনগরে, খড়দহে, বেলঘরিয়ায় 
মাঝে মাঝে আসিয়! দেখা করিয়াছি । পুত্রকন্তা। বধূজাঁমাতা ও অন্ান্ত 
আস্মীয়স্বজনকে সঙ্গে করিয়াও আসিয়াছি । আমার মত ঘোর বিরুদ্ধ- 
পক্ষীয়!, অশিঙ্ষিতা, শিষ্টাচারে অনভিজ্ঞ, মুর্খ স্ত্রীলোককে তিনি দীর্ঘদিন 
ধরিয়া যাবতীয় দৌধক্রটি-সমেত সহা করিয়াছেন, আজ সে কথা ভাবিলে 
আশ্চধান্থিত। হই । 

দেশ কাল পাত্র, শিক্ষা ও মতামত, আচার ব্যবহার, ধম্মমত ও বয়স__ 
প্রতোক বিষয়েই আকাশ পাতাল ব্যবধান ছিল। তবু তাহার 
শুভাকাজ্জা কথনোই বাধাগ্রস্ত হয় নাই । বুদ্ধির দৌষে কত দুব্বাবহার 
করিয়াছি, তাহাঁও অহা করিয়াছেন। আমার সন্তানদের কথা 
ভাবিয়াছেন, আমার কন্তাকে তিনি বিশেষ শেহ করিয়াছেন। এত 
বেশী ব্যবধানের দূরত্ব অকেশে অতিক্রম করিয়া তিনি আমাদের 
পরিবারের পরমাআ্মীয় সমব্যথী দরদী বান্ধব হইয়াছিলেন, কত সময় 


৪8৫৯ 


কথালাপে বিক্ষুব্ধ মনকে জিদ্ধ করিয়! রাখিতেন। কত হাস্য পরিহাঁস 
করিয়াছেন, সছুপদেশ দিয়াছেন, এমন-কি অর্থসাহাষ্য পধ্যন্ত করিয়াছেন, 
তুচ্ছ বলিয়া উপেক্ষা অবহেলা কখনো করেন নাই । আমার কোনো 
দিনলিপি রাখার স্থবিধা ছিল না বলিয়া ষথাষথ বিবরণ অবিকল দিতে 
পারিব না মনে করিয়া আমি বিশেষ কিছু লিখিতে সংকোচ বোধ 
করি । 

যে ধশ্মনিষ্ঠা লইয়া তর্কবিতর্ক ছিল, তাঁহার পরিণামে এক সময়ে 
আধ্াত্সিক অভিভাবকেরা আমার প্রতি কষ্ট হইয়া সাময়িক বিচ্ছেদ 
আনয়ন করেন। তখন তিনি বলিয়াছিলেন, আমাকে নিজের ধন্ম 
নিজেই আবিষ্কার করিয়া লইতে হইবে। সে ভবিষাদ্বাণা কিছুটা 
ফলিয়াছে, আমি এক রকম করিয়া মনের ছন্দ মিটাইয়! শান্তি পাইয়াছি | 


৫ পেরি 


কিন্ত তিনি এখন তাহা জানিলেন না । 


_ শ্রীহেমন্তবাল। দেবী 


রবীন্দ্রনাথের পরিচয় হেমন্তবালা দেবীর নিকটে যেভাবে উদ্ভাসিত 
হইয়া উঠিয়াছে, তাহার অপ্রকাশিত নানা রচনায় তাহারও আভাস 
পাওয়া যায় । বতমান পত্রধারার পরিপ্রেক্গিতে সেরূপ একটি রচনা বিশেষ 
ওতস্থক্যজনক ও অন্ধাবনযোগ্য মনে হয়, এজন্য পরবর্তী কয়েক পষ্টায় 
উহা সংকলিত হইল ।-_ 


৪৬০ 


রবীন্দ্র-সমীক্ষা 


আজ সমস্ত সভ্য জগহ রবীন্দ্রনাথকে লইয়। ক্ষেপিয়া উঠিয়াছে | 
কিন্ত দে কোন্‌ রবীন্দ্রনাথ? মানষ দোষে গুণে সংগঠিত । তাঁহার 
মধ্যে সাত্রিক, রাজসিক, তাঁমসিক, মিশ্র, নির্গুণ ও বিশ্দ্ধসত্বিশিষ্ট এই 
সমুদয় সত্তাই বন্তমান। কিছু ব| জাগ্রত, কিছু বা সুপ্ধ। মানষের 
আচরণে, বচনে, চিন্তাঁয় এবং কশ্মে তাহার আঁপন বিশেষত ফুটিয়া উঠে এবখ 
কিছু পরিমাণে বেশিষ্টা সে স্বেচ্ছায় অপ্রকাশিত রাখে, আর কিছু পরিমাণ 
বৈশিষ্ট্য তার নিজেরও অজ্ঞাতসারে অপ্রকাঁশিতই থাকিয়া যাঁয়। আমার 
জ্ঞানে কৌতৃকপরায়ণ, মজলিসি স্বভাব -বিশিষ্ট, আঁপনাঁকে অতিরঞ্নে 
প্রকাশশীল, এক রবীন্দ্রনাথ আছেন। তিনি অহেতুক পরচচ্চাকেও 
অনুপম বৈদদ্ধোর স্তরে উন্ীত করিয়া সভারঞগ্তনে সমর্থ । আপাতিদষ্টিতে 
( কিন্ধ আপাত দৃষ্টিতে দেখিয়া প্রবঞ্চিত হইবার বিশেষ সম্ভাবনাও 
আছে ) তিনি বিশেষ তীক্ষৃষ্টিসম্পন্ন, তিনি বৈষয়িক, তিনি কুটবুদ্ধি- 
সম্পন্ন, তিনি বিপক্ষ জনকে সহজে অবাহতি দেন না। তরক- 
বিতরক্ছলে তিনি বাকাকৌশলে জুক্ম্ূপে মানতষকে আহত করিতেও 
জানেন । তিনি আপনাকে গোঁপন করিয়া সম্পূর্ণ অন্যরপে অভিব্যক্ত 
করিতে পারেন- তিনি অতান্ত খুৎখুতে, কিছুই তাহার পছন্দ 
হয় মা, তিনি মানী এবং আম্মগৌরবে পরিপূর্ণ, তাহার শিজের চক্ষে 
তাঁহার নিজের সমন্তই যেন ভাল। তিনি গব্বিত, অত্যন্ত অভিমানী, 
আব্দার-পরায়ণ ইত্যাদি হি বু। তিনি অভিজাতিসন্তান, হৃতরাং 
সমাজের উচ্চস্তরে আসীন থাকিয়া শিশ্স্তর সমূহকে বুঝিবা অবজ্ঞা 
করিতেও পারেন । 

দ্বিতীয় এক রবীন্দ্রনাথ আছেন। তিনি সারগ্রাহী, গুণগ্রাহী, 
দোঁষবঞ্জন ও গুণঅর্জনে যত্রশীল, তিনি সতত আত্মসংশোধনে ও সাধনায় 


৪৬১ 


তৎপর, তিনি পরোঁপকারী অনলস কন্মযোগী, তিনি স্বার্থত্যাগী, তিতিক্ষা 
সহিষ্ণুতা ধেধ্য ক্ষমা দয়া সাম্য প্রভৃতি গুণ -বিশিষ্ট, তিনি ছন্দসহিষ্ণু, 
তিনি আম্মবিচীরপরায়ণ, আত্মসংযমী, তিনি আত্মবিশ্লেষণকারী, আত্ম- 
শাসকও বটে। তিনি নিরাঁসক্ত গৃহী, শক্রমিত্রে সমদশী, কর্তব্যপরায়ণ 
পুত্র পিত। পতি বন্ধু প্রন ভূত্বামী প্রভৃতি । এক কথায় ইহাকে কম্মষোগী 
বলা যায়। ইনি পরোপকারিতাকেই ব্রতরূপে গ্রহণ করিষ়াছেন । 

তৃতীয় এক রবীন্দ্রনীথ। যিনি সুকোঁমল ও সুকুমার, স্পর্শকাতির, 
অকুত্রিম সরল গ্রীতিস্সেহাচুরক্ত, বিশ্বপ্রেমিক, প্রক্তিপ্রেমিক, পুষ্প- 
প্রেমিক, যিনি মাতৃন্সেহলাভে বঞ্চিত তাই অতৃপ্ত, যিনি বন্ধুগীতি ও 
আত্মীয়প্রীতির আঁদাঁন প্রদানে রুতার্থ হইয়াঁও অধিকতর আকাক্কা 
-পরায়ণ, যিনি সুশীল, সুরুচিসম্পন্ন, বিদগ্ধ, বিদ্বান, পণ্ডিত, মেধাঁবী, বাগ্মী, 
গুণী, যিনি শৌন্দধ্যপ্রিয়, নিজে সুন্দর, অপরকেও রুচিরস্ন্দর দেখিতে 
চাহেন। যিনি সঙ্গীতজ্ঞ, স্থগাঁয়ক, রচয়িতা, সভামগ্ুনকাঁরী, সুসভা, 
স্থসংস্কৃত, ুন্ররস্বভাব, সুস্বর ইত্যাদি ইত্যাদি । যেনি রূপে গুণে সম- 
সাময়িক সকলের হৃদয়রপ্তনকারী প্রিয় সুহৃদ | 

চতুর্থ এক রবীন্দ্রনাথ । যিনি অদ্ভুতত্বভাঁব, কখনো! আত্মকেন্দরিক, 
বন্মীবৃতচিত্ত । এ ক্ষেত্রে তিনি আপনাকে গুটাইতেই ভালবাঁসেন, সুতরাং 
ব্যক্তিবিশেষের সহিত মনোভাববিনিময়ে অনিচ্ছুক, সাম্যমৈত্রীবিহীন, 
যার তার সহিত সর্বদাই দহরম-মহরম করিতেও অসমর্থ । অথচ দরিদ্র 
অবহেলিত পীড়িত শোকার্ত কোনো অতিতুচ্ছ জনেরও সেবা শুশ্ষায় 
নিজমধ্যাদ। ভুলিয়া স্বহস্তে সকল প্রকার ক্ষুদ্রকম্ম তুচ্ছকম্ম -সম্পাদনেও 
তৎপর । তাহাদের দুঃখে তিনি অশ্রুল, অথচ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-শোকেও 
শোকপ্রকাঁশে কুষ্ঠিত; আঁপনার ব্যথা অপরকে জানিতে দ্রিতে চাঁন না 
এই ভাব। এক দিকে তিনি অতিতুচ্ছ জনেরও আপন, অন্ত দিকে তিনি 
বিখ্যাত মহাজনেরও কেহই নহেন। এবন্বিধ অদ্ভুত স্বভাঁবকে সহজে 


৪৬২ 


কেহই অম্যক্রূপে চিনিতে, জানিতে, বুঝিতে, আয়ত্বাধীন করিতে সমর্থ 
নহে । কেননা কখন যে তিনি আকর্ষক এবং কখন যে বিকর্ষক হইবেন 
তাহা সহসা উপলব্ধি করা সহজ নহে । স্থতরাঁং তীহার চরিত্র কাহারও 
বোধগম্য হইতে পারে না। কৌতুকচ্ছলেও এই ভাবে তিনি আপনাকে 
রহস্যময় করিয়া রাখেন । প্রসাদ বা অগ্রসাদ, সংশয় থাঁকিয়া যাঁয়। 

পঞ্চম এক রবীন্দ্রনাথ । তিনি ভাবুক, শিল্পী, কবি। তীহাঁর কর্সও 
কবিত্ব, রটনাঁও কবিত্ব, জীবনও কবিত্বপূর্ণ। তিনি বনুবল্লভ, তাহাঁও 
কবিত্বের জন্ত-_ তিনি এঁকান্তিক, একনিষ্ঠ, তাহাঁও কবিত্বের জন্য । তাহার 
হাস্ত রোদন কবিত্বের জন্য । কবিতাই তীহাঁর জীবনের সারাৎসার । 
তাহার সঙ্গীত এই কবিতাকোরিকেরই পুষ্পিত পরিণতি । অন্যত্র 
রবীন্দ্রনাথ আঁপনাঁকে অন্তরালে রাখিয়াছেন, কিন্তু কবিতীয় ও সঙ্গীতে 
তিনি অকুষ্ঠিত ভাবে আল্মপ্রকাশ করিয়াছেন। তীহাঁর কাব্যে, তাহার 
সঙ্গীতে তীহাঁর সমগ্র জীবন প্রন্ফুটিত বিকশিত হইয়া স্প্রকাশিত 
রহিয়াছে । তাহার ভাঁবন। কল্পনা! ও পরিবেশ-রচনীয় তাহাকে কাব্য- 
বিলাসী, পন্মমধুপাঁয়ী, শৌথীন, ভাবুক বলিয়াই যেন মনে হয়। 

ষষ্ঠ এক রবীন্দ্রনাথ । নিতান্তই পারিবারিক, সেহাপ্রহৃদয়। শোৌক- 
দুঃখ-কাঁতির, স্ষেহপাত্রের কল্যাণকামী, বিধুরহদয়, অতিপেলবস্বভাঁব | 
আস্বীয়স্বরূপে তিনি সকলেরই সুহৃদ, হিতাঁকাজ্ফী, পরম বান্ধব। 

সপ্তম এক রবীন্দ্রনাথ । ইনি আপনাকে বুধ! বিভক্ত করিয়া বিভিন্ন- 
পন্থী সাধকগণের সাধনার সার সংগ্রহ করিয়া এক অভিনব ভাবের 
প্রবৃতিতে শান্ত দাশ্ত সখা ও মাধুধ্য রস -সাধনায় ব্রদ্মের একান্ত উপাসক। 
ব্রহ্ম তাহাকে জগজ্জনক, জগজ্জননী, বিশ্বরাঁজ, গুরু, প্রভূ, প্রতিপালক, 
দগ্ুদীতা শিবরুদ্ররূপে__- অথব! জন্দর, বিদগ্ধ, সুকুমার, বন্ধু, প্রেমিক হদয়- 
বল্লভ রূপে দেখা দিয়াছেন । এই রবীন্দ্রনাথ বিশ্বত্রক্ষীণ্ডের অধিপতি রূপে, 
আপন হৃদয়ের অন্তরধ্যামী রূপে এবং সর্বত্র প্রকাশিত অসংখ্য সীমাবদ্ধ 


৪৬৩ 


বস্তরূপসমূহের মধ্যে অসীম অব্যক্ত অথচ সুসঙ্গত স্থ্ষম সুক্ষ পরমাত্মা! 
রূপে ঈশ্বরকে উপলব্ধি করিয়াছেন । তিনি বাস্তববাদী, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি 
-সম্পন্ন ও অতিপ্রাকৃত বিষয়ে সংশয়ী হইয়াঁও ভাঁবনেত্রে শ্রীভগবাঁনকে 
সমন্ত মানুষের মধ্য, বিশ্বগ্ররুত্তির মধ্যে, সহসা বিজলীচমকে ক্চিৎ 
উদ্ভাসিত হইতে দেখিয়াছেন। গুণীর গুণের মধ্যে তাহার গুণগরিম। 
প্রত্যক্ষ করিয়াছেন । কনম্মীর কম্মে, তাগীর ত্যাগে, জ্ঞানীর জ্ঞানে, 
প্রেমিকের প্রেমে, সকলের সমস্ত সব্গুণের মধ্যে, তিশি তীহাঁরই 
সদগুণের বিকাশ সাক্ষীৎ অন্থভবৰ করিয়াছেন। আবার মানুষের ও 
প্রকৃতির অধশ্মাআ্বক প্রলয়াত্মক বিভীষিকাময় বীভতসরূপের মধ্যেও তিনি 
ব্রন্মেরই প্রলয়ঙ্কর ভীষণ রুদ্ররূপ দ্েখিয়াছেন। এখানে তিনি সাধক, 
তপস্বী, মরমিয়া ভক্ত | তীহার বর্গ সর্বময়, সর্ধরূপ, সর্বকম্মা, ভীষণ ও 
মধুর | 

অষ্টম এক রবীন্দ্রনাথ । যিনি তুষ্ণীন্তুত, নিমীলিতনেত্র, মৌনী, বিবিক্ত, 
চিন্তাশীল, একক | তীহাঁর মনের মধ্যে যে কি আছে, কেহই তাহ। 
বলিতে পারে না । তিনি কি ভাবে নিমগ্ন, তিনিই জানেন । 

আর এই-সমস্ত রূপেরই যথাঁষথ সংমিশ্রণে এক রবীন্দ্রনীথকে আমরা 
দেখি, যিনি অতিথি অভ্যাগত আগন্তকের প্রতি গৃহকর্তী রূপে অথবা 
সমাঁজনেতা রূপে, কিংব। পরিব্রাজক অবস্তায় আপনিই অন্যের গৃহে 
সম্মানিত অতিথি অভ্যাগত আগন্তক রূপে, সাধাঁরণভাঁবেই মানুষের 
সহিত সামাজিকতা শিষ্টাচার ভদ্রতা! ও সৌজন্যের আদান প্রদান করিয়া 
থাঁকেন। এখানে তিনি সকল সময়ে অকুত্রিম হইতে পারেন না। 
দেশকালিপাত্রীন্থসারে তাহাকে আত্মরচনা ও আত্মপ্রকাশ করিতে হয়। 
আপনাকে গড়িয়া তুলিতে হয়। 

রবীন্দ্রনাথ একাধারে বাঁস্তববাঁদী, দেশকালপাত্রজ্ঞ, এবং অস্তর্দ্ষ্টিসম্পন্ 
আধ্যাত্মিক অন্থভবী | 


৪৬৪ 


এবং আমি মনে করি এই সমস্ত বর্ণনার পরেও আরও অনেকবিধ 
রবীন্দ্রনাথ আছেন, ধাহাঁদের কথা এখন আমার স্মরণে তেমন করিয়া 
আসিতেছে না, যেমন-_ রোঁষদীপ্ত রবীন্দ্রনাথ, মৌনী, তাহার ভ্রযুগল 
কুঞ্চিত, ক্রোধের ঈষৎ উপক্রমে তীহার অন্ত দিকে মুখ ফিরাইয়া নৈব্যক্তিক 
তিরস্কার | 

ফলকথা রবীন্দ্রনাথ নিঃসন্দেহে যুগপুরুষ__ তিনি আন্তজ্জীতিক, 
আত্তদ্দেশীয়, নিরপেক্ষ, ন্যায়ের এবং অন্যায়ের নবীন ভাষ্কার, নৃতন-দৃষ্টি- 
ভঙ্গী-সম্পনন পরমবিস্ময়জনক তিনি, বিশ্বের সকলের তিনি আপনজন । 
তিনি ব্রাত্য, অনাচারী হইতে কাঁধ্যতঃ বাধ্য, কেননা তাহাকে সকলেই 
আত্মীয়ূপে লাভ করিতে চাঁয়-__ তিনি সে ইচ্ছা পুরণ করিতে বাধ্য । 
তাহার খাগ্াখাগ্ভবিচার থাকা সম্ভব নহে, কেনন। পৃথিবীবাসী জনগণের 
গৃহে তিনি অতিথি । তাহার ইষ্টদেবতাকে বিশেষ স্থান কাল পাত্র গুণ 
অবস্থায় আবদ্ধ করিয়া বিশেষ নামে রূপে বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের 
উপাস্ত বলিয়া পরিচয় দিয়া গণ্ীবদ্ধ রাঁখাঁও তীহাঁর সাধ্যাতীত। 
কেননা তিনি যে সকলেরই আত্মীয় । পৃথিবীর সকল ভাবায় ঈশ্বরকে 
অসংখ্য নাম গুণাদি দান করিয়। বর্ণনা কর হইয়াছে । পৃথিবীর মানুষ 
দেশ-কাল-পাত্র-স্বভাব-ভেদে বহুরূগী। তিনি যদ্দি বিশেষ একটি গণ্ডভীতেই 
আপনার ধম্মকে ও আপনাকে আবদ্ধ রাখেন, তবে অন্য সকলের আপনজন 
হইবেন কিরূপে? যাহারা সেই বিশেষ ধন্মের লোঁক নহে, তাহারা 
তাহাঁকে কি মনে করিবে? কাঁজেই তাহার ধন্ম নিব্বশেষধন্ম। এজন্য 
তিনি গৃহী হইয়াঁও ঠিক গৃহস্থ নহেন। তিনি কোনও দেশ কাল জাতি 
ধন্মের ক্ষুদ্র সীমানায় আপনাকে চিররুদ্ধ রাখিতে পারেন না। তিনি অনন্ত 
অসীম বিশ্বদেবতার অন্তধ্যামী পরমাত্মন্বপেরই উপাসক। অন্য রূপে 
তাহাকে দেখেন নাই। বাহিরে তিনি আত্মমর্ধ্যাদারক্ষায় তৎপর, 
আত্মকেন্দ্রিক, নিরাসক্ত, একক, আপনার চতুদ্দিকে আত্মগৌরবের গণ্ডী 


৯|৩০ ৪৬৫ 


রচনা করিয়া বন্মীবৃত, কিন্তু এই বশ্মাবৃত অবস্থায়ই তিনি সকলের সহিত 
আদান-প্রদান-পরায়ণ। তিনি কৌতুকী সখা, তিনি সেবাব্রতী গৃহস্থ, 
তিনি পরোপকারী স্থহ্ৃদ, তিনি কর্তব্যপরাঁয়ণ কন্মযোগী। এ ক্ষেত্রে 
আপনাকে অভিনেতার ন্যায় সাধনা-দ্বারাই, নাঁন। ভাঁবে ভাবনায় ভীবিতবৎ 
করিয়া, নানা জনের মনোরগ্জনে অথবা মাঁনভঞ্গনে তিনি অভিনিবিষ্ট। 
ইহার মধ্যে যে আন্তরিকতা নাই এ কথাও বল! যায় না । বরং ইহাই 
বিস্ময়ের বিষয় যে, এমতাবস্থাতেও তিনি আন্তরিক সমৃদয় পুরুষ । স্বর্গীয় 
মহামহোঁপাধ্যায় প্রমথনীথ তর্কভষণ মহাঁশয়ের মতে রবীন্দ্রনাথ মহাঁসমুদ্র- 
বিশেষ। তাহাকে আয়ত্ত করা সহজ নহে । তীহার তত্ব -নির্দেশ 
অভিজ্ঞ অন্তরঙ্গ জনের পক্ষেও সম্পুর্ণ সম্ভব নহে । কেননা আপাতবৃষ্টিতে 
পরস্পরবিরোধী বহুভাব-সম্বলিত বনু রূপেই আপনাকে তিনি দেশ কাঁল 
পাত্র -অন্ুসারে, অবস্থা-অন্ুসারে, বিভিন্ন আকারে প্রকারে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে 
বহুধা প্রকাশিত করিয়াছেন। যদি পৌরাণিক তান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীতে 
কোনে হিন্দু তীহাঁর চরিত্রের বিচার করেন, তিনি রবীন্দ্রনাথের মধ্যে 
একাধারে বিশ্বত্রহ্মাণ্ডের হৃষ্টি-স্থিতি-সংহাঁরক অথচ বিশ্বপ্রতিতে-বিহরণ- 
শীল সেই নটরাঁজের ছায়াই দেখিতে পাইবেন । এমন অদ্ভুত চরিত্র 
অন্য কোনো দেবতার মধোই পরিলক্ষিত হয় না। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, 
সৌর, ব্রাহ্ম, বাঁউল, স্থফী, বৌদ্ধ, ক্রীশ্চান সকল ধন্মের সত্তাই 
তীহার ধন্মের মধ্যে নিহিত। আজ ধরিত্রী পারমীণবিক মারণাস্ত্রের 
ভয়ে শঙ্কিতা। আজ মহাঁকাশযাত্রীরা গ্রহীস্তরে গমনে উদ্ভত। আজ 
যদি মাঁজুষ তাহার অন্তঃকরণকে রিপুমুক্ত ও নির্দোষ না করে, তবে 
মীচুষই আজ বিশ্বসংহার করিয়া বসিবে। এখন মানুষের নিজের 
অন্তঃকরণকেই ভয় করা উচিত । পুথিবীর এই ছুদ্দিনে এই মহা-অশান্তি- 
শঙ্কিত সময়ে অসাম্প্রদায়িক নিব্বিশেষ ভাঁবে রবীন্দ্রনাথের বাণীকে 
আশ্রয় না৷ করিলে পৃথিবীর জনগণের চিত্তে ঈশ্বরে বিশ্বাস, ধশ্মভাঁব, পাঁপ- 


৪৬৬ 


ভয়, মাঁনবোচিত সদ্গুণ-সকল-_ সাম্য, মৈত্রী, সৌহানদ্য, স্বার্থত্যাগ, 
পরোপকারপ্রবৃত্তি সহজে জাগরিত হইবে ন]। মহীক্মা গান্ধীও সাধক, 
কিন্ত তাহার সাঁধন। কঠিনতর-_ সাধারণ সংসারীজন সে সাধনা গ্রহণে 
অক্ষম । রবীন্দ্রনাথের গুঁদার্্য, ক্ষমা, সহিষ্ণুতা সকলকেই আলিঙ্গন 
করিয়াছে । তিনি পাপী তাঁপী দুষ্ট লোঁককেও অবজ্ঞা করেন নাই। 
তাহার মতে 
দুললিভ এ ধরণীর তুচ্ছতম স্থাম। 
দুল্লভ এ জগতের ব্যর্থ তম প্রাণ | 

তিনি মানুষের চরিত্রের প্রতি আস্থা! হারান নাই । অবশ্য মহাতসাজীও 
আঙ্থাবান, নতুবা তিনি সত্যাগ্রহ করেন কোন্‌ সাহসে? কিন্ত তিনি 
কঠোরকম্মী, তীহাঁকে জগত শ্রদ্ধ। করে এবং রবীন্দ্রনাথকে জগৎ ভালবাসে । 
রবীন্দ্রনাথকে তাহার গান্ধী অপেক্ষা আপনজন বলিয়া! বাহুপাশে 
আবদ্ধ করিতে পারে । গান্ধী প্রণম্য, কিন্ত রবীজ্নাথ তদপেক্ষা অধিকতর 
নিকটস্থ । শ্রীঅরবিন্দ, বিবেকানন্দ, গান্ধী, ইহারা রাজনীতি সমাজনীতি 
ধন্মনীতির যে-সকল ব্যাখ্যা করিয়াছেন, তাহার সব্ধস্তরে রবীন্দ্রনাথের 
সহিত মতৈক্য দেখা যাঁয় না। তীহার। কোনে না কোনো গণ্ভীতে 
জীবনকে আবদ্ধ করিয়াছেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ গণ্ভীবন্ধনের পক্ষপাতী 
নহেন | 

রবীন্দ্রনাথ বিমুক্তচিত্ত বি্পথিক | তাহার ্াড়াইবার স্থান বাঁ সময় 
নাই । ক্রমাগত নব নব ভাঁবে জীবনকে বিভাঁবিত ও পরিবত্তিত করিতে 
করিতেই এই বনহুরূপধারী একদা অনন্তে, অসীমে, মহাকাশের অন্তরে 
হারাইয়া যাঁইবেন। এ অনন্ত আঁকাঁশই বন্ুবিচিত্ররূপ রবীন্দ্রনাথের মূর্ত 
প্রতীক । আকাশই রবীন্দ্রনাথ । 


_ শ্রীহেমন্তবাঁল! দেবী 


৪৬৭ 


পত্র-ধৃত প্রসঙ্গ 


পত্র ১। “জোনাকি” । প্রথমে এই ছদ্মনামে শ্রীমতী হেমন্তবালা দেবী 
রবীন্দ্রনাথকে পত্র লেখেন ; কখনো বা রাশিনাম “ক্ষবালা? স্বাক্ষরেও 
লেখেন | এ বিষয়ে শ্রীহ্মন্তবাঁল। দেবী -লিখিত বিবরণ গ্রন্থপরিচয়ের 
স্চনীয় মুদ্রিত । 

পত্র ২। “শিলাইদহের বোষ্টমী”। এই প্রসঙ্গে ৪৫-সংখ্যক পত্রে জরষ্টব্য-_ 
“বোষ্টমী অনেকথানিই সত্যি" ইত্যাদি । রবীন্দ্রনাথের “বোষ্টমী গল্প 
প্রসঙ্গে এ উক্তি । বোষ্টমী ব1 সর্খেগীর বিষয় শ্রীশচীন্দ্রনাথ অধিকারী 
তীহার 'রবীন্দ্রমানসের উতৎসসন্ধানে' গ্রন্থের অন্তত “রবীন্দ্রনীথের 
অজ্ঞাতবাঁসের সঙ্গী” প্রবন্ধে লিখিয়াছেন। গল্পগুচ্ছ ৪ (১৩৬৯ ও 
পরবতী সংস্করণ ) গ্রন্থপরিচয়ের “বিভিন্ন ছোঁটো গল্প” অধ্যায়ে “বোষ্টমী? 
প্রসঙ্গ দ্রষ্টব্য । ১৯৯-সংখ্যক পত্রেও এই বৈষ্ণবী উল্লিখিত। 

পত্র ৫। আমি গুরু নই আমি কবি।, 

পত্র ৬। “আমীকে'" গুরু বলে গণ্য করলে ভূল করা হবে ।' 

পত্র ৭। 'গ্ুরুমশায় আর গুরু ... আমি উক্ত ছুই জাঁতেরি বার ।' 

পত্র ৮। হঠাৎ আমাকে গুরু বলে ভূল কোরো না)? 

_-এই একটি কথ! বর্তমান গ্রন্থে 
ধৃত অনেকগুলি পত্রেই রবীন্দ্রনাথ বারবার নানাভাবে বলিয়াছেন, 
যেমন ৩১, ৩২, ৯৯ ও ১০৫ -সংখ্যক পত্রে। ৮-সংখ্যক পত্র € ১৯ 
বৈশাখ ১৩৩৮) লিখিবাঁর কয়েক দিন পরেই, অর্থাৎ ২৫ বৈশাখের 
সপ্ততিতম জন্মৌৎ্সবে, রবীন্দ্রনাথ “নিজের সত্য পরিচয়” দিতে গিয়া 
শান্তিনিকেতন আশ্রমে যাহা বলেন১ তাহ! এ পত্রেরই একাংশের 
রূপান্তর বলিয়াও গণ্য কর! যাইতে পারে । ইহার পুর্বদিন কবিত। 
রচনা করিয়াছেন-__ 


৪৬৮ 


শুধায়ো৷ না মোরে তুমি মুক্তি কোথা, মুক্তি কারে কই, 
আঁমি তো সাধক নই, আমি গুরু নই । 
আমি কবি, আছি 
ধরণীর অতি কাছাকাছি 
এ পারের খেয়ার ঘাঁটায় 1২ 
বস্ততঃ, “আমি গুরু নই আমি কবি রবীন্দ্রনাথ এই কথাটি দীর্ঘজীবনে 
নান] স্ত্রেই বলিয়াছেন ; এই প্রসঙ্গে, অজিতকুমার চক্রবর্তীকে লিখিত 
একটি পুরাতন চিঠি (১৯১২) এ স্থলে উদ্ধৃত হইল ; ১০৫-সংখ্যক 
পত্রের অন্ুসঙ্গে, অজিতকুমাঁরকে লিখিত আরও পুরাতন একটি চিঠি 
(১৯১০ ) অন্যত্র মুদ্রিত হইবে | 
[ লগ্ডন ১৯১২ ] 

আমি এ পুথিবীতে প্রণাম কাচিয়ে চলতে চাই ; যদি পাই তবে সেটা! 
প্রকাশ করতে ইচ্ছা করি নে-_ কেননা, ওট1 কিছুতেই আমার 
পাঁওন। নয় । পুথিবীতে কবির দাবির উচ্চ সীমা কোলাকুলি পর্য্যন্ত-_ 
প্রণামের দ্বারা তার জাত যায়_- আমি কবি ছাড়া যে আর কিছু 
নই সে বিষয়ে কোনো সন্দেহমাত্র নেই । আমি তোমাদের হৃদয়ের 
সমভূমিতেই দীড়াতে চাই-_ সেইখানেই আমার যথার্থ স্থান__ উচ্চ 
ভূমিতে আমি সম্পূর্ণ অনাবশ্তক। আমি তোমাঁদের বারবাঁর বলেছি 
আবার বলচি_- আমাকে ভুল আসনে তোমরা বসিয়ো না সেটা 
হয়ত সম্মানের জায়গ। হতেও পাঁরে কিন্তু তেমন অস্থখের জায়গা! আর 
কিছু নয়__ যে পাগড়ি মাথায় হয় না সেই পাগড়ি পরার মত-_ সর্বদ] 
মনে হয় পড়ে যাঁবে এবং মাঁথা ধরে ওঠে । আমি তোমাদের বন্ধু, কিছু 
দেব কিছু নেব। যদ্দি আমার ভাগ্যক্রমে দেওয়াবিষয়ে আমার জিত 
হয় তবু সে বন্ধুত্বেরই দান, স্তুতরাং তাঁর জন্তে ফিরে আমি কিছু দাঁবি 
করব না । গুরুর পদ আমার নয়, নয়, নয় । আমি নিজে কিছু শিখি নি 


৪৬৯ 


এবং কাউকে শেখাতেও পারব না ;_ আমি পৃথিবীতে সব জিনিষ 

যেমন করে নিয়েছি তেমনি করেই দিয়েছি অর্থাৎ নিতান্ত পড়ে-পাঁওয়া 
ভাবে-_ তাঁর যদি কিছু দাম থাকে সে দাঁমের পাঁওনা আমার নয় । 

_ রবীন্দ্রনাথ | অজিতকুমার চক্রবর্তীকে লিখিত পত্র 

বর্তমান গ্রন্থে সন্গিবিষ্ট আলোচ্য পত্রগুলির সমকালীন, শ্রীশৈলেন্দ্র- 

নাথ ঘোষকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের একখাঁনি চিঠিতেও অনুরূপ ভাঁব 


বাক্ত হইয়াছে__ 
"**আমার আশঙ্কা হয় পাছে আমাকে কেউ জমক্রমে গুরু ব'লে গ্রহণ 
করেন-_ আমার সে পদ নয়। .**র কাছে আমি যে সঙ্কোচ 


জানিয়েছিলুম তাঁর কারণই এই । তুমি যে সাধনার কথা লিখেচ 
আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। সেই সঙ্গে আমার একটি কথা বলবার 
আছে এই যে, অন্তরের সাধনার পরিণতি বাঁইরে__ সঞ্চয়ের 
সার্থকতা দ্ানে। একদিন আমি নিজের আত্মিক নিজ্জনতাঁর মধ্যে 
আধ্যাত্মিক উপলদ্ধির আনন্দকে সংহতভাঁবে লাভ করবাঁর জন্যে 
সাধনীয় প্রবৃত্ত ছিলুম। যে কারণেই হোক সেই নিঃসঙ্গতা থেকে 
আমি বেরিয়ে এসেছি । অতিশয় একান্তভাবে নিজের সত্তার নিগুঢ় 
মূলে নিবিষ্ট হয়ে যাঁওয়া আমার চল্ল না, যে বিচিত্র সংসারে আমি 
এসেচি আপনাকে ভূলে সহজভাবে সেখানে আপনীকে লাঁভ করতে 
হবে এই দ্রিকেই আমাকে ভিতর দিক থেকে ঠেলে পাঠালে । আমি 
স্বভাবতই সর্বান্তিবাঁদী__ অর্থাৎ আমাকে ডাকে সকলে মিলে-_ আমি 
সমগ্রকেই মানি । গাছ যেমন আকাশের আলো থেকে আরম্ত 
ক'রে মাটির তলা পর্যন্ত সমস্ত কিছু থেকে খতু-পর্যায়ের বিচিত্র 
প্রেরণা দ্বারা রন ও তেজ গ্রহণ ক'রে তবেই সফল হয়ে ওঠে 
আমি মনে করি আমারও ধম্ম তেমনি_- সমস্তের মধ্যে সহজে সঞ্চরণ 
ক'রে সমন্তের ভিতর থেকে আমার আত্ম! সত্যের স্পর্শ লাভ ক'রে 


৪৭০ 


সার্থক হ'তে পারবে । এই যে বিচিত্ররূপী সমগ্র, এর সঙ্গে ব্যবহার 
রক্ষ! করতে হ'লে একটি ছন্দ রেখে চল্তে হয়, একটি সুষমা, যদি 
তাল কেটে যায় তবেই সমগ্রকে আঘাত করি এবং তার থেকে ছুঃখ 
পাই । বস্তৃত যখনই কিছুতে উত্তেজনার উগ্রতা আনে তার থেকে 
এই বুঝি, ছন্দ রাখতে পারলুম না,__ তাই সমগ্রর সঙ্গে সহজ যোগ- 
স্থ্রে জটাঁ পড়ে গেল। তখন নিজেকে স্তব্ধ ক'রে জটা৷ খোলবাঁর 
সময় আসে । এমন প্রায়ই ঘটতে থাকে সন্দেহ নেই কিন্তু তাই ব'লে 
জীবনের সহজ সাধনার প্রশস্ত ক্ষেত্রকে সক্কীর্ণ ক'রে নিজেকে নিরাপদ 
করা আমার দ্বার। ঘটল ন1। বিশ্বে সত্যের যে বিরাঁট বৈচিত্র্যের 
মধ্যে আমর। স্থান পেয়েছি তাকে কোনো আড়াল তুলে খণ্ডিত 
করলে আত্মীকে বঞ্চিত করা হবে এই আমার বিশ্বাস। যদি এই 
বিরাট সমগ্রের মধ্যে সহজ বিহার রক্ষা ক'রে চল্তে পারি তবে 
নিজের অগোচরে স্বতই পরিণতির পথে এগোতে পাঁরব-- ফল 
যেমন রৌদ্দে বৃষ্টিতে হাঁওয়াঁয় আপনিই তার বীজকে পরিণত ক'রে 
তোলে । আমি তাই মানা কিছুকেই নিয়ে আছি-_ নানা ভাবেই 
নান। দিকেই নিজেকে প্রকাশ করতে আমার ওহস্থক্য। বাইরে 
থেকে লোকে মনে ভাবে তাদের মধ্যে অসঙ্গতি আছে, আমি তা 
অনুভব করি নে। আমি নাকি গাই, লিখি, আকি, ছেলে পড়াই__ 
গাছপালা আঁকাঁশ আলোক জলম্বল থেকে আনন্দ কুড়িয়ে বেড়াই । 
কঠিন বাঁধা আসে লোকালয় থেকে-- এত জটিলতা এত বিরোধ 
বিশ্বে আর কোথাও নেই | সেই বিরোধ কাটিয়ে উঠতে হবে, জীবনের 
শেষ দ্দিন পধ্যন্ত আমার এই চেষ্টার অবসান হবে না। আমার 
নিজের ভিতর থেকে আশ্রমে যদি কোন আদর্শ কিছুমাত্র জেগে 
থাঁকে তবে সে আদর্শ বিশ্বসত্যের অবারিত বৈচিত্র্য নিয়ে। এই 
কারণেই কোনো একট? সঙ্কীর্ণ ফল হাতে হাতে দেখিয়ে লোকের 


৪৭১ 


মন ভোলাতে পারব না__ এই কারণেই লোকের আনুকুল্য এতই 
হুর্লভ হয়েচে এবং এই কারণেই আমার পথ এত বাধাসম্কুল। এক- 
দিকে পণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রী থেকে আরম্ভ ক'রে স্ুরুলের দরিদ্র 
চাষী পর্যান্ত সকলেরই জন্যে আমাদের সাধনক্ষেত্রে স্থান ক'রে দিতে 
হয়েছে সকলেই যদ্দি আপনাকে প্রকাশ করতে পাঁয় তবেই এই 
আশ্রমের প্রকাশ সম্পুর্ণ হ'তে পারবে-_ তিববতী লামা এবং নাচের 
শিক্ষক, কাউকে বাদ দিতে পারলুম না । 

মনে কোরো না যে, তোমার সাধনপ্রণালী ও সাধনফলের 
প্রতি আমার কিছুমাত্র সংশয় আছে। তোমার প্রকৃতি নিজের 
পথ যদি খুঁজে পেয়ে থাকে তবে আমার পন্থা! তাঁর প্রতিবাদ করবে 
এমন স্পর্ধা তার নেই। সত্যকে তুমি যে-ভাবে যে-রসে পাচ্চ 
আমার প্রকৃতিতে যদি তা সম্ভব না হয় তবে সেজন্য পরিতাঁপ কর 
মুঢতা। ফলের গাঁছ তাঁর রসের সার্থকতা! প্রকাশ করে আপন ফলে, 
ইক্ষু করে আপন দণ্ডের মধ্যে, কেউ কারও প্রতিযোগী নয়)__ বৃহৎ 
ক্ষেত্রে এক জায়গায় উভয়েই মিলে যায় । ইতি ১১ মার্চ ১৯৩১ 

__সাধনার রূপ । প্রবাসী, ভান্র ১৩৩৮ 

“আমার এই চঞ্চলতা যদ্দি না থাঁকৃত তবে কোন্দিন হয় তো 
হাল আমলের একজন অবতার হয়ে উঠে ভক্তব্যহের মধ্যে বন্দী হয়ে 
পড়তুম”ৎ বর্তমান পত্রের এই উক্তির অপ্রত্যাশিত কদর্থ কেহ কেহ 
করিয়াছিলেন মনে হয়, তাহাঁরই আভাস পাওয়া যায় এবং খগ্ডন 
দেখা যায় শ্রাদিলীপকুমাঁর রায়ের “তীর্ঘস্কর” গ্রন্থে সংকলিত রবীন্দ্র- 
নাথের একখানি চিঠিতে 
"তোমার লিপির প্রথম ছত্র পড়েই চমকে উঠেছিলুম।-.. শেষে 
প্রবাসীতে আমার “পত্রধারা” পড়ে বুঝলুম কোন লেখা থেকে তুমি 
আমার অপরাধ নিয়েছ ।৩... তুমি জানো শ্রীঅরবিন্দকে আমি অকৃত্রিম 


৪৭২ 


ভক্তি করি। তাকে আমি আধুনিক কালের ব্যবসায়ী অবতারের দলে 
গণ্য করতে পারি এমন কথা তুমি কল্পনাও করবে এ আমার স্বপ্নের 
অতীত ছিল। এ কথা সকলেরই জানা আছে বাংলাদেশে অবতারের 
এপিডেমিক দেখ] দিয়েছে তাঁর কারণ সম্তাঁয় মুক্তি পাবার জন্তে একদল 
লুন্ধ। এর মোহবিস্তার করে এই মুগ্ধ দেশকে আরো আবিষ্ট করছে 
একথা তুমিও স্বীকার করবে । দেশে মেকি কবিত্ব অনেক চলছে, 
তার কাঁটতিও আছে-_ তাঁর উপরে যদ্দি শ্লেষকটাক্ষপাত কেউ করে 
তবে কি আমি বলব এটা আমারি উপরে লক্ষ্য করা হোলে।? ধাদের 
মহিমা উর্ধ্লোকে বিরাজ করে তীর্দের ভক্তর। তাদের সম্বন্ধে যেন 
নিশ্চিন্ত থাকেন, তীর! স্বতই নিরাপদ । অন্তত তার। আমার মতো! 
লোকের অবজ্ঞার লক্ষ্য হতেই পারেন না একথা যদ্দি না বোঝে] তবে 
তাতে আমার প্রতিও অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা হবে, তাদের প্রতিও । 
ভালে। জিনিষের কৃত্রিমত। সকলের চেয়ে হেয়__ তাকে প্রশ্রয় দিলে 
বড়ো জিনিষেরই মূল্য কমানো হয়। 
__তীর্থঙ্কর (১৩১৬ )। “ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২'এর পত্র 
পত্র ১২, ১৩। ১৯৩২ সালের এপ্রিল মামে রবীন্দ্রনাথ পারস্তভমণে 
গিয়াছিলেন ; পূর্ব বৎসরেই যাইবার আয়োজন হইয়াছিল, অস্থস্থতার 
জঙ্ সে প্রস্তাব কার্ষে পরিণত হয় নাই। 
১৯৩২ সালে পারস্তভ্রমণের কথা ৮১-৮৪ ও ৮৬ -সংখ্যক পত্রে 
ও শ্রীমতী বাসন্তী দ্রেবীকে লিখিত ৯-১০ -সংখ্যক পত্রে উল্লিখিত। 
রবীন্ত্রনাথের লেখা পারস্তভ্রমণ-বৃত্তীস্ত সমকালীন “বিচিত্রা” ও প্রবাসী, 
মাঁসিক পত্রে মুদ্রিত ও সম্প্রতি “পারন্ত-যাত্রী? গ্রন্থে সংকলিত | 
পত্র ২৮-৩০। বিশ্বভারতীর জন্য অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে এই সময় রবীন্দ্রনাথ 
ভূপালে গিয়াছিলেন । 
পত্র ৩৬। 'বীরেন্দ্রকশোরকে পত্রে জানিয়েছিলুম'__ বীরেন্্রকিশোরকে 


৪৭৩ 


লিখিত পত্রটিও (২৩ অগস্ট ১৯৩১) এই গ্রন্থভূক্ত (পূ ৪২২)। 
১৩৩৮ কাতিক সংখ্যা হইতে প্রবাসীতে শ্রীমতী হেমন্তবাল1 দেবীকে 
লিখিত পত্রাবলী 'পত্রধাঁরা” নামে ধারাবাহিক প্রকাশিত হইতে থাকে । 
৮৬-সংখ্যক পত্রে তাহার উল্লেখ আছে । এই সময় (আশ্বিন ১৩৩৮ ) 
প্রবাসী পত্রে 'নরদেবতা” নামে রবীন্দ্রনীথের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত 
হয়__ 'আমার ধন্মমত সম্বন্ধে ব্যাখ্যার প্রসঙ্গে উহাঁও দ্রষ্টব্য | 
পত্র ৩৮। “কলকাতায় বন্যার দুঃখ দূর কল্পে একটা অভিনয়'__ বিশ্ব- 
ভারতী ছুর্গত সহায়ক সঙ্ঘ কর্তৃক প্রবপ্তিত' 'গীতোতৎসব+, অভিনয়রাত্রি 
২৮শে, ২৯শে, ৩১শে ভাদ্র ও ১লা আশ্বিন ১৩৩৮ |? ৪১-সংখাক পত্রে 
উল্লিখিত “চটি” ব| অভিনম্বপত্রী হইতে উপরি-উদ্ধৃত তথ্যগুলি দেওয়া 
হইল। ৪২ ও ৪৩ -সংখ্যক পত্রেও এই গীতোৎসব উল্িখিত। এই 
উৎসবের দ্বিতীয় ভাগে ছিল তৎকালে-লিখিত শিশুতীর্থের নৃত্যাভিনয় | 
পত্র ৩৯। “দেশে বন্তাপ্রাবনের দুঃখ ৷ ইহার কিছুকাল পূর্বে প্লাবন ও 
দুিক্ষে উত্তর ও পূর্ব বঙ্গে সহশ্র সহস্র লৌক নিরাশ্রয় নিরন্ন হইয়াছিল 
_ ইহ্ঠ্দেরই আন্ুকুল্যার্থ অভিনয়ের উল্লেখ পুর্ব পত্রেই আছে । 
তদেব। “টট্টগ্রামের বিবরণট”। ইহার কিছুকাল পুরে চট্টগ্রামে একজন 
মুসলমান পুলিস ইন্সপেক্টর একজন হিন্দু তরুণ বিপ্রবী -কর্তৃক নিহত 
হইলে চট্টগ্রামের মুসলমাঁন-ধর্মীবলম্বী অনেকে দাঙ্গা লুণ্ঠন প্রভৃতিতে 
লিপ্ত হয়। পুলিশ-কর্মচাঁরী অবশ্ঠ সাম্প্রদায়িক কারণে নিহত হয় নাই, 
অত্যাচারী বলিয়া রাজনৈতিক কারণে নিহত | 
ট্টগ্রামে সম্প্রতি যে লুঠন, গৃহদাহ, সম্পত্তিনীশ হইয়াছে, তাহাতে 
এক কোটি টাকার অধিক সম্পত্তি অপহৃত বা! নষ্ট হইয়াছে বলিয়! হিসাব 
বাহির হইয়াছে । বহুসংখ্যক হিন্দু সর্বস্বান্ত হইয়াছে । ক্ষতি অপমান 
কেবলমাত্র হিন্দুদেরই হইয়াছে । 
-_ বিবিধ প্রসঙ্গ । প্রবাসী, আশ্বিন ১৩৩৮ 


৪৭৪ 


“এর পিছনে আমাদের মন্ত্যলোকের বিধাতি। পুরুষের] রয়েচেন? _-এ 
সম্পর্কে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় মহাঁশয় বিবিধ প্রসঙ্গে লেখেন__ 
---শ্রীধুক্ত যতীন্দ্রমৌহন সেন-গুঞ মহাশয় টাউনহলের সভায় 
জেলা ম্যাজিষ্টেটট মিষ্টার কেম্এর বিরুদ্ধে অতিশয় গুরুতর অভিযোগ 
উখবাপিত করিয়াছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বাঁর-বাঁর বলিয়ীছেন__ 
মিষ্টার কেম্‌ ইচ্ছা করিয়| কর্তব্য পালন করেন নাই, এবং তাঁহার 
আচরণ হইতে প্রমাণিত হয়, যে, তিনি জানিয়া শুনিয়া চট্টগ্রামের 
নিরপরাধ শহরবাসীদের বাড়িঘর ও দৌঁকাঁনপাঁট লুঠ করিবার জন্য 
(গুণ্ডাদের ) প্ররোচন। দিয়াছেন ।--. 
কলিকাতা টাউন হলের সভায় স্পষ্টই বলা হইয়াছে" যে, চাটগীয়ে 
লুট্যেরারা যাহা করিয়াছে, তাঁহ1 সরকারী কোঁন কোন কম্মচাঁরীর 
সাক্ষাৎ বা পরোক্ষ প্ররোচনা বা! প্রশ্রয়েই করিয়া থাকিবে ; নতুব। 
এমন নিয়ে বিন। বাঁধায় এমন ভয়ানক বে-আইনী এত কাঁজ তাহারা 
কেমন করিয়। করিতে পারিল ? 
__বিবিধ প্রসঙ্গ । প্রবাসী, আশ্বিন ১৩৩৮ 
পত্র ৩৯। “এই চিঠি থেকে কথাগুলো নিয়ে চিঠির আকারেই প্রবাঁসীতে 
পাঠাব খ্রির করেছি।” ১৩৩৮ আশ্বিনের প্রবাঁসী পত্রে “আত্মীয়বিরোধ' 
নামে ইহ প্রকাঁশিত হয়, এই গ্রন্থের প্রথম পরিশিষ্টে সংকলিত । 
১৩৩৮ আবণের প্রবাসী পে মুদ্রিত ও কাঁলাস্তর গ্রন্থে সংকলিত “হিন্দু 
মুসলমান” প্রবন্ধটিও দ্রষ্টব্য । সর্ববঙ্গ মুসলিম্‌ ছাঁত্রসম্মিলনীর উদ্দেশে 
প্রেরিত লেখা নিমে মুদ্রিত হইল__ 
সর্ধববঙ্গ মুমলিম্‌ ছাত্রসম্মিলনীর প্রতি সম্থেদন 
আমাদের দেশে অন্ধকার রাত্রি। মানুষের মন চাঁপা পড়েচে | তাই 
অবুদ্ধি, ছুর্ব,দ্ধি, ভেদবুদ্ধিতে সমন্ত জাতি পীড়িত। আশ্রয়ের আশায় 
অল্পমাত্র যা-কিছু গ'ড়ে তুলি তা৷ নিজেরই মাথার উপরে ভেঙে ভেঙে 


৪৭৫ 


পড়ে। আমাদের শুভ চেষ্টাও খণ্ড খণ্ড হ'য়ে দেশকে আহত করচে । 
আত্মীয়কে আঘাত করার আত্মঘাত যে কি সর্ধনেশে সে কথা বুঝেও 
বুঝিনে। যে-শিক্ষা লাভ করচি ভাঁগ্যদোষে সেই শিক্ষাই বিকৃত হয়ে 
আমাদের ভ্রাতৃবিদেষের অস্ত্র জোগাচ্চে। 
এই যে পাঁপ দেশের বুকের উপর চেপে তা'র নিঃশ্বাস রোধ করতে 
প্রবৃত্ত এ পাপ প্রীচীন যুগের, এই অন্ধ বার্ধক্য যাঁবাঁর সময় হ'ল। তা'র 
প্রধান লক্ষণ এই যে, সে আজ নিদারুণ ছৃধ্যেণগ ঘটিয়ে নিজেরই চিতাঁনল 
জ্বালিয়েচে । এই উপলক্ষ্যে আমরা যতই ছুঃখ পাই মেনে নিতে সম্মত 
আছি, কিন্তু আমাদের পরম বেদনায় এই পাপ হ'য়ে যাক নিঃশেষে 
ভম্মনাৎ। বহু যুগের পুর্জীরুত অপরাধ যখন আপন প্রীয়শ্চিত্বের আয়োজন 
করে তখন তা"র ছুঃখ অতি কঠোর, এই ছুঃখের দ্বারাই অপরাধ 
আপন বীভৎসতার পরিচয় দিয়ে উদাসীন চিত্তকে জাগিয়ে তোলে । 
একান্ত মনে কামন। করি এই দুঃসহ পরিচয়ের কাল যেন এখনি শেষ 
হয়, দেশ যেন আত্মরূত অপঘাতে না মরে, বিশ্বজগতের কাছে বার- 
বার যেন উপহসিত না হ'ই। 
আজ অন্ধ অমীরাত্রির অবসান হোক তরুণদের নবজীবনের মধ্যে । 
আচারভেদ, স্বার্থভেদ, মতভেদ, ধশ্মভেদের সমস্ত ব্যবধাঁনকে বীরতেজে 
উত্তীর্ণ হ'য়ে তারা ভ্রাতিপ্রেমের আহ্বানে নবযুগের অভ্যর্থনায় সকলে 
মিলিত হোক । যে দুর্ধবল সেই ক্ষমা ক'রতে পারে না, তারুণ্যের বলিষ্ঠ 
ওদীর্্য সকল প্রকার কলহের দীনতাঁকে নিরস্ত ক'রে দিক্‌, সকলে হাতে 
হাতি মিলিয়ে দেশের সর্বজনীন কল্যাণকে অটল ভিত্তির উপরে 
প্রতিষ্ঠিত করি । 
-_রবীন্দ্রনাথ ! প্রবাগী, কাত্তিক ১৩৩৮ 
পত্র ৪৭। “হিজলি হত্যা নিয়ে *-* পাক খেয়েছি ।” হিজলী বন্দীশালায় 
দুইজন রাঁজবন্দী -হত্যার প্রতিবাদে ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ তারিখের 


৪৭৬ 


জনসভা ও তথায় রবীন্দ্রনাথের ভাষণের কথ স্থবিদিত। এই সভা 
প্রথমে টাউন হলে হইবার কথা ছিল ; জনতা এরূপ বিশাল হয় যে, 
অবশেষে মন্ুমেণ্টের পাদদেশে সভার অনুষ্ঠান করিতে হয়। এ প্রসঙ্গে 
১৩৩৮ কাঁত্তিক ও অগ্রহায়ণ সংখ্যার প্রবাসীতে মুদ্রিত, প্রচলিত 
কালান্তর গ্রন্থে সংকলিত, “হিজলি ও চট্রগ্রাম" প্রবন্ধ এবং চতুধিংশখণ্ড 
রবীন্দ্র-রচনাবলীর প্রাসঙ্গিক গ্রন্থপরিচয়-অংশ দ্রষ্টব্য | 

পত্র ৫৭।* “নাঁটোরের মহারাজ পন্মীতীরে আমার বোটে আতিথ্য- 
গ্রহণ করেছিলেন ।” রখীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাহার গ্রন্থে ইহাঁর কিছু বিবরণ 
দিয়াছেন__ | 

৬৬1০ 00০ ৪152] 06 17/191021:919. 1958010301:875901 0: 

90016 001: 7050610 09170 00 006 59105 01 0102 11৮21-1021015 
600 00 & 11915 90029.91০52. :.. ৬0115 28002]: ০] 
02 20021002101106 005 1৬091527919, 141001)21 71010, 00৩ 10610 
0 4৯009190101, ৬7100 85 21 202০0 17) 00০ ০90401136 ০01 
77850 1321758] 06110901629) ০9410 106০ 10055 01691106006 
10029.15. [72,002] 1006৬ 0090 002 7191)919]9. 2.5 ৪. ০0101019- 
961] 11) [10610090021 0£ 19090. 98:00. 51962 85 06621071190 60 
88015£5 1018 00.12000- 

7010 91)6 ৪0288 01 (1106, 10. 81. 
কিন্ত নতুন খাঘ্য উদ্ভাবনের ভার নিয়েছিলুম আমি ।' ১২৫-সংখ্যক 
পত্রেও এই প্রসঙ্গ পুনশ্চ উল্লিখিত । এই প্রসঙ্গে ছিজেন্দ্রনাঁথের পুত্রবধূ ও 
দ্বিপেন্দ্রনাথের সহ্ধশিণী শ্রীহেমলতা দেবীর “সংসারী রবীন্দ্রনাথ” (প্রবাসী, 
পৌষ ১৩৪৬) প্রবন্ধ হইতে একটি অংশ উদ্ধৃত হইল-_ 

কবি-পত্বীর রান্নার হাত ছিল চমতকার ।-.. নৃতন নৃতন রান্না 
আঁবিষারের সথ কম ছিল না কবিরও। বোৌঁধ হয় পত্বীর রন্ধনকুশলতা 


৪৭৭ 


এ-সম্বন্ধে তার সখ বাড়িয়ে দিত বেশী । রন্ধনরতা পত্বীর পাশে মোড়া 
নিয়ে বসে নৃতন রান্নার ফরমাস করছেন কবি, দেখা গেছে অনেক- 
বার। শুধুফরমাঁস ক'রেই ক্ষান্ত হতেন না, নৃতন মাল মসল! দিয়ে 
নৃতন প্রণালীতে পত্তীকে নৃতন রান্না শিখিয়ে কবি সখ মেটাঁতেন। 
শেষে তীকে রাঁগাঁবাঁর জন্যে গৌরব ক'রে বলতেন, “দখলে তোমাদের 
কাজ তোমাদেরই কেমন একট] শিখিয়ে দিলুম |” তিনি চটে গিয়ে 
বলতেন, “তোমাঁদের সঙ্গে পারবে কে? জিতেই আছ সকল বিষয়ে |, 
__শ্রীহেমলতা দেবী । সংসারী রবীন্দ্রনাথ । প্রবাসী, পৌষ ১৩৪৬ 
“অপুর্ণ” কবিতাটি" (১২০ ও ১২১ পুষ্গার অন্তর্বত ) সম্পর্কে শ্রীমতী 
হেমন্তবালা দেবী আমাদের জানাইয়াছেন__ 

২৪ কাহিক আমার জন্মদিন । আমি পরিহাঁসচ্ছলেই আবেদন 
জানালাম যে, কবিগুরুর জন্মদিনে তিনি তে! কত কবিতা উপহার 
পেয়ে থাকেন, কিন্তু আমাঁর জন্মদিনে কেউ কবিতা লেখে ন।। তিনি 
যদ্দি আমার জন্মদিনে একটা কবিতা লিখে আশীর্বাদ করেন,তো আমি 
বিশেষ খুশি হই । সেই প্রার্থন। পূরণের জন্য ১৩৩৮ সালে ( সম্ভবতঃ ) 
কাঠিক মাসে এই কবিতাটি লিখে পাঠান আমাকে । আমি নৃতন 
বিস্ময়ে আনন্দে অধীর হই 1:** আঁমাঁর জীবনের একখানি ফোঁটো-চিত্র 
এ কবিতায় তোলা আছে ।-** কবিগুরু কি করে অন্তব্যাঁমীবূপে অত 
কথা লিখলেন তাই ভাঁবি। 

_শীহেমন্তবালা দেবী । শ্রাপুলিনবিহারী সেনকে লিখিত পত্র 

পত্র ৬৩। জয়ন্তীর প্রবেশিকা” -কলিকাঁতাঁয় ১৯৩১ সালের ডিসেম্বর 

মাসে যে সপ্ততিপুতি-উতৎসব বা “রবীন্দ্র-জয়ন্তী” অন্ুঠিত হয়, তাহার 
সদস্যপদের দক্ষিণ! ছিল পাঁচ টাকা। 

পত্র ৭১। 'মহাত্সীজির পত্র পেয়েছি ।” ১৯৩১ সালের ২৮ ডিসেম্বর 

মহাত্মা গান্ধী বিলাঁতে গোলটেবিল বৈঠক -অস্তে স্বদেশে প্রত্যাবৃত্ত 


৪৭৮ 


হন। এই সময় দেশের নানা স্থানে যে অত্যাচার উৎপীড়ন চলিতেছিল 
তাহার ফলে অবিলম্বেই তাঁহাকে পুনরায় আইন-অমান্য আন্দৌলন 
আরম্ভ করিতে উদ্যোগী হইতে হয়) ফলে ১৯৩২ সনের ৪ জানুয়ারি 
তারিখে তিনি গ্রেপ্তার হন। তাহার পুর্বে তিনি রবীন্দ্রনাথকে নিষ্ন- 
মুদ্রিত চিঠিখাঁনি৬ লেখেন_ 


[,0000000, ২0509 
[30100095, 


3 1917) 732 
10221 3371100০৬ 


[ 2] 3056 50:201106 [05 01160 11005 00. 61১6 102900:555 
900 85 ] তে 60 5668] ৪ ৮10] 0? 91660] 00101 0? 5০0. ] 
00 500 00 615০ 5০001065010 006 98011610191 1175 6096 
19 1021106 111)069. 

ভ/101) 10০ 
1 7৫ 0812001 


রবীন্দ্রনাথ এই সময়ে লণ্ডনের 9০0৫০: পত্রে যে বিবৃতি দেন, 
তাহার মুখ্যাংশ নিম্নে মুদ্রিত হইল-_ 

/31590059) 1095 06210. 21:765660. »7109010010936 10662 
€1%৩া0 2. ০08০6 0? 501001035 ঢ০ ৪. 12010002] 1110021902170105 
৬10) 006 05০77017)606.16 0015 900০5 0586 0; 00০ (৬০ 
031:006175 10 00০ 05119106000 1)15001% 0? 10019. 002 
[০০16 01 [0019 ০510 106 51121011109] 15170160, ৪০০01 
01755 00 07 101605, [30565], 00 18061002319 12 ৪০০০] 
6৭ 95 ৪. 1800 2170 976 1008150 0705 1০9 002 0119 0102. 
৮০ 816 10900102100, 00012 10100162106 0091) 006 0010০] 
8০601 15101) 15 103616]5 ৪0 9০০10610 9৮৮ 1 আশ 1056 


০00 10680 2100. 5152 ৮০0 60 ৪ 50100017) 16 0 001161091 


৪৭৯ 


109818105, 1011170]5 9310109.1, 9. £1296 00010010165 আ11] 06 
[019560. 1176 05579911052]? 9000010. 6155 05 00০ 010:00৫00 
0০810215655 06 90210500১00 51000 0610210001790100 91)1018 
91101201% 01159 105 ০0৬ 10111100606 ড1000000 /250105 105 
1250101055 11) 01121112 20)0010108.115100 200 561-010/801105 
0250:00015217655. 11015 15 010০ 1000106106 ড91)610 10 5100019 
06 595% 0] 05 €9 00586 811 00 ৪:০021001119020 01210010599 
85811750 0101 151001750) 106] ০. 00050 00 0০7 10230 €০ 
50001511765 001 102005 113 0106127]% 10৮০ ০৮০1০ ৮101) 0105০ 
ড/1309 109৬০ 108081015 121০0690 ০01 ০911] 06 00101902591)11), 
1901) ০: 1000050 ০1211) 0£ 00156515৩55 ৪2 1162096 0016০ 0: 
০0-00210801910) ৮5160 91] 01212100 008165 02 ০0781 90105, 
1015 15 00০ [100 02 0868500090106  ড510101 816] 5010063 
০ ৪. 00012, ৮৮100 2. 91000156026 10211755 €0 & 9003 021 
558:065159. 0010065 230 910.0162105 00০ ৫156107010125 06 ০০: 

51696152 20429001 10 006 10011901185 0£ 105 £1০90:003 
17102 01110105০ 19৬15950555 0£ 012 19৬/-107915215 91001 
60101015 9৬৪:০, 29 00 00] ০02 0161009,62 99159610111 &, 
10৬০ 01509110020. 05 006 100217955 0£ 2. [00৬৮০17 ড/10101 10811- 
০8929 1056] 710) 21 1391501-11781199,06 50297101010 61096 165 
01110. 72110 09101)00 09616, 11015 15 00০ 01006 ৮0101 ৮০ 
10015017652 10166 000 1655001051011165 00 010০ 001521%25 
1001:8115 90021:101 60 (10056 ৬৮100 212 010591০9115 00৬6128] 

11) 2. 17022990016 01096 080 0০5 00০11 0 10100091010, 
2010 2100920 785%16দা, [91). 1982 


৪৮০ 


রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী র্যাম্জে ম্যাক্ডোনাল্ডের নিকটেও 
এই তার-বার্তা প্রেরণ করেন-__ 

1002 52359010109] 0০01105 01 100150110010206 12015551018 
06176 £011060 05 [00190 03060000600 50910176 100 100- 
71501003606 06 791)9000911 15 10090 01301070916 110 ০210511)6 
08177091610 21121590108 0৫ 001: 09001600000, 50015 0081106 
10 9য0606]15 0100110 00 05 00 ০0-0061915 100 5001 
1:6101769210801525 01 069০21001] 0011009] 80101500360 

1 00277) 19516, 1760. 1989 
পত্র ৭৯, ৮০। এই সময় কলিকাঁতার গভর্মেন্ট, আর্ট, স্কুলে তৎকালীন 
অধ্যক্ষ শ্রীমুকুলচন্দ্র দের উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথের অস্কিত চিত্রাবলীর একটি 
প্রদর্শনী হয়। ৮০-সংখ্যক পত্র উক্ত আর্ট, স্কুল হইতে লিখিত। 
পত্র ৮১। “নিজের পদ্বীগুলোৌকে মনেও রাখি নে" । উল্লিখিত প্রদর্শনী- 
সংক্রান্ত কাগজপত্রে, রবীন্দ্রনাথ 51 22015078080 ]88016 বলিয়া 
বমিত হইয়াছিলেন। ইহার ফলে অসম্তোষের স্থঙ্টি হয়; এই প্রসঙ্গে 
আনন্দবাজার পত্রিকায় যে সংবাদ প্রকাশিত হয় নিম্নে তাহা মুদ্রিত 
হইল+-_ 

ভাক্তার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানাইয়াছেন যে সম্প্রতি গবর্ণমেপ্ট আট 
স্কুলে তাহার চিত্রসমূহের যে প্রদর্শনী হয় তাহার আমন্ত্রীপত্রে এবং 
ক্যাটালগে তাহার সম্মতি কিংবা! অনুমতি না লইয়! তাহার নামের পুর্বে 
সার” উপাধি ব্যবহার করা হইয়াছিল। যে উপাধি তিনি স্বেচ্ছায় 
বজ্জন করিয়াছেন তাহ] পুনরায় গ্রহণ কর। তাহার পক্ষে সম্ভব শয়। 

_ ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ | আনন্দবাজার পত্রিকা 
এই প্রসঙ্গে, ইহার কয়েক বৎসর পূর্বের অনুরূপ একটি ঘটনার উল্লেখ 
করা যাইতে পারে ।_ 


৯|৩১ ৪৮৯ 


রবীন্দ্রনাথের “চরকা” প্রবন্ধের ( সবুজ পত্র, ভাদ্র ১৩৩২ ) অনুবাদ 
[1১৩ ০9106 006 015910509) ১৯২৫ সেপ্টেম্বরের মডার্ণ রিভিউ 
পত্রে প্রকাশিত হইলে, মহাত্মা গান্ধী ইয়ং ইপ্ডিয়া পত্রে তাহার উত্তর 
দেন। এই প্রবন্ধে তিনি রবীন্দ্রনাথকে 91 চ২2101501-81780 বলিয়া 
উল্লেখ করেন। ১৯২৫ ডিসেম্বর ও ১৯২৬ জানুয়ারি -সংখ্যা মভার্ণ 
রিভিউ পত্রে সম্পাদকীয় মন্তব্যে এ বিষয়ের কিছু আলোচন! হয়। 
অবশেষে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য মভার্ণ রিভিউ'এর নিম্নসংকলিত প্রবন্ধে 
(ফেব্রুয়ারি ১৯২৬) প্রকাশ পায়__ 


1১9,0110078086)0 115,2079 8,00 10701210810000 
[32116 ৪৬2০ 01080 2. 01900951020 1095 10261) 181960. 11) 
55810. 60 005 1501510000০0১ 1 1561 16 11510669006 ০1691] 
1705 ০0৬71 %16%/ 0£ 16 10০6012 0০ 090110. 1615 010%1005 009 
16 595 5016] 60 515. 100070930 1210182.515 0 006 2:07555100 
01 005 10010199010 ৪ 00০ 19111915572118. 89610 19552016210 
00161 06905 0£ 11810111991915 01096 29110%90 16 00020] 95159. 
[019 01061005091. €0 0906 16 0901 00100 1706. [6 11990 1700 
20115 1281159000০ ৮৪10০ 0£ 0015 01012, 16 0310 19৬০ 10617 
11701610210 02 005 096 00 0101: 16 25 2. 52.011010 1ম 
9101) 795 1১০০0.20 11) 010 00 £1০ 50:20501) 009 005 ৮০1০6 
ঘু 09৬০ 100 00০ ০0৬০1: 5219195 ০5010০210 0150013120091% 00 
0150195% 22 11051100012 8600002 ০0£ ০0066100610 ৪. 01016 
06 1)019001 10101 ৮99 05008661160 01) 106. 11) 12002010101) 
০ 005 116211815 আটো]. 1 5286]5 80100 00 1008102 20 
000110 £650016 13101) 125 1092 610০ 15950 5765550100 


০ 2৪ 60620010521 01091980621: 806 117 0015 08916100191 


৪৮২ 


০25০, ] 83 0151) 00 16 1০1) ] 13010916559]5 9116 6০0 
065153906 ০: 0011009] 15906175 60 1901001) 21) 80900196 
10106550 2£217850 51780 93 109010171775 80 0080 0106 1 006 
[01001910 

4৯ 01016 0£ 0615019] 01501750010] 101 50206 [06116 090 1053 
৪. 010152758] 5৪106 15 1০৬০1 & 1০810. 06 9৬০1. 1]0 5১০0৬ 
(07000 10616 16 15 ঢাল] 005 13 006 1657025101]$0 0? 
€1)৫ 021 10 00923 16 2170 22৮ 60120, 01 10 90000190067 
0000, ৪৮৮৫১ 05155 601 21 6০606109291 9009851010৫ 0- 
০99০ ড/1)101) 15 02100011% 11002190152. | 900 106 09811090915 
10521751015 00 00০ 90000096100 ৬৮1310101] 102ড০ 10260 001 
€01)902 21001) 00 6811) £1010 00051021001) ০01010075, 8150 
[01 010৪ 99006 159500১ ][ 81509 29] 0000. 01096 02010 11106 
085980151) 051)210019. 0095০ 2150 11900119 00090019 [8 118 
ভ/00 ৪. 01016 ৮৪100161115 ৪05 00060 1691 1500512100) 
৮5010 ০0৮0 ০0065 1035 11510060115 ০18100 10০ 0015 
50000191106 01090 ০819 105 00509 19 0090 0135 61616 15 950 19511) 
105 01501800090 60050 165 1১605105605005 85500180101 
8150 6090 005 20০09৮০-0006ণ0 11117501003 ০0018051776] 0£ 
0015 812 7090০ 0০0 000 00 5161 600 00919 5072100০ 1060- 
15110975 10 01961 ০86] 0 51015. ৬৬10112 ০0756170106, 
1 5082555 €0 212 1010551701855) 13101) 1025 91152010621) 
00117)620 ০00০ 705 00 1201007 0 0015 10017891) 0586 1 00 
1900 116 9195 900161090 00 205 13200০১1320 01 91150, 


910 01 1000601, 01:11... 2100) 00০16985006 21], 75.5081116. 


৪৮৩ 


£৯ 055০100-81091556 009 01:906 0015 60 ৪. 5256 0? 01106 118 
00০ 02060 0৫ 005 102106 8150 1)6 002 1000 [৫ 006. 
[2101170191090019£015 

পত্র ৮২১ ৮৩১ ৮৪১ ৮৬। ১৯৩২ সালের ১১ এপ্রিল ররীন্দ্রনাথ পারস্তযাত্র। 
করেন, ৩ জুন তারিখে দেশে ফেরেন। এই চিঠি কয়খানিতে ও শ্রীমতী 
বাঁসন্তী দেবীকে লিখিত ১০-সংখ্যক চিঠিতে তাহারই প্রসঙ্গ আছে। 

পত্র ৯*। “ইউনিভসিটি থেকে নিমন্ত্রণ । ১৯৩২ সালের ৬ অগস্টে 
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তীহাঁকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। উত্তরে 
রবীন্দ্রনাথ যাহা বলেন, পারস্তযাত্রী (১৯৬৩) গ্রন্থে (পু ১৬৮-৬৯) 
মুদ্রিত আছে। 

পত্র ৯৭ | “শিবারামের গল্প” দ্রষ্টব্য “সে? গ্রন্থ । “কালের যাত্রায় তোমার 
বণিত ব্রাঙ্গণকন্যা”__ “কালের যাত্রা” গ্রন্থে রথের রশি” নাটিকা 
রষ্টব্য। বর্তমান প্রসঙ্গে শ্রীমতী হেমন্তবাল৷ দেবী শ্রীপুলিনবিহারী 
সেনকে এক পত্রে লিখিয়াছেন-_ “কৌতুককর ইতিহাস এই যে, 
পুজনীয় কবিগুরু যেন আমার কাছে পত্র লেখাট। কমিয়ে দিতে চান, 
এই আঁশঙ্কা| মনে আসায় পত্র আদায়ের ফন্দীরপে আমি এ মিথ্যা 
অভিযোগ আনয়ন করি." যেন আমীকে বিদ্রপ করেই এ সব 
লিখিয়াছেন ।” 

পত্র ৯৯। চিঠি লেখার তারিখ ২২ আশ্বিন প্রবাসী” পত্রে ছাঁপ। 
হয়, মূল পত্রেও দেখা যাঁয়। (মুল পত্রেই তারিখটি কেহ বদল করিয়া 
থাঁকিবেন। ) কবির স্বহস্তের “২২ আশ্বিন'ই ঠিক হইলে, উহ খুষ্টীয় 
হিসাবে ৮ অক্টোবর ১৯৩২ হইবে । 

পত্র ১০১। “আমি যখন “স্বদেশী সমাজ” লিখেছিলুম” ৷ এই প্রবন্ধ সম্পর্কে 
বিস্তারিত বিবরণ সম্প্রতি ব্বদ্দেশী সমাজ" গ্রন্থে (১৩৬৯) সংকলিত 
হইয়াছে । 


৪৮৪ 


পত্র ১০১। “তাঁরা জানে -"'শ্রুতিস্থখকর নয়” ( পৃ ১৭৭ )। ১৯১৬ সালে 
জাপানে গিয়া জাপানের পাশ্চাত্যাুকরণ সম্বন্ধে কবি যে সাবধানবাণী 
উচ্চারণ করিয়াছিলেন 19010081199 গ্রন্থে এবং জাপাঁন-যাত্রীর 
( ১৩৬৯ সংস্করণ ) গ্রস্থপরিচয়ে তাহা মুদ্রিত আছে। জাপানীদের 
অনেকে এসকল উক্তি অন্ুকুলভাবে গ্রহণ করেন নাই । আমেরিকায় 
মাকিনী সভ্যতা সম্বন্ধে গ্ররতিকুল উক্তি করিয়া রবীন্দ্রনীথ মাকিন 
পত্রিকাদির কিরূপ অগ্রীতিভাঁজন হইয়াছিলেন, অধ্যাপক ষ্টিফেন হে 
সম্প্রতি সে বিষয়ে আলোচন। করিয়াছেন । 

তদ্দেব। “যখন জালিয়ানবাঁগ ব্যাপারে আমি ছাড়া আর সকলেই নীরব 
ছিলেন” । এই প্রসঙ্গে শ্রীপ্রশাস্তচন্দ্র মহলাঁনবিশ -লিখিত একটি 
প্রবন্ধের অংশবিশেষ উদ্ধৃত হইল-_ 

১৯১৯ সাল। গরমের ছুটি হয়ে গিয়েছে । কলেজ বন্ধ । বাইরে 
যাইনি । পাঞ্জাবের কথা অল্প অল্প করে আসছে লোকমুখে । কৰি 
জোড়া্সীকোর বাঁড়িতে। কিছু খবরের কাগজে, কিছু চিঠিতে, 
জালিয়ানালা-বাগের খবর এসে পৌছচ্ছে। রুচিরাম সাহনির কাঁছ 
থেকে অনেক কথা! একদিন বনৌয়ারিলাল চৌধুরী কবিকে এসে শুনিয়ে 
গেলেন । কবি সেই সব শুনে ক্রমেই এমন অস্থির হয়ে পড়লেন যে 
আমাদের ভাবিয়ে দিলে । রথীবাবুরা বাইরে । আমি মেজোঁমামাকে 
€ সার নীলরতন সরকার ) ডেকে আনলুম। কবির শরীর তখন এমন 
দুর্বল যে দোৌতল] থেকে তিনতলায় উঠতে কষ্ট হয়। সারাদিন একটা 
লম্বা চেয়ারে শুয়ে । লেখা বন্ধ । কথাঁবার্তী কম বলেন । হাঁসি-গল্প তো 
নেই-ই | মেজোমামা দেখে ০92001866 £856-এর হুকুম দিয়ে গেলেন । 
শুয়ে থেকে কবি আরও অস্থির হয়ে উঠলেন । £১5চ্5 সাঁহেবকে 
ডেকে পাঠালেন । পাঞ্জাবে যে কাণ্ড ঘটছে, তা নিয়ে সমস্ত ভারতবর্ষের 
মধ্যে একজন লোকও প্রতিবাদ করবে না, এটা কবির পক্ষে অসহ্। 


৪৮৫ 


4১00195/5 সাহেবকে মহাত্ীজির কাছে পাঠালেন এক প্রস্তাব নিয়ে । 
তখন বাইরে থেকে পাঞ্জাবে লোক প্রবেশ কর] নিষেধ হয়েছে । কবির 
ইচ্ছ! যে মহাত্মীজি যদ্দি রাঁজী থাকেন, তবে মহাত্মীজি আর কবি 
ছুজনে দিল্লীতে গিয়ে মিলবেন। সেখান থেকে দুজনে একসঙ্গে 
পাঞ্জাবে প্রবেশ করবার চেষ্টা করবেন। গুঁদের দুজনকেই তা হলে 
গ্রেপ্তার করতে হবে । এই হবে গুদের প্রতিবাদ । 4১265 সাহেব 
মহাক্সাজির কাছে চলে গেলেন । 

এদিকে কবির দ্দিন কাটে নাঁ। 40016%5 সাহেবের পথ চেয়ে বসে 
আঁছেন 1... ইতিমধ্যে £১9৫7০৬3 সাহেব গাদ্ধিজির কাছ থেকে ফিরে 
এলেন 1." £30165৬৪ সাহেব আসতেই অন্য সব কথা ফেলে [ কবি] 
জিজ্ঞাসা করলেন, “কী হোলো ? কবে যাঁবেন ?”  £৫16%5 সাহেব 
একটু আন্তে আন্তে বললেন, বলছি সব-- গুরুদেব কেমন আছেন এই 
সব কথ। পাডছেন; কবি আবার বাঁধ দিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে কী 
হোলো ? তখন 4£১015%5 সাহেব বললেন যে, গান্ধিজি এখন পাঞ্জাব 
যেতে রাঁজি নন্‌__ ] 9০ 006 %/20 60 10019277855 0106 (05212 
0067) 90স-_ শুনে কবি একেবারে চুপ হয়ে গেলেন । এ সম্বন্ধে আর 
কোনো কথা বললেন না । 

--বিকালবেলা-* জৌড়াঞ্সীকোয় গিয়ে শুনি কবি একটু আগে 
একট গিকে গাঁড়ি ভাকিয়ে বেরিয়েছেন। কোথায় কেউ জানে না। 
কবি যখন যেখাঁনে যান আমিই ব্যবস্থা করি__ আমাকে কোনো খবর 
দেন নি। 

-**বেশ যখন সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে সাড়ে সাতটা, পৌনে আঁটটা। 
হবে-_ কবি একটা! ঠিকে গাঁড়িতে ফিরে এলেন । .. দেখলুম কবি খুব 
বিচলিত | -* 

'**রীত্রে ভালে ঘুম হোলে! না । ভোঁর হয় নি-__ হয়তো চাঁরটে 


৪৮৩৬ 


হবে-_ উঠে আনান করে বেরিয়ে পড়লুম । আমাদের সমাজপাঁড়ার পশ্চিম 
দিক দিয়ে সরকার লেনের রাস্তায় । গলিতে তখনো গ্যাসের আলো! 
জলছে । জোড়াসীকোঁয় গিয়ে দেখি দোতলার ঘরে আলো জ্বলছে । 
গরমের দিন, দরোয়ানরা বাইরে খাটিয়াতে শুয়ে । তাদের জাগিয়ে 
দরজা খুলিয়ে উপরে গেলাম। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সিডির 
উপরের জানলা দিয়ে দেখলুম বসবাঁর ঘরের উত্তর-পুবের দরজার সাঁমনে 
টেবিলে বসে কবি লিখছেন । পুব দিকে মুখ করে বসে আছেন । পাশে 
একটা টেবিল-ল্যাম্প জলছে । আকাশ একটু ফর্সা হয়েছে । কিন্তু ঘর 
তখনো! অন্ধকার । আমি ঘরে যেতেই মুখ ফিরিয়ে বললেন, কী 
এসেছে। ? এই বলে আবার লিখতে আরম্ভ করলেন । দু-তিন মিনিট । 
তারপরেই একখানা কাঁগজ হাতে দিয়ে বললেন পড়ো । বড়লাটকে 
লেখা নাইটহুড পরিত্যাগ করার চিঠি । আমি পড়লুম । 

কবি তখন বললেন-_ সারারাত ঘুমাতে পারিনি । বাঁস্‌ এখন 
চুকলো । আমার যা করবার, তা হয়ে গিয়েছে । মহাত্মাজি রাজি 
হলেন না পাঞ্জাবে যেতে । কাল তাই নিজেই গিয়েছিলুম চিত্তরপ্তনের 
কাছে । বললুম যে, এই সময় সমস্ত দেশ মুখ বন্ধ করে থাকবে এ অসহ্। 
তোমরা প্রতিবাঁদ সভী ডাঁকো। আমি নিজেই বলছি যে, আমি 
সভাপতি হবো । চিত্ত একটু ভেবে বললে, বেশ । আর কে বক্তৃতা 
দেবে? আমি বললুম, সে তোমরা ঠিক করো। চিত্ত আরেকটু 
ভাবলে _ বললে, আপনি যদ্দি সভাপতি হন, তবে তারপরে আর কারুর 
বক্তৃতা দেওয়ার দরকার হয় না । আপনি একা বললেই যথেষ্ট । আমি 
বললুম, তাই হবে। এবাঁর তবে সভা ডাকো । তখন চিত্ত বললে, 
আপনি একা যখন বক্তৃতা দেবেন, আপনিই সভাপতি, তখন সব চেয়ে 
ভালো হয় শুধু আঁপনাঁর নামে সভ1-ডাঁকা । বুঝলুম ওদের দিয়ে হবে না ॥ 
তখন বললুম, আচ্ছা আমি ভেবে দেখি । এই বলে চলে এলুম। অথচ 


৪৮৭ 


আমার বুকে এট] বিধে রয়েছে কিছু করতে পারবো না, এ অসহা। আর 
আমি একাই যদ্দি কিছু করি, তবে লোক জড়ে৷ করার দরকার কি? 
আমার নিজের কথা নিজের মতো৷ করে বলাই ভালো । এই সম্মানটা 
ওর] আমাকে দিয়েছিল । কাজে লেগে গেল । এট! ফিরিয়ে দেওয়ার 
উপলক্ষ্য করে আমার কথাঁটা বলবার স্থযোগ পেলুম। 

_ 'লিপিকা-র সুচনা | শারদীয়! দেশ পাত্রিক, ১৩৬৭ 
এই প্রবন্ধ কবির জীবদ্দশায় লিখিত ; বক্তব্য অন্ুমোদন-পুর্বক ৬ জুলাই 
১৯৪১ তারিখে তিনি ইহাতে স্বাক্ষর করিয়া দেন; এ স্বাক্ষর-সংবলিত 
অংশের প্রতিলিপিও এ প্রবন্ধের সহিত দেশ পত্রে মুদ্রিত । প্রবন্ধটির 
নাম « লিপিকা”-র স্চনা, দিবার কী তাৎপর্য, প্রবন্ধের শেষ অংশে 
ব্যাখ্যাতি-__ 

আন্তে আস্তে তখন ফর্সা হয়ে এসেছে । ঘরের আলো নিবিয়ে 
দিলুম | £১075০75 সাহেব এলেন | বড়ো! লাটকে তার পাঠানো-_ 
খবরের কাগজে দেওয়ার জন্য কপি তৈরি করে তিনি বেরিয়ে 
গেলেন। রামানন্দ বাবুকে এক কপি এনে দিলুম । এই সব করতে 
খানিকটা বেলা হয়ে গেল । দুপুরের দিকে আর জোড়াঞাকোয় যাইনি । 
বিকালে গিয়ে শুনি কবি দোতিল৷ থেকে তিনতলায় চলে গিয়েছেন । 
দক্ষিণের শোবার ঘরে গিয়ে দেখি একটা! ছোটে বাঁধানো খাত, লাল 
মলাট দেওয়া । তাঁতে কী লিখছেন। আমি যেতেই বললেন, 
এই শোনো৷ আরেকট] লেখা, লিপিকার প্রথম যেটা লেখা হয় “বাপ 
শ্মশান থেকে ফিরে এল”। তখন পাঞ্জাব কোথায়, জালিয়ানাঁলা-বাঁগ 
কবির মন থেকে মুছে গিয়েছে । দিনের পর দ্িন এক 'একটা করে 
“লিপিকাঁ”র লেখা চলতে লাঁগলো। ৷ শরীরের ক্লান্তি, সমস্ত অস্থথ তখন 


একদিনের মধ্যেই সেরে গিয়েছে | 
_-লিপিকা'-র হুচনা | শারদীয় দেশ, ১৩৬৭ 


৪৮৮ 


“নাইট'পদবী-ত্যাগ-পত্র প্রেরণের পর রবীন্দ্রনাথের ধীরভাবে নিত্য- 
নৈমত্তিক সকল কর্তব্য করিবাঁর বিবরণ আরও কেহ কেহ লিখিয়া- 
ছেন ; অথচ এ পত্রের জন্য রাঁজরোষভাজন হইবার সম্ভাবনা সেদিন 
প্রভৃতভাবেই ছিল__ 

আযাণ্ডজ সাহেব লিখে গিয়েছেন__ মনে রাখতে হবে যে, তখন 
ডিফেন্স অফ ইপ্ডিয়া! আাক্ট বলবৎ ছিল । রবীন্দ্রনাথ জানতেন, যে তিনি 
তার এই চিঠির জন্ত গ্রেপ্তার, সরাঁসরি-বিচাঁর ও জেল-এর মুখোমুখি 
এসে দাঁড়িয়েছেন । ঠিক সেই সময়েই পাঞ্জাবে অনেকেই এর চেয়ে 
অনেক কম গবর্ণমেণ্ট-বিরোঁধী কাঁজের জন্য যাবজ্জীবন দ্বীপাস্তর ও 
সম্পত্তিবাঁজেয়াপ্ত শাস্তি পেয়েছেন । 

_জ্ীঅমল হোম | পুরুষোত্তম রবীন্দ্রনাথ 

জালিয়ানওয়ালাবাঁগ ও রবীন্দ্রনাথ -প্রসঙ্গে বহু তথ্য ও বিবরণ 
শ্রীমমল হোম -প্রণীত 'পুরুষোত্তম রবীন্দ্রনাথ পুন্তকে গ্রথিত 
হইয়াছে । এই প্রসঙ্গে শ্রীমৈত্রেয়ী দেবীর “মংপুতে রবীন্দ্রনাথ, গ্রন্থে 
রবীন্দ্রনাথের উক্তিও দুষ্টব্য | 

'পুরুষোত্তম রবীন্দ্রনীথ, গ্রন্থে ( ১৩৬৪ মুদ্রণ, পু ৭৬-৭৭ ) গান্ধীজি 
কেন তখন পঞ্তাবে আসিতে চাহেন নাই, সে সম্বন্ধে মহাত্বাজির 
সহিত গ্রস্থকারের আলোচনার নিধাস এবং দীনবন্ধু আগ জের বক্তব্য ও 
মুদ্রিত। রবীন্দ্রনাথ জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার প্রতিবাদে সভার 
আয়োজন করিতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, আযাণগ্ডজ সাহেব ১৯২৭ সালে 
একটি প্রবন্ধে তাহা লিখিয়াঁছিলেন ; 'পুরুষোত্বম রবীন্দ্রনাথ” গ্রস্থে 
€ পৃ ৭৬) প্রবন্ধের উল্লেখ আছে । 

“নাইট”-উপাধি ত্যাগ করিবার উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ রাঁজপ্রতিনিধি 
চেম্স্ফোর্ডকে ঘে চিঠিখানি ইংরেজিতে” লেখেন তাহাও এ স্থলে 
সংকলন-যোগ্য ; পরপৃষ্ঠা দরষ্টব্য | 


৪৮৯ 


6, 10578708,88,028 15 £01:9 18709, 
08190.68, 24৪,৮80, 1919. 


০০ 00০21121905, 

1105 21501000165 01 006 176250155 (81521) 0৮ 00০ (309৮০100- 
1001) 11) 01) 70110190001: 0106111156 50006 1009] 0150010021)065 
1093১ ভা, ৪.17006 91009০15) 16%58160. 60 01010217005 16 1)6]0- 
165505255 06 08] 009510101) 95 10110191) 55710165065 11) [10019. "1106 
01501000101015806 96৮০1016502 01০ 0001015101021069 17361156650. 
0000 0106 010010010909 00016 2190] 006 02060100905 ০৫6 ০৪15- 
1076 00600 000, ৮০ 212 ০01%17)02 21০ চ/100006 09191161] 17, 
016 10156015 0£ ০1৮111920 £0৮011)0)61705 102101706 501236 ০0105- 
[0100005 23520610125, 12021021700 161070665. 05010519610) 0108 
50101, 652:0096000095 05210 1006650. 0০৮ 009 ৪. 0001901079১ 
019910060. 2130 125001061999, 175 ৪. 0০0৬০]: ভ13101) 1095 00৪ 
08056 02101015 66010161)0 01591515801010 101 06901000101 ০1 
1001097 11525, ৩: 001150 90:010815 899615 0096 50 0212 01910 
00 0011059] 2500০916005, 6৪1 1959 070191 )0501610901010. 1100০ 
৪০০000069০0 10972105 8150 901611065 01100150186 105 001: 
01960515100 00512010120 1095০ 01010151650. 01010051) 06 
89550 51160)0৩ 16900010165 6৮০15 5010)67 0£10019) ৪100. 036 
012152152] 2£013% 0£ 11001109010 1010960 1% 00৪ 1068105 ০0? 
00 060016 7395 10961) 1£190160 05 ০0 10115, 00995015 
০00620001900)6 01060796169 £00 10009801106 51026 03৪ 


10906179685 59100215 16350209, 11019 091101150655 1085 106212 


৪৯০ 


ঢ7151560. 0 10950 06 00০ £১1510-1190191 020015১ ৮/13101) 102০, 
10) 50006 58565১ 60735 6০9 006 0০9] 190500 0? 1091005 
নি) 02 001 50611105 ড100006 15061৮175 006 15956 ০102০] 
11070 00০ 98072 21700010165, 19121)0155915% 02/:200] 118 
5000610010106 ডা ০5 0৫ 09118 ৪130 20659510106 1005- 
10901) 01000) 006. 0158105 1201692101011)6 006 307661219, 
[00510760086 001: 8006215195০ 106210. 17 210১ 8100 0080 
(10209591012 01 ড2105691002 15 10111701776 002 001016 19190 0: 
502:055008105911) 1 0100 (0৬100100106, ৮৮1)1010 50010. 59 58511% 
2:010 60 105  10095091179005 95 10661001106 165 01)5510981 
50210002100 10)01092] 020101010) 01) ০15 16850 01080] ০৪ 
00 207 100% 0০০08206515 60 9005 911 001359011617025 09012 
1055216 10) 81106 ০:০৪ 6০ 010০ 096550 0£ 00612011110105 0: 
10% ০0000150760 500011590. 1000 ৪. 00010) 21060151) ০: 
20001. 1106 61006 1795 ০020 711 109055 0 10100] 
1079106 0701 51081006 191717)6 11) 00611 10001061710115 0010623 
0£ 10000111901010)) 100 ] 01 1705 0210 7191) 00 96900. ৪1301 
09 921] 50০0181 015010001005 1705 00০ 5105 ০0 0009৪ ০02 
[0 ০0010050060 10, 00 00610 50-০91190. 117515011091700, 
816 1191516 €০0 50666 2. 46519090000 1906 :06 101: 10100021 
১611755.  £১00 00656 216 006 1595005 ড/10101 10955 0810- 
0115 ০0101021190 [02 00 2591 ০0101 চয০61121005, 100 00 
76962121706 8700 1261720, 10 12116৮21072 ০01 107 6161০ 0: 
(50151900000, 1101) [1990 0106 10010001 60 2006106 0000 [335 
1091925 006 1106 86 03061080050? 5০00] 01060659501 


৪৯১ 


101 10056 00131610639 ০৫ 106810] 56011 60021510680 
80170179010]. 
০0195১28100 00115, 
[২2117019090] 88016 


পত্র ১০১। সংশোধন : ১৭৬ পৃষ্ঠার শেষ ছত্রে “মতো” না হইয়া, 
মূলানুযায়ী “মত? হইবে । 

পত্র ১০৫1 “আমি কি আজ পর্যন্ত কাউকে *-. আলো দ্বিতে পেরেছি ? 
অনুরূপ প্রসঙ্গে অজিতকুমার চক্রবতীকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের 
একখানি পত্রের অংশ পুর্বে উদ্ধৃত হইয়াছে ( পৃ ৪৬৯-৭০ ), এ স্থলে 
অপর একখানি পত্রের প্রীসঙ্গিক অংশ সংকলিত হইল-_ 
'-তুমি লিখেছ আমি তোমাকে প্রত্যক্ষভাবে কিছু দিতে পারি নি। সে 
কথাটা ঠিক__ আমি কাউকেই সেরকম ভাবে কিছু দিতে পারিনে-_ 
কারণ আমার জীবনে কোনো বড় জিনিষ সচেষ্ট সাধনার ভিতর দিয়ে 
পাইনে। যখনি আমার কল্পনাদৃষ্টির সামনে কোনো বিশেষ আঘাতে 
কোনো বিশেষ আবরণ ছিন্ন হয়ে সত্যের কোনো! একটি মৃত্ি প্রকাশ 
পেয়েছে তখনি আমি তাকে প্রথম দেখেছি__ মনে হয়েছে জগতে এই 
যেন তার প্রথম প্রকাশ__ তাঁকে আবাহন করে আনবার জন্যে আমি 
কোনো! আয়োজন করিনি_- আমি একবারেই না জেনে তার মধ্যে 
এসে পড়েছি । আমার জীবনে বরাঁবর এমনি করে চলে আস্চে | 

এমন যার অবস্থা সে অন্তকে কোঁনো মতে চালনা করতে পারে 
না। ভিতর থেকে প্রকাশ করাই তার কাঁজ; বাইরে থেকে বিকাশ 
করানে। তার ক্ষমতার সম্পূর্ণ অতীত। 
অর্থাৎ জগতে যদি আমার কোনে সত্যকার স্থান থাকে তবে সে 

কবি হিসাবে-_ গুরু হিসাবে একেবারেই না। অথচ কেমন একটা! 
দুবিপাকে আমাকে তোমর। পাঁচজনে মিলে একটা গুরুর আমন দিয়েছ 


৪৯২ 


-_-এটাকে আমি কোনো মতেই ঠিকভাবে অধিকার করতে পারচিনে-_- 
আমি মনে মনে তোমাদের ভক্তির প্রণাম গ্রহণ করিনে-__ বাঁর বার 
কুন্ঠিত হই__ আপত্তি করেও কোনো ফল পাইনে। 

এটা কারে পক্ষেই ঠিক ভাল হচ্চে বলে মনে হয় না। এতে 
এক দিকে যেমন অন্তায় প্রত্যাশা জন্মে তেমনি অন্য দিকে সেই 
প্রত্যাশীকে মেটাবার জন্যে একট অধিকার বহির্ভত ব্যর্থ চেষ্টার 
উৎপত্তি হতে পারে । সে রকম চেষ্ট। অন্যের পক্ষে যেমনি হোক আমার 
পক্ষে ভাল নয় । কারণ, আমার প্রকৃতিতে চেষ্টা জিনিষটা সত্য পাবার 
উপায় নয়, বরঞ্চ ব্যাঘাত । 

কেবল একজন লোককে মনে পড়ে যে আমার কাছ থেকে প্রত্যক্ষ 
ভাবে গ্রহণ করতে পারত । সে হচ্চে সতীশ । তাঁর কারণ, তারও 
গ্রহণ করবার ইন্দ্রিয় আমার সঙ্গে এক। যিনি ওস্তাদ তিনি সকল 
তারকেই বাজিয়ে তুল্‌্তে পারেন-_ কিন্তু যে শুদ্মাত্র তার, সে নিজে 
বেজে উঠে' কেবলমাত্র এমন তাঁরকেই বাজাতে পারে, যে তার সঙ্গে 
সমান স্বরে বাঁধা । সতীশের সঙ্গে আমার যে সম্বন্ধ এ সেই তারের 
সঙ্গে তারের সম্বন্ধ, কবির সঙ্গে কবির সম্বন্ধ__ সাধকের সঙ্গে সাধকের 
নয় । 

আমি অনেক দিন থেকেই ঈশ্বরের কাছে বারবার প্রার্থনা করে 
আস্চি তিনি যেন আবুহোঁসেনের মত আমাকে এমন সিংহাসনে না 
বসান যেখানে আমার অধিকার নেই। সকলের নীচে দাড়িয়ে তার 
মন্দিরের সোপান ঝাঁড় দিতে যদ্দি পারি তাহলেই বেঁচে যাই-_- কিন্ত 
দশ জনে পড়ে য্দি একট] কাঁজ সেরে নেবার জন্যে মন্দিরের বেদীর 
উপরে অযোগ্যকে চড়িয়ে দেয়-_ তাহলে নীচে ঈীডিয়ে ঝাঁড় দিয়ে যে 
সেবা করা, সে কাজটা জীবনে আর হয়ে ওঠে না-_ অথচ তাঁরই 
মধ্যে গভীর একটি রস আছে-__ কারণ সে রসের মূল্য মানুষে দেয়, 


৪৯৩ 


না, তিনিই দেন । আমি সত্যই তোমাকে বলচি কোনো উচ্চ আসনে 
বসবার জন্তে আমার অন্তরতম আত্মার সত্য আকাজ্ষা নেই-_ কিন্ত 
এই আসনটাঁকে যদ্দি অনেকে মিলে অভ্যস্ত করিয়ে তোলে তা হলে 
বাইরের দ্বিক থেকে সে মানুষকে পেয়ে বসে। বাইরের সঙ্গে অস্তরের 
এই অসামপ্তস্ত এ ক্ষেত্রে কোঁনো মতেই কল্যাণকর নয়। 

এইজন্তেই মাঝে মাঝে আমার এক একবার বিদ্যালয় থেকে দুরে 
চলে যেতে ইচ্ছা করে । এবার এই হিমাঁলয়ে এসে আমার মনে হচ্ছে, 
সকলের সব দাবি কাটিয়ে কিছুকাল একল। এইরকম জায়গায় থেকে 
গেলে আমার যা আবশ্যক তা অনেকট! পুরণ হতে পারে। দৃষ্টিকে 
সর্বতোভাবে নিজের দ্দিক থেকে ফিরিয়ে দিতে পারলেই সত্য দৃষ্টি 
পাঁওয়৷ যাঁয়-_ অনন্তের আনন্দরূপ অমুতরূপ তখনি চারিদিকে প্রকাশিত 
হয়ে ওঠে । সেই রূপটিকে আমি চোখ মেলে দেখে যাব-_ এরই জন্তে 
আমার সমস্ত জীবনের সমস্ত ক্রন্দন । এই কথাটাকেই সৃস্পষ্টভাবে না 


বুঝেও কৌতুকের ছন্দে আমি লিখেছিলুম__ 
আমি চাইনে হতে নবযুগে 
নব বঙ্গের চালক 


যদি পরজন্মে পাই রে হতে 
ব্রজের রাখালবালক । 

ব্রজের বালকের সেই সরল দৃষ্টিটি আছে যাঁতে ন] বুঝে না জেনেও 
সমন্ত সুন্দর করে দেখতে পাওয়া যাঁয়__ যে দৃষ্টির কাছে অনন্ত আপনিই 
দিনে রাতে কাজে খেলায় অতি সহজ হয়ে আপন হয়ে ধর দেন। 

কিন্তু রাখাল বালকটাকে গুরুমশায়ের আসনে কে বসালে! এ 
কৌতুক তার সঙ্গে কে করচে! এ কৌতুক চিরদিন কখনই চল্তে 
পারে না সে ঘষে রাখাল এ কথাট1 কখনই চিরদ্দিন চাঁপা থাকবে না__ 
খরা পড়বেই-_ তাঁর গুরুগিরি একদিন সমস্ত ভেঙে যাবে । এগুরুগিরি 


৪৯৪ 


তাঁর ভালও লাগৃচে না। বাশের বাঁশিই তাঁর পক্ষে, আর ভাল যমুনার 
ধার। ঈশ্বর কবে তার সব অহস্কার ভেঙে দিয়ে সব আসবাব কেড়ে নিয়ে 
তাকে তাঁর সেই বনের ছায়ায় ডাঁক দিয়ে নিয়ে যাবেন ! সেইখাঁনেই তো 
তাকে নিয়ে তিনি বরাবর খেলা করেছেন-_ এ আবাঁর তাকে কোন্‌ 
মুন্নুকে এনে ফেলেছেন! নেই ডাকের অপেক্ষায় বসে আছি। কিন্ত 
ডাক কি আঁস্বে না? তিনি তাঁর খেলার সাঁথীকে ভোলেন নি-_ সেই 
ধূলোখেলার ক্ষেত্রেই তিনি তাকে ডাক দিচ্চেন। কিছুই তাই ভাল 
লাগ্চে নী মন চাঁর দিকে পথ খুঁজে বেড়াচ্চে। ১৩ই জোষ্ঠ ১৩১৭ 
__রবীন্ত্রনাথ। অজিতকুমার চক্রবর্তীকে লিখিত পত্র 
পত্র ১০৫। পপাশ্চাত্য দেশে এমন কথা অনেকের কাছেই শুনেচি, আমার 
বাণীতে আমি ষে কেবল তাদের খুসি করেছি তা নয়, তারা জীবনের 
অন্ন পেয়েছে তার থেকে” । প্রথম-বিশ্বমহাযুদ্ধে-নিহত কবি ৬৬1175 
0৬৪-এর জননীর লেখা একখাঁনি চিঠিতে ইহার এক মর্মস্পর্শী আভাস 
পাঁওয়! যাঁয়। কবির জোষ্টপুত্র রখীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 0009৪ 6০663 
6 0002 (00. 127 28 ) গ্রন্থ (1958 ) হইতে এ পত্রের কিয়দংশ 
সংকলন কর! গেল-_ 


91076 9100, 
0808 18, 1920. 


**শ619 06215 ড০ 5০815 860১ 0086 [05 0281 10656 50 
০06 0116 00 00৪ ৬/০1 01 00০ 19560 01006 2100. 60০ 09 106 
5810 (0900056 10 00০-_ আঅ০ ৮৮০1০ 10010106 (06০01)৫1 801093 
006 5009-510116160 522 1090161776 6০৬৪10৭ 12100) 10) 
10162101706 1029105- ড71010 106) [ডগ 0060 500১ 5810 00096 
য/00061001 0105 0£ 50015 16810010626 2৬৬06 160 


£1000 10600০6১ 16 0015 02 0 081006 ০০ 200 আ[)০া 


৪৯৫ 


1515 00901566 100010 02109602015 60 106-- 1] 208150. 013০5০ ৮0105 
দা10060 1] 1015 0681 ড710101)6-- ত10) 500 09106 02062010. 
৬৬০৪] 2৮105 25101776 00০0 1700001) ০0£ 500, 0 0611 006 080 
0০০0৮ [ 5100010 11150 006 ৬1012 00200 11) ? 

15 015510005 10095 ৪3 1511160 006 6215 02012 60৪ 
2৮08] 115100075  ৮/85 06] 010৪ 19655 0800৪ 60 05 01 
4৯117015005 025. 48 90911 10015 9£ ঢ)ড 50109 ৬৬০৪. 06075 
আ1]] 106 00101151960 ঘাড়ে 50900 015 10216 ৪5 (010) আ100 
5010৬ ৪6 00০ 50006101176 105 52৬ 400০ 00619” 800 00০ 
0৫169%5)8659 0£ 00612381011 ৪6 190006 006 200110 ০0£ 
৬৬৪1 0০505815000 06 1015 ০0৬0 516211065 1000 22 
0206 ভ1)0 1060 1010) ০8) 61] 00000. 1019 [90921005 ৮৮172. 196 
1780. 025520 €1210951), 6০ 12 9016 0০ চ71166 85 172 010. 
[7০ অ৪5 0015 25. ৬৬1176010৬০ ৪11 0096 95 102200100], 
1015 1165 52510620610] 2100. 0£ £1696 10006100501 £০9০03. 
01 300. 1576৬ 006 10610 10০ 001 10100 413600০7-- 2100. ] 
170056 1906 1001000-- 201] 12702 176 15 2. (300 01 10৬০ -- 
8150 ৮0৫10. 1086. 219৬2201005 501056810 0195615 1, 60 
০0900 10801 00 00০) 010 19৬০ 1020 90691.-*. | 

ড/10) 21586 15502০6 2150. 90101190100)... 

35217 নি. 00৬20. 

পত্র ১০৭। “কমলা লেকচার .** প্রোফেসারি পদের প্রথম অভিভাঁষণ? | 

রবীন্দ্রনাথ কলিকাতা বিশ্ববিদ্ভালয়ের আহ্বানে এই সময় “মানুষের 

ধশ্” বিষয়ে কমলা বক্তৃতা দিবার ও বাংলার প্রধান অধ্যাপকের পদ 
গ্রহণ করিবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। 


৪৯৬ 


পত্র ১০৭। 'প্রফুল্লজয়ন্তী” । এই অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের ভাষণ (“আমরা 
ছুজনে সহযাত্রী” ইত্যাদি ) বিশ্বভারতী পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষের চতুর্থ 
সংখ্যায় (৪০৬ পৃষ্ঠার পরে) তাহার হস্তাক্ষরে পুনরুমুত্িত আছে । কবি 
11191590799] 8100. 019০ 1960769590. 13100091715 পুন্তিকাঁও আচার্য 
প্রফুল্লচন্দ্রকে উৎসর্গ করেন । 

পত্র ১১৭। “নিজ্জীবকুমার” | শ্রীবাঁসন্তী দেবীর পুতুল-জামাতা।। কন্যার 
নাম 'অচেতনা”। ইহাদের “বিবাহ”-অনুষ্ঠীনের প্রসঙ্গ শ্রীবাসন্তী দেবীকে 
লিখিত ১৪-সংখ্যক পত্তরে দ্রষ্টব্য । 

পত্র ১২১। “ডাকাতকে ভয় করবার, --এই সময়ে শাস্তিনিকেতনে 
একবার ডাকাতি হইয়াছিল। 

পত্র ১৩২১ ১৩৩ । ১৩৩-সংখ্যক পত্রে মহাত্মা! গান্ধীর যে মন্তব্যের কথ 
উল্লেখ করিয়াছেন, তাহার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ একটি বিবৃতি দিয়া- 
ছিলেন, উহা! অতঃপর মুদ্রিত হইল-_ 

[01029 02560. 009 2. 709111601 511707152 00 10100 1১191790009 
(20011 9,0005806 01)0959 51)0 101170015 101105৮ 60211 ০৬0 
50018] 00500]0 01 0100010101191011165 101 108,105 010005176 
007) (30905 21060991002 01001 ০০1:091], 08105 0 13117217, 
৪৮1001061% 57০0০19119 991০0650101: 1015 06501801106 015129.- 
51216, 16 15 21] 006 17001:0 01001000262 17020০98030 61115 1000 
01 01030121001110 2100 070962119115010 ৮125 01 0011065521০ 00০9 
109.01][গ 2,০091১090 105 18152 56060101050 011: 00100051000). 

11:501015 1০2] 01০ 11001517165 0116 17210 1 8170. 002010911০7 
0০ 06৮21: 006 001500 11 955216106 0196 01055109] ০0৪8৪.5- 
€:0101)95 119৮০ 0617 11765169012 200. 2০105120111 1 ৪ 


0610810 60001011190101), 0: 101)551081 08065. [001959 আ21911655০ 


৯|৩২ ৪৯৭ 


1) 0১০ 1070য:0181016217695 06 10101501521 1259 11 006 01105 
০0 1010], 0300 10170521 109ড01 1106212125১ 1101021111105 
0021:2105 00০ 11062511001 1715 ০0৮17 012901010, ০ 2100 10 
1701009551016 60 10501151015 ৬859 010 0002.910109 11০ 010০ 0106 
10101) 1085 9501:21% 500101210) 05 11) 210 ০0৮%০1:41)91721105 
[0210102] 2100 50816. 

[ 6 2.958001962 60০ ০1108] 71110010129 ৮101) 00910010 
[01021001002109. ০ 51021] 109৮০ 00 2.017016 (0586 10010200800 
15 100191]% 5001921101 0 1109ড1021002 6109 19159.01)95 19 125- 
50105 1 090৫0 09108510901: 10 01:6195 01 01) ত্য 0156 106108৮1001 
70955110912. 70] ৮০ ০210 10০৬০: 110.95176 21) 01৮111920 10121 
01 1006101709111)5 11001501-1177110962 29001912501 0850191 ৮1001105 
10101001176 010110101 200 10027010215 01 010০ 001069)01)91012 
5010010701315 11 0106] 00 120197955 00615 06111762৪0৪. 
5266 015021009 110 70995101925 5৪৮1:21 0010.02100109- 
01012, 11)0051) ০ ০8101060010 006 2105 7211090 0: 10109] 
10150015 0080 15 02০ 2:01 11101116195 01 0০ 02125 11100, 
৮০ 901]1 6100 0162015 ০0: 10010 0101)00 5০ 12009011) 10105102- 
[1) 0096 906010195 61)96 01:01611% 01012 01903 00০ 2932০0 
ঢ0০৮€াচৈ 8100. 12001917062 0: 800151)20 007101৮26015, 0: 
01015012 1100505 10 91] 0910 01 006 ০110 01616 00০ 0০091 
55562]0 15 700115120, 71010] 10050 002 19 ৪. 90901810100 
০0: 110018590 07700108115, 501] 50200 101700, 16 010] 91)0৬5 
00০ 19 0৫ £:9৬1090101 00995 1006 10. 006 15250155070 10 


006 50019200005 1020. 0: ০8110517655 01320 2.0001707019695 01] 


৪৯৮ 


0176 10019] 10010086102 0: ০0015001965 10215 €0 910জ্ 
091721:005 01:8019 2170. 01111520017 21: 0150010117৭. 

৬৬1১৪156015 08,510 2000৮ 16 15 00০ 9.০6 0090 002 1170 
06 81£0177200 0020 1৬101)9 00901 9560. 05 5%01010106 2 
55210 01 509510010 01500102005, 19110266021 70105 606 705৮- 
01010501115 01000920106 (081) 115 ০0৬13 2100 16 ০0010 
[06 10202 50170115201 [0০ 2 911 16 010০5 1080 (21021) 0015 00- 
[0010101$5 0৫610010110 1017] 2000 1015 0110৬91:5 129100511010 
101: 610০ ৬1516906101 01 01100 21052]. £৯5 01 05 ০ 16০] 
[02162061% 5০০1016 11) 1০ 09101) 0020 001 0] 51105 200 
০17015, 100৬০৮০: 210017070105১ 1)0,৬০ 706 600 21001051) 101০2 
60 07:96 00) 00০ 500০6070 0 ০1:09:0102) 00 10175. ৬৬০ 
020 061919. 01010 16, 51010615 2100 5217005) 10150965 200 
70162155150 0010৮010100, ৬৬০ 100 212 11701001056] 
£7০,6০0] €0119102:0019.]1 01 1180001005, 05 1019 জা 01১061001 
110919112.01010, £:০০0:0]70. 000 190 2100 20101610955 1) 006 
11105 01 1015 ০0010015100), 6০০1 01091001001 10016 01217 
2 ০9105 0:00 1019 10001161702 0170701)95159 ০1201010165 0: 
11101722501) 11 0095০ ৮1:% 10010309, 10101025010 ৮51)101) 15 013০ 
01008100109] 50:০6 0৫ 2] 01100 00৬15 €086 0015 05 
9:9.11956 £০৪০0]70 200 9০171251920, 

1২9.011701217901) ]25012 
এই বিবৃতির উত্তরেও মহাত্মা গান্ধী [72119 পত্রে ( ১৬ ফেব্রুয়ার 
১৯৩৪ ) স্বীয় মন্তব্যে তাহার গভীর বিশ্বাস দৃঢতাঁর সহিত ব্যক্ত 
করেন। 


৪৯৯ 


পত্র ১৪৩। “আমি সীতার নিন্দা করেচি এই অপবাদ “ঘরে বাইরে 
প্রকাশের সমকালীন ; এ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য লিপিবদ্ধ আছে 
“ঘরে বাইরে"র গ্রন্থপরিচয়ে, ১৩২৬ চৈত্রের প্রবাসী হইতে উদ্ধৃত 
'সাহিত্যবিচার” প্রবন্ধে। এ প্রবন্ধের চতুর্থ অন্চ্ছেদে রবীন্দ্রনাথ 
বলেন, কথাট1 এতই অদ্ভুত যে আমি আশা করিয়াছিলাম যে, 
এমন-কি আমাঁদের দেশেও ইহা! গ্রাহ্থ হইবে না।” 
পত্র ১৫০। দীনবন্ধু আযাণ্ডু,জের পরলোকগমনে (৫ এপ্রিল ১৯৪০ ) 
শান্তিনকেতন-মন্দিরে উপাসনায় রবীন্দ্রনাথ যাহা বলেন তাহার অন্ু- 
লিখন (“দীনবন্ধু এগুরূজ' ) ১৩৪৭ বৈশাখের প্রবাঁসীতে মুদ্রিত। 
আযগ্ডজ সাহেব শান্তিনিকেতনে যোগ দিলে ১৯১৪ সালে তাহার 
সংবর্ধনা-উপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ যে কবিতাটি লেখেন, এ স্থলে সংকলিত 
হইল-_ 
চার্ল স্‌ এগুরজের প্রতি 
প্রতীচীর তীর্থ হতে প্রীণরসধার 
হে বন্ধু এনেছ তুমি, করি নমস্কার । 
প্রাচী দিল কে তব বরমাল্য তার 
হে বন্ধু গ্রহণ করো, করি নমস্কার | 
খুলেছে তোমার প্রেমে আমাদের দ্বার 
হে বন্ধু প্রবেশ করো, করি নমস্কার । 
তোমারে পেয়েছি মোরা দানরূপে ধার 
হে বন্ধু, চরণে তার করি নমস্কার | 
_-প্রবাসী, বৈশাখ ১৩৪৭ 
[১০০19 0০ ৪. [01670 গ্রন্থে রবীন্্রনাথ-কর্তৃক আযাগ্ুজ সাহেবকে 
লিখিত অনেকগুলি পত্র মুদ্রিত আছে । 
পত্র ১২। “তোমার প্রেরিত ফলের ঝুড়ি এই মাত্র এসে পৌছল |... 


৫০০ 


শীতলপাটিও ব্যবহারে লাগবে, এ বিষয় সম্পর্কে শ্রীঅক্ষয়কুমার 
ভট্রাচার্ধ্যকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের কয়েক দিন পূর্বের চিঠিখানি 
রষ্টব্য-_ 


০ 


শান্তিনিকেতন 
সবিনয় নমস্কার সম্ভাষণ 


জোঁড়াসাকোর বাড়িতে আমীর কোনে লোক এখন থাকে না। 
আমাদের পুর্বতন কম্মচাঁরী প্রতাপচন্দ্র তলাপাত্রকে লিখে দিয়েছি তিনি 
ফল পাঠাবার ভার নিতে পারবেন । কাল অর্থাৎ শনিবারে যে কোনো 
সময়ে সেখানে জয়নারাণ দরোয়ানের কাছে ঝুড়ি রেখে গেলে প্রতাপ 
পাঠাবার ব্যবস্থা করে দেবেন । হেমস্তবালাকে আমার আশীর্বাদ 
জানাবেন । ইতি ৫ অক্টোবর ১৯৩৪ 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
অক্ষয়বাবু ছিলেন ব্রজেন্ত্রকিশোর রায়চৌধুরী মহাশয়ের প্রাইভেট 
সেক্রেটারি ও পরিবারের দূর সম্পর্কের জ্ঞাতি। ৯১ এ, কালু ঘোঁষ 
লেনের ঠিকানা হইতে ৭ অক্টোবর রবিবারে ১ খানি শীতলপাটী ও 
নানাপ্রকার ফল প্রেরিত হয় জোড়ার্সাকোর বাটাতে | 
পত্র ১৮১ । “ভিক্টোরিয়া ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, “বিজয়া” নামে ইহাকে 
পুরবী গ্রন্থ উত্সগাঁরৃত | ( বর্তমান প্রসঙ্গে রষ্টব্য : শ্রীমতী প্রতিমা 
দেবী -প্রণীত “নির্বাণ | ) সাহিত্য আঁকাদেমি -কর্তৃক রবীন্রশতবর্ষপূতি 
উপলক্ষ্যে প্রকাঁশিত চ২৪10115018090) 785016 : 1861-196] গ্রন্থে 
“86016 070. 0106 38010 ০: ৮১০ [২1০7 218০ প্রবন্ধে ভিক্টোরিয়া 
ওকাঁম্পো রবীন্দ্রস্বৃতি লিপিবদ্ধ করিয়াছেন । 
পাত্র ১৮৩। এই পত্র লিখিবাঁর কিছু কাঁল পুর্বে কাঁলীঘাটে পশুবলি বন্ধ 
করিবার উদ্দেশে রামচন্দ্র শর্মা অনশনব্রত আরম্ভ করিলে রবীন্দ্রনাথ 
একটি কবিতা! লিখিয়! তাহাকে অভিনন্দিত করেন-__ 


৫০১ 


পণ্ডিত রামচন্ শন্মা 


প্রাণ-ঘাতকের খঙ্জো করিতে ধিক্কার 
হে মহাত্মা, প্রাণ দিতে চাও আপনার, 
তোমারে জানাই নমস্কার | 
হিংসারে ভক্তির বেশে দেবালয়ে আনে, 
রক্তাক্ত করিতে পুজা সংকোচ ন। মানে । 
ঈঁপিয়া পবিত্র প্রাণ, অপবিত্রতাঁর 
ক্ষালন করিবে তুমি সংকল্প তোমার, 
তোমারে জানাই নমস্কীর ॥ 
মাতৃত্তনচ্যুত ভীত পশুর ক্রন্দন 
মুখরিত করে মাতৃ-মন্দিরপ্রার্গণ। 
অবলের হত্যা অর্থ্যে পুজা-উপচাঁর-_ 
এ কলঙ্ক ঘুচাইবে স্বদেশমীতার, 
তোমারে জানাই নমস্কার ॥ 
নিঃসহায়, আত্মরক্ষী-অক্ষম যে প্রীণী 
নিষ্ুর পুণোর আশা সে জীবেরে হানি”, 
তারে তুমি প্রাণমূল্য দিয়ে আপনার 
ধশ্মলোভী হাত হতে করিবে উদ্ধার__ 
তোমারে জানাই নমস্কার ॥ 


১৫ ভার্র ১৩৪২ 
শান্তিনিকেতন 


__প্রবামী, কার্তিক ১৩৪২ 


হেমেক্দ্রপ্রসার্দ ঘোষ এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মতামত জানিতে চাঁহিলে 
তিনি উত্তরে লেখেন- 


৫০২ 


***সম্প্রতি একটি পত্রের উত্তরে এ সম্বন্ধে যা লিখেছি আপনাকে 
পাঠাই। শক্তিপুজায় এক সময়ে নরবলি প্রচলন ছিল, এখনও 
গোঁপনে কখনও কখনও ঘটে থাকে । এই প্রথা এখন রহিত হয়েছে । 
পশুহত্যাও রহিত হবে এই আশা করা যায়। ইতি ১৮ সেপেম্বর 
১৯৩৫ 
_-রবীন্দ্রনাথের পন্। প্রবাসী, কাত্তিক ১৩৪২ 
পত্র ২০৮। "সাহিত্যের বইয়ের চেয়ে বিজ্ঞানের বই আমি বেশি পড়ে 
থাকি।” এই প্রসঙ্গে, শ্রীঅমিয় চক্রবর্তীর “[1)৩ 7০৪৮ ৪ ভ/ ০1 
প্রবন্ধের অংশবিশেষ উৎস্থক্যজনক হইতে পারে-- 
[615 5210 0020 9, 10029 11012 0০089 079 11001009.015 
0: 1015 10100. 0:21:09.11015 00০ 70265 1921:0£1109010105 10 00০ 
৮0110 01 0710620 0000601: 18৮০ 166 00611 109] 1 0172 
ড৬15৬2101972.01 [10725 ...1310491]0 1) 105 00901 01090019615... 
০ 119৬০ 50007010190 01900 9080০ 0909,...৬/০ 192 ৫15- 
০০৮০০, 609 10001761010 01015 212৬ 162]09, 01726 0102 1026 11 
1015 0০00.010169 15106 0920]% 21011021006 9, [91011910515 ; 
10150011917) 25 ৬/6]] ৪5 [91)5510181) ; 2 19010 90000]06 01 
9.50:0101)53109, £০0910£5, 1010-0106101565, 21060109195. ৬৬০ 
£1180 17170 2.০01৮6]%  21069,590 17 ০09-0091:2/0152 109010175, 
62006111021001176 100 96110016012) 110001 02001801017, 
01090006101. 01 11065, [00000163, 5091-081)6 ৪100 011; 
01891121706 10081 0০966০:5১ ড০৪.5185-1900005, 19০01001- 
ভা0]] ; 10090100106 0:8,06015, (01707012016 1924 501)617759 
0 5111956 500170120105, 200. 10 12010965107 ০0০040105, 


[39005 01) 115170176 2:00 01:7109£0 35906]0, ০8111618005, 


৫০৩ 


[01817619006 200 1705050101985 910৬7 00121701569181)10 
31505 01 70219011197 761058] ; 55007600 05০5, 021100]: 
680065, 1700 €0 ৪0০৪ 01 ড1)016 2100৮ 010199.2019,5 8100 00100- 
[79186155 106101091199 109৮০ 10920 01:0109৫ 10 1015 19170০০- 
1115 100611206,5:55000910955, 1:08.0-0081.117, 11001026015, 
৬৮09০-101090105, 91090001017 2109. )10-11095] 10225 0020019০1০0 
101) 10171001105 10159525 2130 50811-16529175 101 20091] 019117)5 
01) 1015 20021001010. 
0009 90162) 130০: 04 78,207 € 198] ), 0 45 
পত্র ২১৮। টাউনহলে বক্তৃতার উপলক্ষ্য__ দেশে ফিরাইয়া আনিবার 
দাবিতে আন্দামানে রাজবন্দীদের স্বেচ্ছায় অন্নগ্রহণ ত্যাগ । 

'আন্দামানের ১৮৭ জন বন্দী প্রায়ৌপবেশন করায় সর্বত্র জনগণের 
মন বিক্ষুব্ধ হইয়াছে । তাহা প্রথম প্রকাশ পাঁয় কলিকাতার টাউন- 
হলের বহুজনাঁকীর্ণ সভায় [২ অগস্ট, ১৯৩৭ ] যাঁহাঁতে রবীন্দ্রনাথ 
তীহার মন্তব্য পাঠ করেন।”১* রবীন্দ্রনাথের বক্তব্যের সারাংশ নিয়ে 
মুদ্রিত হইল__ 

[6 19 170016 0090 2 ০০] 5100০ 200100 200 70011610951 
[0115010015 179%৩ £0106 010 1)017501-5071105 1 00০ 4১100109105, 
17102100575 01 002 100077201-50-1106 ৮৮85 ৮%1001০17 0100 03 
101৪. 10106 01000. 111)15 02110905 11)01662121)09 00 70010110 
50210011001) 15 8. 92.0 1০100110021 01 09117900091] 1217159917299, 
[1) 71518150 02 11) 21) 001)01: 021009018010 000100:% £০0৮০1)- 
[0217৮ ৮০৪10 1006 09812 10220 &, 1906 01 9001) 17090101091] 
1101901021702 2.5 0015 101717501:-560105 55012 101 50:01) ৪. 10106 


070০, 


7176 201101081 01015010615 19৮6 02100919090 101080018610] 
60 10019. 10120. 002 4১308000915. 00156102002. 15 105 
8100. 17700656. ৬1921) 00০ 10721 19 1006 12590185101 ০ 
00০ 796501015 ০06 0015 ০০016, 16 15 010]% 1021601:21 072 
010০ 70০0010 11] 0০ 801016161091৮০ 0: 610০ 05800202106 0786 
15 102090 09016 0 100110091 70115000615 21150 10. 21 1912100 
01000581005 01 [71155 2৬/85%70]0. [10019 2100 021009100 €1996 
00656 70011601091 011500219 9100017 7০ [210 1] [0019 17216 
৪1 16250 50170611100 0£ [90137519. 00170:01 0200. 0০ ০%০1০156ণ 
69 50021) 0112 17010010090 11500 0: [01150121166 11 10019. 

16 20109905002 00০ (0৮123127010 0: 113019. 179৮০ 
51)11060 01)611 0৬৮13, 195150105101116155 1291017)5 016 010690101 
01121920126102 ০01 00০ £১0090020 01190107615 010 6০0 0০ 
51700199150 0112 730106591] (3০0৮০101072, 7%101:50%০1-, 00০ 
0০৮০1720761 0111019179৮ 1০1০০650 €176 7660610170৫ 017 
0০1101091 [0115020215 010. 07০ 19162. 0£ 00০11 10901]16গ 60 
0010310০] 612 ০0115061৮ [96563001 0£ 81] 701:150615, 

007০০ 9691) 00০ 19০21016535 10151011165 0£ 010০ 3০9৬18- 
121) 10020191100] 109.5 (10017101700 0৮] 165 921052 0৫ 13010- 
17818152100 10050100. 

[0 00032 70105100529 ০0 [70018 7112 0০ 167026501)- 
(901৮০9 01 00০ 705010161782 1212] 01১ 006 19305 ০0: 
800217150961010, [0110081 70101501675 179৮2 06210 010000- 
01610109115 1০21০9590 230. 211 21001:099,01)0)016 00 0০ 01511 


1102165 0৫ 01) 7901016 193 7০০] £210০৮০৭. 


৫০৫ 


16 19 012]5 1 075 07011506০06 03217821009 
10017012505 02170055216 066211760 ড/100006 0019]. 009 
7555 19 100%৮ 200 03০17) £8£5০0. 6০ 100100 05 0: 02 
700৬7671726 15 1106 23952191016 00 0106 1]] ০0: 00০ 050016 
0 005 ০0015, 200. 010০ ০1111106165 00986 00০ 0০০9015 
0: 73217591 21095 1703 1060০000695 010109] 2.3 ৪, 00119:5 11) 
00০ 425০171. 

৬৬০ 211 1000৮ 01090 0100০ 1720012 10 60০ 70956) 001105 
217061)01- 1010০750011: 90)012556 00০ 701101591 0115013615 
1) (11০ £১1002100935, 071০6 5০006 11৮95 জা 2০ 1996. 1৮4০ ০01 
7০0 ৬৮০০ [0০ 01160 10005 01 060০ 0৮০] 5556০10 01 
£01০905901135. 91১91] আশ 0৫ 006 00691 (50৮61731021) 
21107 036 52170০ 0:869ণ5 6০9 0০001 17. 2. 121501 1001701921: 
01015 01000 01702 25211) ? 

[ 210০2] 009 0172 173217581 (01701002106 60 11106 01) 
16 006 0০170100105 06 7309201095, 1190195 2.0 0০ 
02021 0710510025 220 009 00০9 10] 101:0%4-1010060 
3170192:01)5 200. 1)01779165 0)02 0296 01001101581 10115013615 
৪70 ৫20210135. 

7012 701011555 [02009 0 001015100072106 0090 56111 0০1051565 
1 1050 79903 01 0০ 0110 10 606] 72191 $590০100 13 
1807951) 00 001502701) 10001792) 01%1115201010, 1000 01 1802 2 
8:5519৮2520 5101110 0£ ৮1100106015 21)695 1085 510001015 210 ডা 
1) ৮1101210702 11) 50002 01 0139 ৬৬ 552] 0০001007155 11 01061 


06911155 7101) 0011610591 15010005. 10019, 1)9,5 1706 81695601861 


৫০৬ 


5০87950 10 1217 £0ড%2100102186 0:01] [09101625016 11) 5016 
0০522 51101) 795015010 10600102 10101 179,5 5০800 129০০ 
101 67০ 187৮ 2100 101 002 12516117205 01911 01 1001001) 
1০600]. 

4৮100, 602 51000 01 09512111795 5101:28.0 £0101)01101-205 
06 5010]₹০ো) 1)01023 ০9৮০1: 0015 00110010902 01:051102 
ড/1)013 17001) 0৭ 00010 0: (61000 26০ 210 10020০ €০ 
5121 21). 11001110166 70০91109001 05627301010, ৮1000080019] 
11061501106 ড81010005 100025 ০01 7021081, [011551091] 980. 
055 01)0109109]. 

002 015 17015256106 900০8,9101. 1 21 1600০56০0 1705 [09 
০0010651091) 60 10100 1705 ৮০1০০ 110. 2.9151100 01011701675, 1000 
101 20512010981 01001050110. 0100 2.000110150201010 01 016 
12) 10101) 1009 900156 15 5016]5 106০060, 09 101 50106 
[0101961001) 11) 165 5০৬০1165. 

11971951101], 4৯056 3, 1937 
অতঃপর শান্তিনিকেতনে আন্দামান-দিবসে রবীন্দ্রনাথ যাহা বলেন 
“প্রচলিত দণ্ডনীতি' নামে তাহ। কাঁলান্তর গ্রন্থে মুদ্রিত হইয়াছে । 

পত্র ২০৯। “২৫ টবশাখ এত উর্ধে আমাকে"" আক্রমণ করতে আসবে না'। 

পত্র ২১১ । “এখানে এসেও জয়ন্তীর হাত এড়াতে পারি নি।, 
রবীন্দ্রনাথ এই বৎসর ২৯ এপ্রিল আলমোড়া যাত্রা করেন; ২৯ 
জুন পুনরায় কলিকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন । এই সময়কার বিবরণ 
4২৫,0০0, [শ্রী অনিলকুমার চন্দ ] -লিখিত ৬10) [২901150191090]) 
17 4£১100018 প্রবন্ধে মুদ্রিত আছে । তাহা হইতে এই বৎসরের 
জন্মোত্সবের বিবরণ পরপৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হইল ।-- 


৫০৭ 


01 60০ 861) 0£17195 ৮৮০1)90 00০ 19152952156 10170610201 
8. 5100811 2:0217009012 081 10180110017 06 (010065৪5770) 
0100ণ09%, 7850 8০0 30 109০9] 72076 5210080156 12510010105, 
[00191 900 17010192283, ০206 11 (06 206০1070010 জা101) 00০1 
21201011055 8100 ০ 2100016917560 (1)6100) (0 662. 10 100050179৮9 
0০20 0126 01 010০ 001262501010009%5 01 1719 116 ; ০ ৮০16 
€00 51) ০21 60 00 ৪. £981019170 17001001015 10০0], 000 006 
৫95 410 1006 70295 00 2101:915 7021701) [0 10110. £৯ তো 
ঠ০106 010110 090০5 00 0০৪. ৬৮101 1015 17010612100 1০ 1090 
0100981)610115 010051)6 8.£9119190 101: 1017). 

--৬1৪৬৮০৪-131)9700 735৬5, 7৮1১0, 1937 
এই বৎসর জন্মদিন উপলক্ষ্যে আলমোড়ায় রচিত কবিতা ( “জন্মদিন' 
২২ বৈশাখ ১৩৪৪) সেঁজুতি গ্রন্থে সংকলিত আছে। 

পত্র ২১৯। “আমার যে অন্ুচর ছিল সে বিস্তারিত বিবরণ লিখবে? । 
এতত্প্রসঙ্গে শ্রীস্ধাকান্ত রায়চৌধুরীর “পতিসরে রবীন্দ্রনাথ প্রবন্ধ 
রষ্টব্য। ১৯৩৭ সাঁলের ২৬ অগস্ট রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘকাল পরে পতিসরের 
জমিদারিতে গিয়াছিলেন। তিনি যে লিখিয়াছেন আমার প্রতিও 
তাদের [ প্রজাদের ] ভালোবাসা অক্ুত্রিম ও গভীর”, শ্রীস্থধাকান্ত 
রায়চৌধুরীর প্রবন্ধে তাহাই সুপরিস্ফুট-_ 
-"নরজগতে হঠীৎ দেবতার আঁবিতাব হ'লে মানুষ যেমন উতফুল্প হয়ে 
ওঠে এবং দেবতাকে কি দিয়ে খুশী করবে সেই কথাই ভাবে, প্রজারাঁও 
€ শতকরা ৯৯ জনের চেয়েও বেশী মুসলমান ) রবীন্দ্রনাথকে পেয়ে সেই 
রকম খুশী হয়ে উঠল । তারা কবির কাছে কোন রকমের আথিক 
উপকারের প্রার্থ নয় । তার! কবিকে অনেক দিনের পরে নিজেদের মধ্যে 
পেয়ে পরমানন্দিত, এ যেন হারাধন ফিরে পাওয়া] |. এদের কথা- 


৫ ০৮ 


বার্তীর ভিতর দিয়ে বার বার একটি প্রীর্থনাই বেজে উঠছিল, সেটি 
তাঁদেরই ভাষায় বলি-_ 

“আমরা ত হুজুর বুড়ো হয়েছি, আমরাও চলতি পথে, আপনিও 
চলতি পথে, বড়ই ছুঃখ হয়, প্রজা-মনিবের এমন মধুর সম্বন্ধের ধারা বুঝি 
ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যায় ।---” এদেরি মধ্যে একজন সীশ্রনয়নে ব'লে 
উঠলেন, “হুজুর, আমর! হিন্দুদের মত জন্মান্তরবাদ মানি না,__ মান্লে 
খোদার কাছে এই প্রার্থনাই জানাতাম, বাঁর বার যেন হুজুরের রাজ্যেই 
প্রজা হয়ে জন্ম নিই ।” এই সব প্রজাদের অবস্থা ভাল, এরা কেউ 
কবিকে এসব কথ। খোঁসামোদ-ছলে বলেন নি। রবীন্দ্রনাথের কথাবার্তা 
থেকেও বুঝেছি যে, তিনিও তাঁদের কোন দিন অবজ্ঞা করেন নি 
তাঁদের নিজের অন্নদাঁত1 হিসেবে মনে করেন । অতীতের পুরনে। কথা 
বলতে বলতে কবি এবং প্রজাদের চোঁথ ছলছল ক'রে উঠেছে আনন্দের 
অশ্রবাম্পে | 

--পতিসরে রবীন্দ্রনাথ । প্রবাসী, অগ্রহায়ণ ১৩৪৪ 
পত্র ২২৩। ১৯৩৭ সালের সেপ্টেম্বর মাঁসে রবীন্রনাঁথ অকস্মাৎ গুরুতর- 
ভাবে পীড়িত হইয়া পড়েন, এই পত্রে তাহারই উল্লেখ আছে । গল্পটি 
গল্পসল্পের অন্তর্গত চচন্দনী” ; তাহাঁর সুচনাঁয় ও শেষে সেই সন্ধ্যার 
কাহিনী বিত আঁছে। গল্পের অন্যতম আোত্রী “ক্ষিতিমোহন বাবুর স্ত্রী 
শ্রীকিরণবাঁলা সেন এই প্রসঙ্গে লিখিয়াছেন__ 
...১৯৩৭ সালে গুরুদেব হঠাৎ যেদিন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেদিন 
সন্ধ্যার কথ। মনে পড়ছে । সেই গল্পটা তিনি গল্পসন্প বইতে 'ন্দনী? 
নামে লিখেছেন ।*** 

.--হঠাঁৎ গুরুদেব বাইরের চেতনা হারিয়েছিলেন। আড়াই 
দিনের উপর অচেতন ছিলেন। সেদিনের কথা মনে আছে। তখন 
তিনি উত্তরাঁয়ণের নীচের তলায় দক্ষিণের ঘরে থাঁকতেন | বিকেলে 


৫০৯ 


সেই ঘরের দক্ষিণের বারান্দায় এসে বসতেন। অনেকে তার কাছে 
সন্ধ্যায় গিয়ে বসতেন । সেদিন বার্দলার জন্য পুবদিকের বারান্দায় 
এসে বসেছিলেন । কেউ কেউ গিয়েছিলেন কিন্তু বেশি সেদিন কেউ 
যান নাই। 

কথা হচ্ছিল, তিনি আগে কারে! কারো অনুরোধে তথন তখনই 
বানিয়ে মুখে গল্প বলেছেন কত। এখন আর সে শক্তি নাই । মুখে মুখে 
তৈরি করে তখনই গল্প বলতে পারেন না এখন। বলেছিলাম কেন 
পারবেন না। একটা গল্প বলুন। আমরা শুনতে চাই । 

তারপর একটি গল্প আরম্ভ করলেন । বেশ খানিকট। বলে শেষের 
দিকে বললেন আজ এই পর্বস্ত থাক।৯১ গল্পের শেষের দ্িকট। কাল 
আবার বলব। তারপর তিনি শুতে যাঁবাঁর জন্য ঘরে গেলেন । সুধাঁকান্ত- 
বাবু সঙ্গে রইলেন। আমরা চলে এলাম। অল্প পরেই খবর এল যে 
গুরুদেব অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন। অদ্ভুত কথা। সেন মশায় 
হোমিওপ্যাথি আর বায়োকেমিক ওষুধ নিয়ে ছুটলেন উত্তরাঁয়ণের 
দিকে। 

*-*বড়ো গল্পই ফেদ্দেছিলেন মনে হয় । তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার পর 
গল্পটা! গুঁকে লিখতে বলেছি আমরা। তিনি ঠাট্টা করে বলতেন 
আমি তো বলেছি এখন তোমরা লিখে দিও । যাই হোক তিনি 
লিখেছেন “ন্দনী” নামে গল্পটা ।১ 

__শ্রীকিরপবালা সেন । শ্রীপুলিনবিহারী সেনকে লিখিত পত্র 


পৃ ২৪০। র্বসাধারণের কাছে আমি বিশ্রাম কামনায় ছুটি চেয়েছি? । 


রষ্টব্য চিঠিপত্র ২ (১৩৪৯), পৃ ১১৩ ও তৎসহ ২৫ জুন ১৯৩৮ তাঁরিখের 
ইংরেজি বিবৃতির খসড়া! । 


৫১০ 


শ্রীমতী বাসন্তী দেবীকে লিখিত 


পত্র ২। একদা তোমার বয়সী একটি বাঁলিকা”__ রাঁণু অধিকারী”, 
বর্তমানে লেডী রাস্থ মুখোপাধ্যায় । দ্রষ্টব্য “ভাম্গসিংহের পত্রাবলী” 
পত্র ১৯১২১। 

পত্র ৮। “রবিঠাকুরের পাঁচালি” । শ্রীহেমন্তবাল! দেবী জানাইয়াছেন__ 
“আমার পরিচারিকা নিরক্ষরা নলিনী পধ্যস্ত উহার রুপাদুষ্টি আকর্ষণ 
করিয়াছিল। সে “রবিঠীকুরের পাঁচালী? শুনিতে ভালবাসিত । 

পৃষ্ঠা ৪১১। ডাক্তার শ্রীনিখিলচন্দ্র বাঁগচীর সহিত "শ্রীমতী বাসন্তী দেবী'র 
বিবাঁহোপলক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদী কবিতা | 

পত্র ২৬। এখানে একটা সাবেক কালের দ্রীঘি ছিল” । “এখাঁনে” অর্থে 
শস্তিনিকেতনের নিকটবর্তাঁ ভূবনডাঙা গ্রামে । এই প্রসঙ্গে দ্রষ্টব্য 
রবীন্দ্রনাথের পল্লীপ্রক্তি গ্রন্থে 'জলোৎ্সর্গ' ও প্রসঙ্গপরিচয়” | 


৫১৯ 


১ আত্মপরিচয়, ৪-সংখ্যক প্রবন্ধ | 
২ “পান্থ, পরিশেষ | সমকালীন “প্রবাসী” ও পঞ্চদশখণ্ড রবীন্দ্র-রচনাবলী দ্রষ্টবা। 
৩ দ্রষ্টব্য প্রবাসী, মাঘ ১৩৩৮, ৪৬৭ 
পত্রখানি ছাপা হইবার পরে মূল পত্র পাওয়। গিয়াছে, তদনুযায়ী পত্রের চতুর্থ ছত্রে 
“বহুদিন? স্থলে 'বহুকাল', অষ্টুম ছত্রে ভালো”, একাদশ ছত্রে 'বড়ো', দ্বাদশ ছত্রে 'হোলো' 
এবং ত্রয়োদশ ছত্রে “টি'কতেও পাঠ হইবে । শেষ ছত্রে' টুকরো? । পরবতী ১১৬ পৃষ্ঠার 
দ্বিতীয় ছত্রে 'বল্লেই' এবং "পারো, তৃতীয় ছত্রে “করো খুব”, ষষ্ঠ এবং অষ্টম ছত্রে 
'নবেশ্বর' হইবে। মুল চিঠির শীর্ষে 'দাঁজ্জিলিং নাই এবং তারিখও ১৯৩৮, অথচ উহা 
১৯৩১ হইবে মনে করিবার বিশেষ কারণ আছে। 
এই কবিতাই প্রথম ও শেষ দুই স্তবক বাদ দির! “অপূর্ণ' নামে পরিশেষ কাব্যে মুদ্রিত। 
প্রতিলিপি ডষ্টব্-_ 7). রে. 16100011587, 797,277, ৬০]. ]া] (1959) 
বিজ্ঞপ্তিতে “রবীন্দ্রনাথ ইহাও জানাইয়াছেন যে, ক্যাটালগে তাহার চিত্রগ্তলির যে নাম 
দেওয়। হইয়াছে এগুলি তাহার প্রদত্ত নাম নহে। তাহার কোন চিত্রের নাম নাই ।' 
শারদীয় দেশ পত্রে (১৩৩৭ ) রবীন্দ্র-হস্তাক্ষরের প্রতিলিপি-রূপে ইহার থসড়া মুদ্রিত। 
সমকালীন মডার্ণ রিভিউ € জুলাই ১৯১৯, পৃ ১০৫) ভ্রষ্টব্য। শ্রীঅমল হোম -প্রণীত 
'পুরুষোত্তম রবীন্দ্রনাথ" গ্রন্থে ইহার সমকালীন বাংলা অনুবাদও সংকলিত। শুনা যায় 
রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং এই তর্জমা করেন, কিন্তু অনুবাদের ভাষাভঙ্গী দেখিয়া তাহ মানিয়া 
লওয়া কঠিন। 
শ্রীহ্মন্তবাল৷ দেবীকে লিখিত ১৮৩-সংখাক পত্রের প্রথম অনুচ্ছেদ । 
ষ্টবা-“বিবিধ প্রসঙ্গ, প্রবাসী, ভাদ্র ১৩৪৪, পৃ ৭৩৭। এই সভানুষ্ঠানের ইতিহাস 
ও সভার বিবরণ, ১৩৬৮ বৈশাখ নংখা। 'সমকালীন' পত্রে শ্ীসৌমোন্্রনাথ ঠাকুর তাহার 
“রবীন্দ্রনাথ ও আন্দামান রাজবন্দী-মুক্তি-আন্দোলন” প্রবন্ধে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন । 
গল্পসল্প প্রষ্টব্য। 'দশ্থাকন্যাটি এদের [ ডাকাতদের ] গোপন করে ছেলেটিকে 
ঘনজঙ্গলের ভিতর দিয়ে নিয়ে পালাবার ব্যবস্থা করে দিল । এই পর্যন্তই বলেছিলেন ।, 
_শ্রীকিরণবালা সেন 
দেখা যাইতেছে যে, ১৯৩৭ সেপেন্বরের সন্ধ্যায় মুখে-মুখে বলা অসম্পূর্ণ কাহিনী, দীর্ঘকাল 
পরে 'গল্পসল্প' গ্রন্থে সংকলনের জন্য লিপিবদ্ধ হয়; রচনাকাল : ২ মার্চ ১৯৪১। 


০০ 


রকি 


্ে 


শট 


ন্‌ 


ঠা 


ঠ 


লি 


সাময়িক পত্রে প্রকাশের স্থচী 


এই গ্রন্থে সংগৃহীত অনেকগুলি পত্র ইতিপূর্বে সাময়িক পজ্রে প্রকাশিত 
হইয়াছে, আমরা যতদূর সন্ধান পাইয়াছি তদন্গযায়ী প্রকাশ-ন্থচী মুদ্রিত 
হইল । 

শ্রীহেমন্তবাঁল। দেবীকে লিখিত কতকগুলি চিঠি পত্রধারা” নামে 
প্রবাসী পত্রে ১৩৩৮-৪০ সালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী স্চীতে তাহা! 
নির্দেশ করা হইয়াছে । শ্রীবাঁসন্তী দেবীকে লিখিত একখানি চিন্তিও 
( পত্র ৩) উক্ত পত্রধারার অন্তর্গত হইয়াছিল । এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য 
যে, প্রবাসীতে প্রকাশকালে রবীন্দ্রনাথ-কর্তৃক কতকগুলি চিঠিতে কিছু 
কিছু পরিবর্তন সাধিত এবং কৌনো-কোনোটির অংশবিশেষ পরিবজিত 
হইয়াছিল। এই গ্রন্থে পূর্বান্ুহ্ুত রীতিতে প্রত্যেক পত্রই যথাসাধ্য 
মুূলানুষায়ী মুত্রিত, তবে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ অনেক স্থলেই বজিত। 


শ্রীহেমস্তবালা দেবীকে লিখিত পত্রাবলী 


পত্রসংখ্যা 
্রবাশী৯__ 

আশ্বিন ১৩৩৮ ৩৯২ 
কাতিক ১৩৩৮ ২ 
অগ্রহায়ণ ১৯৩৩৮ ৩১৪ 
পৌষ ১৩৩৮ ৫১৬১৭ 
মাঘ ১৩৩৮ ৮১১১ 
ফাল্তন ১৩৩৮ ১৪১১৭১১৮১১৯ 
চৈত্র ১৩৩৮ ২০১২১১২৪ 
বৈশাখ ১৩৩৯ ২৩ 
জ্যেষ্ঠ ১৩৩৯ ১৫১২৬১৩১ 
শ্রাবণ ১৩৩৯ ৩২,৪৫ 


৫১৩ 


প্রবাসী-_ 
ভাত্র ১৩৩৯ 
আশ্বিন ১৩৩৯ 
কাতিক ১৩৩৪৯ 
অগ্রহায়ণ ১৩৩৯ 
পৌষ ১৩৩৯ 
মাঘ ১৩৩৯ 
ফাল্ধন ১৩৩৯ 
চৈত্র ১৩৩৯ 
বৈশাখ ১৩৪০ 

উত্তরা-_- 
আশ্বিন ১৩৪৮ 
অগ্রহায়ণ ১৩৪৮ 


গীতবিতান বাধিকী-_ 
সাথ ১৩৫০ 


৩৫১৫২১৫৩১৫৫ 
২৯১৩০ 

৫৬১৫৮ 

৫৯১৬২,৬৩ 

৭৭১৭৮” 

৮৭১৮৮১৮৯ 
৯১১৯৮১৯৯ 
১০১১১০৪১১০৫১১০৬ 


৯৬১১০৭১১০৮ 
১৬৫১১৯৫১২৫৮ 
৮৪১১৯ ৭১১৩৮১১৬৯১২ ১১১২২৩১২৩৩৬, 


২৪১১২৪৬ 


পত্রাংশ : ১৮১১১৮৯১২০২ 


গীতবিতাঁন পত্রিকা : রবীন্দ্র শতবাধিকী জয়ন্তী সংখ্য।-__ 


পুর্বাচল-- 
আশ্বিন ১৩৫৫ 
ফাল্গন-চৈত্র ১৩৫৫ 
বৈশাখ ১৩৫৬ 
লোকসেবক-- 
৮ মে ১৯৫০ 


১৬৪১১৭২১২০১,২২৯ 


১৯৩,২১০ 
২০২ 
২৪৮ 


হস্তাক্ষরের প্রতিরূপ : ১৮৪ 


৫১৪ 


নিখিল বঙ্গ রবীন্দ্রসা হিত্যসম্মেলন স্মারকপুন্তিক1-__ 


১৩৬০ 


বিশ্বভারতী পত্রিকা 
মাঘ-চৈজ্র ১৮৮০-৮১ 


আশাবণ-আশ্বিন ১৮৮০ 


বৈশাখ-আঁষাঢ ১৮৮১ 


৩ 


২২১৫ ৭১৬৯১১৯১০১১ ১৮১১৯২৬১১৩২ 
১৩৩ 

২৭১২৮ (অংশ), ৩৪১৪৪১৫৪১৬৪ 
১১৩১১২১১১২৩১১২৫ 


১৪১১১৪৩ 


সজনী : শতবাধিক উৎসবে রচনাসংগ্রহ__ 


১৯৩৬৮ 


হস্তাক্ষরের প্রতিরূপ : ১৮১১৯ 


শ্রীবিমলাকান্ত রাঁয়চৌধুরীকে লিখিত 


সাহিত্য পত্র 


মাঘ-চৈত্র ১৩৬০ 


২১৪১৫ 


2955 


১০১১১ 


নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্যসম্মেলন স্মারকপুস্তিকা_ 


৬ 


শ্রীবাসস্তী দেবীকে লিখিত 


১৩৩০০ 
উত্তরা 

আশ্বিন ১৩৪৮ 

অগ্রহায়ণ ১৩৪৮ 
প্রবাশী-_- 

শ্রাবণ ১৩৩৮ 
গীতবিতান বাধষিকী-_ 

মাথ ১৩৫০ 


ৃ ৩১১৫১৯৬১১৭১ ৯৮১৭ ০১২১১২২২১২৫ 


১,২১৪,১৫১৬১৭১৮১৭৯ 


5১১ -১9 5555 


১০১১৪১১৯১২৪১২৬১২৭ 


২৮১২৯১৩০১৩১১৩২ 


৩ (অংশ) 


১১২৩ 


৫১৫ 


পরিক্রমা 
শরৎ ১৩৫৩ ২৬ 


শ্রীকিশোরকান্তি বাগচীকে লিখিত 


শনিবারের চিঠি-_ 
অগ্রহায়ণ ১৩৪৫ আশীর্বাদ ও পত্রোত্তরগ 


১ প্রবাদীতে প্রকাশিত অধিকাংশ পত্রই কবি-কতৃক অল্পাধিক পরিবতিত ও পরিবজিত। 
বর্তমান গ্রন্থে মূলানুষায়ী মুদ্রিত। 

২ “আত্মীয়-বিরোধ' শিরোনামে, ৩৯-সংখাক পত্রের রূপান্তর । দ্রষ্টবা : পরিশিষ্ট ১ 

৩ শকাব্দ ১৮৮*-৮১ বুঝিতে হইবে । 

৪ “নাচনচন্ত্র কিশোরকান্তের পত্র এবং কবির “মন্তব্য -সহ একত্র সংকলিত। ৪৩৭ পৃষ্ঠার 
পাদটাকা ডরষ্টব্য। 


৫১৬ 


বিজ্ঞপ্তি 


বর্তমীন গ্রন্থে সংকলিত শ্রীহেমস্তবাল! দেবীকে লিখিত অধিকাংশ পত্র 
তাহার পুত্র শ্রীবিমলাকান্ত রাঁয়চৌধুরীর সংগ্রহভূক্ত আছে; এই চিঠি- 
গুলি ও তাহাকে লিখিত পত্রাবলী তিনি ব্যবহার করিতে দিয়াছেন । 
শ্রীমতী হেমন্তবাল। দেবীকে লিখিত অনেকগুলি চিঠি তাহার কন্তা 
শ্রীমতী বাসন্তী দেবীর সংগ্রহতূক্ত ছিল; তিনি এগুলি এবং তাঁহাকে 
লিখিত অধিকাংশ পত্র শাস্তিনিকেতনস্থ রবীন্দ্রসদনে উপহার দিয়া বিশ্ব- 
ভারতীর বিশেষ কৃতজ্তাঁভাঁজন হইয়াছেন । 

এই গ্রন্থ-তুক্ত অনেকগুলি চিঠি পুর্বে সাময়িক পত্রে প্রকাশিত) 
গ্রন্থের অন্ত্র তাহার বিস্তারিত স্থচী : মুদ্রিত হইল । এই প্রসঙ্গে উল্লেখ- 
যোগ্য যে, শ্রীমতী হেমস্তবালা দেবীকে লিখিত কয়েকখানি চিঠি (পত্র 
৮১ ১৯, ১২২, ১৭১), অধিকাংশই সংক্ষিপ্ত আকারে, ইতিপূর্বে “বিচিত্র 
প্রবন্ধ' গ্রন্থের চৈত্র ১৩৪২ সংস্করণে “চিঠির টুকরি'র অন্তর্গত হইয়াছিল । 
শ্রীহেমস্তবালা দেবীকে লিখিত অধিকাংশ পত্রের মূল শ্রীবিমলাকান্ত রাঁয়- 
চৌধুরীর নিকট রক্ষিত ইহা' পূর্বেই বলা হইয়াছে ; গ্রন্থমুদ্রণকাঁলে সেগুলি 
তিনি সদা-সর্বদ। ব্যবহার করিতে দিয়া বিশ্বভারতীর বিশেষ রুতজ্ঞতা 
অর্জন করিয়াছেন । 

শ্রীমতী হেমস্তবাল। দেবীকে লিখিত নিম্োক্ত পত্রগুলির মুল 
শ্রীমতী বাঁসম্ভী দেবী শান্তিনিকেতন রবীন্রসদনে উপহার দিয়াছেন 
_- পত্র ৮৪, ১২৭, ১৩৫) ১৩৮১ ১৬৫) ১৬৯, ১৯৫) ২১১১ ২২৩, ২৩৬, 
২৪১, ২৪৬, ২৫৮ 

শ্রীমতী বাঁসন্তী দেবীকে লিখিত এই পত্রগুলিও তিনি অনুগ্রহপুর্বক 
শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রসদনে উপহার দিয়াছেন-_ পাত্র ১১ ২, ৪১ ৫১ ৬, ৭ 
৮, ৯) ১০১ ১১১ ১২) ১৩১ ১৪১ ১৬১ ১৭) ১৯১ ২০১ ২১১ ২২, ২৩, ২৪১ ২৫১ 
২৬, ২৭) ২৮) ২৯১ ৩০১ ৩১১ ৩২ 


৫১৭ 


এই পত্রগুলি এখন শ্রীমতী বাঁসস্তী দেবীর সংগ্রহে আছে-_ পত্র ৩, 
৯৫১ ৯৮ 

শ্রীকিশোরকান্ত বাগচীর উদ্দেশে লিখিত আঁশীর্বাদ-কবিতার পাঁওু- 
লিপিও তাহার নিকট আছে । 

শ্রীনিখিলচন্দ্র বাগচীকে লিখিত চিঠিখাঁনি রবীন্দ্রস্নে উপহ্ৃত 
হইয়াছে । 

শ্রীমতী হেমন্তবাঁল! দেবী -কতৃক রবীন্দ্রনাথকে লিখিত অধিকাংশ চিতি 
শাস্তিনিকেতন-রবীন্দ্রসদনে রক্ষিত আছে ) নির্বাচিত কয়েকখানি পত্র 
এই গ্রন্থে মুদ্রিত হইল। এইগুলির সাহাষ্যে রবীন্দ্রনাথের চিঠিগুলি 
অনুধাবন করিবাঁর সহায়তা হইবে, আশা করা যাঁয়। 

এই গ্রস্থসংকলনে শ্রীকানাই সামন্ত শ্রীপুলিনবিহাঁরী সেনকে একান্তিক 
সহায়ত! করিয়াছেন ; বস্ততঃ তাহার আন্গকুল্য ব্যতীত কোনো-কোনে। 
অসম্পূর্ণতার ক্রটি মোচন হইত না। শ্রীশোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায় ও 
শ্রীপার্থ বস্থর নিকট হইতেও প্রভূত সহায়তা পাঁওয়া গিয়াছে । শ্রীশুভেন্দু 
শেখর মুখোঁপাধ্যায়ও কোনো-কোঁনো বিষয়ে সাহায্য করিয়াছেন। 
শ্ীপ্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় -রচিত রবীন্দ্রজীবনী হইতে গ্রন্থপরিচয়ভূক্ত 
কোনো-কোনে। তথ্য সন্বন্ধে জান! গিয়াছে । 

শ্রীবীরেন্্রকিশোর রায়চৌধুবীকে লিখিত ছুইখানি চিঠি তাহার 
ব্যক্তিগত সংগ্রহে আছে ও তীহাঁর বিশেষ সৌজন্যে এই গ্রন্থে ( পূ ৪২১- 
২৩ ) সংকলিত হইয়াছে । 


৫১৮ 


সংকেত 

চিঠির সংখ্যা এবং চিঠির শীর্ষদেশে বাম দ্দিকে ক্ষুদ্রাক্ষরে যে ইংরেজি 
তারিখ দেওয়া হইয়াছে তাহা পত্রের অংশ নহে; ইংরেজি তারিখ 
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিঠির বাংলা তারিখ -অন্তুযাঁয়ী নির্ধারিত। কতক ক্ষেত্রে 
পোস্ট মার্ক হইতে এ তারিখ লওয়া হইয়াছে, সে ক্ষেত্রে তাঁরিখটি 
তারকাচিহ্নিত। তারকাচিহ্ন যে স্থলে তারিখের পরে আছে, সে ক্ষেত্রে 
চিঠি বিলির তারিখ বুঝিতে হইবে ; যে ডাঁকঘর হইতে বিলি হইয়াছে 
তাহার নামও উল্লিথিত। তারিখের পুর্বে তারকাচিহ্ন থাকিলে চিঠি ডাকে 
দিবার তারিখ বুঝিতে হইবে ; ডাঁকঘরের নির্দেশও দেওয়া হইয়াঁছে। 

ণ-চিহ্নিত তারিখও পোস্টমার্ক হইতে; কিন্তু এ ক্ষেত্রে মূল 
পোস্ট মার্কের তারিখ কেহ লিখিয়া রাখেন, তাহার উপর নির্ভর করা 
হইয়াঁছে__ খাম্মগুলি দেখিবার সুযোগ হয় নাই । 

ডাঁকঘরের ছাঁপের পাঠোদ্ধার না হইয়া থাকিলে বা ণ-চিন্িত 
তারিখের সহিত উহার উল্লেখ পূর্বাবধি না থাঁকিলে, কেবল তারিখই 
সংকলিত হইয়াছে । 

তৃতীয়-বন্ধনী-বেষ্টিত ক্ষুত্রাক্ষর তারিখ অন্ুমানপ্রস্থত | অঙ্কমান 
সংশয়াতীত না হইলে জিজ্ঞাসাচিহ্ন-যুক্ত। 

পত্রমধ্যে মুদ্রিত তৃতীয় বন্ধনীর অন্তর্গত শব্দ বা শব্দাবলী, জীর্ণতাহেতু 
পত্রের যে অংশ দুষ্পাঠ্য, তাহা হইতে অন্থুমিত মাত্র। যে-সকল ক্ষেত্রে 
পত্র অচ্ছিন্ন এবং স্পষ্ট, অথচ অর্থবোধের জন্য কোনে! শব্দের প্রয়োজন, 
বিবেচনামত উপযোগী শব্দ তৃতীয় বন্ধনী -মধ্যে, অধিকন্ত উদ্ধাতিচিহ্ন- 
যোগে, মুদ্রিত হইয়াছে । 


৫১৯ 


১৭১ 


২৩৪ 


৩৯ ০ 


সংযৌজন-সংশোধন 


বিজয়াদশৃমী ১৩৩৮ : ৪ কাঁতিক তারিখ 

দশম ছত্রে: শাশ্বত 

৮৬-সংখ্যক পত্রে ১০ জুন শান্তিনিকেতনের ছাপ থাকায়, উহা! 
২৮ জোষ্ট (১১ জুন ) তারিখে লেখ! বলিয়! মনে হয় না। 
৯৯-সংখ্যক পত্র সম্ভবতঃ ৮ অক্টোবর বা ২২ আশ্বিন তারিখে 
লেখা । পু ৪৮৪ দ্রষ্টব্য। 

তৃতীয় ছত্রে “সঞ্ধীব” বলিতে “সন্দীপ'ই বুঝিতে হইবে । 
২১৬-সংখ্যক পত্র ৪ শ্রাবণ তাঁরিখ- অনুযায়ী ২০ জুলাইয়ের হইতে 
পাঁরে, সেদিনই মঙ্গলবার । “কাল মঙ্গলবার ... যাত্রা করচি? ঠিক 
হইলে, এ চিঠি সম্ভবতঃ ১৯ জুলাই বা ৩ শ্রাবণ তারিখে লেখা । 
২৬৪-সংখ্যক শেষ পত্রখাঁনি, রবীন্দ্রনাথের উক্তির শ্রুতিলিখন, 
তাহার স্বাক্ষর -সংযুক্ত। 

নীচে হইতে অষ্টম ছত্রে : স্বনীমধন্য 


চিঠিপত্রের বর্তমান খণ্ডে বিভিন্ন ব্যক্তির পরিচয় তাহাদের উল্লেখের 
প্রলঙ্গক্রমেই সহজে বুঝ! যায়, এজন্য বিস্তারিত ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে 
না। উল্লেখযোগ্য-_ 


“কচি' শ্রীমতী হেমন্তবাল। দেবীর পুত্রের ডাক নাম এবং “নাঁচনচন্দ্র 


তাহারই দৌহিত্রের শৈশবের আদরের নাম । 


০৪ পৃষ্ঠার শেষ ছত্রে “ধা” বলিতে, স্বীয় সজনীকাস্ত দাস 


মহাশয়ের পত্বীর উল্লেখ আছে এরূপ জান] গিয়াছে ।